(সচলায়তনের সাম্প্রতিক প্রকাশনা-অণুগল্প সংকলন 'দিয়াশলাই' পুরোটা পড়া শেষ করলাম । প্রায় প্রতিটি গল্প আলাদা আলাদা আলোচনার দাবী রাখে,হয়তো সকলে মিলে সবগুলো গল্প নিয়ে এরকম আলোচনা জমে উঠতে ও পারে । আমি শুধু একটি গল্পের পাঠপ্রতিক্রিয়া জানালাম)
সংকলনের ঠিক শেষ গল্পের আগেরটি 'অস্তিত্বের অন্ধকার' । নামকরনের স্বার্থকতা আছে অবশ্যই, সেটা পাঠক পাঠ শেষে টের ও পাবেন তবু এই গল্পের এই নাম আমাকে তেমন আগ্রহী করে তোলেনা । কেনো? সে প্রশ্নের মেলেনা উত্তর!
প্রথম প্রায় এক তৃতীয়াংশ এক ছায়া-সমুদ্রের আবহ বর্ণনা । জমাট অন্ধকার-গাছপালা,হাসপাতালের কলতলা,চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব,মানুষ বা বস্তুর ছায়া তৈরী না হওয়ার অনুসংগ ।
শোহেইল মতাহির সিনেমা দেখেন,সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখেন,সিনেমার বানানোর কলাকৌশল প্রশিক্ষন নেন ।
তাঁর সিনেমাবাজী কি গল্পের উপর আছড় করে?
আবহ বর্ণনা শেষে হাসপাতালের প্রায় অন্ধকার কলতলায় প্রাণ পায় দুটো চরিত্র, গর্ভপাতের রক্তস্রাব পরিস্কার করা যাদের পেশা । সংলাপ থেকে ধারনা তৈরী হয় এদের একজন পুরুষ আরেকজন নারী । নারীটি তার পেশায় সহজাত নয়, এই কাজ ভালো লাগে না তার, তার কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় , সে বলে-
'ইস এই কাম করতে আর ভালো লাগেনা ।মনে হয় পলাইয়া যাই'
পুরুষ তখন বলে-
'যেই খানকীর জন্ম হইছে পাড়ায় তার আবার সতীপণা'
এইখানে এসে গল্পের ভেতরে আরেক গল্প টের পাওয়া যায়, আর সম্ভাবনা তৈরী হয় শোহেইল মতাহিরের হাতে এক স্বার্থক অণুগল্প জন্ম নেবার ।অণুগল্প তো সেই ঠাসবুনোটের কৃশ কাঠামো যা একই সাথে সমগ্রের শক্তি ও বিস্তারের সম্ভাবনা ধারন করে ।
গল্পকার ভাঁজের ভেতরের সে ভাঁজটুকু খুলতে কার্পণ্য ও করেননা । শোনা যায় আরেক জন্মবৃত্তান্ত- অনেকবছর আগে এই হাসপাতালেই রোগী রিলিজ হবার পর বেডে পাওয়া গিয়েছিলো কাঁথায় মোড়ানো এক নবজাতক ।
তাহলে 'পাড়ায়' জন্ম নেয়া 'খানকী' কে? নাকি মায়ের ফেলে যাওয়া অবাঞ্ছিত শিশুটির বড় হয়ে গর্ভপাতের রক্তস্রাব পরিস্কারের অনীহাকে 'পাড়ায় জন্ম নেয়া খানকীর সতীপণা'র সাথে তুলনা?
কিন্তু বিভ্রান্তি শেষ হয়না যখন শেষের দিকে এসে গল্পকার বলেন- 'নিজের জন্মবৃত্তান্ত আরেকবার শুনে নিয়ামত সারারাতের জন্য চুপ মেরে যায়'
ধোঁয়াশা তাহলে কেবল জন্মবৃত্তান্তেই নয় ,যে জন্ম নিলো তার লিংগপরিচয়ে ও? স্পষ্ট করে উল্লেখ না করলে ও পারস্পরিক সংলাপ ও উদাহরন ধারনা তৈরী করে 'পাড়ায় জন্ম নেয়া খানকী' অথবা ' ফেলে যাওয়া' শিশুটি নারী । অথচ শেষে এসে গল্পকার জানান তার নাম নিয়ামত
যে নিয়ামতের কাছে 'আলো দিয়ে অন্ধকার তাড়ায় ছবি আঁকা মায়ের কোলে শিশু' হাসপাতালের এই সাইনবোর্ডটাকে এক তীব্র পরিহাস মনে হয় । মা ও শিশুর মমতায় মাখামাখি এই ছবি দেখে নিয়ামত মাথা নাড়ে - মিছা ছবি,মিছা ছবি'
হায় এইরকম কতো মিছাছবির সাইনবোর্ডের ঝলকানির নীচে আমাদের যাপিত জীবনের ক্লেদ,অবসাদ ও বিবমিষা ।
'নিয়ামতের ইচ্ছা হয় চারপাশ থেকে অন্ধকার এনে সাইনবোর্ডটাকে লেপ্টে দিয়ে,কিন্তু অন্ধকারকে ধরার উপায়টা তার জানা নাই'
ঠিক এই জায়গায় এসে সবকিছু আসলে আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় । পাঠককে সংক্রমিত করার যে নিষ্ঠুর কৌশল লেখকের,আমি তা থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে পারিনা আর । নিয়ামতের বদলে ঐ আলো ঝলমল সাইনবোর্ডের নীচে আমি নিজেকে আবিস্কার করি । আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে 'অস্তিত্বের অন্ধকার' কিংবা 'অন্ধকারের অস্তিত্ব' । বহুদিন আগে পড়া সুনীল গাংগুলীর কবিতার একটা লাইন আমাকে হ্যামারিং করে
'রোদ্দুর মহৎ করে মন,আমার চাই ক্লান্ত অন্ধকার'
প্রিয় শোহেইল মতাহির,
ঠিক এই জায়গাতে এসে আপনি থেমে গেলেন না কেন? শেষের দু লাইনের উপসংহার কিংবা পরিনতি কি খুব জরুরী ছিল? পাঠক যে মুহুর্তে আক্রান্ত ঠিক সেই মুহুর্তে তাকে ছেড়ে দিন না কেনো এক সমাপ্তিহীন রহস্যময়তায়? সে তার নিজের মতো করে উপসংহার কিংবা পরিনতি সৃষ্টি করুক নিজস্ব ভাবনায় ।
সফল গল্পপাঠের যন্ত্রনা কিংবা আনন্দ তো এটুকুই ।
মন্তব্য
দক্ষ ক্রিটিক হাসান মোরশেদ-এর অণুগল্প পাঠ বেশ অনুসন্ধিৎসার জন্ম দিচ্ছে..এভাবে চলুক আরও গল্পের আলোচনা। ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
- বাহ্!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কঠিন! অসাধারণ! সাধু!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হাসান মোরশেদের আলোচনাটা ভালো হয়েছে।
'অস্তিত্বের অন্ধকার' গল্পটা একাধিকবার পড়েও আমার মধ্যে জন্ম নেয়া একটা ধন্ধ কিছুতে দূর করতে পারছি না, যে ধন্ধটা দেখলাম হাসান মোরশেদেরও। সেটা হলো, এখানে পাড়ায় জন্ম হওয়া খানকিটা আসলে কে?
আরেকটা কথা, চরিত্র দুটির মুখে যখন প্রথমবার সংলাপ চাপানো হলো তখন বলা হলো, 'এতদূর থেকে তাদের কথাবার্তা শুনতে না পারারই কথা। তবে তারা নিশ্চয়ই কথা বলছিল।' কিন্তু সংলাপ শেষে বলা হচ্ছে, 'তারপর আমরা কিছুক্ষণ আর কোনো কথা শুনতে পাই না।' এই বাক্য বলছে, আগে কথা শোনা গেছে, এখন শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু তা তো আসলে নয়। আমার মনে হচ্ছে, এখানে 'শোনা' ক্রিয়াটা অসতর্কতাজনিত।
গল্পের সমাপ্তি প্রশ্নে আমি হাসান মোরশেদের সাথে একমত। 'আর একারণেই......একা একা।' পর্যন্ত না থাকলেই গল্পটা বেশি জমত।
গল্পটা অনেক মনোযোগ দাবি করে। মানবজীবনের একটা ক্লেদকর অধ্যায়ের প্রতি পাঠকের ভাবনাকে উসকে দেয়। ধন্যবাদ 'বিগ সি'।
আচ্ছা 'বিগ সি'র ব্যাখ্যাটা যদি কারো কাছ থেকে জানতে পারতাম তো ভালো লাগত। এতদিনেও ব্যাপারটা ঠিক বুঝি না, কেবল জানি যে শোহেইল মতাহির চৌধুরীকে এ নামে ডাকা হয়। (সঠিক বানান কোনটি-- মোতাহির না মতাহির? সূচিতে মতাহির লিখলেও গল্পের শেষে তো দেখলাম মোতাহির লেখা হয়েছে।)
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
আমারও তাই হয়েছে
একেবারে পাটিগণিত করার মতো বারবর মিলিয়ে দেখতে হয়েছে
কোনটা কে?
প্রথমবার ভাবলাম বোধহয় প্রিন্টিং মিস্টেক। নামে গড়বড় হয়েছে
পরের বার ভাবলাম প্যারা উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে বোধ হয়
আর সব শেষে দেখলাম- না
এটা একটা পরিচয়ের পাটিগণিত
কথাটা মোরশেদ ভাই অন্যভাবে বলেছিলেন অন্য পোস্টে, অনেকদিন আগে। মাথায় গেঁথে আছে।
এরকম আরো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানতে-পড়তে আগ্রহী।
ধন্যবাদ।
গল্পটার এই তৃমাত্রিকতা আমাকেও বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল।
- নিয়ামত কি ছেলে না মেয়ে?
- পাড়ায় জন্মানো মানুষটির অধিকারের বচসার প্রকৃত মানে কি?
- আর এই ২টি গল্পকে মাতৃত্ব দেওয়া পুরো গল্পটি।
সবই অসাধারণ! সঙ্কলনে আমার ভালোলাগা গল্পগুলোর একটি এটি।
সুন্দর পোস্টটির জন্য সাধুবাদ দিতেই হবে আপনাকে মোরশেদ ভাই।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
এ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার জন্য হাসান ভাইকে শুভেচ্ছা। আমরা যারা টুকিটাকি লেখার চেষ্টা করি তাদের জন্য এসব বিশ্লেষণ ধর্মী পোস্ট সবচে' দরকারি।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
অমিত আহমেদের সাথে একমত। শুধু দারুণ একটি অণুগল্পের অসাধারণ ব্যবচ্ছেদই নয়, পোষ্টের বিশ্লেষণী বক্তব্যে উপকৃতই হয়েছি। সচলে এই চর্চাটা বেশি বেশি হওয়া উচিত।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
কৃতজ্ঞতা সকলে ।
আমি শুরু করলাম একটা গল্প দিয়ে । বাকীগুলো নিয়ে ও আলোচনা-প্রতিআলোচনা উঠে আসুক আপনাদের লেখায় ।
গল্পকার জনাব চৌধুরী সময় করে একবার এই পোষ্টে দর্শন দিলে বোধ হয় আমরা সকলে কৃতার্থ হতাম ।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মোরশেদ, আপনি যখন এই মন্তব্য করছেন তখন আমি নিচের মন্তব্যটা লিখছি।
আশা করি মন্তব্যটা আপনার চোখে পড়বে।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
হাসান মোরশেদ-কে বিরাট করে একটা ধন্যবাদ।
সচলায়তন লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চার একটা কেন্দ্র হয়ে উঠছে। বাকী অণুগল্পগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।
এবার পোস্টে ও মন্তব্যে উল্লেখ করা কিছু জিজ্ঞাসার জবাব দিতে হয়:
গল্পের নামটা হাসান মোরশেদের কাছে ভালো লাগেনি। আমারও না। তাড়াহুড়ায় নামটা নিয়ে, গল্প লেখা শেষ হয়ে গেলে আর কিছু ভাবি নাই। নামটা খুব খুব পুরানা ধাঁচের হয়ে গেছে। একটা প্রবন্ধের শিরোনাম-মত নাম দেয়া যেত। অথবা 'ম্যাটানির্টি ক্লিনিকের সাইনবোর্ডের যত অন্ধকার'। কিংবা আলো-অন্ধকারের যাওয়া-আসা। নাহ্ এই কাজটা সম্পাদকদের হওয়া উচিত। কবি আসাদ চৌধুরীর মুখে শুনেছিলাম তার বেশিরভাগ কবিতার শিরোনাম নাকি সম্পাদকদের দেয়া।
মোরশেদ গল্পটির বর্ণনাভঙ্গি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অনুচ্চ একটা প্রশ্ন করেছেন যে সিনেমাবাজি কি গল্পলেখায় প্রভাব ফেলে?
এর উত্তরটা হ্যা।
ছবি দিয়ে গল্প বলার কৌশলটা মাথায় থাকে সারাক্ষণ। সুতরাং নির্ভেজাল সাহিত্যে ভাষা-বাক্য-শব্দের যে খেলা তার জটিলতা ভেঙে আমি পাঠকদের জন্য একটা স্পষ্ট দৃশ্য ধরতে চাই। এই পদ্ধতিতে সাহিত্যমান ক্ষণ্ণ হয়, এ আমি মানি। কারণ যা কিছু দেখা যায় না, চরিত্রের ভেতরের হাসি-কান্না তার বর্ণনা থেকে লেখক বিরত থাকেন।
তবে বিকল্প হিসেবে আমি আবহটা তুলে ধরতে চেষ্টা করি। যেন ভেতরটাই দেখা যাচ্ছে বাইরের দৃশ্যে। গল্পের ছায়া-সমুদ্র, দূরের আলোকবিন্দু, কলতলায় হাত-পা ধোয়া এসবের বর্ণনা বা দৃশ্য আসলে চরিত্রগুলোর দেখা-অসম্ভব মনের ভাবনাগুলোর বিকল্প চিত্রায়ন।
ঠিক এই কারণে গল্পকারের বর্ণনা দিয়ে শেষ না করে আমি দর্শকের চোখের সামনে একটা দৃশ্য রাখতে চেয়েছি। একটা আলো ঝলমল মা-শিশুর ছবিসহ সাইনবোর্ড আর তার নিচে দাঁড়ানো বিমর্ষ এক শিশু। তবে এই দৃশ্যটাকে দুই বাক্য আগে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া যায়।
কিছু রহস্যময়তা আছে গল্পটির মধ্যে। এ একশতভাগ পূর্ব পরিকল্পিত। এ নিয়ে আলোচনা করার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
মুজিব মেহদী কথা শোনার অসতর্কতা নিয়ে একটা প্রশ্ন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তিনি সতর্ক পাঠক।
তবে আমি অসতর্ক ছিলাম না বলেই মনে পড়ে।
দূরে অন্ধকারে দুটি চরিত্রের না শোনা যাওয়া কথার বর্ণনা দিতে পাঠককে আমি বলেছিলাম চলুন নিজেরাই সংলাপ সাজাই। এই ভঙ্গিতে আমি তাদেরকে সংলাপ শুনতে লিপ্ত করি।
সংলাপ শেষ হওয়ার পরও আমি তাদেরকে গল্পে রাখতে চাই, তাই তাদের আর বলি না যে, আমাদের বোধহয় আর সংলাপ বানানোর খেলা খেলার দরকার নাই, কারণ তারা হেঁটে হেঁটে এদিকেই আসছে...।
তবে মুজিব মেহদী সতর্ক পাঠক। তিনি গল্পে প্ররোচিত না হয়েই চালাকিটা খেয়াল করেন।
আজ এখানে শেষ করি।
অন্যান্য গল্প নিয়ে আলোচনায় বাকী কথাগুলো হবে।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন