(এই লেখাটা কবি টোকন ঠাকুর এর । কবিদের এই এক সুবিধে, তারা বড় ইচ্ছেমতো গুছিয়ে লিখতে পারেন-আমরা সাধারনেরা যা কিছু প্রকাশ করতে পারিনা । টোকন দা, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা )
কিংবদন্তী একদিন বড় হয়ে যাবে । কিংবদন্তী একদিন বুঝতে শিখবে, কিংবদন্তী কাকে বলে? কেন মানুষ কিংবদন্তী হয়ে যায়? কেন মানুষ মুখে মুখে ফেরা জনশ্রুতির তাৎপর্য গ্রহণ করে?... কফিন বাকশের দিকে তাকানো ভাবলেশহীন শিশু,শিশুটি কি জানে কফিনের মধ্যে যে ঘুমিয়ে আছে, সে কে? সে কেন বাসায় না-ফিরে ঐ বাকশের মধ্যে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে? শুয়ে থাকা মানুষটি বাবা, না সঞ্জীব চৌধুরী? সঞ্জীব চৌধুরী কে ছিলেন? কি ছিল তার অন্তরের কথা, স্বপ্নের কথা? কী ছিল তার দাহ? কেনো এতো অগ্নিময় জলের বুদবুদ হয়ে ফেটে যাওয়া? কোন ভূবনে ছিল তার স্বপ্নের পাখি?
কিংবদন্তী একদিন জানতে পারবে,এখানে অন্ধকার ছিল,পরম্পরার । তার বাবা সেই অন্ধকারে জোনাকি হইয়ে গেছে । সে একদিন বুঝতে পারবে, এখানে অনেক পাথর ছিল ,তার বাবা যৌবনের সমস্ত শক্তি ঢেলে পাথর সরাতে চেয়েছে, প্রেমতীব্র পথ তৈরী করতে চেয়েছে । কিংবদন্তী একদিন শুনতে পারবে, বাতাসে রঙ্গীন সুর ছড়িয়ে আছে, কারন সঞ্জীব চৌধুরী গান গাইত । ভয়াল নৈঃশব্দে শব্দ ছড়িয়ে সঞ্জীব চৌধুরী চলে গেছে । শাদা শূন্যতায় মধুবনের রঙ ছড়িয়ে গেছে, আলাপের মধ্যে কবিতা পুঁতে রেখে গেছে । এখানে অনেক বিচ্ছিন্নতা ছড়ানো বলে, তার বাবা অনেক গল্প রেখে গেছে ।
রাত্রি গভীর হলেও, যে- রাতে কিংবদন্তীর ঘুম আসবেনা, যখন সে খুলে খুলে দেখবে এলবাম-ভর্তি এক মুখ, হাওড়-প্রদেশের সেই মুখই... সঞ্জীব চৌধুরীর মুখ, কিংবদন্তী নিশ্চয়ই টের পাবে,বহুদিন আগে তার বাবাই কিংবদন্তী হয়ে গেছে । এমনকি তার জন্মের আগেই কিংবদন্তী হয়ে যায় মিছিলের ,কবিতার, গানের দলছুট সঞ্জীব চৌধুরী । এই ঠাঠা- মরার দেশে সঞ্জীব চৌধুরী বড় বেশি অপরাধী, কারন তার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল । কারন, সে ভালোবাসত । কারন এই পোশাকি সিস্টেমের দেশে সঞ্জীব চৌধুরী আপন অস্তিত্বের স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে । এই ফাঁকা-ফাঁকা মন্দির-মসজিদ-গির্জার দেশে , সঞ্জীব চৌধুরী ছিন্নমুল মানুষের বাসস্থানের ভাবনা মাথায় রেখেছে । নিরন্নের, অন্ন ও পানীয়ের অধিকারের কথা বলার জন্য, সাহসে, বুক টানটান করে রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকেছে । কিংবদন্তী একদিন জানবে, মেডিকেল কলেজের গবেষনায় তার বাবার শরীর কাজে লেগেছিল । এখানে রয়ে গেছে সঞ্জীব চৌধুরীর কংকাল... হয়তো আগন্তুকের সঙ্গে আড্ডা দিতে চায়ও, নতুন একটি কবিতা নিয়ে, গান নিয়ে মেতে উঠতে চায় । মা বকা দিলে, হয়তো একদিন খুব মনখারাপ হলে আমাদের কিংবদন্তী কাউকে না বলে একা একাই চলে যাবে
মেডিকেল কলেজের দিকে । সে কি বাবার কংকালের সঙ্গে কথা বলবে-
'বাবা আমার মন ভালো নেই, তুমি একটা গান গাও তো '
আমরা কিংবদন্তীর পেছনে পেছনে যাব এবং লক্ষ রাখব, দেখব, বাবার কংকাল মেয়ের আবদার রাখে কিনা? কংকাল কি কথা রাখবে, যখন সঞ্জীব চৌধুরীর কংকাল?
আমরা জানি সঞ্জীব চৌধুরী কিংবদন্তী ছিলেন...
মন্তব্য
শ্রদ্ধা...
বিনম্র শ্রদ্ধা
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
টোকন ঠাকুরকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভাষা খুজেঁ পাচ্ছিনা! এতো অসাধারন ক্যামেরা কোণ ও এতোটা মানবিক অনুভব থেকে কি করে বুনলেন এতো সুন্দর কথার মালা?
হাসান সাহেব ধন্যবাদ আমাদের সাথে লেখাটা শেয়ার করার জন্য
এবং থাকবেন চিরকাল...
সঞ্জীব দা, বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝেই।
সঞ্জীব দা'র জন্য শ্রদ্ধা......।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
সঞ্জীব চৌধুরী কিংবদন্তী ছিলেন, কিংবদন্তী আছেন এবং থাকবেন।
তাঁর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা...
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
- অসাময়িক শ্রদ্ধা...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
প্রিয় শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাই।
ভুলেই গিয়েছিলাম। যদি সংবাদপত্রে চোখ বুলানোর স্বভাবটা না থাকতো তবে হয়তো মনেই থাকতো না। গুরু অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা লেখাটা এখানে তুলে দেয়ার জন্য।
স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায় এই বহুমুখী প্রতিভার মানুষটিকে।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কবিতাটা যখন লেখা হয় তখন আমি টোকনের ঘরে শুয়ে একটা বই পড়ছিলাম আর সে টেবিলে বসে কলম দিয়ে পাতার পর পাতা কি যেন লিখে যাচ্ছিলো। ওই সময়টাতে খুব বেশি আড্ডা মারা হতো কবি টোকন ঠাকুরের এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়। কবিতাটা শেষ হওয়ার আমিই ছিলাম এই কবিতার প্রথম পাঠক। সেই মূহুর্তে, কবিতাটা পড়ার পর এমনি এমনি আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। তারপর বিকেলেই কবিতাটা প্রকাশ হয়েছিল এক টাকার কবিতা নামের বিশ্ববিদ্যালয় তরুণদের একটা কবিতার ছোট কাগজে। মনে আছে, ওইদিন ছবিরহাটে সঞ্জীব'দার স্মরণে একটা অনুষ্টান ছিল আর ওই অনুষ্টানে সবার হাতে হাতে ছিল এই কবিতা- দ্য সঞ্জীব চৌধুরী আনলিমিটেড !
অনেকদিন পর কবিতাটা পড়ে আবার পুরনো অনেককিছুই চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
অসীম শ্রদ্ধা......
নতুন মন্তব্য করুন