ঐ পতনের ধ্বনন চড়ে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/০১/২০১১ - ৯:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধৈবত

নিন্মোক্ত গল্প, প্রকল্প, চরিত্রগত চিত্রকল্প, সমস্তকিছুই কল্পনাধিক কল্পনা। মন্দবাস্তবের সাথে এর কোনরুপ সন্ধি-সম্বন্ধ অনুসন্ধানের অন্ধ অনুসন্ধিৎসা- প্রয়োজনীয় প্রতিটি প্রহরের প্রভূত প্রণাশন মাত্র


“এই ছেলে....দাঁড়া......দাঁড়া বলছি” কেমন একটা ক্ষেপাটে স্বরে ত্বরিৎ শব্দচয়নে বললেন তিনি।

ছেলেটা ডানে-বামে, এদিক ওদিক তাকালো। হয়তো তার ভুল হয়ে থাকতে পারে। হয়তো তিনি অন্য কাউকে ইংগিত করেছেন।

“অঅই.....আবার ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে-বাঁয়ে তাকায়।” এবার তিনি হাত বাড়িয়ে খানদুয়েক তুড়ি ফোটালেন, তারপর আঙ্গুলিসংকেতে সেই ছেলেটাকে স্পষ্ট করে নির্দেশ করলেন, “তুই...তুই”

ছেলেটা এবার উনার দিকে বোবার মত তাকালো, যেন মায়ের পেট থেকে পড়ে কোন কথাই শেখেনি সে। তারপর তর্জনি দিয়ে নিজেকেই নির্দেশ করে বোঝাতে চাইল- ‘আমাকে বলছেন নাকি?’

“হ্যা, হ্যা। তুই....তুইই। দাঁড়া, দাঁড়া, দাঁড়া”, তাঁর দুই ঠোঁট পরস্পরকে কামড়ে আছে। চোখে মুখে একটা স্পষ্ট বিরক্তি আর ক্ষোভ।

ছেলেটা ধীর গতিতে উঠে দাঁড়াল। কিছুটা ভীতি আর অনিশ্চয়তায় গুটিসুটি মেরে আছে সে।

“নাম কি?”, রুষ্ট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

“স্যার, কাদের”

“কাদের মানে?”

ছেলেটা ঠিক বুঝল না। আমতা আমতা করতে লাগল।

তিনি এবার আরেকটু চড়া গলায় বললেন, “কাদের মানে কি? বলি, তোর নাম ‘কাদের দাস’, না ‘কাদের বড়ুয়া’ না ‘কাদের গোমেজ’ সেইটা তো বলতে হবে, নাকি?”

“স্যার, আমার নাম ‘মোহাম্মদ আব্দুল কাদের’”

“কোন স্কুল থেকে এসেছিস, একটু বলতো”, এবার তাঁর গলার সুরটা সামান্য নম্র। তবে সেখানে যে একটা প্রচ্ছন্ন রূঢ়তা আছে সেটা এখনো বোঝা যায়।

“স্যার চট্টগ্রাম বা....”

“ওই,...চট্টগ্রাম থেকে এখানে আসার দরকার কি ছিল।” প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটাকে থামিয়ে দিলেন তিনি। “কেন, সেখানে তো নিশ্চিন্দাপাড়া কলেজ ছিল, বাঁশখালি কলেজ ছিল। ঐগুলোতে ভর্তি হোলিনা কেন?”

ছেলেটা ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে। সে মুখ নিচু করে, মাটির দিকে তাকিয়ে রইল।

“শোন। এ্যাই....ঘাড় সোজা করে তাকা।”

ছেলেটা তাকালো

“পাশের ছেলের সাথে হাসাহাসি করার সময়, গোঁয়ারের মত কথা বলার সময় তো মনে হয় মুখে ট্রেন চলে, বুলেট ট্রেন। এখন এইভাবে নপুংশকের মত চুপ করে আছিস কেন?”

এইবার ছেলেটার কন্ঠ বলিষ্ঠ হল, “স্যার আমি তো কথা বলিনি”

“চুপ!! তুই কথা বলিসনি কী তোর বাবা এসে কথা বলে দিয়ে গেছে। মিথ্যে বললে এক চড়ে দাত সব ধসিয়ে দেব।”

ছেলেটা এবার যারপরনাই বিমর্ষ হয়ে গেল। সে জানে সে কথা বলেনি। কে কথা বলেছে সে দেখেওনি। কিন্তু তবুও যে তিনি এভাবে তাকে মারাত্মকভাবে দুষে বসলেন, সেটা সে মেনে নিতে পারল না। অবশ্য এমন অবিচার উনার জন্য নতুন কিছু নয়।

“দাঁড়া, এখুনি তোর তিন দিনের পার্সেন্টেজ কেটে নিচ্ছি, এরপর যেন কথা বেরুতে লাগলে সেগুলা অটোমেটিক ভাবে আবার পেটের ভিতর ঢুকে যায়।”

কথাটা বলেই তিনি টেবিলের দিকে গেলেন। গিয়ে হাজিরা খাতাটা নিয়ে কলম দিয়ে কি যেন খোঁচাখুচি করলেন। তারপর সেটা বন্ধ করে ছেলেটার দিকে কটমট করে কিছুক্ষন তাকালেন। এরপর আবার পূর্বের ভাবে ফিরে গিলেন “হুম, যেটা বলছিলাম। ‘সৌদামিনী মালো’। তোমরা দেখ ‘মালো’। মানে কি? মানে এই মহিলা নিশ্চই হিন্দু সমাজে নিম্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। কারণ তার পিছে আছে ‘মালো’, মানে...এই ধর... তুচ্ছার্থে অনেকে বলে ‘মাল’.....”

এই হলেন আমাদের হেঁসেল স্যার। পুরা নাম, হেঁসেল আহমেদ। আমাদের বাংলা পড়ান।

খুবই গোলগেলে একখানা মুখ। শরীরটা ততোধিক ডিম্বাকার। তথাকথিত বাংলা শিক্ষকদের চিরাচরিত বেশভূষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি পরেন শার্ট- জবরদস্ত্ জিন্সে ইন করে। হাঁটার সময়, শার্টের প্রশ্রয় আর জিন্স-বেল্টের প্রেষনকে অগ্রাহ্য করে তাঁর ভূধরসম ভুঁড়িটা ভূচালের চলে প্রায়সই প্রকম্পিত হতে থাকে। মাঝেমধ্যেই চরণ গাঁড়া থাকে বুট টাইপ জুতোয়, হাঁটেন ধপাস পদক্ষেপে, হস্তী-লয়ে। মাথার মাঝখানটায় খরা লাগলেও, আশেপাশের চুলগুলো এমনভাবে খাড়া হয়ে থাকে, আচমকা দেখলে মনে হয় শিংঅলা আলাউদ্দীনের জ্বীন। কন্ঠস্বরটা সামান্য মেয়েলী ধাঁচের, উচ্চারণেও প্রাগৈতিহাসিক নতুবা অতিপার্থিব ধ্বনির মুহুর্মুহু ব্যবহার দেখা যায়। যেমন, যেদিন পোপ জন পল টু মারা গেলেন সেদিন বললেন, “আজ একজন মুহান ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন, তিনি হলেন মাননীয় ‘পপ’।” অথবা, “শোন্, আমাকে যাতে এমুনভাবে ‘তাপ্পড়’ মারতে না হয় যাতে রক্তের ‘জলুচ্ছ্বাস’ বয়ে যায়।” স্বরমাধুর্য, মুখভঙ্গি, শব্দোচ্চারণ সহ তাঁর কথাবার্তার ধরণ- ভাঁড় সাজার জন্য অব্যর্থ রকমের যুতসই হলেও হুতোম প্যাঁচার মত মুখ ফুলিয়ে, অবয়বে সবসময় একটা বৈশিষ্ট্যময় ব্যক্তিত্ব আর রাশভারী রাগিণী আনায়নের রাসভবৃত্তি চর্চা করেন তিনি। সেটাকে দস্তুরমতো বাস্তবায়ন করার জন্য হুট হাট ছাত্রদের হুমকি ধমকি দিয়ে বসেন, বেফাঁস কথাবার্তা বলে অপমান করে বসেন।

তবে লোকটার ঝাঁজ আছে। কলেজে দু দুটো ক্লাব চালান তিনি, সম্ভবত সাংঘঠনিক দক্ষতার কারণেই। এই সূত্রে অনেক চ্যালা-চামচেও তিনি হস্তগত হয়েছে তার, যাদের অনেকেই সেইসব ক্লাবের সক্রিয় সদস্য। ক্লাব-মডু হবার ব্যাপারটা তার ভাব-ভান্ডারে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সুযোগ পেলেই কথাবার্তায় তিনি এই প্রসঙ্গকে, অনেকটা কান মলে ধরেই নিয়ে আসেন। যেমন, সেদিনই রবিনকে বলে বসলেন, “শোন, তোর মত গাধা-গরু টাইপ ছেলদের যদি ফি-মৌসুম এভাবে সামলাতে না পারতাম, তাহলে তো কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে দুদুটা ক্লাব চালানোর ভার দিতেন না, ঠিকনা।”

নাহ, তাঁর ভাঁড়ামো আমরা যতটুকু উপভোগ করি, তার কূটমন্দ কথাগুলোও ততটুকুই ভয় পাই।

---------

ক্লাসের পরিবেশটা মুটামুটি নীরব।

“শরতচন্দ্রের আর দশটা নারী চরিত্রের মতই একজন সে, শুধু ভালবাসতে আর আদর করতেই জানে। বিলাসী....বিলাসী”, সামান্য কারুকাজ করে শেষের শব্দদুটো বলার সময় দেখলাম স্যারের নিচের ঠোঁটটা চারপাশে থেবড়ে গেছে, মুখটা খিঁচে আসছে। কথায় জোর দেবার জন্য, উন্মীলিত হাতের তালু দুটো নিজের বুকের খানিক সামনে উঁচিয়ে ধরে উপরনিচ দোলাচ্ছেন তিনি। তাতেকরে মনে হচ্ছে, বিলাসীকে স্তনবতী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন।

এমন সময় একটা ফোনের আওয়াজ আসলো। ভদ্রলোকে চুপ। গোমড়া মুখে নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করে স্ক্রীনে চোখ বুলালেন। মুখ নোয়ানো অবস্থায় পুরো ক্লাসের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালেন তিনি। তারপর ফোনটা ফের পকেটে চালান করে দিলেন।

“হুম, তো, বিলাসী। তার নামটা ‘বিলাসী’ দেওয়া হয়েছে কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টু অর্থ বোঝাতে, কারণটা.........”

আবারো সেই বিদঘুটে রিংটোন। হেঁসেল স্যার এবার ঝট করে মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে দেখে নিলেন। এবার তাঁর চোখমুখ রাগে লাল হয়ে এল। “কে?কে? কোন ইতরের ইতর মিসড কল দিয়েছে।”

পুরো ক্লাস থ

“এ্যাই, হিম্মত থাকে তো উঠে দাঁড়া, যে এই ফাজলামো করেছিস।”,হেঁসেল স্যারের চোখে যেন আগুন ঠিকরুচ্ছে
ক্লাসে সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করে দিল।

“হুঁ, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবেনা দেখছি।।...জুবায়েদ, একটু ওঠো তো দেখি বাবা।”

জুবায়েদ উঠে দাঁড়াল। পুরো ক্লাসে জুবায়েদ হলো হেঁসেলের চ্যালাদের সর্দার। হেঁসেল পরিচালিত তর্কাতর্কি ক্লাবের বিশেষ প্রতিনিধি সে। ক্লাসে সেই-ই স্যারের প্রিয়তম ছাত্র।

এবার তিনি ঘাড়টা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললেন,“ওই চশমা দেওয়া, হ্যাংলা টাইপ আহম্মকটা কোথায়।।...ওইতো, ওই। অই ক্যাপ্টেন, তুইও ওঠ।” – দাঁড়ালো, ক্লাস ক্যাপ্টেন আকবর।

“ওই যে, ওই শ্যাম বর্ণের ছেলেটা। তুইও ওঠ”- এভাবে প্রতিটা কলাম থেকে একজন করে ওঠালেন তিনি। মুটামুটি সবাই তার বিশ্বস্ত মুখ। “শোন, তোদেরকে বলছি, যাদের যাদের কাছে এখানে মোবাইল আছে সবার কাছ থেকে সেগুলো বাজেয়াপ্ত কর। একেবারে প্রথম বেঞ্চ থেকে শুরু কর।”

শুরু হয়ে গেল শিষ্যদের চিরুনি অভিযান।

পিছনের দিকে আমরা ফিসফিসানি শুরু করে দিলাম। আমাদের সেই বিখ্যাত “শয়তান ষষ্ঠক”। আমাদের গুরু শয়তানাধিপতি- খালেক। সঙ্গে আমি, বাপি, দীপু, আবির, তপু। তবে এর মধ্যে তপুটা একটু ভোদাই প্রকৃতির অনেকটা হেডিস এর চ্যালা পেইন-পেনিকের মত। আমাদের এদিকটায় যারা বসে, শুধুমাত্র তারই মোবাইল আছে। মুঠোফোন সংস্কারটা এখনো পোক্ত হয়ে ওঠেনি, কলেজপড়ুয়া তরুনদের গুটিকতকের হাতেই সেটা দেখা যায়। তবে তপুর মোবাইলটা বেশ দামী। সৌদি থেকে তার কাকা পাটিয়েছেন। ছবি তোলা যায়, ভিডিও দেখা যায়, সেরকম রমরমা অবস্থা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তার মোবাইলের দুষ্টু ভিডিওগুলোই আমাদের নিত্যদিনের বেহেশতি খোরাক।

আমাদের এদিকটায় জুবায়েদ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। খালেক তপুর দিকে ঘুরে বলল, “ওরে তোপা, কি দেখিস। তাড়াতাড়ি মোবাইলটা লুকা”

“কোথায় লুকাব? যেভাবে চেক করছে-যেখানেই রাখি বের করে ফেলবে”, জবাব দিল তপু।

“তাড়াতাড়ি প্যান্ট খুলে জাংগিয়ার ভিতর ভর”

বুদ্ধিটা শুনে তপু মুচকি হাসল। মুহুর্তেই আবার সে হাসি মিইয়ে গেল

“কিন্তু....”

“কিন্তু কি?”

বিরস বদনে তপু বলল, “দোস্ত, আমি যে আন্ডার ওয়্যার পরিনা; গরম লাগে”

খালেককে বিরক্ত দেখাল অনেকটা। “না, তোমার পরার দরকার কি। ওটা পরে সামলে রাখার মত তোমার কি কিছু আছে নাকি?”

“দোস্ত, যদি মোবাইল নিয়ে যায় তো নিক। আমি তো আর মিসকল দেই নি।”, চটপটে জবাব দিল তপু

“তাতে কি, তোর সেটটা যেরকম দামী আর লোকটা যেই বদের বদ, সে যদি ঠিকই তোকে ফাঁসিয়ে ওটা বাগিয়ে নেয় কী করবি।”, দেঁতো হাসি ফলিয়ে বলল খালেক

পাশ থেকে বাপি বলল,“সেটা কথা না, তোর মোবাইলে যেই বস্তু ভরা আছে, তা যদি একবার হেঁসেলের চোখে পড়ে তাহলে কি হবে, বুঝিস কিছু?”

“অ্যাঁ! কি হতে পারে?”, তপু ভ্যাবচেকা খেয়ে গেল

খালেক ন্যাকা সুরে রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগল, “কি আর হবে, হেঁসেল সাহেব- মিসেস হেঁসেলকে নিয়ে বেডরুমে বসে বসে সেটা দেখবেন। আর যদি মন চায় তো, প্রিন্সিপালকেও সেটা দেখতে দিতে পারেন। তারপর অধ্যক্ষ মহোদয় নাহদিয়া ম্যাডামকে রুমে ডেকে নিয়ে, উনার সাথে বসে ভাজা পপ্পন খেয়ে খেয়ে ওগুলো উপভোগ করবেন। আর যদি কৃতজ্ঞতা বোধ করেন তাহলে তোকে একটা অভিনন্দন জ্ঞাপক মানপত্রও ধরিয়ে দিতে পারেন, এই আরকি!!”

তপু কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইল। তারপর বলল, “তো, কি করব বল আমাকে। কোন মশলা কোন ফোল্ডারে রেখেছি সেগুলো খুঁজে খুঁজে ডিলিট মারতে তো ও এসে পড়বে।?”

এবার খালেক বলল, “আমার কাছে দে মোবাইলটা”

“তোর কাছে? কেন?”

“এটা আমার জাংগিয়ার ভেতর গুঁজব”

তপু কতক্ষন বোকা বনে রইল। ওদিকে জুবায়েদ এক বেঞ্চ করে করে এগিয়ে আসছে। আগপাছ না ভেবে সে মোবাইলটা টুপ করে দিয়ে দিল খালেকের হাতে। খালেক সেটা নিল, তারপর জিপারটা নামিয়ে যথাস্থানে গুঁজে ফেলল।

জুবায়েদ, সবার শার্টের পকেট, প্যান্টের পকেট, ব্যাগ, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলনা। সেযাত্রা রক্ষে....

-----------

পরের দিন। হেঁসেল স্যার যেইসব মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছিলেন গতদিন, সবই আজ সকাল সকালে ফেরত দেওয়া হয়েছে। সন্ধানে জানা গেছে, আমাদের ক্লাস থেকে নাকি কেউ তাকে মিসকল দেয়নি। খামোকাই একটা দৃশ্যাবতারণা করেছেন তিনি।

মারুফ এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভার ভার।

“দোস্ত, কিরে মোবাইল তো ফেরত পাইলি। মন খুশি না কেন?”, জিজ্ঞাস করল আবির

মারুফ আবার একটু গালিবাজ। কথায় কথায় তার মত উপর্যুপুরি গালির প্রয়োগ আর কেউ করে বলে জানা নেই।

“আরেব্বাল, ওই হেঁসেল শালায় াল, আমার মোবাইলের ব্যাটারি ড্যাম করে দিয়েছে াল। অর্জিনাল নোকিয়ার ব্যাটারি াল”

“কেন, কি হয়ছে?”

“বলিসনারে াল, আজ একটু আগে দেখি কি াল, মোবাইলটা ঠিক মত অন হচ্ছে না। পরে মুহিতের সেটে ব্যটারি টেস্ট করে দেখি এই ালের অবস্থা। শালায়, মনে হয় আমার ব্যাটারিটা খুলে ওর গো****** ”, সেই কি একটা টাল অশ্লীল কথাবার্তা, গালিগালাজের ফুলঝুরি যেন ছুটছেই।

হঠাত খালেক প্রস্তাব রেখে বসে, “চল ওস্তাদরে একদিন সাইজ করি। একেবারে জনমের মত”

“ক্যাম্নে করবি?”, আবিরের প্রশ্ন।

“আছে, একটা সিস্টেম আছে। বলছি।”

তারপর ছেলেরা দেখলাম কি কি জানি আলোচনা শুরু করল। একটু নীরবে, নিভৃতে। হেঁসেলের চামচে দুয়েকটা কিন্তু সর্বদাই মজুদ। আমার এত কথা শোনার টাইম নাই। পরের ক্লাসটা বাং দেয়ার নিয়তে আমি চললাম ক্যান্টিনে। তাছাড়াও পেটে ছুঁচোরা ডিপস দিচ্ছে। আগে ওদেরকে শান্ত করার দরকার।

----------

মাঝে হরতাল উপলক্ষে কয়েকদিন বন্ধ পড়েছিল। আজ আবার কলেজ খুলল। যথারীতি হেঁসেলের ভাঁড়ামি ভর্তি বিরক্তিকর বাংলা ক্লাস। স্টেজের উপর তিনি এদিক ওদিক হাঁটছেন। কথা বলতে গিয়ে বাতাসের মধ্যে অদৃশ্য কিছুকে খাবলাচ্ছেন। গল্পের চরিত্র আর দুশ্চরিত্রদের মৌখিক কাঁটাছেড়া করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনায় গলার স্বরটা চেঁপে আসছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে, যেন কোন অশরীরি থেকে থেকে গলায় পাড়া দিয়ে চেপে ধরছে। তিনি গড়গড়িয়ে বলে চলেছেন,

“অপু ছিল, আসলে একটা ক্লীব। সে কিন্তু ভদ্র-লক্ষী ছেলেটির মত, হৈম’র প্রতি তার অবিচারিণী মায়ের সমস্ত অত্যাচারেই নিস্পৃহ থেকে গেছে। তোমরা দেখো, এইখানে মাননীয় রবীন্দ্রনাথ হয়তো অপুর আদলে তার নিজের মত কাউকেই দেখাতে চেষ্টা.......”

‘টুং’, একটা কয়েন মেঝেতে পড়ার শব্দ হল।

হেঁসেল স্যার আগের গতিতেই বলে চলেছেন “....করেছেন হয়তো। কারণ, দ্যাখো সেসময়র জোড়াসাঁকো কেন্দ্রিক জমিদারী বনেদিয়ানায় এভাবে....”

‘টুং, টাং, টুং’, আবারো সেই শব্দ।

এইবার তাঁর একটু ভাবান্তর হল। “কীরে? কার পকেট আবার ফুটু হয়ে গেল?”

ক্লাসে কোন সাড়া শব্দ নেই। একটু জিরিয়ে তিনি বলতে লাগলেন, “যাই হোক, চিন্তা কর সেসময় জমিদার বা এ ধরণের অভিজাত শ্রেণীর হিন্দু পরিবার গুলোতে কিন্তু, শ্বাশুড়িগণ.......”

‘টুং.....টাং.... টুং,টুং,টাং’

এবার ধ্বনির জোর আগের চেয়ে আরো বেড়ে গেল- সাথে সংখ্যাও। হেঁসেল স্যার নড়েচড়ে উঠলেন। কতক্ষন দাঁড়িয়ে, মুখ বাঁকিয়ে কী যেন ভাবলেন। তারপর, “এই পয়সা ফেলে কে?, কোন হতচ্ছাড়া পয়সা ফেলে”

আবারও ক্লাস নীরব।

“বলি, কোন ফকিরের সন্তান এসে পড়ল ক্লাসে।”, তার মুখ রাগে গদগদো হয়ে আছে।

কিছুক্ষন ক্লাসে শ্মশানের নীরবতা। স্যারও এই ফাঁকে দম নেওয়ার ফুসরত পেলেন। “হুম, যা বলছিলাম। সেই সময়টাতে, হয়তো এখনো, উচ্চ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের পারিবারিক রাজনীতিগুলো মাঝে মাঝে হয়ে উঠতো ভীষণ কদাকার। অনেকটা য্যানো কলকাতার বাংলা ফি......”

‘টুং,টাং, টাং, টুং’

এইবার হেঁসেল স্যার অগ্নিশর্মা। হাত থেকে বাংলা বইটা খটাস করে টেবিলে আছড়ে ফেললেন। তারপর গর্জে উঠলেন, “কোন ফকিন্নীর বাচ্চা ক্লাসে পয়সা ফেলে। এ্যাই, সাহস থাকে তো উঠে আয়, এইখানে এসে ফেল।”

সংগে সংগে ধপ করে স্টেজ থেকে নিচে নেমে এলেন তিনি। তারপর হাঁটা ধরলেন পিছন দিকে বাম কোনাটায়। হয়তো তিনি ভেবেছেন সবচে শেষের শব্দগুলো ওদিকটা থেকে এসেছে। হেঁটে বাঁদিকের শেষ সারিটার দিকে এগিয়ে গেলেন।

“ওই, দাঁড়া, দাঁড়া........হ্যাঁ হ্যাঁ, তুই,তুই,তুই”। এবার হেঁসেলের কোপানলে পড়ল অর্ক। নতুন কিছু নয়। প্রায় সময়ই বিনা কারনে ছেলেটাকে ধরেন তিনি।

কাছে গিয়ে রাগত স্বরে বলতে লাগলেন, “আর দশটা ছেলের সাথে তোকে মিলিয়ে দেখিসতো। তোকে কি ভদ্র ছেলেদের মত দেখা যায়.... মনে হয়, ঐ রাস্তায় রস্তায় ঘোরেনা, ওই টাউটগুলোর মত।”- স্যারের স্বভাবসুলভ মুখবন্ধ। “শোন এদিক সেদিক বলবি না। ঠিক করে বল তুই পয়সা ফেলেছিস কিনা। যদি না ফেলিস তাহলে আমাকে একবার শুধু দেখিয়ে দে কে কাজটা করছে। আমি নিশ্চিত, তুই জানিস”

অর্ক হন্তদন্ত হয়ে বলল, “স্যার আমি জানিনা, সত্যি বলছি”

হেঁসেল স্যার বজ্রের মত গর্জে উঠলেন, “আব্বার মিথ্যা বলিস! সত্যটা না বললে তোকেই কিন্তু টিসি খাইয়ে দেব”

“স্যার, খোদার কসম বলতেছি,আমি এর আগামাথা কিছুই জানিনা।”, অর্ককে এবার একটু আবেগী দেখালো

স্যার একটু সামনে তাকালেন, “ওই ছেলে, অঅই....তুই দাঁড়া দেখি”- অভিকে নির্দেশ করলেন তিনি। “তুই তো পুরুনো চোর। আমি নিঃসন্দ, তুই ঘটনার সাথে জড়িত আছি...”

‘টুং, টুং’

এবার আরো দুইটা কয়েন পড়ার শব্দ। এল সামনের ডানদিকটা থেকে। হেঁসেলের চাপরাশি জুবায়েদের আশপাশ থেকেই।

লাট্টুর মত দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেন হেঁসেল স্যার। ওদিকটায় আগাতে আগাতে বললেন, “জুবায়েদ, দাঁড়াও তো দেখি বাবা। এই কাজটা কোন বদমায়েশের হতে পারে, তুমি কি জানো?”

জুবায়েদ দাঁড়াল, “স্যাড়, আসোলে স্যাড় (প্রসঙ্গত, জুবায়েদের ‘স্যাড়’ বলার ধরণটা ছিল বেশ আড়ম্বর), আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি স্যাড়”

জুবায়েদের দু বেঞ্চ পরেই ওয়ারিস বসে। সেদিকটার গ্যাংলিডার সে। হেঁসেল স্যার তার দিকে ইঙ্গিত করলেন। “অই, টুপিওয়ালা....ইতর টাইপ ছেলেটা।”, তারপর তর্জনি দুলিয়ে উঠে দাঁড়াবার ইশারা করলেন তিনি।
“আমি পুরুপুরি শিওর, তুইই পয়সা ফেলেছিস”

ওয়ারিস এমন একটা মুখভঙ্গি করল যেন সে আকাশ থেকে পড়েছে। “কী বলেন স্যার! আমি কেন এমনটা করতে যাব।” ঝটপট করে প্যান্টের পকেট থকে মানিব্যাগ বের করে আগুয়ান হেঁসেলের সামনে খুলে ধরলো সে। “দ্যাখেন স্যার দ্যাখেন। সব দশ-বিশ আর শতি নোট। একটা পয়সার টুকরাও নাই”

হেঁসেল সাহেব কতক্ষন ক্ষেপাটে দৃষ্টি শানালেন তার দিকে। বোধয় ওয়ারিসের ত্বরিৎ প্রতিক্রিয়ার সামনে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তারপর কী যে ভূত চাপলো তার। “এই, দেখি। সব ছেলে মানিব্যাগ বের কর। কার কার মানিব্যাগে কয় পয়সা আছে সব চেক করব আজকে।”

দেখলাম পুরো ক্লাস জুড়ে ত্রস্ত একটা সুর বয়ে গেল। অনেকে বুক পকেটে, মানিব্যাগে হাতাহাতি করে পয়সা আড়াল করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। পিছনে আমরা ভয়ে ভয়ে আছি। কারন দেখলাম আমাদের এই দিকটায়, অর্থাৎ ‘শয়তান ষষ্ঠক’এর ডেরা স্যারের পরবর্তী গন্তব্য। যেহেতু শ্যেনদৃষ্টি আমাদের দিকে, তাই পয়সা লুকোনোর ইন্তেজামও করা যাচ্ছে না। তিনি কমান্ডো কদমে এগিয়ে আসছেন। এমনটা সময় দেখি, মধ্যের বেঞ্চগুলো থেকে একটা বস্তু বাতাসে উড়াল দিল। সেটা গিয়ে ল্যান্ড করল, ঠিক জুবায়েদের পায়ের কাছে। সাথে সাথেই “টং”

স্যারের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি ঘুরে দেখলেন, জুবায়েদের ঠিক পাশেই উম্মুক্ত করিডোরে একটা পয়সা পড়ে আছে।

স্যার এগুতে থাকলেন, “অ্যাঁ, জুবায়েদ, তোমার পাশে ওটা কি পড়ে আছে।”

“স্যাড়, আসলে স্যাড়, আমি তো জানিনা স্যাড়। দেখলাম, বামপাশে দূর থেকে এটা উড়ে এসেছে।”, জুবায়েদ মিনমিনিয়ে জবাব দিল।

হেঁসেল বাবাজির মেজাজ এবার উত্যুঙ্গে উঠে গেছে। রাগে গজগজ করতে করতে সামনের বেঞ্চের দিকে তিনি এগুচ্ছেন তো এগুচ্ছেন। এমন সময়......

টুং, টং, টং............ঝন ঝন ঝন ঝন ঝন ঝন ঝন...............

সমস্ত শ্রেণীকক্ষ যেন কেঁপে উঠলো। আকাশ, বাতাস, বিশ্বমাতা, স্বয়ং বিশ্ববিধাতার আরসও যেন প্রকম্পিত।

ক্লাস রুমের এক্কেবারে পিছনদিকটায় একটা বিস্তর জায়গা ফাঁকা। সেখানটার মেঝেতে প্রায় বিশ ত্রিশেক কয়েন- পাঁচপাই, দশপাই, চাইরানা, আষ্টয়ানা, প.পরিকল্পনা পরিব্যাপ্ত একটাকা, আখাম্বা যমুনা সেতু সম্বলিত পাঁচটাকা- বাঙ্গাল মুল্লুকের সম্ভাব্য সকল ধরণের ধাতব মুদ্রাগুলোর কোনোটা নিথর কলেবরে শুয়ে আছে, কিম্বা কোনোটা নিক্কণ ছন্দে নাচছে। সে এক অভূতপূর্ব ধাতুসংকুল ধ্বনিব্যাঞ্জনা।

হেঁসেল স্যার আবারো একবার ঘুরে দাঁড়ালেন। অথর্বের মত চেয়ে থাকলেন অনেক্ষণ। পেছনদিকটার সেই ধাতব দ্যোতনায় তার মুখমন্ডল যেন আরো ধাতব হয়ে উঠল। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, তাঁর ঠোঁটটা তিনি প্রাণপণে চেপে রেখেছেন। তাঁর অধরের নিচের দিকটায় একটুকরো মাংস মাত্রাধিক কম্পনাঙ্কে কাঁপছে, সায়নুসয়ডাললি, হয়তো রাগের অতিমাত্র্যে। কুরবানির গরুর রান হলে বলতে পারতাম, চোরাগোশত লাফাচ্ছে- কিন্তু তিনি তো জৈবচেতনায় টইটুম্বুর। তাঁর মুখে আর কোন কথা সরে না। তিনি নিজের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর “উচ্চমাধ্যমিক গদ্য সংকলন” টা উঠিয়ে ঠিক একই ঠোঁটচাপানো মুখভঙ্গিতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লেন। ক্লাস শেষ হতে তখনো পনেরো-বিশ মিনিটের মত বাকি।

---------

আমি আছি ভয়ে ভয়ে। এই মহতী প্রকল্পে খালেককে দুটো পাঁচ টাকার কয়েন দরে দশ টাকা অনুদান দিয়েছিলাম আমি। জুবায়েদ, ক্লাসক্যাপ্টেন আকবর, বাঁটকু রনেল- জানিনা এইসব পাতি হোমসেরা হেঁসেলকে ইতোমধ্যে কোন কালো-ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে কিনা। ধরিয়ে দিলে সেখানে খালেক-বাপির সাথে আমার নামও যে থাকবে, আমি নিঃসন্দেহ। হয়তো কলেজের পাটও চুকে যেতে পারে। এরকম খানিকটা কানাকানিও চলছে সকাল থেকে। মধ্যবিরতির পরেই বাংলা ক্লাস। খুব ভয়ে ভয়ে সস মাখিয়ে সিংগাড়া খেলাম। হজম ঠিকমত হলো না বোধয়। পেটে গুড়গুড় করছে। জানিনা আজ হেঁসেল স্যার কী সমন নিয়ে ক্লাসে আসেন।

বেঞ্চে যখন এসে বসলাম, তখন দেখি আশেপাশের সবাই কিছুটা উতকন্ঠিত। গোটা বিশ পঁচিশেক ছেলের হাত রয়েছে এতে, তাই একটু সাহস পেলাম। ‘দশে মিলি করি যদি, হার-জিতের গুষ্টিরে ু*’- এটা নষ্ট কবি দীপুর ইম্প্রোভাইজিত উৎবচন।

তবুও একটা স্নায়ুশৈথিল্যের ভাব আছেই। দেখলাম সামনে আবিরের মুখটাও পাংশুটে। সময় ঘনিয়ে এল। স্যার দরজা খুললেন। নিয়মমত আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। ভিতরে এসে নিজের চেয়ার ধড়াম করে টেনে বসলেন তিনি। তারপর টেবিলে রাখা ছোট্ট মাইক্রোফোনটা মুখের কাছে এনে ধরলেন। মুখে একটা ঔদাসীন্য, চাহনীতে ভাবলেশহীন অসারতা, কন্ঠটা মনে হল মৃদু- তাতে একটা অতিন্দ্রীয় তারল্য, সামান্য আড়ষ্টতাও। শ্লথ টেম্পোতে বললেন,

“ওনার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ক্লাস রুটিন- ক্লাব মিটিং শিডিউল, এসব হাবিজাবি নিয়ে কি জানি একটা গড়বড় হয়েছে। যাই হোক, তোমাদের ক্লাসটা এখন থেকে আমিই নেব। পরিচিত হয়ে নেই, আমার নাম ‘বিমল অ্যাংগেলো রোজারিও’।”

স্মরণেঃ ‘সপ্তম গ্রুপ’এর সপ্তাশ্চর্যক সংশপ্তকগণ


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইমেইলটা ঢাকতে ইমেইলটা সিলেক্টেড অবস্থায় চোখের উপর ক্রস বাটনে ক্লিক করুন। তারপর 'সচল' শব্দ মুছে 'মডু' করে দিন। অনেকটা এরকম (ক্রস বাদে):
[xrestrict:মডু]abul@bahari.com[/restrict]

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিকাছে, ইনশাল্লা, এরপর থেকে....

ধৈবত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ও দারুণ
ছোটবেলা থেকেই মাস্টর মেরামত আর মাস্টরদের হাতে সরাসরি মেরামতের কিছু স্মৃতির সাথে কমন পড়ে গেলো

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম, হতেও পারে আমরা একই গুরুদের শিষ্য

ধৈবত

অপছন্দনীয় এর ছবি

মনে হয় চিনেই ফেললাম...

এই ব্যক্তির সাথে আমাদের অন্য কিছু চিড়িয়াও ছিলো, এই পয়সার টুং টাং এর জ্বালায় সেই চিড়িয়াদের একজন চাকরীর তিনমাস পুরো না হতেই লেজ তুলে পালায় - বাংলা না অবশ্য, অংকের।

অতিথি লেখক এর ছবি

পয়সা পতনের শব্দ যে এত ফলদায়ক তা এই পরীক্ষণের আগে জানতাম না। দেঁতো হাসি
ধন্যবাদ

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা প্রশ্ন ছিল... স্যারের চোখের সামনে কিভাবে পয়সা ছুঁড়ে মারা হয়েছিল???
অবশ্য আমরাও মারতাম কিন্তু স্যারের পিছে... যে চ্যাতাটা চেত্‌ত... মুখ ফেনায় ভরে যেত... সে তখন মারার জন্য লাঠি খুঁজত... যখন যেত বা আসত, আমরা বলতাম "The Rain is coming" (তার নাম ছিল ধীরেন দাস (অংক))!!!

হিমাগ্নি

অতিথি লেখক এর ছবি

পয়সা পতন করা তো কোন ব্যাপারই না। দরকার ছাত্রদের মধ্যে একটা সমোঝোতা। বিশাল ক্লাস রুম। স্যার এ কোণায় গেলে পয়সা পড়বে ঐ কোণায়, সামনের দিকে হাঁটলে পড়বে পেছনের দিকে। স্যার একটু ভুদাই টাইপ হলে তো একেবারে সামনে থেকেও ফেলা সম্ভব। দরকার সামান্য মওকায় একটা কয়েন নিয়ে দূরে নিরাপদ কোথাও (নো ম্যান্স ল্যান্ড টাইপ) ছুঁড়ে দেওয়া দেঁতো হাসি

ধৈবত

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ঠিক এই ধরণের লেখাই তোকে মানায়। আর এই লেখাটাও আসলে নিদারুণ হয়েছে... দেঁতো হাসি

উনি কিন্তু কুতর্ক অন্তঃপ্রাণ মানুষ। দ্যাশের যেখানেই কুতর্ক হয়েচে- প্রাণের তাগিদে উনি সেকানে চুটে গিয়েছেন। একবার তো আমাদের বড়োভাইদের অনুরোধ রক্কার্থে পদ্মার এক প্রমত্ত চরে পর্যন্ত আটকা পড়েছিলেন...

অতিথি লেখক এর ছবি

তুই ও কি আমাদের 'তার্কিক' এর মত হেঁসেলের কুতর্ক বাহিনীর সদস্য ছিলি নাকি দেঁতো হাসি
যাই হোক, তোরটা দে তাড়াতাড়ি।

ধৈবত

অদ্রোহ এর ছবি

‘সপ্তম গ্রুপ’এর সপ্তাশ্চর্যকদের অনেকের সাথে বিলক্ষণ পরিচয় আছে, অতএব গপ্পের স্বাদ আস্বাদন করিতেও খুব বেশি বেগ পোহাইতে হইলনা দেঁতো হাসি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

একদা, একটি মহাবিদ্যালয়ে একটি গ্রুপ ছিল, উহার নাম- সপ্তম গ্রুপ দেঁতো হাসি

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহাহা!!! চরম!!! গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

গুরু, আমিও কিন্তুক একজন নিরীহ সপ্তম চোখ টিপি তবে আমাদের সময়ে হেঁসেল নয়, মুক্তার ছিলো

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

এইজন্যই তো আপনেরে এত তোয়াজ কইরা চলতাম খাইছে
মুগডালের কাহিনীটা আপনি নামান। আমিও মুগডালের ক্লাস পাইছিলাম তবে তেমন না মন খারাপ

ধৈবত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।