ধারনা করি, আমাদের তালমেলানো সমাজে বাবাদিবস ও ভালোই জায়গা করে নেবে। নাগরিকেরা পিতাকে ঘিরে নৈশভোজের আয়োজন করবেন রেঁস্তোরা'র উজ্জ্বল আলোর নিচে। ঝকঝকে কার্ড কিনতে পাওয়া যাবে সুলভে। ঘরে ফিরে ফুরিয়ে যাওয়া মা-বাবাকে নিয়ে দৈনন্দিন অস্বস্তি কিন্তু ফুরোবেনা।
এই আমাদের প্রজন্মের আরেক মহা দায়। অতীতের স্মৃতিময়তার ভারী বোঝা কাঁধে নিয়ে অফুরান ভবিষ্যের দিকে হাঁটতে হচ্ছে বলে তার কিছুতেই স্বস্তি নেই, পরিত্রান নেই।
সে পশ্চিমা সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে বাবা দিবস পালন করছে, বছরে একদিন বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নৈশভোজের সৌজন্য করতে যাচ্ছে কিন্তু পশ্চিমা সমাজের মতো বাবাকে দায়মুক্ত করতে পারেনি। এখানে আঠারো হয়ে গেলে বাবা আর সন্তানের দায়িত্ব নিচ্ছেনা, আঠারো হবার আগে ও জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্র থেকে ভাতা পাচ্ছে সন্তানের জন্য। পশ্চিমের পিতাকে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে হচ্ছেনা সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য। সন্তানকে ও কৃতজ্ঞতার ভারী বোঝা কাঁধে নিয়ে দায়িত্বের বিশাল পাহাড় ঠেলতে হচ্ছেনা । পিতা-পুত্র প্রত্যেকেই মুক্ত মানুষ।
তাই তুলনা বড় বেমানান। অন্ততঃ এখনো। এখনো একজন পিতাকে চুরি করে হলে ও সন্তানের মুখের খাবার জোগাড় করতে হয়, আঠারো কেনো আটত্রিশ হয়ে গেলে ও সন্তানের দায়িত্বমুক্ত হয়না পিতা। তেমনি সন্তানকে ও ফেরত দিতে হয় শেষদিন পর্যন্ত। এই দায়িত্বের চক্র কাউকেই মুক্ত মানুষ হতে দেয়না- না পিতা, না পুত্র। যে পিতার হয়তো কবি হওয়ার কথা ছিলো, সন্তানের প্রয়োজনে তাকে কেরানী হতে হয়েছে ; যে সন্তানের জীবনভর ছবি আঁকার স্বপ্ন ছিলো তাকে হতে হয়েছে মোবাইল ফোনের সেলসম্যান।
আমাদের প্রজন্মের যে অংশ প্রবাসী হয়েছে তার দায় আরো বেশী। মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব বেড়ে গেছে দেশে ও । বুড়ো মা-বাবাকে দেশে টাকা পাঠানো যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু বাজারটা করে দেয়ার, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছেনা, বার্ধ্যকের নিঃসঙ্গতা বড় প্রকট। এদিকের প্রবাসে সন্তানের ভালো খাবার, ভালো চিকিৎসা, ভালো পড়ালেখা, ভালো ভবিষ্যত।
এইসব অন্তর্গত সংকট নিয়েই আমাদের প্রজন্ম-একটা বুড়ো প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধিরা ফুরিয়ে যাবে। হয়তো আমাদের সন্তানেরা দায়িত্বের বোঝাহীন মুক্ত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে। জনক ও জাতকের দ্বৈরথে তারা দুলবেনা পরিনতিহীন পেন্ডুলামের মতো।
মন্তব্য
পুরোটাই কোট করার মতো। লেখাটা স্পর্শ করে গেছে।
আসলেই পুরো লেখাটাই কোট করার মতো। মনোটোনাস না- বিষাদময়।
নিতান্তই অফটপিক একটা কথা- আগামসীহ লেন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। অনেক পুরোনো বাড়ীই আর নেই, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বা হচ্ছে। আমার বন্ধু বললো- এইযে পুরোনো ঢাকা এখন আমরা দেখছি- আমাদের জেনারেশনই এগুলোর শেষ দেখবে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এইটা আমি অনেক আগে থেকেই বলি । ডিশ দেখা জেনারেশন আর বিটিভি জেনারেশন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মন ছুঁয়ে যাওয়া এ লেখা নিয়ে কী আর বলি...
তবে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল...
কদিন আগে থেকেই এসব শুরু হল... বাবা দিবস... এ দিনে গিফট দেয়া...
তো ২ বছর আগে টিউশনির টাকায় বাবার জন্য শার্ট কিনে আনলাম...
এমনিতে বাবার সাথে খুব ফ্রি কিন্তু কোথায় যেন একটা দেয়াল...
লজ্জা লাগছিলো একটু একটু, কী করে দেই শার্টটা... পরে খানিক আমতা আমতা করে দিয়েই দিলাম...
হয়তো আমাদের সন্তানেরা দায়িত্বের বোঝাহীন মুক্ত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে। জনক ও জাতকের দ্বৈরথে তারা দুলবেনা পরিনতিহীন পেন্ডুলামের মতো।
কথাটি খুব ভাবালো... কী যেন...
এ দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো... হয়তোবা না...
দারুণ একটি লেখা পড়া হল...
--------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
হয়তো অনেক কিছুই হবে যা এখন আমরা কল্পনা করছিনা, যেমন অনেক কিছুই হয়েছে যা কয়েক প্রজন্ম আগের কল্পনায় ছিলোনা।
হয়তো আমরাই আমাদের জনক-জননীর মতো সর্বস্ব বিকিয়ে দেবোনা সন্তানদের জন্য, আমরা তাদের চেয়ে কিছুটা হিসেবী হবো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
...... আশির দশকে বেড়ে ওঠার আমার খুব ইচ্ছে ছিলো...
_________________________________________
সেরিওজা
আমার কাছে '৬০ দুর্দান্ত লাগে। ওরা একটা দেশের জন্ম দিয়েছে। ঐ সময়ের মানুষের সংস্কৃতি বোধ ও রাজনৈতিক চেতনা অনেক স্পষ্ট এবং অনেক অনেক স্মার্ট
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
অসাধারন।মন ছুয়ে গেলো একেকটা লাইন।
আমরা যেমনটা আছি,তেমনটাই ভালো।আজো আমাদের নচিকেতা'র 'বৃদ্ধাশ্রম' শুনে চোখ ভিজে আসে।আমাদের বাবা-মা আমাদের জন্যই কাটাচ্ছেন সারা জীবন,আমরাই বা ভীন্ন পথে গিয়ে কি করবো?
আঠারোর পর-ও বাবা-মা'র ছায়াতেই বেড়ে উঠবো,বাবা-মা'কে দুরে ফেলে এসে একটা দিনের শ্রদ্ধা ন্য় নাই বা দেখালাম।
এই ভালো।।
[বিষন্ন বাউন্ডুলে]
দারুণ লাগলো লেখাটা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ.........
"কেনো জানি আমাদের নিজেকে আমার কাছে একটা বুড়ো প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধি বলে মনে হয়।"
দূর্দান্ত...
(মামুন আরিফ)
অসাধারণ.........
"কেনো জানি আমাদের নিজেকে আমার কাছে একটা বুড়ো প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধি বলে মনে হয়।"
দূর্দান্ত...
( আরিফ মামুন)
নতুন মন্তব্য করুন