সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার:: ধর্ম ও জিরাফের উদ্ভট কোলাজ-১
প্রথম পর্ব যারা পাঠ করেছেন ও সময় করে মন্তব্য দান করেছেন,তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা । প্রথম পর্বের মন্তব্যগুলো দিয়েই শুরু করা যেতে পারে দ্বিতীয় পর্বের আলাপচারীতা ।
সহব্লগার তানভীর তাঁর মন্তব্যে বলেছেন তিনি সমবন্টনকে সমর্থন করেন তবে সেই সাথে ইসলামের বন্টন ব্যবস্থাকে ও তিনি মানেন কারন তার দেয়া যুক্তি অনুযায়ী এতেই শেষপর্যন্ত নারীরা পুরুষের সমান এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে পুরুষের চেয়ে ও বেশী সম্পত্তির অধিকারী হয়ে উঠেন ।
ধরে নেয়া যায়,বাংলাদেশের প্রায় সকল নারী এবং পুরুষই তানভীরের মতো মনোভাবই পোষন করেন ,তারা বিশ্বাস করেন কোরানের বিধান কখনো বৈষম্য হতে পারেনা । (বিশ্বাসী মাত্রই বিশ্বাস করবেন- এ আর বিচিত্র কি?)
তবে সহব্লগার দিগন্ত তানভীরের দাবিকে যৌক্তিক ভাবে অস্বীকার করেছেন । তানভীর ইসলামের যে বন্টন পদ্ধতি অনুযায়ী সম প্রাপ্তির ভরসা যোগিয়েছেন,সেখানে দেখানো হয়েছে- একজন নারী তার পিতার সম্পত্তিতে তার ভাইয়ের অর্ধেক পাচ্ছে, তারপর বিয়ে হলে স্বামীর সম্পত্তির কিছু অংশ পাচ্ছে,তারপর পুত্র যখন সম্পত্তির অধিকারী হবে তখন সেখান থেকে ও তিনি কিছু অংশ পাবেন । শেষ পর্যন্ত পিতা,স্বামী ও পুত্রের অংশ মিলে তিনি যা পাবেন তা তার ভাইয়ের অংশের চেয়ে কম হবেনা । নিশ্চয়ই ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান ।
ঠিকাছে । একজন পুরুষ শুধুমাত্র ছেলে সন্তান হিসেবেই তার বাবার সম্পত্তিতে তার বোনের দ্বিগুন পেয়ে যাচ্ছে । এ জন্য তাকে স্বামী কিংবা পিতা হতে হচ্ছেনা । সেই একই পুরুষের সহোদরাকে তার সহোদরের সমান সম্পত্তির মালিক হতে হলে প্রথমে কারো স্ত্রী হতে হচ্ছে,সেই স্বামী বেচারার সম্পত্তি থাকতে হচ্ছে,সেই সম্পত্তিতে ঐ বেচারীকে ভাগ নিতে হচ্ছে; তারপর আবার সেই মহিলাকে পুত্র সন্তানের জননী হতে হচ্ছে,সেই পুত্রকে ও সম্পত্তির মালিক হতে হচ্ছে,মাকে আবার ভাগ নিতে হচ্ছে- এতো শর্ত পুরন হবার তিনি তার সহোদরের সমান হচ্ছেন ।
এই বিলিবন্টন ব্যবস্থায় যদি কেউ সাম্য খুঁজে পান, আমার আপত্তি করার কিছু নেই । কারন পুরুষ হিসেবে ইসলাম এবং আর সকল ধর্মই আমাকে যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করেছে, একজন পুরুষ হিসেবে ধর্মের বিরুদ্ধাচারনের আমার কোন প্রয়োজনই নেই ।
তাই পুরুষ হিসেবে ইসলামী কানুন মোতাবেক বিয়েতে আমার কোন আপত্তি নেই,আপত্তি নেই দেন মোহরে । তবে প্রশন উঠতেই পারে ইসলামী কানুনে বিয়েতে রাজী হওয়ার পর-নারী স্বাধীনতা কিংবা সমবন্টনের দাবী করার মতো নৈতিক অধিকার একজন নারীর আর থাকে কিনা?
যেহেতু বিয়ের সময় খুব স্পষ্ট ভাবেই উচচারিত হয় যে স্বামী তার স্ত্রীর যাবতীয় ভরন পোষন,নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহন করছে । নারীর ভবিষ্যত নিরাপত্তা হিসেবে পুরুষ দেনমোহর ও প্রদান করছে । দায়িত্ব সেই গ্রহন করে যে অধিকতর ক্ষমতাবান,নিজেরদায়িত্ব আরেকজনের কাছে অর্পণ কিংবা নিজেকে আরেকজনের কাছে তুলের দেয়ার বিনিময়ে বণ্ড গ্রহন করে সে যে নিজেকে দুর্বল বলেই প্রতীয়মান করে ।
বুঝতে পারি,মুসলিম নারীদের জন্য এইসব বড় জটিলতা ।
বজলুর রহমান তার মন্তব্যে আইয়ুব খান ও তাঁর প্রনীত মুসঅলিম পারিবারিক আইনের প্রসংগ টেনেছেন । কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি । এ প্রসংগে আরেকটা বিষয় উত্থাপনের আগ্রহ হচ্ছে ।
সকল মুসলমান পুরুষই চারটি বিয়ে করতে পারেন , এ তাঁর ধর্ম প্রদত্ত অধিকার ।বাংলাদেশে একটা মুসলিম পারিবারিক আইন হলো এ দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে ( তৃতীয়্র ক্ষেত্রে কি প্রথম ও দ্বিতীয়, চতুর্থের ক্ষেত্রে কি পুর্বোক্ত তিনজনেরই?) ।
আমার জানতে আগ্রহ হচ্ছে পুর্বোক্ত স্ত্রীর অনুমতি নেয়ার এই আইন কি ইসলামের আইন নাকি আয়ুব খানের সময়ে তৈরী হওয়া পারিবারিক আইন?
কোরানের কোথা ও কি স্ত্রীর অনুমিত নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে? আমাদের পিতামহ-প্রপিতামহরা যে একাধিক বিয়ে করতেন তারা কি স্ত্রীদের অনুমতি নিতেন? নাকি অন্য কোন মুসলিম দেশে অনুমতি নেয়ার বিষয়টি আছে?
যদি এটা কোরান বর্নিত আইন না হয়ে কেবল আমাদের দেশের আইন হয় সে ক্ষেত্রে একজন ধার্মিক মুসলমান প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দেবে কোন অধিকারে? একাধিক বিবাহ তার ধর্ম প্রদত্ত অধিকার,সে অধিকার বাস্তবায়নে বাধা দিলে কি নাগরিকের ধর্মানুভুতি আহত হবেনা?
মন্তব্য
একটা জিনিস আমি কোনোভাবেই বুঝতে পারি না তা হলো
ধর্মকে বগলের তলায় রেখে নারী স্বাধীনতা কিংবা মানুষে মানুষে সম অধিকার কিংবা সহাবস্থান কীভাবে চিন্তা করে লোকজন?
আজকের যুগে নারীকে যেভাবে দেখা হয় পৃথিবীর কোনো ধর্মই তার কাছাকাছি দৃষ্টিতেও দেখেনি। বরং নারীকে দাসদাসীর থেকে একটু উন্নত কোনো প্রাণী হিসেবে দেখেছে। যে মূলত পুরুষের এক ধরনের সম্পত্তি। কোনোভাবেই সহকর্মী নয়
০২
প্রতিটি ধর্মই সেই ধর্মে অবিশ্বাসী লোকজনকে বলে পাপিষ্ঠ। অর্থাৎ ভুল পথে চালিত কিংবা নষ্ট মানুষ। এবং প্রতিটি ধর্মই সেই ধর্মের লোকছাড়া অন্যদেরকে ঘৃণা করে এবং করতে বলে
তাহলে ধর্মকে মাথায় রেখে কীভাবে সম্ভব আজকের যুগের এই সেকুলার চিন্তাগুলো করা?
০৩
সবগুলো ধর্মই তৈরি হয়েছে একেকটা বিশেষ সময়ে বিশেষ অঞ্চলের সমাজবাস্তবতাকে কেন্দ্র করে (যার মধ্যে সব ধর্মেরই সবচে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সেই সময়ের প্রচলিত এবং পুরোনো প্রথার বিরোধীতা কিংবা সংষ্কার)
নিঃসন্দেহে এটা সত্য যে ধর্মগুলো যখন কোনো অঞ্চলে জন্ম হয়েছে তখন সেই অঞ্চলের পুরোনো প্রথাকে ভেঙে সেই সমাজটাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে
কিন্তু যখনই সেই ধর্মের বয়স বেড়েছে এবং সেটা তার অঞ্চলের বাইরে গেছে তখনই তার কার্যকরিতা কমে গেছে কিংবা হয়ে গেছে অনেক পুরোনো
এবং আজকের যুগের মানুষ যে ধরনের জীবন যাত্রা করে তার বিন্দুমাত্র বিষয় সম্পর্কেই কোনো ধর্ম কোনো বিধান তো দিতেই পারেনি এমনকি কোনো অনুমানও করতে পারেনি (করার কথাও না। অত প্রাচীন কালে)
তাহলে?
যারা এখনও আজকের জীবন বাস্তবতাকে জোর করে কোনো ধর্মের সাথে মেলাতে চান তাদের দেখলে আমার হাসি পায়
মনে হয় সত্যিকার অর্থে তারা না ঘরকা- না ঘাটকা
অথবা না বোঝেন ধর্ম
না বোঝেন আজকের জীবনবাস্তবতা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি
০৩
কেউ মানলে মানতে পারেন
না মানলে নেই
কিন্তু আমার একেবারে পরিষ্কার ধারণা যে ধর্ম এবং নারী স্বাধীনতা কোনোভাবেই একসাথে চলতে পারে না
যে কোনো একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটাকে ভাবতে হবে
যদি কেউ ভাবতে চান
থাকে না। একেবারেই থাকে না
কিন্তু মনে রাখতে হবে দেনমোহর প্রথাটা হচ্ছে নারীকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল এবং পুরুষের অধীন হিসেবে ভাবার কনসেপ্ট থেকে আসা
কিন্তু এখন যখন প্রতিটি মানুষকেই স্বনির্ভর এবং সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন এই দেনমোহর প্রথাটা আর প্রযোজ্য না
এবং নারীকে সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে যখনই ভাবার চেষ্টা করা হবে তখনই তার উত্তরাধিকার হবে তার অংশীদারদের সমান...
আমাদের ঝামেলা হলো আমরা পালন করি প্রাচীন পন্থা আর মনে মনে নিজেদেরকে ভাবি আধুনিক কিংবা সাম্প্রতিক মানুষ
সেটা হোক ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে আর হোক সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে
তানভীর যে মন্তব্য করেছেন এ ধরনের মন্তব্য আরো অনেকেই করে থাকেন । এর মাঝে একটা বড়ো ফাঁকি আছে ।
ধরা যাক , দবিরের বাবার সম্পত্তির মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা ।
হিসেবের ভগ্নাংশ প্রাপকদেরকে বাদ দিয়ে সহজ করে হিসেব করলে , দবির যদি একা পুত্র সন্তান হয় আর দুই বোন যদি থাকে , (এবং মা মৃতা হোন )
তাহলে আজকে সম্পত্তি ভাগাভাগি হলে ( ২০০৮ সালে )
দবির পায় = ২৫ লক্ষ টাকা ।
দবিরের বোন সাবেরা পায় = ১২.৫ লক্ষ টাকা ।
এখন বোনের বিয়ে হল ২০০৯ সালে ।
সে দেনমোহর পাবে ধরা যাক , আরো ১ লক্ষ টাকা ( এই টাকা কোনদিনই সে পাবে বলে আমার মনে হয় না ,তবু যুক্তি আর আইন অনুসারে ধরলাম পেয়েছে )
তারপর স্বামীর সম্পত্তিতে সে কতোটুকু অংশ পাবে সেটা আবার খুব বেশি নয় ।
যদি স্বামীর সম্পত্তিও ৫০ লক্ষ টাকার হয় , আর সাবেরারও পুত্র থাকে , তাহলে স্বামীর মৃত্যুর পরে সে পাবে ৫০ লক্ষ টাকার ১/৮ ভাগ = ৬.২৫ লক্ষ টাকা ।
স্বামী নিশ্চয়ই সাবেরার বিয়ের পরেই মরে যাবেন না বলে আমরা আশা করি , উনি ৩০ বছর সংসার করার পরেই বরং মরুন ।
তাহলে ২০৩৮ সালে গিয়ে সাবেরা মোট সম্পত্তি পেলেন ,
১২.৫ + ১+ ৬.২৫ = ১৯.২৫ লক্ষ টাকা ।
হু , যে টাকা ৩০ বছর আগেই দবির পেয়েছিল , সেই পরিমান টাকা সাবেরাকেও পাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম আইন করে দিয়েছে ।
দবিরের সমান হতে সাবেরার বাকী আছে ২৫-১৯.২৫ = ৫. ৭৫ টাকা ।
সেই টাকা পাওয়ার জন্য সাবেরাকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে । কারন মা হিসেবে সম্পত্তির অংশ পাওয়ার জন্য এখন সাবেরার পুত্র সন্তানটির মৃত্যু আবশ্যক ।
আসুন , আমরা সাবেরার পুত্র সন্তানের মৃত্যু কামনা করি এখন বসে বসে । হিসেব তো মিলিয়ে দিতে হবে ।
কারন এটা বেহেশতি হিসাব । নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন সবচাইতে ভালো ন্যায় বিচারক ।
জাঝা
একদম সত্যি কথা।
তবে এটা তো ঠিক ধর্ম আর নারী স্বাধীনতা ,সম অধিকারের দ্বন্দ্ব নিমেষেই মিটিযে ফেলা সম্ভব নয়। সময় লাগবে।
তার আগে অন্তর্বর্তীকালীন কোন উপায় বের করা যায় না?
ধর্ম এবং নারী স্বাধীনতা দুটো বিষয় পাশাপাশি চলতে পারেনা। একটাকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। সবচেয়ে হাস্যকর লাগে যেসকল মেয়েরা
ধর্মেও থাকেন আবার নারী স্বাধীনতার আওয়াজ ও তুলেন একই কণ্ঠে ! এটা যে ‘সোনার পাথরবাটি’ ছাড়া কিছুই নয়-এই সহজ সত্যটা কবে এরা বুঝবেন জানিনা। তবে এটা বলতে পারি নারীরা যত শীঘ্র এটা বুঝবেন ততই মঙ্গল। আসলে ধর্মের নামে উদ্ভট বিকলাংগ এক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে জোর করে, কারণ এখানে পুরূষের ‘লাভের গুড়ের’ তেমন কোন হেরফের হয়না । ধর্মের আসল ভিক্টিম একজন নারী-ই !
তাই, ‘ধর্ম ’নিয়ে নারীদের ভয় ভীতি কাটানো টা সব চেয়ে জরুরী মনে হয়। আর অবশ্যই এটা সবচেয়ে কঠিন কাজ ও...
সমমনা পুরূষরা যদি এ বিষয়ে সোচ্চার হন, যার যার নিজস্ব পরিমন্ডলে এগিয়ে আসেন, কথা বলেন তাহলে কিছুটা অন্তত সচেতনতা তৈরী হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
একটা সুন্দর আলোচনা শুরু করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নন্দিনী
এ বিষয়ে আমার অবস্থান একটু জটিল। শরিয়া সমর্থনের প্রশ্নই আসে না। মরক্কো, আলজেরিয়ার মতো দেশে উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষ অধিকার সমান। ইসলামের নামে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সেখানে বাধা দিতে পারে নাই। আবার আয়ুব সেনাক্ষমতায় পারিবারিক আইন সংষ্কার করে।
কোরানে এও বলা আছে যে, নারী যেহেতু পুরুষের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল সেহেতু নারীর দায়িত্ব পুরুষের। নারী যদি সাবলম্বী হয়, তাহলে কি বিধান পাল্টে যাবে?
অন্যদিকে নারী এখন এনজিও ও পশ্চিমা সিভিল সমাজ আর মোল্লাদের দরকষাকষির জিনিষ। এ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মোল্লাশক্তিকে বশে আনছে। এর সঙ্গে ইসলাম বা প্রগতির সম্পর্ক নেই। আছে কূটিল রাজনীতির।
সুতরাং বিষয়টাকে কেবল তাত্ত্বিকভাবে বোঝা যাবে না।
এ বিষয়ে যদি পারি, আলাদা করে বলবার চেষ্টা করবো।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এখানে একটু উল্টোস্রোতে হাঁটব। মানে সবাই ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে লিখছেন আমি একটু হিন্দু আইন নিয়ে লিখি। হিন্দু আইনে অত হিসাবের কচকচির মধ্যে না গিয়ে পরিষ্কার বলা হয়েছে মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ পাবেই না :)। সুন্দর হিসাব। একদিকে আমার মনে হয় এতে ভালই হয়েছে। যেহেতু মেয়েদের ভাগ পাবার কোনো আশা নেই, তাই সহজেই মেয়েরা সংঘবদ্ধ হয়ে আদায় করে নিতে পেরেছে অধিকার। তবে আমার মনে পড়ে না কখনও এধরনের কোনো মুভমেন্ট হয়েছে বলে। ছেলেরাই (রামমোহন, বিদ্যাসাগর থেকে নেহেরু) মেয়েদের অধিকারের উন্নতির চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু ওই, আইনের যা বলে কাজে তা তো হয় না। তাই এখন মেয়েরা মুভমেন্ট করে সম্পত্তিতে সমানাধিকার আদায় করছে।
আইনের ন্যূনতম সমর্থন না থাকলে এই আদায় করার কাজ অনেক শক্ত হয়ে যেত। তাই সবার আগে আইন চাই, তার পরে বাকি সব। বাংলাদেশের মেয়েদের মুভমেন্ট হলে আমি তাদের আগে ভাগে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
প্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধক - প্রাগৈতিহাসিক ধর্মীয় নিয়ম-কানুন আধুনিক যুগে প্রয়োগ বা প্রয়োগের প্রচেষ্টা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
দিগন্তের হিন্দু আইনের প্রসঙ্গে একটা মজার বিষয় মনে পড়ল ।
ধর্ম ত্যাগ করলেও ভারতের হিন্দু তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন ।
কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দু সেই ভাগ পাবেন না ।
ধর্ম ত্যাগ করার সাথে সাথে যে বাপ ত্যাগ করা হয় না বা নতুন করে বাপ বেছে নেয়া যায় না , এই কমনসেন্সটা আমাদের দেশের আইনপ্রনেতাদের কবে হবে ?
এটা তো মহা হাস্যকর আইন ... পৈতৃক সম্পত্তি কি দেবোত্তর সম্পত্তি ?
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
কদিন আগে একটা লেখা পড়লাম, আমার কাছে চমৎকার লেগেছে যুক্তিবিন্যাস।
প্রাকইসলামী যুগে নারীর সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার( উত্তরাধিকারী হিসেবে) সীমিত এবং ঐচ্ছিক ছিলো। নারী যদি সম্পদের মালিক অনুগ্রহ করে প্রদান করতো তবেই পিতৃ কিংবা স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকারি ছিলো । এ অবস্থা বদল এনেছে ইসলাম। এখানে নিয়মসম্মত ভাবে সম্পদে উত্তরাধিকারি হিসেবে নারীর ন্যুণতম পাওনাটা নির্দিষ্ট করা। এবং সেটা হলো পুরুষ উত্তরাধিকারীর অর্ধেক। এটা হক- মানে নারীর অধিকার। তবে অধিকারহরণ না করে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নারীকে এই প্রাপ্যের বেশী দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।
ন্যুনতমটা নারীর প্রাপ্য কন্যা হিসেবে, স্বামীর সম্পদেও নারীর অধিকার এই ন্যুনতম প্রাপ্যতাকে স্বীকার করেই।
এখানে যদি স্বামী ইচ্ছে করে তার স্ত্রীকে অধিক সম্পদ প্রদান করেন তাহলে আপত্তির কিছু নেই।
তবে নারী যদি বঞ্চিত হয় তবে সেটার জন্য ইহকালে দেওয়ানী আইনের ভিত্তিতে সম্পদের পুনারিধাক আইনে মামলা করে জিততে পারে-
এবং বিষয়টার সমস্যা হলো এই অর্ধেক এবং দ্বিগুনের হিসেবটাতে পারিবারিক সম্মতির বিবেচনা নেই- এখানে যদি পুত্র বিবেচনা করে তার বোনকে নিজের সমান পিতার সম্পদ প্রদান করে তাহলেও সেখানে ক্ষতি নেই। পূত্র সম্পদের অধিকার ছাড়বে কি না এটা একটা বড় বিবেচনা।
হিন্দুদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু জটিল, মানে মুসলীম শাসিত সমাজে ধর্মান্তরিত হিন্দু পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী নয়, এমন কি যদি কোনো হিন্দু নিঃসন্তান হিসেবে মৃত্যু বরণ করে তবে তার সম্পদ রাষ্ট্রীয় সম্পদ কিংবা খাস জমি হয়ে যাবে। হিন্দু মানুষটির কোনো ঔরসজাত উত্তরাধিকারি না থাকলে যেমনই হোক না কেনো রাষ্ট্রের কাছেই রয়ে যাবে তার সম্পদ।
আমরা আরও একটু এগিয়ে গিয়ে পিতার সম্পদে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারি হয়তো। এটাতে হয়তো পুরুষদের সামান্য বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়- কিন্তু সচেতনতার খাতিরে এটা মেনে নিতে কারো আপত্তি থাকবার কোনো কারণ নেই।
কিছুই বলার নাই......।
-নিরিবিলি
নতুন মন্তব্য করুন