এমনিতেই হিন্দুস্থান জুড়ে নানা গন্ডগোল, তাই টেনশনের অভাব নেই।যখন তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাদখল আর ব্রিটিশ তাড়ানোর আন্দোলন লেগে আছে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর তেলে আরো ঘি পড়েছে। ওদিকে রহমতালী ভাইসাহেবের মনে প্রেমের আগুন তেলেবেগুনে জ্বলছেই। হঠাত করে এমন সময়ই দুর্গ্রহের মত জিন্নার তারবার্তা এল তারকাছে, কি নাকি খুবই জরুরী একটা কাজ দেওয়া হবে তাকে-
খবর পেয়ে রহমত আলী, জিন্নার বাসায় এসে হাজির হলেন সময়মতো। সামনের কাশ্মিরী কুশনে হেলান দিয়ে, পায়ের উপর ঠ্যাং তুলে বসে আছেন মুহম্মদ আলী জিন্নাহ।উঁচুস্তরের একটা কৃত্রিম গাম্ভীর্য সর্বাংগে আশ্রয় করে নিজের একটা গুরুত্ব তৈরী করার চেষ্টা করছেন তিনি। রহমত আলী ছিঁচকে চোরের মত চারদিকে উঁকিঝুকি মেরে খেয়াল করলেন, পর্দার আড়ালে গুঁটিসুটি মেরে তারদিকে তাকাচ্ছে জিন্নাসাহবের ঘরের শোভা, মিসেস মরিয়ম জিন্না ওরফে ‘রুটি’। রুটি বিবিকে ওই অবস্থায় দেখে রহমত সাহেবের মধ্যে হঠাত একটা বেরহমতি ভালবাসা উপক্রান্ত হল।
সামনে বসা জিন্না সাহেবের অত কিছুর খেয়াল নেই। মুসলিম লীগের হর্তাকর্তা তিনি, তার মেজাজও শিকে চড়ে আছে। এসব তুচ্ছ কিছু না খেয়াল করে- তিনি বরং ওই শূয়োরখোর বৃটিশ সাহেবদের যত্নসহকারে পদলেহন করেন। ছোট্ট ত্যাঁনা কোমরে পেঁচিয়ে আধন্যাংটো ভাবে ঘুরে বেড়ানো বেঁটকে বুড়ো গান্ধী, তার চ্যালা নেহেরু-সুভাষদের সাথে নিয়ে বিশাল হিন্দুস্থানে সংখ্যালঘু মুস্লিমদের আটকে গরুগোশতের হক কিভাবে মারতে চাইছে সেই অভিসন্ধি উতখাতেও ব্যস্ত এখন তিনি। ওদিকে গাদ্দার আবুল কালাম আজাদকেও মালাউনরা কি যে যাদু মন্ত্র করেছে কে জানে। মুসলমানের আওলাদ হয়েও গান্ধীর নেংটি ধরে ঝুলে থাকা আর অবিভক্ত ভারতের জন্য বিভিন্ন জায়গায় চিল্লাচিল্লি করাই তার কাজ।বউয়ের বাউন্ডুলেপনার দিকে নজরদারির ফুসরত কোথায় জিন্নার? তাই জিন্নাসাহেব অতশত খেয়াল না করে বললেন,-
-“শোন, আমি, ইকবাল সাহেব সহ আরো কয়েকজন মিলে এমন ‘টু নেশন থিওরি’ নামে এমন এক মোক্ষম থিওরি প্রসব করতে যাচ্ছি যে গভর্নর আর তার ক্যাবিনেট নিশ্চয়ই প্রভাবিত না হয়ে পারবে না। বৃটিশেরা বিদেয় হলে কংগ্রেসের হিন্দু মুর্তাদগুলো, দেশজুড়ে প্যারাসাইটের মত ছড়িয়ে থাকা তাদের খয়ের খাঁ গুলোকে নিয়ে যাতে আমাদের উপর ছড়ি ঘুরাতে না পারে সেটার ব্যবস্থাই করছি।কিন্তু আমাদের একটা আনুষাংগিক প্রিপারেশন তো দরকার আছে, কীবল? তার জন্য এখনি প্রস্তুত হতে হবে।”
রহমতালী একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, –“আমি কী করতে পারি?”
জিন্না বললেন,- “হাফিজ জুল্লুকে খবর দিয়েছি। লোকটা হয়ত তাড়াতাড়ি এসে পড়বে। মুসলমানের নয়া মুল্লুকের জন্য একটা খান্দানী গান লিখতে হবে, যেখানে কোন হুন্দুয়ানী উসিলা থাকা চলবে না।”
এবার একটু অভিযোগের সু্রে তিনি যোগ করলেন-“ খোদা, মাঝে মধ্যে ভুল করে এইসব মালাউনদের কী সব প্রতিভা দিয়ে বসেন। রবিন্দ্রনাথ নামের এক মুচো বাংগাল, তোষামুদে সব ছড়া-ছাপড় ফেঁদে নোবেল হাতিয়ে নিয়ে এল।হিন্দুগুলো সব দরকারী গান-গজল ওই বুড়োর বই ঘেঁটে ঘেঁটে বাছাই করে ফেলছে।হাফিজ জুলুন্দরী সাহেব যদি একটা ভাল গীত লিখে ফেলেন তাহলে সারাদিন মাইক দিয়ে বাজিয়ে শুনিয়ে দেব হতচ্ছাড়াগুলিকে।”
-“তো আমার কি করতে হবে, বলুন?”, বিনয়ের সুরে বললেন রহমত আলী।
-“শোন, ভারতবর্ষের পুর্বভাগে হিন্দুয়ানী বালা মুক্ত একটা ভূখন্ডের পত্তন করতে হবে, যেখানে এবাদত-বন্দেগীর সময় পাঠার মুতের গন্ধ আসবে না। এটা আদবের সাথে তুলে ধরার জন্য জায়গাটার একটা ভাল টাইটেল দরকার।সেটা হবে এমন ,যেটা শুনে মনে হবে যেন খোদাতালার রহমত নাযিল হচ্ছে হরফে হরফে, আর ভাইসরয়ও যেন ভালভাবে প্রভাবিত হন। শুনলাম তুমি ক্যাম্ব্রিজে বসেই অ্যাক্রোনিম জাতীয় কি একটা নাম বার করার চিন্তা করেছ, শুনেই তো তোমাকে খবর দিয়ে ডেকে পাঠানো।”
-“জ্বী, ওরকম কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি”
-“বিলেতে ওই বরাহ-ভক্ষকদের সাথে থেকে এত নেককার চিন্তা ভাবনা কেমন করে আসে? এইজন্যই কি তোমার নাম রহমত আলী??”- বলেই মুখে একপশলা শুকনো হাসি জিন্নার।
রহমত আলী কিঞ্ছিত লজ্জিত হবার ভান করলেন আর মনে মনে ভাবলেন- ‘তুমি বউ নিয়ে ফুর্তি করবা আর আমি বসে বসে নাম ভাজব।নাম তো আমি মুটামুটি একটা আলগা দেখে বের করে দেবই, কিন্তু তার আগে তোমার ক্ষেতে আমার বীজ ফেলেই যাব, যাতে ধান যব সবকিছুই পরে আমার নাম জপ করে।’
তিনি বললেন- “শুনুন স্যার, একদিন ইংল্যান্ডের এক বারে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে গ্যাঞ্জাম হয়েছিল বলে উগ্রবাদী কিছু আইরিশ আর ওয়েলশ ছেলে হুইস্কির বোতল ছোড়াছুড়ি করছিল। খোদা তালার কী এক বিচিত্র খেয়ালে, একটা আমার মাথায় এসে ভাংগে। এর পর থেকে অল্প বিস্তর ডেমেনশিয়া এসে চেপেছে। ঠিক সবকিছু মনে রাখতে পারিনা।”,বলেই গোমড়া মুখ রহমত আলীর। খানিকটা মাথা চুলকে আবার বললেন-“আমি তখন যে নামটা বের করেছিলাম, এখন হালকা হালকা মনে আছে। তবে আবার চেষ্টা তখলিফ করে হয়তো বের করতে পারব। খাতা কলম এনে দিন আমি এখানে বসেই বার করে দিচ্ছি।”
জিন্না বললেন,- “গত কয়েকদিন সারা দিনরাত ধরে চৌদ্দ দফার পান্ডুলিপি কাটা ছেড়া আর ‘টুনেশন থিওরির’ খসড়া করতে করতে দোয়াত কালির নিকুচি হয়েছে। এখানে একটা ফোনোগ্রাফ আছে, তুমি চাইলে এটা ব্যবহার করতে পার।” জিন্না পাশের টেবিলে রাখা খয়েরী রংয়ের সামান্য পুরোনো ধাতের একটা ফোনোগ্রাফের দিকে ইংগিত করলেন। সেটার ধড় এমন সর্পিলাকার যেন একটা সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে ফনা তুলে আছে। “তবে ব্যাবহার করতে সাবধান, এখানে কিছু কাওয়ালী ভরা আছে; দেখো, গুতিয়ে আবার ওগুলো হাওয়া করে দিও না। আর জুল্লু সাব যদি চলে আসেন উনার কিছু তাড়া না থাকলে বসতে বোল।” বলেই জিন্না চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলেন।
-“আপনি কোথায় যাচ্ছেন…” কৌতুহলী হয়ে জিগেস করলেন রহমত আলী।
-“আমার এখন উঠতে হবে।পুর্ব বাংলার নালায়েক লীডারগুলার সাথে একটু আলোচনায় যেতে হবে। ওখানে ওরা কি যেন ঝামেলা পাকিয়েছে কংগ্রেসের সাথে ওইদিকটা একটু দেখে আসতে হবে। আর এই কংগ্রেসের কুকুরছানা গুলা তো আবার বৃটিশদের চাটতে খুব ওস্তাদ, তাই ভাইসরয় এমনিতেই ওদের দিকে একটু ঘেঁষা থাকে।”
জিন্না সাহেব চ্যালা চামুন্ড নিয়ে বের হওয়া মাত্রই দৃশ্যপটে হাজির উনার বেগম।নামজাদা মুসলমান ঘরের মধ্যেই কেমন একটা অ্যাডভেঞ্চারের চিন্তা যেন তার মাথায় গুঁতো মারছিল। লুকোচুরিমূলক প্রেমিককে কাছে পেয়ে তো আনন্দে দিশেহারা বেগমসাহেবা।ঘরের চাকর-চাপরাশি সবাইকে কাজে কামে পাঠিয়ে দিলেন তিনি। তারপর অভি্যোগের সুরে রহমত আলীকে বললেন,- “এই বুড়োটার জ্বালায় আর বাঁচিনে।আব্বাজান কি লোভে পড়ে এই সিন্ধি খচ্চরটার সাথে আমায় বিয়ে দিলেন বুঝে উঠতে পারি না।বোম্বের কত মরদ জোয়ান আমার পিছে পিছে ঘুরত। আর এই লোকেতো সারাদিনে একবারো চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই চায় না, ওর অন্যান্য কিছুও দাঁড়াতে চায়না।”
মওকা মত রহমত আলী সাহেব রুটিবিবির খুবই কাছে এসে বসলেন। যত্ন করে হাত বুলিয়ে দিলেন কপালে। আশ্বাসবানী উগরে দিয়ে বললেন,- “কোন চিন্তা কোরো না লক্ষীটি, সব ব্যাপার আমি দেখব।” তারপর বিলেতে শিখে আসা তার সেই অসভ্য নারীলোলুপতা আসতে আসতে প্রয়োগ করতে লাগলেন, কারিগরের মত।
ধূর্ত শেয়ালের মত কোমল স্বরে রহমতালী বললেন,-“শোন, রূটিমনি। কম্বলের তলে মুখ গুজলেই শুধু তোমাকে স্বপ্ন দেখি।খেতে গেলে, ঘুমোতে গেলে, পলিটিকাল প্যাঁচ খেলতে গেলে কিম্বা বদনা হাতে নিলে- সবখানেই শুধু তুমি। লন্ডনে থাকতে, কনকনে ঠান্ডায় তোমার কথা চিন্তা করেই যখন হাত-মিথুন করতাম তখন যেন একটা গায়েবী উষ্ণতা আমাকে ছুয়ে যেত।”
-“যাও অসভ্য কি যে বল না।” খুনসুটির সুরে বললেন মরিয়ম বিবি। -“আমাদের বাপের গোষ্ঠী পারস্য থেকে এসেছিল। ওখানকার মেয়েরা খুব লাজুক হয়। তোমার মত দুষ্টূ পাঞ্জাবী পাপীষ্ঠদের তো এজন্যই এত অপছন্দ আমার।”
-“জানো, ইদানিং আমার মধ্যে কেমন যেন কবি ভাবের উদয় হচ্ছে। তোমার চিন্তায় বিভোর হয়ে তোমাকে স্মরন করার জন্য একটা দুষ্টু টাইপ কবিতা লেখেছি, শুনবে…?”, চোখে রাজ্যের আনন্দ রহমত আলীর
-“শোনাওতো দেখি”
সমস্ত আবেগ নিংড়ে দিয়ে ছন্দ করে করে স্বরোচিত আপাত-অশ্লীল কবিতাটা বলতে লাগলেন তিনি-
“ওগো মারিয়াম ‘রুটি’, তোমায় আমি লুটি
করাচির শিককাবাব তুমি- লাহোরের বনরুটি
মদ পেয়ালার মদির তুমি, কাশ্মিরী বরিষন
দেহ তোমার সিন্ধু-মরুর সূর্য হুতাশন
চুল-যমুনায় ভেসে যায়, ঐ তামিলনাড়ুর বন
পোঁদ আতপ্ত খায়বারপাস, ইরাবতী- স্তন“
-“এটা আবার কি ধরনের ভাষা, একটা শব্দও তো বুজিনা।”, মরিয়ম বিবির চোখ-মুখে দুনিয়ার হতাশা
-“আরে এটা বাংলা ভাষায় লেখা। কাশ্মিরের বর্ষা, তামিলনাড়ুর প্রকৃতি,খয়বরের রোমাঞ্চময় গিরিপথ, স্রোতস্বী ইরাবতী নদী- নিখিল ভারতের এইসব নেয়ামত গুলোকে তোমার শরীরের সব নেয়ামতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছি খাপে খাপে। অবশ্য, বাংলা ভাষী প্রাচীন এক কবি থেকে অল্প স্বল্প মেরেছি…”
-“বাংলা, মানে বংগ অঞ্চলের ওই চাঁড়ালদের ভাষা”; একটু বাঁকাস্বরে বললেন মরিয়ম বিবি।
-“আরে ওসব বলে লাভ নেই।ওখানকার কালো কালো কাঠির মত শুকনো লোকগুলা কিন্তু মাল আছে।”,রহমত আলী দৃপ্ত কন্ঠে জবাব দিলেন। -“এই ভাষাই এশিয়াতে প্রথম নোবেল নিয়ে এসেছে। তাই এটার উপর মুগ্ধ হয়ে এনিয়ে আমি একটু পড়াশুনা করেছি, আর কিছুটা দুর্বলও হয়ে পড়েছি। যাই হোক আজ সারা বিকেল ভর এই মধুর ছড়ার ছন্দে ছন্দে আমি তোমাকে ভালবাসব, যে ভালবাসা ঐ টুপিওয়ালা বুড়ো হাজারটা কবিরাজী বড়ি গিলেও দিতে পারবে না তোমাকে….”
—————-
রাত না গড়াতেই লিয়াকত আলি খান আর মুহম্মদ ইকবালকে সাথে নিয়ে জিন্না সাহেব ফিরে এলেন।গর্ব করে বলতে লাগলেন- “আজ কংগ্রেসকে দুহাত দেখে নিয়েছি। বেশি বাড়লে এমন রাজনীতিক প্যাঁচ কষব যাতে ব্রাহ্মন-অচ্ছ্যুত সবগুলোকে ভারতবর্ষের এক চিপার মধ্যে কয়েক গন্ডা জায়াগা দিয়েই ছেড়ে দেয়। গান্ধী বুড়ো যে সত্যাগ্রহ, অনশনের ভড়ং ধরে মুসলমান্দের ফাঁদে ফেলতে চায় তা কি আমি বুঝি না।“
উপস্থিত সকল ন্যাতার সম্মানে কিঞ্চিত রহমতের মাল-মদ্য সহযোগে গ্র্যান্ড ফিস্টের আয়োজ়ন করা হল জিন্না সাহেবের বাসায়। খাওয়া শেষে জিন্না, রহমত আলীর সাথে গিয়ে বসলেন। আগ্রহ নিয়ে তাকে বললেন- “দেখি তুমি কি করলে। তুমি যে বললে না কি যেন অ্যাক্রোনিম আর শেষ শব্দের সাফিক্স-প্রিফিক্স লাগিয়ে এক চমতকার শব্দ বানিয়ে রেখেছ সেটা কি মনে করতে পেরেছ?”
রহমত আলী পড়লো বিষম ফ্যাসাদে।সারাদিন সে মজে ছিল শিককাবাব ছেঁড়া আর বনরুটি চাবানো নিয়ে। বাকি সময় ঘোরের মধ্যে সে কি করছে তার নিজেরো খেয়াল নেই। ওদিকে মুখপোড়ো হাফিজ জুললুর এমুখে পা মাড়ানোর শব্দ একবারো সে শোনেনি যাতে তার ঘোরটা তবুও ভাংগে।
জিন্না সাহেব রেকর্ডার চালু করলেন, রেকর্ডার চালু হতেই কীসব যেন পরিচিত অদ্ভুদ শব্দ আসল
-আহ আহ আহ উউ, আঁ আঁ আঁ ইঈঈই
জিন্না সাহেব ভুরু কুঁচকে বললেন- “এই, এইটার মানে কি বুঝলাম না তো কিছু”
রহমত আলী একটু ভীত কন্ঠে জবাব দিলেন- “আপনার রেকর্ডে জং ধরে, জবড়জং হয়ে পড়েছে। তাই অমন অদ্ভুদ শব্দ করছে বোধয়।”
আবার কিছু পর শব্দ উবে গেল পুরোপুরি, এরপর অস্পষ্ট চিঁচিঁ শব্দ, হয়তো রেকর্ডের কিছু অংশ খোয়া গেছে। হঠাত আবার শব্দ এল-
“পোঁদ আতপ্ত খয়বরপাস, ইরাবতী- স্তন”, “পোঁদ আতপ্ত খয়বরপাস, ইরাবতী- স্তন”
একটা পুরুষ কন্ঠ কাতর স্বরে বলছে শব্দগুলো, নেপথ্যে কেমন যেন নারীকন্ঠের চাঁপা একটা গোঙ্গানি….
জিন্না সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না। তাছাড়াও এডিসনীয় রেকর্ডারটারো ইদানিং কিছু ভিমরতি হয়েছে, শব্দ খায় কিন্তু সাথে আবেগটাকে খেতে পড়তে পারেনা। চুরুট ধরাতে ধরাতে বললেন, এমন শব্দ আগে শুনেছি বলে তো মনে হয় না। এটা কোন দেশি শব্দ?
রহমত আলী কি বলবেন ঠিক ধরে উঠতে পারলেন না। নিঃশ্বাসকে মুখে পুরে নিয়ে বললেন- “মানে ওটাই তো আমি চিন্তা করে বার করেছিলাম…”
-“কিন্তু এটা কি ভাষা??”
-“এইটা হল বাং…. মানে এইটা ফারসি ভাষা”
-“ফারসি ভাষা কি এরকম!! ছোটবেলা মৌলভী মশায়, ফারসি শেখাতে গিয়ে পিটিয়ে পাছার ছাল তুলে নিয়েছেন, কিন্তু তখন এমন কোন ভাষা-শব্দ শুনেছি বলে মনে হয় না!! আমি তো সেভাষা কমবেশি জানি”
-“অবশ্যই, এটা যথুরাষ্ট্র যুগের বিলুপ্তপ্রায় পারস্য ভাষা তাই এমন মনে হচ্ছে। মহাকবি ফেরদৌসী, রুদাকি, বালাধুরির মত লোকেরা এরকম অনেক শব্দ তাদের অনেক কাজে ব্যবহার করেছেন যার অনেকটাই আজ হারিয়ে গেছে”;- উত্যুঙ্গ আত্মবিশ্বাস চোখেমুখে ফুটিয়ে বললেন রহমত আলী। -“এমন শব্দে অনেক বড় মাপের, হারিয়ে যাওয়া ফারসি সাহিত্য কর্ম রয়েছে যেগুলো এখন মাটি ফুঁড়ে বের করতে পারা গেলে সেটা কোটি টাকায় বিকোবে”
এবার জিন্না একটু বেকুবই বনে গেলেন। মাথা থেকে টুপি খুলে, থুতনি চুলকে বললেন,-“ আচ্ছা দেখছি আমি তাহলে ব্যপারটা। তবে ফারসি, আরবী, উর্দু এগুলা হল বেহেশতি ভাষা, তাই এইসবের যেকোন শব্দই যেকোন কাজেই কামিয়াবী দান করবে”। বলেই জিন্না সাহেব রেকর্ডে লাইনটা আবার শুনে নিলেন, তারপর কাগজ হাতে নিয়ে কি জানি লিখলেন। কিছুক্ষন পর তার মুখে সে কী অমানুষিক হাসি। উচ্চকন্ঠে বলে উঠলেন-
“বাহ! সুভানাল্লা, সুভানাল্লা!! নিশ্চই খোদা তালাই, আমাদের একটা পাকপুণ্য ভুমির জন্য এমন এক মহান আইডিয়া আপনার মাথা দিয়ে বার করিয়েছেন। আপনি আমার বুকে আসুন ভাইসাব, আপনি আজ আমাকে সবচেয়ে বড় সুখী করলেন”
রহমত আলী সাহেব একটু ভড়কে গেলেন। বুঝলেন না এইটা কোন মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রহসনধর্মী প্রকাশ কিনা। তিনি একটু রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করলেন- “আসলে স্যার আপনি এখান থেকে কি বার করলেন?”
জিন্না কাগজটা সামনে বাড়িয়ে বললেন-“দেখুন, ইংরেজীতে ফনেটিকাল্লি লিখলে এটা ঠিক এমন হয় না-
Pond Atapto Khaybarpass Irabatee STAN …………মানে- PAKISTAN ”
-“ঠিক স্যার, পানিংটা আপনি ধরতে পেরেছেন….”
ধৈবত
মন্তব্য
এই লেখাটার মানে কি ভাই? একটা দেশকে বেহুদা গালিগালাজ করতে হবে কেনো?
-মেফিস্টো
পাকিস্তান অন্য আর 'একটা দেশ' নয়। পাকিস্তানকে গালি-গালাজ করার জন্য কারণ খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হওয়ারতো কথা নয়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বাংলাদেশ এর কাছে পাকিস্তান যে অন্য আরেকটা দেশ নয়, সেটা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। কিনতু কোন কারন ছাড়আই, কোন সমসাময়িক ঘ্টনার যোগসূত্র ব্যতিরেকে হঠাত গালিগালাজ, মানুষ হিসেবে আমাদেরকে খুব একটা উচু তে তোলে না।
কি জানি, আমারতো পাকিস্তানের কথা মাথায় আসলেই ক্রোধ হয়, আর সেটা হয় ৭১ এর কথা অবিচ্ছেদ্যভাবে মনে আসে বলেই। অনেকদিনের জমানো ঘৃণা প্রকাশের জন্য সমসাময়িক ঘটনার যোগসূত্র আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না। আর ঘৃণা খুব একটা প্রশংসনীয় মানবীয় গুণ নয় মনে হয়, তাই বলে মানুষ হিসেবে উচুঁতে উঠার জন্য আমি ঘৃণা ত্যাগ করে ফেলব, এমনটাও মনে হয়না। যতদিন এই ঘৃণা বয়ে বেড়াতে হবে ততদিন কেউ না কেউ এইরকম 'বোল্ট ফ্রম দ্য ব্লু' গালিগালাজ করেই যাবে। তবে সবার এর সাথে একমত হতে হবে বলছিনা।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কোথাও পড়েছিলাম, স্পাইডারম্যান কোন একসময় লোকসম্মুখে আনমাস্কিং করে। কিন্তু তবুও একসময় পিটার পার্কারকে আর সাধারণ মানুষ স্পাইডারম্যান হিসেবে চেনে না, কারণ কোন এক ব্যাপারে অগত্যা পিটারের চুক্তি হয়েছিল মেফিস্টো'র সাথে। আর নরকের শয়তানরাজ মেফিস্টো সেই আনমাস্কিংয়ের সমস্ত স্মৃতি তাবত জনতার মস্তিষ্ক থেকে সম্পূর্ণই মুছে দেয় কিম্বা অতীতের টাইমলাইনই সে পুরোপুরি পালটে দেয়।
গ্রামে আমাদের বাড়িটা অনেক পুরোনো। আমার দাদার বাবার আমলের। ওটার সদর দরজায়, কাঠের চ্যাপ্টানো শরীরে এখনো বেশ বড়সড় একফালি চীড় আছে। আমার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে। বড়দের কাছে শুনেছি ওটা খান সেনাদের দানোকৃতি বুটের লাথি থেকেই হয়েছে। আপনি মার্ভেলের মেফিস্টো কিম্বা বাইবেলের লুসিফারের মত ক্ষমতাধর কিনা আমার জানা নেই তবে; সেই চীড়ের জন্মলাভের ঠিক পরবর্তী ঘটনাগুলোর কথা নাহয় বাদ দিলাম, আপনি ওই ক্লীব- অসাড় কাঠের প্রায় বিস্মৃত সেই ক্ষত আর তার পশ্চাতপটের ক্ষুদ্র একফালি অতীতটাকেও যদি মুছে দিয়ে আসতে পারেন, তবে আমি দিব্যি দিচ্ছি, এই পোস্টে কোন এক দেশকে আর তাদের তথাকথিত জাতির জনককে যদি গালিগালাজ করে থাকি, তাহলে আমি সেটা ফিরিয়ে নেব।
নতুবা, এ ধরণের পোস্ট আরো আসবে। অন্তত আমি যদ্দিন থাকব.....
ধৈবত
লিখেছেন খুবই ভালো -- কেবল একটু অশ্লীল হয়ে গেছে। বিশেষত্ঃ যখ্ন আরেকটা দেশ ও সে দেশের জাতির জনককে নিয়ে লেখা।
সদস্যনাম: Sandeep K. Shukla
আপনার লেখা আমার ভাল লাগে। কিন্তু এইবার কেন যেন মনে হোল একটু জোর করে লেখা। অনেক সময় অন্যকে ইমপ্রেস করার জন্য আমরা যেমন আলগা একটা কাজ করে বসি যেটা কিনা নিজেকে ঠিক রেপ্রিযেন্ট করেনা, অনেকটা ওরকম। আমার কথা অবশ্য উপেক্ষা করতে পারেন, পাঠক হিসাবে আমি খুব একটা সুবিধার না, অন্তর্নিহিত মানে খুঁজে বের করতে পারিনা। ভাল থাকবেন। -রু
গত বিজয় দিবসের দু তিন দিন আগে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা নিয়ে যখন আমি বিশদ আকারে পড়ছিলাম তখন আমার মধ্যে আসলেই একটা জোর চেপে গিয়েছিল। সে অর্থে এ লেখা অনেকটা জোর করে লেখাই। আর লেখাটা আমাকে আসলেই রিপ্রেজেন্ট করে না, কারণ আমি ওদের ক্ষেত্রে আরো অশ্লীলতর শব্দই সাধারণত ব্যবহার করি, এখানে ততটা করিনি। আর যাই হোক, এটা লেখাটা ভাল না লাগতেই পারে। ভাল থাকবেন।
ধৈবত
লেখাটা পূর্বেই ফেসবুকে পড়েছিলাম।
বেশ 'ইয়ে' লেখাটা আমায় খোঁজ-দা সার্চের মতোই হাসায় প্রায়।
হুম।
স্যাটায়ার লেখার সুবিধা হলো, লেখার বিষয় নির্বাচন করা অনেক সোজা।
কারণ রাগ তো এটার মূল উপাদান, আর আমরা তো রেগে থাকিই কারো না কারো ওপর।
কিন্তু অসুবিধাটা হলো, রসবোধ প্রয়োগে একটু এদিক ওদিক হলেই ব্যাপারটা মোটা দাগের হয়ে যায়।
ফলে যে লিখছে তার হয়তো রাগের প্রকাশ করা হলো, কিন্তু সেটা ভালো কিছু হতে গিয়েও হতে হয়তো পারলো না।
আপনার রাগ আছে, ঠিকাছে। কিন্তু প্রকাশটা ভাই খুব ভালো হয় নি।
লিখতে থাকুন, সামনে নিশ্চয়ই অনেক ভালো লেখা পাবো আপনার কাছ থেকে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আসলে লেখাটা তৈরী করার সময় এটাকে সাহিত্য সৌকর্য দেবার চিন্তা তেমন মাথায় আসেনি। আপনি যদি আপু হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টের স্ট্যাগ কন্টেন্ট এর জন্য এটা আপনার কাছে খারাপ লাগতে পারে এবং এর জন্য আপনার কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
ধৈবত
খাড়ার উপরে পাঁচ।
কাছাকাছি ধরনের একটা কৌতুক শুনেছিলাম। আপনার গল্পটা সেই কৌতুকের তুলনায় রীতিমতো অসাধারণ!
যা কওয়ার তা আগেই কইসি, নতুন কইরা একটা কথাই কমু, পাকিদের গালি দিতে কোনো কনটেক্সট লাগেনা।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
আবার কয়!
ব্যান খাওয়ার ভয় নিয়েও একটা দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না। গালিটা কোডেড। তালেবেএলেমদের জন্য ইশারাই কাফি।
পাখাপোমাচু
আহাহাহাহা, কী সুন্দর শব্দ!! ইনকা সম্রাট 'পাখা'চুটি আর তার নিজ 'পো'লার মতন প্রিয় নগর 'মাচু'পিচুর কথা মনে পইড়া গেল।
ধৈবত
সরাসরি পাঁচ!
ফেসবুকে আগেই পড়ছিলাম। এখন আবার পড়লাম। সিরাম লেখা!
আমি বুঝি না ফাকিদের গালি দিলেই দোষ আর গণহত্যা করা সোয়াবের কাম?
---------------------
আমার ফ্লিকার
বিশাল একটা প্লাস দিয়ে গেলাম।
আর এখানে গালি দেয়া নিয়ে কাউকাউ করছে অনেকে, বোধগম্য হচ্ছে না ব্যপারটা। এর আগেও তো এই ধরনের লেখা পড়ে থাকার কথা। শুধুমাত্র 'অতিথি লেখক' লিখেছে বলেই কি গালির বিরুদ্ধে কথা বলে একটু বড়ত্ব ফলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
--আদু ভাই
ভাইডি আমার মিসেস জিন্না'রে দেখার খুব খায়েশ হচ্ছে...ইশ তার অঙ্গে পাকিস্তান অঙ্কিত...
-অতীত
চুরির দায়ে আমার ব্যাচমেট এক পাকির ঠিক কানসা বরাবর একটা থাপড় দিছিলাম আমি। সেইরম ফিলিংস।।
তোর এই গপ্পোটা কোন একটা পাকিস্তানিরে ধইরা পড়ানোর খুব শখ আমার। সুযোগের অপেক্ষায় আছি...
দৃপ্র
ধৈবত
নতুন মন্তব্য করুন