প্রবাসী বন্ধুর চিঠি: জীবনের না বোধ, জীবনের হ্যা বোধ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৯/০৯/২০০৭ - ১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সৌদি প্রবাসী বন্ধুর চিঠি। পড়ে মনে হয়েছে অন্যদের সাথে শেয়ার করা যায়। তাই পোষ্ট করলাম।
.........................................................................................................................

ভরা জ্যোস্না রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে যে অনুভুতি জাগে ঠিক সেরকম-ই আছেন। প্রত্যাশাও তাই।

আমাদের আকাশেও জোস্না জাগে, আলো ছড়ায়, কিন্তু তাতে আমাদের মনে কোন ছায়া ফেলে না। অন্য কোন এক বোধ আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সেই বোধ থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত উম্মুখ হয়ে থাকি, ঠিক চাতক পাখির মত।
উদাহরনটি ঠিক মত হয়নি বলে মনে হচ্ছে। আসলে মুক্তির জন্য কি চেয়ে থাকি, না যুদ্ধ করছি, না শুধু কল্পনার ফানুস উড়িয়ে নিজের মনকে প্রশান্তির অতলে নিতে চাচ্ছি।
ঘোর বাদলে বাড়ির আঙিনায় কাগজের নৌকা ভাসানোর ছোট বেলার সেই স্মৃতি মনে পড়ছে। অনেকগুলো নৌকা বানাতাম যেটি অনুণের স্্েরাতে দ্রুত ভেসে যেত সেটিকে সফলতা ভেবে গর্ব বোধ করতাম। কিন্তু পরণেই প্রবল বৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে যেত। তখণ নতুন করে আবার কাগজের নৌকা বানাতাম কিন্তু সেই অনুণের স্রোতে আর টেনে নিয়ে যেত না, ৫-১০ বার চেস্টা করে করে হয় বৃষ্টি ধরে গেছে নয়তো কান্ত হয়ে উদ্যম হারিয়ে এ খেলা শেষ করতাম।

জীবনটাও কি ঠিক সেরকম। সেই কৈশরলব্দ বোধের কল্পনা, আর স্বপ্ননিয়ে যে নৌকা ভাসিয়েছি “অনুণের” স্্েরাতে সে নৌকা ভেসেছে। কিন্তু বাস্তবতার পদাভারে যৌবনে নৌকো তার গতি হারিয়ে ফেলে। ঠিক নিমজ্জিত নয় তবে কোন রকমে টিকে থাকার স্বার্থকতা নিয়ে গর্বিত হওয়া ছাড়া তার আর কোন পথ থাকে না। আজ ঠিক সেখানে দাড়িয়ে নতুন করে নৌকা বানাতে চাই। পুরানো স্বপ্নকে নিয়ে তার যাত্রী হবো সেই কল্পনার মাঝে এসে ঠাই করে চিরদিনের চেনা সেই বাস্তবতা। যার রূপ নতুন, কিন্তু উপলব্দি পুরানো। সেই উপলব্দির বোধে আচ্ছন্ন হয়ে থাকি। আর মুক্তির জন্য উম্মুখ হয়ে থাকি প্রতিদিন, প্রতিণ। আর নির্মম সত্যটা হলো আমাদের জীবনে এই চেয়ে চেয়ে থাকার পরে নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়া আর কিছু থাকে না।

নষ্টালজিয়ায়ার কথা যে বললাম সেখানেও বা কি আছে। বাস্তব কোন সুখ নেই। কিন্তু কৈশরলব্দ বোধ থেকে যে সুখের কল্পনায় ভেসে বেড়াতাম ঠিক সেগুলোর জাবর কেটে কেটে বসে থাকা আর ঠোটের কোনায় তাচ্ছিল্যভরা কান্তিকর এক হাসি যা মুহুর্তের মধ্যেই মিলিয়ে গিয়ে চোখের কোনায় জল হয়ে দেখা দেয়।

জীবনের এ বোধ হচ্ছে না বোধক। এর বাইরে গিয়ে পৃথিবীকে যারা দেখতে পারে তারা একেবারে ভাল না থাকুক, খারাপ নেই এ কথা বলতে পারি নির্দিধায়। এই যে ভাল আছি। অনেকের চেয়ে অনেক দিক থেকে ভাল আছি (কেমন যেন আত্মঅহংকারী কথা)। ঠিক ও রকমের না, যা বলতে চাচ্ছি তার প্রথম কথা হলো, একজন মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়টাতো আছে। একটা কৈশর, একটা যৈাবন কালকে অতিক্রমের সাথে কিছু নির্মল মুহুর্ত আছে যা অনেকের নেই। পিছনের সেই নির্মল মুহুর্ততো আমাদের আগামী দিনের প্রেরণা। আমাদের একান্ত প্রিয় মুহুর্তগুলো কি এখনো আমাদের প্রশান্তি দেয়না। দেয় নিশ্চিত করে দেয়। ঠিক সেই মুহূর্তগুলোই আমাদের সঞ্চয়। জাল দিয়ে মাছ ধরার মতো, প্রয়োজনীয় মাছটি রেখে বাকিগুলো ঝেড়ে ফেলে জালটিকে পরিস্কার করি, যেন পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় মাছটিই ধরতে পারি, সে রকমই আমাদের একান্ত মুহুর্তগুলোকে সঞ্চয় করে বাকি অপ্রয়োজনীয়গুলো ফেলে দিয়ে, নতুন সঞ্চয়ের জন্য তৈরি হতে থাকি। এবং এই তৈরী হওয়ার কালটি তো আমাদের বর্তমান। ঐ যে বল্লাম বোধের কথা, যে বোধ থেকে মুক্তির জন্য উম্মুখ থাকি। সেই সময় কাল।

সময়কে অতিক্রম করার যে সময় চলছে সেখানে বসে দুঃখ করাটাকে কি ভাষায় আখ্যা দেয়া যায়?

--------

- রেনেসা


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কাব্যময় বোধ। ভালোই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অনেক সত্য বলেছেন আপনার বন্ধু। জাল দিয়ে মাছ ধরার উপমাটি দুর্দান্ত! নস্টালজিয়ার ব্যাখ্যা যেমনটা দিয়েছেন, আমারও মনে হয় ব্যাপারটা খাপে খাপ সেরকমই। বন্ধুর কাছ থেকে রেগুলার এমন চিঠি পান এবং আমাদের সাথে শেয়ার করুন। সেই বন্ধুটিও হয়ে যাক আমাদের সবার বন্ধু। তিনিও তুলে আনুন জীবনকে!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রবাস । রঙ্গীন এক ভ্রান্তি মাত্র ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল বলেছেন। বিপরীতটা ভেবে দেখলাম। স্বদেশ কি তাহলে একরঙা, একমাত্রিক এক স্বাভাবিকতা?

লেখাটা পড়ে ভাল লাগলো। খুব কাব্যিক চিঠি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

না । স্বদেশ এক বাহারী স্মৃতিময়তা মাত্র,যা কেবল স্মৃতিতেই ধরা দেয়,বাস্তবে নয় ।
দেশ মানে তো কেবল মানচিত্র নয়,দেশ মানে মানুষ,মানুষের সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়া । দেশ থেকে পাসপোর্ট ভিসার দুরত্বে সরে এসে,আমাদের ভাবনায় আমাদের কাতরতায় যে দেশের ছবি ফুটে উঠে-সেই দেশ কি আর আসলেই তেমন থাকে?
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রেনেসা (লেখক) এর ছবি

মাহবুব মোর্শেদ, অচ্ছু্্যত বালাই

ধন্যবাদ।

হাসান মোর্শেদ: অর্থনৈতিক কষ্ট কী তা যারা দেখেছে তারা রঙিন ভ্রান্তি যেনেও মেনে নিতে বাধ্য হয়। এখান থেকে বেরুতে চায় সে, কিন্তু পারে না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রেঁনেসাঃ আমি নিজেই তাদের একজন হাসি

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি এর ছবি

কোন এক মণিষী যেন, বলেছিলেন "কোন মানুষ যে মূহূর্তে তার দেশ ছেড়ে, সংস্কৃতি ছেড়ে ভীন দেশে গিয়ে বসবাস শুরু করে সেই মূহূর্তেই তার ঘড়িটি বন্ধ হয়ে যায়"। "The Future of Nostalgia" বইতে Svetlana Boym চমৎকার দেখিয়েছেন যে মাইগ্রেন্টরা কতটা নষ্টালজিক। বাস্তব ও প্রাত্যাহীক কালেকটিভ কনসিয়াসের শূন্যতা বা তার সাথে না মিলতে পেরে সে স্বপ্নের আশ্রয় গ্রহণ করে। Boym আরও দেখিয়েছেন যে এই নষ্টালজিয়া অতীতের মত ভবীষ্যতমূখীও হতে পারে যেমন স্পেস এক্সপ্লরেশন, মঙ্গলগ্রহে বসবাস ইত্যাদী। আমার মনে হয় যা ২য় প্রজন্মের সমস্যা কারণ সম্ভবত তাদের কোন অতীত স্মৃতী নেই।

Boym হাভার্ডের শিক্ষিকা এবং আমেরিকায় সোভিয়েত ইমিগ্রান্ট।

আন্দ্রেই তারকোভোস্কির Nostalghia (1983)
এবিষয়ে একটি চমৎকার ছবি যা একই রকম বলে।

- অপ্রিয়

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

উক্তিটির সাথে শতভাগ একমত। আমার নিজের জীবন-মনন তা-ই বলে। আমার মনে বাংলাদেশ আটকে আছে ২০০৪ সালে। এর পরের পরিবর্তনগুলোকে আমি মেনে নিতে পারি না সহজে।

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

পড়ে কষ্ট লাগলো।
-----------------------------------
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।