ঘুম ভাঙতেই ঘড়ির দিকে চোখ চলে গেল। বিকাল ৫টা। বাসার কাঠাল গাছটায় চড়ুইয়ের দল কিচির-মিচির করছে? শব্দ নাই কেন? আর আমার ঘরটাও তো এতো অন্ধকার থাকে না এই সময়। ফায়ার-ইঞ্জিনের সাইরেনের শব্দে ঘোর কাটে আমার। “আপনি আর স্বর্গে থাকেন না হাসান সাহেব”, বলি নিজেকেই। গতকাল ঘুমাতে পারি নাই। দুপুরে তাই বাসায় ফিরেই ঘুম। প্রফেসর দেশের বাইরে থাকায়, এই বিনোদনের সুযোগ পাওয়া গেল। কিছু লিখতে বসলামই যখন, প্রথম থেকেই শুরু করি।
ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু। মধ্যরাতে দুবাই নামলাম। বাপরে! কি রঙীন দুনিয়া। রোজার মাসে শখ করে একবার ‘বড় বাপের পোলায় খায়...’ নামের বস্তু কিনে আনসিলাম বাসায়। আলু, কলা, ডাল, ভাত, মাছ, মাংস... কি নাই তাতে? এও দেখি সেই রকম ব্যাপার। শেখে পো’রা শুধু তামাম একটা স্পেস শাটল ঢুকাতে পারে নাই এর ভেতর। আমেরিকান আব্বুরা গিফট করলে সেও দেখতাম বোধহয়।
জীবনে প্রথম এরোপ্লেন ভ্রমন, বিদেশযাত্রা, তায় আবার ‘বড় বাপের পোলায় খায়...’ মার্কা এয়ারপোর্ট। হা করে দাঁড়ায় রইলাম কতক্ষন। লাইনে পেছনের যাত্রী ধাক্কা দিয়ে বললে, “মুভ ম্যান, আই হ্যাভ এ প্লেন টু ক্যাচ”। প্লেনে ব্যাটা তুই একাই উঠবি? আমি তো পোর্ট সাঈদে যেয়ে বিলাতের জাহাজ ধরবো!
দুবাই থেকে ন্যু-ইয়র্ক যাত্রা তেমন সুখকর হয় নাই, তন্দ্রা আর বিরক্তিতে কাটলো ১৪-১৫ ঘন্টা। পাশে এক কৃষ্ণ (এখন তো আবার কালা বলা যায় না) বর্ণের আদমী বসে ছিল, ব্যাটা কি বলে কিসুই বুঝলাম না। বোকার হাসি দিলাম দুয়েকবার। ন্যু-ইয়র্ক এয়ারপোর্টে খালা-খালু অপেক্ষা করছিলো। আমি গাড়িতে উঠে গা এলিয়ে দিলাম। চারপাশে সবকিছু এতো অশ্লীল রকমের গাব্দা-গোব্দা কেন? রাস্তা-ঘাটে গাড়ি-ঘোড়া থেকে শুরু করে ট্রাফিক লাইটটাকেও দেশের থেকে দেড়্গুন বড় মনে হচ্ছে। ভীতিকর ব্যাপার-স্যাপার!
(চলবে)
- নুসায়ের
মন্তব্য
ভালো লাগলো। আমার বড় বাপের পোলায় খায় ও ভালো লাগেনি, এখন পর্যন্ত কোন এয়ারপোর্টও ভালো লাগেনি।
একটা কথা, আমাদের দেশি অনেকেই দেখি খুব আরামে কাউলা শব্দটা ইউজ করে, ইংলিশে বললে অন্যরা বুঝে ফেলবে, সেই ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য। কিন্তু এই মানসিকতা খুবই নিন্দনীয়। শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে নির্যাতিত, ফলশ্রুতিতে দারিদ্র্য, আর তাই অপরাধপ্রবণতাও গড়পরতা অন্যদের চেয়ে বেশি। দোষটা তাই দারিদ্র্যের, গায়ের রঙের না। জানিনা আপনি 'এখনতো আবার কালো বলা যায়না' বলে কী বুঝাতে চাইলেন, তবে আমি যা বুঝলাম তা নাহলে নাহক লেকচারের জন্য দুঃখিত।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এখানে 'সাদা'দের কে সাদা বলি, চীনাদের কে চাঙ্কু, 'পাখাপো'দের কে পাইক্কা, কিন্তু কেবল কৃষ্ণ বর্ণের আফ্রো-আমেরিকান্দের 'কাউলা' বললেই 'রেসিস্ট' হয় কেন সেটা এখনো বুঝি নাই এখনো। কটাক্ষটা সেই দিকে ছিলো। পেলের 'কালো মানিক' উপাধিটাও কি তবে রেসিস্ট?
ব্যাপারটা আপনার খারাপ লেগে থাকলে দুঃখিত।
আমার বোঝা আর জানার ভুল হবে হয়তো। দুঃখিত।
একটু যোগ করি। শুধু শব্দে হয়তো দোষ নেই, তবে তার সাথে কোন ডিফল্ট নেগেটিভ বৈশিষ্ট্য যোগ করে দেয়া (স্টেরিওটাইপিং, আপনি করছেন বলছিনা, জাস্ট আলোচনার সুবিধার জন্য) টা আপত্তিজনক।
১। সাদাদেরকে সাদা বলা-- ফেয়ার এনাফ
২। চীনাদেরকে চাঙ্কু কেন, চীনাই বলা যায়, এখন চাঙ্কু মজা করে বলা নাকি অবজ্ঞা করে বলা সেটা অবশ্যই সাবজেক্টিভ।
৩। 'পাখাপো'দের কে পাইক্কা বলার সময় যদি কারো মাঝে ঘৃণার প্রকাশ পায়, তার একটা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কারণ আছে।
৪। কাউলা শব্দটা আমার কাছে যথেষ্টই অবজ্ঞাসূচক মনে হচ্ছে, যাদের কাছ থেকে শুনেছি তারা কালোদের সম্পর্কে নেগেটিভ আইডিয়া দিতেই এটা ব্যবহার করেছে। চিন্তা করুন একবার 'কাউলা মানিক' শুনতে কেমন লাগে
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
মানুষকে কেবল 'মানুষ' ছাড়া অন্য যেকোনো ট্যাগে পরিচিত করাটাই 'রেসিজম'।
এর বাইরে আসা কি সম্ভব?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কী জানি! নিজের মাঝেও রেসিজম একেবারে নেই, তাও বলতে পারছিনা (বৃহত্তর সংজ্ঞায়)। তবে চেষ্টা করতে দোষ কী!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার সংজ্ঞায় 'উত্তম জাঝা'
কালা বলা যেমন 'রেসিজম', কৃষ্ণ বর্ণ বলাটাও তো তা'ই! সাদা চামড়া বলাটাও 'রেসিজম' নয়কি?
এত সহজ কি বিষয়টা? গায়ের রংটা একটা প্রোপার্টি বা এট্রিবিউট। স্রেফ একটা প্রোপার্টি। নাথিং এলস। সুতরাং কালো কে কালো বললে রেসিজম হবে কেন? হরহামেশাই তো এটা বলা হয়।
রেসিজম হবে তখনই যখন গায়ের রং এট্রিবিউটের সাথে কোন বিশেষণ জুড়ে দেয়া হবে। যেমন: কালোরা সবাই গুন্ডা, সাদারা সবাই বড়লোক বা বাদামীরা সবাই অংকে ভালো। এগুলো প্রত্যেকটা রেসিস্ট স্টেইটমেন্ট। কোনোটা পজিটিভলি, কোনোটা নেগেটিভলি।
মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে সামান্য এ্যাড করি। বর্ণবাদ বিষয়টা এখন "বর্ণবৈষম্য" হিসেবে ইন্সটিটিউশনালাইসড হয়েছে। একথা সত্যি বর্ণবাদী মন্তব্য ইতিবাচকও হতে পারে। তবে এর নেতিবাচক ব্যবহার এতটাই প্রকট যে এর ইতিবাচকতা বলতে গেলে হারিয়ে গেছে। যেকারণে বর্ণবৈষম্যের যে সংজ্ঞা জাতিসংঘ তার "সব ধরণের বণবৈষম্যের অবসানের জন্যে সনদ", এখানে দেয় তাতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে-
the term "racial discrimination" shall mean any distinction, exclusion, restriction or preference based on race, colour, descent, or national or ethnic origin which has the purpose or effect of nullifying or impairing the recognition, enjoyment or exercise, on an equal footing, of human rights and fundamental freedoms in the political, economic, social, cultural or any other field of public life.
কাজেই বর্ণবাদ বা বর্ণবৈষম্য বিষয়টাকে আবেগের নিক্তিতে না মাপাই ভালো। এতে করে দ্বিধাদ্বন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
উদ্ধরণটা দেখে একটা প্রশ্ন মাথায় এল। জাত বা বর্ণের সাথে বুদ্ধিমতা কতটা সম্পর্কিত। মার্কিন
পরিসংখ্যান বলে সেদেশে আই কিউ সবচেয়ে বেশি এশীয় আমেরিকানদের(নাকবোঁচা চৈনিক কিম্বা বাদামী ভারতীয়), তারপর সাদাদের, সবচে কম কালোদের। সবচেয়ে বড় কথা এইসব ছোটখাট বুদ্ধিমত্তা, শক্তিমত্তা, গাত্রবর্ণের পার্থক্য তো চোখে এড়ানো যায় না। তাই রেসিজমের বীজটা প্রচ্ছন্নভাবে সবার মাঝেই বিদ্যমান থাকাটাই স্বাভাবিক, আর এ যুগীয় ভদ্রতা হল সেটা প্রচ্ছন্নই রেখে দেয়া। কিন্তু ফাঁকে ফোঁকরে তো সেই ভদ্রতা ডিংগিয়ে এসব বিশেষন বেরিয়ে পড়েই... তাইনা?
আর আমাদের মত একবর্ণের দেশের মানুষদের, মাল্টিরেসিয়াল কোন দেশে গেলে প্রথমদিকটায় এই ধরনের বিশেষন বেরিয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি হওয়ার কথা
ধৈবত
তুমি যে উদাহরণ দিলা সেটা মনেহয় স্টেরিওটাইপিং, সাদামাটাভাবে। রেসিজম ইজ রেসিজম, সেটা পজিটিভলিই হোক আর নেগেটিভলিই হোক। তুমি কাউকে 'কালো' বলে সম্বোধন করলে সেটা যেমন রেসিজম (বর্ণবাদ), কাউকে 'চাইনিজ' বলে পরিচিত করালেও তাই।
এখন বলতে পারো তাহলে মানুষকে পরিচিত করার উপায় কী? উত্তর হলো, আমার জানা নেই।
'স্টপ রেসিজম' ক্যাম্পেইন আসলে কী বুঝায়, সেটা নিয়েও আমি শিউর না। সারা পৃথিবীবাসীকে একটা 'রেস' এর ভেতর নিয়ে আসা কি! সবাই একটাই 'ট্যাগ' দ্বারা পরিচিত হবে! এটা কিভাবে সম্ভব যেখানে আমরা পজিটিভলি 'আফ্রো-আম্রিকান', 'চাইনিজ', 'ইণ্ডিয়ান' প্রভৃতি নাম দিয়ে মানুষকে গোষ্ঠীবদ্ধ করার চেষ্টা করবো!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার মনে হয় না, ককেশীয়/আফ্রিকান/মঙ্গোলিয়ান পরিচয়টা আপত্তিকর, বরং এটা প্রত্যেক অরিজিনের শারীরিক বৈশিষ্টের চমৎকার বৈচিত্রগুলো তুলে ধরে। সবগুলোকেই সমান সম্মানের চোখে দেখতে শেখা, আর কাউকেই অন্যায় অধিকার খাটাতে না দেয়াটা জরুরি। পৃথিবীর সব মানুষই 'পৃথিবীবাসী মানুষ' এই চিন্তাধারার প্রয়োগও একদিন নিশ্চয়ই আসবে, কিন্তু সেটা ঘটতে মনে হয় বেশ সময় লাগবে। ততদিনে, মনুষ্যত্ব বোধগুলোর চর্চা করা, আর পুরুষ/নারীর বৈষম্য যেটা দেশ-দেশান্তর ভেদে বিদ্যমান, দূর করার চেষ্টা করা জরুরি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালো লেগেছে, আরেকটু বিস্তারিত বিবরণ দিলে আরো ভালো লাগতো।
...........................
Every Picture Tells a Story
"গাব্দা-গোব্দা" মানে কি বুজি নাই। সাবলীল বর্ণনা। পরের পর্ব থেকে সাথেই থাকার চেষ্টা করব
একটা অবান্তর প্রশ্ন- আপনি কি বা.প্র.বি'র '০২ ব্যাচের একজন যন্ত্রকুশলী? তাহলে, অগ্রজের সাথে থাকার আগ্রহটা একটু বেড়ে যায় আরকি
ধৈবত
গাব্দা-গোব্দা মানে মোটা-সোটা।
ধরেছেন ঠিক! এই অধমই সেই অধম
সাথে থাকবেন।
'আপনি' করে বইলে অইত্যধিক লজ্জায় ফেলে দিলেন 'স্যার'
ধৈবত
ভালো ভাষা (ক্রিয়াপদের ইনকনসিসটেন্সি, যেইটা আমাদের কথ্য ভাষায় আছে, সেইটা লেখায় কট্টুক আনা যায় ভাবা যায়)। অবশ্যই আরেকটু বড়ো লেখলে আরো ভালো হৈত। 'আমেরিকান সাইজের' পরের পর্ব দ্রুত আসুক। সচলে ওয়েল্কাম
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভাষার ব্যাপারটা ঠিক ভাবি নাই। অনেকটা মাথায় যা আসছে সেটাই লিখলাম। লিখাটা আসলেও বেশ ছোট হইসে। আশা করি পরের পর্বটা তাড়াতাড়ি দিতে পারবো।
-নুসায়ের
পড়তে ভাল লাগছিলো তো, দুম করে থেমে গেলেন কেন?
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ট্রেলার দিলাম
লিখে অভ্যাস নাই। পরের পর্ব থেকে খেয়াল থাকবে। পড়বার জন্য ধন্যবাদ
দিনলিপির দ্বিতীয় ভাগ যেন চারপাঁচ গুণ বড় হয় স্যার
স্যারের কত কাজ ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কি বলে ?
অনিন্দ্যদার কমেন্টে লাইক মারলাম স্যার
সচলায়তনে স্বাগতম!!
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
একলা পথ চলা তোমার হোক না রমণীয়!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আমি তো পোর্ট সাঈদে যেয়ে বিলাতের জাহাজ ধরবো!
দুবাই থেকে ন্যু-ইয়র্ক যাত্রা তেমন সুখকর হয় নাই, তন্দ্রা আর বিরক্তিতে কাটলো ১৪-১৫ ঘন্টা
এখানে একটু হাপায়া গেসিলাম
ভালো, এট্টু ছুডু। পরেরবার একটু বড় করেন, যদিও স্পেসশিপ সাইজের না করলেই ভাল। আর ‘বড় বাপের পোলায় খায়...’ জিনিসডা কী?
নতুন মন্তব্য করুন