পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি চার মুলনীতিতে ফিরলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধান। আদি নীতিতে ফেরা আদৌ দরকারী ছিলো কিনা সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে। প্রশ্নের উত্তরে দুরকম ভাবনা আছে।
দুইঃ বাহাত্তুরের সংবিধানের মুলনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা জনগনের ইচ্ছেয় ঘটেছে তেমন দাবী করার সুযোগ নেই, অবৈধ সামরিক শাসকরা অবৈধ ভাবেই এটি ঘটিয়েছে সুতরাং নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব অবৈধ পরিবর্তনকে বাতিল করা। এ ছাড়া রাষ্ট্র কোন ছেলেখেলা ও নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি অর্জিত হয়েছে দীর্ঘ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, অসংখ্য মানুষের আত্নদানের বিনিময়ে। তাই যে কোন সময়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী সংবিধানের ধারা উপধারায় বৈধ ভাবে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকলেও আদি মুলনীতিতে কোন পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকা ঠিক নয়। যে রাজনীতি, যে দর্শন, যে সংগ্রাম এই রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে তার ভিত্তিতেই মুলনীতি নির্ধারিত হয়েছিলো বলে, একে রাষ্ট্রের অপরিবর্তনীয় মুল কাঠামো বলে মেনে নিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোন সংসদ মুল কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারেনা।
বাংলাদেশের আদি সংবিধানটি ও একেবারে নিখাদ ছিলোনা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের অন্যতম প্রভাবক ছিলো বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ- অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই তবু এই রাষ্ট্র শুধু বাঙ্গালীর ছিলোনা, এখনো নয়। চারমুল নীতির একটি গনতন্ত্র- তখনো, এখনো। গনতন্ত্র মানে কেবল সংখ্যাগুরুর শাসন নয়, সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি এবং অধিকারের নিশ্চয়তা। আদি সংবিধান জাতিগত সংখ্যালঘুর অধিকারের এই নিশ্চয়তাটুকু দিতে পারেনি। '৭৫ এর পরে সংবিধানে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে অবৈধ ভাবে এবং এখন আবার যে পরিবর্তন আনা হলো বৈধভাবে- এই দু ক্ষেত্রে ও অবস্থা তথৈবচ!
তবে ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুলনীতি হিসেবে গ্রহন করা হয়েছিলো যা জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হয়ে হয় 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস।'
বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে যতোটা সমালোচনামূখর সেই '৭৫ পরবর্তী সময় থেকে- রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস' নিয়ে ঠিক ততোটা ছিলেননা। বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম অবশ্যই ভয়ংকর, এটি অমুসলিম বাংলাদেশী নাগরিকদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে কিন্তু উক্ত মুলনীতিটি যে অমুসলিমদের নাগরিকত্বকেই বাতিল করে দেয় সেটি তেমন আমলে নেয়া হয়নি।
যে রাষ্ট্রের সংবিধানের চার মুলনীতির একটি 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস' সেই রাষ্ট্রে কি করে ' আল্লাহ' ব্যতীত অন্য কারোর উপর বিশ্বাস রেখে অথবা স্রেফ অবিশ্বাসী হয়ে নাগরিক থাকা সম্ভব?
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মুলনীতিতে সমাজতন্ত্র ফিরলো। বাংলাদেশ কি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে গেলো? টেকো মাথার দাঁড়িওয়ালা ভ্লাদিমির খুঁড়ো ও ফিক করে হেসে দেবেন। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদাতা জনগনের স্বপ্ন ও চেতনায় সমাজতন্ত্র ছিলো, তাই এই রাষ্ট্রের মুলনীতিতে সমাজতন্ত্র থাকবেনা কেনো? যারা সমাজতন্ত্র বলতে সোভিয়েত রাষ্ট্র কিংবা দেয়াল ঘেরা চীন বুঝেন তাদের বুঝদারিতে সমস্যা আছে। আজকে সমাজতন্ত্র নেই, কালকে পরশু তরশু ও নেই, অন্ততঃ স্বপ্নে থাক। গোয়ালে ও নেই, কেতাবে ও নেই এর চেয়ে অন্ততঃ কেতাবে থাকুক, কোন একদিন গোয়ালে ফিরবে হয়তো।
এই সংশোধনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো মূলনীতি থেকে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস' কে বিদায় করা। এখন আর আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসহীন কারো নাগরিক হতে যৌক্তিক বাধা নেই।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে ভবিষ্যতে মূলনীতিতে কোন পরিবর্তন আনা যাবেনা।
তবু প্রগতিশীলদের কাছে এই সংশোধনী আদৃত তো হয়ইনি বরং নিন্দিত হয়েছে, কারন বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল! আওয়ামি লিগকে একেবারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে জামাত-বিএনপির কাতারে যদিও জামাত বিএনপি তাকে দলে নিচ্ছেনা- সংবিধান থেকে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস' কে সরিয়ে ফেলার জন্য।
তাহলে আওয়ামী লীগের লাভের হিসাব কেমন হলো? জাত নিয়ে যদি টান দিলিই তবে উপজাত নিয়ে এতো টালবাহানার মানে কী? সংবিধানের মূলনীতি থেকে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস'কে সরানো গেলো মুখবন্ধ থেকে বিসমিল্লাহ সরাতে ভয়ের কী ছিলো?
আওয়ামী লীগ কি ভেবেছিলো ইসলাম পছন্দরা মূলনীতির পরিবর্তন খেয়াল করবেনা, বিসমিল্লাহ থাকলেই তারা খুশী থাকবে? ভুল হিসাব। বিএনপি-জামাতের আজকের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম খেয়াল করলেই দেখা যাবে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস' বাদ দেয়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মারনাস্ত্র। বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম আলোচনা থেকে বাদ।
বাগডাশ হয়ে অন্যের ডিমে হানা দেবার লোভ করার আগে নিজের ডিম বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা করলে আখেরে কাজে দিতো, আওয়ামী লীগের জন্য
মন্তব্য
সংবিধানের মূলনীতি থেকে 'আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস'কে সরিয়ে কিছুটা সাধুবাদ এরা পেতে পারে। বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম(দুইটাই উদ্ভটতম ধারণা) কবে এই কলঙ্কদাগ থেকেও বের হয়ে আসতে পারবে জানি না। তবে আমি আশাবাদী মানুষ, হয়তো অচিরেই.....................কিন্তু তারা ক্ষমতার লোভে যে নির্লজ্জ আপসটুকু করল, তা এ জাতি মনে রাখবে!!!! আর কিছুক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, কিছুতে আবার নাই, সংবিধানে এ কেমন স্ববিরোধিতা তারা রাখল এটাও দু:খজনক!!!
কে যেন বলেছিল, আওয়ামিলীগ হারলে বাংলাদেশ হারে, কিন্তু আওয়ামিলীগ জিতলেই বাংলাদেশ জিতে না। স্ববিরোধিতা টা আসলেই দু:খজনক। কি জানি? জাতি কিভাবে রিআ্যাক্ট করে এইটুকুতে, তাই দেখবে হয়তোবা? ক্ষমতার লোভ কার না আছে?! আমি ঢাকার ভুরি ভুরি ছেলেমেয়েকে জানি যারা একই সাথে "আধুনিক" এবং ধর্মরাষ্ট্রের কনসেপ্ট এ বিশ্বাসি। ধর্মরাষ্ট্রের consequence গুলা মনে হয় সাদা আলোতে কম দেখা যায়, নাহলে দেখতে না পাবার মত লোকজন এত বেশী কেন? আওয়ামিলীগ হয়তোবা এদের মত অনেককে হাতে রাখবার অপচেষ্টা করছে!! অপচেষ্টাই কিনা, সে সম্পর্কে অবশ্য সিওর না।
বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো- যে বাগধারাটা আছে সেটার একটা প্রায়োগিক উদাহরণ হলো আওয়ামী লীগের এই সংশোধনী। ধর্মভিত্তিক দলগুলো তো সেই হরতাল দিলোই, তো লাভটা কী হলো বিসমিল্লা আর রাস্ট্রধর্ম নামক দুইটা অনাবশ্যক জিনিস সংবিধানে রেখে! আওয়ামী লীহ যদি ভেবে থাকে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির পথ খোলা রেখে ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো এবং তাদের সমর্গথকগণের ভোট পাবে, তাইলে সেই আশায় আপাতত বালির ঢিবি গড়ে তুলতে পারে তারা। এদের ভোট কোনো কালেই আওয়ামী লীগ পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। মাঝখান থেকে নিজেদের মূলনীতিকেই কনফিউজড করে তুললো আওয়ামী লীগ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন সংশোধিত সংবিধানে বিপরীতধর্মী বিষয়গুলোকে JUXTAPOSE করে একসাথে রাখা হয়েছে। আপনি লিখেছেন, "এখন আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসহীন কারো নাগরিক হতে বাধা নেই". আসলে কি তাই? বিসমিল্লাহ বলে সংবিধান শুরু করলে তার সুযোগ কথায়?
এক্ষেত্রে প্রফেসর মোজাফফর আহমদের অভিমত বিবেচনার দাবী রাখে। প্রথম আলোয় আজকে তার উদ্ধৃতি ছাপা হয়েছে যাতে তিনি বলেছেন "সরকার সংবিধানকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কারণ, সংবিধান সাধারণ কোন আইন নয় যে ইচ্ছামতো সংশোধন করে দেওয়া যায়"।
এমপিরা আইন প্রণয়ন করেন। কিন্তু, এই আইন সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে, উচ্চ আদালত তা বাতিল করে দিতে পারে । উচ্চ আদালতকে এই ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধান। কোন আইন সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না তা মহামান্য বিচারপতিরা সংশোধনকৃত সংবিধান দিয়ে কিভাবে বিচার করবেন? ভাবনাটা বিচারপতিদের জন্যই বরং তোলা থাক!
এম আব্দুল্লাহ
মুলনীতিতে পরিবর্তন আনার ফলেই তো সাংঘর্ষিক হলো। সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনেই যে কোন নাগরিক কিংবা গোষ্ঠীর সুযোগ আছে আদালতের শরনাপন্ন হয়ে বিষয়টির নিস্পত্তি ঘটানোর। মুখবন্ধে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম তো এই সংসদের সংযোজন নয়, সংসদ পাশ কাটিয়ে মুলনীতিতে পরিবর্তন এনেছে এবং আইন করা হয়েছে মুলনীতিতে কোন পরিবর্তন আনা যাবেনা।
তার মানে ধর্ম নিরপেক্ষতা বদলানোর সুযোগ আর কারো নেই কিন্তু বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম এগুলো বদলানোর সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু কোন প্রগতিশীল গোষ্ঠীকেই দেখছিনা মুলনীতিকে হাতিয়ার করে আদালতের আশ্রয় নেয়ার চিন্তাভাবনা করতে। সবাই ব্যস্ত আছেন আওয়ামী লীগ এই সংশোধনীর মাধ্যমে কি করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়ালো, সেটা প্রমান করতে যেনো এর আগে সকলই শোভন ছিলো, যেনো আওয়ামী লীগ এই সংশোধনী করে ফেলেছে বলে আর কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই উত্তরনের কৌশল নির্ধারনের।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নিজের ডিম কথাটার সাথে খানিক দ্বিমত। ডিমটা আসলে আওয়ামী লীগের? নাকি ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে একরকম নি:শর্ত সমর্থন দিতে থাকা মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি এবং মোজাফফর ন্যাপের? সেকুলারিজমের কিছু "সমর্থক" হয়তো মূল আওয়ামী লীগে ছিল সেই সময়। কিন্তু তাঁরা কারা এবং কতজন? তখনকার কিছু পূর্ব বাংলা কংগ্রেস, ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টির কিছু লোক আর সিপিআই থেকে মুসলীম লীগে পাঠানো এজেন্টদের মধ্যে যারা ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীম লীগে ভিড়েছিলেন তাঁদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশের বেশী যে মূল নেতাকর্মীসমর্থক গোষ্ঠী তাঁরা কারা? তারা বেঙ্গল মুসলীম লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ। এই মুসলীম লীগাররা কি "সেকুলারিজম" চর্চা করতেন? ছয় দফার পর থেকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ সোভিয়েত ব্লকের সমর্থন পেতে নানারকম "প্রগতিশীল" কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। তখন সাবেক মুসলীম লীগের স্পষ্ট মতার্দশ বিরোধীরা আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন কিছুদিনের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মূল কূটনৈতিক লড়াইটাও তাঁরাই করেন। তাঁদের চাপেই ১৯৭২ সালের সংবিধানে সেকুলারিজমের ভুল অনুবাদে "ধর্মনিরপেক্ষতা" এবং "জাতীয়তাবাদ" এর সাথে সাংঘর্ষিক "সমাজতন্ত্র" অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেকুলারিজম বা সমাজতন্ত্র কোনটার চর্চা তো দূরের কথা আওয়ামী নামের দলটির মূল খুঁটি সাবেক মুসলিম লীগার জোতদার-মাহজন শ্রেণী কঠোরভাবে তখনো প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন এবং এখনো আছেন। এই শ্রেণীটিকে খুশী করতেই শেখ মুজিবর রহমান মন্ত্রীসভা থেকে তাজউদ্দিন আহমেদকে অপসারণ করেছিলেন। '৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাসেও সেকুলারিজমের কতটা চর্চা করেছে আওয়ামী লিগের মূল দলটি? ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ এর ১১ আগস্ট পর্যন্ত "বাকশাল" নামে একটা দল ছিল। তাঁরা কেন আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন?
এই প্রশ্নগুলিতে আলো ফেলাটা জরুরি।
অজ্ঞাতবাস
আপনি যে অর্থে পাঠ করেছেন সে অর্থে দ্বিমত 'খানিকটা' হয়না, পুরোটাই হয়।
আমি সমীকরনটা করেছি সমকালীন। বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করলে আওয়ামী লীগের নিজের ভোট ব্যাংকে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়তো বলে মনে হয়না। তবু তারা এই কাজটা করেনি যে ভোটব্যাংককে কল্পনা করে, সেটি কখনোই তাদের বাক্সে জমা পড়বেনা একেবারে আউজুবিল্লাহ থেকে শুরু করলেও।
ইতিহাস ঠিকাছে। এইদলটাকে আমি বিবেচনা করি একটা বিশাল কাঠামো হিসেবে। এই কাঠামোকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করার মতো কিছু মাথাওয়ালা কথা তো আপনেই বললেন। এখন আর সেই মানুষেরা ও নাই। তাই অজগর ঝিমায় আর হা করে হুদাহুদিই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মোর্শেদ ভাই; বিনয়ের সাথে বলতে চাই আপনার সমীকরণটা বড়ই সরল। সংবিধান সংশোধনের সমীকরণটা অনেক জটিল। সংবিধানের সংশোধনকারীদের ব্যাকগাউণ্ডটা জানাওটা এক্ষেত্রে জরুরী। সুমন চৌধুরী বেশ সুন্দর করে ব্যাপারটি এনেছেন।
বাংলানিউজে (http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=6107eb48aa5ee13a438f2c0e903de38a&nttl=2011070202423647228&toppos=4) ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়ছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পুরোপুরি খুশি নয় বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সংবিধানের এই সংশোধনীতে হয়তো সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এতে আওয়ামী লীগও খুশি নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ৭২-এর সংবিধানে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফিরে যাওয়া। বাস্তবতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আপোষ করতে হয়েছে।
আপোষের নীট ফলাফল এখন দৃশ্যমান জগা-খিচুড়ি সংবিধান। বাকশালের মাধ্যমেই কি প্রথম ৭২-এর সংবিধান প্রথম পরিত্যক্ত হয়নি?
এম আব্দুল্লাহ
আপনার পর্যবেক্ষন ঠিকাছে। আমি আসলেই সরলভাবে দেখছি। আমি সরলভাবেই বুঝতে পারছি আওয়ামী লিগ ক্ষমতামুখী দল, তার ভোটব্যাংকের ধর্মনিরপেক্ষতায় আপত্তি নাই বলে সে ধর্মনিরপেক্ষতায় আছে। কোনদিন যদি তার ভোটারদের ধর্মনিরপেক্ষতায় আপত্তি দেখা দেয়, সে ও আপত্তি দেখবে। এটা সোজা হিসাব।
আমার মুল ভাবনা ছিলো- মুল নীতি থেকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস সরানোর মতো ঝুঁকি নিতে পারলে বিসমিল্লাহ/রাষ্ট্রধর্ম সরাতে আওয়ামী লীগ পিছালো কেনো?
এর ও একটা সরল উত্তর আছে আমার কাছে। প্রগতিশীলতা/ধর্মনিরপেক্ষতার ভোট বাজারে আওয়ামী লীগের কোন প্রতিদ্বন্ধী নেই। নেই বলেই এই বাজার নিয়ে তার কোন টেনশন ও নেই। সে জানে যতোই সমালোচনা করা হোক বিএনপি জামাতের হাত থেকে পিঠের চামড়া বাঁচাতে গেলে বাংলাদেশের প্রগতিশীল/ধর্ম নিরপেক্ষ/ সংখ্যালঘু ভোটারের তাকে ভোট না দিয়ে উপায় নেই। তাই চাইলেই পুরোটা করতে পারতো একসাথে, কিন্তু করলোনা। হাই টাই তুলে পরে কোন এক সময় করা যাবে- এরকম আলসে একটা ভাব ধরে থাকলো।
প্রগতিশীল ভোটের বাজারে আওয়ামী মনোপলি না ভাঙ্গা পর্যন্ত এই হেজিমোনি টিকে থাকবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ র্মোশদে ভাই। এই বিশেষণটা খবই চমৎকার হয়েছে। বামরা সংবিধান সংশোধনে তথা ভোট এবং ¯াক্ষরে বিরত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ফ্লোর ক্রসিংয়ের খড়গের ভয়ে সে সাহস করতে পারেননি। বাংলানিউজ লিখেছে,
এম আব্দুল্লাহ
আমি মূল লেখাটার সঙ্গে একমত।
খুব সাধারণ একটা ব্যাপার হচ্ছে, আপনি আপনার প্রোডাক্ট সবার কাছে বিক্রি করতে পারবেন না। আপনাকে একটা সেগমেন্ট ভাগ করে নিতে হবে এবং সেখানে আপনার স্ট্রেংথ বাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগের সেগমেন্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রগতিশীল অংশ। না, আমি দলের অভ্যন্তরের কথা বলছি না, বলছি ভোটের অংশটুকু। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উচিত হবে রাষ্ট্রে প্রগতিশীলদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, এর মাধ্যমেই তার ভোট ব্যাংক নিশ্চিত হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে জামাত শিবিরের তাণ্ডব প্রতিরোধ করতে পারে, এমন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক শক্তির বিকাশের পথ সুগম করা।
ম্যাকডোনালস বার্গার বিক্রি করতে পারে, কিন্তু পিজা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে, একথা আওয়ামী লীগের মনে রাখা উচিত ছিল।
'আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা' সরিয়ে ফেলাকে ইসলামি পরিভাষায় বলে মুরতাদ। 'মুরতাদ আওয়ামী লীগ' তার হাসজারু অবস্থান থেকে কিছুই অর্জন করতে পারবে না।
আপনি যে লিখেছেন, "আওয়ামী লীগের সেগমেন্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রগতিশীল অংশ। না, আমি দলের অভ্যন্তরের কথা বলছি না, বলছি ভোটের অংশটুকু"; কিন্তু, "সেকুলারিজম বা সমাজতন্ত্র কোনটার চর্চা তো দূরের কথা আওয়ামী নামের দলটির মূল খুঁটি সাবেক মুসলিম লীগার জোতদার-মাহজন শ্রেণী কঠোরভাবে তখনো প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন এবং এখনো আছেন"- যেটা সুমন চৌধুরীর এনালাইসিসে খুব সুন্দরভাবে এসেছে। এরা রাষ্ট্রে কিভাবে প্রগতিশীলদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে?
দ্বিতীয় মন্তব্য আপনার পরিভাষা নিয়ে। "'আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা' সরিয়ে ফেলাকে ইসলামি পরিভাষায় বলে মুরতাদ" - এ কথা আপনি কোথায় পেলেন? রেফারেন্সটা কি দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ
দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের সব দলই নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে। সেটি ঠিক না ভুল তা সময়ই বলে দেয়।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-07-03/news/167216
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ, নজররুল ভাই। আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নিয়ে বিতর্কটা বেশ পুরনো। আপনি লিংকটা শেয়ার করায় আশা করি মোর্শেদ ভাইয়ের "সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনেই যে কোন নাগরিক কিংবা গোষ্ঠীর সুযোগ আছে আদালতের শরনাপন্ন হয়ে বিষয়টির নিস্পত্তি ঘটানোর" জটিলতা খোলাশা হল। আগ্রহীরা বিডি নিউজে (http://opinion.bdnews24.com/bangla/2011/06/04/) প্রকাশিত ফরহাদ মাজহারের "বিচার বিভাগ কি জাতীয় সংসদ?" শীর্ষক মৌলিক কাঠামো নিয়ে আলোচনাটা পড়ে দেখতে পারেন। তিনি ঐ লেখায় উল্লখে করেন, "অনুমান করি, সংবিধানের তথাকথিত basic structure বা মূল কাঠামোর তর্কের সঙ্গে আদালতের বর্তমান সিদ্ধান্ত জড়িত। ‘তথাকথিত’ বলছি এই কারণে যে সংবিধানের মূল কাঠামো সংক্রান্ত ধারণা নিয়ে আদালতে যে তর্ক উঠেছিল তার পক্ষে ‘রায়’ হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক নিষ্পত্তি হয় নি। তর্কটা রয়ে গিয়েছে। তর্কটা পুরনো। অষ্টম সংশোধনী মামলায় আদালত প্রথম সংসদে পাশ হওয়া বিধান সংবিধানের ‘মূল কাঠামো’র দোহাই দিয়ে বাতিল করেছিল। কিন্তু অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি এ টি এম আফজাল অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে একমত হন নি, ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। এই জন্যই ‘তথাকথিত’ লিখলাম"।
মোর্শে দ ভাই মৌলি ক কাঠামোর কথা তুলায় আমি মৌলি কাঠামো নি য়ে জুরিষ্টদের বিতর্ক সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাচ্ছিলাম। আপনি (নজরূল ভাই) মিজানুর রহমান খানের লিংকটা শেয়ার করায় বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে । ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ
নতুন মন্তব্য করুন