আহমেদ নূর,পুলিশের বুট,মানবাধিকারের হেঁচকি

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৭/২০০৭ - ৮:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..

সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আহমেদ নূর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যৌথবাহিনীর হাতে দুটো অভিযোগে । চাঁদাবাজি এবং জরুরী আইন ভংগ ।
আদালতের রায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন চাঁদাবাজির মামাল থেকে । জরুরী আইন ভংগের মামলা নিয়ে বলার কিছু নেই । 'জরুরী আইন কিংবা জরুরী অবস্থা'- এসব ঘটনা গুলোই অসভ্যতা । তার আবার আইন!

যে কোনো মানুষের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ আসতে পারে । সেই অভিযোগ তদন্ত করে আদালতের কাছে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে হস্তান্তর করাই রাষ্ট্রের আইন রক্ষাকারী সংস্থার দায়িত্ব । আদালত সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন অভিযুক্ত ব্যাক্তি আসলেই দোষী কিনা । দোষী হলে তার অপরাধের ভিত্তিতে শাস্তি, নয়তো বেকসুর খালাস ।
মহামান্য আদালতকে ধন্যবাদ এই রায় দেবার জন্য যে আহমেদ নূর চাঁদাবাজ নয় । আমরা যারা তাঁর কাছের মানুষ তারা স্বস্তি পাই ।

কিন্তু প্রশ্ন থাকে, প্রশ্ন থেকে যায় ইন্টারমিডিয়েট লেভেল টা নিয়ে । আহমেদ নূরের গ্রেপ্তার থেকের পর আদালতের রায়- এই সময়ের ভেতর কেনো সম্পুর্ন সুস্থ একটা মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়, কেনো তাকে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়, কাছের মানুষরা কেনো আঁতকে উঠেন 'মানুষটা বাঁচবে তো?' এই সময়টাতো আহমেদ নূর রাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তায় । আদালতে রায় ঘোষিত হবার আগে তিনি অপরাধী নন? আদালতের নির্দেশ ব্যাতীত কাউকে কোনো ধরনের শাস্তি দেয়ার অধিকার তো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নেই!

আমি জানি দেশটা বাংলাদেশ ।
আমি কোনো ইউটোপিয়ায় ভুগছিনা । আমার জানা আছে, জেলখানার নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর হত্যা করা হয়েছে রাষ্ট্রের স্থপতিদের, খুনীদের রাষ্ট্র পুরস্কৃত করেছে, গতকালের পত্রিকাতেই পড়লাম একজন খুনী মিয়ানমারের রাষ্ট্রদুত হয়েছে । আমার জানা আছে রাকিবুল হুদা,আকবর কিংবা কোহিনুরদের কিছুই হয়নি ।
কিন্তু কিছু তো হওয়া উচিত !

একটা ঘটনা মনে পড়ছে ।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শত শত তরুন পুলিশী নির্যাতনে সাময়িক কিঙ্গবা সারাজীবনের জন্য পংগু হয়েছেন । এরকম একজন আমাদের এক বড় ভাই । ৯০ এর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আন্দোলন যখন তুংগে তখন তিনি গ্রেপ্তার হন । ডিসেম্বর ৬ তারিখ পর্যন্ত হাজতে রেখে তার উপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন । তার পুরুষাংগ থেতলে দেয় থানার দারোগা ।
ডিসেম্বরের ৬ তারিখে তাকে বের করে নিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা । তখন এরশাদের পতন হয়ে গেছে ।
কয়েকদিন পর আদালতে ঐ দারোগার বিরুদ্ধে নির্যাতন মামলা করা হয় এবং আশ্চর্য জনক ভাবে মামলার রায়ে দারোগা দোষী সাব্যস্ত হয় ।

বাংলাদেশ এখনো আফ্রিকা হয়ে উঠেনি,জলপাই শাসকদের কথা মাথায় রেখেই দাবী করি- এখনো আমার দেশ পাকিস্তানের মতো নরক হয়ে যায়নি । বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এইসব পুলিশী নির্যাতনকে ইস্যু করে কাজ করা উচিত । মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সুফল 'এসিড বিরোধী আইন' । 'এসিড সন্ত্রাস' বন্ধ হয়নি এখনো ,কিন্তু এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বেড়েছে,এসিড নিক্ষপের শাস্তি সব্বোচচ নির্ধারিত হয়েছে ।
বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়ে গেলে(যদি হয় কোনোদিন),সাধারন মানুষ পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন ।
কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত এখন থেকেই গ্রাউন্ড তৈরীর কাজ শুরু করা ।


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

স্পট অন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ পুনর্বার।

অপালা এর ছবি

একমত

উৎস এর ছবি

তবে আমি বলবো, বাংলাদেশ বা এরকম দেশগুলোতে রাস্ট্রযন্ত্রের এসব অত্যাচারের শক্তিটা কিন্তু ঘুরেফিরে দেশের সাধারন মানুষের মানসিকতা থেকেই আসে। একদুজন দারোগা অন্য কোন জায়গা থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে চাকরী নেয় নি। আমাদের অনেকেই যারা এখন দারোগাকে দোষী সাব্যস্ত করছি তারা নিজেরাও দারোগার জায়গায় থাকলে একই কাজ করতাম। সমস্যা দেশের সাধারন জনগনের ভেতর, একটা কালচারাল পরিবর্তন দরকার, সেটা হয়তো অল্প সময়ে সম্ভব না।

ঝরাপাতা এর ছবি

কঠিন সত্য। আকবর, কোহিনুরদের কিছুই হয় না। এখনই সময় সচেতন হওয়ার।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কোথায় যেন কেউ খুব ভালো একটা মন্তব্য করেছিলেন এই বলে যে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি হলো সবচেয়ে বড়ো সংগঠিত সন্ত্রাসী বাহিনী।

দ্বিমত করার উপায় নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দ্বিমত করার উপায় নেই।

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

সন্দেহ নাই। ভাল লেখা। নূর ভাইকে হাত বাধা অবস্থায় কোর্টে দেখার র্দুভাগ্য আমার হয়েছিল।
এই সবই বিশ্বব্যংকের টাকা সেফ করবার ধান্ধা। অই সব মানবাধিকার গোষ্টীর ওপর ভরসা নাই। জনগণ কারো হাতে নিরাপদ নয়।
যে কেউ যে কোনো সময় এদেশে খুন হতে পারে। কেন সেটা কোনো প্রশ্নই নয়। ক্রশফায়ারে লাগতে পারে আমার কপালেও।
সবকিছু দেখে শুনে বলতে ইচ্ছে করে। দেশ মানে নয় সীমান্তঘেরা বিষাক্ত কারাগার।

*********************************************

নজমুল আলবাব এর ছবি

দেশ মানে নয় সীমান্তঘেরা বিষাক্ত কারাগার।

বাক্যটা খুব দাগ কাটলো মনে

কনফুসিয়াস এর ছবি

কোহিনূর মিয়ার সাথে নরকে গিয়া একবার সাক্ষাতের ইচ্ছা আছে। অনেক দেনা পাওনা রয়ে গেছে।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।