নিয়মিত লেখা হচ্ছেনা অনেকদিন। অনেক ধুলোবালি জমা হয়ে গেছে। কিছুটা ঝাঁড়ফুক দরকার। এই লেখাগুলো যেমন ইচ্ছে, যখন পারি টাইপের। একঘেঁয়ে।
টের পাই ইদানিং, মানুষে মানুষে আসলে তেমন ফারাক নেই। দেশ ও সংস্কৃতিভেদে যে মানুষেরা ক্ষমতা কাঠামো নিয়ন্ত্রন করে অথবা আশেপাশে থাকে তাদের সকলের চরিত্র কমবেশী একই রকম, কমবেশী একইরকম সেই মানুষেরাও, যারা ক্ষমতা কাঠামো থেকে দূরবর্তী।
আমি নিজে সেই দূরবর্তী মানুষদের একজন বলেই নিজেকে তাদের সকলের সন্নিকটবর্তী বিবেচনা করি- প্রাচ্যের গুরুত্বহীন দেশের আরো গুরুত্বহীন মানুষ অথবা পাশ্চাত্যের উল্লেখযোগ্য দেশের অনুল্লেখ্য মানুষজন।
প্রাচ্যে কিংবা পাশ্চাত্যে, স্বদেশে কিংবা প্রবাসে- ক্ষমতার মেট্রিক্সের নিম্নবিন্দুর এই মানুষেরা কেউ ভালো নেই। বৈশ্বিক দারিদ্র, জীবনযাপনের দায়, মুল্যবোধের সংকট,ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, অপঘাতে মৃত্যু ক্রমশঃ গ্রাস করে নিচ্ছে এই মানববৃত্ত।
২ জুন,বুধবার বৃটেনবাসীদের স্মৃতিতে অনেকদিন বেদনা হয়ে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রে এরকম অপঘাত ঘটেছে অনেক, কিন্তু যুক্তরাজ্যে খুব বেশী নয়। এর আগে মার্চ ১৩, ১৯৯৬ এ ঘটেছিল Dunblane_massacre । ক্ষ্যাপাটে খুনীর গুলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়েছিল একজন শিক্ষিকা সহ।
তারও আগে আগষ্ট ১৯, ১৯৮৭ মাইকেল রায়ান ঘটিয়েছিল Hungerford_massacre
প্রায় দু সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর এখন ভাবি- এরকম একটা একটা ঘটনা আশে-পাশের মানুষদের উপর কতোটুকু ছায়া ফেলে?
আমরা প্রাচ্যের মানুষেরা পশ্চিমের মানুষদের নিয়ে কিছু পূর্বানুমান তৈরী করে রাখি যেমন পশ্চিমের মানুষেরা ও আমাদের নিয়ে। আমরা জেনে আসি পশ্চিমাদের আবেগ-টাবেগ কম, এদের পরিবার বলে কিছু নেই।
পৃথিবীর সবদেশেই নগরের মানুষদের চরিত্র একরকম, নগরের বাইরের মানুষরা অন্যরকম। নগরের মানুষেরা বিচ্ছিন্ন ও একা, সুখ ও শোক মানুষকে একাই সামলাতে হয়-তাই ৭/৭ এর বোম্বিং এর ক্ষত লন্ডনে ঢেকে যায় দ্রুত, ৪০০ মাইল দুরের ছোট্ট শহরে অপঘাতের ক্ষত থেকে যায় অনেক গভীর হয়ে।
পাশাপাশি আমার নিজের দেশ ভবন ধ্বসে মানুষের মৃত্যু, আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো শতাধিক মানুষ। মৃত্যু মানেই শোক তবু মনোটোনাস, একঘেয়ে, ধারাবাহিক মৃত্যুগুলোতে কি মানুষের শোক ক্রমশঃ কমে আসে- অন্ততঃ আশেপাশের মানুষের যারা দর্শক মাত্র, ক্ষতিগ্রস্ত নয়?
মিডিয়াতে তবু শোকের ব্যাপক আয়োজন। কয়লা হয়ে যাওয়া মানুষদের পোড়া শরীর, হাসপাতালে আহতদের আর্ত চিৎকার-সবকিছুর লাইভ প্রদর্শনী চলছে। বিভৎসতা প্রদর্শন ও সংবাদ পরিবেশনের মধ্যে অনেক অনেক তফাত। অনেক অনেক তফাত বাহাদূরী দেখানো আর দায়িত্বশীলতার মধ্যে। বিডিআর বিদ্রোহের সংকটময় মুহুর্তে মুন্নী সাহা টিভি ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে যান পিলখানায়, বিদ্রোহীদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন- এসবের মধ্যে দেখিয়ে দেবার একটা ভাব আছে, দায়িত্বশীলতা নেই।
আতংকিত একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পেরুচ্ছেন, রিপোর্টার তার পথ আগলে ধরে অনুভূতি জানতে চায়- চরম প্রহসন!
এখানে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কোন নিহতের চেহারা দেখানো হলোনা। পুলিশ নিশ্চিত করার আগে জানানো হলোনা মৃতের সঠিক সংখ্যা, টিভি ক্যামেরা ছুটে গেলোনা পুলিশের পিছনে পিছনে কিংবা হাসপাতালের বারান্দায়।
শোকের কি তবু কমতি ছিলো? ঘাটতি ছিলো কি স্মৃতিতর্পণে? বাচ্চাদের স্কুলে পর্যন্ত প্রার্থনা হলো নিহতদের জন্য, ছোট ছোট বাচ্চারা চাঁদা তুললো, শহরগুলো ব্যস্ত সময়ে নীরব হলো এক মিনিটের জন্য।
গত একযুগে কতোঝলমলে চ্যানেলে এলো আমাদের, রঙ্গীন রঙ্গীন সবছেলেমেয়ে নিউজে, রিপোর্টিং এ- ঝলক বাড়লো কতো।মান বাড়লো কতোটুকু?
মন্তব্য
কি মাঝি, ডরাইলা?
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও কি মানব কোথাও থেকে যায়?
জানি না। আজকাল সবকিছু নিয়ে বড়ই বিভ্রান্ত থাকি।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
হুম...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
--আমিতো মান আরও পড়তির দিকে দেখি। পোড়া-গলা মৃতদেহ আমার মনে হয় বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো সভ্য দেশের মিডিয়ায় স্থান পায় না। এই ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট আইন আর তার যথেষ্ট প্রয়োগ থাকা উচিত।
একটা টিভি চ্যানেলকে দাঁড় করাতে গেলে কারিগরী জ্ঞান, নান্দনিক জ্ঞান, পরিমিতিবোধ, ভবিষ্যত দর্শন, দেশপ্রেম, মানবতাবোধ এবং সৃষ্টিশীলতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। এর জন্য চাই সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত এবং এই মাধ্যমে সিরিয়াসলি কাজ করতে আগ্রহী মানুষদের সমন্বয়। যারা উদ্যোক্তা হবেন তাদের থাকতে হবে ঐ বিষয়গুলোতে নূন্যতম জ্ঞানসহ এই মাধ্যমের মানুষদের, দর্শকদের, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হ্যান্ডেল করার যোগ্যতা। থাকতে হবে যথাযথ বিপণনকৌশল, প্রচারকৌশল। বুঝতে হবে এটা নিছক একটা ব্যবসা নয়।
পত্রিকাতে সাংবাদিকতা, টিভিতে সাংবাদিকতা আর রেডিওতে সাংবাদিকতা - প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বর্ণনা, উপস্থাপন ইত্যাদিতে যে পার্থক্য আছে সে প্রশিক্ষণটা সাংবাদিকদের থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা" বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেই কেউ পুরো মাত্রায় সাংবাদিক হয়ে যাননা। তার জন্যও কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
যাকগে, এসব বলে কী হবে? টিভি চ্যানেলগুলো কী কী ভাবে বাজারে নামে আর কী কী ভাবে বন্ধ হয়ে যায় তা আমরা জানি। এদের উদ্যোক্তা কারা কারা হন তাও আমরা জানি। টিভি সাংবাদিক, উপস্থাপক, প্রযোজক, পরিচালক, আর এর বাইরে যারা মুখ দেখানোর দলে তাদের কথা নাইবা বলি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন্তব্যে মনে কথাগুলা বললেন। ফার্মাসিউটিকাল যেমন 'নিছক' ব্যবসা না, তেমনি মিডিয়াও না।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইদানিং মনে হয় এই ব্যাপারটা আরও বাড়ছে। যদিও আমার ধারণা প্রিন্ট মিডিয়াতে কিছুটা কমেছে।
মাঝে মাঝে মনে হয় মিডিয়ার লোকজনও হয়ত বোঝে ব্যাপারটা, তারপরও...। দেশি চ্যানেল গুলোতে ‘সেনসেসন্যাল নিউজ’ দরকার হয়ত। আমাদের মনোটোনাস নাগরিক জীবনে ‘সেনসেসন্যাল জিনিস’ যোগান দেয় এইসব আপত্তিকর দৃশ্য। নাটক-ফাটক দিয়ে দর্শক ধরে রাখা কষ্টকর হয়ত।
ভালো লাগল।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। এখানে স্বরস্বতির স্থান নেই। স্বরস্বতির বন্দনায় লক্ষ্মীছাড়া হতে হয়।
মিডিয়া এটা ভালো করেই জানে। আর এও জানে যে, বাঙালির চামড়া এখন গণ্ডারের চাইতেও পুরু হয়ে গেছে। ওখানে গুঁতা না দিলে সুড়সুড়ি টের পায় না। দুয়েকজন সংবেদনশীল যারা রয়ে গেছেন তাদের কোন বেইল নাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
“ সে এক বিচ্ছিন্ন দিনে আমাদের জন্ম হয়েছিলো.......... ততোধিক অসুস্থ সময়ে আমাদের মৃত্যু হয়ে যায়" - জ়ীবনানন্দ দাশ
আপনার লেখাটা পরে মন খারাপ হলো...জানিনা কতক্ষন থাকবে...কারন আমরা তো একই সমাজের জীব...
মজা সামনে আরো বেশি আসবে। নতুন চ্যানেল তৈরী হচ্ছে আরেক ডজন।
ইনশাল্লাহ আমরা কবরের মধ্যে ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেব, দুর্ঘটনায় মৃতদের লাইভ সওয়াল জওয়াব প্রচার হবে।
সমস্যাটা হচ্ছে এদেশে দুই জিনিস হতে গেলে প্রশিক্ষন লাগে না। একটা হচ্ছে রিক্সা চালানো, আরেকটা হচ্ছে সাংবাদিকতা। গ্রাম থেকে এসে পরেরদিনই নেমে পড়া যায়, যদি সেক্টরে পরিচিত কেউ থাকে। এজন্য আমাদের সড়কেও দুর্ঘটনা বেশি, মিডিয়াতেও।
নতুন মন্তব্য করুন