উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন বিষয়ে তোমার চিন্তাভাবনার সারাংশটা জানাবে?
প্রতিটি ‘উন্নয়ন প্রজেক্ট’ এর সাথে সরকার একটি ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা’ প্রনয়ন করে কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম জোচ্চুরী হয় । আসল ক্ষতিগ্রস্তদের বেশীরভাগকে রেখে দেয়া হয় তালিকার বাইরে অর্থ্যাৎ ক্ষতিগ্রস্তদের বড় অংশকে অস্বীকার করা হয় ।
কালিগংগার ইস্পাত কারখানা নির্মানের জন্য যে আদিবাসীদের জমিদখল করা হয়েছে তাদের একটা খুব ক্ষুদ্র অংশকে মাত্র ‘ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । বাকীদের বলা হয়েছে ‘অবৈধ দখলদার’ । তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সৌভাগ্য হয়েছে যে সামান্য অংশের তাদেরকে জমির বদলে দেয়া হয়েছে ৩৫,০০০ রুপি, সেই জমি কোম্পানীর কাছে সরকার বিক্রী করেছে ৩৫০,০০০ হাজার রুপিতে এবং জমির বাজার মুল্য তার থেকে ও অনেক বেশী ।
তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? তুমি সরকার গরীবেরটা কেড়ে নিয়ে কমপয়সায় বিক্রী করে দিচ্ছো ধনীদের কাছে আর এটার নাম দিয়েছো মুক্তবাজার অর্থনীতি!
নর্মদা বাঁধে সংরক্ষিত পানি সরবরাহ করার জন্য যে সব কৃত্রিম খাল খনন করা হচ্ছে তার ফলে হাজার হাজার সাধারন মানুষ বসতভিটা ও চাষের জমি হারাচ্ছে ,’ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায়’ তাদের নাম নেই । নদী অববাহিকার যে মানুষগুলো মাছধরে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা কর্মহীন হয়ে পড়ছে, ’ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায়’ তাদের নাম নেই । শুধুমাত্র বাঁধ এলাকার আশেপাশের মানুষদেরকে ক্ষতিপুরন দেয়া হচ্ছে । অথচ মধ্যপ্রদেশের সবচেয়ে দরিদ্রতর,ভূমিহীন,দলিত ও আদিবাসী যারা ঐতিহ্যগতভাবেই জীবনধারনের জন্য নদীর সাথে সম্পৃক্ত তাদের কথা কেউ ভাবছেনা ।
এ ছাড়া সমস্যার আরেকটা দিক আছে । বাস্তুহারাদের যখন ক্ষতিপূরন দেয়া হচ্ছে, টাকাটা যাচ্ছে শুধু পুরুষদের পকেটে । এই মানুষগুলো জানেনা কিংবা কেউ তাদেরকে বলে দিচ্ছেনা এই নগদ টাকা দিয়ে কি করবে ফলে প্রায় পুরো টাকাটাই তারা উড়িয়ে দিচ্ছে মদের নেশায় । ফলে উদ্বাস্তু নারীরা দারিদ্রসীমার আরো নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছেন তাদের সন্তান-সন্ততিসহ ।
এইসমস্যাগুলো কেউ গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না । সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে, যেনো আসলে কোথাও কিছু ঘটছেনা । উন্নয়নের নামে একের পর এক মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলছে কিন্তু কোথাও কোন কার্যকর প্রতিরোধ নেই ।
নর্মদা বাঁধের বিষয়টি যখন আদালতে গড়ালো তখন সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছিলো ক্ষতিপুরন হিসেবে জমির বদলে জমি দিতে হবে । একেতো ক্ষতিগ্রস্তদের বড় অংশকে স্বীকারই করা হচ্ছেনা তারউপর যারা কোনভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদের কাউকে ও আদালতে রায় অনুযায়ী জমির বদলে জমি দেয়া হয়নি । মধ্যপ্রদেশ সরকার জমির বদলে জোর করে ইচ্ছেমত নগদ টাকা হাতে গুঁজে দিচ্ছে । এভাবে আদালতের রায়কে অমান্য করা হয়েছে । এমন ও হয়েছে চাষের অযোগ্য একটুকরো জমি বারবার দেখানো হয়েছে, কৃষক পরিবারগুলো ঐ অনাবাদী জমি গ্রহনে অস্বীকৃতি জানালে নগদ টাকা গ্রহনে বাধ্য করা হয়েছে ।
নর্মদা বাঁধ পুনর্বাসন কর্মসুচীর মুল উদ্দেশ্য হলো ভারতের মধ্যবিত্তশ্রেনীকে মিথ্যে প্রবোধ দেয়া আর নর্মদা বাঁধ আন্দোলন(এনবিএ)র প্রতিবাদকে অসার প্রমান করা । এখন যখন ঐ বাঁধ নির্মান প্রায় সমাপ্তির পথে তখন বি.জি বার্গেস এর মতো জনপ্রিয়রা বাঁধের সপক্ষে ক্যাম্পেইন করতে নেমেছেন এবং স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্ষতিপুরন হিসেবে জমির বদলে জমি দেয়া সম্ভব না কিন্তু নির্মান কাজ চলতেই হবে ।
এমনকি একজন নামি কলামিষ্ট -নগদ টাকা গ্রহনে অস্বীকৃতিকে অবাধ্যতা আখ্যা দিয়ে এইসব হঠাকারীতা(!)র নিন্দা জানিয়েছেন ।
এখন আমরা শুনতে পাচ্ছি নর্মদা বাঁধ নির্মান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা নাকি কাজে লাগানো হবে আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনায় । এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হাজার নর্মদার চেয়ে তা বিপদজনক হবে । হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ এমনকি কোটি মানুষ ও বাস্ত্যুচ্যুত হতে পারে । অথচ পত্রিকাগুলো পড়লে মনে হয় যেনো বিশাল কোন শুভ উদ্যোগ ।
এনবিএ এবং তোমার ভূমিকা অনেকক্ষেত্রেই উন্নয়নবিরোধী । তোমরা উন্নয়নের প্রয়োজনে খনিজ উত্তোলনের বিরোধিতা করো । এ বিষয়ে তোমার প্রতিক্রিয়া কি?
খুবই বিরক্তিকর । অবশ্যই আমরা বিরোধিতা করি জোর করে মাটির নীচ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন প্রক্রিয়ার । অবশ্যই আমরা এই ধরনের উন্নয়নের বিরোধী । আমরা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করছি এই সত্যটা প্রকাশ করার জন্য যে- এইসব আসলে উন্নয়ন নয় যা কিছুকে উন্নয়ন বলা হয়েছে । উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে । এই প্রক্রিয়া শোভন নয়, মানুষের জন্য কল্যানকর নয় । স্বল্পমেয়াদে এসবকে লাভজনক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল ধ্বংসাত্বক । আমরা এই ধ্বংসের বিরোধীতা করি । এই কথাগুলো আমরা বার বার উচ্চারন করছি আমাদের কাজের মাধ্যমে এবং আমরা তা করতে থাকবোই । শেষপর্যন্ত আমরা সফল হবো কি হবোনা, আমাদের প্রতিবাদ কাজে দেবে কি দেবেনা তা ভিন্ন বিষয় ।
ক্রমাগত বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে তুমি কি নিজেকে বিচ্ছিন্ন, একঘরে করে ফেলছোনা?
হ্যাঁ করছি ।
আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি একটা ক্ষুদ্র অংশের কাছ থেকে যাদের কাছে জীবনটা খুব সংকীর্ন,চকচকে ভোগের উপমা মাত্র -তাদের হাতে ক্ষমতা আছে, বন্দুক, বোমা, টাকা ও মিডিয়া আছে ।
বিপরীতে আমরা আমাদের দৃষ্টিভংগীর কারনেই সম্পৃক্ত হতে পেরেছি একটা বিশাল সমুদ্রের সাথে যার মধ্যে গভীরতা আছে , অন্ধকার আছে, বিপদ আছে এবং পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষ কিন্তু সেই ভয়ংকর সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে । তুমি যদি একে অস্বীকার করার মতো অসৎ না হও তাহলে দেখবে জীবনটা খুব চকমকে কিছু নয়, পুরোটা কেবল ভোগ বিলাস নয় । এ হতে পারেনা ।
তুমি কালিগাংগা, রায়গড়া, ছত্তিশগড় যাও-দেখবে গৃহযুদ্ধের সংকেত পাচ্ছো । কালীগাংগার আদিবাসীরা পারাদ্বীপ বন্দরের মুল সড়ক অবরোধ করে আছে গত জানুয়ারী থেকে । ছত্তিশগড়ের অনেক জায়গা সশস্ত্র মাওবাদীদের দখলে সেখানে প্রশাসনের কোন নিয়ন্ত্রন নেই ।
আমি বলছিনা যে দরিদ্ররা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেই শান্তিপুর্ন রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে ।একটানা সংঘাত ও সন্ত্রাসের মধ্যে থাকতে থাকতে সবধরনের সহিংসতার সাথে আমাদের সহাবস্থান গড়ে উঠবে । রাজনৈতিক সন্ত্রাসী, ভাড়াটে খুনী, দাগী অপরাধীরা সমাজের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেবে- যা ঘটেছে আফ্রিকায় ।
সুতরাং এইসব বাস্তবতাকে অস্বীকার করে যারা নিজেদেরকে স্বার্থপরের মতো গ্লোবাল ভোগবিলাসের চকচকে জগতে নিরাপদ রেখেছেন তাদের সাথে আমাদের বিচ্ছিন্নতা খুব স্বাভাবিক ।
এনবিএ এবং তোমার বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ-তোমরা প্রচলিত ধারা ও ধারনার কঠোর সমালোচনা কর কিন্তু কোন বাস্তবসম্মত বিকল্প উপস্থাপন করোনা । আমি জানতে চাইছি, আসলে কি বিকল্প কিছু আছে?
আছে , অবশ্য বিকল্প আছে । কিন্তু এটা কোন স্ট্যালিনীয় পদ্ধতি নয় যে, তিন লাইনে দুনিয়া বদলে দেবার ম্যানুয়াল লেখা যাবে । তুমি বেশ শোভন ভাবেই বিকল্প জানতে চাইলে । অনেকে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে খুব আক্রমনের ভংগীতে ।
যাহোক, এই বিষয়টা আমি কিরকম ভাবি ,বলছি তোমাকে ।
আজকে আমরা-এই পৃথিবী, পৃথিবীর আজকের মানুষেরা যে জায়গায় যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তা অসংখ্য অসংখ্য সিদ্ধান্তের ফলাফল- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত,আদর্শিক । সেইসব সিদ্ধান্তের বেশীরভাগ কল্যানমুখী ছিলোনা বলেই আমাদের আজকের পরিনতি শুভ নয় । অথচ প্রতিটি সিদ্ধান্তেরই বিকল্প ছিলো কিন্তু ।
প্রতিটি উঁচু উঁচু বাঁধ নির্মানের আগে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেয়া যেত । বাঁধ নির্মান না করে কিংবা ছোট ছোট বাঁধ নির্মান করেই হয়তো কাজ চালানো যেতো । যতোগুলো কর্পোরেট চুক্তি হয়েছে, প্রতিটির বিকল্প ছিলো অবশ্যই । ভারত-আমেরিকা পরমানু চুক্তির কি বিকল্প ছিলোনা? কিংবা ভারত- আমেরিকা কৃষি গবেষনা উদ্যোগের? জিএম ফুডের বিকল্প আছে অবশ্যই । বিকল্প আছে আর্মড ফোর্স এক্ট এর । বিকল্প আছে ড্রাকোনিয়ান ল্যান্ড একুইজিশন এক্ট এর ।
পল ক্রুগম্যান এর সাথে গলা মিলিয়ে আমি ও বলি- একেবারে মৌলিক একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার , আর তা হলো ‘ রাষ্ট্র কোন কর্পোরেট কোম্পানী নয় ‘ । রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারেনা । রাষ্ট্রের সকল নীতি নির্ধারিত হতে পারেনা ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে আর লাভক্ষতির হিসাব মেপে । নাগরিক রাষ্ট্রের চাকরীজীবি নয় যে তার ইচ্ছে অনিচ্ছার উপর নাগরিকের অস্তিত্ব । সংবাদপত্র ও টিভিচ্যানেলগুলো কর্পোরেশনের বোর্ডরুম বুলেটিন হতে পারেনা । মনসান্টো কিংবা ওয়ালমার্টের মতো কর্পোরেটদের তো ভারতের নীতিনির্ধারক হবার কথা নয় । কিন্তু উন্নয়ন,জিডিপি বৃদ্ধি এইসবের দোহাই দিয়ে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো-নদী,বনভূমি,খনি তুলে দেয়া হয়ে হচ্ছে কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর হাতে ।যে সম্পদে সব মানুষের অধিকার সেই সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে মাত্র কজন ক্ষমতাধরের হাতে । ফলে ধনী-দরিদ্রের ভয়ংকর বৈষম্য বাড়ছে, বাড়ছে সামাজিক সংঘাত ।
সুতরাং - কার্যকর বিকল্পের মুলসুত্র হলো- রাষ্ট্র কোন অজুহাতেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরন করতে পারবেনা । নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তাই হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব । উন্নয়ন,প্রবৃদ্ধি এগুলো পরে । গনিতের সুত্র দিয়ে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করা যাবেনা । তুমি ২ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য ২ মিলিয়নের সম্পদ কেড়ে নিতে পারোনা । কল্পনা করো যদি সরকার ভারতের দু লক্ষ ধনীর সম্পদ কেড়ে নিয়ে দু মিলিয়ন গরীবের মধ্যে বিলিয়ে দেয়-সেটা কি রকম হুলস্থুল কান্ড বাঁধাবে?
সমাজতন্ত্রের নিন্দা করতে গিয়ে বলা হয়-এতে রাষ্ট্র নাগরিকের সম্পদ কেড়ে নেয় । সমাজতন্ত্রের নামে করলে সেটা ‘কেড়ে নেয়া’ আর গনতন্ত্রের নামে হলে ‘উন্নয়ন’ ।
আমি বারবার বলছি, এই সব তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ ভারতকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । মাওবাদী ইতিমধ্যেই কোন কোন অঞ্চলের দখল নিয়ে ‘মুক্তাঞ্চল’ ঘোষনা করেছে ।
এই মাওবাদীদের নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে । প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এদেরকে ভারতের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকী বলছেন । তুমি কি বলো?
মাওবাদীরা প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনাকে তাদের সাফল্য হিসেবেই দেখবে ।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সাবেক পরিচালক অজিত দুবলে লিখেছেন যে -মাওবাদীদের সবসময় সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচনা করা হবে ।
এইভাবে দারিদ্র আর সন্ত্রাসকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে । ভারত সরকার তার অতীত থেকে কিছুই শিখেনি । তারা কাশ্মীর,মনিপুর,নাগাল্যান্ডে সমাধান খুঁজেছে সেনা অপারেশন চালিয়ে । কোন ফল হয়নি । এখন আবার তারা নিজেদের জনগনের উপর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিতে যাচ্ছে, যেনো এক ক্ষুধার্ত বাঘ তার নিজের মাংসই কামড়ে খাচ্ছে ।
আমরা যারা বড় বড় নগরে থাকছি তারা গনতন্ত্রের কথা বলছি অথচ ধারাবাহিকভাবেই গনবিরোধী কালাকানুন জারী হচ্ছে দেশজুড়ে, গ্রামগুলোতে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন ঘটাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী । গ্রামগুলো উচ্ছেদ হয়ে পরিনত হচ্ছে এক একটা পুলিশ ক্যাম্পে । ছত্তিশগড় সরকার মাওবাদী মোকাবেলায় সাধারন মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে ।
আমি জানিনা কেনো তারা বুঝতে চায়না যে দারিদ্র নির্মুলে অস্ত্র কোন কাজে আসবেনা । অথবা আমিই হয়তো বুঝতে ভুল করছি, তারা দারিদ্র নয়-দরিদ্রদেরই নির্মুল করতে চাইছে!
দীর্ঘদিনের এইসংকটের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বহুজাতিক কর্পোরেটদের লোভ । পাহাড়,নদী,বনভূমি তারা লুঠ করে নিচ্ছে যেমন ঔপনিবেশিক যুগে তারা লুটে নিতো স্বর্নমুদ্রা । এই লুন্ঠনকে আবার বৈধতা দিচ্ছেন আমাদেরই অর্থনীতি জানা বড় বড় বিশেষজ্ঞরা, ওয়াশিংটনের নীতি মনে চলা যারা যাদের নিজস্ব কোন স্বপ্ন নেই ।
দশবছর আগে কে ভেবেছিলো কাঠমান্ডু মাওবাদীর দখল করে নেবে? আরো দশ বছর পর যে দিল্লী দখল হবেনা তার নিশ্চয়তা কি? চারপাশে যা ঘটছে, এতে কিন্তু ইংগিতে মিলে ।
এনবিএ’র মতো একটা অহিংস আন্দোলন যেভাবে সরকারের পেটোয়া বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এরপর এর কর্মীরা নিজেদের আন্দোলনের কৌশল নিজেরা বেছে নিতে পারেই ।
সরকারের কাছ থেকেই মানুষ সহিংসতার শিক্ষা নিচ্ছে । কে জানে এই শিক্ষা সহসাই কাজে লেগে যাবে,নাকি?
নকশালবাড়ী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা কানুসান্যাল - যিনি বহুদিন থেকেই নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নিয়েছেন, তিনি কিন্তু সাম্প্রতিক মাওবাদী মুভমেন্টকে আদর্শহীন, চাঁদাবাজী বলে অভিযোগ করেছেন ।
আমি নিশ্চিত আজকের কংগ্রেস পার্টিকে দেখে মহাত্না গান্ধী ও তাই বলতেন ।
ঘটনা হলো যে কোন সশস্ত্র সংঘাতেই লুন্ঠন,চাঁদাবাজি,ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির ঘটনাগুলো ঘটে । উত্তর-পূর্ব ভারত, কাশ্মীরের সশস্ত্র প্রতিরোধকারীদের মধ্যে এমনকি মাওবাদীদের মধ্যেও এরকম ক্যাডার নেই সেটা কেউ দাবী করতে পারবেনা ।
এগুলো তো সেনাবাহিনীর মধ্যে ও আছে । দখলদার সেনাবাহিনী মাত্রই লুঠতরাজ ও ধর্ষন করে ।
বাধ্য হয়েই নিস্পেষিত মানুষেরা মাওবাদীদের দিকে ঝুঁকছে কারন বহুবছর ধরে গড়ে উঠা মানুষের প্রতিবাদ,প্রতিরোধ গনতান্ত্রিক সংগঠনগুলোর কাছে কোন গুরুত্ব পায়নি ।
সশস্ত্র সংগ্রামের সমালোচনা করে কোন কোন এনজিও তথাকথিত অহিংস পন্থায় সরকারী নীতির বিরোধিতা করেন । জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি থেকে শুরু করে শান্তির প্যাকেজ পর্যন্ত বিক্রী করে তারা ও তো মুলতঃ চাঁদা আর মুনাফাই লুটেন । অতি উচ্চমুল্যের ‘দারিদ্রদূরীকরন পরিকল্পনা’ সমুহ বিক্রী করা যায় কেবল মাত্র দারিদ্র আর তার উপজাত সংকটসমুহের উপস্থিতিতেই ।
মুল সমস্যাটা কোথায় দেখো ।যে কোন সংকট সেটা সশস্ত্র কিংবা নিরস্ত্র হোক, তার মোকাবেলায় সরকার কিন্তু জোর প্রয়োগ করছে । সেনা অপারেশন চালিয়ে কাশ্মির,মনিপুর,নাগাল্যান্ডে সমাধান হয়নি-ভারতের মুল ভূ-খন্ডে ও হবেনা ।
এইসব আগ্রাসনের প্রতিরোধ যে একটা পরিকল্পিত সফল বিপ্লবের মাধ্যমেই হবে তা তো বলা যায় না বরং পুরো সমাজ জুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, দাগী অপরাধী ও ভাড়াটে খুনীরা দখল নিতে পারে আমাদের সকল শুভবোধের ।
আর এসব কিছুর জন্য দায়ী থাকবে সামাজিক অবিচার যার একমাত্র সমাধান সকল পর্যায়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ।
বুলেট,বুলডোজার,কারাগার কোন সমাধান নয় ।।
অরুন্ধতী পাঠ-০২।।'গোপনে জল বাড়ছে কোথাও(প্রথম পর্ব)
মন্তব্য
মোরশেদ ভাই, এই লেখা সময় নিয়ে পড়তে হবে, পছন্দের তালিকায় যুক্ত হলো ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
কোন তাড়াহুড়ো নেই দাদা । সময় করেই পড়ুন । পড়া শেষে জানালে ভালো লাগবে ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পড়ছি...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
পাঠকঈশ্বর
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
Thanx...!!Appreciate your effort.... Khubi Guruttopurno Onubad.....!!!And Darun Onubad....!!!
Next post er opekkhai....
Dhonnobad abaro....
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ এই দীর্ঘ অনুবাদ সময় করে পড়া ও কষ্ট করে মন্তব্য লেখার জন্য । ইচ্ছে আছে সবগুলো অনুবাদের যদিও সময় বিরাট বোঝা হয়ে আছে ।
এখানে বাংলায় মন্তব্য করা কিন্তু বেশ সহজ ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার খুব প্রিয় লেখক। এই লেখাগুলি সময় নিয়ে পড়তে হবে। পরবর্তী পর্বগুলো আসতে থাকুক।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন