এই তিন ধরনের দোয়াই তার করতে হয়েছে মনেমনে। কারণ আব্বু-আম্মু দুই পাশে শোয়া। টের পেয়ে গেলে লজ্জাকর ব্যাপার হয়ে যাবে। কেননা আব্বু-আম্মুকে সে বলেছে, কোনো চিন্তা নেই। সে একেবারেই ভয় পাবেনা। সে এখন বড় হয়েছেনা? এখন সে নিজে নিজে টুথব্রাশ করতে পারে। শার্টের বোতাম লাগাতে পারে। জুতার ফিতা না লাগাতে পারলেও মোজা পরতে পারে। মোটরবাইকে এখন ভাইয়ার সাথে সামনে বসে থাকতে পারে, পেছনে আম্মুর কোলে থাকতে হয় না। সেই ছেলে যদি এখন ভয় পায় তবে ব্যাপারটা লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়াবে বৈকি।
তবে সকালে উঠে ফাহাদ লক্ষ্য করল তার রাতের প্রার্থনায় কোনো কাজ হয়নি। যথারীতি ভয়ে কাঁচুমাচু অবস্থা। খোদাকে সে তিনটা অপশন দিয়েছিল। খোদা কোনোটাই পছন্দ করেননি। নিশ্চিত আব্বু-আম্মুর সাথে মিথ্যা বলার শাস্তি দিয়েছেন। অথবা কে জানে, অত রাতে তিনিও মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, আর তাই তার প্রার্থনা শুনতে পাননি। এখন কী করা যায়? ফাহাদ দেখল আম্মুই শেষ ভরসা। আম্মু ছাড়া তাকে উদ্ধার করার মত কেউ নাই এ মুহূর্তে। আর তাই ঘুম ভাঙ্গতেই ঘুরঘুর করা শুরু করল সে আম্মুর আঁচলের পেছনে পেছনে। আজকে আব্বুর সামনে পড়া মানেই সর্বনাশ! আর রক্ষা থাকবেনা তাহলে। ভাগ্যিস সকাল হতেই আব্বু বাইরে গেছে। কোথায় গেছে কে জানে? ফাহাদের হঠাৎ মনে হল সকালবেলার দোয়া কবুল হয়। তাছাড়া নিশ্চয়ই খোদার এতক্ষণে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আর তাই সে আম্মুর পেছনে ঘুরতে ঘুরতে আবার দোয়া করল যাতে খোদা আব্বুকে আজ অতীব কোনো জরুরি কাজে আটকে দেন বাইরে, চাইলেও যেন রাতের আগে আর না আসতে পারেন বাড়ীতে। আম্মু তার এ পেছন পেছন ঘুরঘুর করা দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও কিছু বললেন না।
হয়েছে কী আসলে, আজ ফাহাদ এবং তার ভাইয়ার সুন্নতে খাৎনা। অর্থাৎ মোসলমানীর দিন। এই ভয়েই ফাহাদের আজ এই ভয়ংকর অবস্থা। আব্বু ডাক্তার হওয়ায় নিজ দায়িত্বে এ গুরুভার নিয়েছেন। সঙ্গে আরও আছেন আব্বুর চাচাতো ভাই বিলেত ফেরত এক ডাক্তার, ডাক্তার জালাল। তিনি ঢাকায় থাকেন। শুধুমাত্র এই নৃশংস রক্তক্ষয়ী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতপরশু গ্রামের বাড়ীতে এসেছেন। এদিকে সারা বাড়ী জুড়ে কেমন জানি উৎসব উৎসব ভাব। এই গ্রামে বেশিরভাগ মোসলমানী “হাজাম” নামক এক অজানা অদেখা জীবে করে থাকে বলে ফাহাদ শুনেছে। তবে ডাক্তার দ্বারা মোসলমানী এই পাড়ায় এই প্রথম। আর তাই অন্যান্য বাড়ীতেও এ খবর রটে গেছে। সেসব বাড়ীর চাচীরা, খালারা, ফুফুরা সকাল থেকেই আসতে শুরু করেছে বাড়ীতে। এসেই রান্নাঘরে দাদুর সাথে বিশাল এক পঞ্চায়েত বসিয়ে ফেলেছে। আজকে যে মোসলমানী হবে তা ঠিক হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। মোসলমানী ব্যাপারটা ঠিক কী তা ফাহাদের জানা ছিল না। আম্মুর কাছে প্রথমে শুনেই শিউরে উঠেছিল সে, ভয়ে জড়িয়ে ধরেছিল আম্মুকে সে সময়। তবে আম্মু পরে বুঝিয়ে বলায় আশ্বস্ত হয়। ঐটা না দিলে নাকি মোসলমান হয়না। আর ঐটা যদি আব্বু দেয় তবে নাকি তার কোনো ব্যাথাই লাগবে না। আগে নাকি অবশ করে নেবে জায়গাটা, তখন আর টের পাবেনা। লজ্জা থেকে তরতাজা চামড়া কেটে ফেলবে আর ব্যাথা লাগবে না, এটা কীরূপে সম্ভব তা ফাহাদের মাথায় আসেনি। তবে ঐ সময় আম্মুকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলও না। কারণ আম্মু আরও জানালেন এটা ছোট থাকতেই করে ফেলা ভাল। বড় হয়ে করতে গেলে লজ্জাশরমের ব্যাপার। অন্তত এখনি গোছলের সময় ফাহাদ ন্যাংটা হতে চায় না। আম্মু যখন জোর করে প্যান্ট খুলে নেয় তখন সে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ভাবে কেউ তাকে দেখছেনা। বড় হয়ে মানুষের সামনে প্যান্ট খোলা অসম্ভব। আব্বু হোক আর যেই হোক। তাই যা করার এখনি করে নিতে হবে।
তাছাড়া আম্মু বললেন মোসলমানী না দিলে পাশের গ্রামের মানিক দাদার মত ধুতি পরতে হবে। এটাও ফাহাদের দ্বারা সম্ভব নয়। প্রথম যেদিন সে মানিক দাদাকে ধুতি পরা অবস্থায় দেখে তখন বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। জিনিসটা অনেকটা যেন লুঙ্গি আর শাড়ির মিশ্রণ। আম্মুকে সরাসরি গিয়ে বলল, আম্মু, দেখেন তো মানিক দাদা ভুল করে মেয়েমানুষের মত কার শাড়ি পরে চলে এসেছে, তাও উপরে জামা না পরে ফতুয়া পরেছে। আর শাড়ি ঠিকমত না পরতে পেরে পেঁচিয়েছে নিচে। আপনাকে ডাকছে। বাইরে থেকে এটা শুনে মানিক দাদা তো হেসেই গড়াগড়ি। আম্মু দিলেন একটা রামধমক। ফাহাদ কিছুই বুঝেনি সেই সময়। পরে আম্মুর কাছে শুনেছিল। আর শুনে আম্মুর উপর রাগ হয়েছিল তার। সে কী দোষ করেছে? কই, আব্বু বা চাচারা তো এভাবে কখনও কিছু পরেনা। সে জানবে কীকরে তাহলে। যাইহোক সে পরে মোসলমানী করতে রাজি হলেও, আবদার ধরল যে এটা সে হাজামকে দিয়ে করাতে চায়, আব্বুকে দিয়ে নয়। আব্বুকে তো সে রোজই দেখে। হাজামের শুধু নামই শুনেছে, কখনও দেখেনি। কিন্তু আম্মু যখন বললেন যে হাজাম করলে আগে অবশ করবে না। ধারালো ছুরি দিয়ে লজ্জার সামনের চামড়া টেনে ধরে মুরগি জবাই এর সময় টেনে ধরা গলায় যেভাবে পোঁচ দেয় সেভাবে দিবে এক পোঁচ। শুনেই ফাহাদের শরীরের অর্ধেক রক্ত ভয়ে শুকিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। আর লক্ষ্যবস্তুটাও মনে হয় কুঁকড়ে গেল অনেকটা সেই আতংকে।
ফাহাদের পরিবার এই গ্রামের অন্যতম সম্ভ্রান্ত একটা পরিবার। ফাহাদ আর তার বড় ভাই এর সুন্নতে খাৎনা উপলক্ষে প্রায় সারা গ্রামে দাওয়াত পড়েছে। তাছাড়া ফাহাদের নানাবাড়ি থেকেও মামারা এসেছেন। শুক্রবার আজ। অনুষ্ঠান বেশি কিছু না। সকালে মোসলমানী দিয়ে শুরু। এরপর দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে কিছুক্ষণ মিলাদ-মোনাজাত এবং তারপরে খাওয়া দিয়ে শেষ। সে উপলক্ষে বাড়ীতে রান্নার বিশাল আয়োজন শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আম্মু বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করছেন। আর লেজের মত পেছনে পেছনে ছুটছে ফাহাদ। কারও কাছেই যাচ্ছে না বা কারও কথা শুনছে না। পরিচিত কিছু বয়ষ্ক মহিলা কাছে টেনে দুষ্টামি করার চেষ্টা করলেন ফাহাদকে নিয়ে। কিন্তু পারলেন না। ফাহাদ আঠার মত লেগে রইল মা এর সাথে। এদিকে তার বড় ভাই ফাহিম এর কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই এ নিয়ে। বরং ফাহাদ লক্ষ্য করেছে, এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে ভাইয়া কেমন জানি আনন্দিত ও গর্বিত। মোসলমান হবে, মোসলমান হবে এই ভাব সারামুখে। খুশিমনে বন্ধুদের এবং মামাতো ও চাচাতো ভাইবোনদের জানিয়েও বেড়াচ্ছে। পারলে এখনি নিজহাতে ঘ্যাচাং করে কাটা লজ্জা সবাইকে দেখাতে পারলে যেন স্বস্তি পায়। ফাহাদ ভেবে পেল না এতে আনন্দের কী আছে? যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ব্যাপারটার সমাপ্তি ঘটবে তাতে কী একটুও ভয়ের কিছু নেই? নাকি ভাইয়ার বয়স ভয়ের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। ইশ, সে যদি আগে জন্মাত। তাহলে এখন ভাইয়ার মত এহেন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও ধেইধেই করে বেড়াতে পারত। আক্ষেপ করে লাভ নেই এখন আর। এখন ভরসা শুধু খোদা আর আম্মু। ফাহাদ কোনো আরবী দোয়া এখনও শিখেনি। তাই আম্মুর কাছে থেকে শেখা শুধু আল্লাহু আল্লাহু জপতে লাগল মনে মনে। যদি খোদা তার সকালে করা দোয়া কবুল করে নেন এই আশায়।
কিন্তু ফাহাদের এ দোয়াও খোদা কবুল করলেন না। বেলা দশটার দিকে আব্বু জালাল চাচাকে সাথে নিয়ে ঢুকলেন বাড়ীতে। তাদের একত্রে দেখেই ফাহাদের ভয়ে ঠ্যাং কাঁপতে লাগল। সোজা গিয়ে লজ্জার সব মাথা খেয়ে কোলে লাফিয়ে পড়ল আম্মুর। আম্মু বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা। আর তাই মাথায় হাত বুলিয়ে সাহস দিতে লাগলেন। অভয় দিলেন যে আগে সে দেখুক ভাইয়ার কষ্ট লাগে কিনা। ভাইয়া যদি কষ্ট পায় তাহলে আর তাকে এখনই দিতে হবে না মোসলমানী। মনে না মানলেও মুখে কোনোমতে সায় জানালো সে। একটু পর ভাইয়াকে নিয়ে আব্বু, জালাল চাচা, মেজো চাচা আর বড় মামা ঢুকলেন দাদুর ঘরে। সঙ্গে আম্মুও ঢুকলেন দাদুকে নিয়ে। আম্মুকে না ছাড়তে চাইলেও এই কাজ সচক্ষে দেখার মত সাহস হল না বলে সে দরজার পাশে বাইরে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দাদুর ঘরে সব আয়োজন করা হয়েছে। একটা বড় টেবিল সাজানো হয়েছে মাঝখানে ঘরের জিনিসগুলো পাশে সরিয়ে। ফাহাদ এতটুকুই শুধু দেখেছে। কাটার জন্যে আর কী কী মারণাস্ত্র আনা হয়েছে তা দেখেনি ভয়ে। কিন্তু ভাইয়াকে দেখে সে রীতিমত তাজ্জব বনে গেল। এমনভাবে হেলেদুলে নাচতে নাচতে ঢুকল যেন মনে হল আজ তার বিয়ে! এ কীভাবে সম্ভব? খোদা নিশ্চয়ই পক্ষপাতিত্ব করেছেন দুই ভাইকে নিয়ে। নিঃসন্দেহে তিনি ভাইয়াকে দিয়েছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত বয়স। আর তাকে বানিয়েছেন ভীতুর ডিম। শুধু তাই না, কাল থেকে আজ অবধি তিনি ফাহাদের একটা দোয়াও কবুল করলেন না। হঠাৎ খোদার উপর একটু অভিমান হল ফাহাদের। এখন যদি চামড়া না কাটায়, তাহলে কীভাবে খোদা তাঁর দলে নিবেন তাকে? সেদিকে কি তাঁর খেয়াল আছে? ফাহাদ নিতান্ত ভদ্র ছেলে বলেই সহ্য করে যাচ্ছে খোদার এ অবিচার। নাহলে এতক্ষণে চেঁচিয়ে হলেও সবার উপস্থিতিতে খোদার কান ঝালাপালা করে ফেলত। নিজের মনে ভাবল এসব ফাহাদ।
এদিকে ভিতরে কী হচ্ছে তার কিছুই টের পাওয়া যাচ্ছেনা। ফাহাদ কান সজাগ করে থাকল, আহ্, উঁহ্ এ জাতীয় কোনো শব্দ বা কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা? ভাইয়া কষ্ট বা ব্যাথা পেলে নিশ্চয়ই চিৎকার করবেন। কিন্তু তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছেনা। কী হল? ভাইয়া কি ঠিক আছেন না ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন? আর কারও তো আওয়াজ নেই ভেতরে। শুধু একটু পরপর আব্বু আর জালাল চাচা বিড়বিড় করে কীজানি বলছেন। আর হালকা টুংটাং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ট্রে এর উপর চামচ জাতীয় কিছু রাখা হচ্ছে। ফাহাদের কাছে সময়টা থেমে গেছে বলে মনে হল। সে ভাবল, ইশ! এভাবেই সময়কে থামিয়ে রাখা গেলে কী না ভাল হত। হঠাৎ হড়াশ্ করে দরজা ঠেলে মেজোচাচা বেরিয়ে দিলেন ছুট কোথায়জানি। বুকটা ধ্বক করে উঠল ফাহাদের। ভাইয়ার কিছু হয়নি তো? প্রায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলবে এমন সময় আম্মু বেরিয়ে আসলেন তার দিকে। বললেন এইতো হয়ে গেছে। আর পাঁচ মিনিট। দেখেছ, বলেছিলাম না কোনো কষ্ট হবে না। তোমার ভাইয়ার কাঁদার আওয়াজ পেয়েছ কোনো? কাঁদোকাঁদো ফাহাদের চেহারা আর মাত্র পাঁচমিনিট আছে শুনে এবার আতংকে জমে গেল প্রায়। ভাইয়ার কথা স্মরণেই নাই তখন আর। ভাইয়া কষ্ট পেলেই কী, আর না পেলেই বা কী? কিন্তু আর পাঁচ মিনিট পরে কী হবে? সাতপাঁচ কিছু ভেবে না পেয়ে তড়াক করে আম্মুর কোলে লাফিয়ে উঠল সে।
কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে ভাইয়াকে কোলে নিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে গেল। ভাইয়ার চারপাশে জটলা বেধে গেছে। ফাহাদ আম্মুর কোলে। ঠিকমত দেখতে পেল না তাই। ভাইয়ার কোনো আওয়াজও শুনল না। মোসলমানীর আগেই যেভাবে লাফাইতেছিল, এখন মনে হয় হয়ে যাওয়াতে খুশিতে বাকহারা হয়ে গেছে নিশ্চিত। এবার তার পালা। কী ভয়াবহ ব্যাপার! জাপটে ধরল ফাহাদ আম্মুকে। ছাড়বেনা প্রাণ গেলেও। আম্মু লক্ষীসোনা বলে আদর করতে করতে কসাইখানায় ঢুকলেন। আব্বু আর জালাল চাচা ডাক্তার হলেও মুখে কোনো মাস্ক নেই। হাতেও তখন কিছু নেই। দুইজনেরই গোব্দাগাব্দা গোবেচারা নিরীহ চেহারা। তবুও দুইজনকে ফাহাদের সাক্ষাৎ যমদূত মনে হল। আবার হঠাৎ আম্মুর কাছে শোনা হাজামের মতও মনে হল। ফাহাদ কোনোমতেই কোল থেকে নামবে না। কাঁদোসুরে বলল, আমি এখানেই থাকব। নামব না। যা করার এখান থেকেই করেন। আব্বু হাসিমুখে বললেন, ভয় নেই আব্বু। আমি তো আছি। যাতে ব্যাথা না পাও সেজন্যেই তো আমি আর তোমার চাচা করছি নিজেরা। অন্য ডাক্তার বা কোনো হাজামের হাতে দেইনি। তোমার ভাইয়া কে দেখলে না? সে কি কাঁদছিল? ফাহাদ ভরসা পেল না তবুও। কিন্তু আম্মু এবার প্রায় জোর করে নামিয়ে, দিলেন টেবিলে শুইয়ে। কী আর করা। ভয়ার্ত চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকল সে। আম্মু হাত ধরে গল্প করতে লাগলেন তার সাথে। কিন্তু কিছুই তার মাথায় ঢুকছিল না। ইতোমধ্যে কে জানি তার দুই পা দুই দিকে হালকা ফাঁক করে ধরে রাখল জোরে। সে নড়াতে পারল না এতটুকু। এই মনে হয় তার শেষযাত্রা। আশা ছেড়ে দিয়ে সে তাই আম্মুর কথা শুনতে লাগল। এরমধ্যে হঠাৎ একটু চিমটি লাগল নাভীর কিছু নিচে দুই পাশে, পিঁপড়ার কামড়ের মত। ব্যাথায় উঁহ্ করে উঠল ফাহাদ। আম্মু বললেন, এই শেষ। আর লাগবে না। এইটা অবশ করার ইঞ্জেকশন দিল শুধু। আশ্বস্ত হল ফাহাদ। অন্তত ইঞ্জেকশনে বেশি ব্যাথা লাগেনা। এরপরে কীহবে কে জানে?
কিন্তু সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করল ইঞ্জেকশন দেয়ার পাঁচ-দশ মিনিট চলে যাওয়ার পরেও আব্বু কিছু করছেন না। যদিও সে আব্বু আর জালাল চাচাকে ঠিক দেখতে পারছেনা আম্মু সামনে হেলে থাকায়। আম্মুর কথা শুনতে শুনতে জিজ্ঞাসা করল সে, আম্মু, আব্বু এখনও শুরু করেনা কেন? আম্মু বললেন এইতো করবে। একটু ধৈর্য্য ধর। তোমার কেমন লাগছে? ফাহাদ বলল কেমন লাগবে? এখনও তো শুরুই করেনি। তো বুঝব কীভাবে? তবে লজ্জার কাছে হালকা কেমন জানি উশখুশ করছে। আম্মু বললেন, অবশ করেছে তো। ওইটার প্রতিক্রিয়া। আর কিছু নয়। ফাহাদ আরামে বলল ওহ্। আস্তে আস্তে তার কেমন তন্দ্রা ভাব চলে এসেছে। আম্মুর কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ল একসময়।
ফাহাদের ঘুম ভাঙ্গল অনেক পরে ঘরজুড়ে চরম বিশৃংখল কোলাহলে। চোখ মেলে চেয়ে দেখে সে ভাইয়ার পাশে শুয়ে আছে। সারা ঘর লোকে লোকারণ্য। হুলস্থুল বেধে গেছে তাদেরকে দেখার জন্যে। দূর-দূরান্তর থেকে ছুটে এসেছে সব মনে হয় এই বিশাল যজ্ঞ দেখতে। এই বিশাল জনতার মাঝে নিজেকে হঠাৎ সম্পূর্ণ নগ্ন আবিষ্কার করে লজ্জায় লাল হয়ে গেল একেবারে ফাহাদ। সে আর তার ভাই তখন বিছানায় পাশাপাশি মেলে শুয়ে আছে। চিৎকরে ফেলা ব্যাং যেরকম দেখাবে অনেকটা সেরকমভাবে। আর সবাই কৌতুহলী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের বিশেষ স্থানের দিকে। সে প্রথমে তার ভাইয়ার দিকে চোখ ফেরালো। দেখে কেমন ফ্যালফ্যাল করে বেহায়ার মত মানুষের দিকে তাকিয়ে হাসছে ভাইয়া। এতটুকু লাজশরমের বালাই নাই, ছি! এবার নিজের ছালছিলা অঙ্গটার দিকে তাকালো। সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে মাথা মোড়ানো। তাতে রক্তের ছটা লেগে আছে। কী আশ্চর্য! আসলেই তো। সে কোনো ব্যাথা টের পায়নি। খামাখাই ভয় পেয়েছে সে। আগে জানলে সে কিছুতেই নিজেকে এত মানুষের সামনে অপদস্থ হতে দিত না। নিজেই ঘ্যাচাং মেরে দিত। অবশের ইঞ্জেকশনটা শুধু আব্বুকে দিয়ে করিয়ে নিলেই হত। আর কিছু লাগত না। এখন বাইরে বেরিয়ে মুখ দেখাবে কীভাবে? সবাই তো তার সবকিছু দেখে ফেলল। কেনা কোনো প্যান্টেরই আর কোনো দাম থাকলনা। পরাও যা, না পরাও তা। সেই লজ্জাতেই কিনা, একটুপরে ক্ষতস্থানে কুটকুট করা শুরু করল। হয়ত এত মানুষের সামনে সেও বিব্রত বোধ করছে। যারা এখনও বাইরে অপেক্ষায় দেখার, তাদের চোখ থেকে অন্তত নিজেকে বাঁচাতে তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল হঠাৎ ফাহাদ। হন্তদন্ত হয়ে আম্মু ছুটে আসলেন। কানেকানে সব বলল ফাহাদ আম্মুকে। আম্মু হেসে পরে আস্তে আস্তে সবাইকে বের করে দিলেন ঘর থেকে। ফাহাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও দেখল যে তার ভাইয়ার মন ঈষৎ ক্ষুণ্ন হয়েছে দর্শক চলে যাওয়ায়, মুখে কালির ছায়া। মানুষ বের করে দেওয়ার সময় তো কিছু বলতে পারেনি। নিজের লজ্জা যেচে কেউ মানুষকে দেখানোর আমন্ত্রণ জানাবে, এতটুকু বেশরম এখনও হয়নি মনে হয়। যাইহোক, সেই কুটকুট কিন্তু কমলোনা, বরং বেড়ে চলল সময়ের সাথে। কেউ তো আর ফাহাদকে বলে দেয়নি যে, ব্যাথানাশকের ক্রিয়া শেষ হয়ে যাবার পরে ব্যাথা জাগতে শুরু করে।
ওষুধ খেয়ে ব্যাথা কমানো হল। কিন্তু হালকা কেমনজানি শুষ্ক চুলকানির ভাব লেগে থাকে ওইজায়গায়। আম্মুর কড়া নিষেধ। হাত দেয়া যাবেনা। আর তাই নিরুপায় হয়ে ঐটা সহ্য করতে লাগল ফাহাদ। শুরু হল ফাহাদের জীবনের লুঙ্গি অধ্যায়। ফাহাদ আর ফাহিম লুঙ্গি পরে আস্তে আস্তে হেঁটে বেড়ায়, ঈষৎ পা ফাঁক করে। অনেকটা ব্যাং এর মত। আর ফাহাদ এই সময়েই আবিষ্কার করল তিনটা অজানা বিষয়, কিন্তু কাউকে বলল না লজ্জায়। আর তার উত্তরও পেল না তাই। এগুলো হচ্ছে-
* লুঙ্গি জিনিসটা আসলে বড়ই অপ্রীতিকর একটা পোষাক। পরলে নিচে মনে হয় কিছু নেই, সব খোলা। বড়ই বিব্রতকর। বড়রা কেন পরে কে জানে?
* মোসলমানী দেয়ার পরে লজ্জাটা অনেকটা দেয়ালঘড়ির ঘন্টার দোলকের মত আচরণ করে অজ্ঞাত কারণে। ভারী হয়ে থাকে আর হাঁটার সময় দুইপাশে দুলতে থাকে সমানে। সারাজীবনই এমন করবে কিনা খোদামালুম।
* মোসলমানী দেয়ার পর থেকে কেন জানি প্রস্রাব আগের তুলনায় গরম বের হচ্ছে। ঘটনাস্থলে তাপের উৎস কী?
-অতীত
মন্তব্য
পুরো গল্প জুড়ে 'লজ্জা' বলতে আসলে কি বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে কিঞ্ছিত ধন্দে পড়ে গেলুম যখন পড়লুম-
এই গল্পটা পড়ে নস্টালজিয়ায় ভুগতেছি আহা, কতই না মধুর সেই লজ্জা-ভার লাঘবের দিনগুলি
শেষের তিনটা পয়েন্টের সাথে আরো কিছু পয়েন্ট যোগ করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু 'লজ্জা' লাগে
আর 'হাজাম'!! একটা বাঁশের কঞ্চি, তাকে ছেঁচে ছেঁচে ধার দেওয়া- তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হওয়া পর্যন্ত, তারপর....... ই আল্লারে !!! ভাগ্য ভাল, আমার জন্ম ডাক্তর-সার্জন আর লোকাল এনেসথিসা'র যুগে।
ধৈবত
হাহাহা। 'লজ্জা' এর ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে গুরু। তবে এটাও ঠিক আমরা ছোটকালে লজ্জা বলেই জানতাম ওটাকে। আর তাই লেখায় সে নামেই চালাইলাম।
শেষের তিনটা পয়েন্ট তো ফাহাদের সে সময়ের কল্পনামাত্র। তবে আপনার পয়েন্টগুলো শুনতে মনচায়। লজ্জারে লজ্জিত না করে সটান করে কয়ে ফেলেন।
হাজামের কোপানলে না পড়েও এমন জান্তব বর্ণনা? কারও এমন ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন নাকি? না নিজেই কারও ঘ্যাচাং দিছেন?
-অতীত
আমাদের মোসলমানী দিয়েছিলেন আমার সেজো নানাজান। মায়ের সেজো খালু। এলএমএফ পাশ নামকরা ডাক্তার। আমি, আমার মেজোভাই আর মামাতো ভাই, তিনটার একসাথে কুচ্চুৎ। আমার মেজোভাই শোবার আগেই হাতের মুঠে একটা পাথর নিয়ে রেখেছিলো। মোসলমানী শেষে নানাজানকে মারতে যেয়ে মেরে দিলো মনি মামার নাকে। লুঙ্গি পরে ঠ্যাং ফাঁক করে হাঁটার সেই কথা এখনও মনে পড়ে।
বড়চাচির কাছে শুনেছি আমার বাবা নাকি নুনুতে ব্যান্ডেজ বান্ধা অবস্থায় নারকেল গাছে চড়তে যেতে রক্তারক্তি কান্ড বাঁধিয়েছিলো। কত্তোবড়ো বান্দর ছিলো ব্যাটা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হাহাহা চমৎকার।
আপনার বাবাতো দেখি সেইরকম পাবলিক। জোশ!!! আপনি কিছু করেননি ঐসময়??
-অতীত
ভাইডি পুরানো আগুন উস্কাইয়া দিলেন, আমারে যে হাজাম ঘ্যাচাং করছে তার কোনও ক্ষমা নাই। আমার ছোট দাদা আমারে দুই ঠ্যাং মুড়াইয়া ধরে রাখছিল, হাজাম কইল বিস্মিল্লাহ্ কউ, আমি কইলাম একটু খাড়ান দম লইয়া লই, বেটা কোনও কথাই শুনল না; আমি বিস্মিল্লাহও কইতে পারলাম না, ঘ্যাচাং। এর কয়দিন পরে আরও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল আমার জীবনে, ইশ!!! কি যে ভয় পাইছিলাম। আমরা পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোন। সারাদিন কাজ ছিল কিলা-কিলি করা। তো আমার ঘ্যাচাং হওয়ার তিন চারদিন পরের ঘটনা। কোনও এক কারনে আমি ওকে কিলিয়েছি, এই দৃশ্য দেখে আমার ছোট দাদি আমাকে সাবধানে করে দিচ্ছিলেন এই বলে যে ও যদি আমার ওখানটায় লাথি মারে তাইলে কেমন হবে? আর যায় কোথায়, আমার বোন মনে হয় এর থেকে চমৎকার কোনও আইডিয়া জীবনেও পায় নাই। সাথে সাথে জায়গা মত লাথি...আর আমি ও মাগো মরে গেলামগো বলে চিৎকার। ব্যাথা যতটা না পেয়েছিলাম ভয় পেয়েছিলাম তার থেকে বেশী। ওফ! আজো মনে হলে গা শিঊরে উঠে।
আল্লাহ-মাবূদ!!! আপনের উপর দিয়া পুরা আইয়ামেজাহেলিয়াত গ্যাছে দেহি ভাগ্যিস এরকম মারদাঙ্গা অনেক ভাই-বোন থাকলেও দাদি এমন কিছু কয়নাই সেই সময়। বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।
এই হাজাম প্রজাতিদের ধইরা ধইরা ছিল্লা কাইটা আবার লবণ-মরিচ লাগায় দেয়া উচিত।
পুনশ্চঃ নিকটা দিয়ে দিয়েন।
-অতীত
এই নির্যাতনের হাত থেকে শিশুদের মুক্তি নেই। আগামী একশো বছরেও মানুষ তাদের যুগপৎ এই মূর্খামি এবং নৃশংসতা বুঝে উঠতে পারবে বলে ভরসা করিনা।
সেটা অবশ্য আপনার দোষ নয়। আপনার লেখা চমৎকার।
একটা জায়গায় খটকা লাগল:
এত কম বয়সী কেউ কি এভাবে ভাববে?!
আরো লিখুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এইটা একটা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন - কথা ঠিক, বিশেষ করে হাজাম যুগে।
কিন্তু আমি তো জানতাম এর কিছু উপকারিতাও আছে। কিছুক্ষেত্রে অবশ্য এই স্টাডি, ফলাফল বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
কিছু উপকারিতা বানিয়ে নেয়া হয়েছে। আন্ডার আর্মে ঘামের দুর্গন্ধ হয় বলে হাত কেটে ফেলাকে জায়েজ বলার মত!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হুম, ঠিক বলেছেন। তবে কিছুটা দ্বিমত আছে। নির্যাতন বলতে আমি এক্ষেত্রে বলব হাজামের প্রক্রিয়াটা। মোসলমানী করাটা নয়। ধর্মীয় দিক বাদই দিলাম, মেডিক্যাল সাইন্স থেকেও যতদূর জানি এটা করাই বরং ভালো। আর এখন উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনায়াসেই করে ফেলা যায়। আর তাই শিশুদের মনে এ নিয়ে যেন ভয় না জাগে সেদিকটা লখ্য রাখাই বাঞ্ছনীয়। অবশ্য তা কীরূপে করা যায় সে বিষয়ে আমি সঠিক বলতে পারবনা। কারণ এ পর্যন্ত যত শিশুই দেখেছি (নিজের বাল্যকাল সহ), প্রায় সবাই ডাক্তার দেখামাত্রই ভয় পায়। আমার আব্বু ডাক্তার। আমার এক পিচ্চি কাজিন আছে যে আব্বুকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু যখনই সে অসুস্থ থাকে, ঐ সময় আর আব্বুর কাছে আসতে চায় না। দেখলেই অসুখ সমেত ভোঁদৌড়। আব্বু কিছুই করেন না। কিন্তু আব্বুর ব্যাগ, স্টেথোস্কোপ আর হাতে ওষুধ দেখলেই জান শুকিয়ে যায় তার।
আপনার যে জায়গায় খটকা লেগেছে সে বিষয়টা আমারও চিন্তায় ছিল। আসলে কাহিনীতে অনেকটা আমার নিজের শৈশব মিশে আছে। ঐ সময় আমরা পিচ্চিরা মহানন্দ বলতে ঈদ আর আত্মীয়ের বিয়েকে বুঝতাম। কারণ শুধুমাত্র ঐ সময় দেখতাম বড়রা তেমন শাসন করেনা। সারাবাড়ী জুড়ে ইচ্ছামত হৈহুল্লোড় করা যায় নাচতে নাচতে। ঈদ ব্যাপারটার শুরু, শিশুদের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখা কিংবা কোরবানীর পশু নিয়ে ছোটাছুটির সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় এখানে কেমনজানি খাপসই মনে হল না। তাই এখানে দেইনি। অন্য কোনো ভাবের সম্ভাবনা থাকলে সেটা আমার লেখার দূর্বলতা। আর কিছু নয়।
পড়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-অতীত
মোসলমানির কিছু উপকারিতা বানিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্যাপারটি ভালো নয়। আর কারো ব্যক্তিগতভাবে এটাকে ভালো মনে হলে সে নিজে তার নিজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে। যার শরীর তার সিদ্ধান্ত!
আপনার এই যুক্তিটি ভালে লেগেছে। আপনার লেখা দুর্বল তা কিন্তু আমি বলিনি। আপনার লেখা আমার যথেষ্ট ভালো লেগেছে। আরো লিখুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হা হা হা । মজা পেলাম
চলুক আপনার লেখালেখি
কুটুমবাড়ি
আর আমি উৎসাহ পেলাম।
-অতীত
নারী সারকামসিজনের একটা বিভৎস বর্ণনা শুনলাম এই অডিও বইটায়। সময় করে লিখবে এই বইটার বিষয়ে।
সম্ভবত এইটা নিয়েই একটা ফিচার পড়েছিলাম অনেকদিন আগে প্রথম আলোতে(সম্ভবত সাময়ীকীতে)। আমি ঠিক তখনও জানতাম না আসলে ব্যাপারটা কী? কিন্তু আফ্রিকা এবং আরও কয়েকটি দেশে এমন ভয়াবহ নৃশংস ব্যবস্থা যে আছে সেটা পড়েই আমার ভেতরটা গুলিয়ে ওঠে। সাহসই পাইনি আর এর বর্ণনা আরও পড়ার জন্যে সেই বই এর খোজ করতে। ধর্মের নামে যে কতটা অমানুষ হওয়া যায় তার এর চাইতে বড় উদাহরণ আমার তেমন জানা নাই।
আমি নিজে ইসলামের বিশ্বাসী। তবে ধর্মীয় দিক থেকে সুন্নতে খাৎনার প্রভাব আলোচনা করিনি, শুধু ঐ সময়ে নিতান্ত ভয় পাওয়া এক অবুঝ বালকের কর্মকান্ড চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি মাত্র। আর তাই এই বিষয়সংশ্লিষ্ট কাছাকাছি যে মারাত্মক একটা ঘৃণিত প্রথা চালু আছে তা মাথাতেই আসেনি। কিন্তু আপনার মন্তব্যে সেই ভয়াবহ সমাজব্যবস্থার কথা মনে পড়ে গেলো। আসলে আমি বুঝিনা, মায়ের পেট থেকে তো তাদেরও জন্ম, কিংবা তারাও কোনো কন্যার পিতা। তারপরও কেনো এমন বীভৎস তারা? নারীকে মানুষ ভাবতে কীসের এত সমস্যা তাদের?
আপনার উপদেশটা মাথায় থাকলো। চেষ্টা করব অচিরেই লেখাটা পেলে তা থেকে কিছু দেওয়ার। আর অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্যে।
-অতীত
আপনার লেখাটা ভাল লাগল!
অনেক বন্ধুবান্ধবের সেই দিনগুলো মনে করিয়ে দিলেন...বড় সবার মুখ টিপে হাসা! আমার যেহেতু করতে হয়নি, তাই তাদের জ্বালানোটা ভালই উপভোগ করতাম! ধন্যবাদ।
অফটপিকঃ কিন্তু কেউ কী জানেন, এর নাম মোসলমানী কেন? আমেরিকার সবাই করে, ইহুদিরাও করে...যতদূর জানি এইটা আরবদেশের খাচ্চর মানুষগুলারে রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রচলন হয়...ইসলাম মনে হয় সেটা ইহুদি'দের থেকেই এডপ্ট করেছে (জ্ঞানীরা বলতে পারবেন)। ধর্মের জন্য এটা করা কতটা জরুরী, মানে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নাই?
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আমি সঠিক বলতে পারব না তবে মনে হয় শুধুমাত্র আচার-আনুষ্ঠানিকতা থেকে এর নাম হয়েছে মোসলমানী। আর যতদূর সম্ভব মুসলিমদের জন্যে এটি একটি সুন্নাহ। কিন্তু মুসলমান কিংবা ইসলামপন্থী হওয়ার শর্তের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই বলেই আমার ধারণা।
তবে আপনি কিন্তু মিস করেছেন। ঐ সময়ের উত্তেজনাই অন্যরকম
সুন্দর মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
-অতীত
নতুন মন্তব্য করুন