হুমায়ুন আহমেদ কে প্রথম যখন দেখি, তখন আমি খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। সেসময় ক্লাস সিক্সে পড়ি; বাংলা বই বলতে তখন সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক এবং হুমায়ুন আহমেদ এর বইগুলোই বুঝতাম। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কিছু অনুবাদও পড়েছিলাম। তখন আমাদের স্কুলে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল, যার নাম ছিল ”বই পড়ে জান”। প্রতিযোগিতাটির দুইটি পর্যায় ছিল--ইন্টার স্কুল এবং ইন্ট্রা স্কুল। প্রথম পর্যায়ে আমরা চার্লস ডিকেন্স এর গ্রেট এক্সপেকটেশনস বইটি পড়ে তার উপর একটি নৈব্যক্তিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেই পরীক্ষার পুরষ্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রথম দেখেছিলাম হুমায়ুন আঙ্কেল(!) কে। উনার সময় হাত মেলানোর সময় হাতটা কি একটু কেঁপে গিয়েছিল আমার? ঠিক মনে পড়ছে না; বহু বছর আগের কথা।
তখনো উনি চরম বিখ্যাত হননি। তখনো বহুব্রীহি, অয়োময়, বাকের ভাই এর জন্ম হয়নি। অন্যেরা কি ভাবেন আমি জানি না, কিন্তু আমার ধারণা আম জনতার (পড়ুন ”মাস পিপল”) কাছে হুআ জনপ্রিয় হতে শুরু করেন টিভি নাটকগুলো সাফল্য লাভের পরেই। উনার বইগুলো হয়তো খুবই ভালো ছিল (হু, প্রথম দিকের বইগুলোর কথাই বলছি), কিন্তু গ্রাম মফস্বলে উনার প্রবেশ টিভি নাটকের মাধ্যমেই। উনাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম খুব অহংকারী ধরণের হবেন। কিন্তু উনি আমাকে দেখে বেশ বোকা বোকা টাইপের একটা চেহারা করে একাট হাসি দিলেন এবং পুরষ্কারটি হাতে তুলে দিলেন। পুরষ্কার ছিল ২/৩টি বই। বইগুলো আমার খুব প্রিয় ছিল। একটির নাম ছিল "মেঘেদের কথা”. সেই বইতে বিভিন্ন ধরণের মেঘের ছবি আর সেসব মেঘ দেখে আবহাওয়ার ব্যাপারে পূর্বাভাস দেয়ার ব্যাপারে অনেক তথ ছিল। বইটি পড়ার পর থেকেই প্রায়ই আমি মানুষজনকে ভড়কে দিতাম এসব বলে --”আজ কিমুলাম মেঘ, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বল্লেই চলে। আজ নিম্বাস মেঘ, বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হবে।”
আমি, এবং আমার জেনারেশন এর অনেকেই বড় হয়েছেন হুআ ও শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল এর বই পড়ে। সেদিন হাতে পেলাম হুআ এর একটি সংকলন--জোছনা ত্রয়ী। সংকলনটিতে তিনটি পূর্বে প্রকাশিত বই রয়েছে। এগুলো হচ্ছে জল জোছনা, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক, সবাই গেছে বনে। তিনটি গল্পই আগে পড়া, কিন্তু অনেকদিন পর আবার পড়ে ভালোই লাগলো, এবং একটা কথায় মনে হলো। যে লেখক একসময় এত ভালো লিখতেন, তিনি এখন কি করে এরকম ফালতু লিখেন। দু’বছর আগের একটি বইমেলা থেকে কি জানি ২টা বই কিনেছিলাম উনার। এতটাই অখাদ্য ধরণের লিখা ছিল সগেুলো যে বিশ্বাস করতে কষ্টই হয়েছিল যে সেগুলো হুআ এর লিখা।
অনেকেই স্বীকার করেন না যে তারা জীবনের কোন এক সময় হুআ এর লিখা দ্বারা চরম ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদেরকে আমি ভন্ড ছাড়া কিছুই বলবো না। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন কি, যে আপনার একবারও ইচ্ছে হয়নি হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে হিমু সেজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াতে? চান নি মিসির আলির মত বুদ্ধিমান ও ইনটারেস্টিং হতে? থাকতে কি ইচ্ছে করেনি হোটেল গ্রেভার ইন এ? কষ্ট হয়নি বাকের ভাই মির্জা সাহেব এর জন্য? ফিহা সমীকরণের সমাধান না করেই ফিহা আত্নহনন কি একবারের জন্যেও দু:খিত করেনি আপনাকে? অমানুষ কি ম্যান অন ফায়ার এর চেয়ে কোন অংশে কম রোমহর্ষক?
প্রিয় লেখক যখন আগের মত লিখতে পারেন না, তখন খারাপই লাগে। প্রিয় হুআ, আপনি আবার আগের ফর্মে ফিরে আসুন। আপনার অনুজ এখনো আগের মতই খুরধার। চাইলে আপনিও পারবেন।
-ইশতিয়াক
(বহুদিন পর আবার লিখলাম; এই গতিতে লিখলে জীবনেও সচল হওয়া লাগবে না )
মন্তব্য
ছোটবেলায় হুমায়ুন আহমেদের কুহক, দেবী, নিশিথীনি বইগুলো পরপর পড়ে এতো ভয় পেয়েছিলাম, তারপর থেকে ভয়ের বই/ছবি পড়া/দেখে একদম বাদ দেই। গল্পগুলো পড়ে ভয় পেলেও ভাল লেগে গিয়েছিল মিসির আলীকে, সত্যিই এক অসাধারণ চরিত্র।
আমার মতে হুমায়ুন আহ্মেদ একজন অসম্ভব প্রতিভাবান লেখক। তার বইগুলো একসময় আমি গোগ্রাসে গিলতাম। 'আমার আছে জল', 'হোটেল গ্রেভারইন', 'তোমাদের জন্য রূপকথা', 'বৃহন্নলা', আরো অনেক অসাধারন উপন্যাস আমার শেশব, কৈশোরের পুরোটা জুড়ে আছে। সম্ভবত '৯০ এর পরে তার মাথায় ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনা ঢুকে যায়, জড়িয়ে যান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে; লেখার অবনতি সেখান থেকেই মনে হয়। আমার মতে, যেকোনো লেখকের ব্যাক্তি জীবনের আদর্শ আর মুল্যবোধের অবক্ষয় তার লেখাকে প্রভাবিত করে।
হুমায়ুনের মিসির আলী আর সায়েন্স ফিকশন গুলোর ভক্ত আমি। হিমু কখনোই ভাল্লাগেনি। শুভ্রর কিছু কিছু ভাল লেগেছে। ভদ্রলোকের লেখা আগে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তাম, এখন সে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। গত বছরের শারদীয় দেশ কিনলাম কদিন আগে (এবারেরটা কেনা হয়নি এখনো) সেখানে ওর একটা উপন্যাস আছে। কয়েক পাতা পড়েই রেখে দিয়েছি। উনি আবার ভাল লিখুন এটা আমারো কামনা।
লেখা ভাল হয়েছে ইশতিয়াক সাহেব।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
হুমায়ুন আহমেদের মত ন্যাচারাল ট্যালেন্ট আসলেই বিরল। ওনার প্রথমদিকের বইগুলার কোন তুলনা নাই। কিন্তু টাকা আর মাইয়া মানুষের লোভই ওনার বারোটা বাজাইছে। গত ১০-১২ বছরে ওনার কোন লেখা পড়া হয় নাই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
লেখক কখনো কখনো অতিমানবের মতো। সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যানের মতো তাদের অতিক্ষমতা থাকে। এই ক্ষমতাগুলোর সাথে কিন্তু আসে মারাত্মক রেসপনসিবিলিটি। এই রেসপনসিবিলিটি ছাড়া কিন্তু অতিমানবের ক্ষমতার অপব্যবহার হবেই।
অনেকে বলেন তার লেখা দেখেন, ব্যক্তি জীবন দেইখেন না। আমি বলি ঠিক তার লেখাই দেখি। কিন্তু লেখক হিসেবে তার যে অসীম ক্ষমতা তার রেসপনসিবল ব্যবহার তিনি করেননি।
আপনি হিমু, মিসির আলী কিংবা তার অন্যান্য উপন্যাসের চরিত্রের কথা বলেছেন। হিমু দেখে কত কত ছেলে পিলে ইনফ্লুয়েন্সড হয়? আমিও হয়েছি। কিন্তু হিমু আমাদের কি শেখায়? স্বাধু হওয়া নাকি ফাতরামি? ১৫ বছর আগের হিমু আর এখনকার হিমুর মধ্যে কি আকাশ পাতাল তফাৎ নেই?
যে ইনফ্লুয়েন্স আমাদের কেবল ফালতু কর্মকান্ড শেখায় তার মুল্য কি?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এহ হে... একদম ফালতু বলে ফেললেন হিমুকে?
চলমান রূঢ় বাস্তবতা, ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করা, লোকদেখানো সভ্যতা, নিয়মতান্ত্রিকতা, যান্ত্রিকতা, আর খটমটে জীবনকে কি বেশি ভালোবেসেছেন মুর্শেদ ভাই?
বাস্তবে না হোক, কল্পনায় তো মন বোহেমিয়ান হতে চায়...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
লেখাটা ভালো লাগলো।
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে অনেক দিন ধরেই। আপনি সেই ইচ্ছাটাকে চাগিয়ে দিলেন।তার বর্তমান খারাপ বা বলা ভালো একেবারেই বাজে লেখাগুলো এবং ব্যাক্তিগত জীবন তাকে এখন সবার কাছে অনেক নিচে নামিয়ে নিয়েছে। কিন্তু পটেনশিয়ালিটি তার অবশ্যই আছে। নইলে এতগুলো দিন ভালো লিখেছেন কি করে? তার শুরুর দিকের বইগুলো তো আসলেই অসাধারণ ছিলো। নাম বলতে শুরু করলে কতগুলো বইয়ের নাম বলতে হবে যে!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
হুমায়ুন জমিয়ে গল্প লিখতে পারেন, বা পারতেন, এ বিষয়ে কারো দ্বিমত দেখি নি। গল্পে কিভাবে ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করতে হয়, এবং কি ভাবে তার একটা মোটামুটি সন্তোষজনক সমাধান দিয়ে পাঠককে তৃপ্ত করতে হয়, সেটা তিনি ভাল রপ্ত করেছেন। এই দিক দিয়ে তাঁর লেখাতে সুনীল আর শীর্ষেন্দুর কোন কোন বৈশিষ্টের চিহ্ন দেখা যায়।
হুমায়ুন একজন রসায়নের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি জানেন কিভাবে বিভিন্ন রসের সংমিশ্রন ঘটালে লোকে তা "খাবে" (এই "খাওয়া" শব্দটি কিন্তু তাঁরই ব্যবহৃত)। টীন-এজারদের কাছে অদ্ভুত রসের অনেক সমাদর। এক কালে সৈয়দ শামসুল হকও এই রস অনেক ব্যবহার করেছেন, যেমন "লাল গোলাপে"। তবে সৈয়দ সাহেবের কোন কোন রচনায় আদি রসেরও বিস্তর ছড়াছড়ি, হুমায়ুন যা সাধারণত ব্যবহার করেন আরেকটু সুপ্তভাবে। জাফর ইকবালও সায়েন্স ফিকশনের লঘু অদ্ভুত জগতেই প্রধানত বিচরণ করেন, তাঁর অনেক ক্ষমতা ও মেধা থাকা সত্ত্বেও, কারণ বাঙালী বই ক্রেতারা এটাই বেশী পছন্দ করেন। এবারের নিষিদ্ধ সাপ্তাহিক ২০০০এ মুজাইয়ের আত্মজীবনীর কিছুটা আছে। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করছেন, কিভাবে ছোট বেলাতে তাঁদের পিতা বিভিন্ন অদ্ভুত কর্মকান্ডে পুরো পরিবারকে সহযোগী করেছেন। এটা আমার কাছে স্বাভাবিক বাঙালী পরিবার মনে হয় নি। 'হিমু ' হলো এই পারিবারিক বৈশিষ্টের/পরিবেশের অদ্ভুত হুমায়ুন, 'মিসির আলী' হলো যুক্তিনিষ্ঠ অধ্যাপক হুমায়ুন।
আমি মনে করি হুমায়ুন হুমায়ুনের মতই আছে। সে নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে। অনেকতো ভাল লেখা হলো। এবার একটু রিস্ক নেই-এরমক কিছু।
আর সমস্যাটা মনে হয় কিছুটা আমাদের। কিছুটা সামাজিক। কিছুটা ধর্মীয়। আমরা মনে হয় ব্যক্তি হুমায়ুন ও লেখক হুমায়ুনকে আলাদা করতে পারিনি। আমাদের ভিতেরর ধমীয় সামাজিক বোধ মেয়ের বান্ধবীর সাথে প্রেম, অভিসার, রাত কাটানো (মিডিয়ার প্রচারিত শব্দ, যদিও সত্য, তবুও আরো সহজ ভাষায় লেখা যেত), বিয়ে, দেন দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙে দেয়া মেনে নিতে পারিনি। অভিসার, রাত কাটানো শব্দগুলো আমাদের মধ্যে ঘৃণার জন্ম দেয়।
যে কারনে আমাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ জনপ্রিয়, যদি সে প্রতি দিন ঐ একই বিষয়ে নিয়ে লেখে, আমরাই তখন বলবো গতানুগতিক। তার পূর্বের সব লেখাই যেমন মানোত্তির্ণ নয় তেমনি বর্তমানের সবকিছুই যে খারাপ তা বলা যাবে না। আমি তার শয়তান নাটকটি দেখেছি। কত সুন্দও সহজ ও স্বাভাবিকভাবে দেখিয়েছেন শয়তান যদি কিছু থাকে তা মানুষের মধ্যেই। মানুষ যেমন মানুষ, তেমনি মানুষ-ই শয়তান। আবার ৯ নম্বও বিপদ সংকেত আমার কাছে বাজে মনে হয়েছে।
আমাদের ধর্মীয় সামাজিক বলয়ে ’নৈতিক অনৈতিক মানদন্ডে ভালমন্দেও বিচার’ প্রচলিত ধারায় যে মানসিকতা তৈরী সেখান থেকে যখন তাকে চর্চা করি তখণ অবচেতন মনে পেছনের বোধ সামনে এসে দাড়ায়। বলে ছি! এত অধপতন! তার পর নাক সিটকে বলি হুমায়ুন আগের মত নেই।
সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ুন আগের মত থাকুক তা আমি ব্যক্তিগত ভাবেও চাই না। সে ভাঙুক, নিজেকে ভাঙুক, সমাজ দর্শনকে ভাঙুক, শব্দকে ভাঙুক - নতুন দৃষ্টি কোন থেকে, তৈরী হোক নতুন নতুন দ্বার। তার মত ন্যাচারাল ট্যালেন্ট দিয়ে ভাঙা গড়া সম্ভব। অসম্পুর্ণ কোন অয়বয় দেখে যেন আমরা সিদ্ধান্ত না নেই - কিছুই হয়নি।
জাপানি চলচিত্র সেভেন সামুরাইর যারা শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দেখেননি, তারা যেমন কোন মানে খুজে পাননি, তেমনি আমরাও যেন শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি হুমায়ুনের শেষ দৃশ্য দেখার জন্য। তার পরে না হয় রায় দিলাম।
- না আমারদের প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ আর আগের মত প্রিয় নেই।
রেনেসা
ওপরের মন্তব্যে এবং অনেক ভক্তের ধারণায়ঃ
আবারঃ
হুম, তাহলে ?
হুমায়ুনের একটা অংশ আগের মতই আছে। যখন তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন, এক সাক্ষাতকার গ্রহণকারী জিজ্ঞেস করেছিলেন - আপনার প্রায় সব নায়িকারা ১৮ বছরের তরুণী , পরীর মতো চেহারা, মায়াভরা হৃদয়, বুক চেপে কষ্ট সহ্য করা, মধ্যবিত্ত অবিবাহিতা নারী। আপনার বয়স যখন বাড়বে, এই চরিত্রের কি কোন উত্তরণ ঘটবে ? হুমায়ুন পরিষ্কার উত্তর দেন নি।
ধর্ম, সামাজিক পরিবর্তনশীল রীতি-নীতি, এ সব কিছুর বাইরে কি ধ্রুব মানবিক মূল্যবোধ বলে কিছু নেই? কি জানি। হয় তো আমি নাস্তিক হয়েও রক্ষনশীল। সেলিব্রিটি হয়ে গেলেই কি কারো নতুন হাত-পা গজাতে হবে? যেটাকে ভক্তরা বাহবা দেবেন , বলবেন --তিনি এক্সপেরিমেন্ট করছেন।
তবে হয়তো সব দায়িত্ব হুমায়ুনের নয় ; অয়োময়ের পরে এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ালিউল ইসলাম মেয়ে দীপাকে অভিনয় থেকেই সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, পরে হুমায়ুন তাঁকে একটা বই উৎসর্গ করেছেন - তাতে নষ্ট বন্ধুত্বের উল্লেখ ছিল। তহুরা আলীর মনে কি ছিল বা আছে, আমি জানি না। সংসার ভাঙ্গার মধ্যে কোন গৌরব আছে আমি মনে করি না। একটি লাভের বিনিময়ে ক্ষতির অংকটি অনেক বড়।
হয়তো হুমায়ুনের মেধাবী অন্য অংশটি এখন ভুগছে কিছুটা অনুশোচনাতে, এবং তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একটা আত্ম-দ্বন্দ্ব, হয়তো অচেতন ভাবেই। এবং সেটা তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে ব্যাহত করেছে। 'নয় নম্বর বিপদ সংকেত' কোন হাসির ব্যাপার নয়, কোন এক্সপেরিমেন্ট নয়। হুমায়ুনের জীবনের জন্য এটা হয়তো এক অশনি-সংকেত। তিনি কি ১৮বছরের পরীর মতো মেয়েদের নিয়েই সারাজীবন কাটাতে পারবেন?
সবাইকে ধন্যবাদ আমার লিখা পড়ার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো যে উনার কোন লেখা পড়ার সময় মাথায় ব্যক্তি হুমায়ুনের চেয়ে লেখক হুমায়ুনই বেশি প্রভাব ফেলে। সুতরাং এরকম ভাবার কোন কারন নেই যে আমরা তার ব্যক্তিগত জীবনের উপর ভিত্তি করে লেখার মান যাচাই করছি। এবং হিমু, মিসির আলি এই চরিত্রগুলোও আমাদেরকে আনন্দ দিয়েছে, আর যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে দুরে সরে যেতেও প্রভাবিত করেছে; আমি নিজে বন্ধুদের সাথে রাত ১টা নৌকায় চড়ে জোছনা দেখেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি--এর জন্য আমাকে গৃহ ত্যাগ করত হয়নি। হয়তো হিমুর জোছনা ফ্যাসিনেশন সম্পর্কে না পড়লে আমি কখনোই এই অপূর্ব দৃশ্য দেখত যেতাম না!
--ইশতিয়াক
অস্বীকার করব না, ছোটবেলায় আমার বারবার পড়া এবং প্রিয় বইগুলোর মধ্যে 'বোতল ভূত' ও 'পিপলি বেগম' যে কতবার পড়েছি তার ইয়াত্তা নেই। পরবর্তীতে তার লেখা ভালো ভালো বইগুলোর অধিকাংশই স্কুলের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়া এবং বেশির ভাগই বেশ পুরোন বই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি তার বইগুলো বর্তমানে অখাদ্য, কুখাদ্য ছাড়া কিছুই না। বড় বড় ফন্ট, চকচকে মোড়ক এবং অপ্রাসংগিক সংলাপ, সর্বোপরি স্হূল রসিকতা ছাড়া তার বইগুলোতে এখন আর কিছুই নেই। হুজুগে বাংগালী এখনও তা গিলছে। আমার প্রশ্ন, তার বইগুলো কি এখন নব্য বিবাহিতা 'ইস্তারী'টি লিখছেন? নাকি এসব তার brain child?
.if I could wake up at a different place, at a different time, could I wake up as a different person?.
হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এখানে বেশি আলোচনা হাচ্ছ বলে আমার ধারণা। তিনি যদি পরীর মতো দেখতে ১৮ বছরের মেয়ে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চান, তা আমি পছন্দ করতে না পারি, কিন্তু সেটা তাঁর অধিকার। অধিকাংশ বিখ্যাত ব্যক্তির অপ্রতিরোধ্য নারীপ্রীতির ব্যাপারটি সর্বজনবিদিত।
কিন্তু আমরা কেন ব্যক্তিজীবনের নিক্তিতে তাঁদের বিচার করবো? আমার বিজ্ঞ প্রয়াত পিতা বলতেন," কবি নজরুল ইসলাম সিফিলিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেই কবি হিসেবে তাঁর মূল্যায়ন ভিন্ন হবে? কেন? আমি, যেমন, সিফিলিসে আক্রান্ত হইনি। কিন্তু নজরুলের তুলনায় আমি কী দিচ্ছি দেশ, জাতি আর সমাজকে?"
পুনশ্চ: কিছু ভাষাগত দুর্বলতা, সাম্প্রতিক শস্তা গল্প-উপন্যাস-নাটকের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও আমি তাঁর কিছু লেখার (মূলত শুরুর দিকের) খুব ভক্ত। আমার ব্যক্তিগত মতামত, বাঙালিদের পাঠাভ্যাস গঠনে হুমায়ূন আহমেদের ভুমিকা অনস্বীকার্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নতুন মন্তব্য করুন