সখি, সুশীল কারে কয়...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০২/২০১১ - ১:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার জানার খুবই খায়েশ সুশীল কারে কয়। তার আগে, সুশীল কী জিনিস? এইটা কি খায় না পড়ে? আমি একজন অশিক্ষিত, মুর্খ মানুষ। সোজা কইরা কইলে অশলীল, মানে সুশীল না। ইদানিং সুশীল মানে, আমগো মহাজ্ঞানী বোন বেরাদাররা জায়গামত আমাদের ব্যাপক কোপাইতেছে। তাদের উদ্দেশ্য মহান। আমগো মত এই আবাল অশিক্ষিত গাঁইয়া ভুত গুলার গুষ্ঠি কিলানো, আই মিন আলোর পথে নেয়া। স্যারগো জান প্রাণ দিয়া এহেন টেরাই দেইখা আমার চউক্ষে পানি আয়া পড়তেছিল। কিন্তু গ্লোবাল অয়ার্মিং এর কারণে আর আয়ে নাই। তাই আমিও একটু টেরাই করুম সুশীল হওনের।

স্যারেরা আপারা পেপার বলগে পচুর লিখতেছেন। কওন যায় ফাটায়ালাইতেছেন। তয় একটু পরবলেম আছে। ওনাদের বাংলা পড়তে বইলে অবশ্যই আপনারে ইংরেজির ডিকশনারি লইয়া বইতে হইব। খালি তা না, আপনাকে ফাকো, দুরেযা, ইসপিফাক বা এই ধরণের মাইনষের বই পড়তে হপে। সে এক বড়ই জ্বালা। যাই হোক, তয় বুচ্ছি যে আমগো স্যারেরা আপারা একেকটা জ্ঞানের ডিব্বা। আমরা বালের মানুষেরা বুঝতে পারতেছিনা। এক স্যার কইছেন, আমারা সব কিছু যেমনে দেখি তেমনে দেখলে এখন হবে না, অন্য চোঁখ দিয়ে দেখতে হবে। এরে নিরপেক্ষ দৃষ্টি কয়। আচ্ছা, এইটা কি জিনিস? যেমন মেরে জান ছবিতে আমাগোরে একটু উদাআআর হইয়া ভাবন্ লাগবো যে যুদ্ধের সময়ে আমগো মাইয়ারা পাকিগোর ইয়ে খাইতে ব্যাপক বালবাসত। সরি আমার মুখ দিয়া খারাপ কথা চলি আইছে। আসলে আমরা গেরামের মানুষগোর ভাল খারাপ বইলা কোনো ভাষা নাই। তাই স্যারেরা আমগো ভাষা শুইনা মাইন্ড খাইয়েননা। তয় আমরা চেষ্টা করতেছি সুশীল চো***, আই মিন সুশীল হওনের।

যাইহোক কইতেছিলাম পাকি চো**র কথা। এক স্যার মাটির ময়না সহ অনেক গুলা ছবির কথা কইয়া কইছে এগুলাও মেরে জান ছবির মত অন্য দৃষ্টিতে দেখানো হইছে। আমগো চক্ষু নাই তাই বুঝি নাই। সে সময়ে পচুর আলেম হুজুর ছিল যারা কোনো দল করত না কিন্তু পাকিদেরও দেখতে পারত না। এইখানে ভিন্ন কি আছে আমি বুঝবার পারতেছিনা। আমার নানা ছিলেন কলকাতা ত্থন পাশ করা মাওলানা। তার গেরামে সবাই তারে শ্রদ্ধা করত। এমনকি রাজাকাররাও। কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সমসময় খাওয়াইছেন, থাকতে দিছেন। তাই তার বাড়িতে পাকি আর্মিরা অনেক বার সার্চ করতে আইছিল। উনি তার বাড়িতে এলাকার হিন্দুদের লুকাইয়া থাকতে দিছেন। কারণ পাকি চু......রা হিন্দু খুজতে আইছিল বেশ কয়েকবার। এইটা মোটামুটি সব গেরামের জন্য সত্য। দাড়িওয়ালা হুজুর মানেই আমরা রাজাকার মনে করি এইটা আপনারে কে কইছে। গেরামের মানুষ তা মনে করেনা। দেশে দাড়িওয়ালা হুজুর পচুর ছিল। সবাই পাকির চোদা খাইতে চাইলে এই দেশ এত সহজে স্বাধীনতা পাইত না। তাই এইখানে ভিন্ন যে ডিসকোর্স কইতেছেন আমরা দেখিনা। নতুন কইরা বাংগালি আর মুসলমান নিয়া প্যাচাল করতেছেন কিন্তু সাধারণ মানুষ আজাইরা জিনিস নিয়া টাইম নষ্ট করেনা। আমরা দেখি এইটা ভাল না খারাপ এই ভাবে। পাকিরাও তো মুসলমান ছিল কিন্তু তারপরো আমরা তাদের সমানে পুন্দাইছি কারণ তারা আমাদের মারতেছিল। তারা মুসলমান নাকি খেরেস্তান এইটা ভাবি নাই। তাই এখন নতুন কইরা বাংগালি আর মুসলমান টার্ম নিয়া নতুন প্রজন্মরে কনফিউজড কইরেননা। এইগুলা রাজাকাররা করে।

হ, এইটা সত্য আমরা রাজাকারদের দেখতে পারিনা। কেন যদি প্রশ্ন করেন তাইলে আপনাদের মত জ্ঞানী মানুষগো আর বুঝাইতে পারুম না। এখন আসেন মেরে জান ছবির কথায়। আপনেরা আমগোরে অন্য দৃষ্টি দিয়া ছবিটারে দেখতে কইছেন। ভাল কথা। চলেন দেখি। আমরা অশিক্ষিত মানুষ যেমনে বুঝি সেমনে কইতেছি। এখন একজন বাঙ্গালি মাইয়া পাকি সেনার প্রেমে পড়তেই পারে। এইটা নিয়া মনে হয়না কেউ আপত্তি করছে। আপনেরা কইতেছেন এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা যুদ্ধের অত্যাচার অনাচারকে ভুলে সবকিছু ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকাবো। যখন আমরা রিকনসিলিয়েশন করার মত উদারতা দেখাতে পারবো তখনই সম্ভব এই রকম অমর প্রেমের কাহিনী। আমাদেরকে এই উদার চোঁখ দিয়ে এই ছবিটা দেখতে হবে। উগ্র জাতীয়তাবাদি আবেগ দিয়ে নয়। ওকে। এবার আমার সাথে আসেন। ছবিটার পটভুমি একাত্তর। তার মানে একাত্তরে কি হইছিল আমাদের জানতে হবে। এখন ধরেন, আপনার মা আর বোনকে পাকি সৈন্যরা ধর্ষণ করল। (সরি টু সে, এভাবে কথা বলতে আমি চাই নাই, কিন্তু পরিস্থিতি বলতে বাধ্য করছে) এবং আরো ধরেন আপনি মেয়ে। এখন কি ওই রকম অবস্থায় আপনি একজন পাকি সৈন্যের প্রেমে পড়বেন? আপনার কি মনে হয়, আপনার পরিবারের প্রতি জঘণ্য অত্যাচারের পরও আপনি প্রেমের মহান বাণী নিয়ে অহিংসার কথা বলে ওই পাকিটার সাথে জলকেলি করবেন? সত্যি করবেন? এটারে কি আপনার স্বাভাবিক মনে হয়? মানুষের স্বাভাবিক মনস্তত্ব কি বলে? সবাই লেখালেখি কইরা আমাদেরকে জঙ্গি বইলা গালাইতেছে কিন্তু কোনো জ্ঞানী ব্যাক্তিরে পাইলাম না এই প্রশ্নের উত্তর দিতে। সবাই এই জায়গায় স্কিপ কইরা যাইতেছে।

আমাদের মেরে জান ছবি দেখলে মনে হবে আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ বাদ দিয়া উঠানে বইয়া লুঙ্গি উপরে তুইলা আরাম কইরা কেশ ফালাইতেছিল। আর নায়িকা উপরের বর্ণিত পরিস্থিতিতেও পাকির ইয়ে খাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। আমগো আপত্তির জায়গাটা এইখানে। কারণ আপনি যত কল্পনাই করেন না কেন যেটা অসম্ভব অবাস্তব সেটা করতে পারেন না। ছবির নির্মাণ কৌশল নিয়া আমদের মাথা ব্যাথা নাই। আমাদের ভয় ছবির ভুল ইনসেপশন নিয়া। আপনারাই বলছেন, একটা জাতির জাতি-সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠে সংবাদপত্র, সাহিত্য, চলচ্চিত্রের মত মাধ্যম গুলোর রেপ্রিজেন্টেশনের মাধ্যমে। এখন এই ছবি আমাদের যা রেপ্রিজেন্ট করে তা কি আসলেই বাস্তব? যেটা বাস্তব না তা নিয়ে কেন কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াবো? আচ্ছা সেই সময়েই যদি আমরা ক্ষমা করে দিতাম তাহলে কি আমরা স্বাধীনতা পেতাম? তবে কেন এই অলীক কল্পনা করতে বাধ্য করা? আচ্ছা কারা এভাবে চিন্তা করে এখন?

ক্ষমা অবশ্যই ভাল গুণ। কিন্তু এটা কি সবসময় প্রয়োগ করা যাবে? একজন খুনি বা ধর্ষককে কি আমরা “ক্ষমা মহৎ” বইলা ছেড়ে দিব? ভাই সুশীলেরা একটু আওয়াজ দিয়েন। আপনারা কি চান দেশের সব খুনি, ধর্ষকের বিচার না করে ক্ষমা করে দিতে? যদি না চান তবে কেন আপনাদের চিন্তার কন্ট্রাডিক্টরি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে? হে হে , আসল কথা বলা হয় নাই। এই ক্ষমা একাত্তরে অ্যাপ্লাই করলে কারা এখন সুবিধা পাবে? ওহে সুশীলেরা সত্যি করে কও তো তোমরা আসলেই এইটা চাও কিনা। এটা একটা লিটমাস টেস্ট আপনাদের জন্য। আমার প্রশ্নের উত্তর গুলা দেয়ার চেষ্টা কইরেন।

কয়েকদিন আগে একটা ছবি দেখলাম ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস। এখানে নাৎসীদের বিরুদ্ধে ইহুদি জঙ্গি দল কিভাবে নিসংশ্রভাবে হত্যা করে তা দেখানো হয়। পুরো ছবিতেই থাকে ইহুদিরা কিভাবে নাৎসিদের হত্যা করে। এখন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী জানেনা, ইহুদিদের হলোকাস্টের কথা জানে না তাকে যদি এই ছবি দেখানো হয় তাহলে মনে হতে পারে যে সে নাৎসীদের প্রতি সমবেদনা জানাবে। কিন্তু না। ছবিটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, এর সংলাপ গুলো এমন ভাবে সাজানো, যেকোনো আনকোঁড়া সহজেই ইহুদিদের নিঃশ্রংসতার পিছনে যৌক্তিক কারণ খুজে পাবে। কিন্তু আমগো এই ছবি কি বলে? বিশ বছর পরে নতুন প্রজন্ম যখন এই ছবি দেখবে সে কি ভাববে? সে ভাববে আমরা অযথাই পাকিদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করি। আমরা অযথাই রাজাকার নাম দিয়ে কিছু মানুষের বিচারের দাবি করছি। কিন্তু এটা কি সত্য? তাহলে এই ভুল তথ্য দিল কে? আমরা কি এটাই চাইব? তাই আমরা কি সাধে চিল্লা চিল্লি করতেছি? এটা সত্য যে বেশ কিছু রাজাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করছে কিন্তু এইটা পুরা ঘটনাকে রেপ্রিজেন্ট করেনা। এইসব কাহিনী দিয়েও ছবি বানানো যায় কিন্তু আপনি মুল ঘটনাকে পাশ কাটায়ে যেতে পারেন না।

আমরা আগেই দেখছি কিছু মানুষের লাদি ছড়ানো। এখন দেখতেছি নতুন কিছু সুশীলের যাদের কথা বার্তা আগে পছন্দ হইত। এইটা দুর্ভাগ্য আমাগোর জন্য। অর্থ অদ্ভুত ধরণের ক্যাটালিস্ট যা রিকনসিলিয়েশন করে দেয়। কিন্তু কিসের রিকনসিলিয়েশন? কেন? সেই পরিবেশ কি তৈরি হইছে? তাহলে হঠাৎ কেন এই তৎপরতা?

আমরা অতি সাধারণ মানুষ। বইয়া বইয়া পিএইচডি থিসিস করা আমগো কাজ না। আমরা বেশি কিছু বুঝি না। আমরা সাদারে সাদাই দেখি। এর মাঝে সাত রঙ দেখিনা। আমি ভাই অশলীলই থাকতে চাই। আপনারা আমাকে যদি জঙ্গি বলেন আমি তাই সই। আপনারা কইছেন আমরা বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ। আমি এইটা জানি না। আমি শুধু চাই আমার বাপদাদারে যারা খুন করছে তাদের বিচার হোক। আমি ঘৃণা পুষে রাখতে চাই না। আমি চাই না আমার পরের প্রজম্নও ঘৃণা করুক। আমি চাই আমি না পারলে আমার পরের প্রজম্ন যেন বিচারটা দেখে যেতে পারে।

অনন্ত
অনন্ত এ্যাট ইয়াহু ডট কম


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

মেহেরজান বিষয়ক পোস্টে ট্যাগ হিসেবে শুধু মেহেরজান যোগ করলে পরে সব পোস্ট একত্র করে পেতে সুবিধে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা অবশ্য ভাল হত কিন্তু আমার সম্পাদনার আর সুযোগ নেই। মডু যদি আমার হয়ে পোস্টে ট্যাগ হিসেবে শুধু মেহেরজান যোগ করে তাহলে খুশি হব।

অনন্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা অযথাই রাজাকার নাম দিয়ে কিছু মানুষের বিচারের দাবি করছি।

আমরা আসলেই অযথা বিচার পাওয়ার আশা করছি। যদি ধরেন একজন রাজাকারের বয়স একাত্তরে ছিল ১৮ বছর, এখন তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। আর দুই এক বছর যেতে দিন, এরা বয়সজনিত স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে, এদের নুরাণী চেহারা শেষবারের মত দেখে নিতে জনবরেণ্য মানুষেরা উপচে পড়বে, বায়তুল মুকাররামে তিন বারে যানাযা পড়া হবে।

সাকার মত দুই একটা বড়োজোর ফাঁসীতে ঝুলবে, তাতেই বাঙালি খুশি থাকবে। আবার এমনও হতে পারে যে কারোই বিচার হোল না, আমরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে প্রতীকী বিচার করে শুধু কুশপুত্তলিকা দাহ করতে পারি। আইডিয়াটা কেমন? -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম, ব্যাপারটা আসলেই ভাবনার। ছাগুরাজ গুআ'র বয়স প্রায় নব্বই, তিন ছাগশিশু মতি, দেলু আর মোজা প্রায় সত্তর। বিচার করতে করতে এরা স্বাভাবিক ভাবে মারা গেলে তো সব শ্যাষ। দেশ এবং জাতীর স্বার্থেই এখনই ওদের নির্বিচারে যথাস্থানে যথাযথ আদবের সাহিত উত্তপ্ত শিক প্রবিষ্টকরণ পূর্বক হাবিয়া'বাস নিশ্চিত করা উচিত।

ধৈবত

হিমু এর ছবি

অতিথি লেখক এর ছবি

এহেম, ছবিই সব কথা কয়, তাই আমি কইলাম না।

অনন্ত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।