“There are words as murderous as gas chambers,” সিমন দ্যা বোভেয়ার লিখেছিলেন এবং মৃত্যদন্ড মওকুফের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন জ্যাঁ পল সাঁত্রে, আলবেয়ার কাম্যু স্বাক্ষর করেছিলেন-যেহেতু অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিরোধী ছিলেন তিনি।
আর এই আবেদনপত্রের যিনি আয়োজন করেছিলেন সেই ফ্রাঙ্ক মরিস নিজে ছিলেন প্রতিরোধ যুদ্ধের সৈনিক তবু ক্যাথলিক মানসিকতায় মৃত্যুদন্ডকে তিনি ন্যায়বিচার বলে মানতে পারেননি বিশেষ করে একজন লেখক, বুদ্ধিজীবির জন্য যিনি সরাসরি কোন হত্যায় অংশ নেননি।
তবু চার্লস দ্যা গল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি- নিজদেশের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবিদের স্বাক্ষর করা মৃত্যুদন্ড মওকুফের এই আবেদনপত্রটি শেষপর্যন্ত প্রত্যাখান করেছিলেন এই বলে যে-' intellectuals must be held accountable for the consequences of the ideas they propagate.'
এবং তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো ফেব্রুয়ারী ৬, ১৯৪৫।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে হিটলারের নাজি বাহিনী ফ্রান্স দখল করার আগে Robert Brasillach ছিলেন প্রভাবশালী ডানপন্থী পত্রিকা Je suis patriot এর সম্পাদক। এর বেশ আগে থেকেই অবশ্য তিনি ফ্রান্সের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবিদের একজন, বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় উপন্যাসের রচয়িতা। ১৯৩৪ এ চরমডানপন্থীরা প্লেস ডি লা কনকর্ড এ যে ভয়াবহ দাঙ্গার সুত্রপাত করেছিলো তিনি তার কট্টর সমর্থক ছিলেন।
নাজি বাহিনীর ফ্রান্স দখলের শুরুতে তিনি ও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অন্য বুদ্ধিজীবিদের সাথে; সাঁত্রে, কামু'র মতো যারা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা যোগ দিয়েছিলেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। গ্রেপ্তার এর কিছুদিন পরই তিনি মুক্তি পেয়ে যান তার ডানপন্থী অতীতের কারনে।
মুক্তির পর Robert Brasillach তার পত্রিকার মাধ্যমে শুরু করেন নাজি প্রচার ও প্রচারনা। গোটা ইউরোপের বৃহত্তর স্বার্থে আটক বুদ্ধিজীবি, বামপন্থী নেতৃত্ব, প্রতিরোধ যোদ্ধা ও ইহুদীদের হত্যার আহ্বান জানিয়ে লিখতে থাকেন প্রবন্ধ।
প্রতিরোধযোদ্ধাদের হাতে প্যারিসমুক্ত হলে এই বুদ্ধিজীবি গিয়ে লুকান এক চিলেকোঠায়, কৌতুক করে ডায়েরীতে লিখেন- "Jews have been living in cupboards for four years, why not imitate them?"
ধরা পড়ার পর বিচার শুরু হলে তিনি লিখতে থাকেন তার আত্নজীবনী এবং ফ্রান্সের ভবিষ্যত তরুনদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি। কোন অনুশোচনা নয় বরং নিজের অবস্থানকে জাস্টিফাই করে গেছেন তার শেষ সময়ের লেখাগুলোতে।
ইউরোপের ডানপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক নবী হিসেবে এখনো তিনি সমাদৃত। কোন কোন উদারপন্থী ও তার মৃত্যুদন্ডকে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিন্নমতের প্রতি হুমকীর উদাহরন হিসেবে বিবেচনা করেন।
"The Collaborator:The Trial and Execution of Robert Brasillach" নামে এলিস কাপলান এর লেখা একটা বই ও বাজারে পাওয়া যায়।
দীর্ঘ ৪০ বছর পর অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, রক্ত ও ত্যাগের আমাদের গনহত্যার বিচারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নয়মাস সময়কালে সারা দেশ জুড়ে সাধারন গনহত্যার পাশাপাশি যে পরিকল্পিত বুদ্ধিবৃত্তিক নিধন ঘটেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার উদাহরন সম্ভবতঃ আর একটি ও নেই। আর এই গনহত্যার ইতিহাসকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য, গনহত্যার বিচার না হওয়ার জন্য সেই '৭১ এ যেমন , তারপরের ৪০ বছর ধরে ও একাধারে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশল আরোপ করা হয়েছে।
মতাদর্শিক ভিন্নমতের স্বাধীনতার নামে গনহত্যাকে সমর্থন এবং গনহত্যার বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অপরাধযোগ্য শাস্তি বলে বিবেচিত হবে কিনা- সেটি ও ভেবে দেখা জরুরী, এই সময়ে।।
মন্তব্য
বিচার শুরু হতে না হতেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাস থেকে "আন্তর্জাতিক মানদণ্ড" নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কোথায় ছিলো যখন আইখমানকে পাকড়াও করে ইসরায়েল বিচার করেছিলো? কিংবা এই মানদণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্র কী করছিলো যখন ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের বিচার চলছিলো?
এইসব কথার অর্থ কি এ-ই নয়, যে বাংলাদেশের আইন ও বিচার পদ্ধতি ইজ নট গুড এনাফ?
যে যুক্তরাজ্য বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধীদের যুক্তরাজ্য ভ্রমণকে সহজতর করার জন্যে আইন সংশোধন করার তোড়জোড় নেয়, তাদের মুখে মানদণ্ডের কথা শুনলে হাসি পায়। আর স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্র কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলছে, তাদের কাজকারবারের ৯০ হাজার টেলিবার্তা ফাঁস করে দিয়েছে উইকিলিকস। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আর পাকিস্তানের মধ্যে লেনদেন হওয়া তাবৎ গোপনীয় বার্তা উন্মুক্ত করে দিলে আমরা এ বিচার আরো স্বচ্ছতার সাথে করতে পারবো বলে ভরসা রাখি।
জোশ!
এসব ঈঙ্গ-মার্কিন কুম্ভীরাশ্রু আমরা পাত্তা দেইনি সেই একাত্তুরেই। কিসিঞ্জারের থোতা মুখ ভোঁতা করে দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বুদ্ধিজীবিদের হত্যা যারা একবার করেছে, তারা বারবার করবে। হুমায়ুন আজাদের কথা ভুলে যাই নি। ওদের লক্ষ্য আরেকটি পরিকল্পিত বুদ্ধিবৃত্তিক হত্যা। এটা বুঝতে পেরেই বুঝি নারীলিপ্সু লিকলিকেদের বুদ্ধিবৃত্তিক বেশ্যাগিরি বেড়ে গেছে?
এইবারের এই প্রচেষ্টা সফল হতেই হবে। লঘু চালের একটা ভিডিও দেই:
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কথা সত্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
১
যুদ্ধাপরাধীরা গত কয়েকদশক ধরে যে বুদ্ধিবৃত্তিক জঞ্জালের জন্ম দিয়ে গেসে, সেইগুলা সাফ করতে আরো অনেকটাসময় লাগবে। কিন্তু তার আগে এসেনশিয়াল কাজ অবশ্যই প্রতিশোধ নেয়া। প্রতিশোধের চেয়ে যৌক্তিক কোনো শব্দ আমার জানা নাই। পৃথিবীর অধিকাংশ ন্যয়বিচারের উৎসমূল প্রতিশোধ। মৃত্যুদণ্ডও তাই। যদিও প্রতিশোধ হিসাবেও এইটা পুরাপুরি কার্যকর না। কারণ, এক গোআজম হাজার লোকের মৃত্যুর কারণ হলেও, আইন তাকে একবারের বেশি লটকাতে পারবে না।
২
এমবেসিগুলাকে 'ফিউয়েল' করার জন্য দেশীয় ছ্যাচড়াগুলাও নিরলস। মক্সুদ্দা থেকে আসিফ নজরুল (নজরুল নামটার কী অপমান ভাবেন) ... হিমু একটা নাম প্রস্তাব করেন।
৩
তবে, intellectuals must be held accountable for the consequences of the ideas they propagate - এই কথাটা যৌক্তিক, কিন্তু শার্ল দ গল সরকার টিকানোর স্বার্থে (মে১৯৬৮) ইন্টেলেকচুয়ালদের যে পীড়ন করসিলেন তার যুক্তি হিসাবে এইটা সবসময় গ্রহণযোগ্য না।
৪
হাসান মোরশেদকে ধন্যবাদ
______________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
১।
ক্ষমা প্রায়শঃই ক্ষীন দূর্বলতা
৩। দ্যা গল শেষপর্যন্ত রাজনীতিক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ইদানিং অন্যান্য ব্লগে দেখছি একটা দলই দাঁড়িয়ে গেছে যারা বিশাল লম্বা ত্যানা পেঁচিয়ে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছে। এছাড়া দেশের বাইরেও আরো গ্রুপ আছে স্বক্রিয়। সবচেয়ে বেশি মনে হয় যুক্তরাজ্য। ঠিক সময়মত এসেছে এই লেখাটা এবং আমিও মনে করি এই বক্তব্যটাকেই এখন সামনে নিয়ে আসা উচিত।
অনন্ত
নিজামির দুঃখে আসিফ নজরুলের মর্সিয়া
প্যান্ট ঢিলা হয়ে গেছে! খুলে পড়ে যায় যায় করতেছে। ওনারে কেউ একটা বেল্ট কিন্যা দ্যান। আমাদের 'দেবু'দা যেইরকম বেল্ট না জানি কি একটা পরে- সেইরকম।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
সময়োপযোগী ও দরকারী লেখা।
দেশের এইসব কীট ও আবর্জনা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। ৪০ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু এইসব আবর্জনা সাফ হয় নাই; বরং উপআবর্জনা তৈরী হয়েছে।
দূরের তেপান্তর
জটিল লাগল কথাটা।
যে যাই করুক,বলুক! ইউটিউবে রাখা দরকার।
পরের প্রজন্ম এই বিষয়গুলা খেয়াল করবে।
আমরা যেমন আগের প্রজন্মের না করে যাওয়া কাজটা করার চেষ্টায় আছি!
এই সব বুদ্ধিজীবীদের কোন কালেই পছন্দ ছিলো না, কেমেনে যে এরা দল/ভোল পালটায়!
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
ব্যাপার না। ফারুকের ফাঁসির আগেও বহু তদ্বির হইছে।
More voices should be raised to affirm this.....Good job!
নতুন মন্তব্য করুন