নাটকঃ মেহেরজান এবং মেরুদন্ডহীন আমরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩০/০১/২০১১ - ৯:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাটকঃ মেহেরজান এবং মেরুদন্ডহীন আমরা
-সাদ মাহবুব

চরিত্রঃ অভি – ভবিষ্যত চলচ্চিত্র নির্মাতা (হয়তবা)
শাহেদ – লেখক (কোনো বই বের হয়নি, ব্লগ লেখক)
অপু – সিডনী প্রবাসী ছাত্র
তানভীর – ছাত্র নেতা (একসময়কার-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা)
অনিমা – সুন্দরী নব্য সংবাদ পাঠিকা

অভিঃ উফফ, ওই শালা শাহেদের বাচ্চা, বন্ধ কর তো yahoo chat, কে এত buzz দিচ্ছে বারবার? এমনিতেই মেজাজ গরম।
শাহেদঃ (ল্যাপ্টপের দিকে এগিয়ে গিয়ে)আরে অপু, webcam share এ দিতে কয়।
অনিমাঃ দে না, অনেকদিন দেখিনা অপুকে।
অপুঃ (উত্তেজিত কণ্ঠে) এত দেরি লাগে?
শাহেদঃ হঠাৎ এত মনে পড়ল আজকে আমাদের কে?
তানভীরঃ আমি জানি কেন মনে পড়ছে।
অপুঃ (খোচা মেরে) ও তাই নাকি নেতা? তা কেন এত অস্থির আমি বলত?
তানভীরঃ মেহেরজান মুভিটা নিয়া কিছু জিগাবি মনে হয়।
(ধরা খেয়ে চুপসে গেল অপু, এরপর উত্তেজিত স্বরে)
অপুঃ দেখছিস নাকি তোরা কেউ?
সবাই একত্রেঃ না।
অপুঃ আহা, বলিস কি? আমি তো torrent এ খালি খুঁজতেছি। পাচ্ছিনা বাল, নাইকাটা জোস মাল রে!
অনিমাঃ ছিঃ অপু, এসব কি বলিস!
অভিঃ শালা psycho হয়ে গেছে বিদেশে গিয়া পুরা।
শাহেদঃ ওই শালা্, তুই না nude beach এ গিয়া পইড়া থাকস, তারপর-ও তোর সামান্য বুকের খাঁজ দেখার লোভ যায়না?
অপুঃ আহ হা! শোন, কিছু জিনিসের আবেদন চিরকাল থেকে যায়, বুঝলি? চিন্তা কর, বাঙ্গালি এক মেয়ে, সব কিছু ঢাকা, এর মধ্যে আঁখেরী টাইট কামিজ, গলা পর্যন্ত উঠে আসা cleavage, যা তা ব্যাপার নাকি? কোথায় বড় বড় pornstar, আর কোথায় আমাদের মেরিল মডেল আভা। আভার কাছে ওদের বেইল আছে নাকি?
অনিমাঃ মেয়েটা কিন্তু খুব সুন্দর রে, বেশ smart।
অভি; বালের smart! মুভি বানাইছে, কিন্তু কোনো সাদৃশ্য নাই। ’৭১ এ ওরকম জামা কাপড় পড়ত কোনো মেয়ে? আর মেহেরজান নামে কোনো বাঙ্গালি বা বাংলাদেশী মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি।
তানভীরঃ খুব ভুল ধরতেছিস, বানা না একটা সিনেমা, দেখি, সারাদিন তো খালি ভুল-ই ধরিস দেখি সব সিনেমার।
অপুঃ ফালতু কথা রাখ, কোথায় পাব সেটা বল।
শাহেদঃ আমিও দেখতে চাই আসলে, মানে, তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ব্লগে কিছু একটা লিখতে চাই আর কি! না দেখলে ক্যামনে লিখব, বল?
তানভীরঃ ওরেব্বাপরে!! কত্ত বড় লেখক সে, চাক্ষুস কিছু না দেখে লিখতেই পারেনা সে।
অনিমাঃ তুই এমন করিস ক্যান তানভীর! সবাইকে খালি ঝারি দিচ্ছিস, ভুল কি বলছে ওরা?
অভিঃ শালা কমিউনিস্ট!
তানভীরঃ হ বুঝলাম, আমি কমিউনিস্ট, তোমরা তো বিশাল গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার মানুষ, freedom of speech এ বিশ্বাসী। তাইলে এত রাগ কেন তোদের মেহেরজানের উপর? আমেরিকা মুভি বানায় নিজেদের কে hero করে। ভিয়েতনামের কাছে হারার পরেও তাদের glory এর কোনো শেষ নাই। “Pearl harbour” দেখলে মনে হয় জাপানের উপর nuclear attack করা খুবই যুক্তিযুক্ত কাজ হইছে তাদের, “Schindler list”, “The pianist” এ জার্মান সৈনিক-ই আসল নায়ক। “All quiet on the western front”-এ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান তিন সাধারণ সৈন্য গিয়ে সেক্স করে আসল তিন ফ্রেঞ্চ রমনীর সাথে। মেয়ে তিনটাও হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে গেল শত্রু পক্ষের তিন জনের সাথে। “Guilty by suspicion” মুভিতে একসময় কমিউনিস্ট থাকার কারণে Hollywood এর talented কিছু director, screen writer, actress এর career নষ্ট করা হল। American government ওদের উপর যা করছিল, তোরা এখন সেরকম করতেছিস। কিন্তু মুভিটা তে কিন্তু সেই তথাকথিত কমিউনিস্ট দের-ই পক্ষ নেয়া হইছে।
অভিঃ শোন তানভীর, Schindler list-based on a true story। Pearl harbor-ও মিথ্যা কোন ঘটনা না। ওটার perspective আলাদা। এই মুভিতে Pearl harbor attack দেখানো হইছে, হিরোশিমা-নাগাসাকি না। সেজন্য দর্শক দের মনে আমেরিকান দের জন্য soft corner তৈরী হইছে। তার মানে এই না যে তারা nuclear attack support করতেছে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে মিথ্যা কিছু দেখানো হয়নি। All quiet on the western front-এ যে তিনজন মেয়ের কথা বললি তার কিন্তু মেইনলি খাবার পাওয়ার লোভে বিছানায় গিয়েছিল। মূল কথা হল, ইতিহাস নির্ভর সিনেমা বানাতে হলে ইতিহাস বিকৃত করা চলেনা। আর Guilty by suspicion-ওগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

তানভীরঃ ওরকম ২/১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে আমাদের যুদ্ধে ঘটেনি সেটা তুই ক্যামনে বলিস? মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশী মেয়েরা পাকিস্তানি ছেলেদের জন্য পাগল ছিল। আমাদের বাঙ্গালী ছেলেরা মেয়েদের কে impress করার জন্য উর্দুতে কথা বলত।
অনিমাঃ ভাগ, জীবনেও না।
তানভীরঃ যা জানিসনা, তা নিয়ে কথা বলিসনা।
শাহেদঃ কোন দেশের ১০০% মানুষ-ই খারাপ হয়না। কিন্তু ’৭১ এ যেসব পাকিস্তানি সৈন্য আসছিল ওরা মানুষ মারতেই আসছিল শুধু।
অপুঃ আমার বাপরা যখন চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পালায় আসতেছিল তখন কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা সাহায্য করছিল। তারা এক রাজাকার দিছিল পথ চেনায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাজাকারকে মেরে আমার বাবাদের সাথে বলে খুব খারাপ ব্যাবহার করছিল।
শাহেদঃ সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা অপু।
তানভীরঃ Exactly. Schindler list ও কিন্তু তাই। এরকম ঘটনা নিয়ে মুভি বানালে মেহেরজান নিয়ে বানাতে সমস্যা কোথায়?
অনিমাঃ ওই মুভিতে ইহুদি অত্যাচার-ও খুব স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়েছিল। আর যখন পাকিস্তানি হারামীগুলো রেপ করে বেড়াচ্ছে, ওই সময় কোন বাঙ্গালি মেয়ে তার প্রেমে পড়ছে এমন একটা নজির-ও নাই ইতিহাসে।
তানভীরঃ তাহলে যুদ্ধ শেষে ৩০/৪০ জন মেয়ে ওদের সাথে কেন দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল?
অনিমাঃ তোর মত ফালতু পোলাপাইন্ দের জন্য। ওরা ফিরে আসলে তোর মত লোকেরা মেনে নেবেনা বলে বাধ্য হয়ে চলে গিয়েছিল। শোন, যে মেয়ে raped হয় কোন ছেলের দ্বারা, তাকে কোনোদিন-ও ভালবাসতে পারবেনা সে।
শাহেদঃ আর কোন পাকিস্তানি সৈন্য বাঙ্গালি কোন মেয়েকে রেপ থেকে বাঁচাইছে এমন কোন ঘটনা-ও নাই।

অপুঃ এই মেহেরজানের পরিচালক দেখি কোন খোঁজ খবর না নিয়েই মুভিটা বানায় ফেলছি। আবার Pennsylvania state university থেকে পাশ করছে বলে।
অভিঃ হুমম, আমার একটু তার কাজ গুলো দেখার ইচ্ছা ছিল। I mean camera, cinematography, lighting-এসব আর কি!
(তানভীর হেসে উঠল)
শাহেদঃ তোর কি হইছে বল তো তানভীর? তুই মনে হচ্ছে মেহেরজানের পক্ষে?
তানভীরঃ নাহ দোস্ত, আমি সেটার পক্ষে না, কিন্তু তোদের বিপক্ষে। তোদের অবস্থা দেখে হাসতেছি। তোদের সবার-ই দেখার ইচ্ছা মুভিটা, আবার বর্জন-বর্জন বলে চিল্লাচ্ছিস। শোন, আমরা হেরে গেছি, ব্যাপারটা মেনে নে আগে, তারপর বলতেছি।
অপুঃ কি হারলাম আমরা আবার?
তানভীরঃ বক্তৃতা দিব, রেডি হ।
(সবাই হতাশাজনক শব্দ করল)
শাহেদঃ শুরু কর তোর বিপ্লবী জনসভা, শুরুটা আমি করে দেই, বিপ্লবী ভাইগণ, কমরেড…

তানভীরঃ থাম……শোন, মেহেরজানের পরিচালক রুবাইয়াত হুসেইন জিতে গেছে। কি আর চাস তোরা। ২১ তারিখ মেহেরজান মুক্তি পাইছে, আজকে ২৬ তারিখ, । ৫ দিন গেছে মাত্র, অথচ পুরা দেশ এই সিনেমার নাম, ডিরেক্টরের নাম জেনে গেছে। সারাদিন বার-এ গিয়ে পড়ে মেয়েদের সাথে লুইচ্চামি করা অপুও হাজির হইছে এই সম্পর্কে জানার জন্য। এত “বর্জন”, “নিষিদ্ধ” করে লাভটা কার হইছে জানিস? ডিরেক্টরের। কারণ মানুষের আগ্রহ আরো বাড়ছে। আমাকে এই ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞাসা করলে হেসে উড়িয়ে দেই, কোন আলোচনার মধ্যে যাইনা। কারণ গেলেই তার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়া হবে।
শাহেদঃ কিন্তু দোস্ত, এগুলা নিয়ে তো কথা বলতে হবে। এছাড়া তো সে আবার বানাবে এরকম সিনেমা।
তানভীরঃ তুই সেটার ভয় পাস? কেন পাস জানিস? কারণ তার সাথে যুদ্ধ করে পারবিনা। শোন, তুই তো আর এটা বন্ধ করতে পারবিনা। আজ এখানে এই ছবি বন্ধ হলে সে এটা অন্য দেশে রিলিজ করবে। Already এই মুভি উর্দু, ইংরেজীতে dubbed/subtitled হইয়ে গেছে। ক’দিন পর youtube or torrent এ চলে যাবে। কান/বার্লিন/সিডনী ফিল্ম ফেস্টিভালে হয়ত দেখানো হবে এই ছবি। বিদেশে মানুষ জানেনা, ’৭১ এ আমাদের দেশের মেয়েদের উপর কি অকথ্য অত্যাচার হইছে, আমাদের যোদ্ধারা কত বীরত্ব নিয়ে যুদ্ধ করেছে, জানেনা ওই সময় মেয়েদের পোশাক কেমন ছিল, ওদের চোখে ইতিহাসের এসব ভুল ধরা পড়বেনা। ওরা দেখবে ভাল অভিনেতা/অভিনেত্রী, ভালো ক্যামেরার কাজ, হয়তবা সাধারণভাবে ভাল script, ভাল cinematography। আর কি দরকার!! কে জানে, হয়ত ২/১টা award-ও জিতে যাবে। জানিস তুই, অনেক ভাল বাংলা ছবি তুই world IMDB list পাবিনা, অথচ মেহেরজান already চলে গেছে সেখানে।

অপুঃ (চিন্তিত দেখাল তাকে) ঠিক-ই বলছিস দোস্ত, দেশের মানুষ কে নিয়ে ভয়ের কিছু নাই। যে যাই খাওয়াতে চাক, দেশের মানুষ সত্যটা ঠিক-ই জানবে। জামায়াতে ইসলাম ৩০ বছর ধরে অনেক মিথ্যা ইতিহাস গিলাইতে চাইছে, পারেনি। কিন্তু বিদেশের মানুষকে নিয়েই ভয়। ওরা তো কিছু জানেনা ভাল করে। So ভালো advertise আর মুভি বানায়ে যে ওদের কাছে আগে পৌছাতে পারবে তারা সেটাকেই সত্য বলে জানবে।
তানভীরঃ Exactly। আর কি করতে চাস তোরা? বর্জন করবি, নিষিদ্ধ করবি, পিন মাইরা নানা কথা লেখবি মুভিটা আর ডিরেক্টর সম্পর্কে, দেশ থেকে বের করে দিবি-তাই তো? তসলিমা নাসরিন কেও তো দিছিলি, কি লাভ হইছে তাতে?
শাহেদঃ ঠিক-ই রে। এসব করে হয়ত আমাদের প্রতি রুবাইয়াত হুসেইন এর ঘৃণা আরো বাড়ায় দিলাম। হয়ত পরেরবার সে অন্য দেশ থেকে মুভি বানাবে। বিদেশী প্রপাগান্ডার অভাব হবেনা তার নতুন সিনেমার খরচ যোগাতে। তাদের সাহায্য নিয়ে হয়ত আরও ভাল কিছু বানাবে আর আঘাত আসবে আরো বড়। তসলিমা নাসরিন কে বের করে দিয়ে কি লাভটা হল? এখন সে সুইডেন, ভারতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম কে পচাচ্ছে। ক্রিশ্চান্ রা খুব খুশি, তারা তাকে আরো উৎসাহ দিচ্ছে। সামান্য সাহিত্যবোধ না থেকেও সে বড় সাহিত্যিক বনে গেছে। সেভাবে যারা বাংলাদেশ কে বন্ধু হিসেবে দেখেনা ওরাই হয়ত সাহায্য করছে মেহেরজানের মত ছবি বানাতে।
অনিমাঃ তোরা মনে হয় বেশী কল্পনা করতেছিস!

তানভীরঃ কিন্তু কখন কি হবে-তুই বলতে পারিস না। আসলে, প্রতিবাদের ভাষা সবসময় একই রকম হওয়া উচিত না। গান্ধী শিখায় গেছে এক অসহযোগ আন্দোলন আর অনশন, তখন সেটা কাজে দিছিল, আর আমরা এখনও সেটা চর্চা করে যাচ্ছি। কিছু হলেই প্রতিবাদ সভা, তারপর বাসায় গিয়ে আবার ঘুমানো।
অভিঃ মানুষ এখন সভ্য। তাইলে এখন আমরা খালি নকশাল আর সর্বহারার মত মানুষ খুন করে বেড়াব?
তানভীরঃ তোদের কাছে কি বিপ্লব মানেই খালি খুনাখুনি? আমি সেটা বলিনি। রেনেসা হয় শুনিসনা? শিল্প বিপ্লব, সাহিত্য বিপ্লব। এখন মিডিয়ার যুগ, আমাদের চলচ্চিত্র বিপ্লব প্রয়োজন।
অভিঃ তা আমরা সেটা কিভাবে অর্জন করতে পারি নেতা সাহেব?
তানভীরঃ ওই ব্যাটা, সারাদিন যে খালি ফারুকির চামচামি করিস…
অভিঃ খবরদার ফালতু কথা বলবিনা। আমি কাজ শিখতেছি।
তানভীরঃ আচ্ছা বুঝলাম। ফারুকী স্পার্টাকাস’৭১, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি-এর মত মুভি বানাইছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। অসাধারণ script, আর জঘন্য অভিনয়, ভাল মত প্রচার ও হয়নি। আসছে পারছে লাইম লাইটে মেহেরজানের মত? কেন পারেনা? তার যত ভাল ক্যামেরার কাজ শুধু ব্যাচেলর আর থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার এর জন্য, না? ক্যান তোরা এখন পর্যন্ত একাত্তরের পটভুমি নিয়ে ভাল আন্তর্জাতিক মানের ছবি বানাইতে পারিস নাই? সব দায়িত্ব কি একা জহির রায়হান এর ছিল? আর এখন তারেক মাসুদ? মেহেরজানের প্রতিবাদে সব প্রযোজকরা একত্র হয়ে ইনভেস্ট করে, সব বড় বড় ডিরেক্টির রা একত্রিত হয়ে সব দিক থেকে অসধারণ একটা সিনেমা বা মেগা সিরিয়াল বানাতে পারেনা?

অনিমাঃ negative ভাবে lime light-এ আসা সোজা দোস্ত, positive ভাবে এত সোজা না।
তানভীরঃ ফালতু কথা বলিস না। মাটির ময়নার আগে কয়জন মানুষ চিনত তারেক মাসুদ কে? তিনি positive ভাবেই নিজের জায়গা করে নিছেন। আর কি বলিস তুই? চিন্তা করে দেখ তো- ফারুকী, হুমায়ুন আহমেদ, তৌকির আহমেদ, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, রিদুয়ান রনি’র মত সব পরিচালকরা এক হয়ে কোন মেগা সিরিয়াল অথবা সিনেমা বানাইছে। মানুষ হামলে পড়বে দেখার জন্য। সেখানে যদি জয়া, রিচি দের মত সুন্দরী এবং প্রতিভাবান শিল্পীরা থাকে তাইলে তো কথাই নাই। আর শাহেদ…
শাহেদঃ আমাকে আবার ঝারি মারবি কেন? আমি কি করলাম?
তানভীরঃ তোরা লেখক, বুদ্ধিজীবী। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী মানে হল কে কত কারে পচাইতে পারে। আলপিন, বিচ্ছু খুললেই খালি একই বোরিং জোকস-পুলিশ ঘুষ খাইছে, রাজনীতিবিদরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি-এই তো। এগুলাই তোরা ঘুরিয়ে পেচিয়ে স্যাটায়ার করে একের পর এক কলাম লিখে যাচ্ছিস। যে যত পিন মারতে পারবে, যত পচাইতে পারবে সে তত বড় লেখক। এটাই কি বুদ্ধিজীবীদের কাজ? স্যাটায়ার দরকার আছে, তাতে জনমত গঠিত হয়। কিন্তু তারপর তোরা কি Initiative নিস? আমাদের সংবাদপত্র, মিডিয়ার স্বাধীনতা খারাপ না। অনেক কিছুই তোরা লিখতে পারিস। কিন্তু যাদের নিয়ে লিখিস তারাও জানে যে, ওই লেখা পর্যন্তই, ক’দিন পর তোরা আবার অন্য টপিক নিয়ে মেতে উঠবি। কোন বিপ্লব-ই হবেনা।

অপুঃ আসলেও শাহেদ, খেয়াল কর দেখ, ৫০/১০০/১৫০/১০০০ বছর আগে হয়ে যুদ্ধ নিয়ে এখন মুভি বানাচ্ছে কত দেশ। এসব নিয়ে তাদের script, সাহিত্য লেখা হচ্ছে-কারা লিখছে? নতুন প্রজন্মরাই। আর আমাদের দেশে এগুলা লেখার কাজ যেন শুধু তাদের ই-যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে। তোরা চাইলে কিন্তু অনেক তথ্য সংগ্রহ করে খুব ভাল কিছু লিখতে পারিস। তারপর না হয় screenplay লিখলি সিনেমার জন্য।
তানভীরঃ সেটাই। যেমন ধর, লিটল ম্যাগ-এর কোনো এক সংখ্যা তে তোরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব ভাল ভাল কিছু লেখা লিখলি। অনিমা খবরে আল্লাদ করে পাঠ করল সেটা।
অনিমাঃ আমি আল্লাদ করিনা। ফালতু কথা বলবিনা।

অভিঃ আসলে আমরা বুঝিনা যে কোন জায়গায় আমাদের জোর দিতে হবে। মেহেরজানের শুটিং দেশেই হল। ২/১ টা বড় বড় অভিনেতা/অভিনেত্রী নেওয়া হল, world market বাড়ল। আমরা যদি খুব ভাল কিছু সিনেমা বানাতে পারি, দরকার হলে তাতে ২/১জন আন্তর্জাতিক শিল্পী নিলাম মার্কেট পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা কখনও করা হয়না। আর এখন World Cup Cricket এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনা হচ্ছে ৫৮ জন ভারতীয় শিল্পী।
তানভীরঃ আমার ধারণা আ্মার পয়েন্ট টা তোরা ধরতে পারছিস। বাংলা সিনেমা হয়ত বিদেশের অনেকেই দেখবেনা। সেটা ওদের কে দেখানোর মত করে তৈরী করতে হবে। আর বিশ্বকাপের উদ্বোধন সবাই এমনি দেখবে। এখানে সুযোগ ছিল আমাদের মেধা তুলে ধরার। কিন্তু মনে হয় পারলামনা সেটা। আমরা আমাদের culture অবশ্যি চর্চা করব। কিন্তু নিজের দেশ কে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হলে, তাদের কাছে কোনো message পৌছাতে হলে অন্যদের culture এর সাথে নিজেদের culture blend করতে হবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। ২ ধারাই চর্চা করতে হবে। রবীন্দ্র সংগীত শুনে আমরা আনন্দ পাই, আমাদের স্বকীয়তা আমরা অন্যদের কাছে তুলে ধরে বলতে পারি যে আমরা অনন্য। কিন্তু তাদের কে আমাদের দেশ নিয়ে কিছু জানাতে হলে সেটা যথেষ্ট না। তারা রবীন্দ্র সংগীত বুঝবেনা। বরং যদি দেশের কোন Rock band অথবা Rap group-এর দেশ নিয়ে গাওয়া কোন ইংরেজী গান থাকে, সেটাই preferable। অপু, তুই lyrics লেখিস তোর এক বন্ধুর ব্যান্ড এর জন্য। ILETS এ 8.5 পেয়ে তুই অস্ট্রেলিয়া গেছিস। চাইলে কিন্তু লিখতে পারিস তুই-ও ২/৩টা ভালো গান। ভাল lyrics, ভাল script এর আমাদের অভাব। পাইলে দেখবি কেউ ছাড়বেনা। কেউ না কেউ সেটা ব্যাবহার করবেই। বন্যা অথবা সাদি মোহাম্মাদ দেশের বাইরে গেলে হয়ত বিদেশী বেশি মানুষ আসবেনা, কিন্তু দেশের একটা underground band এনে ৪টা ইংরেজী গানের সাথে যদি দেশের একটা গান জুড়ে দেওয়া যায় তাহলে অন্তত ১০ বাইরের মানুষ হলেও জানবে। প্রশংশা করলে সেটা হবে দেশের-ই অর্জন।

অনিমাঃ চিন্তা করে দেখ, সাদী মোহাম্মাদ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, ফিরোজা বেগমের মত নজরুল গীতি গায়িকা, ফরিদা পারভিন-বাংলা ব্যান্ড-লালন ব্যান্ড এর মত বাউল সংগীত শিল্পী, অর্ণব-হাবিব-ফুয়াদ এর মত মিউজিসিয়ান, Artcell, Aurthohin এর মত Rock band, শিরোনামহীনের মত ফাটাফাটি ব্যান্ড, অনিলা-মিলার মত Hot nice singer থাকতেও আমাদের ভারত থেকে এত শিল্পী আনতে হচ্ছে বিশ্বকাপের জন্য। কত variation আমাদের music এ, তারপর ও। আর আমরা টিকেট কেটে সেটা দেখতে যাব। আগে থেকে সেটার কেউ প্রতিবাদ করবেনা, অনুষ্ঠান বর্জনের threat দেবেনা।
শাহেদঃ মনে আছে-ছোটবেলায় ভাব সম্প্রসারন পড়তাম-“স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে রক্ষা করা বেশী কঠিন।” তখন কিছুই বুঝতাম না, এখন বুঝি স্বাধীনতার অনেক দিক আছে।

তানভীরঃ আসলে শুধু নিজেরা নিজেদেরকে নিয়ে থাকলে, নিজেদের culture নিয়ে সারাক্ষণ চিল্লা চিল্লি করে পৃথিবী থেকে নিজেদের কে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা বোকামী। নিজেদের পরিচয় ধরে রাখার জন্য সেটা must, কিন্তু এখন competition আর প্রচারের যুগ, নিজেদের বীরত্ব নিজেরদেরকেই প্রকাশ করতে হবে, প্রযুক্তিকে ধরে রাখতে পারবিনা, মেহেরজান মানুষ দেখবেই, আটকায়ে রাখতে পারবিনা, দেশে কয়েকদিন facebook বন্ধ ছিল, কিন্তু আটকায়ে রাখতে পারেনি মানুষ কে। মেহেরজান হয়ত কোন Award ও জিতবে, মানুষের সেটা দেখার নিষিদ্ধ ইচ্ছা জাগবে, ডিরেক্টর আবার এরকম কোনো মুভি বানাবে। এসব কে ভয় না পেয়ে, সময় নষ্ট না করে আমরাও ভাল কিছু বানাই। ১০০ টা এরকম ভাল মুভি বানাতে পারলে হারিয়ে যাবে মেহেরজানের কলংকিত নাম, মানুষ নিজেরাই বুঝে নেবে মেহেরজান ইতিহাস বিকৃত করা এক ছবি……যা হোক, দোস্তরা, অনেক বক্তৃতা দিলাম, অনেক পিন ও মারলাম তোদের কে, কিন্তু আমার এখন যেতে হবে। আমি অবশ্যই গঠনমূলক কিছু steps নিব। শুধু বক্তৃতা আর প্রতিবাদ সভা না।
অনিমাঃ দোস্ত দাঁড়া, আমিও যাব তোর সাথে। আমি TV Chennel এ নতুন। তারপরও তুই যা করবি media back up দেওয়ার চেষ্টা করব।

(তানভীর আর আনিমার প্রস্থান। বাকি তিনজন চুপ করে বসে আছে। নিরবতা প্রথমে ভাংল অভি)
অভিঃ দেখি ফারুকি ভাইরে ফোন দেই একটা। সব ডিরেক্টর দের নিয়ে একটা মিটিং ডাকার কথা বলি। try করলাম আর কি!!
শাহেদঃ আমিও আজিজের দিকে যামু। পোলাপাইনের সাথে কথা বলে দেখি। Informative আর সুন্দর কাহীনি নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব সবাই মিলে।
অপুঃ আর লেখার পর সুন্দরী heavy joss নওশিন অথবা অপি করিম এর আতলামি অনুষ্ঠানে একটা সাক্ষাৎকার ম্যানেজ করিস।
শাহেদঃ হ, চেষ্টা করুম। তুই ভাগ এখন। যা, গিয়া মাল খা।
অপুঃ হ, আজকে weekend, খামু তো অবশ্যই। কিন্তু দোস্ত শোন, লেখা হইলে আমারে দিস, ইংরেজীতে translate করার চেষ্টা করব। ৫জন মানুষ পড়লেও তো লাভ।
শাহেদঃ দিবনি। কিন্তু সময় লাগবে।
অভিঃ দাঁড়া দোস্ত, আমিও যামু তোর লগে, ভাই বেরাদার কাউকে না কাউকে পাওয়াই যাবে আজিজে গেলে।
অপুঃ যা তোরা। ভাল থাকিস দোস্ত।

Saad7565@hotmail.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখার ম্যাসেজটা ভাল লাগল। অবশ্যই চাই এমন কিছু সত্যিই ঘটুক।

শাফি।

সাদ  মাহবুব এর ছবি

ধন্যবাদ শাফি ভাই, মাঝে মাঝে খুঁজে পাইনা কি করা উচিত!! কিন্তু শুধু গালাগালি করতে ভাল লাগেনা, এমন কিছু করতে মন চায় যেন মানুষ খারাপ টা ভুলে গিয়ে ভাল টাকে আকড়ে ধরে (আবার আতলামি করলাম)

অতিথি লেখক এর ছবি

না না, আতলামি বলছেন কেন? একেবারেই আতলামি নয়, আমাদের অবশ্যই এমন কিছু (মানে কিছুটা কন্সট্রাকক্টিভ) ভাবতে হবে যাতে আমাদের "ভাল না লাগাটা" যেস "মেহের জান টিম" দের মত মানুশের কোন উপকারে না আসে, কীজান প্যেচিয়ে ফেল্লাম কিনা?

শাফি।

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়টা এখন এমন যে "মেহেরজান" একটা হাইপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিসিটি চাইলাম তো ছেড়ে দিলাম একখানা মেহের-জ্বরাক্রান্ত পোস্ট ! ( কিছুদিন আগে যেমনটি তৈরি করে দিয়েছিলেন বলিউড স্টার খান সাহেব)

দীর্ঘ পোস্টটি নিশ্চয়ই আপনার ব্যক্তিগত ভাবনার প্রকাশ। কেন যেন এই চিন্তাগুলো খুব সুপারফিসিয়াল মনে হলো।
(যেমন সব ডিরেকটরদের একজোট হয়ে সিনেমা বানানো, ইংরেজি গানের ফাঁকে রবীন্দ্রসংগীত গুজে দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল এক্লেইমেশান আদায় ইত্যাদি)
আর বর্ণনার ভাষাভঙ্গিটির সাথেও আমি স্বস্তিবোধ করছি না।
মন্তব্যে কোনভাবে আহত হয়ে থাকলে দুঃখিত। স্রেফ পাঠক হিসেবে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানালাম।

-----------
সাত্যকি

-----------

সাদ  মাহবুব এর ছবি

না না সাত্যকি দা, আপনি আপনার মন্তব্য তো অবশ্যই জানাবেন। আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার কথা। ভুল তো অবশ্যই থাকতে পারে আমার। তবে উদ্দেশ্য কোন খারাপ কিছু ছিলনা আর বর্ণনার ভাষা ভঙ্গি হয়ত আমার লেখনীর দুর্বলতা...শুধু একটা কথা বলতে চাই, মেহেরজানের নাম ভাঙ্গায়ে পরিচিতি লাভের উদ্দেশ্যে আমি কোন লেখা লিখিনি, কোন কিছুর সাহায্য নিয়ে মানুষ কে কিছু গেলানোর ইচ্ছা আমার কোনদিন-ই ছিল না।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

হিমু এর ছবি

পর্যবেক্ষণ ১:
আপনার নাটকের প্রতিটি চরিত্র শ্যালো। তাদের সংলাপে বুদ্ধিমত্তার ছাপ প্রায় নেই। নিতান্ত বেকুবদের নিয়ে নাটক লেখা যায় নিশ্চয়ই, কিন্তু সেই নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়া দুর্বিষহ মনে হতে পারে। উদাহরণ, আপনার নাটকের বাম চরিত্র তানভীর, সে আবার ছাত্র ইউনিয়ন করে। মেহেরজান ছবিটি নিয়ে তারই সম্ভবত বেশি উত্তপ্ত থাকার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে সে-ই এর পক্ষে সবচে সোচ্চার। তার সংলাপে প্রচুর ভুল, শিণ্ডলার্স লিস্ট বা পিয়ানিস্ট সিনেমাটা যে সে দেখেনি, সেটাও কথা শুনে বোঝা যায়। এই ছাত্র ইউনিয়ন করুয়া ছেলেটি বলছে, মুক্তিযুদ্ধের আগে নাকি বাংলাদেশের মেয়েরা পাকিদের জন্য পাগল ছিলো। এইখানে এসে একটু হোঁচট খেতে হয়, কারণ ছাত্র ইউনিয়নে এত বড় বলদ ছদ্মবেশী শিবির ছাড়া থাকার কথা না। মেহেরজানের বিরুদ্ধে বাম ছাত্র সংগঠন যেখানে রাস্তায় নেমে গেছে, আপনার নাটকের এককালের বাম চরিত্র বলছে, সে নাকি এ নিয়ে কোথাও আলোচনায় জড়ায় না। বাংলার চে গুয়েবাড়া ফারুক ওয়াসিফ মার্কা বাম হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

পর্যবেক্ষণ ২:
"বিদেশী"দের বোঝার ক্ষমতা আর কৌশল সম্পর্কে চরিত্রগুলোর কোনো ধারণা নেই। কেউ একজন একটা সিনেমা বানিয়ে ফেললো আর সেটা দেখে তারা আপাদমস্তক বিশ্বাস করে ফেললো, এই জিনিসটা অন্তত ইয়োরোপীয়ানদের মধ্যে নাই। আমি ইয়োরোপের প্রায় সব কয়টা দেশের মানুষের সাথে মিশেছি, নতুন কোনো তথ্য পেলে ওরা মন্তব্য না করে নিজস্ব সূত্র দেখে। আপনি একজন জার্মানকে ১ ঘন্টা ধরে নিজের ইতিহাস শোনান, সে পাত্তা দেবে না, ঠিকই বাড়ি গিয়ে নিজেদের টেক্সট ঘেঁটে দেখবে কোন জার্মান পণ্ডিত সে সম্পর্কে কী বলেছে। তাই রুবাইয়াত হোসেনের মতো একজন নবিশ সিনেমা বানিয়ে "আগে-আসলে-আগে-পাবেন" ভিত্তিতে একটা বিকৃত ইতিহাস তৈরি করে "জিতে গেছে", এরকম ভাবনা বেশ অশিক্ষিত না হলে চরিত্রগুলোর মাথায় আসার কথা নয়।

পর্যবেক্ষণ ৩:
"ক্যামেরা", "সিনেমাটোগ্রাফি", "লাইটিং" কথাগুলো শুনে বোঝা যায়, ভবিষ্যতের সিনেমা নির্মাতা অভি সিনেমাসংক্রান্ত কিছু শব্দ শিখেছে, কিন্তু সিনেমা ব্যাপারটা বোঝে না। সিনেমা মানেই খুব ভালো সিনেমাটোগ্রাফি নয়। সিনেমার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে তার স্ক্রিপ্ট। ইয়োরোপ আর উত্তর আমেরিকা দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে, তারা যুদ্ধ নিয়ে প্রচুর সিনামাও দেখেছে, মেহেরজানে যে পাকিচোদাফ্যান্টাসির সেন্সরসম্মত রূপায়ন হয়েছে, সেটা দেখে তারা ব্যাপক আমোদ পেতে পারে বড়জোর। ফরাসী ফেনি সমিতি চলচ্চিত্র পুরস্কারমার্কা দুয়েকটা পুরস্কারও পেতে পারে, কিন্তু পুরস্কার দিয়ে সিনেমা মাপলে "পাল্প ফিকশন" একটা খারাপ সিনেমা, আর "ফরেস্ট গাম্প" ভালো সিনেমা। দর্শকের গ্রহণ- আর বর্জনক্ষমতা নিয়েও তাই এই নাটকের কোনো চরিত্রের কোনো ধারণা নাই।

পর্যবেক্ষণ ৪:
তসলিমা নাসরিনের সাথে রুবাইয়াতের তুলনা দেয়াটা চরিত্রগুলোকে মানিয়ে গেছে, বিশেষ করে এর আগ পর্যন্তই তারা যখন প্রমাণ করেছে তারা সলিড ভুদাই। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র সিনেমা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে, এটা তাদের ব্যবসায়িক কৌশল, এর সাথে নিষিদ্ধকরণের গ্লোরি যুক্ত করার আগ্রহ তো রুবাইয়াতের চামচাদেরই থাকার কথা। টয়োটা বাজার থেকে তার একটা মডেলের বহু গাড়ি তুলে নিয়েছিলো বলে শুনেছিলাম, তখন কি টয়োটার ঐ মডেলের ওপর নিষিদ্ধকরণের প্রলেপ লাগিয়েছিলো কেউ?

পর্যবেক্ষণ ৫:
"বুদ্ধিজীবী" আর "কিছু একটা করা" নিয়ে অংশটা পড়ে বুঝলাম, চরিত্রগুলোর "কিছু একটা করা"র ব্যাপারেও স্পষ্ট ধারণা নেই। যেমন মেহেরজানের শুটিং দেশেই হলো বলে ভবিষ্যতের সিনেমা নির্মাতা অভি পরম আহ্লাদিত, অথচ এটা জানে না যে মেহেরজানের বাজেটের সবচে বড় অংশটা ব্যয় হয়েছে ভারতে পোস্ট-প্রোডাকশনের সময়। জয়া বচ্চন, ভিক্টর ব্যানার্জি আর ওমর রহিমের পারিশ্রমিকও নিশ্চয়ই কম নয়। এগুলো এই ভুদাই চরিত্রটি এড়িয়ে গেছে। "ওয়ার্ল্ড মার্কেট" বস্তুটা নিয়েও এই ভুদাই অভি তেমন কিছুই বোঝে না। জয়া বচ্চন কেন, অমিতাভ বচ্চনকে সিনেমায় নিয়েও লাভ নাই, সামান্য ভারতের মার্কেটেই ঢুকতে পারবে না বাংলাদেশের ডিরেক্টরের মুভি। টিভি চ্যানেলই ঢুকতে পারে না, আবার সিনামা! আর বাংলাদেশের সিনামার জবাবদিহিতা প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছেই থাকার কথা, বিশ্বের অন্য দেশের দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার জন্য "তাদের কালচার" মিশিয়ে ছবি বানানোর আইডিয়াটা বিরাট হাস্যকর। কোন কালচারের কথা বলছি আমরা? মার্কিন? কানাডীয়? ফরাসী? জার্মান? বৃটিশ? সুইডিশ? রুশ? কার কাছে কোন কালচারের মশল্লা মিক্স করে পরিবেশন করতে হবে? আমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনামা পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো কালচার মিক্স করার ধার ধারে না, আমরা নিজেরাই যেচে যেচে দেখি, হিন্দি নিয়ে কথা না-ই বললাম, আর আমাদের এখন আমাদের "কালচার"কে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য এই ঘোল সেই ঘোল নিয়ে মিক্স করে সিনেমা বানাতে হবে? আগে নিজের দেশের জন্য একটা সর্বাঙ্গসুন্দর সিনেমা বানানোর কাজটা সার্থকভাবে করার চিন্তা করে না কেন আপনার নাটকের হাফরেড চরিত্রগুলো?

সত্যজিৎ রায়ের সিনামার দিকে আপনার চরিত্রগুলোকে তাকাতে বলবেন। উনি কিন্তু বাংলা সিনেমাকে সারা দুনিয়ার কাছে পৌঁছানোর জন্য এটাসেটামিক্স করতে যাননি। ভারে আর ধারে দুইদিক দিয়েই কেটেছেন। কাজেই আপনার চরিত্রগুলোকে আত্মবিশ্বাসী আর বহুদিগদর্শী হতে বলুন। এরা তো রাস্তায় বের হলে গাড়িচাপা পড়ে মরবে।

পর্যবেক্ষণ ৬:
যেসব চরিত্রের কাছে দিনশেষে গঠনমূলক কিছু করার জন্য গন্তব্য ফারুকি, তাদের নিয়ে লেখা নাটক হিসেবে এটা বেশ ঠিকাছে। "গঠনমূলক" কিছু করার তাগিদটা অ্যাপ্রিশিয়েট করলেও, পদ্ধতিটার প্রশংসা করতে পারলাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

পর্যবেক্ষণ ১।
কেন যেন মনে হল কিছু কথা আপনি personally নিয়েছেন, এছাড়া personal attack কোন লেখক এর কাছ থেকে আশা করা যায়না।

পর্যবেক্ষণ ২।
কিছু মানুষ থাকেই যারা সবকিছুর তীব্র সমালোচনা করে ভিন্ন ভাবে সুনাম (!) অর্জন করতে চায়। রুবাইয়াত হোসেনের মত আপনাকেও সেই দলের-ই মনে হল।

পর্যবেক্ষণ ৩।
অনেক কথাই বলার ছিল আপনার মন্তব্যের বিপরীতে। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি, কিছু মানুষ থাকেই যারা নিজের মতের সাথে অন্য কারো মত না মিললে সেটাকে কোনোভাবেই, যত যুক্তিই দেয়া হোকনা কেন মানবেনা, সেজন্য বলার ইচ্ছা লোপ পেল।

নিজের কিছু কথাঃ
আমার পর্যবেক্ষণ ভুল হতে পারে আপনার সম্পর্কে, যেমন টা আমার ক্ষেত্রে আপনার ভুল ছিল। মন্তব্য আমার লেখার উপর হতেই পারে, কিন্তু আমার উপর না। সেজন্য আমিও আপনার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য না লিখে আপনার মানসিকতার পর্যবেক্ষণ টুকু করেই ক্ষান্ত হলাম।
প্রতিটি লেখকের, প্রতিটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন রকম। এমন কথা নেই যে একজন মানুষের সব চিন্তাই সঠিক। আমার চিন্তা ভাবনা তেও ভুল থাকতেই পারে। কিন্তু ব্যার্থ হলাম এটা প্রকাশ করতেই যে, at the end of the day, আমি আপনি ২ জনেই দেশের ভাল, বাংলা চলচ্চিত্রের ভাল চাই। কারণ যদি এটা আমার লেখায় ফুটে উঠত, তাহলে আপনি আমার ভুল গুলো, আমার চিন্তা ভাবনার limitation গুলো একজন বন্ধু/একই গন্তব্যের অনুসন্ধানী সহযোগী হিসেবে শুধরে দিতেন। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে সেটার চাইতে আমাকে আক্রমন করার দিকেই বেশী আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
আপনার কথা অনুসারে, আমি কোন তথ্য না জেনেই, কোন দেখা মুভির মূল মন্ত্র ধরতে না পেরেই এবং আমার সামান্য সংস্কৃতি বিদ্যা থেকে তৈরী করা shallow ভাষ্য/চরিত্রের প্রকাশ প্রমাণ করে দেয় যে আপনি আমার চাইতে অবশ্যই এসব ব্যাপারে বেশী জানেন এবং বড় বড় সাহিত্যিক দের অনেক বচনও হয়ত আপনার জানা আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, তখনকার বড় বড় সাহিত্যিক রা কিভাবে সমালোচনা করত এবং উৎসাহ দিত সেটা বোধহয় আপনার কখনও পড়ার ইচ্ছা হয়নি, আরও specific ভাবে বললে-প্রয়োজন হয়নি মনে করেছেন।

হিমু এর ছবি

প্রতির্যবেক্ষণ ১:
আমার সময়ের মোটামুটি দাম আছে ধরে নিন। এই বিরাট মন্তব্যটা করতাম না, যদি আপনাকে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে জিনিসটা দেখানোর আগ্রহ না থাকতো। আপনি আবার পড়ে দেখুন, এতে কোথাও আপনাকে লক্ষ্য করে কিছু বলা হয়নি, আপনার চরিত্রগুলোর দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো মন দিয়ে পড়ে দেখুন, ভুল বললাম কি না।

প্রতিপর্যবেক্ষণ ২:
আপনি ঠিকই ধরেছেন। তীব্র সমালোচনার সুযোগ পেলে আমি সেটা করে ফেলি। জিনিসটা সবসময় কাজে না দিলেও বেশিরভাগ সময়ই দেয়।

প্রতিপর্যবেক্ষণ ৩:
যা গুছিয়ে বলতে পারবেন না, সেটা বলতে না পারার ব্যর্থতা অন্যের মেনে নেয়ার ক্ষমতার পাল্লায় না চাপানোই ভালো।

আপনার নিজের কথা প্রসঙ্গে:
আপনাকে আক্রমণ করিনি। আপনাকে আক্রমণ করলে নিশ্চিতভাবেই এমন কিছু বলতাম যে আপনি সহ্য করতে পারতেন না। আপনি সচলায়তনে নাটক লিখবেন, আর সবাই সেটা পড়ে হাততালি দেবে, এমন কেন ধরে নিচ্ছেন? দুর্বল লেখা লিখলে তার সমালোচনা তো আসবেই। সেই্ সমালোচনা যৌক্তিক কি না, সেটা নিয়ে সময় ব্যয় করুন বরং।

আর হ্যাঁ, আমি এসব ব্যাপারে মনে হচ্ছে আপনার চেয়ে কিছুটা বেশি জানি। বড়বড় সাহিত্যিকদের বচনও হালকা জানি। একজন বড় সাহিত্যিকের কথা বলি, তাঁর নাম সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি এক উঠতি ছোকরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার Rimbaud-এর প্রতিবর্ণীকরণ হিসেবে হ্র্যাম্বো লেখায় তাকে ইঙ্গিতে ছাগল বলেছিলেন। আপনি কি চান, বড় সাহিত্যিকিদের লাইনে আপনার সমালোচনা শুরু করি? ভালো লাগবে?

পরিশিষ্ট:
আপনাকে ধুয়ে দেয়ার জন্যে সময় নষ্ট করে এত কিছু লিখছি না। এই শুষ্ক সমালোচনা আরো অনেক অবিমৃষ্যকারী নাট্যকারকে নিরুৎসাহিত করবে, এই আশায় লিখছি। পাঠক হিসেবে এই কাজটা সক্রিয়ভাবে করি সবসময়, আপনি এর উপকার আরেকজন পাঠক হিসেবে পাবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

লাইক বাটনের অভাব বোধ করছি।

দময়ন্তী এর ছবি

আমিও

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাব প্রকাশ-ই ভাষা, আপনি like করেছেন সেটা প্রকাশ করতে পেরেছেন-এটাই মূল কথা। সাহিত্য করে সবসময় মন্তব্য করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু ভাই, আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে মন্তব্য করার জন্য।
আমি যখন একটি মুক্ত অঙ্গনে লেখা দিয়েছি, তখন অবশ্যই সমালোচনা আসবে, তাতে কারো আপত্তি থাকা উচিৎ-ও না। আপনি একজন লেখক হলেও যখন আমার লেখা পড়বেন তখন আপনি একজন পাঠক। আর পাঠক তার ভাল মন্দ অবশ্যই জানাবেন। কিন্তু পাঠক যদি আশা করেন যে, তিনি আমার শিক্ষক অথবা গুরু এ ক্ষেত্রে এবং আমি সেটা পড়ে নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব তাহলে সেটা ভুল। কারণ আপনি আমার চাইতে বেশী জানেন নাকি কম জানেন-তাতে আমার কিছু আসে যায়না। কারণ আপনি আমার মানদন্ড নন। সেজন্য আমার সামান্য যে স্বকীয়তা আছে সেটা আপনার কথা মত চলে হারাতে চাইনা। যেভাবে লিখছি, সেটাও অনেকে পছন্দ করেছেন। আমি রাজনীতিবীদ নই যে, সবাইকে অথবা অন্তত শীর্ষ কাউকে খুশী করে লিখতে হবে। এবং আপনার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনিও কারও উপদেশ শুনে আপনার লেখা/চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেননা-যদি না সেটা আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতাপ্রসূত হয়।
আপনি আক্রমন করেছেন কিনা সেটা বরং আপনি আরেকবার পড়ে দেখুন। সারাজীবন শিবির ঘৃণা করে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে BNP, আওয়ামী লীগ, সাধারণ ছাত্র সবাই মিলে শিবির পিটিয়েছি। সেটা ঠিক ছিল কি ছিলনা সেই মানুষত্যের বিচারে না গিয়ে শুধু বলতে চাই সারাটা সময় ওদের বিপরীতেই ছিলাম এবং থাকব। আমার লেখায় ওদের প্রতি সহানুভূতি ফুটে উঠেছে-সেটা আমি মানতে নারাজ। আর নাটকের যে মূলভাবটা তুলে ধরতে পারিনি তার দায় পাঠকের উপর না চাপিয়ে পুরোটা নিজে নিচ্ছি। কিন্তু সেখানে অনেক কথা আছে। সেটা clarify করে আরেকটা ব্লগ লেখার ইচ্ছা আছে। যদি সেটা ছাপা হয় এবং আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় বের করে মন্তব্য করেন তাহলে খুশী হব।
আপনার লেখা আমার প্রতিমন্তব্যের আগের এবং পরের দুটো মন্তব্যে আপনার attitude এর বিশাল ফারাক পেলাম। সেটা আমার মন্তব্যের কারণে নাকি আপনার মনের খেয়াল জানিনা। তবে ধন্যবাদ আপনার বুঝিয়ে বলা দ্বিতীয় মন্তব্যের জন্য।

হিমু এর ছবি

পাঠক হিসেবে আপনার প্রতি আমার কোনো আশাবাদ এখন আর নেই। তবে আপনার লেখার কোনো পাঠক যদি অপরিপক্ক কোনো ভাবনাকে তৃতীয় শ্রেণীর নাটকের চেহারা দেয়ার জন্যে সচলায়তনকে বেছে নেন, তাহলে আমার সমালোচনা তাঁর উপকারে আসবে।

হিমু এর ছবি

আরেকটা ব্যাপার। তারেক মাসুদকে মাটির ময়না নির্মাণের আগেও বহু লোকে চিনতো মুক্তির গান আর মুক্তির কথার সূত্রে। আর ফিল্মের লাইনে উনি বেশ পুরনো মানুষ, আলমগীর কবিরের সরাসরি শিষ্য। যারা ফারুকি আর রেদোয়ান রনিটাইপ ভুইফোড় ছাড়া আর কাউকে চেনে না, তাদের অবশ্য এসব জানার কথা নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নাটকের মূল বার্তাটা ঠিক আছে ।

হিমুদার সুরতহালটাও বেশ হয়েছে ।
নাট্যকারকে বলবো সুরতহাল রির্পোটার দিকে নজর দিতে ।

---------------------------------------
নিক : সবুজ পাহাড়ের রাজা ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নিক ভাই। আমি বার্তা টাই পৌছাইতে চাইছি, সাহিত্যবোধ আমার বেশী নেই। সেজন্য সেটা গিলানর চেষ্টা করিনি। আপনি ধরতে পেরেছেন জেনে ভাল লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটি কথা জানার লোভ সামলাতে পারছি না, তবে প্রশ্নোটা কিছুটা রিঠোরিকাল, অরথাৎ "উত্তর না করিলেও চলিবে"। জান্তে চাইছিলাম যে এটা যেহেতু ব্লগ (হাঁ ‌্য উচুঁ মাণের ব্লগ) এখানে লিখ্তে চাইলেই কি সবাইকেই হারড কোর রাইটার বা প্রায় সাহিত্তি‌ক হতে হবে? সাহিত্তিক না হলে যারা ঠিক ভাবে বা আর দশ জন হারড কোর রাইটারের মতো করে আবেগ প্রকাশ করতে না পারে তারা কি লেখার বাপার টা থেকে বন্চিত? (হতে পারে) ভাষাগত সমস্যআ বা চরিত্র (ক্যরেক্টার) এর দুরবল উপস্থাপোনার জনে্য এত্তো বড়ও সড়ও ধমক খেতে দেখে আমার ভিমরি খাবার জোগাড়!! অথোচ একটি ভিম্ন আইডিয়া (হয়ত অবাস্তব্তায় ভরা, হায়ত লেখার বিষয় টা যারপরনাই স্পরশ কাতর, তবু) প্রকাশের জনে্য বাহবা পেলেন না, আর পেলেন না খানিকটা কন্সট্রাক্টিভ ফীড ব্যআক, যেটা হয়ত পেইন কিলারের কাজ করত! যাক্গে আমি বা আর কোন ডাক্তার, বা আমি কোন সাহিত্তিক হয়ে পড়লাম যে এত্ত কিছু বুঝে ফেলবো? হ্য়্ত হিমু ভাইই ঠিক করেছেন, বকা দেয়া, লজ্জা দেয়া, মেরে বঝানো পদ্ধ্তি অনেকের ক্ষেত্রে ফলপ্রসু, কীজানি!

শাফি।

দময়ন্তী এর ছবি

আজ্ঞে সমালোচনা শব্দটাকে ভাঙলে পাবেন সম্যক আলোচনা৷ হিমুর ফীডব্যাকটা যথেষ্টই কনস্ট্রাকটিভ৷ তবে তার উপরে কনস্ট্রাকশান বানাতে পারবেন কিনা, তা এই নাটক লেখকের ব্যপার৷ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তো হাজারে লাখে হয়, কারো বানানো বাড়ি, ব্রীজ দুমদাম ভেঙে পড়ে আর কেউ বা পিরামিড কিম্বা তাজমহল গোছের কিছু বানিয়ে থাকে -- এই আর কি৷

হিমু যে ধৈর্য্য ধরে লেখার ফাঁকগুলো দেখিয়েছেন সেজন্যই ওঁকে একটা মস্ত সাবাশি৷ আমি হলে আরো কড়া ভাষায় একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করে ছেড়ে দিতাম৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কড়া মন্তব্য কে স্বাগতম-ই জানাতাম। কারণ কড়া জিনিসটা কারও একার নয়। সবাই-ই সেটা করতে পারে। কিন্তু কেউ সেটা করার পিছনে বিবেচনা করে, কেউ করেনা-এই পার্থক্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ শাফি ভাই। অনেক ধন্যবাদ

তাসনীম এর ছবি

হিমুর সমালোচনাটা গঠনমূলক হয়েছে। এটাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে, ভেতরে ঢুকলে লেখকের উপকারই হবে। এখানে লেখার জন্য সাহিত্যিক হওয়াটা পূর্ব শর্ত নয়। অনেকেই এখানে লিখেন শুধু লেখার তাগিদে। আমার নিজের লেখার হাতেখড়িও এইখানেই, শুরুর দিকে আমার একটা লেখা ছাপা হয় নি, মনে হয় মানের কারণেই।

একজন লেখকের সব লেখার মান সমান হতে পারে না। সচলেও একই লেখকের ভালো ও মন্দ দুই রকম লেখাই দেখেছি। এটা ব্লগের লেখকের বেলাতে যেমন সত্য তেমনি প্রতিষ্ঠিত লেখকের জন্যও সত্য।

আশা করব এই ব্লগের লেখক নতুন উদ্যমে লেখা দিবেন।

হিমু লিখেছে

একজন বড় সাহিত্যিকের কথা বলি, তাঁর নাম সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি এক উঠতি ছোকরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার Rimbaud-এর প্রতিবর্ণীকরণ হিসেবে হ্র্যাম্বো লেখায় তাকে ইঙ্গিতে ছাগল বলেছিলেন। আপনি কি চান, বড় সাহিত্যিকিদের লাইনে আপনার সমালোচনা শুরু করি? ভালো লাগবে?

সুনীলের "অর্ধেক জীবন" পড়লে এই ঘটনাটা পাবেন। এর একটা পরও আছে কিন্তু। মুজতবা আলী এরপর সুনীলের "সোনালী দুঃখ" বইটা পড়েন এবং ছোকরাটাকে ডেকে প্রশংসাও করেন, ফরাসী এই মূল উপন্যাসটার অনুবাদ তিনি কেন করেন নি সেই নিয়ে আফসোসও করেন। তবে সুনীলকে ফরাসী ভাষা ফলাতে মানা করেন।

আমি আশা করব এই লেখকের পরের ব্লগটা ওই পদেরই হবে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক
--------------------------------
[url=http://www.loverofsadness.net ]Lover of Sadness[/url]|[url=http://www.loverofsadness.net/show_song.php ]Sad Songs[/url]

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।