বিলেত বাসের দিনগুলোতে ঘুরোঘুরি ছিলো ইচ্ছেমতোন। ঢিল ছুঁড়া দূরত্বে সমুদ্র, পাহাড় আর লেক থাকলে সবচে অলস মানুষ ও কি বসে থাকতে পারে? এমন অনেকদিন আমি, মুন্নী, মৃন্ময় পরিকল্পনা ছাড়াই ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেছি অচেনা কোন স্কটিশ গ্রামে- আদিগন্ত উপত্যকা সেখানে, দুশো বছরের পুরনো পাব, হাজার বছরের চার্চ, অনাবিল আকাশ আর মেঘের উদ্দামতা।
দেশে ফেরার পর মিসিং তালিকার সর্বাগ্রে ছিলো এই ঘুরোঘুরি। বন্ধুরা প্রায় সকলেই দেশের বাইরে, যারা আছে তারাও ব্যস্ত চাকরী কিংবা বানিজ্য-আর এমনিতেই শহর সিলেট আত্নমগ্ন।
তবু পা থাকলে যেমন পথ মিলে যায় তেমনি চক্করের সঙ্গী ও শেষ পর্যন্ত জুটে যায়। দেশে ছাড়ার সময় নিতান্ত কিশোর ছিলো এরকম একদল তরুনের সাথে আমার বন্ধুত্ব ঘটে। এরাও ঘুরোঘুরি করতে পছন্দ করে। অতএব আমাদের চক্কর চলে। চেনা, অচেনা জায়গায়। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে দিকশূন্যপুর যাই...
এই পর্বের লেখাগুলো আমার এই বন্ধুদের জন্য...
হাওড়, নদী, পাহাড়
গত নভেম্বরে আমরা গিয়েছিলাম টাঙ্গুয়া , কোরবানী ঈদের পরের দিন। সুনাগঞ্জের সাহেব বাড়ীর ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় নদী পেরুনো, তারপর শুরু মোটর সাইকেল যাত্রা। বর্ষায় শুধুই নৌকা আর শীতে মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেল ভাড়া যায়, চালকের পেছনে দুজন। সুনামগঞ্জের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানা, তারপর তাহিরপুর-যেতে যেতে টের পাওয়া যায় সরকারী কর্মচারীদের শাস্তিমুলক বদলী হিসেবে কেনো এইসব এলাকায় পাঠানো হয়। রোলার কোষ্টার চড়তে গিয়ে যদি কেউ ভয় পান, তার জন্য এই পথ নিষিদ্ধ-মোটামুটি ঘন্টা দুয়েক ডেঞ্জার রাইড
তাহিরপুর উপজেলা সদরে একটাই থাকার জায়গা, বাঁশের বেড়া দেয়া টানা ঘর। চাপকল আছে, টয়লেট একটি। কলের পানিতে দুনিয়ার সব ধুলো-ময়লা সরিয়ে আমরা দ্রুত চলে যাই নদীর ঘাটে। দিবাকর নামে এক ভদ্রলোক থাকার জায়গা ও নৌকা ঠিক করে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে আফজাল ও আসে, আমাদের বাসার গৃহসহকর্মীর মামাতো ভাই। ঈদের পরদিন হওয়ায় বাজার নিস্তব্দ। ভাগ্যক্রমে কলা আর বনরুটির সন্ধান মেলে। শুরু হয় টাঙ্গুয়া যাত্রা।
শান্তিগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা মেলে জনাব রাজু আহমেদ রমজানের। তিনি অত্র এলাকার বিরাট সাংবাদিক। আমাদের দলে ছিলো দেবাশিষ দেবু- সিলেটের স্থানীয় পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। মুলতঃ দেবুকে খাতির করার জন্য রমজান সাহেবের আগমন। দেখামাত্রই অভিমানে তিনি টইটুম্বুর, না জানিয়ে এসে তাকে আমরা অপমান করলাম! আগে থেকে জানালে এতো কষ্ট করতে হয়না- থানার স্পিডবোট আমাদেরকে টাঙ্গুয়া ঘুরাতো, থাকা যেতো সরকারী গেষ্ট হাউজে! পরের বার আসলে অবশ্যই তাকে জানাবো এরকম কথা দিয়ে মুক্তি পাওয়া রমজান স্যারের হাত থেকে। তিনি কথা দিলেন পরের বার গেলে টাঙ্গুয়ায় 'বাঘ ভাল্লুক ও যাবতীয় সরিসৃপ সহ কোটি কোটি পাখী' দেখার ব্যবস্থা করবেন আমাদের জন্য।
দিবাকর দিব্যি দিয়ে বলে দিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য না হলে রাতের খাবার পাওয়া যাবেনা, আমরা যখন ফিরি তখন তাহিরপুর বাজারে শুনশান নীরবতা। ভাত খাওয়ার মতো কোন হোটেল খোলা নেই, এদিকে ক্ষুধায় সবার অবস্থা জেরবার। আকাশে ভরা জ্যোৎস্না, খাবারের কথা ভুলে উপজেলা পরিষদের বাঁধানো চত্বরে গিয়ে বসি। সামনে বিশাল শনির হাওর। পাড় জুড়ে দীর্ঘ গাছের সারি, কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে জনসভা করে গেছেন নৌকায় বানানো মঞ্চে। খোলা মাঠ নেই, সভায় আগত কয়েক হাজার মানুষ নাকি নিজ নিজ নৌকা নিয়েই উপস্থিত ছিলো। হাওরের পাড়ে জ্যোৎসনা গিলতে গিলতে টের পাই- আমাদের নাগরিকদের সীমাবদ্ধতা কতো তীব্র, পেট পুরে না খেলে এই তীব্র সুন্দর ও অসহ্য হয়ে উঠবে। উপায়ান্তর না দেখে ফোন করা হয় আফজালকে। ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা দোকান থেকে বেচারা দোকানদারকে তুলে ডিম, আলু, ডাল ও চাল কিনে দেয়া হয় আফজালের বাড়ীতে আরো মাইলখানেক দূরে।
আরো ঘন্টা দুয়েক পর, নদীর তীর ধরে হাঁটে হাঁটতে আমরা ওদের মাটির ঘরে গিয়ে হাজির হই। আফজালের মা পরম স্নেহে আমাদের খাবার এগিয়ে দেন, আফজালের বাবা এসে সলজ্জ কুন্ঠা প্রকাশ করেন- নিজের টাকায় আমাদের একবেলা খাওয়ানোর সামর্থ্য তার নেই বলে।
আমরা বিব্রত হই, এই স্নেহ এবং সৌহার্দ্যের জবাব দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।
মাঝরাতে যখন ফিরে এসে টিনের চালা দেয়া ঘরের ইটের মতো শক্ত বালিশে মাথা রাখি, টাঙ্গুয়ার হাওরের নীলাভ জ্যোৎস্না মাখা আকাশে হয়তো তখনো উড়ে যাচ্ছে কোন পরিযায়ী পাখী। আমরা তার নাম জানিনা
পরদিন সকালে মোটর সাইকেল যোগে আবার যাত্রা বাদাঘাট বাজারে। সেখানে সমাসীন আরেক সাংবাদিকসম্রাট, তার ক্ষমতা রমজান স্যারের থেকে ও বেশী। বাদাঘাট বাজারে তার একটি হোটেল আছে, তাহিরপুরের ঐ টিনের চালায় থেকেছি শুনে আবারো তীব্র অভিমান। তার ওখানে চা-নাস্তা করে মান ভাঙ্গিয়ে যাত্রা শুরু লাউড়ের গড়ের উদ্দেশ্যে।
সম্ভবতঃ টিলাটির নাম ছিলো বারাক টিলা। এখন বারিক টিলা নামেই পরিচিত। ধারনা করি এটি ওপাড়ের গারো পাহাড়েরই সম্প্রসারিত অংশ। মুলতঃ গারোদেরই বসতি ছিলো এখানে, কিন্তু গানিতিক নিয়মেই গারোদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দ্রুত। জায়গা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বাংগালী বসতি। বাংলাদেশের শেষ সীমানা পিলারের কাছাকাছি গড়ে উঠেছে চার্চ, গারোদের ধর্মান্তকরন ঘটেছে এদের মাধ্যমে। আবার সীমান্ত ঘিরে মাদ্রাসা ও তৈরী হয়েছে। টুপি মাথায় তালেবানরা আড্ডা দিচ্ছে চার্চের বারান্দায়।
অনেক নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জাদুকাটা নদী। সম্ভবতঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে রূপবতী নদীগুলোর একটি। বারাক টীলা থেকে নেমে আমরা এই নদী পেরোই। নদী পেরিয় পাহাড়ের গায়ে শাহ আরেফিনের মাজার। এলাকা বাসীর উচ্চারনে 'শারপিনের মাজার'। জাদুকাটা নদীতে হয় হিন্দুদের পূন্যস্নান আর শারপিনে মুসলমানদের ওরস। সীমান্ত খুলে যায় তখন।
শারপিন মাজারের তত্বাবধায়ক আরেক সাংবাদিক। জোর করে নিয়ে যান বাড়িতে। দুপুরের খাবার দাবারের পর আমরা রওয়ানা দেই সুনামগঞ্জের দিকে।
পেছনের পদরেখায় ক্রমশঃ দূর মিলায় হাওর টাঙ্গুয়া, লাওড়ের গড় আর জাদুকাটা নদী।
মন্তব্য
চমৎকার...।
অপরলৌকিক ভ্রমণ ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পড়ে ভালো লাগলো।
যেতে মন চায়.............
দারুণ লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এবার যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু সময় মনে হচ্ছে কুলাচ্ছে না
মাসের শেষদিকে আসতে পারি...
লেখা নিয়ে কিছু বলার নাই। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ছবিগুলাও দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বর্ষায় এই ভ্রমন ভয়াবহ থ্রিলিং। যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ তবু যাওয়া যে যায়না তা না।
আসেন, টাঙ্গুয়া না হলেও সিলেটের আশেপাশে বেশ কিছু জায়গা আমরা খোঁজে বের করেছি, প্রথাগত গন্তব্যে এগুলো পড়বেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বর্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন ?
আমার অনেক দিন ধরে টাঙুয়ার হাওরে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। আপনার ফাটাফাটি লেখাটা পড়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা আবার চাড়া দিয়ে উঠল। আমার আবার বর্ষায় - অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে আগাগোড়া জলপথেই ঘোরার ইচ্ছা। সুনামগঞ্জ আগে কখনো যাইনি তাই জানিনা এটা সম্ভব কিনা, তবে শুনেছি সম্ভব এবং এরকম ক্ষেত্রে বড় নৌকা রিজার্ভ করে বাজার-সদাই করে একবারে বেরোতে হয় এবং হাওরে নৌকার মধ্যেই দু'য়েক রাত কাটাতে হয়, তার মধ্যেই রান্না-খাওয়া-দাওয়া। এটা কি ঠিক ? আমার কিন্তু খুব থ্রিলিং মনে হচ্ছে।
আমার প্ল্যানটা ছিল একটা গ্রুপ করে যাওয়া, কিন্তু সমস্যা হলো ঢাকার বন্ধু-বান্ধব সবারই সময়ের ভীষন টানাটানি - বিশেষত বছরের মাঝখানে - যেটা আবার আমার পছন্দ হাওর/নদী সব পানিভর্তি থাকে বলে। তাই সবাই যাওয়ার আগেই সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় আমার কাছে ( যেমন - যাওয়া, থাকা, খাওয়া, ঘোরা, বাহন, দর্শনীয় স্থান/বিষয়বস্তু, খরচ, কদ্দিন লাগবে - ইত্যাদির অবস্থা/ব্যবস্থা)! বাবা-মার সূত্রে আমি নিজে সিলইট্যা হলেও (জন্ম ও বসবাস-সুত্রে অবশ্য আদ্যান্ত ঢাকাইয়া) সুনামগঞ্জ সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং কাঙ্ক্ষিত তথ্যের কোন নির্ভরযোগ্য সোর্সও পাচ্ছি না। আপনি কি নেটে এরকম কোন সোর্সের সন্ধান দিতে পারেন ? অবশ্যি সবচেয়ে ভালো হয় এবং যদি আপনার লেখার বাঞ্ছিত ধরন বা স্কোপের বাইরে না হয়, তাহলে পরবর্তী পর্বে যদি এ বিষয়ে যথাসম্ভব আলোকপাত করেন।
আমাকে বলা হয়েছে (বা আমি যেমনটা বুঝেছি) - বর্ষার শেষের দিকে যখন স্রোত/ঢেউ ইত্যাদি কম থাকে এবং পানি স্থির থাকে অথচ যখনও নদী-হাওর সব একাকার আর পানি সরে যাওয়া শুরু হয়নি তখনই জলপথে ভ্রমনের সেরা এবং নিরাপদ সময়। এটা কি ঠিক, এবং এটা ঠিক কোন মাসের কোন সময় ? ব্যক্তিগত ভাবে আমার জন্যে বিষয়টা আরো গুরুত্বপূর্ন, কারন - সাঁতার জানিনা ! সুনামগঞ্জ (টাউন থেকেই?) থেকে নৌপথে গেলে হাওরটা পুরোপুরি/ভালভাবে চক্কর দিয়ে আসতে কত সময় লাগবে ? নৌ/হাওরপথে গেলে আপনি যেসব জায়গায় গিয়েছেন সেসব জায়গায় যাওয়া যাবে ? বর্ডার, বর্ডারের ওপারের (মেঘালয়?) পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্না/জলপ্রপাত, গারো পাহাড়, জাদুকাটা নদী, ইত্যাদি ইত্যাদি ? দশ-বিশ জনের গ্রুপের জন্য হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে-ঘুমিয়ে দীর্ঘ সময় ভ্রমনের জন্য যথেষ্ট সুপরিসর নৌকা/নৌযান কি এখানে পাওয়া যাবে ? আর হ্যাঁ, ঐ সরকারি রেস্ট হাউজটা কোথায় জানেন ?
এমন চমৎকার মোহনীয় একটা ভ্রমন-কাহিনির মন্তব্যে যথোচিত প্রশংসা আর আহা-উহু না করে নেহাৎ বেরসিকের মত একগাদা নীরস কাটখোট্টা প্রশ্নের অবতারনা করে আমার নিজেরই খারাপ লাগছে এখন। দুখিত !
****************************************
প্রশ্ন করায় ভালো হয়েছে বরং
বর্ষায় বিপদ্দজনক কেনো বলিঃ- এই ছবিগুলো তোলা হয়েছে নভেম্বরের মাঝামাঝি, শীতকাল শুরু-তবু দেখেন হাওর তখনো ভরপুর, নদী একটু ও শীর্ণ নয়। ভরা বর্ষায় মাইলের পর মাইল জল থই থই কোন জনবসতি পর্যন্ত নেই, অনেকগুলো হাওর পাড়ি দিতে হয়-এর মধ্যে শনির হাওড় একটি যা বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর হাওর। সব সংবাদ পত্রিকায় আসেনা, কিন্তু এই সময়ে প্রায়ই নৌকাডুবিতে প্রানহানি ঘটে ওর ও নদীর যে বিশালতা, ভালো সাঁতারুর পক্ষে ও নিরাপদে পাড়ে উঠা ভাগ্যের বিষয়।
সুনামগঞ্জ থেকে ১০/১৫ জনের দল একটা শক্ত নৌকা ভাড়া নিয়ে অন্ততঃ দুদিনের জন্য বের হতে হবে।
লাইফ জ্যাকেট মাস্ট। নৌকা রাতে কোন বিডিআর ক্যাম্পের কাছাকাছি রাখতে হবে।
ভালো খবর হচ্ছেঃ সিলেটের তরুনদের একটা দল টাঙ্গুয়ায় প্রফেশনালী ট্যুর অপারেট করার চিন্তাভাবনা করছে। যদি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়, আপনাকে আমি জানাতে পারি। ফেসবুকে আমাকে যোগ করে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকার!
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা থাকছে..
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চমৎকার বর্ননা। এভাবো ঘোরার বড় শখ।
লেখায়
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এই আকালের দিনে পরিত্রান নিঃশ্বাস আর পরিত্রান শব্দ দুইটা একসাথে দেখলেই একটা ভালোলাগার অনুভূতি হয়। আপনার লেখা আবেশ ছড়ালো। সিলেট আমার খুবই প্রিয় একটা জায়গা, সুনামগনজ তারও বেশী। আর আমি হাওর এলাকার মানুষ, হাওড়ের বৈচিত্র সময়ে সময়ে একেকরকম করে টানে।
টাঙুয়ার হাওড়ে জোছনা দেখার খুব শখ, অনেকবারই পরিকল্পনা করেছি যাওয়া হয়নি। আপনার লেখা পড়ে পুরাতন ইচ্ছেটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ধন্যবাদ,
কিছু ছবি অপূর্ব।
পড়তে পড়তে একজায়গায় এসে টুপি মাথায় তালেবান কথাটা সামান্য একটু চোখে লাগলো। ঐ ছেলেগুলি কি মাদ্রাসা ছাত্র বলেই তালেবান বলেছেন? নাকি ওদের কথাবার্তায় (হয়তো) তালেবানি আচরণ প্রকাশ পেয়েছে বলে? নাকি (সীমান্ত এলাকায়) মাদ্রাসা ছাত্র বিধায় অদূ্র ভবিষ্যতে তালেবান টাইপ মানুষে পরিণত হবে বলে? হয়তো সবগুলো কারণই টুপি মাথায় তালেবান কথাটা জাস্টিফাই করে, তবু হঠাৎ করে সামান্য চোখে লাগলো তাই বলে ফেললাম।
লেখা ভাল লেগেছে।
পিচ্চি পিচ্চি এই ছেলেরা চার্চের বারান্দায় খালি গায়ে বসে বিড়ি খাচ্ছিলো, আমাদেরকে দেখে ঝটপট পাঞ্জাবি পড়ে আর টুপি মাথায় দেয়, তারপর হাসিমুখে দাঁড়িয়ে যায় ক্যামেরার সামনে। ওদের সঙ্গে সানগ্লাসও ছিল, ছবি উঠানোর পর সেগুলো পকেট থেকে ওরা বের করেছিলো।
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
আমার জানা যদি ভুল না হয় 'তালেবান' মানে ছাত্র।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
তালেবান মানে যে ছাত্র, এটা আমার জানা ছিলনা। আপনাকে ধন্যবাদ। তবে তালেবান শব্দটা এই মূল অর্থে অন্তত আমাদের দেশে অনেকেই কিন্তু ব্যবহার করেনা, এবং আমার মতো অনেকেই এই অর্থটা জানেও না। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি মিলিয়ে অবস্থা এখন এমন যে 'তালেবান' আর 'জঙ্গি' প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। তালেবান লিখে গুগল এ সার্চ দিয়ে দেখুন। চট করে এই বহুল ব্যবহৃত অর্থটাই মনে পড়ে। 'আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগানিস্তান' - স্লোগানটা মনে আছে নিশ্চয়ই। তাই টুপি পরা এই ছেলেগুলিকে বর্ণনা করতে যখন আপনি প্রচলিত 'ছাত্র' বা 'মাদ্রাসাছাত্র' ব্যবহার না করে তালেবান শব্দটা ব্যবহার করেছেন, তখন একটু চোখে লেগেছে। ধন্যবাদ।
টাঙ্গুয়া ঘুরে এসে আমরা কিন্তু রাজু আহমেদ রমজানকে ভুলতে পারিনি। বাঘ, ভাল্লুক আর বিরল প্রজাতির সরীসৃপ দেখার লোভ এখনো আছে, বর্ষায় গেলে হয়তো রমজান ভাই তিমি মাছও দেখাতে পারে! মোরশেদ ভাই, বর্ষায় সম্ভবত সুনামগঞ্জ শহর থেকে বাদাঘাট হয়ে নৌকায় টাঙ্গুয়া যাওয়া যায়, দেখেন না বর্ষায় যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা ?
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
একটা চিন্তাভাবনা চলছে জোরালো ভাবে। আরেকটা পরিকল্পনা হামহাম জলপ্রপাত, যেতে আসতে সতেরো কিলো পাহাড়ী পথে হাঁটা। জানাবো তোকে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকার লেখা আর ছবি মোরশেদ ভাই... তবে ছবিগুলো আলাদা আলাদা করে বড় করে দিলে আরও ভালো লাগতো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
টিলার নাম বারাক টারাক ছিলো না। বারিকের বা বারেকের টিলাই এর নাম। লোকটা এসেছিলো সম্ভবত ভৈরব থেকে। আস্তানা গাড়ে এই টিলায়। সেটাও ব্রিটিশ আমলের ঘটনা। পুরা লাউড়ের গড় এলাকায় কিন্তু স্থানিয় মানুষ হাতে গোনা। সেটেলারে ভর্তি, যাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে দেখা হয় এই আব্দুল বারেক বা বারিক কে।
বারিকের টিলায় দাড়ালে খুব আরাম হয়, তাই না? পাশে বয়ে চলা রেনুকা অথবা যাদুকাটা নদী, সকলি আরামদায়ক চোখের জন্যে। কিন্তু যখনি তুমি সীমান্তের ওপারে তাকাবে সব আরাম উবে যাবে। বাংগাল কতো ভয়ংকর জাত এটা বুঝা যায়। এপাশে আমরা ধুমায়া পাহাড় কাটি, সমান করি তারপর ঘর বানাই। আর ওরা পাহাড়ের ঢালে কি নিয়ম করে মাচাং বেধে ঘর তুলছে। আরেকটা বিষয়, এপাশে সবচে বড় টিলা হলো বারিকের টিলা, ওপাশের তুলনায় যা নিতান্তই শিশু।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন