বানানই কি সব?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০২/০৩/২০২২ - ৭:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আলামিন ভাতের হোটেল পারে পানের দোকানে
চাবাইতেছিনু পান। তখন অকস্মাৎ
পাঠাও চাপিয়া এসে উপস্থিত হাউমাউ ক্রন্দনরত গেনী বন্ধু ইছহাক
চন্দ্র বিদ্যাসাগর। পাঠাওয়ের ইয়ামহা চালকটি পরম আদরে
মুছাইয়া দিল গেনী ইছহাকের অশ্রু একটি বাতিল রুমালে। আমা পানে
ইছহাককে আলিঙ্গন বাগাইয়া আগাইতে দেখিয়া সে করিল হুশিয়ার, ভাই এট্টু দেইহেন।
তারপর চলে গেল ভো ভো করে কুথা পানে যেন।

ইছহাকচন্দ্র শুরুতেই ফেত ফেত কান্দিয়া ও নাক মুছিয়া
বরবাদ করিয়া দিল আমার সাধের পাঞ্জাবিটি যেটি পরে
একটু পরেই যাব কুথা যেন। অতি কষ্টে থাপ্পড় সংবরি শুধানু তাহারে
কান্দস কেন রে?

জবাবে ইছহাকচন্দ্র মুবাইল তাহার করিয়া বাহির
খুলিয়া ফেসবুক দিল ঠুকিয়া নালিশ। বল তুই এসব কি সহ্য হয়?
গত পরশু সুবহা সাদিক হতে খাটিয়া খুটিয়া কত দলিল ঘাটিয়া
কত বই কত ধুলা পত্নীর পিটনিগুলা হজম করিয়া শেষে
লিখিনু প্রবন্ধ এক। লর্ড ডালহাউজির কালে বম্বাই ও বেংগলে তরকারিতে পটোলের
শত্রুমিত্র। দেখ তুই দেখ।

তেয়াজ্জুব হয়ে যাই সে প্রবন্ধ হেরি। ইছহাকচন্দ্র মুবাইলে তর্জনী ডলি
তৈলাক্ত বাঁশের গায়ে এয়াতিম বানরছানাটি হয়ে ব্রাউজার বাহি খালি নামতেই আছে আর
নামতেই আছে কিন্তু প্রবন্ধের মেলে নাকো থই। তলানিতে তার
পাতালের বেরসিক বালরগ হয়ে যেন শুয়ে আছে কতিপয় বৃদ্ধাঙ্গুলি হৃৎপিণ্ড ও হাহা।
বাকরুদ্ধ হয়ে যাই এই কথা ভেবে
ডালহাউজির কালে পটোলের এত শত্রু এত মিত্র এল কুথা হতে?
কিন্তু ইছহাকচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে তাহা শুধাবারে নাহি পাই বল
যদি উত্তর দিতে শুরু করে সেই ভয়ে।

ইত্যবসরে
পিরানের প্রান্তে নাক মুছি ফের ইছহাকচন্দ্র বিদ্যাসাগর
খুলে আনে সে রচনাতলে হাহাটির মালকিনটিকে।
নাজনিন বক্ষোপাধ্যায়।

কাপাইয়া গগন ফের কেন্দে উঠে ইছহাক। বলে দেখ এই বেডি
কি লিখেছে ফডু 'পরে তার।
নাজনিন বুখুজ্জের ছবি দেখে উঠিনু চমকি। তার উপরে লেখা
রোদ এসে ছুমু দিল গালে। কিন্তু ছবিতে গালের কুন নামগন্ধ নাই। বরঞ্চ
থুতনি হতে শুরু করে কই কই গিয়াছে সে ফ্রেম। মধ্যিখানে দেখা যায়
একটি আক্রান্ত সেন্ডু গেঞ্জি। বড় গলা তার। সে ছবির তলে
লাইক লাভে ছয়লাপ। তার ভারে ফেসবুক কাইত।

ইছহাকচন্দ্র কানতে কানতে আরেকটি
টেবে খুলে আপন ফেসবুক তার। সপ্তাদুয়েক আগে বিনিদ্র কখান নিশি জাগি
লিখেছিল আরেকটি প্রবন্ধ সে। মুঙ্গেরি বন্দুক শিল্প কেন পরাজিত হল
হাঙ্গেরি বন্দুক শিল্পের কাছে। মুবাইল আমার হাতে দিয়া
গুটাইয়া হাতা সে দেখাইল এক এক করে
দুই হাতে কুন কুন পেশি তার খেয়েছিল টান রাখিতে সে রচনার মান।
ব্রাউজারে মারাথন মারি মিলে সন্দর্ভটির সীমান্ত। তার তলে
কতিপয় লাইক, একখানি লাভ আর একখানি হাহা। এ হাহাটিও
দিয়া গেছে নাজনিন বুখুজ্জে। পাশাপাশি আরখানি টেবে
দেখি আরেকটি ছবি সপ্তাদুয়েক আগে। তার 'পরে লেখা
আঁছলের দুসটুমি। কিন্তু ছবিতে
আঁচলের নামগন্ধ নাই। ফাটো ফাটো একটি ব্লাউজ
ফিনফিনে
জংলি ছাপার। তলে তার কুটি কুটি লাইক। আর লাভ।

ইছহাক বিদ্যাসাগর কান্দে ফোসফোস, ফিরে আপনার ফেসবুক টেবে।
এক মাস এক সপ্তা আগে
রচেছিল আরেকটি সন্দর্ভ সে কত তুরানি পুরাণ ঘাটি
তাজিক রমনী কেন শেলোয়ারে দুটি গিট দিত কিন্তু
উজবক রমনী দিত তিনখানা কিন্তু সভিয়েতশাহী এসে
কি করে উভয়কে করল চারখানা করে গিট দিতে বাধ্য আর এখন তো
সভিয়েতশাহী নাই এখন কে কয়টা গিট্টু কুথায় কিরূপে দেয়।
অথচ সে দিগন্তবিস্তারি রচনার তলে মাত্র একটি লাইক একটি লাভ একখানি হাহা।
ইছহাক না বলিলেও বুঝিতাম হাহাটির মালকিন কে সে। পেরালাল টেবে
চক্ষু ঝলসিয়া উঠে একটি ছবিতে। তার 'পরে লেখা
মাঝেমাঝে ছুপিছুপি এসে, দিয়ো। সে ছবির চারকোনা উপচিয়া
পড়িছে হলুদ শাড়ি পরা একটি প্রশস্ত নিতম্বদেশ। তলে তার লাইক
আজকেও চলিতেছে বেড়ে হাজারে হাজার।

ইছহাকচন্দ্র বিদ্যাসাগর আবারও জড়াইয়া ধরে মোরে অম্লীয় আঁসুজলে
বরবাদ করে মম পাঞ্জাবির উল্টা সাইড। বলে
কত কবি কত সাহিত্যিক কত দার্শনিক প্রাবন্ধিক ছাবন্ধিক আছে
মোর ফ্রেন্ডলিষ্টে। কুন শালা কভু ভুলেও দেয় না কুন লাইক লাভ।
কত সম্পাদক আর কত সাংবাদিক আর কত কত অধ্যাপক ছধ্যাপক
পাতিয়া বাঘের ওত বসে থাকে ফেসবুক খুলে
যেই না নাজনিন বক্ষোপাধ্যায় কুন ছবি দেয়
সাথে সাথে তারা গিয়া লাভ দেয় টিপে
তলে লেখে, "অসাধারন লিখেছেন!" "অপূর্ব হয়েসে!!" "এমনটি শেষ পড়েছিনু
এরিষ্টটলে!!!" "এমনই তো লিখে গেছে তলস্তয় বালঝাক বায়রন ছায়রন দান্তে!!!!"
এইটুকু বলি কুনমতে ইছহাক গড়াইয়া পড়ে যায় কানতে কানতে।
মাটিতে ছড়ায়ে ঠেং মাটিতেই কিল দিয়া চিক্কুরিয়া বলে
চ আর ছয়ের মধ্যে তফাত বুঝে না বেডি ছাতামাথা লিখ্যা পায় কুডি কুডি লাইক আর বাহা বাহা
আর আমি পাই একজোড়া লাইক আর একখানি হাহা। এ কেমন বিচার?
মুসল্লম হতে কেন মুড়ি দামি এই দেশে? কেন বিদ্যা আর গেনের এত মেষাকার?

বানান যে নাহি জানে তার ভাগ্যে কেন জুটে এত লাইক এত লাভ এত এত স্তব?
সান্ত্বনায় হাতাইয়া মাথা তার থোতাখানি ধরে বলি,
দুস্ত! বানানই কি সব?

----------------------------
নামঃ খেলায়েত
পেশাঃ কবি


মন্তব্য

নাদির জুনাইদ এর ছবি

কবি খেলায়েতের লেখা পড়ে মন ভরে গেল।
অনেক দিন পর দিনের শুরুতে কোনো লেখা পড়ে এমন আনন্দ পেলাম।

নুশান এর ছবি

অতি সরস স্যাটায়ার। যখনি মনে পড়ছে কাজের মধ্যে মধ্যেও হেসে যাচ্ছি সারাদিন দেঁতো হাসি

দেশের ফেসবুক সমাজে নাজনিন বক্ষোপাধ্যায়দের একছত্র আধিপত্যে আঁচড় দেয়ার মতো নখ কবি সাহিত্যিকদের থাকলেও বর্তমান সময়ের জনতার কাছে সেই আঁচড়ের প্রদাহ উপভোগ্য নাকি বক্ষোপাধ্যায়দের প্রদাহ উপভোগ্য? পাবলিকের ফেস যদি বুকে রাখতে না পারল তবে ইছহাকচন্দ্র বিদ্যাসাগরদের ফেসবুকে না বসাই ভালো।

নুশান

মেঘলা মানুষ  এর ছবি

জনপ্রিয়তারও শর্টকাট আছে।

সে যাই হোক, খেলায়েত সাহেবকে কেন হাচলত্ব দেয়া হচ্ছে না? চিন্তিত
নাকি তাকে নিজের ছবি পোস্ট করে লাইক আর লাভ নিয়া আসতে হবে? খাইছে

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

খেলায়েত কবি ইদানিং বউয়ের হাতে পিটুনি খাচ্ছে না, ব্যাপার কী?

সৈয়দ ফয়সল আহমদ এর ছবি

পড়ে খুব মজা পেলাম। আবৃত্তি করতে চাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।