গল্পের খুঁটখাট ও আইপড সমাচার

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৬/২০০৮ - ৮:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছু কাজ এবং অনেকটুকু অকাজের চাপে সুযোগ হয়ে উঠছেনা নতুন কিছু লেখার,এমনকি অন্যদের লেখা পড়ার ও । পুরনো লেখা পড়ার অবকাশ তো নেই ই ।

সচলায়তনের একেবারে শুরুতে ২০০৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিনে একটা গল্প প্রকাশ করেছিলাম ।
তক্ষক

প্রায় বছর ঘুরে এলো । ৫মে তারিখে একজন অতিথি মন্তব্যকারী ঐ পুরনো লেখা খুঁজে বের করে মন্তব্য করেছেন । । একটু অনিয়মিত বলে ঐ মন্তব্যটা ও আমার চোখ এড়িয়ে যেতো কিন্তু আরেক সুহৃদ ব্লগার ব্যক্তিগত ম্যাসেজে জানালেন মন্তব্য বার্তা ।

বেশ আগ্রহ নিয়ে ঐ মন্তব্য পড়লাম


ovaga লিখেছেন:
জেলাশহরে ইন্টারভিউ দিতে আইপডঅলা যায়... হাসান মোরশেদের কাছ থেকে এটা আশা করিনি।


গল্পের এক তরুন যে ট্রেনে চড়ে জেলাশহরে যাচ্ছে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে । ঐ ট্রেনের মধ্যেই গল্প শুরু এবং শেষ । ট্রেন যাত্রায় কখনো সে সাথে থাকা কবিতার বই খুলে ইতস্ততঃ কবিতা পড়ছে কখনো আইপডে গান শুনছে ।

সম্মানিত পাঠকের আপত্তি এই আইপড বিষয়ে । তাঁর মন্তব্যে বুঝা যাচ্ছে গল্পকারের কান্ডজ্ঞানহীনতায় তিনি আশাহত হয়েছেন ।

এতোদিন পর খুঁজে গল্পটা পড়ার জন্য এবং তার মতামত স্পষ্ট করে জানানোর তার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা ।
সেই সাথে যথেষ্ট কৌতুহল হচ্ছে আমার ।

আজকের বাংলাদেশে চাকরীপ্রার্থী একজন তরুনের নিজস্ব আইপড থাকা কি আসলেই অবাস্তব? আমি যখন দেশে ছিলাম তখনো আইপড বাজারে আসেনি । এবার দেশে গিয়ে কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া ছোট ভাইবোনদের দেখেছি নতুন মডেলের মোবাইল কিংবা একটা আইপড ওদের জন্য খুব দূরের কিছু নয় ।

নাকি আইপড থাকাটা অবাস্তব নয়, আইপড ওয়ালা তরুনের জেলা শহরে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাওয়াটা অবাস্তব?

ধরে নিচ্ছি রাজধানী ঢাকা থেকে সেই তরুন ট্রেনে চড়ে যাচ্ছে সিলেট/চট্রগ্রাম/কুমিল্লা শহরে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে । জেলা শহরের চাকরী মানেই কমপয়সার স্কুল মাষ্টারী-এরকমই কেনো ভাবতে হবে? আজ থেকে বছর আটেক আগেই তো আমরা পাঁচ অংকের মাসোয়ারায় চাকরী-বাকরী করেছি, এখন নিশ্চয় সেই অংক আরেকটু স্বাস্থ্যকর হয়েছে ।

না, আমি মোটেও আমার লেখা কিংবা আমার লেখারে চরিত্রকে ডীফেণ্ড করতে চাচ্ছিনা ।

আসলেই বুঝতে চাচ্ছি-দেশের বাইরে থেকে দেশের গল্প লেখা রিস্কি হয়ে যাচ্ছে কিনা?

ঠিক এরকম উপকরন নিয়ে সহ-ব্লগার নিঘাত তিথি'র একটা পোষ্ট পড়েছিলাম ক'দিন আগে ।
হায়,তখন কি আর জানতাম আমি নিজেই এর টেস্ট কেস হয়ে গেছি মন খারাপ


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আইপড বাংলাদেশে আসলেই এক্সপেন্সিভ ... খুব বেশি মানুষের থাকে না ... তবে সস্তা চাইনিজ মোবাইলেও আজকাল গান শোনা যায়, এফএম থাকে, নর্মাল পোলাপান এইগুলি বেশি ইউজ করে ... আর আইপডের মতই দেখতে কিছু এম্পিথ্রী প্লেয়ার অনেক ব্যাবহার করে, বাট সেগুলিও চাইনিজ, দেড় দুই হাজার বা আরো কমে পাওয়া যায় ...

আইপড নিয়ে ইন্টারভিউ দেয়া মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে হাসি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ক্লারিফিকেশনের জন্য ধন্যবাদ ভ্রাতঃ কিংকং
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

বন্ধু হাসান, মন্তব্যটা আমার ছিল (তখন নিজনামে না লেখার ব্যাখ্যায় যাচ্ছিনা)।

প্রথমেই বলি, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ইন্টারভিউ ছাড়া আমাদের দেশে চাকরীর ইন্টারভিউর ব্যাপারটা অন্য অনেক কিছুর মতোই রাজধানীকেন্দ্রিক। নেহাত পূর্ণ ও আধা সরকারী দপ্তরের ক্ষুদ্র(তুচ্ছ নয় মোটেই) কিছু পোস্ট আর এনজিও'র মাঠকর্মীর ইন্টারভিউ ছাড়া। সেখানেও "স্থানীয়ত্ব" বিবেচ্য। (আর আইপডঅলা এমন দুরবস্থায় পড়বে কেন)! আর হ্যাঁ, হাতেগোনা কিছু "সম্পন্ন" জেলা, যেমন আপনার দেখা সিলেটে আছেন কিছু নিয়োগকারী, সেখানেও স্থানীয়ত্ব অপরিহার্য। অর্থাৎ জার্নির বিষয়টা হয়তো আসেনা। এটাই ভেবেছিলাম। (আপনার কথামতো চট্টগ্রামকে হিসেবে আনিনি; বিভাগীয় শহর, বন্দরনগরী বা বাণিজ্যিক রাজধানীকে জেলাশহর ভাবতেই পারিনা)।

শেষ ক'বছর জেলাশহরে কাটিয়ে, সেখানকার অনেক ইন্টারভিউ বোর্ডে থেকে, এবং এখনো ঢাকা থেকে শাল্লায় কাজ করা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে, হালঅবস্থা হয়তো কিছুটা জানি বলে ভেবেছিলাম। আমার জানা ভুল হয়ে থাকলে মার্জনা করবেন। তবে এ প্রসঙ্গে না বলে পারছিনা, সিলেটের তুলনা আর কারো সঙ্গে চলেনা। ছোট্ট একটা উদাহরণ; সিলেটে আমি(ক্ষুদ্র দফতরকর্তা) অধিকাংশদিন রিকশায় চড়ে যেতাম অফিসে, সহকারী থেকে ছোকরা উমেদার সবাই নিয়মিত নিজস্ব দামী গাড়ীতে হাসি

মন্তব্যটা আবার দেখতে অনুরোধ করি। আপনার লেখা তো একযুগ আগেও দেখেছি, তাই সামান্য অবাক হয়েছি এই যা।

পুনশ্চ: কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাইকে ধন্যবাদ দাম বিষয়ক তথ্যের জন্য। জেলাশহরে চাকরি করে এসবের দাম জানারও আগ্রহ তৈরি করতে পারিনি; সঙ্গতি আর বাজারদরের হাল এমনই ছিল। অবশ্য ইন্টারভিউটা রাজধানীতে দিতে হয়েছিল ...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঠিকাছে ।
বন্ধু নুশেরা কেনো নিজ নামে মন্তব্য করলোনা সে ব্যখ্যা না হয় নাই দাবী করলাম ।
মন্তব্যের পুরোটা পুরোপুরিই ঠিক ।

তবে

এ প্রসঙ্গে না বলে পারছিনা, সিলেটের তুলনা আর কারো সঙ্গে চলেনা। ছোট্ট একটা উদাহরণ; সিলেটে আমি(ক্ষুদ্র দফতরকর্তা) অধিকাংশদিন রিকশায় চড়ে যেতাম অফিসে, সহকারী থেকে ছোকরা উমেদার সবাই নিয়মিত নিজস্ব দামী গাড়ীতে হাসি

এই অংশে একটু আপত্তি রেখে গেলাম । বাইরের ঝলকটুকুতে বিভ্রান্ত না হলে টের পাওয়া যায় শহর সিলেট এখনো মুলতঃ মধ্যবিত্তদেরই । চাকুরীজীবিদের সংখ্যা ও কম নয় । জানিনা সিলেটের কোথায় চাকরীর অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার(নূশেরা সিলেট গেলো অথচ জানলাম না কেনো?-সে ব্যখ্যা ও দাবী করছিনা হাসি )
একটি বিদেশী কোম্পানীর শাখাব্যবস্থাপক হয়ে ও আমাকে ও কিন্তু রিক্সাতেই চলতে হতো

যা হোক এইসব ভিন্ন প্রসংগ ।

খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে বং স্পষ্ট করে মতামত জানিয়ে আপনি মনে করিয়ে দিলেন একযুগ আগে ও আমরা একরমই ছিলাম ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

ভাগ্য ভাল, ঢুকেই আপনাকে পেলাম। আসলে যেটা বলতে চেয়েছিলাম... বাস্তবতা বা ব্যতিক্রমের যুক্তিতর্কের চেয়েও অনেক দূরের কিছু... সেটা আপনি বুঝবেন, সে বিশ্বাস থেকেই মন্তব্যটা করেছিলাম। আমার বিশ্বাসের এরচেয়ে বেশী মূল্য আশা করিনি। কৃতজ্ঞতা, বন্ধু।

অতিথি লেখক এর ছবি

নুশেরা তাজরীনের সাথে সহমত। বিষয়টা রেয়ার কেস। তবে হাসান মোরশেদের ঐ চরিত্রটাও একটা রেয়ার কেস হতে পারে।

পরশ পাথর

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

'তক্ষক' আবার পড়লাম।
গল্পের বিষয় বিবেচনায় জেলা শহরে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া ছেলেটির কানে আইপড থাকা না থাকা খুব জরুরী কোনো বিষয় নয়।
এর অতি বাস্তবতা বা অতি কল্পনা গল্পের হানি ঘটায় বলেও মনে হয় না।

তবে খুটিনাটিতে লেখক কিংবা পাঠক একেবারে সুক্ষ্মতম শুদ্ধতায় পৌঁছতে চাইলে, আমি বলবো - আইপড কানে থাকা অস্বাভাবিক নয়।

প্রতীতির সাথে শরীরি প্রেম সাথে কবিতার বই ও লোপামূদ্রার গান দিয়ে যে চরিত্র সাজানো হয়েছে, তার কানে আইপড থাকতে পারে।
কথা হলো, জেলা শহরে এ কানে-আইপড কতোটুকু বাস্তব।
আমি বলবো - খুব বাস্তব।
৩ মাস আগেও দেখে এসেছি এম-এম রেডিও'র কল্যাণে এখন কিশোর তরুণদের দুই কানের পথ আঁটকানো।
এ দৃশ্য ঢাকা শহর পেরিয়ে কুমিল্লা-চান্দিনা-ফেনী-চিটাগাং বাস ভ্রমণে জানালায় বসে দিব্যি দেখেছি।
টংগী-আশুলিয়ার পথ না-ই বা বললাম।

গল্পটি লেখা হয়েছে ২০০৭ এ।
আমি ২০০৫ এর অক্টোবরের শেষের একটা উদাহরণ দিই।
আমার খালাতো ভাই ইয়ার-প্লাগ লাগিয়ে হাবিবের গানে মত্ত দিনরাত।
মফস্বলে কলেজ পড়ুয়া এই কিশোর পারিবারিকভাবে অঢেল টাকা-পয়সা হাতে পায়নি। কেবল শখের বশে (ঈদের সেলামি, টিউশনি কিংবা এরকম উৎসের টাকা জমিয়ে) এ জিনিশ কিনেছে।
এ উদাহরণ ব্যতিক্রম নয়, বরং এখনকার বাংলাদেশ বাস্তবতায় অহরহ। আর বেকারের হাতে এক্সপেনসিভ আইপড কেনো এলো সে প্রশ্ন আসলে আমি পাঠক হিসাবে ভেবে নিবো - লন্ডন-সিডনী-সিংগাপুর-ব্যাংকক-কুয়েত-কিংবা অন্য কোনো দেশে থাকা খালাতো-মামাতো-ফুফাতো-চাচাতো ভাই অথবা বোন অথবা বোনের জামাই পাঠিয়েছিলো এই জিনিশ ।কিংবা গতবছর দেশে ঘুরতে এসে তাদেরই কেউ একজন ২ বছরের পুরনো আইপড দিয়ে গেছে বেকার/ছাত্র এই তরুণের হাতে। এরকম অনেক সম্ভবনা থাকতে পারে। ছোটোগল্পে যার ডিটেইল দরকার আছে বলে মনে হয় না।

এসব চিন্তা করেই বলি - তক্ষকের নায়কের কানে আইপড বেমানান নয় মোটেও।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখা এবং আলোচনা না পড়ে আপনি ইচ্ছামতো কমেন্ট করেন, আবার প্রমাণ হলো। চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখা এবং আলোচনা না পড়ে থাকলে আপনি যে বলে ফেলেছেন সেটা বুঝলাম কী করে? তাছাড়া, নিচে যে কমেন্টখানাও করলাম সেটা কি জান্নাতুল ফেরদৌস হইতে ধরাধামে পতিত হইলো!

আপনে হুদাই খালি আমারে সন্দেহ করেন মওলানা সাব। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ঝরাপাতা এর ছবি

হুম... সেই প্রতীতীকে খোঁজা। আমার কাছে আইপড থাকাটা অবাস্তব কিছু মনে হয়নি।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হিমু এর ছবি

মোবাইল ফোন বা আইপড বাংলাদেশে একটি বয়সশ্রেণীর কাছে রীতিমতো আরাধ্য বস্তু। পুরনো মডেলের মোবাইল নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সামনে মুখ দেখানোর সমস্যা অনেকেরই আছে। ময়ূরের যেমন পেখম, বেবুনের যেমন লাল পশ্চাদ্দেশ, আমাদেরও তেমনি মোবাইল। এথোলজির আঙ্গিকে এই মোবাইল প্রদর্শনপ্রিয়তাকে মেট সিলেকশনের একটা অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়। শুধু কথা বলার জন্যে বা ইন্টারনেটের সুবিধার জন্যে কেউ দামী মোবাইল কেনেন না, মোবাইল যত না বেশি ব্যবহারের, তারচেয়ে বেশি প্রদর্শনের বস্তু। আইপডের ক্ষেত্রেও কথাটি আংশিক সত্যি, যে কারণে সস্তা এমপিথ্রিপ্লেয়ারের চেহারাও আইপডের ছাঁচে তৈরি করা হয়। আর দশজনকে দেখানো যে, এই দ্যাখো, আমি হেলাফেলার পাত্র নই, আমার অমুক কোম্পানির তমুক মডেলের একটি মোবাইল আছে, এবং আমি আমার সিংহভাগ সময় এই মোবাইলে মিসড কল, এসএমএস, প্রকৃত কল কিংবা গেমস নিয়ে ব্যয় করি, কিংবা আমি শৌখিন মানুষ, চলতে ফিরতে হাউকাউ না শুনে এমপিথ্রিপ্লেয়ারে গান শুনি। আমি আর দশজন আবুল-কুদ্দুস-সোলায়মানের চেয়ে ভিন্ন, উঁচুদরের মানুষ, আমাকে ভয় পাও হাসি!

তবে এই মোবাইলক্রীড়া কিংবা আইপডমগ্নতা বোধহয় এখনও যাত্রাপথে আমাদের চিরাচরিত সামাজিক যোগাযোগকে সেভাবে ব্যাহত করেনি। দীর্ঘ বাস বা ট্রেনযাত্রায় পাশের বা সামনের সীটের মানুষদের সাথে আলাপ ক্ষুণ্ন হওয়া বোধহয় এখনও শুরু করেনি। আমি কোথাও ট্রেনে বা বাসে করে দিনের বেলায় গেলে সাধারণত সাথে বই নিয়ে যাই, ট্রেনে গেলে উল্টোসীটের মানুষদের সাথেও কিছুক্ষণ পর টুকটাক গল্প শুরু হয়ে যায়। এর আগে ইয়োরোপে এসেও এর ব্যতিক্রম পাইনি, অচেনা সহযাত্রীদের সাথে ভাঙা জার্মানে আলাপ জমে গেছে। এবার এসে দেখেছি, সবাই কানে একটা প্লাগ গুঁজে দিয়ে এক একটা দ্বীপ হয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশেও এই দ্বীপমুখীনতা হয়তো শুরু হবে কিছুদিন পর, যেখানে গল্পের মানুষেরা কানে অর্ণব-হাবিব-ফুয়াদ-মিলা-আনিলা-তাহসানকে বহন করে সামাজিক যোগাযোগের কপাট বন্ধ করে চলাফেরা করবেন প্রতিদিন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মানুষের প্রতি মানুষকে নিরাবেগ ও ভাবলেশহীন বানিয়ে ফেলার এইসব বাহারী আয়োজন দেশে গিয়ে ভালোই দেখেছি, শুনেছি এসবই নাকি এখন উন্নয়ন,আধুনিকতা,স্মার্টনেস
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

প্রসংগান্তরের আলাপ দেখি ভালই জমেছে!

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৌরভ এর ছবি

আমার কাছে বেমানান মনে হয়েছে।
নুশেরা আর কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের সাথে খানিকটা একমত।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাঠক নমস্য ইশ্বর হাসি
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মামুনুর কবির পাভেল এর ছবি

মন্তব্য,পাল্টা মন্তব্য, প্রসংগান্তরে ঘুরে ঘুরে মূল গল্পটা না পড়ে পারলাম না । ওখানে করা ( মুল গল্পে ) সুমন রহমানের মন্তব্যই সব চেয়ে যুতসই মনে হলো । গল্পের সমস্যা তো আইপডে নয়, সমস্যা যদি থাকেই কিছু সেটা পুরো গল্পের নির্মান ও বিন্যাসেই আছে ।
গল্প ছোট হলেই ,দুর্বল গল্প ; তা বলছি না । কিন্তু ফিচার অথবা ফুটনোটের সন্গে গল্প নামের দুর্দান্ত শিল্পপ্রকরনটির ব্যবধান তো বিস্তর । গল্প অনেক বেশী (সুমন রহমানের ভাষায়ই বলি ) ঘনত্ব দাবী করে , দীর্ঘত্ব না করলেও ।

পাভেল কবির

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাভেল কবির,
মন্তব্য অনুসরন করে মুল গল্প পড়ে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা ।
এ ক্ষেত্রে দীর্ঘত্ব পরিমাপযোগ্য তবে ঘনত্ব অনেকটাই আপেক্ষিক । ।
লেখক হিসেবে আমি আমার ইচ্ছেমতন লিখে যাই কেবল । ঘনত্ব পরিমাপ করা কিংবা ব্যাকরন শিখে লেখালেখি আমার কাজ নয় ।

লেখার ঘনত্ব কতোটুকু হলো সেটা পরিমাপ করবেন পাঠক এবং পাঠকের নানামুখী ভিন্নতার কারনে পরিমাপের ফলাফল ও ভিন্ন হয় ।

তবে লেখকের দায় হলো তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা । গল্পের গরু গাছে উঠিয়ে দিলে তো হয়না । কোন পাঠক যদি ব্যবহৃত কোন তথ্যে আপত্তি জানান সেটা পুনরায় বিবেচনা করতে দোষ কি?
সে কারনেই বন্ধু নূশেরার আইপড সংক্রান্ত মন্তব্যকে ঘিরে এই আলোচনা ।

ভালো থাকুন

-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

-কানেগুজা আইপডটা যে চাকরিপ্রার্থী যুবকের নিজের টাকাতেই কেনা হতে হবে, এমন কেনো?

এমন কি হতে পারে না, যে সেই যুবকের ভাই, ভগ্নি, মামা, চাচা, খালু, ফুফা কেউ বিলেত-আমেরিকা-দুবাই কিংবা ইয়োরোপ ফেরত। তারাই শখ করে যুবকের জন্য আইপডটা নিয়ে এসেছে। উপহার পাওয়া সেই আইপডটাই সার্বক্ষণিক সাথী যুবকের। জেলাশহরে চাকরীর ইন্টারভিউতে যাবার যাত্রাকালীন একঘেয়ে সময় কাটানোর জন্যই সেই আইপডটা সাথে করে নিয়ে গেছে সে। এতে স্বাভাবিকতা আর অস্বাভাবিকতার কী আছে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জি.এম.তানিম এর ছবি

ঘটনা সত্য, রিসেন্টলি মামার জোরে একটা আইপড হস্তগত (নাকি কর্ণধার) হইসে... এখন বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আর আড্ডাতে বন্ধু, কলিগ আর আত্মীয়দের চোখের বিষ এইটা দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক,আইপডওয়ালা একজন পাওয়া গেছে কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি জেলা শহরে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাবেন কিনা?
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

কী এক গ্যাঞ্জামে ফেললাম হাসানকে!
জেলাশহরযাত্রা, ইন্টারভিউ, আইপড, আর লেখক হাসান মোরশেদ- এই চারটিই আমার বিবেচনায় ছিল, শুধুমাত্র আইপড না (সূত্র: মূল মন্তব্য)। লেখক বন্ধু হাসান না হলে ওই মন্তব্যই করতাম না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরে না!
গ্যাঞ্জাম হলো বলেই না এতো গ্যাঁজানো হলো হাসি
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আইপড কেনো সে হেলিকপ্টার নিয়েও ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারে, যদি সেই অবস্থা গল্পে সৃষ্টি করা যায়। কথাটা অন্যরা বলেছেন।
আলোচনাটা ভাল লাগলো।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুজিব মেহদী এর ছবি

বেশ সমৃদ্ধ আলোচনা। ঋদ্ধ হলাম।

আলোচনায় এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে চাকুরিপ্রার্থী আইপড নিয়ে জেলা শহরে পরীক্ষা দিতে যেতে পারে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মামুনুর কবির পাভেল এর ছবি

যদি সেই অবস্থা গল্পে সৃষ্টি করা যায়।

ফারুক ওয়াসিফের এই কথাটা ই বলবার ছিলো আমার । অন্যরা যেখানে , আইপড থাকা উচিত কি অনুচিত এই নিয়ে বাতচিতে ব্যস্ত, তখন আমার বিষয় ছিলো : গল্প, তার নির্মাণ এবং কৌশল।

জনাব হাসান মোরশেদ,আপানর মন্তব্যেরই একটা উদ্ধৃতি দিই
ব্যাকরন শিখে লেখালেখি আমার কাজ নয় আমার বিনীত জিজ্ঞাসা , তো কি শিখে লেখকরা লেখালেখি করেন তবে ? সাহিত্য তো সব বিচারেই একটা ফর্ম আর সুত্রের ভেতর দিয়েই যায়, তা যতো বেশি নিরীক্ষাপ্রবণ লেখায়ই হোক ।
শুধু তথ্যের সত্যতাই নয়, একটা লেখার যাবতীয় শক্তিমত্তা বা দুর্বলতার দায়ও তো লেখকেই নিতে হয়, না কি ? শেষ বিচারে তো তথ্য নয়, বিচার্য বিষয় গল্পকারের ভাষা,ভঙ্গি,সর্বোপরি নির্মাণ কৌশল । লেখক তার স্বাধীনতা নেবেন, তাতো বটেই । কিন্তু তিনি কোন একটা লেখা লিখে বলে দিলেন, " ঘনত্ব আপেক্ষিক বিষয় " । তো,যুগ যুগ ধরে সাহিত্যের উত্তীর্ণ,উত্কৃষ্ট লেখাগুলো আলাদা করা হলো কি করে তবে ? একটা গড়পরতা মান তো সব সাহিত্যেই বিরাজমান ।

ভালো থাকুন ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জনাব হাসান মোরশেদ,আপানর মন্তব্যেরই একটা উদ্ধৃতি দিই
ব্যাকরন শিখে লেখালেখি আমার কাজ নয় আমার বিনীত জিজ্ঞাসা , তো কি শিখে লেখকরা লেখালেখি করেন তবে ? সাহিত্য তো সব বিচারেই একটা ফর্ম আর সুত্রের ভেতর দিয়েই যায়, তা যতো বেশি নিরীক্ষাপ্রবণ লেখায়ই হোক

জনাব পাভেল বিনীত উত্তরে বলি, ঐ সব শিখে টিখে সাহিত্যের অধ্যাপক হওয়া সম্ভব,লেখক হওয়া সম্ভব নাকি? আর সাহিত্য কোন বিচারেই ফর্ম বা সুত্রের ভেতর দিয়ে যায়না বরংসাহিত্যই ফর্ম বা সুত্র সৃষ্টি করে ।
মার্কেজের কোন কথায় পাইনি যে,বেচারা আগে যাদুবাস্তবতা শিখে তারপর গল্প লিখতে বসেছেন । তার লেখাকে পাঠক ও সমালোচকরাই এরকম ক্যাটাগরাইজ করেছেন ।

তো,যুগ যুগ ধরে সাহিত্যের উত্তীর্ণ,উত্কৃষ্ট লেখাগুলো আলাদা করা হলো কি করে তবে ? একটা গড়পরতা মান তো সব সাহিত্যেই বিরাজমান ।

এই গড়পড়তা মানটা কে নির্ধারন করলো,কিসের ভিত্তিতে? আমি ও তো জানতে চাই এই 'উত্তীর্ন,উৎকৃষ্ট' যাচাই হলো কি প্রকারে?
রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের ইশ্বর হয়ে আছেন, কিন্তু তার উপন্যাসকে অন্য একজন পাঠকের কাছে 'ফালতু' মনে হতেই পারে-এক সময়ে সুবিমল মিশ্র পড়ে আমরা কেউ কেউ নেশাতুর হয়েছি একই সময়ে বৃহৎ পাঠকের কাছে হুমায়ূন আহমেদই কথিত 'উত্তীর্ন,উৎকৃষ্ট' বিবেচিত হয়েছেন?

তো? গড়পড়তা মান দাঁড়ালো কোথায়?

-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অয়ন এর ছবি

সমস্যাটা মনে হয় স্টেরিওটাইপিংএ। আমরা ধরেই নেই জেলা শহরে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া বেকার যুবকদের আইপড থাকতে নেই। কারণ তার বাবা মারা গেছেন, মা অতি কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। কাজেই এমন ছেলের আইপড থাকা নিতান্ত বাহুল্য।

সাহিত্যে স্টেরিওটাইপিং না থাকলেই ভালো লাগে।

রায়হান আবীর এর ছবি

আইপড নিয়ে বিরাট আলোচনা। গল্পটা পড়ার সময় আমারও একটু খটকা লেগেছিল। তার কারণ আমি নিজে বুঝি আইপড কি করম অরাধ্য এই দেশে।

কিন্তু সম্পূর্ণ গল্প পড়ার পর আমি এতোই মুগ্ধ হয়েছি যে এই সব আইপডের চিন্তা মাথাতেও আসে নি।

=============================

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।