।। ব্যক্তিগত পোষাক ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০৫/২০০৯ - ২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.
কফিপটে উত্তাপ।ফুলদানীতে তাজা ফুল।ঘ্রানহীন,রংচংয়ে।জানলায় ভারী পর্দা।দেয়ালজুড়ে আয়না।

শামীম হায়দার আয়নায় নিজেকে দেখলেন।নিজের প্রতিবিম্ব দেখলেন।শরীরের শীর্নতা ফুরিয়েছে অনেক আগেই।তলপেটে কিছুটা মেদ জমলেও নিজের নগ্ন শরীরকে এখনো ভালো না লাগার মতো সময় আসেনি।শিশ্ন আপাতঃ শিথিল।

কোমরে তোয়ালে জড়ালেন। ভারী পর্দা সরালেন কিঞ্চিৎ।বিকেলের আলো এলো ঘরে।
বালিশে মুখ গোঁজে থাকা সোহানা আক্তার মুখ ফেরালেন।ভ্রুঁতে প্রশ্নবোধ।
শামীম হায়দার পর্দা টেনে দিলেন।
হলিডে হোমসের এই ঘরে এখন আর বিকেল নেই।

স্ত্রী জানেন জরুরী মিটিং আছে।মিটিং শেষে ডিনার পার্টি।ফিরতে রাত হবে।বেশ রাত।বিদেশী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার প্রধান ব্যবস্থাপকের এমন রাত হয়। স্ত্রী অভ্যস্ত। সন্তানদ্বয় ও।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন প্রভাষিকা সোহানা আক্তারের ব্যবসায়ী স্বামী, আমদানী কাজে সিঙ্গাপুর।একমাত্র সন্তান শ্বাশুড়ীর কাছে নিরাপদ।ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অনুষ্ঠান আছে।ফিরতে দেরী হবে।

শামীম হায়দারের ব্যাংক ও সোহানা আক্তারের বিশ্ববিদ্যালয় দুটোই যথাক্রমে একটি সুপারমার্কেটের চতুর্থ ও সপ্তম তলায়। একুশ বছর তাদের দেখা হয়নি।দেখা না হওয়ার একুশ বছর তারা সুপার মার্কেটের চতুর্থ ও সপ্তম তলায় কার্যরত ছিলেন তেমন ভাবনার কোন কার্যকারন নেই।

। শামীম হায়দারের বাবা ছিলেন মফস্বল শহরের সমাজসেবা কর্মকর্তা। আর সোহানা আক্তারের বাবা ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা। দু কর্মকর্তাই সেই মফস্বলে বদলী হয়ে এসেছিলেন অন্য কোন মফস্বল থেকে।উপজেলা চত্বরের মধ্যে পাশাপাশি নিবাস ছিলো তাদের। শামীম হায়দার ও সোহানা দুজনই তখন অষ্টম শ্রেনী।

শামীম হায়দার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়-কালো প্যান্ট,সাদা সার্ট,বাটার জুতো। সোহানা আক্তার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়- সাদা সেলোয়ার,আকাশী জামা, সাদা উড়না।
সোহানা ইতিমধ্যে প্রেমে পতিত।উপজেলা চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই যে কলেজের একাদশ শ্রেনীতে, সে টিফিন পিরিয়ডে বালিকা বিদ্যালয়ের গেটে এসে দাড়ায়। সাইকেলের টুংটাং আওয়াজ হয়।চিঠি বিনিময় হয়।একদিন সন্ধ্যেবেলা বিদ্যুৎবাতি কোন কারনে না জ্বললে উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তার সরকারী নিবাসের দেয়াল টপকে কে যেনো ভেতরে ঢোকে। কর্মকর্তাটি স্ত্রী সমেত গিয়েছিলেন দাওয়াত খেতে এক বিদ্যালয় শিক্ষকের বাড়ীতে। বৃত্তি পরীক্ষা সমাগত বলে একমাত্র কন্যাটি একাকীই ছিলো।

শীর্ণ শামীম হায়দার তার জন্য বেজায় ভারী ছাত্রসখা বইটি নিয়ে সেই সন্ধায় কড়া নেড়েছিল সোহানাদের দরজায়। দরজা খুলেনি কেউ। আসন্ন বৃত্তিপরীক্ষার ইংরেজী রচনা কোনটা বেশী ইম্পোর্টেন্ট - ‘এইম ইন লাইফ’ নাকি ‘জার্নি বাই বোট’ সেই সিদ্ধান্তে আসা জরুরী ছিলো তার জন্য, জরুরী ছিলো সোহানার সাথে কথা বলা। তাই ক্রমাগত কড়া নাড়া ও প্রত্যাখান তাকে অসহিষ্ণু করে তুলছিল। পেছনের দেয়ালের নীচ দিয়ে ভিতরে ঢোকার একটা পথ জানা ছিলো , দেয়াল টপকানোর সাধ্য ছিলোনা তার।
যে উপগত ছিলো সে দেখিনি, যে শয্যাগত ছিলো সে দেখেছিলো। শামীম হায়দার পালিয়ে এসেছিলো।

একুশ বছর পর, সুপারমার্কেটের ছাদে গড়ে উঠা বাহারী রেঁস্তোরার একবারে কোনার টেবিলে বসে সোহানা আক্তার যখন বলছিল- ‘অনেক দিন আমি অর্গাজমের আনন্দ পাইনি’
শামীম হায়দারের মনে পড়ে গিয়েছিল সেই সন্ধ্যা, সেই সন্ধ্যায় কি ঐ আনন্দ পেয়েছিল সে?
জিজ্ঞেস করা হয়নি। কিন্তু সেই রাতে, রেঁস্তোরা থেকে ফিরে আসার পর রাতে তার স্ত্রী অর্গাজমের আনন্দ পান দীর্ঘদিন পর।চোখ বন্ধ নিশ্বাস নিচ্ছিল শামীম অর্ধ-উত্থিত শিশ্নে ঠোঁট বুলিয়ে স্ত্রী বিড়বিড় করেন- ‘আই লাভ ইউ ম্যান’ ।

খোলাপিঠ নিয়ে সোহানা আক্তার আবার উপুড় হন। শামীম জানালার কাছ থেকে ফিরে আসেন।
-কিছু বলবে?
-নাহ
-খারাপ লাগছে?
-নাহ
-অনুশোচনা
-নাহ!

বিছানার পাশে একটা সিডি প্লেয়ার।আগে খেয়াল হয়নি কারো। খেয়াল করার মতো ধৈর্য্য ছিলোনা কারো।আলগোছে বাটন টেপা হয়। অপরিচিত কন্ঠ গেয়ে উঠে চেনা গান

‘চেয়ে থাকি দাঁড়িয়ে দ্বারে, চেয়ে থাকি
যে ঘরে ঐ প্রদীপ জ্বলে তার ঠিকান কেউ না বলে
বসে থাকি, বসে থাকি পথের নিরালায় গো
চিররাতের পাথার পাড়ে হায়গো… ‘

এয়ারকন্ডিশনারের ঠান্ডায় শীতবোধ হয়।
শামীম হায়দার কফিপট থেকে কফি ঢালেন। এক কাপ। এক কাপ খালি থাকে। ভারী পর্দা সরান আবার। সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে। এখন আর বিকেলের রোদ নেই। ঘরের ভেতর আলোর প্রবেশ নেই। সোহানা আক্তার তার খোলা বুক নিয়ে চোখ মেলেননা এবার।

হলিডে হোমসের বাইরের দিকের বাগানে একজোড়া ছেলেমেয়ে।পরস্পরকে জড়িয়ে আছে। মেয়েটার হাতে কিছু একটা। অতোদূর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়না। আইসক্রীম হতে পারে। মেয়েটা ছেলেটার মুখে তুলে দিচ্ছে। দুজন হাসছে।

শামীম হায়দার, সোহানা আক্তারকে ডেকে বলেন- 'দেখো, ওরা প্রেম করছে।'


মন্তব্য

বিষন্ন এর ছবি

আপনার লেখা আমার কাছে ভালো লাগে, কিন্তু কেন যেন এই লেখাটি ভাল লাগলো না। বড় বেশী খোলামেলা, বড় বেশী শরীর-সর্বস্ব। একসময়ের ভালবাসার প্রত্যাখানের শোধ শামীম হায়দার শরীর দিয়ে নিচ্ছে, এইই তাহলে গল্পটি?
আশাকরি আমার মন্তব্যে বিরূপ হবেন না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বিরূপ হবো কেনো? আরে, আপনি আমার সময় বিনিয়োগ করে পড়লেন-এই কি যথেষ্ট নয়? না পড়লে ও তো পারতেন হাসি

বড় বেশী খোলামেলা, বড় বেশী শরীর-সর্বস্ব

কিছু বলবোনা। খোলামেলা-শরীর সর্বস্বতা আপনার ভালো না লাগার কারন হতেই পারে।

একসময়ের ভালবাসার প্রত্যাখানের শোধ শামীম হায়দার শরীর দিয়ে নিচ্ছে, এইই তাহলে গল্পটি?

নাহ। গল্পটি শুধু এইটুকুই নয়। 'শুধু' কেনো? আদৌ এটি নয়। অন্য কিছু। আমি অন্ততঃ অন্য কিছু ভেবে লিখেছি। আপনার কাছে অনুদিত হয়েছে এইভাবে। শাব্দিক যোগাযোগের এই হলো মজা, এই বিনির্মান।

আবারো ধন্যবাদ হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অচেনা [অতিথি] এর ছবি

আমার কাছে এই গল্প অনেক ম্যাচিওরড মনে হল।গল্পবর্ননার স্টাইল বদলেছেন হাসান।ভালো লাগলো।তবে এই গল্প কি আরো দীর্ঘ হতে পারতোনা?অবশ্য হাসান মুর্শেদের যে কয়টি গল্প পড়েছি সবগুলো প্রসংগেই এ কথা বলা যায়।ইচ্ছে করেই কি পাঠকের জন্য অতৃপ্তি রাখেন?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ম্যাচিওরড মনে হলো সত্যি? শিশুতোষ লিখতে পারিনা যে হাসি

ইচ্ছে করেই কি পাঠকের জন্য অতৃপ্তি রাখেন?

না। লেখার সময় লেখাটাই মাথায় থাকে, পাঠক না। তবে আমি যখন পাঠক তখন লেখকের কাছে এই শূন্যতাটুকু প্রত্যাশা করি।সব বলে দিলে পাঠক হিসেবে আমার অংশগ্রহনের ভূমিকা সংকুচিত হয়ে পড়ে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উপরে বিষন্নের মন্তব্য পড়েই লেখাটা পড়লাম। দু:খিত, কিন্তু মন্তব্যের সাথে আমার ভাবনার মিল হলোনা।

হাসান মোরশেদের লেখার সাথে যারা পরিচিত তারা বুঝতেই পারছেন লেখাটা একেবারে ভিন্ন ধারার। আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো।

স্ত্রী জানেন জরুরী মিটিং আছে।মিটিং শেষে ডিনার পার্টি।ফিরতে রাত হবে।বেশ রাত।বিদেশী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার প্রধান ব্যবস্থাপকের এমন রাত হয়। স্ত্রী অভ্যস্ত। সন্তানদ্বয় ও। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন প্রভাষিকা সোহানা আক্তারের ব্যবসায়ী স্বামী, আমদানী কাজে সিঙ্গাপুর।একমাত্র সন্তান শ্বাশুড়ীর কাছে নিরাপদ।ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অনুষ্ঠান আছে।ফিরতে দেরী হবে।

এই প্যারাটা একদম খাপছাড়া মনে হলো। গল্প শুরু হওয়ার সাথে এই প্যারার কোন মিল পেলামনা। বরং প্যারাটির বক্তব্য আমাকে কিঞ্চিত অফট্রাক করে ফেলেছিলা।

-কিছু বলবে?
-নাহ
-খারাপ লাগছে?
-নাহ
-অনুশোচনা
-নাহ!

অনুশোচনার ব্যাপারটা কেন আসলো? ঠিক বুঝলাম না।

আরেকটা বিষয় ধরতে পারলামনা-- একুশ বছর তাদের দেখা হয়নি, তাহলে হলিডে হোমসের ঘরের দৃশ্যটা কখনকার?

লেখক মাত্রই পাঠকের সমালোচনা আশা করবেন, তেমন মেজাজ থেকেই মন্তব্য দিলাম। আর ভিন্ন স্বাদের লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই প্যারাটা একদম খাপছাড়া মনে হলো। গল্প শুরু হওয়ার সাথে এই প্যারার কোন মিল পেলামনা। বরং প্যারাটির বক্তব্য আমাকে কিঞ্চিত অফট্রাক করে ফেলেছিলা।

দ্বিমত নেই।গল্পের দুর্বলতম অংশ এটি।

অনুশোচনার ব্যাপারটা কেন আসলো? ঠিক বুঝলাম না।

ব্যাপার আছে :)। ঐটাই গল্পের ভেতরের অনুল্লেখিত গল্প।

আরেকটা বিষয় ধরতে পারলামনা-- একুশ বছর তাদের দেখা হয়নি, তাহলে হলিডে হোমসের ঘরের দৃশ্যটা কখনকার?

একুশ বছর পর পুনঃদেখা। দেখা হওয়ার আরো কদিন পরে হলিডে হোমস হাসি

লেখক মাত্রই পাঠকের সমালোচনা আশা করবেন, তেমন মেজাজ থেকেই মন্তব্য দিলাম।

লেখকদের লেখা ছাপানোর মধ্যেই একটা ভিক্ষাবৃত্তি থাকে, হে পাঠক তুমি দয়া করে আমার লেখা পড়ো, আমার লেখা তুমি নিয়ে কথা বলো হাসি

আর ভিন্ন স্বাদের লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকে ও হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ব্যাপার আছে :)। ঐটাই গল্পের ভেতরের অনুল্লেখিত গল্প।
তার মানে আরো গল্প আসতেছে? চমৎকার।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌গল্পের শেষাংশ দিলেন, আগের অংশ কই?

আগের অংশ কী পাঠকের কল্পনার উপর ছেড়ে দিলেন? হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাঠক ঈশ্বর হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মনে হলো উপন্যাসের এক ঝলক পড়লাম। আগে পরে অনেক কিছু আছে, যেগুলোর খানিক এ গল্পের উপরে ভিত্তি করে ভাবা যায়, অথবা একেবারে পাঠকের কল্পনা। ওড়াও ফানুস হাসি
এইজন্যই ভালো লাগে...

তবে এটা সত্য, এ গল্প একটু অন্য রকম। ঐ আগে বলা ঝলকের কারণেই...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অনিকেত এর ছবি

হাসান, আপনার লেখা পড়া হয় কিন্তু কমেন্ট করা হয়ে ওঠেনি।
আজকের লেখাটি এমন যে আমি প্রায় বাধ্য হলাম!

আমার এই গল্পটি খুব ভাল লেগেছে। আপনি একেবারে নির্মোহ দৃষ্টিতে কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমার এই দিকটা খুব ভাল লেগেছে। একজন কিছু একটা সৃষ্টি করছেন--কিন্তু সৃষ্টিকে অনেকখানি স্বাধীনতা দিয়েছেন।এ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প নয়। এ আমাদের প্রতিদিনের লুকিয়ে রাখা,মুক হয়ে থাকা কিছু কাহিনীর বিবরন।

খুব ভাল লাগল। এই রকম 'ম্যাচিওরড' গল্প সচলায়তনে খুব একটা বেশি লেখা হয় না।

আরো আসুক এই রকম।

শুভেচ্ছা রইল।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

একমত জানাই।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা। সময় করে পড়লেন ও মন্তব্য করলেন বলে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

আপনার অন্যান্য গল্পের সাথে আজকের মিল পেলাম না। ভাল লাগল অবশ্য, কারন পাঠক হিসাবে আমি অনেক কিছুই কল্পনা করে নিতে পেরেছি। বয়সের ভার হয়তো আবেগ কমিয়ে শরীরের চাহিদা মেটানোতেই জোর দেয় বা পরিতৃপ্তি পায়- এমনই একটা ট্যাগলাইন আসলো নিজের মনে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই যে আপনার কিছু একটা মনে হলো,লেখক হিসেবে আমার প্রাপ্তি এটা- আমি কিছু চাপিয়ে দিলাম না আপনাকে হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক ( এখন লগইন করতে ইচ্ছা করছে না ) এর ছবি

অনেক অনেক স্মার্ট গল্প । প্লটেও , বিন্যাসেও ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এখন লগইন করতে ইচ্ছা করছে না

এইটা আবার কোন ভাঁও তোর?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সচল জাহিদ এর ছবি

গল্প লিখতে পারিনা তাই পড়ি গোগ্রাসে। ভাল লাগল।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

বেড়ার ফুটো দিয়ে ঘরের সামান্য অংশ দেখে কী আশ মেটে? গল্পটা অনেক বড় হতে পারতো!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

স্বীকার্য।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উজানগাঁ এর ছবি

সেই সহবাস থেকে আপনার লেখা পড়ে আসছি। মুগ্ধতাতো একটা ছিলই। সাবজেক্ট ম্যাচিওরড নিঃসন্দেহে। কিন্তু আপনার গল্পবলার স্টাইল আমায় ঠিক অইভাবে টানতে পারেনি। প্রায় এর কাছাকাছি বিষয় নিয়ে অনেক বড় ক্যানভাসে অনেক ভাল কাজ হয়েছে।

পুরো গল্পটা আমি হোঁচট খেয়ে খেয়ে শেষ করেছি। এক প্যারা থেকে আরেক প্যারার কাহিনীগত দূরত্বটা এতো বেশী যে আবার গল্পে ফিরে আসতে সমস্যা হচ্ছিল, প্রত্যেকটা দৃশ্য এতো কমপ্যাক্ট যে, শ্বাস নিতে রীতিমত কষ্ট হচ্ছিল।

বরাবরের মতোই আপনার লেখার ক্যানভাসটা ছোট। অবশ্য সহবাসে যারা লিখতেন, সেই মঈনুল চৌধুরী, অর্জুন মান্না, রানা মেহের কিংবা নাজমুল আলবাব প্রত্যেকের মধ্যেই এই ব্যাপারটা ছিল। বলতে দ্বিধা নেই, ভালোই লাগতো। হাসি

আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিটা জানালাম। অনেক অংশেই হয়তো আপনি একমত হবেন না। তারপরও জানালাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনি 'সহবাস' এর পাঠক? সে জন্যেই তো ভাবি আপনাকে এতো চেনা চেনা লাগে কেনো? হাসি

পাঠক হোঁচট খেলে সেটা লেখকের দায়।স্বীকার করছি। খুব কম্প্যাক্ট মনে হলো কি? আমি বরং ভেবেছিলাম- ভেবে নেয়ার অনেকটুকু জায়গা রেখে দেয়া হয়েছে পাঠকের জন্য। গল্পের ভেতরে আরো কিছু গল্প আছে- সেই অনুগল্পগুলো পাঠকেরা নিজের মতো নিজের ভেতর তৈরী করে নেবে।

বিনির্মানের একটা খেলাখেলা চেষ্টা মাত্র যদি পাঠক ও এর অংশ হয়ে উঠে। কিন্তু এর বদলে শ্বাস আটকে আসার মতো কষ্ট হয় পাঠকের তাহলে তো খেলাটা মরে গেলো মাঠে-ঘাসহীন হাসি

স্পষ্ট মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উজানগাঁ এর ছবি

বিনির্মানের একটা খেলাখেলা চেষ্টা মাত্র যদি পাঠক ও এর অংশ হয়ে উঠে। কিন্তু এর বদলে শ্বাস আটকে আসার মতো কষ্ট হয় পাঠকের তাহলে তো খেলাটা মরে গেলো মাঠে-ঘাসহীন।
মনে হয় না। ঘাসহীন মনে করারো কোনো কারণ নেই।
অনেক পজেটিভ মন্তব্য আমার চোখে পড়েছে। হাসি

উজানগাঁ এর ছবি

একটা প্রশ্ন কয়েকদিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ক্যাডেবার/ক্যাডেভার নামে একটা দীর্ঘকবিতা আপনাদের মধ্যে কে লিখেছিলেন, ফ্ল্যাপে ছাপা হয়েছিল। নামটা অনেক চেষ্টায় মনে করতে পারলাম না। ডাক্তারি পড়তেন মনে হয় তখন, যতদূর মনে পড়ছে। ঐসময় লেখাটা আমার বেশ ভাললেগেছিল। কয়েকটা লাইন মাঝেমধ্যেই মাথায় ঘুরপাক খায়। আপনি কি মনে করতে পারছেন? জানালে উপকৃত হতাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ক্যাডেবার করেছিল আমাদের বন্ধু চৌধুরী রায়হান পারভেজ( চৌরাপা)। 'সহবাস' এর ডিজাইন ও লেআউট ওর করা ছিলো। অসম্ভব প্রতিভাবান একটা ছেলে-কবিতা ও ডিজাইনে। কুমিল্লা মেডিকেল থেকে পাশ করেছে।

এখন সম্ভবতঃ সিলেটেই প্র্যাকটিস করে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উজানগাঁ এর ছবি

'সহবাস' এর ডিজাইন বরাবরই নজর কাড়তো। নামটা জানানোর জন্যে ধন্যবাদ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

একরাশ মুগ্ধতা !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রণদীপম বসু এর ছবি

কিন্তু সেই রাতে, রেঁস্তোরা থেকে ফিরে আসার পর রাতে তার স্ত্রী অর্গাজমের আনন্দ পান দীর্ঘদিন পর।চোখ বন্ধ নিশ্বাস নিচ্ছিল শামীম অর্ধ-উত্থিত শিশ্নে ঠোঁট বুলিয়ে স্ত্রী বিড়বিড় করেন- ‘আই লাভ ইউ ম্যান’ ।

খোলাপিঠ নিয়ে সোহানা আক্তার আবার উপুড় হন। শামীম জানালার কাছ থেকে ফিরে আসেন।

এখানে এসেই হয়তো একটা গল্প শেষ হয়ে যায়। এর পরে যেটুকু, তা হয়তো জীবনের বহমানতায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গল্পটিকে চারিয়ে দেয়ার লেখক-প্রণোদনা মাত্র। চলমান গল্পের জন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না এখানে।
আর অনুশোচনার প্রশ্নটিকেই আরোপিত মনে হচ্ছে।

হাসান মোরশেদের গল্পগুলা নিশ্চয়ই ইয়োগা প্র্যাকটিস করে। নইলে এতোটা মেদহীন হয় কী করে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এখানে এসেই হয়তো একটা গল্প শেষ হয়ে যায়।

হয়তো হয়। পাঠকের ভাবনার অসীম স্বাধীনতা।

তবে আমার কাছে এই গল্পের প্রান হলো একেবারে শেষলাইনটা। বাকীটুকু শুধু শরীর ঐ প্রানটুকুকে ধারন করার প্রয়োজনে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মামুন হক এর ছবি

সাহসী কিন্তু পরীক্ষা মূলক লেখা। লেখক বই খুলে পরীক্ষা দেয়ার আনন্দ পেয়েছেন আশাকরি :)।

স্নিগ্ধা এর ছবি

গল্পের দৈর্ঘ্য, কাহিনীর বিস্তার (বা তার সংকোচন, যেভাবেই দেখি), বিশেষ করে শেষ লাইনটা - অর্থাৎ, পুরো গল্পটা, ভালো লেগেছে।

এবার একটু লেখক-পাঠক বিনির্মাণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিই, শর্ত একটাই - গল্পটা পড়ে আমার যা যা ধারনা হয়েছে, লেখার সময় সেগুলোর কোনটা কোনটা আপনার চিন্তায় ছিলো না, বলতে হবে ... হাসি

শামীম হায়দারের শীর্ণতার কথা এসেছে, কারণ কি - অতিরিক্ত শীর্ণতার কারণে পুরুষ হিসেবে তার আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিলো, সোহানা আক্তারের প্রেমিক হবার 'যোগ্যতা' তার ছিলো না - যে খামতি গল্পের বর্তমানে এসে দৈহিক গঠন/গড়ন এবং সঙ্গিনীকে অর্গ্যাজম দিতে পারার ক্ষমতার কারণে তার পুষিয়ে গিয়েছে, এমনকি তার একসময়ের ভালোলাগার মেয়েটির সাথেও একটা শারীরিক সম্পর্ক করতে পেরেছে, অতএব, এখন সে একজন আত্মবিশ্বাসী পুরুষ - এগুলো?

তবে, কৈশোরের সেই প্রেমে পড়ার কিন্তু প্রেম না হওয়ার/পাওয়ার অভাববোধটা রয়ে গেছে?

আপনি প্রকৃতিপ্রেমিকের মন্তব্যের উত্তরে যে প্যারাটাকে গল্পের দুর্বলতম অংশ বলে চিহ্নিত করলেন, সেটাকে আমি ভেবেছিলাম গল্পের প্রয়োজনেই চরিত্রের জীবন বা জীবনে তার স্বচ্ছন্দ, নিরাপদ একটা অবস্থান বোঝানোর জন্য, অর্থাৎ চরিত্রটার একটা প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্য লেখা হয়েছে। তা নয়, তার মানে?

চোখ বন্ধ নিশ্বাস নিচ্ছিল শামীম অর্ধ-উত্থিত শিশ্নে ঠোঁট বুলিয়ে স্ত্রী বিড়বিড় করেন- ‘আই লাভ ইউ ম্যান’

এখানে আই লাভ ইউ পর্যন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু 'ম্যান' কথাটা মেয়েরা কি বলে বাংলাদেশে? ঠিক নিশ্চিত নই। কেমন যেন একটু আরোপিত, আউট অফ কন্টেক্সট মনে হলো।

আপনি সাধারণতঃ যত্ন করে লেখেন বলে মনে হয়, এটা একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন বোধহয়। সেটা গল্পের মান নিয়ে বলছি না, বিভিন্ন বাক্যগঠনের কারণেই শুধুমাত্র। যেমন -

দেখা না হওয়ার একুশ বছর তারা সুপার মার্কেটের চতুর্থ ও সপ্তম তলায় কার্যরত ছিলেন তেমন ভাবনার কোন কার্যকারন নেই।

এখানে তলাতেই কার্যরত ছিলেন না লেখাতে হটাৎ করে একটু হোঁচট খাচ্ছি পড়তে গিয়ে। চোখ মেলেননা এবার - এখানে কি মেলেন হবে?

আবারও বলছি, গল্পটা ভালো লেগেছে!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনার মতো পাঠক পাওয়া তো সৌভাগ্য স্নিগ্ধা :)। সিরিয়াসলি বলছি।

ওক্কে এবারে একে একেঃ-
১। শীর্ণতার কথা এসেছে- আপনি যেভাবে ভেবেছেন আমি সেভাবে ভাবিনি। আমি সময় এবং অতিবাহিত সময়ে বদলে যাওয়াকে চিহ্ণিত করতে প্রতীক হিসেবে এটা এনেছি।

২।গল্পের প্রয়োজনেই ঐ প্যারা-ঠিকাছে। কিন্তু এই প্যারা খুব সরল বর্ণনায়-এর মধ্যে কোন সুষমা নেই। দুর্বল অংশ বলা সেই অর্থে।

৩। এ নিয়ে কিছু বলার নেই হাসি ( গাল লাল হওয়ার কোন ইমোটকিন আছে নাকি?)

৪। ঠিক।লিখার একটা তাড়না ছিলো ভেতরে, হচ্ছিলোনা। ধরা দেয়া মাত্র এটা সরাসরি এখানে লিখেছি।একেবারেই ভার্জিন একটা লেখা হাসি

আবারো বলছি, অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

খেকশিয়াল এর ছবি

খুবই ভাল একটা গল্প
(আর অনুশোচনার ব্যপারটা মনে হয় বুঝতে পারছি দেঁতো হাসি)

------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সুমন সুপান্থ এর ছবি

অনেকগুলো কারণে বার কয়েক পড়া হলো গল্প । তার মধ্যে প্রধানটাই বোধ হয় এই যে, এই প্রথম হাসান মোরশেদের কোন গল্প পড়া হলো যেটা উত্তম পুরুষে লেখা নয় !

মোরশেদের গল্প বা তাঁর যে কোন লেখা নিয়েই মন্তব্য করার বিপদ আমার সব সময়ই থাকে । হারাতে হারাতে নিঃশেষিত বন্ধু দলের একমাত্র সদস্য যার সঙ্গে এখনো যোগাযোগটা টিকে আছে, বলেই নয়; তাঁর আর আমার নিজের প্রায় সব লেখা নিয়েই, আমরা পরষ্পর এত বেশী কথা বলি যে, আলাদা করে মন্তব্য করতে গেলে দেখা যায় কোন না কোনভাবে তার প্রভাব রয়েই গেছে ...!

আমার অনেকদিনের অপেক্ষা ছিলো যে মোরশেদ কখনো নাম পুরুষে কিছু লিখবে কি না ! লিখলে, কেমন হবে সেই লেখার তারতম্য ! কেমন তার ভঙ্গি - বলবার । এই গল্প পড়ে বলতেই হচ্ছে খুব আলাদা করা যায় নি । তাকে তার ধরনেই গল্প বলতে দেখলাম ...

কিন্তু সব চেয়ে মজা লাগলো, লেখককে যখন বারবার এসে তাঁর পাঠককে বলে বুঝাতে হচ্ছিলো এটা এই কারণে লেখা , ওইটা ওই কারনে লেখা না । আমি ইতিবাচক অর্থেই নিচ্ছি বিষয়টা । ব্লগ না হলে হয়তো এটাও সম্ভব হতো না । কোথায় কোন ছোট/বড় কাগজে একটা লেখা ছাপা হয়েছে, পাঠকের সেটা ভালো লেগেছে/ লাগে নি , কেন লাগে নি , কেন লেগেছে - বেচারা লেখক কি আর এতো সহজে জানতে পেরেছে কোনকালে !
কিন্তু এই জানাজানির একটা বিপদও আছে মনে হচ্ছে । বিশেষত মোরশেদ কে যখনই এই রকম হ্রষ লেখায় পুরো গল্প বলে দেবার চেষ্টারত দেখি, আমার কেন জানি বারবার মনে হয়, নিরন্তর অন্তর্জালে লেখার ফলই এই কি না যে, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, পাঠক ধৈর্য হারাবে, এই ভাবনাগুলো অনেকের মতো মোরশেদের মাথায়ও খেলা করে !

মানছি, খুব সহজেই তুই বনফুলের উদাহরণ টেনে নিয়ে আসতে পারবি, মোরশেদ । কিন্তু বলতে গেলে এটা ব্যতিক্রমই । আমাদের ভাষায় না শুধু, বিখ্যাত গল্পগুলোর প্রায় সবগুলোতেই ঘটনার বিস্তার, গল্পের করিত্‌-কৌশলের জন্যই পাঠককে জায়গা ছেড়ে দিয়েও, লেখককে বর্ণনার দিকে যেতে হয়েছে । না হলে শাওনের মতো আরও মনোযোগী পাঠকদের ( এক প্যারা থেকে আরেক প্যারার কাহিনীগত দূরত্বটা এতো বেশী যে আবার গল্পে ফিরে আসতে সমস্যা হচ্ছিল, প্রত্যেকটা দৃশ্য এতো কমপ্যাক্ট যে, শ্বাস নিতে রীতিমত কষ্ট হচ্ছিল। বলাটা যৌক্তিক হয়ে পড়বে !

এইবার গল্প নিয়ে বলি কিছু । ( মাপ করে দিস মোরশেদ )
গল্প টা কে আমার গল্প ই মনে হয়েছে । কিচ্ছা মনে হয় নি অন্তত । ( উত্তম পুরুষে না লেখাই এর প্রধান কারণ ) বর্ণনায় কিপ্টামি ছাড়া আর কোন সমস্যা দেখি নি ।
বড় বেশী খোলামেলা, বড় বেশী শরীর-সর্বস্ব বলে বিষন্ন'র লেখাটা ভালো লাগলো না ! তা, না লাগতেই পারে । ধরে নিচ্ছি খোলামেলা বর্ণনার 'শিল্প অ-সফলতার' দায় লেখক কিছুটা নিলেনই । কিন্তু আমাদের পাঠকের একটা দায়ও তো থাকে । উত্থিত লিঙ্গ বলেই অচ্ছ্যুত্‌ ? আমাদের মৌলিক সাহিত্যের সব চেয়ে বড় নিশান- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে তো 'চ'মার্গীয় শব্দে ঠাসা !
তো ?

@ স্নিগ্ধা, ম্যান টা আরোপিত মনে হওয়াই স্বাভাবিক । কিন্তু লেখক কি স্রেফ নিছক বাস্তব লিখবেন, নিরেট উপাখ্যান ? লেখকেরা বোধকরি অভিজ্ঞতা ( বাস্তবতার্থে ) চেয়ে অভিজ্ঞান থেকেই লিখেন বেশী !

{ অবশ্য অই 'ম্যান' শোনার অভিজ্ঞতা মোরশেদের আছে বলে এই মাত্র জানালো ! ( চোখ টিপার ইমো ক্যমনে দেয় ? )}

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

স্নিগ্ধা এর ছবি

@ স্নিগ্ধা, ম্যান টা আরোপিত মনে হওয়াই স্বাভাবিক । কিন্তু লেখক কি স্রেফ নিছক বাস্তব লিখবেন, নিরেট উপাখ্যান ? লেখকেরা বোধকরি অভিজ্ঞতা ( বাস্তবতার্থে ) চেয়ে অভিজ্ঞান থেকেই লিখেন বেশী !

এখানে 'অভিজ্ঞান' টাই যথার্থ মনে হয় নি বলেই না ওকথা বলা!

তবে -

{ অবশ্য অই 'ম্যান' শোনার অভিজ্ঞতা মোরশেদের আছে বলে এই মাত্র জানালো ! ( চোখ টিপার ইমো ক্যমনে দেয় ? )}

এর পর আর কিছু বলার থাকতেই পারে না চোখ টিপি (চোখ টিপার ইমো এইভাবে দ্যায়)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চোখটিপি হলো সেমিকোলন দিয়ে ) অর্থাৎ ; তার পর )

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এইখানে বোধহয় নিরীহ লেখকের নিশ্চুপ থাকাই নিরাপদ দেঁতো হাসি
(সুমন তুই বন্ধু বেইমান, তোর খবর আছে...)
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আপনার প্রতিটি লেখাই আমি অপরিসীম মুগ্ধতা নিয়ে পড়ি। এটাও পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এই হাসান মোরশেদকে আমি চিনি না। তবে আনকোড়া এই হাসান মোরশেদকে ভালো পাইলাম।
গল্পে বেশ টাইম ট্রাভেলিং হইছে। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎসব মিলে একাকার হইছে। আর এই ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে না বলা আরো কিছু গল্পেও ঢুঁ মেরে আসলাম, একান্তই পাঠকীয় কল্পনার তোড়ে। এটাও বেশ উপভোগ করলাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আর এই ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে না বলা আরো কিছু গল্পেও ঢুঁ মেরে আসলাম, একান্তই পাঠকীয় কল্পনার তোড়ে

ঠিক এটাই চাচ্ছিলাম।
আপনার ঐ ঢুঁ মারা ঐ গল্পগুলো আমাদেরকে শুনান না কেনো?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ফারুক হাসান এর ছবি

গল্প পড়ে নিজেকে অনেকটা সতেজ লাগছে। মনে হলো, লেবু পাতা ডুবানো চা খেলাম। গল্পকারকে অভিনন্দন!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সিরাত এর ছবি

ফরম্যাটিংটা আরো যত্ন করে করলে পড়তে আরো সহজ হতো। হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কষ্ট করে পড়লেন,ধন্যবাদ হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

তানবীরা এর ছবি

আমি গল্প লিখতে জানি না যারা জানেন তাদেরকে আমার ইশ্বর এর কাছাকাছি মনে হয়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি নাচতে জানিনা যারা জানেন তাদেরকে আমার কিন্নরীদের কাছাকাছি মনে হয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সাইফ এর ছবি

ভিন্নধর্মী লেখা, এত অল্পকথায় এত জায়গা কাভার কোরলেন কিভাবে এইটা বুঝার জন্য আরো ২ বার পড়লাম, আমার মত গরু গাধার জন্য বোঝা দায়, তাই যা পাইলাম, তা নিয়া খুশি হোবার চেষ্টা কোরতেসি। ধন্যবাদ, আশাকরি এরকম লেখা আরো আসবে।

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

আপনাকে মানিক।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ থীম! ভাল্লাগল।

তবে গল্পটা কেমন যেন একটু হাড় জিরজিরে রুগ্ন মনে হলো, আরেকটু মাংসের প্রলেপ (মানে বর্ণনা) থাকলে মনে হয় আরো আরাম করে দাঁত বসানো যেত হাসি

আগে জানানো না হয়ে থাকলে এখানে জানাই, 'শমন শেকল ডানা' আমার অসম্ভব ভাল লাগা একটা বই। আপনার পরবর্তী উপন্যাসের জন্য অগ্রিম অভিনন্দন ও শুভকামনা থাকল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।