'৯০ এর ডিসেম্বরের ৬ তারিখে যখন এরশাদ পতন ঘটল,আমরা তখন এসএসসি পরীক্ষার জন্য দিন গুনছি । ছোট্ট মফস্বল শহর,যেখানে কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররাই ডাকসাইটে ছাত্রনেতা,সেখানে হাইস্কুলের উঁচু ক্লাশের ছেলেরা ও তখন লড়াকু কর্মী ।
মনে পড়ে,৮৭ থেকে ৯০ এই সময়ের মধ্যে যখনই ঢাকা কিংবা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়েছে,পুলিশের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়েছে,কোন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন-সেই খবর মুহুর্তেই ঢেউ তুলতো রাজধানী থেকে অন্তঃত ৫০০ মাইল দুরের মফস্বলে ও । কলেজের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে আসতেন, স্কুলে বসে আমরা ও মিছিলের খবর পেয়ে যেতাম,ক্লাশ বন্ধ করে মিছিলে দৌড় । এরকম মিছিল থেকে একবার কোর্ট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল, আরেকবার কয়েকজন মিছিলকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে থানা আক্রমন করা হয়েছিল ।
দেড়যুগ আগের সেই সময়টাকে মনে পড়লো আজ, পত্রিকার পাতায় চোখ রাখার পর ।
সরকার প্রস্তাবিত নারীনীতি বিরুদ্ধে ঢাকায় মৌলবাদীদের তান্ডব,বায়তুল মোকাররম দখল,পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয়া এবং ঢাকার ঘটনার রেশ ধরে মাদ্রাসা ছাত্রদের হাটহাজারী থানা আক্রমন ।
গতবছর ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবিক্ষোভ হয়ে গেলো । সেই বিক্ষোভ কি কঠোর ভাবে দমন করা হলো,তার স্বাক্ষী সময় । শুনতে পাই,আন্দোলনকারী কয়েকজন ছাত্রের এখনো কোন খবর পাওয়া যায়নি । যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সেই শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর বর্বর নির্যাতনের কিছু বর্ননা ও আমরা শুনেছি । জরুরী অবস্থায় বিক্ষোভ করা বে-আইনি,তাই আইনের রক্ষকেরা পাশবিক উপায়ে আইনশৃংখলা বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছিলেন , কি আর করা । ৯০ এর দিনগুলোতে ও ক্ষমতায় জেনারেল ছিলেন,ছাত্র মিছিলে ট্রাক তুলে দিতেন,তার পেটোয়া বাহিনী সরাসরি গুলী করে ছাত্র হত্যা করতো । সময়ের হিসাবে ১৮ বছর খুব বেশী সময় নয় । কিন্তু বাস্তব হিসেবে আজকের বাংলাদেশ আর ১৮ বছর আগের বাংলাদেশে অনেক তফাত ।আজ ঢাকায় কি ঘটছে মুহুর্তে খবর মিলে যায় ধর্মপাশা কিংবা তাহিরপুরের গ্রামে । কিন্তু সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রহত্যা হলে তার খবর মিলতো পরের দিন । সেই পিছিয়ে পরা দিনে আন্দোলনের যে একাত্নতা ছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেগে উঠা মিছিল গিয়ে প্রবল ধাক্কা দিতো সিলেট-সুনামগঞ্জের কোন সীমান্ত শহরে অথচ আজকের প্রাগসর দিনে সেই একাত্নতা ,ছাত্র আন্দোলনের সেই তীব্রতা কি সত্যি আছে? গতবছরের ঢাবির ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে কতোটুকু আলোড়ন তুলেছিল?
তবে কি মুলধারার ছাত্ররাজনীতি তার শৌর্য্য হারাচ্ছে? এর পেছনে কি অন্য কোন পরিকল্পনা?
সন্দেহ তীব্রতর হয় কারন ঢাবির ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল তার সুপারিশের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলা হয়েছে ।
মুলধারার যে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যগতভাবে জলপাই বিরোধীতার প্রবনতা আছে তাকে নিস্ক্রীয় করে দিয়ে কি বিকল্প ছাত্ররাজনীতিকে প্রমোট করা হচ্ছে?
প্রথমে প্রথম আলোর কার্টুন তারপর নারীনীতির বিরোধীতার নাম করে মৌলবাদী ছাত্রসংগঠনগুলো জরুরী অবস্থা ভংগ করলো, তাদের কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো? কয়জন মাদ্রাসা শিক্ষককে রিমান্ডে নেয়া হলো? কোন তদন্ত কমিটি মাদ্রাসা ছাত্রদের রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করলো?
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি যদি সারাদেশকে নেতৃত্ব দেয় তাহলে জলপাই জেনারেলদের ক্ষমতা ছাড়তে হয় কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্ররাজনীতি যদি ঢাকা টু হাটহাজারী করায়ত্ত করে তাহলে জলপাই জেনারেলদের ক্ষমতার আসন আরো পাকাপোক্ত হয় ।
মন্তব্য
নাউজুবিল্লাহ! এ কী কথা বললেন? তওবা করুন!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কী যে করি! আবার ফোন করেছিল মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- আজকেই সন্ধ্যায় একজন ফোনে বললেন, "এই সরকার কী হুজুরদের ভয় পায় নাকি?"
কথাটার তাৎপর্য অনেক, ভেবেছি অনেক। সামনে-পেছনের কারণ গুলো ভাবলে গায়ে কাটা দেয়।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তবে ফটোটা ফাটাফাটি!!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
এই দুই নীতির ব্যপারটা আমার কাছে রীতিমতন রহস্যজনক লাগে!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এই দুই নীতি ভর্তি যে কেবলই দূর্নীতি... সেই দূর্ণীতি ঠেকায় কোন সে দুদক?
পোস্ট ভাল্লাগলো... তবে এইটা নিয়া ভাবাভাবির কিছু নাই... ইহাই এখন চরম সত্য... নতুন কইরা অনুধাবনের কিছু নাই... এখন দেশে কেবল তেনারা উনারা আর সেনারা... সেনাদের ক্ষমতার মাগফেরাত কামনা করেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি যদি সারাদেশকে নেতৃত্ব দেয় তাহলে জলপাই জেনারেলদের ক্ষমতা ছাড়তে হয় কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্ররাজনীতি যদি ঢাকা টু হাটহাজারী করায়ত্ত করে তাহলে জলপাই জেনারেলদের ক্ষমতার আসন আরো পাকাপোক্ত হয় ।
...মোক্ষম।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
সব ঠিক আছে, কিন্তু ১৯৯০ এর সময় থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে পরিবর্তন তো এসেছে। আপনি ভেবে দেখুন, আগের সরকারের আমলে কি এই ঘটনা ঘটতে পারত না? একটা কথা আছে নে ... "হঠাৎ বলা কথা হঠাৎ ভাবা নয়" ... এরকম আপনি যেটাকে হঠাৎ ঘটা ঘটনা ভাবছেন সেটা খুব ধীরে ধীরে ভিত্তি স্থাপন করেছে বাংলাদেশে। আমার ধারণা এখন থেকে মাদ্রাসা ছাত্র-রাজনীতি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-রাজনীতির সমান্তরাল একটা ধারা হয়ে যাবে আস্তে আস্তে ... দেখা যাক...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
একমত।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
মোল্লাদের এই মারমুখী তৎপরতার সময়টাও খেয়াল করা দরকার। আর দু'দিন পরে বাংলা নববর্ষের উৎসব।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
ইশ্বর!
সুপ্রিয় সুহৃদ: সবচেয়ে জরুরি কথাটাই কেউ বলছে না যে!নারীর সমঅধিকারের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িটুপিওলারাই কি শুধু আ্যন্টি? নারীনীতি নিয়ে জলপাই আসলেই কি ভাবছে জানা জরুরি কিন্তু।
হুজুরেরা ভাবে যে, সোভিয়েত সাম্রাজ্যই আমাগো লগে পাইরা উঠলো না, থার্ড ওয়ার্ল্ডের একটা দেশ আর কি করবো? মিডল-ইস্ট লবি তো আমাগো লগেই আছে...
একমত।
ঠিক এই কাজটাই করা হয়ে আসছে গত এক দশক ধরে। ইসলাম ভার্সাস সেকুলারিজমের দ্বন্দ্বকে আরো পাকা করে তার মধ্যে ফায়দা নেয়। আমরা যখন জানতে পারি না, কেন কোনটা কেন করছে? তখন একটা উপায় হল, কে এ থেকে লাভবান হচ্ছে আগে সেটা বের করা। লাভবান কিন্তু ইসলামওয়ালারা, এনজিওরা এবং এই সরকার তিনজনই হচ্ছে। এই তিনের বাজির দান নারী ও জনগণই সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সকালে পত্রিকার পাতায় ছবিটি দেখে দিনটাই জঘন্য হয়ে গেল।
আপনার সমীক্ষার জন্যে ধন্যবাদ!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভীষন একমত। জলপাই শাসনের অশনি সংকেত দিচ্ছে! তবে শেষ পর্যন্ত পারবে না। এখনও তো বাঙ্গালি আছে! দরকার শুধু চোখ ,কান খোলা রাখা।
সারা সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখাচ্ছিল এখাঙ্কার স্থানীয় টিভি (KCAL9 News) তে। হঠাৎ বাংলাদেশের নাম কানে যেতেই নড়ে চড়ে বসলাম। যা দেখলাম আর শুনলাম বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম। বলা হচ্ছে, "বাংলাদেশ সরকারের নব ঘোষিত নারীনীতিতে নারীদের সম অধিকারের বিরুদ্ধে সে দেশের মৌলবাদীরা পুলিশকে পিটিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানায়।" এরপর ই পাঠক বাংলাদেশে গত ৫ বছরের মৌলবাদীদের যে "সুকর্মের" ফিরিস্তি দিল তা দেখার মত।
সব ই জানা কথা কিন্তু ওদের মুখ থেকে যখন শুনলাম বেশ অবিশ্বাস্য মনে হলো। বর্তমান সরকারের ভুমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুললো। মজার ব্যপার হলো এরপর ই পারভেজ মোশাররফ এর সাথে তুলনা দিল। বাহ কি মিল!
জাফরী
নতুন মন্তব্য করুন