- অনন্ত আত্মা
মোবাইলটা ডান কান থেকে বাম কানে নেয় হিমেল।
- কোথায় বললে, মিরপুর এক নাম্বার মরণচাঁদের সামনে; ওকে ব্যাপার না আমি পৌঁছে যাব সাড়ে এগারোটার মধ্যে। দেখো, তুমি আবার দেরি কোর না। অর-রাইট, বাই সুইটি।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইলটা পকেটে রাখে হিমেল। আকাশের দিকে একবার তাকায়, ঘন নীল আকাশ, ঝকঝকে রোদ চারিদিকে। পায়ে পায়ে পাকা মসজিদের মোড়ে মফিজ ভাইয়ের দোকানে আসে সে।
- মফিজ ভাই, চা দিয়েন এক কাপ, চিনি ছাড়া আর হালকা কাচা পাতি।
চায়ে চুমুক দিয়ে রিমির কথা ভাবতে থাকে হিমেল। গত ডিসেম্বরে ও'র সাথে পরিচয়। ফ্লেক্সি করতে গিয়ে দোকানের ছেলেটা একটা ডিজিট ভুল করায় হিমেলের মোবাইলে টাকাটা না গিয়ে অন্য একটা মোবাইলে চলে যায়। বাধ্য হয়েই হিমেল ঐ নাম্বারে ফোন করে।
- হ্যালো, কিছু মনে করবেন না; ফ্লেক্সি করতে গিয়ে ভুল করে আমার এক হাজার টাকা আপনার মোবাইলে চলে গেছে। যদি কষ্ট করে একটু আমার মোবাইলে টাকাটা পাঠিয়ে দিতেন।
ওপাশ থেকে একটা নারী কণ্ঠ ভেসে আসে।
- ও আচ্ছা, আপনিই তাহলে আমার মোবাইলে ভুল করে টাকাটা ভরেছেন। ঠিক আছে, বিকেলেই আমি আপনার টাকাটা সেন্ড করে দেব।
- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হিমেল বলে ওঠে।
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা যায়।
- এখনি ধন্যবাদ দিচ্ছেন, টাকাটা তো এখনও দিইনি, তাই না? এনি ওয়ে, রাখছি, বাই।
ফোন রেখে হিমেল ভাবতে থাকে, মেয়েটার হাসিটা তো খুব সুইট। ঐ দিন বিকেলেই হিমেলের মোবাইলে টাকাটা ফেরত আসে। তারপর হিমেল ধন্যবাদ দিয়ে মেয়েটাকে একটা মেসেজ পাঠায়। সেটাই শুরু, এরপর মাঝে মাঝে মেসেজ চালাচালি, ফোন করতে করতে রিমির সাথে ওর সম্পর্কটা গড়ে ওঠে। যদিও সামনা-সামনি দেখা হয়নি এখনও। সেই দেখা-দেখিটা হচ্ছে কাল, ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় হিমেলের, মোবাইলের ঘড়িটা দেখে আবার পাশ ফিরে শোয়। ঠিক সোয়া নয়টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা সেরে নেয়। টি-শার্ট আর জিন্স পড়ে সিঁড়ি দিয়ে গ্যারেজে নেমে আসে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। শংকরের সামনে জ্যামে বসে বসে চিন্তা করে রিমির জন্য কি ফুল নেয়া যায়। সাতাশ নাম্বার দিয়ে মিরপুর রোডে উঠে ওভার ব্রিজের পাশে গাড়িটা পার্ক করে চৌদ্দটা গোলাপ কেনে সে।
মিরপুর একের গোলচক্করে যখন হিমেল এসে পৌঁছে তখন সোয়া এগারোটা বেজে গেছে। প্রিন্স বাজারের সামনে গাড়িটা পার্ক করে হেঁটে মরণচাঁদের সামনে আসতে থাকে। দূর থেকেই সে রিমিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। রিমি বলেছিল - ' আমি যেই ড্রেসই পড়ি না কেন, ওড়নাটা হবে সাদা।'
চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে, রিমির দিকে ফুলগুলো এগিয়ে দেয় ও।
- আমি কি দেরি করে ফেললাম?
- আরে না, আমি তো মাত্র আসলাম।
রিমি আশ্বস্ত করে।
- ঠিক আছে চল তাহলে আশুলিয়ার দিকে যাই।
সুন্দর করে হেসে ওঠে রিমি, ঘাড় নেড়ে বলে-
- চল।
দু'জনে গাড়িতে এসে ওঠে। মাজারের সামনে দিয়ে বেড়ি বাঁধের উপর এসে পড়ে গাড়ি। হিমেল বলে,
- তারপর সুইটি বল, ক্যামন আছ?
রিমি বলে,
- কি ব্যাপার বলত, ফোনে তো কখনও সুইটি বল না, এখন বলছ যে। এই শোন তোমাকে তো বলা হয়নি, গত রাতে ইস্টার্ন প্লাজা থেকে আমার ফোনটা কিভাবে যেন হারিয়ে গেছে। কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে অবশ্য সিমটা বন্ধ করেছি; সিমটা উঠাতে যাব আজকে, তুমি কি একটু সময় দিতে পারবে?
দুজনের কথায় ছেদ পড়ে হঠাৎ হিমেলের ফোনটা 'আবার এলো যে সন্ধ্যা' গেয়ে ওঠায়। রাস্তার পাশে গাড়িটা সাইড করে ফোনটা হাতে নেয়; ততক্ষণে ফোনটা থেমে গেছে। ফোনটা রেখে গাড়িটা স্টার্ট দিতে যাবে, আবার ফোনটা বেজে ওঠে।
ফোনে কলারের নামটা দেখে চমকে উঠে একবার পাশে বসা রিমির দিকে তাকায় ও। গালে হাত দিয়ে রিমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। রিসিভ বাটনে চাপ দিয়ে ফোনটা কানে ঠেকায়।
- হ্যালো, এই শোন, একটা জরুরি .... হ্যাঁ হ্যাঁ ভীষণ জরুরি কাজে আটকা পড়ে গেছি। একটু কষ্ট করে বিকেলে আসো না প্লিজ। হ্যাঁ হ্যাঁ একই জায়গায়। ... ওকে, বাই।
ক্যানসেল বাটনে চাপ দিয়ে হিমেল মেয়েটার দিকে তাকায়, মৃদু একটা হাসি খেলে যায় ওর ঠোঁটে।
- বাইরে এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছ সুইটি ডিয়ার?
মরণচাঁদের সামনে ফোনটা বন্ধ করে ক্লান্ত পায়ে রিকশার জন্য রাস্তার দিকে এগিয়ে যায় মেয়েটি। ঝাঁ ঝাঁ রোদ উঠেছে, সাদা ওড়নাটা ভাল করে মাথায় উঠিয়ে দেয় মেয়েটি।
মন্তব্য
গল্পের ফিনিশিংটা যুতসই মনে হল না। একটা তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে বলে মনে হল। শুরুটা ভালই ছিল, একটা রোমান্টিকতা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, তবে হঠাৎ করেই মনে হয় খেই হেরিয়ে ফেলেছন।
আমি খুব বাজে লেখক, আমার কাছে যা মনে হল বললাম, তবে লেখার ব্যাপারে লেখক হিসেবে আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। আপনার জন্য শুভ কামনা থাকল। ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান স্বাধীন
স্বাধীন ভাই, আসলে তাড়াহুড়ো না, গল্পের প্যাটার্নটাই এমন। ছোট গল্পের শেষে একটা ধাক্কা দেবার স্বতঃসিদ্ধ একটা প্রক্রিয়া থাকে, এখানে সেই প্রক্রিয়াটা ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। আপনার মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে প্রক্রিয়াটা মাঠে মারা গেছে।
তবুও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
অনন্ত আত্মা
গল্পটা খুব ছোট হলেও ভাল লাগল। ধন্যবাদ
ভাল লেগেছে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভালো লাগলো ।
-----------------------------
নিক : সবুজ পাহাড়ের রাজা ।
মিরপুর এক নাম্বারের মরন চাঁদের দোকানটা কি এখনো আছে? চোখে পড়েনা অনেক দিন!
--- থাবা বাবা!
শেষটা কেমন জানি ঝাপসামতন...
নতুন মন্তব্য করুন