আমরা একবার সাতহাজার ফুট উপরে মেঘপাহাড়ের দেশে বসতি গড়েছিলাম । তুই, ভাস্কর ডি কস্তা-ঢাকার মনিপুরি পাড়ার ছেলে, তোর সাথে দেখা হয়েছিল সেই দেশে । ১৯৯৯ সালে ।
আমি গিয়েছিলাম গ্রাজুয়েশন করে, তুই তখন মাত্র কলেজে উঠেছিস । অথচ কি ভীষন স্মার্ট,আমাদের সকলের চেয়ে ম্যাচিউরড । ক্লাশ এইট থেকে তুই একা একা শিলং এ থাকিস, ঐ সাত হাজার ফুট উঁচু শহরের মধ্যে ও আরো উঁচুতে যে পাড়া, সেখানে তোর ঘর ।
তোর সাথে আমার বন্ধুত্বটা গড়ে উঠেছিল কেন জানি? আজ আর মনে করতে পারছিনা । অথবা উল্লাস গোমেজ, স্টিভ আবেল কোইয়া,বনিফাসের সাথে?
ক্যাথেড্রালের পেছনের কার্নিশে রোববার বিকেলে আমরা বসতাম । থোকা থোকা মেঘেরা এসে ধরা দিতো আমাদের হাতের মুঠোয়, দলা বেঁধে মেঘ আমরা ছুঁড়ে দিতাম অসীম শূন্যতায়, গলা খুলে গাইতাম-'ভালো আছি ভালো থেকো' । মাঝে মাঝে ফাদার এসে উঁকি দিতেন- 'হেই বয়েস,প্লিজ কাম ডাউন'
মনে পড়ে কি চমৎকার ছিলো তোর রান্নার হাত । তোর বাড়ীর পাশে যখন আমি,উল্লাস,স্টিভ বাড়ি ভাড়া নিলাম- অবসরের প্রায় পুরো সময়টা তুই আমাদের সাথে কাটাতি । আমার রান্নার পালা এলেই তুই ছুটে আসতি- ' আরে মিয়া সরেন তো, আমি রাঁধবো ।' আমি বেঁচে যেতাম । প্রতি রবিবারে আমাদের যে বাম্বা পার্টি হতো তার সমস্ত আয়োজন থাকতো তোর উপর । একবার শবেবরাতের সন্ধায় তুই এসে ধরলি- 'টাকা দ্যান, শবেবরাতের সিন্নি বানাবো' । যোগাড়যন্তর করে রুটি হালুয়া বানানো হলো । শীতে কাঁপতে কাঁপতে হাজির আমরা সুশান দের বাড়িতে ।
আমাকে কি ভয়ংকর রকম হুইস্কির নেশায় পেয়ে বসেছিল তখন । উল্লাসকে আরো বেশী, ও তো তখন খেতে খেতে ঘুমাতো, ঘুম থেকে উঠে আবার শুরু করতো আর তুই এক সাথে বসে ও বিয়ার ছাড়া আর কিছু স্পর্শ করতিনা । তোর পছন্দের ছিলো এশিয়া ৭২ । একটানে পুরো বোতল গলায় টেনে নিতি, মনে আছে ভাস্কর ।
তোর কি মনে আছে, আমি ফিরে আসার আগে সবাই মিলে চেরাপুঞ্জি গেলাম । কি অদ্ভূত সুন্দর দিন ছিলো সেই । অনেক দূরে বাংলাদেশের ছায়া দেখা যাচ্ছিল, আমরা একসাথে সাতজন 'বাংলাদেশ' বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম । থমকে দাঁড়িয়েছিল আর সব পর্যটকের দল ।
দুবছর পর আমি ফিরে এলাম । তুই ও এলি কলেজ শেষ করে । ঢাকা থেকে সিলেট এলি একবার আমাকে দেখতে । তারপর চলে গেলি অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেজুয়েশন করতে ।
উল্লাসের সাথে যোগাযোগটা কেটে গেলো নানা কারনে , স্টিভের সাথে ছিলো বহুদিন । আমরা প্রায় সবাই ফিরে এলেও ও রয়ে গেলো শিলংয়ে । আমি পরে আরো ক'বার গেলাম । প্রতিবার তোর কথা মনে হতো, প্রতিবার তোর কথা বলা হতো আমাদের মাঝে । স্টিভ ঢাকা ফিরে এলে ওকে বারবার তাড়া দিতাম- ভাস্করের পাত্তা লাগাতো, ওর বাড়িতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফোন নাম্বারটা নিয়ে আয় ।
এইতো নিচ্ছি বলে প্রায় সাত বছর কেটে গেলো, তোর কোন খবর আর নেয়া হলোনা ভাস্কর ।
কেবল আজ অনেকদিন পর ফেসবুকে স্টিভের ছোট্ট ম্যাসেজ - murshed da, Vaskar is no more. motor bike accedient........
না, কোন মানে হয়না ভাস্কর ।
এই তো আমার এলবামে তোর ছবি-শিলং পিক,চেরাপুঞ্জি, বাম্বা পার্টিতে- সবচেয়ে ভাস্বর তুই, রিমলেস চশমার ভেতরে তোর উজ্জ্বল দু চোখ ।
কেন, এইভাবে চলে গেলি ভাস্কর?
মন্তব্য
সমবেদনা।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আপনার বন্ধু ভাস্করের আত্মার সদগতি হোক এই কামনা করছি, আমাদের সবাইকেই একদিন না একদিন চলে যতে হবে, যেতে হয়।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হুম ............ শুধুই জানাব সমবেদনা ।
নিবিড়
হায়!
মনে পড়ে গেলো এ পোস্টের কথা।
ভাস্কর ভালো থাকুন...,যেখানেই থাকুন।
কিছু বলতে ইচ্ছে হয় না ।
সমবেদনা রইল।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
সমবেদনা।
চারদিকে শুধু মন খারাপের গান...
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
......................................................
বন্ধুর প্রয়াণে শ্রদ্ধা।
...
শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি সঞ্চারিত হোক আপনার মনে। আসলে আমরা সব্বাই কোনো না কোনো ভাবে এক একটি স্মৃতি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
ভাল্লাগেনা আর ।
এতো মৃত্যু,এতো দুঃসময় ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মৃত্যু এসে বেঁধেছে ঘর বাড়ি
বলেছে , যাই
বলেছে,এইখানে রয়ে গেলে তুমি
এইখানে আমাদের মৃত্যুমুখর বসতভূমি !!
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সত্যি ভাল্লাগে না আর। এক জীবনে কত হারানোর বেদনা আর সহ্য করা যায়?
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ভাস্কর নেই, এ কথা বলবে জানলে তোমার এই লেখাটা পড়তাম না। মনে আছে দাদা, প্রথম যেবার শিলং গেলাম, যেখানেই যেতাম, ভাস্কর-কে সাথে নিতে বলতাম?
উল্লস ভাই-এর ফোন নাম্ব।র থাকলে দিও।
নতুন মন্তব্য করুন