মৃন্ময়ের স্কুল বন্ধ এই সপ্তাহ।
বাইরে চমৎকার রোদ উঠে এখন। আমরা প্রতিদিন বের হই। কোনদিন সমুদ্র তীর,কোনদিন লেক,কোনদিন উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাটি। আজ মৃন্ময়ের আবদার ছিলো ম্যাকডোনাল্ডসে যাওয়া। বার্গার নয়, 'হ্যাপী মিলস' প্যাকেজের খেলনাতেই লোভ তার।
পাড়ার মুখে বের হতেই চেনা রাস্তা। পরিচিত নির্জনতা। না, ঠিক পরিচিত নয়-স্বাভাবিক নির্জনতার চেয়ে একটু বেশী সুনসান। কোন মানুষ নেই। কেবল 'সেন্ট্রাল পাব'স' এর দরজায় ওয়েস্টার্ন হিরোদের মতো দীর্ঘদেহ নিয়ে জন স্টুয়ার্ট।
পরিচিত হাসির বদলে তার চোখে উৎকন্ঠা এবং আমাদের প্রতি প্রশ্নবোধ। 'তোমরা বাইরে কি করো? তাড়াতাড়ি ঘরে যাও। দরজা লক করে বসে থাকো'
আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে। স্কটিশ বর্ডারের এই মায়াময় শহর, পরিচিত পাশ্চাত্য ধারনার বিপরীত। গোটা যুক্তরাজ্যের অপরাধ পরিসংখ্যানে এই এলাকার অবস্থান একেবারেই নিচের দিকে, সবাই সবাইকে চেনে, আমাদের গ্রামগুলোর মতো একজন আরেকজনের কুশল জিজ্ঞেস করে, হাসিমুখে কথা বলে-এমনকি আমাদের ছোট্ট মৃন্ময়ের নাম ও জানে একমাত্র সুপারস্টোরের ম্যানেজার।
জন স্টুয়ার্ট আবারো ঘরে ফেরার তাড়া দিতে দিতে সংক্ষেপে ঘটনা যা জানালো তা ভয়ংকর বিভৎস। এক বদ্ধ উন্মাদ গুলীভরা বন্দুক নিয়ে গাড়ীতে করে ছুটছে আশেপাশের শহরগুলোতে। পাশের শহরে পড়ে আছে দুজনের লাশ, আমাদের শহরে আরো দুজন-যে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম তার শেষ মাথায়, খুনী চলে গেছে পরের শহরে, পুলিশের সতর্ক নির্দেশ ঘর থেকে যেনো কেউ বের না হয়...
দ্রুত ঘরে ফিরে রিমোট টিপি নিউজ চ্যানেলে। লাইভ কাভারেজ চলছে। ডেরিক বার্ড এর চেহারা দেখি। হাসি-খুশী প্রানবন্ত কাম্ব্রিয়ান। শহরের চেনামুখ ট্যাক্সি ড্রাইভার। কোন তাড়নায় হঠাৎ সে খুনী হয়ে গেলো?
আরো দুই গ্রামে গুলী চালিয়ে ডেরিকের গাড়ী চলে গেছে জঙ্গলের পথে। সরু পথ দিয়ে ছুটতে ছুটতে আটকে গেছে ডেরিকের গাড়ী। বন্দুক হাতে ডেরেক চলে গেছে গভীর জঙ্গলের ভেতর। কয়েক শত পুলিশ ঘিরে ফেলেছে জঙ্গল। আকাশে চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার।
ডেরিক বার্ড নিজেকে খুন করেছে। তার আগে খুন করেছে অন্ততঃ বারো জনকে যাদের কারো সাথেই তার কোন শত্রুতা কিংবা বন্ধুতা ছিলোনা। হাসপাতালে ভর্তি ২৫ জন, তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক।
সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর প্রথম প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিলো আজ, বেচারাকে তার বদলে কথা বলতে হচ্ছে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে। স্কাই, বিবিসি, সিএনএন একটানা রিপোর্টিং চলছে।
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ , উদ্ধার কাজ চলছে বাংলাদেশে। মিডিয়া কাঁপছে মুসা ইব্রাহিম, ফেসবুক, মাহমুদুরে- আমাদের ডলস হাউজের নায়ক, প্রতিনায়কে।
মন্তব্য
ভয়ানক ঘটনা। চমৎকার আর প্রাঞ্জল ভাষায় সুনিপুন উপস্থাপনা। ভাল লেগেছে পড়ে। একই সঙ্গে মনে হয়েছে আমাদের দেশের রাপিড একশন ব্যাটেলিয়নকে ওখানে পাঠিয়ে দিলে যুৎসই একটা বন্দুক যুদ্ধ হতে পারতো। ভাবতে অবাক লাগে- আমাদের দেশে সন্ত্রাসীরা রাব (RAB)কে আগে গুলি করে তাদের হাতে প্রাণ হারায়। কুইনাইন জ্বর সারায় বটে, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে ? শেষে না RAB হয়ে যায় ফ্রাঙ্কেস্টাইনের দানব !
zic2010@yahoo.com
......
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
মাঝে মাঝে বদ্ধ সভ্যতার জটিল দাবীগুলো এত অসহনীয় হয়ে যায়! পরিণামে সেই একই হাহাকার। যার গেল তার তো গেলই।
চলে যাওয়া মানুষদের জন্য শান্তির প্রার্থনা, তাদের আত্মা শান্তি পাক।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সেটাই। মাত্র ২২জন! এসব আমাদের সয়ে গেছে।
আপনার অনুপস্থিতি অনুভব করছিলাম। দারুণ উপস্থাপনা, একেবারেই বুঝতে পারিনি কোথায় নিয়ে ছাড়বেন।
এর দায় কে নেবে? রাজউক বা কর্তৃপক্ষ কি দায় এড়াতে পারবেন? হয়তো পারবেন কারণ সবারই কোন না কোন ভাবে মামা চাচা বা এমপি মিনিস্টারের সাথে যোগাযোগ আছে। এখানে সবই সম্ভব।
দায়িত্ব তো 'যথাযথ ভাবে' পালন করা হয়েছে। দেখুন...
ধসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অন্তত ১০ হাজার
এখন 'তদন্ত কমিটি'...
দারুণ অনুভূতি!
একদিকে-
পরিচিত হাসির বদলে তার চোখে উৎকন্ঠা এবং আমাদের প্রতি প্রশ্নবোধ। 'তোমরা বাইরে কি করো? তাড়াতাড়ি ঘরে যাও। দরজা লক করে বসে থাকো'
অন্যদিকে-
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ , উদ্ধার কাজ চলছে বাংলাদেশে। মিডিয়া কাঁপছে মুসা ইব্রাহিম, ফেসবুক, মাহমুদুরে- আমাদের ডলস হাউজের নায়ক, প্রতিনায়কে।
এই দুটি উৎকন্ঠায় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন বলা যায়। এখানে রাজউক একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান শহরের মাঝে যে অট্রালিকা বেড়ে ওঠছে তার অনুমোদন দিচ্ছে কিভাবে? ফেসবুক একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক- শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্তত: সরকারের সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপে এমনটাই মনে হলো। তবে এটিকে সরকারের দুর্বল নীতি বলা যায়। আর মিডিয়ার উপর খড়গ চাপানো আজকের প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বিশ্বে কোনো শুভ রাজনীতির ইংগিত বহন করে না। এতে বোঝা যায়, সরকার এক ধরনের দুর্বল নীতিতে অবস্থান করছেন। এ থেকে বেরিয়ে আসাটা আমাদের সরকারের জন্য কল্যান বয়ে নিয়ে আসবে।
সাদ আব্দুল ওয়ালী
তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক
নিবন্ধন নাম: ওয়ালীসার্চ
ই-মেইল:
ডেরিক বার্ড-এর ঘটনাটা সত্যিই ভয়াবহ!
আর বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে কী বলবো!
- মুক্ত বিহঙ্গ
সেইটাই। মাত্র বাইশজনে আমাদের তেমন কিছুই মনে হয় না আর ...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ডেরিক বার্ডের ঘটনা উপস্থাপনার জোরেই আমাদের মতন দেশেও গুরুত্ব পায় ২২ জনের বিপরীতে।
...........................
Every Picture Tells a Story
সকালে পত্রিকা খুলেই বেগুনবাড়ির খবরটা দেখলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
ভয়াবহ!
.....................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ হুট করে চলে আসাতে মর্ম ধরে টান দিল। অনেকদিন পড়ি নি এরকম মোচড় দেওয়া লেখা। অভিনন্দন।
১৯৫২ সালে এই ২২জনের মৃত্যু হলে বড় ঘটনা হত। এখন ২০১০ সালে এসে বাংলাদেশে পানিভাত। পূর্তমন্ত্রীর চাকরীটা আরেকটু শক্ত হল মাত্র। এই মৃত্যু সরকারকে বিব্রত করার একটা ষঢ়যন্ত্র । আর বিরোধীদলের জন্য একটি বিবৃতির ইস্যু। হায়!!
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এই বিষয়গুলোই ভাবছিলাম।
১২জনের মৃত্যু এখানে জাতীয় ইস্যু হয়েছে। আমাদের তারচেয়ে অনেক বেশী মৃত্যু গুরুত্বহীন হয়ে আছে।
কেনো?
আমাদের এইসব মৃত্যু গা সওয়া হয়ে গেছে বলে? ওদের ও যদি আমাদের মতো হতে থাকতো তাহলে একই রকম ভাবলেশহীন হতো ওরা ও?
নাকি আমরা চরম শ্রেনীবিভক্ত একটা সমাজে পরিনত হয়ে গেছি? কিশোরগঞ্জের হাওরে নৌকাডুবে শতাধিক মানুষ ডুবলে রাজধানীতে এটা তেমন প্রতিক্রিয়া হয়না? ফেসবুক বন্ধ কিংবা মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার এর চেয়ে বেশী আলোড়ন তুলে যে শ্রেনীতে, সেই শ্রেনীই সত্য এই দেশে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
..............
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অভিনব উপস্থাপন।
শেষটা নিয়ে আসলে বলার কিছুই নাই।
নতুন মন্তব্য করুন