শপিং করা আমার স্ত্রীর জীবন উপভোগের অন্যতম অনুষঙ্গ। শপিং করতে সে ক্লান্ত হয়না বরং শপিং করলে তার ক্লান্তি দূর হয়ে মনটা চনমনে হয়ে যায়। এমন এক শপিং এর দিনে, আমার স্ত্রী একটা চাইনিজ রকমারি জিনিসের দোকানে ঘর সাজানোর জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো। অন্যদিকে আমি হার্ডঅয়্যার এর জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। এই যেমন স্টিকি টেপ, গাড়ির পারকিং এ সাহায্য করার সাইড মিরর, বিভিন্ন ঢঙ্গয়ের স্ক্রু ড্রাইভার ইত্যাদি। হঠাৎ নজরে পড়লো প্লাস্টিকের পাকেটে সিল করা ব্যাটারি চালিত একটা কলিং বেল। কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ দরকার হবেনা। কলিং বেলের সুইচটা স্টিকি টেইপ দিয়ে দরজার সাথে সেঁটে দেয়া যাবে। আর মূল যন্ত্রটা বাসার ভেতরে যেকোন জায়গায় আবার সেই স্টিকি টেপ দিয়ে-ই সেঁটে দিতে হবে। ব্যাস, ১২ ডলারে ঝামেলা শেষ। মোড়কের গায়ে এটাও লেখা ছিল যে কলিংবেলে মোট ৪৮ টা মিউজিক প্রোগ্রাম করা আছে, এর মাঝে যেটা খুশি নির্বাচন করে রাখা যাবে। দাম মাত্র ১২ ডলার! আর ৪৮ টা মিউজিক! চাইনিজ জিনিস বলে কথা, এইসব তেলেসমাতি না থাকলে কি চলে!
কোন ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস কিনে আনলে, বাসায় এসে সেটা চালানোর আগ পর্যন্ত আমার শান্তি লাগেনা। বাসায় এসেই কলিং বেল লাগিয়ে ফেললাম। সুইচ চাপ দিতে প্রথমেই যেই সুর ভেসে আসলো তা এই পৃথিবীতে গত ১৫০ বছর ধরে সবাই শুনেছে, প্রতিদিন শুনছে, তারপরেও পুরাতন হচ্ছেনা। আমার কাছে এই সুর অন্যকোন জগতের বলে মনে হয়। যে রহস্যময় জগতের সন্ধান কেউ কোনদিন পায়না, কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য মানব মন আজন্ম রোমাঞ্চিত হয়! বাকি ৪৭ টা সুরের কোনটাই এই প্রথম সুরের ধারে কাছে নাই। তাই প্রথম সুরটাই নির্বাচন করে রাখলাম। বাসায় কেউ না আসলেও, আমি নিজেই বাজিয়ে বাজিয়ে শুনি। আমার স্ত্রী জানে যে এই পাগলামিটা আমি করি, তাই কলিংবেল বাজলে সে দরজা খুলতে বিচলিত হয়না। সুরটা হচ্ছে অস্ট্রিয়ান সংগীতজ্ঞ লুডউইগ ভন বেটোভেনের কালজয়ী সৃষ্টি - “Für Elise”, ইংরেজিতে যাকে বলে “For Elise”, বাংলায় বলা যেতে পারে “এলিসের জন্য”। এরকম ছোট কিন্তু মনমুগ্ধকর সুরকে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ভাষায় বলে “বাগাটেল”। আমার কাছে মনে হয়েছে বেশিরভাগ বিখ্যাত বাগাটেলের বৈশিষ্ট্য অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের সংজ্ঞার মত। “অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাংগ করি মনে হবে, শেষ হয়েও হইল না শেষ।"
Für Elise এর কতটা উঁচু দরের সঙ্গীত এ বিষয়ে অনেক অনেক লেখা, গবেষণা আর বিশ্লেষণ আছে। সেসব নিয়ে আলোচনা করাই বাহুল্য। এই প্রবন্ধে Für Elise এর এলিস্ ব্যাক্তিটা কে তা জানার চেষ্টা করা হবে।
Für Elise এর সুর যেমন রোমান্টিক আর রহস্যময়, ঠিক তেমনি এর ইতিহাসও প্রেম আর রহস্যে আচ্ছাদিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে Für Elise এর মত এরকম একটা মাস্টারপিস বেটোভেন তাঁর জীবদ্দশায় কখনও প্রকাশই করেননি। এই বাগাটেলটা প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে আর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৮২৭ সালে। তাঁর মৃত্যুর ২০ বছর পরে বিখ্যাত জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ লুডউইগ নোহ্ল এই বাগাটেলটা প্রকাশ করেন। কিন্তু এলিসের জন্য লেখা এই বাগাটেলটা কাকে উদ্দেশ্য করে উৎসর্গ করা তা আজও অজানা।
Für Elise এর এলিসটা আসলে কে সে বিষয়ে সঙ্গীত গবেষকদের সব মিলিয়ে ৩ টা তত্ত্ব আছে। জার্মান সংগীতজ্ঞ ক্লাউস মারটিন কপিটজ এর মতে এই এলিস হচ্ছেন এলিজাবেথ রকেল। বেটোভেনের অপেরার নাম ছিল “ফিডেলিও” আর ফিডেলিওর মধ্যমনি ছিলেন এলিজাবেথ রকেল। তিনি ছিলেন একাধারে গায়িকা এবং পিয়ানিস্ট। এলিজাবেথ বেটোভেনের কাছের বন্ধুদের মাঝে একজন ছিলেন এবং মারটিন কপিটজ এর মতে বেটোভেন এলিজাবেথকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন। যেকোন কারনেই হোক তা আর হয়ে ওঠেনি এবং পরবর্তীতে এলিজাবেথ বিয়ে করেন আরেক অস্ট্রিয়ান সংগীতজ্ঞ জোহান নেপোমাক হামেলকে। বেটোভেনের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এলিজাবেথ তাঁর বন্ধু ছিলেন। হামেল এবং এলিজাবেথ দম্পতি মৃত্যুশয্যায় শায়িত বেটোভেনকে প্রায়ই দেখতে আসতেন এবং এই সময় বেটোভেন তাঁর একগোছা চুল কেটে এলিজাবেথকে স্মৃতিস্মারক হিসাবে উপহার দিয়েছিলেন। হামেল-এলিজাবেথ দম্পতির এক বংশধর উইলহেম হামেলস পরবর্তীতে এই চুলের গোছা খুঁজে পান যেটা এখন আমেরিকার সান হোসে স্টেট ইউনিভার্সিটির বেটোভেন সেন্টারে সংরক্ষিত আছে। এলিজাবেথ রকেলকে অনেকেই এলিস বলে ডাকতেন। ফিডেলিও এর আরেক গায়িকা আনার লেখা এক চিঠিতে এলিজাবেথ রকেলকে এলিস বলে সম্বোধন করার প্রমানও পাওয়া গেছে। বেটোভেনের এলিজাবেথের প্রতি যে অনুরাগ ছিল তাতে Für Elise এলিজাবেথ রকেলকে নিয়ে কম্পোজ করা ধরে নেয়া যেতেই পারে। এক্ষেত্রে আমার একটা ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে। তাহলো, বেটোভেন এলিজাবেথকে চুলের গোছা না দিয়ে Für Elise এর কম্পোজিশানটাই তো দিতে পারতেন! তিনি কেন সেটা আড়াল করলেন? এই কারনে নিঃসংশয়ে এটা বলা যাচ্ছেনা যে এলিজাবেথ রকেল-ই এলিস।
ক্যানাডিয়ান সংগীতজ্ঞ রিটা স্টেব্লিনের মতে, এলিস বারেন্সফিল্ড হচ্ছেন এলিস। এলিস বারেন্সফিল্ড ছিলেন বেটোভেনের মতই সঙ্গীতে পরম বিস্ময়কর প্রতিভাবান (ইংরেজিতে যাকে বলে চাইল্ড প্রডিজি) তেরো বছরের একজন কিশোরী। ছেলেবেলায় বেটোভেন নিজেও একজন সর্বজন বিদিত চাইল্ড প্রডিজি ছিলেন যেটা আমরা সবাই জানি। যাই হোক এই এলিস বারেন্সফিল্ড ছিলেন থেরেস মালফেটি নামে এক তরুনীর প্রতিবেশী। থেরেসের সুত্রেই এলিসের সাথে বেটোভেনের পরিচয় (থেরেস কে ছিলেন তা ক্রমশ প্রকাশ্য)। ছাত্রী হিসাবে এলিস বারন্সফিল্ড ছিলেন বেটোভেনের খুব আদরের, তাই Für Elise তাকে নিয়ে কম্পোজ করাটা বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু এই তত্ত্বের প্রণেতা রিটা স্টেব্লিন স্বয়ং বলেছেন তিনি নিশ্চিত নন যে এলিস বারেন্সফিল্ড-ই Für Elise এর এলিস কিনা, কারন আরেকজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বেটোভেনের জীবনের সাথে জড়িয়ে ছিলেন যার নাম থেরেস মালফেটি।
এলিসের প্রকৃত পরিচয়ের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা হল এলিস হচ্ছেন থেরেস মালফেটি। থেরেস মালফেটি ছিলেন বেটোভেনের একজন সঙ্গীতপিপাসু ছাত্রী এবং বন্ধু। থেরেসের বাবা জ্যাকব ফ্রেডেরিক মালফেটি তৎকালীন ভিয়েনার একজন অত্যন্ত ধনী শিল্পপতি ছিলেন আর থেরেসের ভাই জোহান ব্যাপ্টীস্ট মালফেটি ছিলেন ভিয়েনার বিখ্যাত ডাক্তার। মানে এক কথায় থেরেস ছিলেন দীঘল কালো চুলের একজন অস্টাদশী সুন্দরী অভিজাত শ্রেনীর মহিলা। যাকে কিনা ইংরেজীতে বলে “আ টোটাল বেইব”। ১৮১০ সালে বেটোভেন থেরেসকে প্রেম নিবেদন করেন, এবং অবশ্যম্ভাবী ভাবেই প্রত্যাখ্যাত হন। থেরেসকে লেখা বেটোভেনের শেষ চিঠিটা ছিল এরকম- “ Now fare you well, respected Therese. I wish you all the good and beautiful things of this life. Bear me in memory—no one can wish you a brighter, happier life than I—even should it be that you care not at all for your devoted servant and friend, Beethoven.”
Für Elise কম্পোজ করা হয়েছিল ১৮১০ সালের ২৭ এপ্রিল। এরপর কোন কারন ছাড়াই বেটোভেন সেটা অবহেলায় কাগজপত্রে ঠাসা একটা বাক্সে গুঁজে রাখেন। পরে অবশ্য আরেকবার তিনি সেটা বের করে কম্পোজিশনের উপর কিছু কাটাছেড়া করেন, তারপর আবার সেই বাক্সেই ফেলে রাখেন। থেরেস মারা যান ১৮৫১ সালের ২৭ এপ্রিল। ১৮৬৫ সালে নোহ্ল এই থেরেসের এক বংশধরের কাছ থেকে থেরেসের রেখে যাওয়া একটা বাক্স ঘেটে বেটোভেনের নিজ হাতে লেখা Für Elise খুঁজে পান এবং সাথে সাথে কপি করে নেন। রহস্যময় ভাবে বেটোভেনের লেখা সেই অরিজিনাল কপিটা এরপর আর পাওয়া যায়নি। প্রথমত Für Elise এর কপি থেরেসের বাক্স থেকে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, বেটোভেনের হাতের লেখা বেশ জড়ানো এবং কোন দিক থেকেই সুশ্রী ছিলোনা। তাই ধরে নেয়া হয় যে তিনি Für Therese লিখলেও তা হয়ত হাতের লেখা জড়ানো হওয়ায় Für Elise এর মত দেখাচ্ছিল।
বেটোভেনের জীবনটা ছিল হতাশা, প্রত্যাখান আর অসুস্থতায় জর্জরিত । আর তাঁর সৃষ্ট সিম্ফনিগুলি ছিল ততটাই আশা, প্রেম আর শান্তিতে ভরপুর। যেমন তিনি জীবদ্দশায় যেই নয়টি সিম্ফনি লিখেছেন তাঁর মাঝে নবম সিম্ফনিটি আশা, ভ্রাতৃত্ব আর আন্তর্জাতিক সংহতির মহাকাব্য। এই কালজয়ী সিম্ফনিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষনা, কিংবা মানুষের চাঁদে অবতারনের মুহূর্ত সম্প্রচারের মত মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ অর্জন উদযাপনে বাজানো হয়েছিল। এই নবম সিম্ফোনিটি এতটাই বিখ্যাত যে পাশ্চাত্য় সাহিত্যে অনেক অনেক জায়গায় একে শুধু The Ninth বলে উল্লেখ করা হয়, কারন সবাই জানে যে The Ninth বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। ভাগ্যের পরিহাসে এই নবম সিম্ফনিটি সৃষ্টির শেষের দিকে বেটোভেন সম্পূর্ণ বধির হয়ে গিয়েছিলেন। মানুষের বেশিরভাগ অমর অর্জন-ই বোধহয় এমন কষ্টে গড়া জীবন থেকে উৎসারিত!
ছবিঃ চিত্রকরের আঁকায় পিয়ানোতে উপবিষ্ট থেরেস মালফেটি (ছবিটি Alamy Stock Photo থেকে নেয়া)
লেখকঃ সৌখিন ১০/০৬/২০২২
মন্তব্য
প্রায় সবগুলো জার্মান নামের বাংলা লিপ্যন্তর ভিন্ন হবে। আপাতত শুধু এলিজ়ে জানিয়ে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। জার্মান ভাষায় যে ভ কে ফ বলে, ডাব্লিউ কে ভ বলে ইত্যাদি ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ সচেতন । এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্য আমি সাধারণ মানুষ ইংরেজিতে যেভাবে উচ্চারণ করে সেটা লিখতে চেয়েছি। বি এম ডাব্লিউ এর পূর্ণনাম যে বাইয়ারিশে মোটরেন ভেরকে সেটা বোধ করি ইউরোপ ছাড়া অন্য কোনো দেশে খোদ বি এম ডাব্লিউ এর ডিলাররাও জানেনা। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি
আপনার যেমন ইচ্ছা, তেমনই লিখতে পারেন। তবে,
এগুলো 'ঝামেলা' মনে করলে ইংরেজি ছাড়া সবকিছুই তো ঝামেলা (আমরাসহ), তাই না?
সাধারণ মানুষ যদি বাংলা-ইংরেজির বাইরে তৃতীয় ভাষার সংস্কৃতির একজন মানুষের নাম আপনার লেখার কল্যাণে বাংলা লিপ্যন্তরে পড়েন বা বলেন, ক্ষতি কী? আপনার লেখা পাঠকের কৌতূহল উসকে দিয়ে তার খানিক নিবৃত্তি ঘটাচ্ছে, সেটা আরেক দাগ গভীর হয় যদি চরিত্রগুলোর নাম আপনি নিজেও খানিক কাছ থেকে অনুসন্ধান করেন। এই চেনা আর চেনানোর প্রক্রিয়ায় ইংরেজ কীভাবে এলিজ়ের নাম ভুল উচ্চারণ করে, সেটা বাহুল্য।
যে জানে না, সে অনুসরণীয় উদাহরণ না। কোথাকার কোন ডিলার কী জানে বা জানে না, সেটা আমাদের লেখা চর্চার নির্দেশক হতে পারে কি?
জার্মান ভাষা চর্চার ইচ্ছা নাই
এই রচনার মূলভাবের সাথে শুদ্ধ জারমান ভাষায় এলিজ বলতে পারার গুরুত্ব আমার কাছে শুন্য
দুঃখিত! রূঢ় শোনালো লেখকের মন্তব্য! আপত্তি নেই, আপনার যেমন ইচ্ছা, তেমনই লিখতে পারেন।
ইংলিশ ভিন্ন অন্য কোন ভাষার শব্দের উচ্চারণ নিয়ে সন্দেহ থাকলে আমি সাধারণত ইংলিশে শব্দটি যেভাবে লেখা হয়েছে ঠিক সেভাবেই রেখে দেই। এটি কোন ভালো চর্চ্চা নয়। ভালো হচ্ছে বাংলায় লেখার সময় যতদূর সম্ভব কাছাকাছি উচ্চারণের কিছু লেখা।
ঠিক এই মুহূর্তে Annie Ernaux-এর নাম বাংলায় কী করে লিখতে হবে সেটা নিয়ে বিতর্ক চলছে। এখানে ফরাসী r বাংলায় হ/র/খ নাকি অন্য কিছু হবে সেটা নিয়ে নানা মত দেখতে পাচ্ছি। এড়িয়ে না গিয়ে এই চেষ্টাটা করা বরং ভালো। অনুবাদ সাহিত্যে এমনিতেই বাংলা অনেক পিছিয়ে আছে, তারওপর প্রতিবর্ণীকরণ অথবা লিপ্যন্তরের মতো বিষয়ে বাংলা ভাষার লেখকগণ এড়িয়ে যেতে চাইলে সেটি বিষয়টিকে আরও পিছিয়ে দেবে।
মোনালিসা কে বা বনলতা সেন কে তা নিয়ে অনিঃশেষ বিতর্ক চলবে। তবে তাতে মোনালিসা দর্শনে দর্শকের বা বনলতা সেন পঠনে পাঠকের রস আস্বাদনে কোন অসুবিধা হবে না। Für Elise বা Für Therese অমনই কিছু।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো চর্চ্চা না কেন? ইউরোপীয়ান, চীনা, জাপানি সহ প্রায় সব উন্নত জাতির লোকই তো মনে হয় বিদেশী শব্দ - বিশেষ করে অইউরোপীয় শব্দ - নিজের মত করে নেয়। তাহলে আমরা কেন ছেড়ে দিব ওদের? কি ঠেকা পড়েছে? তাছাড়া ছাড়া-নাছাড়ার কথা বাদ্দিলেও এটাই তো স্বাভাবিক যে আমরা এসব শব্দ আমাদের নিজেদের বাগ্যন্ত্র আর বর্ণমালার উপযোগী করে নিব, উল্টোটা নয়, তাই না? আপনার কি মত?
বাই দা ওয়ে, কেমন আছেন? লং টাইম নো সী!!!
****************************************
ব্লগ লিখি না তাই আর দেখা হবে কী করে! আশা করি আপনি কুশলে আছেন।
অন্যরা কে কী করেন সেটা নাহয় আমরা বিবেচনা না করি। আমাদের ভাষায়, আমাদের জীভ ও কানে যতদূর সম্ভব সঠিকের কাছাকাছি যাওয়া যায় বরং সেটার চেষ্টা করি। যদি আমাদের কোন বর্ণের ঘাটতি থাকে তাহলে সেটা পূরণ করার চেষ্টা করি। ধরুন, বাংলায় 'অ্যা' বর্ণটি নেই। তিন দশকের বেশি সময় আগে এটি বানানোর চেষ্টা দেখেছিলাম, যে কোন কারণে হোক সেটা আগায়নি, কিন্তু তাতে তার প্রয়োজনীয়তা কমেনি। যে বর্ণগুলো প্রতিস্থাপনযোগ্য সেগুলোকে বাদ দিয়ে যে বর্ণগুলো নেই সেগুলো আনা যেতে পারে। বর্ণ, ব্যাকরণ সবই প্রতিনিয়ত ঘষামাজাযোগ্য বিষয়। আর নতুন শব্দ নির্মাণ বা আমদানী তো মোটামুটি প্রতি মাসের ব্যাপার।
সালমা হায়েক বা অ্যান্টোনিও ব্যান্ডেরাস যখন ইংলিশ বলেন তখন তাতে স্পেনিশের প্রভাবটা খুব লক্ষ্যণীয়। এগুলো আমরা মেনে নেই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পছন্দও করি। কিন্তু তাতে সেগুলো শুদ্ধ হয়ে যায় না। তাঁরা যদি চেষ্টা করে ওসব পাল্টাতেন তাহলে মন্দ কিছু হতো না।
চোস্ত ফরাসী বা স্পেনিশ বা রুশ বা আরবী বলতে পারেন এমন ব্রিটিশ বা আমেরিকানের সংখ্যা কোটিতে গুনতে হবে। ঐ মানুষগুলোই যখন ভারতীয় কারো নাম উচ্চারণ করতে যান তখন সেটা বাংলা সিনেমা/নাটকের রবার্ট ক্লাইভের মতো হয়ে যায়। এটাকে আমরা কী বলতে পারি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন