'অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছে ও ভীষন অচেনা ও একা
দৃশ্যের বিপরীতে সে পারেনা একাত্ব হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনদিন'
কিন্তু 'অবশেষে'র বদলে যদি 'প্রারম্ভ'টুকুই ঘটে ঐ একাকীত্বের সমুহ জলে নিজেকে আকন্ঠ ভিজিয়ে? অন্তর্গত রক্তের বিপন্ন বিস্ময়ে বুঁদ হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উদ্ধার থাকেনা তার । নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে সেই এক পাথরের অবয়ব, অক্ষরের মিলিত সহবাসে ডাকনামের স্নেহার্দ্রতা কেবল
'সে এক পাথর আছে কেবলি লাবন্য ধরে,উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র
মায়াবী করুণ
এটা কি সেই পাথরের নাম নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোন নদী? উপগ্রহ? কোন রাজা?
পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ্ণ তমোহর
কি অর্থ বহন করে এইসব মিলিত অক্ষর?'
গোপন অসুখের মতো সে জেনে যায় পরম্পরা, বেদনার বংশবৃত্তি । কিশোর, সেই একাকী কিশোরঃ
'বেলা যায়ঃ কত হাত পড়ন্ত সূর্যে তবু তাই আজ নামবি কিশোর
সামান্য শরীর তোর! অতো ছায়া লুকোবি কোথায়?
ছায়া চলে যায়, তবু চাস, তবু জেদীপনা ?
-তবু ছায়া চাই? জলছায়া-ফলছায়া-শয্যাছায়া স্মৃতিছায়া?
মৃত্তিকানক্ষত্রছায়া? ছায়া চাই-ছায়া চাই মনে ও মাটিতে?
কত হাত পড়ন্ত বলয়ে বোধে তবে তুই নামবি কিশোর
কতো কুটিলার বানে ভেলার মতোন তার দেহকে ভাসিয়ে
জ্যোৎস্নার আকাশে চাঁদ,সবুজ সোনার থালে ঢেকে দিবে জলে ভাসা লাশ'
জলের ছায়ায় নিহত প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে ক্লান্ত কিশোর টের পায়
কিছুটা বদল দরকার, কিছুটা নতুন
কিছুটা বদলাতে হবে
কিছুটা বদলাতে হবে সুর
সাতটি ছিদ্রের সূর্য; সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর
কিছুটা বদলাতে হবে
মাটির কনুই; ভাঁজ
রক্তমাখা দুঃখের সমাজ কিছুটা বদলাতে হবে.....
বদলে দাও, তুমি বদলাও
নইলে এক্ষুনি
ঢুকে পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনী ,
যখোন যেখানে পাবে
মেরে রেখে যাবে
তোমার সংসার, বাঁশী, আঘাটার নাও।
বদলে যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও
মহাকাশে ছড়ানো সেই ছয়টি তারার নামে এবার ভালোবাসা হয় ।
'বৃষ্টিচিহ্নিত ভালোবাসা'
........................
'সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের
কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল ,
সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে
আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন
আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল'
মাটিতে মধুর জল খুঁড়তে খুঁড়তে কি এক আশ্চর্য গরিমায় উচ্চারন করে সে
'পূর্নিমার দোষ দিওনা; আমিই সারারাত কাল
ইচ্ছে কোরে জেগে ছিলাম ঘড়ি যেমন জেগে থাকে
কাল সারারাত তোমার শরীর জুড়ে জেগেছিলাম আমি
স্নিগ্ধ বিস্ফোরন নিয়ে কি স্বাধীন কাল সারারাত
আমার মুখের কাছে তোমার মুখ গুঁজে রেখেছিলাম আমি
রাত্রির চিবুক তুলে তার রাগ ভাঙ্গিয়েছিলাম আমি কাল সারারাত
আমি তোমাকে উত্যক্ত করেছিলাম কাল সারারাত '
অথচ প্রতিনির্জনের আলাপ শেষে সে আবার হয়ে উঠে প্রেমিকের প্রতিদ্ধন্ধী
.....................
'যত আনো ও আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতোনা জাগাও তুমি ফুলের সুরভি
আঁচলে আলগা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোনো
আমি ফিরবোনা আর , আমি কোনদিন কারো
প্রেমিক হবোনা; প্রেমিকের প্রতিদ্ধন্ধী চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্ধন্ধী হবো '
যে কিশোর বোধের উদগমেই জেনে গিয়েছিল একাকীত্বের বীজমন্ত্র, প্রেমিক ও প্রেমিকের প্রতিদ্বন্ধী হয়ে উঠতে উঠতে, গড়তে গড়তে এবং ফুরিয়ে যেতে যেতে , 'স্বাতীর সঙ্গে একটি সকাল' কাটিয়ে দেয়ার পর ও ' ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সেই বিষন্ন কুমারী'দের স্মৃতির ছায়ায় লোকটা শেষ পর্যন্ত নিঃসংগ থেকে যায় ।
নিয়তি ও নিজস্বতার মতো নিঃসঙ্গ মানুষ !
'হলুদ সন্ধায় একা একা, আমি হায় কার অভিশাপে
এতো নির্জনতা, বিমর্ষ সঙ্গতা এই আমার রক্তের কেবল করছি পান;
আমার কি একবার ও মনে পড়েনা সেই হলদে পাখীর মুখোমুখি
নীল ঘাসে ঢাকা, শাক ও সব্জীর শ্যামলে বিছানো হাত ও পায়ের ক্রন্দন'
-----------------------------------------------------------------
গত বছর এইদিনে বেশকিছু লেখা হয়েছিল তাকে নিয়ে । সেই লেখাগুলো পড়ছি আজঃ
দেখো তো আমাকে বোকা বোকা লাগে কিনা
কেবলি লাবণ্য ধরে
আবুল হাসান
ইউটপিক
সচলায়তন একটা ব্যনার ও করেছিলো, মনে পড়ে ।।
মন্তব্য
এই লেখার সূত্র ধরে পুরানো লেখাগুলো আবারো চোখ বুলিয়ে এলাম। সুমন রহমানের লেখাটা আবারো ভালো লাগলো। সেখানে জুবায়ের ভাইয়ের একটা মন্তব্য ছিল; আহারে আর কোনদিন জানা হবেনা উনি যা জানতেন।
শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রিয় কবির প্রতি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
-
তাঁর জন্য অপরিসীম শ্রদ্ধা।
[আগের সেই ব্যানারটা লাগানোতে এখন মনেহয় টেকনিক্যাল একটু সমস্যা আছে দাদা। সচলায়তনের পাতার প্রস্থ এখন বেড়েছে। পুরাতন সেই ব্যানারটা এখন এই নতুন আকারের সঙ্গে ঠিক খাপ নাও খেতে পারে!]
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কবি আবুল হাসান আমার প্রিয় একজন কবি। তার প্রতি আমার আজন্মের শ্রদ্ধা। আমার ভালোলাগা একখানা কবিতা তুলে দিচ্ছি মন্তব্যে।
তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না
আবুল হাসান
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ' শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা--
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না-- তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!
তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!
মৃত্যুই কবিকে নেয়, জাতিসংঘ নেয় না
--------আর কিছুই বলতে পারছি না আমি -------------
--------------------------------
--------------------------------
অশেষ শ্রদ্ধা কবি আবুল হাসানের প্রতি।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
অসম্ভব ভালো লাগল কবিতাগুলো পড়তে পেরে। ধন্যবাদ হাসান ভাই
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
কবি আবুল হাসানের প্রতি শ্রদ্ধা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ... প্রিয় কবিকে নিয়ে লেখাটিও প্রিয় হয়েই থাকলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আবুল হাসানকে শ্রদ্ধা
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
কবিকে শ্রদ্ধা, লেখক এতো সুন্দর করে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
আহ্ মোরশেদ !
ঝিনুক......... ...... ......
নীরবেই সয়ে যাচ্ছি ... ... .... .. .... .... .....
কি বলে ধন্যবাদ দিই আপনাকে?
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
আপনার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। সত্যিই আপনি যথার্থ শিল্পানুরাগী। লেখার কথা কি বলবো। সে কোন এক সময় হাসান মোরশেদ এক অবর্ণণীয় মুগ্ধতা সৃষ্টি করেছিলো, যা শুধু সমানুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নীরব শ্রদ্ধা.....................
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
"এখন তাই সে সব নিয়ে নির্জন। নির্বাসনাময় 'সব পাওয়ার' দেবতা। তার জীবনের দর্পনে হাওয়া দেয় সবুজ গাছপালা। গোধুলির সন্ধ্যাতে উল্লাস করে মাইল মাইল অরণ্য। তার বাইরের পৃথিবী এখন ভিতরের ঈশ্বর হয়ে তার অনুপম দোসর।"
(নির্বাসনায় মাইল মাইল)
কৃতজ্ঞতা, যারা পাঠ করলেন ও সদয় মন্তব্য দান করলেন- তাদের সকলে ।
বরং সকল প্রশংসা উচ্চারিত হোক তাঁর নামে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই লোকটা এখনও পিছু ছাড়ছে না , কী যন্ত্রনা !
''আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ করে দিলাম,
সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তো....
আমরা আমাদের কাছে বলতে পেরেছি,
ভালো আছি, খুব ভালো আছি ?''
আবুল হাসান......
বার বার পড়ি.......
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন