ভাষা নিয়ে দু'পশলা

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ২১/০২/২০১০ - ৫:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
গেলো সেপ্টেম্বরে মৃন্ময় যখন প্রথম স্কুলে গেলো, আমাদেরর দুজনেরই তখন অনেক উৎকন্ঠা। উৎকন্ঠার কারন একেবারে অমূলক নয়। আমরা আড়াইজন স্কটিশবর্ডারের যে ছোট্ট শহরে থাকি, সেখানে আমরা যে একমাত্র বাঙ্গালী তাই নয়, একমাত্র এশিয়ান, একমাত্র নন-ইউরোপিয়ান, একমাত্র নন-ইংলিশ স্পিকিং ইত্যাদি ইত্যাদি...
লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টারের মতো ইমিগ্রেন্ট অধ্যুষিত নগরীগুলোতে এদিকে অনেক সুবিধা।ইংরেজি না জেনে, ইংরেজি না বলে ও দিব্যি বিলেতবাস করা যায়। লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট এলাকার প্রায় সব স্কুলেই বাংলাভাষী শিক্ষক, সহ-শিক্ষক আছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা কিংবা ইংরেজি না জানা মা-বাবার সন্তানদের তেমন একটা সমস্যা হয়না শুরুর দিকে।

কিন্তু মৃন্ময়ের পুরো স্কুলে সেই একমাত্র নন-ইংলিশ ছাত্র, যদি ও ওর মা এই স্কুলেই সহ-শিক্ষক তবু ছেলের ক্লাশে তার অনুমতি নেই। প্রধান শিক্ষিকার সাথে আমাদের উৎকন্ঠা বিষয়ে কথা বললে তিনি আশ্বস্ত করলেন- কোন সমস্যাই হবেনা, বাচ্চারা খুব দ্রুত সবকিছু শিখে নেয়।

এবং সত্যিই কোন সমস্যা হলোনা।
মাত্র মাস ছয়েক। মৃন্ময় এর মধ্যে ক্রিসমাসের নাটক করে, গানের ক্লাশে হাজির হয়, বন্ধুদের সাথে শনিবারে আড্ডা দিতে যায় এবং ঘরে ফিরে মা-বাবার ইংরেজি উচ্চারনে ভুল ধরিয়ে দেয়!

ওদের বর্ণমালা শিক্ষার ধরন আমাদের শেখার বিপরীত। আমরা A, B, C, D...এরকম ধারাবাহিক শিখেছি। ওরা এই ধারাবাহিকতার ধারই ধারেনি। শুরু করেছে S দিয়ে। অক্ষরগুলোকে নামের বদলে পরিচিত উচ্চারন দিয়ে। যেমন 'M' কে 'এম' না শিখিয়ে শিখাচ্ছে 'ওমমম...'।

অভিভাবক সভায় এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে মজার উত্তর পেলাম।
S দিয়ে বর্ণমালা পাঠ শুরু কারন এর আকার বাচ্চাদের কাছে সব থেকে বেশী পরিচিত। সাপের মতো! ।
উচ্চারন প্রসংগে ব্যাখ্যাটা এলো এরকম- বৃটেনের এক এক অঞ্চলের মানুষের ইংরেজি উচ্চারন এক এক রকম। বার্মি ইংলিশ, ইয়র্কশায়ারি, স্কটিশ এরকম কতো ডায়ালেক্ট। কিন্তু শুরু থেকে বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের প্রমিত উচ্চারন শেখানো হয় যাতে সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ইংরেজী উচ্চারন প্রমিত হয়।

২।
প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আমি ম্যাংগো পাবলিক। প্রাইভেটের ধার ধারা হয়নি। শিশু শিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষা কোন পর্যায়েই শিক্ষকদের পাইনি ভাষার প্রমিত উচ্চারন শিক্ষা দিতে। বরং শিশু শিক্ষা পর্যায়েই আমাদেরকে ভুল উচ্চারনে বর্ণমালা শেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে এই ভুল কারো শুধরেছে, কারো রয়ে গেছে, এই ভুল জানা অনেকেই শিক্ষক হয়ে ভুল বাড়িয়েছেন, বাড়াচ্ছেন আরো।

প্রমিত ভাষা না শিখেই প্রমিত ভাষাকে উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা দেখি উত্তরাধুনিক নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাসে। আধুনিক হবার আগেই উত্তরাধুনিকতা!
বাংলা প্রমিত ভাষার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ এটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানীকৃত,পূর্ব বঙ্গের নিজস্ব নয়, পূর্ব বঙ্গের কোন অঞ্চলের মানুষের কথ্য ভাষা এটি নয়।

ঠিক আছে, ভালো কথা। তাহলে কোনটি পূর্ব বঙ্গের মানুষের মুখের ভাষা? আরো নির্দিষ্ট করে বললে- কোনটি পূর্ববঙ্গ? কোনটি বাংলাদেশ? পূর্ববঙ্গের কথ্য ভাষা'র দর্শন ঝুলিয়ে যে ভাষারীতি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটি কি এই অঞ্চলের সকল মানুষের কথ্য নাকি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাত্র যারা এই সময়ের সাহিত্য, সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছেন? সিলেট, চট্রগ্রাম, নোয়াখালি, বরিশাল এক এক অঞ্চলের মানুষের কথ্যরীতি এক এক রকম।
একটা দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি যদি তার সব অঞ্চলের মানুষের জন্য হয় সে ক্ষেত্রে একটা মানরীতিই সব থেকে নিরাপদ যা সকলের জন্য সহজবোধ্য।
পূর্ববঙ্গের ভাষারীতির দোহাই দিয়ে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের কথ্যভাষাকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ও কিন্তু এক ধরনের আগ্রাসন।

ভাষা রাজনীতির পেছনের গল্প আসলে আরো অনেক বিস্তৃত। ঐ যে বিশাল বুড়ো তার ছায়াকে যতো ভয়। বহুদিন চেষ্টা হয়েছে ধর্মের ধোঁয়ায়- কাজ হয়নি। এখন পূর্ব-পশ্চিমের ধোঁয়া!


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হে হে হে

মৃন্ময়ের, আপনাদের উচ্চারণে ভুল ধরার ব্যাপারটায় মজা পেলাম। হাসি

ওটা কি "ওমমম..." নাকি মুখ বন্ধ করে আমাদের "ম"-এর মতো করে শব্দ করতে থাকা! "এন" এর উচ্চারণটাও তো এরকম হওয়া উচিৎ। দাঁতে দাঁত কামড়ে এবং বের করে, ঠোঁট দুইটা ডানে-বামে ছড়িয়ে "ন" এর মতো শব্দ করে যাওয়া। বৃটিশদের আরও কিছু উচ্চারণের জিনিষ আছে না। ঐ যে দুইটা অক্ষর একসাথে জোট লাগায়ে কী সব হাবিজাবি বানিয়ে তারপর উচ্চারণ শেখায়। ঐটার একটা মজার উপায় আছে। কোনোটা হয় বল্লায় কামড় খাওয়ার পর মুখ থেকে বের হওয়া শব্দ, কোনোটা পিঁপড়ার আর কোনোটা মশার। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরে, তুই এতো জানলি কেমনে?
ঠিক। এরা উচ্চারনগুলো শিখায় আগে। বিচিত্র সব ধরনে, আমাদের কাছে ঠিক সাবলীল না হলে ও বাচ্চারা সহজেই সম্পৃক্ত হয়। মজা করে করে শিখে নেয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাফি এর ছবি

পশ্চিমঙ্গের ভাষাকে প্রমিত বাংলার একটা উৎস ধরা হয় তার সাথে একমত। আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অধিবাসীগণ নানা উপভাষায় কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। ভাষার বৈচিত্র্য থাকবেই। কিন্তু সমস্যা হয় যখন মূলধারার নাটক, সিনেমায় আঞ্চলিকতার একটা জগাখিচূড়ি দেখা যায়। এই প্রসঙ্গ আসলেই অবধারিতভাবে আনিসুল হক আর ফারুকী গং এর কথা মনে পড়ে। এই গোষ্ঠী এক বিচিত্র বাচনভঙ্গিকে তাদের সকল নির্মাণের পরিচিতি চিহ্ন বানিয়ে ফেলেছেন, যা দেখে মনে হয় সেটাই বোধহয় বাংলা ভাষার প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশে বাংলার যে সুরটাকে প্রমিত ধরা হয়, তার সাথে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চারণের যথেষ্ট পার্থক্য আছে। অন্তত বাচনভঙ্গিতে তো অবশ্যই। আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ অচিরেই বাংলার উপর তাদের কর্তৃত্ব হারাতে যাচ্ছে; অচিরেই ইংরেজি আর হিন্দীভাষী বাঙ্গালি'র সংখ্যা প্রমিত বাংলাভাষীদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে, হয়ত ছাড়িয়ে গেছেও।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এর পেছনে জটিল রাজনীতি আছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত!

---- মনজুর এলাহী ----

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মোরশেদ ভাই, আপনার লেখা পেয়ে ভালো লাগছে। বাচ্চাদের বড় করা বিষয়ক লেখা আমি অনেকদিন থেকেই লিখতে চাই, আপনি শুরু করে দিলেন দেখে ভালো লাগছে।

আমার মেয়ের কথাই বলি: সেদিন VCR-এর একটা টেপ কিনে এনেছি পুরাতন দোকান থেকে। নতুন তো অনেক দাম, তাই ২ডলার দিয়ে পুরানো কেনা। সে আগে কখনো VCR কিভাবে চালায় বা এর বৃত্তান্ত কি তা দেখেনি কারণ এর আগে আমারা ব্যবহার করিনি (যদিও জিনিসটা কেনা হয়েছে দেড় বছরেরও আগে‍!)

মজার বিষয় হল অন করার সাথে সাথে যখন ডিসপ্লেতে VCR শব্দটা জ্বলে উঠল, সে বলছে "ভিকার", "ভিকর", এভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে। উচ্চারণ করার চেষ্টা করছে দেখে মজা পেলাম। আপনার পোস্ট পড়ে ঘটনাটা মনে পড়ল তাই শেয়ার করলাম।

আমার মেয়ের স্কুলেও প্রথমে শুরু করেছে M is for Muffin, M is for mud, M is for mitten....

এসব নিয়ে লিখতে চাই, কিন্তু সময় পাইনা মন খারাপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অনেকেই আমাদেরকে গায়ে পরে( নাকি পড়ে) উপদেশ দিয়েছিলেন- বাচ্চার সাথে ঘরে ইংরেজি বলতে না হলে নাকি ওর ইংরেজি শেখা হবেনা।
আমরা এটা করিনি। ওর সাথে ছোটবেলা থেকে প্রমিত বাংলায় কথা বলি। স্কুলে ইংরেজি, ঘরে বাংলা। এখনো দুটোই ঠিক আছে।
দেখা যাক, কতোদিন থাকে হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাই, আমিতো টেনশনে আছি আমার মেয়ে ইংরেজী শেখে কিনা। বাসায় তো একটা শব্দও সে ইংরেজীতে বলেনা। তার মাথায় ঢুকে গেছে যে বাসা মানে বাংলা আর স্কুল মানে ইংরেজী। সেদিন আমার ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে আমরা বাংলায় কথা বলছি শুনে সে বলে এটা তো স্কুল, এখানে বাংলা বলছ কেনো? সে পুরাদস্তর বাংলা বলে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ইংরেজি হচ্ছে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সস্তা ভাষা।স্কুলের চর্চায় এটা ভালোই শিখে নেবে দেখবেন।
বাংলাটা ধরে রাখা হচ্ছে শক্ত কাজ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইংরেজী শিখতে অন্তত বাঙ্গালীর কোন সমস্যা নাই। প্রবাসে ইংরেজী শিখতে কোন বাড়তি প্রচেষ্টা লাগে না।

বাংলা শিখতে লাগে .....



অজ্ঞাতবাস

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

আপনার লেখা দারুন লাগলো।

সত্যি বলতে, বাসায় ইংরেজীর চর্চা বেশি করলে বাচ্চার বাংলা-ইংরেজি দুটোই ব্যহত হয়। আমাদের অধিকাংশের মুখেই প্রমিত ইংরেজি আসে না... তাই ভুল না শেখানোই ভালো। বাসায় প্রমিত-বাংলার চর্চা রাখলে দুটোই ঠিক ভাবে শেখা হয়।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম। আপনার সাথে প্রমিত বাংলার ব্যাপারে আমি একমত। নিজে পড়াই, আমরাও জোর দেই আগে প্রমিত ভাষা শেখার, সেটা যেই ভাষাই হোক না কেনো।

যখন ছোট ছিলাম, তখন একটা বয়স পর্যন্ত মা শুদ্ধ বাংলা ছাড়া কিছু বলতে দিতে চাইতেন না, ছেলে-মেয়ে ভদ্রভাবে কথা বলবে দেখে (নইলে মা কি শেখালো?)। আবার নিজের গন্ডির বাইরে শুদ্ধভাবে কথা বললে অন্যরা নাক উঁচু মনে করতো এবং এখনও করে। আরেকটু বড় হলে তাই স্থান-কাল-পাত্র বুঝে প্রমিত কিম্বা শহুরে ভাষা ব্যবহার করি। সেটাও মজার। অনেকের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় যে কেনো "গাঁইয়া ভাষা'' বলি, আবার অনেকে ভাবতেই পারে না যে "শুদ্ধ বাংলা" বলতে পারি। বোধহয় আমরা ''স্টেরিওটাইপ" করতে বেশ স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি বলেই কি?

আর আমারও কেনো জানি এই আনিসুল হক-ফারুকিদের নাটকের ডায়ালগুলো ভাল লাগে না। আগে যখন একখান বিটিভি-ই ছিল, তখন কতো ভালো ভালো নাটক মানুষ গিলতো যেখানে শুদ্ধ বাংলাই শুনতাম। এমনকি 'সংশপ্তক' কিম্বা 'অয়োময়'-এর মত নাটকেও আঞ্চলিক ভাষার সুন্দর প্রয়োগ ছিল। অভ্যাসের বশে অপছন্দ হচ্ছে না তো?

ভাল থাকবেন।

- শরতশিশির -

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এমনকি 'সংশপ্তক' কিম্বা 'অয়োময়'-এর মত নাটকেও আঞ্চলিক ভাষার সুন্দর প্রয়োগ ছিল।

নাটক উপন্যাসে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের চরিত্র আঞ্চলিক ভাষায় তো কথা বলবেই কিন্তু মান ভাষা হিসেবে যখন একটা আঞ্চলিক ভাষাকে চালানোর চেষ্টা করা হয় সেটা আপত্তিকর।

আমি শুদ্ধ অশুদ্ধ বলছিনা। বলছি প্রমিত ভাষার কথা। এটা না শেখা, না শেখানোর মধ্যে কোন কৃতিত্ব আছে কি?
বরং একেবারে শুরু থেকে সঠিক উচ্চারনে ভাষা শেখাটা জরুরী বলেই মনে হয় আমার কাছে।

এখন দেখি নাটকগুলোতে প্রমিত ভাষার গুষ্ঠি উদ্ধার হচ্ছে অথচ মফস্বলে আমরা যারা বড় হয়েছি, থিয়েটার চর্চার প্রথম শিক্ষাই ছিলো সঠিক উচ্চারন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশেও বেশ কিছু স্কুল এই ভাবে বাচ্চাদের বর্ণমালার সাথে পরিচয় করানো শুরু করেছে। প্রক্রিয়াটা অনেক মজার।
লেখা পড়ে মজা পেলাম। হাসি

- মুক্ত বয়ান

মণিকা রশিদ এর ছবি

আমার মনে হয় বাচ্চাদের পক্ষে একই সাথে দুই তিনটা ভাষা সমান তালে শেখা খুবই সম্ভব। বিশেষ করে এখানে ক্যুইবেকে যারা ইমিগ্রান্ট তাদের সবার বাচ্চারাই একই সাথে তিনটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে শিখে যায় প্রায় একই সাথে। আমার নিজের ক্লাস রুমে প্রায় সব বাচ্চাদের দেখি বন্ধুদের সাথে ফ্রেঞ্চ বা ইংরেজীতে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে, অথচ বাবা মা এলে ঠিকই তাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করছে। আমার মেয়েও তাই, ইংরেজী সে স্কুল থেকেই শিখেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেহেতু ভাষা একটি যোগাযোগের মাধ্যম, শুরুর দিকে একটি শিশুকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে তার সুবিধামতন ভাষার ব্যবহার করতে দিতে। আমার মেয়ে কোনো কথা বাংলায় বোঝাতে না পারলে আমরা ইংরেজীতে তার জবাব দেই বা ব্যাখ্যা করে দেই। আর চার বছরের মেয়ের জন্যে ভিন্ন তিনটা ভাষায় কথা বলা এখন একটি খেলার মতন, সব অজানা শব্দ বাংলা থেকে ইংরেজী-ইংরেজী থেকে ফ্রেঞ্চে ট্রান্সলেশন করা এখন আমারদের ঘরে একটা দারুণ মজার গেম!

আমার মনে হয় আমাদের দেশে ভাষা ( বিশেষ করে বাংলা) শিক্ষার পদ্ধতিটা খুবই পুরানো আর অনেক ক্ষেত্রেই অযোগ্য শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত। আমাদের মফস্বলের স্কুলে বাংলা শিক্ষকদের অনেককেই আমি শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা পড়তে দেখিনি।

আপনার লেখাটি পড়ে উৎসাহিত লাগছে। আমার নিজের খুব ইচ্ছ রয়েছে শিশুশিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে লিখবার।
____________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমার মনে হয় বাচ্চাদের পক্ষে একই সাথে দুই তিনটা ভাষা সমান তালে শেখা খুবই সম্ভব

ঠিক।

আমাদের দেশে যেমন ধাঁধায় ফেলে দেয়া হয় বাংলা মিডিয়াম নাকি ইংলিশ মিডিয়াম? তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়ারা ভুগে উন্নাসিকতায়, আর বাংলা মিডিয়াম পড়ুয়ারা হীনমণ্যতায়।
অথচ একটা আরেকটার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়াটা জরুরী না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লে বাংলা অচ্ছ্যুৎ হতে হবে, এর কোন যুক্তি নেই। বাংলা মিডিয়ামে পড়ে ও চমৎকার ইংলিশ শেখা সম্ভব, চাইকি একটু উঁচু ক্লাসে এসে ফ্রেঞ্চ, স্পেনিশ- যতো বেশী ভাষা শিক্ষা ততো সম্ভাবনার দুয়ার।

ইংলিশ আন্তর্জাতিক ভাষা এটা ও আমাদের দেশে বানানো তথাকথিত ধারনা মাত্র। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেই এক মাল্টা ছাড়া স্বয়ং ইউরোপেই ইংরেজির চল নেই। ইংরেজি নেই গোটা দক্ষিন আমেরিকা জুড়ে। ইংরেজি'র আন্তর্জাতিকতা টিকিয়ে রেখেছি আমরা সাবেক কলোনীরা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাহিন হায়দার এর ছবি

ইংরেজির আন্তর্জাতিকতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আসল কথা হচ্ছে ইংরেজিই একমাত্র আন্তর্জাতিক ভাষা না।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

অতিথি লেখক এর ছবি

অভ্যাসের বশে অপছন্দ হচ্ছে না তো?

এটা কিন্তু নিজেকেই জিঞ্জেস করছিলাম হক-ফারুকিদের নাটকের ডায়ালগ নিয়ে। অভ্যস্ত নই, সেজন্যও কানে লাগে।

আর প্রমিত ভাষা শেখার ব্যাপারে একমত তো ছিলাম প্রথমেই। যেটা বলতে ভুলে গেছি সেটা ছিল যে, থিয়েটার চর্চার ব্যাপারটা। গান, আবৃত্তি শেখা, সেখানেও। (অফটপিক) কোথায় জানি পড়েছিলাম, ওয়াহিদুল হক দুঃখ করে বলেছিলেন যে আগের মতো কেউ কষ্ট করে কিছু শিখতে চায় না।

মজার ব্যাপার কি জানেন, এই নাটকগুলো অনেক জনপ্রিয়, বিশেষ করে প্রবাসে। এমন অনেকেই আছেন (আমার এক বোন পর্যন্ত), যারা ডাওনলোড করে, পারলে দেশ থেকে আনিয়ে ডিভিডি দেখেন। আমাকে একজন বলেছিলেন যে, এভাবেই হওয়া উচিত, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। আমি আর কি বলবো!

আরেক অফটপিকঃ আপনি স্কটল্যান্ডে আছেন বলে বলছি - 'Monarch of the Glen' দেখেছেন? ক'দিন আগে পরপর চুটিয়ে দেখলাম। এখন খালি স্কটিশ হাইল্যান্ডসে যাওয়ার প্ল্যান ঠিক করতে হবে। এই হলো সিরিজটার লিঙ্কঃ
http://www.bbc.co.uk/scotland/tv/monarch/

- শরতশিশির -

হাসান মোরশেদ এর ছবি

না। অভ্যাসের কারনে না।
অপছন্দের কারন হলো মুলধারার মিডিয়ার প্রোডাক্টগুলোকে আমি অঞ্চল নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষের জন্য সহজে যোগাযোগযোগ্য( কমিউনিকেট করার মতো) দেখতে চাই। নাটক আমি ঢাকাইয়া, ঝিনাইদহ বা চাঁপাই-নবাবগঞ্জের ভাষায় দেখতে চাইনা। কারন এই ভাষা আমার প্রতিনিধিত্ব করেনা।

যেহেতু একই ভাষার উচ্চারন অঞ্চলভেদে বদলে যায় সে কারনে একমাত্র প্রমিত ভাষাই সকল অঞ্চলের মানুষের জন্য সমান হতে পারে।

সমস্যা হলো এর পেছনের রাজনীতি অনেক গভীর। ফারুকী টারুকী এরা নস্য। পূর্ব বাংলার ভাষারীতি আলাদা হবে, সংস্কৃতি আলাদা হবে পশ্চিম বাংলা তথা রবীন্দ্রনাথের থেকে।

আলাদা হবে ভালো কথা কিন্তু প্রচলিত প্রমিত ভাষার বিকল্প কি? আপনাদের ঢাকাইয়া ডায়ালেক্ট? তাহলে আমার সিলেটী, চাঁটগাইয়া, নোয়াখালীর ভাষা কি দোষ করলো?

অফটপিকঃ স্কটল্যান্ড ঘুরে যান। হাইল্যান্ডে বসে স্কচে চুমুক দেবেন হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখি, জুলাই-আগষ্টে আসতে পারি, ভাইয়ের গ্র্যাজুইয়েশন আছে ইংল্যান্ডে। তার আগে আমারটা শেষ করি! ভালো থাকবেন। নিমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ!

হিমু এর ছবি

১.
লেখাটা একটু অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে।

২.
আমি ইংরেজি বর্ণ পরিচয় শিখেছিলাম যে বইটা থেকে, সেটাতে A for Alligator ছিলো হাসি



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

একটু না। অনেকটুকুই। এইগুলো হলো যাচ্ছেতাই লেখা হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ঈগল এর ছবি

আমিও মনে হচ্ছে ওটা দিয়েই শুরু করেছিলাম হাসি পুরোটা বর্নমালা পশু-পাখিদের নাম নিয়ে ছিলো।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিক পশ্চিমবঙ্গ না...নদীয়া+যশোর মিলিয়ে প্রমিত ভাষা মানে যাকে ব্যাকরণ বইতে চলিত ভাষা বলে তাকেই আমরা বর্তমানে প্রমিত ভাষা বলে ধরছি। লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে এই জটিলতার অবসান ঘটাতে পারতো সাধু ভাষা। কিন্তু দুষ্টু বাঙালী ঐ লাইনে নাই। সেই জায়গা নিয়েছে চলিত ভাষা। এখন নিয়েই যখন নিয়েছে এর প্রতিকার মোটে চার রকম হৈতারে :

১. অভিন্নমান ভাষা হিসাবে সাধুভাষার বাধ্যতামূলক প্রতিষ্ঠাণ।

২. সকল আঞ্চলিকভাষা মিলিয়ে নতুন অভিন্নমান ভাষারীতির প্রস্তাবনা।

৩. যেমন চলছে তেমনই চলুক।

৪. ব্যাপান্না .... এট্টা লিখলেই হয়

কথা হইলো যে লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে এই জটিলতার অবসান সহজ। কিন্তু কথ্য ভাষায়? কোন সমাধান নাই। দুনিয়ার কোথাওই হয় নাই। পশ্চিমে যেইটা হয় যে প্রাতিষ্ঠাণিক শিক্ষাপ্রাপ্তরা প্রমিতরূপটা জানে। সেইটা দিয়া তারা অফিসাদালত সামলায়। কিন্তু লোকে তাই বলে যা তাগো জিভ সমর্থন করে। জার্মান ভাষার ক্ষেত্রেও বলা যায় যে ওসনাবুর্গ এলাকার ভাষারে প্রমিতভাষা হিসাবে পুরা আর্যজাতির উপর চাপানো হইছে। বলা যায় শুধু না বলা হয়ও। কিন্তু প্রয়োগের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত এক জাতিরাষ্ট্রে একটাই অভিন্নমানভাষা থাকে। জণগণের সেইটা মানার কোন দায় নাই কথ্যভাষার ক্ষেত্রে। সেইটা তারা মানেও না। কিন্তু লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে মাইনা নিতেছে। কিছু বদলাইতে গেলেও দেখা যায় প্রতিষ্ঠাণ ঘুইরা আসা লাগে।

প্রশ্নটা এইখানে আসলে প্রয়োগের। অর্থাৎ প্রশাসনের অবস্থান থিকা সিদ্ধান্তের জাতিতত্ত্ব বা ভাষাবিজ্ঞানের কচকচি এইখানে কইরা লাভ নাই।

আমার যা খুশি আমি সাহিত্যে ব্যবহার করতারি ঠিকাছে। সব যূগে সব কালেই ঠিক ছিল। তবে প্রমিত ভাষা জাইনা। না জানলে সমস্যা হইলো আপনি এই প্রসঙ্গের যে তর্ক সেই পর্যন্তই আসতে পারবেন না।



অজ্ঞাতবাস

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তবে প্রমিত ভাষা জাইনা। না জানলে সমস্যা হইলো আপনি এই প্রসঙ্গের যে তর্ক সেই পর্যন্তই আসতে পারবেন না।

সেই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নাশতারান এর ছবি

মৃন্ময়ের স্কুলে ধারাবাহিকতার ধার না ধেরেই বর্ণমালা শেখানোর রেওয়াজ দেখে চমৎকৃত হলাম। ক'বছর আগে যখন "অরণী" স্কুলটা শুরু হল ঢাকায়, তখন শুনেছিলাম ওদের ওখানেও এই রীতি। বর্ণগুলোর সাথে পরিচয় ঘটে তাদের ধ্বনিত রূপের মধ্য দিয়ে, ক্রমবিন্যাসের মধ্য দিয়ে নয়।

আমি বড় হয়েছি ইরানে। বাংলা, ইংরেজি আর ফারসি শিখেছি সমান তালে। কোথাও আটকায়নি কখনো। শৈশব থেকেই আমার উচ্চারণের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন আমার মা। চলতি জীবনে প্রমিত বাংলায় স্বচ্ছন্দ্য বাঙ্গালীর সংখ্যা কম। ছোটবেলা থেকেই আড্ডায় নিজেকে বেখাপ্পা মনে হতো এই উচ্চারণের ভিন্নতার কারণে। সবাই বলে "কর্সি","খাইসি, আমি বলি "করেছি", "খেয়েছি"।

ভাষার যথাযথ বিকাশ ও পুষ্টিসাধনের জন্য যেমন আবহাওয়া প্রয়োজন তেমনটি পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান কীনা জানিনা। আমি যেটুকু দেখেছি বাংলা ওদের কাছে একটা প্রাদেশিক ভাষা মাত্র। বাঙ্গালী আবেগ থেকে কেউ কেউ ভালবেসে এর চর্চা করেন। তবে ইংরেজি আর হিন্দি জানতেই ওরা বেশি গর্ববোধ করে থাকে। বাংলা ভাষার সিংহভাগ দায়ভার বাংলাদেশের বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের বাংলা আর কলকাতার বাংলার ছায়ায় নেই। কাজেই পূর্ব-পশ্চিম ভাষিক রাজনীতিকে বাড় দেওয়ার কোন মানে দেখি না।

আনিসুল হক, ফারুকীরা যা করছেন তা আমার কাছে এক ধরনের আলসেমি মনে হয়। ভাষায় জলসিঞ্চনের শ্রমকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জন্য উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ভাষা গড়ে নিয়েছেন তাঁরা। "ফাস্ট টু কুক, গুড টু ইট": মানুষ গোগ্রাসে গেলে, পুষ্টিগুণ বিবেচনা না করেই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অরণী স্কুল কি শুধু ইংলিশ নাকি বাংলা বর্ণমালা ও ধ্বনিত রূপের অগ্রাধিকারে শিখাচ্ছে?

আনিসুল হক, ফারুকীরা যা করছেন তা আমার কাছে এক ধরনের আলসেমি মনে হয়।

আলসেমি তো আছেই, এর ফলে একজন গোলাম মুস্তফা কিংবা শিমুল ইউসুফের সৃষ্টি হয়না আর। এ ছাড়া এই আলসেমির দ্বারা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সফল হয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নাশতারান এর ছবি

"অরণী" বাংলা মাধ্যম স্কুল। আমি বাংলা বর্ণমালার ক্রমবিন্যাস ভেঙ্গে শেখানোর রীতি দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম।

খবরের কাগজে একটা ছোট লেখা দেখেছিলাম ওদের নিয়ে। ওদের বক্তব্য অনেকটা এমনঃ "সবার আগে যে "অ" শিখতে হবে এমন কোন কথা নেই। প্রথমে "গ" শিখলে ক্ষতি কী?" বাচ্চারা খেলাচ্ছলে শেখে। ক্রমবিন্যাসটা পরে জেনে নেয়।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

অন্য একটা প্রশ্ন করা যায়, আনিসুল হক-ফারুকীদের গুরুত্ব না দিলে অসুবিধা কী?



অজ্ঞাতবাস

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এরা প্রত্যেক দিন আপনার বেডরুম পর্যন্ত এসে ঢুকছে যেমন হিন্দী সিরিয়ালগুলো।

সংসারকর্ম শুরু করেন তারপর এদের উৎপাত টের পাবেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

খোঁচাটা কুটুস করে গায়ে লাগলো দেঁতো হাসি

তবে ঘটনা হচ্ছে সংসারধর্ম করেও লাইনে থাকা যায়। শিশুর চৈতন্যে তাঁর প্রাথমিক পারিপার্শ্ব কী এম্বেড করছে সেইটাই নির্ধারক .....

অন্তত ভাষার প্রশ্নে



অজ্ঞাতবাস

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

'এরা উচ্চারনগুলো শিখায় আগে। বিচিত্র সব ধরনে, আমাদের কাছে ঠিক সাবলীল না হলে ও বাচ্চারা সহজেই সম্পৃক্ত হয়। মজা করে করে শিখে নেয়।'
দারুণ তো !
এরকমই তো হ্ওয়া উচি‍ত। বাচ্চাদের সুবিধামতো। আর আমাদের এখানে, বাচ্চারা গিনিপিগ ... মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নৈষাদ এর ছবি

ঢাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিশুকে বেশ একটা এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ইদানিং। মা-বাবারা ‘ইংরেজী নাকি বাংলা মাধ্যম’ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপাকে পরে প্রথমে। ভর্তি করা হয় ইংরেজী মিডিয়ামে। তারপর অনেকেই আবার চিন্তা করেন ভিকারুন্নেসা স্কুলের মত কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন। সেখানে আবার কোচিং ছাড়া ভর্তি হওয়া বেশ কঠিণ। কারন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য যে প্রশ্ন করা হয় তা প্রথম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীর তুলনায় বেশ কঠিণ। ইংরেজী মাধ্যমও বাদ দেয়া যাচ্ছে না, কারণ যদি ভিকারুন্নেসাতে সুযোগ না পায়। তাই সকালে ইংরেজী মাধ্যম – বিকালে বাংলা মাধ্যমের কোচিং – বেচারারা…।

বাংলা ভাষার প্রমিতরূপটার পরিবর্তনের কয়েকটা ধারা আমাকে একসময় কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে। সচলায়তনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার এই অস্বস্তিটা প্রকাশও করেছি। তবে এধরনের একটা ধারনা পেয়েছি… পরিবর্তন হবেই, মেনে নেয়াই যুক্তিযুক্ত। হক-ফারুকীয় ভাষার স্টাইলে আমি চিন্তিত না। ইদানিং প্রমিতরূপটার অ্যাঙ্গলিসাইজড উচ্চারণ আমাকে কিছুটা চিন্তিত করে। উচ্চারণের এতটাই পার্থক্য যে আমাকে অনেক্ সময় থমকে যেতে হয়েছে…।

হাসান মোরশেদ …

ইংলিশ আন্তর্জাতিক ভাষা এটা ও আমাদের দেশে বানানো তথাকথিত ধারনা মাত্র। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেই এক মাল্টা ছাড়া স্বয়ং ইউরোপেই ইংরেজির চল নেই। ইংরেজি নেই গোটা দক্ষিন আমেরিকা জুড়ে। ইংরেজি'র আন্তর্জাতিকতা টিকিয়ে রেখেছি আমরা সাবেক কলোনীরা।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় ইংরেজীটা দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রথমত, আমাদের দেশের লোকজন বিদেশের ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে চারটা দেশের কথা চিন্তা করে – যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা। একমাত্র কানাডাতে কিছুটা ব্যাতিক্রম ছাড়া অন্যদেশ গুলিতে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়ত, চাকুরী ক্ষেত্রে এখন ইংরেজীর দাপট প্রচন্ড। বিস্তারিত উদাহরণ দিতে পারছি না এই মুহূর্তে। কিন্তু সব কর্মচারী-কর্মকর্তা বাংগালী এমন প্রতিষ্ঠানেও ইংরেজীতে যোগাযোগ করা হয়। শুধুমাত্র ইংরেজীর ভাষায় ভালভাবে কথা বলতে না পারায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কত ছাত্র/ছাত্রীকে যে…।
আপনার লেখাটা ভাল লাগল।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

১) শিশুর ভাষা শেখার ব্যাপারে আমি চমস্কির ভাষা-সাধারণত্বের তত্ত্ব থেকে এক ধরণের ধারণা পোষণ করি। ভাষা সাধারণত্বের তত্ত্বের মূল কথা হল ভাষা যেহেতু প্রজাতি বিবর্তনে মানব-প্রজাতির অন্যতম নির্নায়ক, সুতরাং সব মানব ভাষারই একটা সাধারণ রূপ আছে। মানে সব ভাষাতেই বিশেষ্য-ক্রিয়া-বিশেষণ আছে, শব্দ সাজানোর একটা সাধারণ নিয়ম আছে, সেটা হল বাক্যতত্ত্ব বা syntax

মানব-শিশু এই সাধারণ ভাষার নিয়ম গুলা মগজে নিয়াই জন্মায়, জন্মের পরে ভাষার যে বিশেষ রূপে আশেপাষহের সকলরে কথা বলতে দেখে, সেই অনুসারে অন্ত্যজ ভাষাটাকে পরিবর্তন করে নেয়।

সেই অনুসারে আমার ধারণা শিশুকে একসাথে ৩-৪ টা ভাষা শিখতে দিলেও সে খুব তাড়াতাড়িই সবগুলোই শিখে নেয়।
নিজের বাচ্চার উপর এইটা পরীক্ষা করার সাহস হয় নাই, তবে, তাকে জন্ম থেকেই ফরাসী, বাংলা ইংরেজি তিনটা ভাষাতে নিমগ্ন করার চেষ্টা করেছি। সে তিন ভাষাকেই সমান চালাতে পারে, যদিও এখন ইংরেজি স্কুলে দেবার পর থেকে এখন বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে বাংলা-ফরাসী দুইটাই ভুলতে বসেছে।

২) প্রমিত ভাষাটা আসলে আসে সমাজের prestige dialect থেকে। এটাতে সমাজিক স্তর-বিন্যাসের প্রকাশ থাকে তাই প্রকট।

রাহিন হায়দার এর ছবি

বাচ্চাদের বর্ণমালা শেখানোর ধরণটা বেশ লাগলো।

প্রমিত ভাষা না শিখেই প্রমিত ভাষাকে উড়িয়ে দেবার একটা প্রবল প্রবণতা দেখি উত্তরাধুনিক নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাসে। আধুনিক হবার আগেই উত্তরাধুনিকতা!

- চলুক

আমি কম বুঝি। তবে, ফারুকী প্রবর্তিত ভাষাটার ওপর আমার বিরক্তির মূল কারণ এটা আরোপিত। ভাষার ক্ষেত্রে কেউ জোর করে পরিবর্তন আনার অগ্রপথিক হতে চাইলে তাকে বর্জন করাই উচিৎ, কিন্তু আমজনতা তা করছে না, হয়তো সহজপাচ্য বলেই।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

হিমু এর ছবি

"ফারুকির বাংলা" একটা স্বতন্ত্র উপভাষা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এতখানি ক্রেডিট তার কিংবা তার ল্যাংবোটদের প্রাপ্য না হাসি । তাদের নাটক-টেলিফিল্মের একটা বৈশিষ্ট্য সম্ভবত এ-ই যে কোনো স্ক্রিপ্ট অনুসারে সংলাপ ডেলিভারির ব্যাপারটা নেই [নিশ্চিত না, দুয়েকটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম, সেখানে এরকমই কিছু বলা ছিলো]। এতে করে এই "সিস্টেমের" প্রথম পর্যায়ের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা শুরুতে মুখে যেমন আসে তেমন বলে গেছে। পরে ওটাই একটা টেমপ্লেটে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন নবাগত অভিনেতা অভিনেত্রীরাও ঐ আগের নাটকে যেমনটা চলতো তেমনটা বলে। এইসব নাটকের দর্শকদের একটা অংশের মনে এই ধারণা তৈরি করা সম্ভব যে এখন এটাই সাম্প্রতিক চল, এর সাথে থাকতে না পারলে চলবে না।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

শিমুল এর ছবি

লেখায় একটু ষড়যন্ত্র তত্বের গন্ধ পেলাম।লেখার টার্গেট যে ফারুকী গং না সেটা শুরুতেই আন্দাজ করেছিলাম।এই কমেন্টে এসে আমার পূর্বধারণা স্পষ্টতা পেলো
সমস্যা হলো এর পেছনের রাজনীতি অনেক গভীর। ফারুকী টারুকী এরা নস্য। পূর্ব বাংলার ভাষারীতি আলাদা হবে, সংস্কৃতি আলাদা হবে পশ্চিম বাংলা তথা রবীন্দ্রনাথের থেকে

বাংলা একাডেমি ভাষা সংক্রান্ত কি একটা নিয়ম জারি করেছে।মজহার সাহের সেইটা নিয়ে একটা লেখাও লিখে ফেলেছেন।মুশকিল হৈলো মজহার সাহেবের কাজকাম আগেই অনুমান করা যায়। তাই লেখাটা পড়ার তেমন ইচ্ছা জাগেনি।

জাতীয় মাধ্যমে যারা কথা বলবেন কিংবা জাতীয় ব্যাক্তিত্বরা যখন কথা বলবেন তখন সেটা এমন বাংলায় হওয়া উচিত যাতে সবার নিকট বোধগম্য হয়।শ্রুতিমধুর না হলেও সমস্যা নেই কিন্তু মরহুম সাইফুর রহমানের ঢংয়ে যেন না হয়।সে বাংলার নাম যদি হয় প্রমিত বাংলা তাইলে কারুরই আপত্তি থাকার কথা নয় কিংবা উচিত নয়।

মুশকিলের ব্যাপার হলো প্রমিত বাংলার সংজ্ঞাটাই একটু ধোঁয়াশে।মাধ্যমিকের ক্লাশের ব্যাকরণের বই অনুসারে কুষ্টিয়া-নদীয়া অন্চলের ভাষাই প্রমিত ভাষা।এখন আমার বন্ধু, কুষ্টিয়ার ছেলে সুদীপ্ত যখন কথা বলতো তখন তা আমার কাছে বগুড়া কিংবা ময়মনসিংহের মতোই আন্চলিক ভাষা মনো হতো।

পূর্ব বাংলার ভাষারীতি আলাদা হবে, সংস্কৃতি আলাদা হবে পশ্চিম বাংলা তথা রবীন্দ্রনাথের থেকে।

আপনার এই লাইনের মর্মার্থ যদি বুঝে থাকি তা হলো বর্তমানে কিংবা পুর্বে পুর্ব এবং পশ্চিম বাংলার ভাষারীতি একছিলো; এখন এটাকে জোর করে আলাদা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।এবং এইটা ধর্মীয় চেতনাজাত।

আমার কাছে ব্যাপারটিকে রজ্জুতে সর্প দর্শনের মতো মনে হলো।প্রথমত "পুরো পুর্ব কিংবা পুরো পশ্চিম বাংলায় একক ভাষারীতি ছিলো" এইটা আমার কাছে এক মহৎ আবিষ্কার বলেই মনে হলো।বাংলাদেশ(পুর্ব বাংলা অর্থে) এমন একটা দেশ যেখানে একগ্রাম থেকে অন্যগ্রামে গেলে ভাষার পরিবর্তন অনুভব করা যায়।সেখানে জেলা থেকে জেলা তো দুস্তর ব্যবধান।উদাহরণ দিয়ে বলি, ইলিয়াসের "খোয়াবনামা" এবং
"চিলেকোঠার সেপাই" বৃহদাংশ বগুড়ার আন্চলিক ভাষায় লিখিত।বগুড়া জন্ম/বেড়ে ওঠাও সত্বেও সেই আন্চলিক ভাষার অনেকটুকুই আমি বুঝিনি কারন উনার থানা আর আমারটা আলাদা।

সেই ষোলশ শতকে শেখ আব্দুল হাকিম বাংলাভাষাবিরোধিদের নিয়ে যে হুশিয়ারী মুলক কবিতা লিখেন সেটাও চাঁটগার ভাষারীতিতে।

কোন ভাষারীতিটি পুর্ববাংলা এবং পশ্চিম বাংলার জন্য এক ছিলো এবং কবে তা ছিলো, একটু বলবেন!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।