ক্যারোলিনার বাড়ি ফেরা-১
-----------------------------------------------------------
পুরোটা বিকেল কাটলো তার ভালো লাগা ঘোরে ।
ঘোর কাটলো সন্ধ্যেবেলা । ঘোর কেটে গেলো, যখন মধ্যবয়স্ক লিথুনিয়ান মহিলা তাকে নতুন পোষাক পড়তে দিলো । এতো খাটো পোষাক ক্যারোলিনা কোনোদিন পড়েনি এর আগে ।
লিথুনিয়ান মহিলা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো কি কাজ করতে হবে তাকে আর কতো টাকায় সে আসলে বিক্রি হয়েছে তাদের কাছে ।
হায় ক্যারোলিনা । লিথুনিয়ার দরিদ্র বালিকা, সে এসেছিলো লন্ডন নগরে অনেক অনেক বেশী উপার্জনের আশায় ।
শরীর বিক্রী করতে হবে-জানা ছিলো না তার ।
ধীরে ধীরে সে আবিস্কার করে, তার মতো আরো অনেক মেয়েকে দিয়েই এ ব্যাবসা চালানো হচ্ছে । মেয়েরা আসছে লিথুনিয়া, চেকোশ্লোভিয়া,রুমানিয়া,রাশিয়া থেকে । কেউ আগে এসেছে, কেউ পরে । প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মুখ । এদের অনেকে মেনে নিয়েছে এ জীবন ।
কিন্তু ক্যারোলিনা মেনে নিতে পারেনা । প্রায় মাস ছয়েক চলে যায় ।
এ সময় তার কথা হয়, আরেক ভারতীয় মহিলার সাথে । এই মহিলা ও দেহব্যাবসা করে । কিন্তু ক্যারোলিনাদের মতো সে বন্দী নয় । মুলতঃ গৃহবধু । মাঝে মাঝে টাকার প্রয়োজন পড়লে সে এই ফ্ল্যাটে আসে । ক্যারোলিনা সব কথা শুনে সে বুদ্ধি বাতলে দেয় ।
আরো পরে একদিন সুযোগ বুঝে সে বেরিয়ে আসে ফ্ল্যাট থেকে । ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে পথচারীদের কাছ থেকে জেনে নেয় পুলিশ ষ্টেশনের হদিস ।
এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পুলিশের মতো, বৃটিশ পুলিশ ও ঝামেলা এড়াতে চায় ।
তাই পুলিশ ক্যারোলিনা তুলে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তপক্ষের কাছে । ইমিগ্রেশন কর্তপক্ষ জানতে চায়, সে এস্যালাইমের আবেদন করতে চায় কিনা?
কিন্তু ক্যারোলিনা তখন ফিরে যেতে চায় তার দরিদ্র, নোংরা,ভবিষ্যতহীন লিথুনিয়ায় ।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইমিগ্রেশন অফিসার তাকে তুলে দেয় লিথুনিয়ার ফিরতি বাসে ।
ক্যারোলিনা যখন ফিরে আসে তার গ্রামে,তখনো সবুজ সব্জীখামার তমেনি রয়ে গেছে । একটু ও বদলায়নি তার দুই বেডরুমের ছোট বাড়ী আর নোনা ধরা দেয়াল গুলো ।
ক্যারোলিনা এখন কাজ করে লিথুনিয়ার অন্য এক শহরে । একটা ছোট চাকরী আর এক বয়ফ্রেন্ড । বয়ফ্রেন্ড কিছুই জানেনা সেইসব ।
মাঝে মাঝে এখনো তাকে আতংক তাড়া করে ফেরে, যদি সেই সব অপহরনকারী'রা ফিরে আসে আবার?
[ ১৯৯০ এর পটপরিবর্তনের পর থেকেই এর শুরু ।
পুর্বইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক দরিদ্রদেশগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ নারীপাচার হয়ে আসছে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে । এদের বেশীরভাগকে উন্নত জীবনযাপন ও ভালো উপার্জনের লোভ দেখিয়ে এনে বিক্রী করে দেয়া হচ্ছে পতিতালয়গুলোতে ।
এ বছর উদযাপিত হচ্ছে, বৃটেনে দাসব্যবসা সমাপ্তির ২০০ বছর । কিন্তু দাসব্যবসা রয়ে গেছে এখনো সেই আগের মতোই- ভিন্ন নামে, ভিন্ন ধরনে ।
*** ক্যারোলিনার উপর একটা ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম, এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়ার্কশপে । ]
মন্তব্য
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন