এর প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছিলেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একমাত্র প্রতিনিধি এম এন লারমা। এর আগে খসড়া সংবিধানের ওপর গণপরিষদে যে বিতর্ক হয় তাতে অংশ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘সংবিধান হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা যা অনগ্রসর জাতিকে পিছিয়ে পড়া ও নির্যাতিত নীতিতে অগ্রসর জাতির সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে আসার পথ নির্দেশ করবে। কিন্তু বস্তুতপক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না।’
শেখ মুজিবুর রহমান ৭৩ এর নির্বাচনী জনসভায় পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- ‘তোরা বাঙ্গালী হয়ে যা!’ তার মত নেতার কাছে এটাই হয়তো সরল সমাধান মনে হয়েছিলো!
সেই নির্বাচনে ও এম এন লারমা আবারো নির্বাচিত হন,স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই। এর ভেতরে জনসংহতি সমিতি গঠন করেন ,পাহাড়ের এগারো জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে জুম্ম জাতির রূপরেখা প্রনয়ন করেন এবং নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সংবিধানে জুম্ম জাতির স্বীকৃতির দাবী তুলতে থাকেন। লারমা সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হিসেবে ইউরোপ সফর করেন, বাকশাল গঠন হলে বাকশালে ও যোগ দেন।
আগষ্ট পনেরো ১৯৭৫ এ শেখ মুজিব নিহত হলে পরদিন মানবেন্দ্র লারমা আত্নগোপনে চলে যান, টের পান এবার আর মৌখিক, সাংবিধানিক অস্বীকৃতি নয় শুরু হবে সামরিক আগ্রাসন। আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য তার নেতৃত্বে তৈরী হয় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন।
এরপরের দুই দশক কেবলই সামরিক আগ্রাসন,উচ্ছেদ, ভূমি দখল, গনহত্যা, ধর্ষনের রক্তাক্ত অধ্যায় ।এই অধ্যায়ের পুনরোচ্চারন বাহুল্য মাত্র, কেবল শুরুতে একটি প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য এই ভণিতাটুকু।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা একটি পূর্নাংগ জাতি হিসেবে স্বাধীন দেশের সংবিধানে জুম্মদের স্বীকৃতি ও ন্যায্য অধিকারের দাবী তুলেছিলেন নাকি ‘আদিবাসী’ হিসেবে তাদের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন?
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন সংগ্রামে ‘বাংগালী জাতীয়তাবাদ’ এর অনুপ্রেরনা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য। নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে সেই ইতিহাসটুকু ও স্বীকৃত হতে পারতো কিন্তু একারনে একটা রাষ্ট্রের ভেতরের সকল মানুষ একই জাতিভুক্ত হয়ে যেতে পারেনা। সংখ্যায় যতো লঘুই হোক ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বীকৃতি উপেক্ষা করতে পারেনা কোন রাষ্ট্র। দুঃখজনক ভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুতেই এই অন্যায্য অস্বীকৃতির বিষয়টি ঘটেছিলো, সাংবিধানিক ভাবে সবাইকে ‘বাঙ্গালী’ জাতিভুক্ত করা হয়েছিলো।
অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান যেমন একদিকে পাহাড়ে সামরিক আগ্রাসন, পাহাড়ীদের উচ্ছেদ ও বাঙ্গালীদের অভিবাসনের কাজ শুরু করে তেমনি আবার সংবিধান কাঁটাছেড়া করে ‘বাঙ্গালী’ জাতীয়তাবাদের বদলে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এর সুচনা করে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের বাঙ্গালী, জুম্ম সহ সকল জাতির পরিচয়কেই মুছে দেয়ার চেষ্টা চলে। সামরিক শাসক ও তার পরামর্শক বুদ্ধিজীবিরা একটা সরল সত্যকে অস্ত্রের জোরে অপসারন করতে চেয়েছিলো - জোর করে জাতি বানানো যায়না,রাষ্ট্র পরিচয় যতো তাড়াতাড়ি বদলায় জাতির পরিচয় ততো তাড়াতাড়ি বদলানো সম্ভব নয়।
সামরিক শাসক এরশাদের আমলে ও একই ধারবাহিকতা চলে। নব্বুইর গনআন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসনের অবসান পরবর্তী সময়ে সংবিধানে ‘আদিবাসী’দের স্বীকৃতির বিষয়টি আবারো উচ্চারিত হওয়া শুরু করে। স্বভাবতই বিএনপি, জামাত ও সমমনা ডানপন্থী দলগুলোর অবস্থান এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক। বামপন্থীদলগুলো তাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে পাহাড়ী জনগোষ্ঠির সমর্থনে মোটামুটি সরব। অপরদিকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ অন্তত দৃশ্যতঃ পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল। একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়, শান্তিবাহিনী অস্ত্র সমপর্ণ করে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সামরিক অভিযান বন্ধ করে।
শান্তিচুক্তি পরবর্তী সময়ে দেখা যায় মানবেন্দ্র লারমা যেমন জুম্ম জাতির স্বীকৃতি ও অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, পাহাড়ের বর্তমান নেতৃত্ব এর বদলে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতিকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন।এসময়ে আওয়ামী নেতৃত্ব ও তাদের সপক্ষের বুদ্ধিজীবিদের কথাবার্তায় ধারনা পাওয়া যায়- স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ‘আদিবাসী’দের স্বীকৃতি না দেয়াকে তারা আর জাস্টিফাই করছেননা এবং পাহাড়ী জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন সাংগঠনিক ফোরামে তারা কথা দেন ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দেয়া হবে।
বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি নিজে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে ‘আদিবাসী দিবস’এ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘আদিবাসী’দের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করেন। এমনকি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে
Terrorism, discriminatory treatment and human rights violations against religious and ethnic minorities and indigenous people must come to an end permanently.
Their entitlement to equal opportunity in all spheres of state and social life will be ensured. Special measures will be taken to secure their original ownership on land, water bodies, and their age-old rights on forest areas.
All laws and other arrangements discriminatory to minorities, indigenous people and ethnic groups will be repealed. Special privileges will be made available in educational institutions for religious minorities and indigenous people. Such special privileges will also apply for their employment
দুই-তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলে পরাজিত ডানপন্থীরা ছাড়া বাংলাদেশের বাকী সব শুভবোধ সম্পন্ন মানুষেরা আশা করেছিলেন আওয়ামী লীগ তার কথা রাখবে। যে ভুল হয়েছিলো সংবিধানের শুরুতে সেটি এবার সংশোধন হবে।
কিন্তু যারা খোঁজখবর রাখেন তারা টের পাচ্ছিলেন শুরু থেকেই এ বিষয়ে কিছু একটা ঝামেলা শুরু হয়েছে। প্রথমে সচিব পর্যায়ে, তারপর দুএকজন মন্ত্রী অনানুষ্ঠানিকভাবে বলতে থাকেন- বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। তারপর যখন পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হলো জুন ৩০ তারিখে, দেখা গেলো কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির কোন নামগন্ধ নেই।
শুধু '২৩ক' নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে 'রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।'
এই সংশোধনী নিয়ে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে সমালোচনা শুরু হলে গত ২৬ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক ও কুটনৈতিকদের ব্রিফিং দেন যেনো ‘আদিবাসী’ বলে সম্বোধন করা না হয়,তিনি ’৯৭ এ সম্পাদিত শান্তিচুক্তির ও দোহাই দেন যেখানে ‘Indigenous’ এর বদলে ‘Tribal’বলা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে ‘Indigenous’ এর বাংলা করা হয়েছে ‘আদিবাসী’ এবং ‘Tribal’এর বাংলা ‘উপজাতি’। সরকার Tribal মানছে, ‘Indigenous’ মানছেনা অপরদিকে ‘আদিবাসী স্বীকৃতি’র পক্ষে যারা তারা ‘Indigenous’ চাচ্ছেন, ‘‘Tribal’ নয়।
যদিও ইউকিপিডিয়া জানাচ্ছে ‘Indigenous’, ‘‘Tribal’ এগুলো একই পরিভাষা মাত্র।
আপাততঃ সব বিতর্ক দূরে রেখে দেখা যেতে পারে জাতিসংঘের দেয়া সংজ্ঞামতে ‘আদিবাসী’ কাকে বলে?
Indigenous peoples, or Natives, are ethnic groups who are native to a land or region, especially before the arrival and intrusion of a foreign and possibly dominating culture. They are a group of people whose members share a cultural identity that has been shaped by their geographical region. A variety of names are used in various countries to identify such groups of people, but they generally are regarded as the "original inhabitants" of a territory or region. Their right to self-determination may be materially affected by the later-arriving ethnic groups.
এই সংজ্ঞায়নে দুটো শর্ত বলা আছে।
প্রথমতঃ তারা কোন এক ভূ-খন্ডের একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী যারা কোন একটি বিদেশী দখলদার শক্তি ঐ ভূ-খন্ডের দখল নেয়ার আগে থেকেই ঐখানে ছিলো। দ্বিতীয়তঃ তারা সেই নৃতাত্বিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পেরেছে।
উদাহরন হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কিংবা আমেরিকার আদিবাসীদের কথা বলা যায়। দখলদার ইংরেজরা ঐ ভূ-খন্ডগুলোর দখল নেয়ার আগে থেকেই সেখানে নেটিভদের বসবাস ছিলো। দখলদার সংস্কৃতির আগ্রাসনের মুখে ও তারা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং আদিবাসী সংজ্ঞায়নে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকায় কোন সমস্যা নাই।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টা কি একই রকম?
প্রথম শর্ত যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে মেনে নিতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠী এই ভূ-খন্ডে বহিরাগত বিদেশী এবং এই কথিত ‘বহিরাগত বিদেশী’দের আগমনের আগে থেকেই এখানে কথিত ‘আদিবাসী’দের বসবাস। অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই নানা বিদেশী শক্তি এই ভূ-খন্ডে এসেছে এবং তাদের কেউ কেউ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছে কিন্তু গোটা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীই বাইরে থেকে এসে এই ভূ-খন্ড দখল করেছে যেমন ইংরেজরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড- এমন স্বাক্ষ্য সম্ভবতঃ ইতিহাস দিতে পারবেনা।
নাকি পাহাড়ের জনগোষ্ঠী নিজেদের ‘বাংলাদেশের আদিবাসী’ নয় শুধু ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী’ বলে স্বীকৃতি চান? যুক্তি হতে পারে- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বশেষ সীমা নির্ধারনের আগে অর্থ্যাৎ ১৯৭১ সালের আগে ঐ অঞ্চলে বাঙ্গালী ছিলোনা( একেবারেই কি ছিলোনা?)। ধরে নেয়া গেলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বাঙ্গালী ‘বিদেশী দখলদার’ কিন্তু সমতলের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিষয়টির সমাধান হবে কী করে?
রাজশাহীতে সাঁওতালরা, ময়মনসিংহে গারোরা, সিলেটে খাসিয়া-জৈন্তিয়া-মনিপুরীরা তো স্মরনাতীত কাল থেকেই বাঙ্গালীদের পাশাপাশি বাস করছে। কোন টাইম মেশিনে চড়ে বের করা সম্ভব কে কার আগে এসেছে এইসব অঞ্চলে?
সুতরাং দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে ‘আদিবাসী’ সংজ্ঞায়নের প্রথম শর্তটি যতো সহজে পূরনীয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়।
দ্বিতীয় শর্ত সাংস্কৃতিক মৌলিকতা সংরক্ষন। যারা সংস্কৃতি বলতে নাচ গান আর পোষাক বুঝেন তাদের জন্য সিদ্ধান্তে চলে আসা সহজ। কিন্তু সংস্কৃতি মানে যেহেতু পুরো জীবনাচারন সেহেতু আরেকটু আলোচনার সুযোগ থাকে।সংস্কৃতি নিজেই একটা চলমান প্রক্রিয়া, পৃথিবীতে কোন সংস্কৃতি অজর, অচল, অপরিবর্তনীয় নয়।সকল জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই বদলায়। কারো দ্রুত, কারো ধীরে- এর পেছনে নানা ধরনের প্রভাবক কাজ করে।৫০০ বছর আগের চাকমা জনগোষ্ঠির জীবনাচারন আর আজকের জীবনাচারন এক নয়। ধর্ম কি বদলায়নি? খাদ্যাভাস, পোষাক আশাক একই রয়ে গেছে?
একটা আদর্শ অবস্থা কল্পনা করা যাক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে গত ৪০ বছরে কোন শোষন, নিপীড়ন ঘটেনি-রাষ্ট্রযন্ত্র তার গুরু লঘু সকল জাতিগোষ্ঠীর সাথে সমান আচরন করেছে,লঘুর অনিষ্ঠ সাধনে গুরুর অপচেষ্টাকে ঠেকিয়েছে।
এ অবস্থায় কী ঘটতো? কথিত ‘আদিবাসী’রা যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পেতেন যেমন পায় সংখ্যাগুরুরা- উন্নততর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত থাকতো দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে, কোন বছর জুম চাষ ব্যহত হলে দুর্ভিক্ষের শিকার হতে হতোনা-বিকল্প অর্থনৈতিক সুযোগ থাকতো। আর এসবের ফলে কি জীবনাচারন তথা সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতোনা?
আর কথিত ‘আদিবাসী’দের নিজদের মধ্যেই সাংস্কৃতিক মৌলিকত্ব কতোটুকু? নাগরিক সুবিধা পাওয়া একজন মারমার সাথে বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক পার্থক্য যতোটুকু গহীন অরন্যের একজন মারমার সাথে পার্থক্য তার চেয়ে বেশী হওয়া অসম্ভব নয়।
নাকি ‘আদিবাসী’ বলে স্বীকৃত হওয়ার দাম পরিশোধের জন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের একাংশকে গহীণ অরন্যে বাস করতে হবে পুরনো কালের মতো, তাকে জুম চাষের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে, তার জন্য আধুনিক চিকিৎসা থাকবেনা- শমনের বদলে ডাক্তারের চিকিৎসা নিলে যে তার চিকিৎসা সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাবে!
ফিরে আসে মানবেন্দ্রঃ
মানবেন্দ্র লারমার মার্কসীয় শিক্ষা ছিলো,ছাত্র ইউনিয়ন করতেন।শুধু মাত্র পাহাড় নিয়ে চিন্তা করেননি- চিন্তা করেছেন গোটা দেশকে নিয়ে। ’৭১ এ পাহাড়ের আরেক জনপ্রতিনিধি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালাল হলে ও মানবেন্দ্র যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধ করতে উদ্দীপ্ত করেছেন দেশের জন্য। মানবেন্দ্র কখনোই ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির জন্য দেনদরবার করেননি। পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি সম্প্রদায়কে একীভূত করে জুম্ম জাতির স্বপ্ন দেখেছেন এবং এই জাতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও অধিকারের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছেন শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে এমনকি বাকশালে যোগ দিয়েও, সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়েছেন জিয়াউর রহমানের অবৈধ সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।
সেই মানবেন্দ্র লারমার উত্তরসূরী পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বর্তমান নেতৃত্বের নেতৃত্বগুন ও মুক্তির আকাংখা এতোই ক্ষীন যে নিজেদের পূর্নাংগ জাতি হিসেবে দাবী করার জায়গাটুকু ছেড়ে দিয়ে তারা এখন ব্যস্ত হয়েছেন ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যে দাবী- যুক্তিতে অর্ধসত্য মাত্র।
আদিবাসী/অনাদিবাসী/অভিবাসী মুখ্য নয় বরং বাংলাদেশ রাষ্ট্র একটা নিরাপদ দেশ হোক তার সকল নাগরিকের- সকল ধর্মের, সকল জাতির। সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক ক্ষতগুলো যেমন দূর হওয়া জরুরী তেমনি জরুরী জাতি হিসেবে নাম উল্লেখপূর্বক সকলের স্বীকৃতি- সংখ্যায় গুরু কিংবা লঘু হোক। আধুনিক রাষ্ট্র বহু ধর্ম, বহু জাতি, বহু বিশ্বাস ও অবিশ্বাসকে ধারন করতে জানে।
মন্তব্য
চমৎকার।
সকলের নিজ নিজ জাতিনাম আছে। সেই নামেই ডাকা সঙ্গত।
ক্যাটাগরির নাম অনেক কিছু হইতে পারে। মানেটা গণতান্ত্রিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বাই দ্য ওয়ে, 'বাঙালী হয়ে যা'র কোনো রেফারেন্স (বই বা পত্রিকা) কেউ দিতে পারবেন কি? অন্য একটা কারণে দরকার।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
'৭৩ এর নির্বাচনী জনসভায় নাকি বলছিলো রাঙ্গামাটিতে। ঐ 'নাকি' র বেশী রেফারেন্স আমি ও খুঁজে পাইনাই। পাইলে ভালো হৈতো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
তাহলে 'নাকি'টা পোস্টেও যুক্ত কৈরা দেন। নাকি?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
যায়। তবে শেখ মুজিব যদি ঐটা বলে নাও থাকেন তবু সংবিধানে জাতিকে 'বাঙ্গালী' বানানোর কৃতিত্ব অস্বীকার করা যাবেনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কোনো কিছু স্বীকার বা অস্বীকারের বিষয় না। আমি একটা স্পেসিফিক ঘটনার স্পেসিফিক রেফারেন্স চাইলাম। এবং নিচে দেখেন একজন পাঠক রেফারেন্স দেয়া চেষ্টা করছেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
চমৎকার! হাসান মোরশেদ কে ধন্যবাদ...
মোরশেদ ভাইকে ধন্যবাদ, কিছু জরুরী প্রশ্ন করেছেন তিনি এই চমৎকার লেখাটিতে। আসলেই তো- সংখ্যায় গুরু হোক কিংবা লঘু, আধুনিক রাষ্ট্র সকলকে সমানাধিকার দিয়ে গ্রহণ করতে জানে। অন্তত সেটিই হওয়া উচিত এবং এমন উদাহরণ পৃথিবীতে আছে - যেমন ধরুন নিউজিল্যান্ড।
এখানে আরেকটি ব্যাপার খুবই বেদনাদায়ক সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশের আদিবাসীর ভাষিক স্বাতন্ত্র্য কিন্তু প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাংলা-ইংরেজির প্রতাপে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অমূল্য ভাষিক বৈচিত্র্য। বাংলা-ইংরেজি জানতেই হবে অর্থনৈতিক কারণে সেটি কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু সেই সাথে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার চর্চা যেনো ব্যাহত না হয়। মানুষ সাধারণত দুই-তিনটি ভাষা শিখতে পারে অনায়াসে যদি শৈশব থেকেই শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের যদি অধিকার থাকে মাতৃভাষা বাংলায় লেখাপড়া করার, একই যুক্তিতে আদিবাসীদেরও অধিকার আছে তাদের মাতৃভাষায় লেখাপড়া করার। আর, আমরা বাঙালিরা যেহেতু মাতৃভাষার জন্যে রক্ত দিয়েছি, আমাদের অন্তত এই বিষয়টি বোঝা উচিত এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়া উচিত।
সহমত।
১। জাতিসংঘের আদিবাসী সংক্রান্ত সংজ্ঞা পড়লে এটা অনুভব না করে উপায় নাই যে এই সংজ্ঞা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের নিউ ওয়ার্ল্ডে উপনিবেশ স্থাপনের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটেই নির্ধারিত। বিশেষ এক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত এই সংজ্ঞা জোর করে অন্য সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা বা চাপিয়ে দেয়া যেমন ভুল, তেমনি ক্ষতিকর। এবং ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২। পার্বত্য-চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠির 'আদিবাসি' পরিচয়ের দাবিতে যারা সবচেয়ে মুখর, তাদের অনেকেই মনে হয় যতটা না নিজেদের 'আদিবাসিত্বে' আগ্রহী, তার চেয়ে অনেক বেশি আসলে অন্য সবাইকে 'অনাদিবাসী/অ-আদিবাসী' এবং 'বহিরাগত' 'বিদেশী' 'দখলদার শক্তি' হিসাবে প্রতিপন্ন করতে অনেক বেশি আগ্রহী দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক লক্ষ্যের অংশ হিসাবে।
৩। একটা মজার ব্যাপার হলো, পার্বত্য-চট্টগ্রামের প্রধান পাহাড়ি-গোষ্ঠিগুলির কেউ কেউ (অন্তত একটি প্রধান গোষ্ঠির নেতৃস্থানীয়দের মুখেই প্রাইভেটলি শুনেছি) নিজেদের আইডেন্টিটিকে মোটেই পার্বত্য-চট্টগ্রামের সাথে অঙ্গাঙ্গি জড়িত বলে মনে করেন না, নিজেদের "অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট" মনে করেন না, বিশ্বাস করেন না তাদের 'কালচারাল আইডেন্টিটি' এই 'জিওগ্রাফিকাল রিজিওন' দ্বারা 'শেইপড' হয়েছে (যেমনটা কিনা পোস্টে উল্লেখিত জাতিসংঘের সংজ্ঞায় শর্ত হিসাবে আছে)। বরং মনে করেন দু-তিনশ বছর আগে তারা বার্মার এক প্রদেশ থেকে আগত নিজ রাজ্য থেকে বিতাড়িত একটি বহিরাগত গোষ্ঠী। তাদের মূল দেশ সেখানেই, তারা সেখানকারই "অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট", তাঁদের প্রধান মন্দির ও কালচারাল সিম্বলগুলি এখনো সেখানে বিদ্যমান এবং তাঁদের 'কালচারাল আইডেন্টিটি' ও লয়ালটি সেই 'জিওগ্রাফিকাল রিজিওন' দ্বারাই 'শেইপড'। এসব নাকি তাদের নিজস্ব 'ইতিহাস' বইতেই আছে। (এই হিসাবে ধরলে তারাই বিদেশী শক্তি, নিদেনপক্ষে অনেক বহিরাগত শক্তির অন্যতম মাত্র)। আরো মজার ব্যাপার হলো, এই গোষ্ঠী আবার অন্য প্রধান গোষ্ঠীটিকে অনেক সময় 'সাউথ কোরিয়ান' হিসাবে রেফার করেন।
অথচ, প্রকাশ্যে দাবী করার সময় কতই না ভিন্ন রকম দাবী করেন তারা !
আপনার তিন নম্বর মন্তব্য অনেক জেনারেলাইজড মনে হচ্ছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হতে পারে। আমার সোর্স লিমিটেড। এটা আমার প্রিয় বাল্যবন্ধু, কোন এক প্রধান গোষ্ঠীর প্রথম সারির ব্যক্তিবর্গের অন্যতম, তার মুখে শোনা। তার কথা যদি ঠিকও হয়, তারপরও শুধুমাত্র তার কথা থেকে বাকিদের সম্পর্কে জেনারালাইজ করাটা অনুচিত। উপরন্তু, আমি তার বক্তব্য ওভার-ইন্টারপ্রেট করে ফেলেছি এমন সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাছাড়া তার কাছে এসব মুখে মুখেই শোনা, সে তাদের নিজস্ব 'ইতিহাস' বইয়ের কথা বললেও সেটা আমার নিজ চোখে দেখা হয়নি। তাছাড়া সে অনেক বড় ইতিহাস বলেছিল যার বেশির ভাগই মনে রাখিনি গল্পগুজবের মুডে থাকার কারনে। তবে ইচ্ছা আছে এর পরে দেখা হলে বিস্তারিত আবার জেনে নেয়ার। আদিবাসি/অনাদিবাসি বিতর্ক বাদ দিলেও তাদের ইতিহাসটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল।
আরেকটা কথা, নিচে প্রান্তিকের মতামতের সাথে আমি অনেকটাই একমত। এই আদিবাসি/অনাদিবাসি ইস্যুটা সম্পুর্ণ সত্যাশ্রয়ী না হলেও এটা আসলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটা পাল্টা অস্ত্র হিসেবেই উঠে এসেছে। অনেকটা মনে হয়, শঠ্যে শাঠ্যং সমাচরেৎ নীতি। বিষয়টা এই প্রেক্ষিত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে মনে হয় ভুল হবে। সমাধানটাও আসলে এখানেই নিহিত শেষ পর্যন্ত। স্রেফ জাতি/জনজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এমনকি মহাজাতি/মহাগোষ্ঠী অভিধা দিয়ে আসল রোগের চিকিৎসা হবে না। মূল ক্ষোভগুলিকে যত দ্রুত এবং যত ইফেক্টিভলি সম্ভব এ্যাড্রেস করার কোন বিকল্প নেই। সবকিছুই হয়ত সম্ভব নয়, তবে প্রকৃত সদিচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে তারপরও মনে হয় অনেক খানিই সম্ভব। প্রান্তিকের হৃদয়স্পর্শী মন্তব্যটা আমার পুনর্বোধদয় ঘটালো।
তবে ডাই-হার্ড পলিটিকাল ভ্যানগার্ড অংশের ব্যাপারে সাবধানতা তবুও বাঞ্ছনীয়। এধরনের দীর্ঘকালীন সষস্ত্র ইন্সারেকশনের ক্ষেত্রে সময়ের বিবর্তনে নেতৃস্থানীয়দের মানসে/চরিত্রে/আদর্শে নানাবিধ পচন ধরা অসম্ভব নয়। তখন তারা অনেক সময় নিজ জনগনের (যাদের তারা রিপ্রেজেন্ট করছে বলে দাবী করে) বৃহত্তর স্বার্থ বা কল্যানের বিরুদ্ধেই চলে যেতে পারে, যেখানে তাদের নিজস্ব এজেন্ডাই মূখ্য হয়ে ঊঠে - কিন্তু অপব্যবহার করে যথার্থ পাব্লিক সেন্টিমেন্টের। এলটিটিই-র কথা মনে আছে ? শেষের বহুকাল এলটিটিই আর সাধারন তামিল জনতা মনে হয় না এক কথা ছিল।
এটা মনোযোগের দাবী রাখে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মুখফোড়ের বিখ্যাত একটা উক্তি আছে: "গোয়া মেরে টিস্যু দান"।
আরো বছর বিশেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর গোয়া মেরে মেরে তাদের মোট সংখ্যা শ'খানেকে নামিয়ে আনতে হবে। তারপর "আদিবাসী রক্ষা আইন" বানিয়ে টিস্যু দানের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
রেড ইণ্ডিয়ান, অ্যাবরিজিনাল, বা মাউরিদের মত গোয়া মেরে টিস্যু দান করে বাংলার আদিবাসীদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে না পারলে কীসের বাঙালি?
কিছু বলার নেই। পাহাড় আর সমতলভূমির চাকমা, মারমা, মান্দি বন্ধুদের সামনে যেয়ে দাড়াতে মাঝে মাঝে আড়ষ্ট লাগে, লজ্জা লাগে আর সবসময় যেটা অনুভব করি সেটা হচ্ছে চাপ! রাষ্ট্র যখন তার রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের কথায় সুবিধাবনচিতদের ক্রমাগত ছোট করে যেতে থাকে, হেয় করে যেতে থাকে তখন একটা সময়ে পাশার দান উল্টে যায়। পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর জালের মত বিসতৃত নানানরকম ব্যবসা নিয়ে কেউ কোনদিন কিছু লিখবে তার অপেক্ষা করি আর অপেক্ষা করি তাদের চরম পাশবিকতার ঘটনাগুলো একদিন আলোর মুখ দেখবে।
আওয়ামী লীগ কি সেনাবাহিনীকে খুশী করার জন্য এই ষ্ট্যান্ড নিয়েছে নাকি আরও কোন দায় আছে তার?
হাসান ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার লেখার ফোকাস সবসময়ই একটু ভিন্ন!
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে 'আদিবাসী' শব্দটিতে ব্যাপক ঝামেলা আছে। আবার 'উপজাতি' শব্দটি আপত্তিকর ও অবমাননাকর।
অনিন্দ্য যেভাবে বললো, যার যার জাতিনামে ডাকা যেতে পারে। গারো জাতিগোষ্ঠি কিংবা চাকমা নৃগোষ্ঠি এ জাতীয় কিছু ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এগজ্যাক্টলি। উত্তম প্রস্তাব। অথবা বাংলাদেশের সবাইকে বাংলাদেশের সর্বত্র (অর্থাৎ পুরো বাংলাদেশ ভুখণ্ডের প্রেক্ষিতে) একসাথে 'আদিবাসী' হিসেবে ঘোষনা দেয়া হোক।
রাষ্ট্র যখন তার নাগরিকদের মধ্যে আর্থ সামাজিকভাবে নানা ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে তখন বঞ্চিতগোষ্ঠী তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই একটা পরিচয় গড়ে তুলে ন্যাসনাল বাদ দিয়ে কমিউনাল চিন্তা ভাবনা করে
পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির কথাই ভাবুন না এই আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানেরা কিন্তু বলতে গেলে সবচেয়ে অগ্রগামি ছিল ডাইরেক্ত একশন ডে এবং নোয়াখালির রায়টে বাংলা ভাষী মুসলমান হিন্দু একে অপরের কল্লা নামিয়েছে বাঙ্গালী মুসলমানের কাছে সেই সময় এমনকি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এর কাছে মনে হয়েছে ভারতিয় আইডেনটি অপেক্ষা মুসলিম জাতীয়তাবাদি তথা পাকিস্থানি আইডেনটিই তাদের আর্থ সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে বেশী করে তারা সেটাই সামনে নিয়ে এসেছে পরে পশ্চিম পাকিস্থানিদের বাঙালি মুসলমানদের নানা ভাবে বঞ্চিত করলে এই একই বাঙালি মুসলমানই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করে
আমি নিশ্চিত অখন্ড পাকিস্তান যদি একটা কল্যাণমুখি রাষ্ট্র হতো নাগরিকদের মধ্যে আর্থ সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে শেখ মুজিব আওয়ামিলীগ , ছয় দফা এমনকি ভাষা নিয়ে ৫২ মুভমেন্ট কিছুঁই হতো না মুসলমান জাতীয়তাবাদ বা পাকিস্থান আইডেনটি ধীরে ধীরে সকলে আন্তিকরন নিতো ।
এখন নিজের কথাই আসি চাকুরি পড়াশুনা নানা কারনেই আমার পরিবার ঢাকায় বসবাস করে আমার দাদা দাদি / নানা নানি/ বড় চাচা এখনও খাগড়াছড়িতে বাস করে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে সেখানে জাতি পরিচয়ে আমি চাকমা নই বাকি ১০ ছোট জাতি গোষ্ঠী/ উপজাতি/ আদিবাসি ( আমি নিজেকে পাহাড়ি বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করি ) একজন।
নিজের পরিবারের কথা নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম একটা বিশেষ কারনে আমার পরিবার দাদা, চাচা, বাবা তিনজনেই পাহাড়ী হওয়া পরেও আওয়ামিলীগের সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন (চাচা এখনও আছেন বাবা চাকুরি কারনে ছাত্র অবস্থার পরে সমর্থক হিসাবে আছেন সরাসরি নেই) তারা বিশ্বাস করতেন ক্ষুদ্র আঞ্চলিকতার রাজনীতি অপেক্ষা জাতীয় রাজনীতির সাথে সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে পাহাড়ী আদিবাসীরা নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারবে আমার বাবা ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাধে শেখ কামালের সান্নিধ্য পেয়েছেন , চাচাও আওয়ামিলিগের ৬৯ সাল হতে ৭০ নির্বাচন ক্যাম্পপেইনে দলের যেকোন কর্মসূচি সক্রিয় ভুমিকা রাখার কারনে সেই সময়ের লীগের বড় বড় নেতাদের সংস্পর্শে ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামে বাবা চাচা সরাসরি অংশ নেন দাদা মুজিব নগর সরকারে কাজ করেন, আমার চাচা এমনই ডাইহার্ড মুজিবের ভক্ত ছিলেন যে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা পরে তিনি এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬ বছরের জেল শাস্তি পান ।
জাতিগত ভাবে বাঙ্গালী না হয়েও আমার পরিবার বলা যায় প্রত্যেকটা বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছে কারন তারা বিশ্বাস করেছে আওয়ামীলীগের অসাম্প্রদায়িকতা সমতা ভিত্তিক সমাজ নির্মানের প্রতিশ্রুতিকে
কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে ?
২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পরে আমার বাবা তার সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে নানা ভাবে হয়রানির স্বীকার হন
২০০৮ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতা এসেও তার ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি তিনি যে সংস্থায় চাকুরি করতেন সেখানের উচ্চ পদটা সিরিয়ালি নিয়ম কানুন অনুযায়ী তারই পাওয়ার কথা শিরিয়ালে ণিচে থাকা একজনকে তা দেওয়া হয় তাকে টপকে, বাবা একটু ভিতরের খবর নিয়ে নারাচাড়া করে জানতে পারেন একজন পাহাড়ীকে এতো বড় পদে বসালে নাকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে ! এবং এই ধরনের পদে পাহাড়ি কাউকে বসানোর অতীতের নাকি কোন নজীর নেই ! এইটা পলিসি মেকারদের অভিমত !
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের উপ্রর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালিয়েছিল ওদুদের ভুইইয়ার এবং সেনাবাহিনি মদদে পাহাড়িদের ভুমি দখল করে বাঙ্গালীদের বসানোর জন্য যে প্রক্সিয়া চলছিল তা বিন্দুমাত্র বন্ধ হয়নি এখনও তা আছে পাহাড়িরা ২০০৮ সালের ইলেকসনে জেএসএস উপিডিএফ বাদ দিয়ে আওয়ামিলিগকে তিন পাবত্য আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল এই আশায় যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে অন্তত আর্মি মদদে দুইদিন পর পর সেখানে যে রায়ট হয় তা বন্ধ করবে এই সাধারণত কাজটাও লীগ করতে চরমভাবে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে ! ২০০৮ সালে ইলেকসনে সময় আমি নিজেই খাগড়াছড়িতে গিয়েছি পাড়ার চায়ের দোকানে হতো আরম্ভ শুরে করে সব জায়গায় শেখ হাসিনার পোষ্টার সবার আশা তিনি সমতল ভুমির বাসিন্দাদের মতো এইখানেও দিনবদল করবেন ।
২০১১ সালে এসে সেই আশা ভরসার বিন্দুমাত্র আর নেই পাহাড়িদের সবাই এখন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই দেখছে পরের ইলেকসনে পাহাড়ী ভোট জেএসএস এবং ইউপিডিএফের মতো আঞ্চলিক দলগুলির দিকেই যাবে
জাতীয় রাজনীতি দেশের আদিবাসিদের আর্থ সামাজিক চাহিদা রুপে পূরণে ফেল করেছে বলা যায় ।
রাষ্ট্র যখন তার নাগরিকদের মধ্যে আর্থ সামাজিকভাবে নানা ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে তখন বঞ্চিতগোষ্ঠী তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই একটা পরিচয় গড়ে তুলে ন্যাসনাল বাদ দিয়ে কমিউনাল চিন্তা ভাবনা করে
পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির কথাই ভাবুন না এই আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানেরা কিন্তু বলতে গেলে সবচেয়ে অগ্রগামি ছিল ডাইরেক্ত একশন ডে এবং নোয়াখালির রায়টে বাংলা ভাষী মুসলমান হিন্দু একে অপরের কল্লা নামিয়েছে বাঙ্গালী মুসলমানের কাছে সেই সময় এমনকি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এর কাছে মনে হয়েছে ভারতিয় আইডেনটি অপেক্ষা মুসলিম জাতীয়তাবাদি তথা পাকিস্থানি আইডেনটিই তাদের আর্থ সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে বেশী করে তারা সেটাই সামনে নিয়ে এসেছে পরে পশ্চিম পাকিস্থানিদের বাঙালি মুসলমানদের নানা ভাবে বঞ্চিত করলে এই একই বাঙালি মুসলমানই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করে
আমি নিশ্চিত অখন্ড পাকিস্তান যদি একটা কল্যাণমুখি রাষ্ট্র হতো নাগরিকদের মধ্যে আর্থ সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে শেখ মুজিব আওয়ামিলীগ , ছয় দফা এমনকি ভাষা নিয়ে ৫২ মুভমেন্ট কিছুঁই হতো না মুসলমান জাতীয়তাবাদ বা পাকিস্থান আইডেনটি ধীরে ধীরে সকলে আন্তিকরন নিতো ।
এখন নিজের কথাই আসি চাকুরি পড়াশুনা নানা কারনেই আমার পরিবার ঢাকায় বসবাস করে আমার দাদা দাদি / নানা নানি/ বড় চাচা এখনও খাগড়াছড়িতে বাস করে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে সেখানে জাতি পরিচয়ে আমি চাকমা নই বাকি ১০ ছোট জাতি গোষ্ঠী/ উপজাতি/ আদিবাসি ( আমি নিজেকে পাহাড়ি বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করি ) একজন।
নিজের পরিবারের কথা নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম একটা বিশেষ কারনে আমার পরিবার দাদা, চাচা, বাবা তিনজনেই পাহাড়ী হওয়া পরেও আওয়ামিলীগের সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন (চাচা এখনও আছেন বাবা চাকুরি কারনে ছাত্র অবস্থার পরে সমর্থক হিসাবে আছেন সরাসরি নেই) তারা বিশ্বাস করতেন ক্ষুদ্র আঞ্চলিকতার রাজনীতি অপেক্ষা জাতীয় রাজনীতির সাথে সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে পাহাড়ী আদিবাসীরা নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারবে আমার বাবা ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাধে শেখ কামালের সান্নিধ্য পেয়েছেন , চাচাও আওয়ামিলিগের ৬৯ সাল হতে ৭০ নির্বাচন ক্যাম্পপেইনে দলের যেকোন কর্মসূচি সক্রিয় ভুমিকা রাখার কারনে সেই সময়ের লীগের বড় বড় নেতাদের সংস্পর্শে ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামে বাবা চাচা সরাসরি অংশ নেন দাদা মুজিব নগর সরকারে কাজ করেন, আমার চাচা এমনই ডাইহার্ড মুজিবের ভক্ত ছিলেন যে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা পরে তিনি এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬ বছরের জেল শাস্তি পান ।
জাতিগত ভাবে বাঙ্গালী না হয়েও আমার পরিবার বলা যায় প্রত্যেকটা বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছে কারন তারা বিশ্বাস করেছে আওয়ামীলীগের অসাম্প্রদায়িকতা সমতা ভিত্তিক সমাজ নির্মানের প্রতিশ্রুতিকে
কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে ?
২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পরে আমার বাবা তার সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে নানা ভাবে হয়রানির স্বীকার হন
২০০৮ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতা এসেও তার ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি তিনি যে সংস্থায় চাকুরি করতেন সেখানের উচ্চ পদটা সিরিয়ালি নিয়ম কানুন অনুযায়ী তারই পাওয়ার কথা শিরিয়ালে ণিচে থাকা একজনকে তা দেওয়া হয় তাকে টপকে, বাবা একটু ভিতরের খবর নিয়ে নারাচাড়া করে জানতে পারেন একজন পাহাড়ীকে এতো বড় পদে বসালে নাকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে ! এবং এই ধরনের পদে পাহাড়ি কাউকে বসানোর অতীতের নাকি কোন নজীর নেই ! এইটা পলিসি মেকারদের অভিমত !
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের উপ্রর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালিয়েছিল ওদুদের ভুইইয়ার এবং সেনাবাহিনি মদদে পাহাড়িদের ভুমি দখল করে বাঙ্গালীদের বসানোর জন্য যে প্রক্সিয়া চলছিল তা বিন্দুমাত্র বন্ধ হয়নি এখনও তা আছে পাহাড়িরা ২০০৮ সালের ইলেকসনে জেএসএস উপিডিএফ বাদ দিয়ে আওয়ামিলিগকে তিন পাবত্য আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল এই আশায় যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে অন্তত আর্মি মদদে দুইদিন পর পর সেখানে যে রায়ট হয় তা বন্ধ করবে এই সাধারণত কাজটাও লীগ করতে চরমভাবে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে ! ২০০৮ সালে ইলেকসনে সময় আমি নিজেই খাগড়াছড়িতে গিয়েছি পাড়ার চায়ের দোকানে হতো আরম্ভ শুরে করে সব জায়গায় শেখ হাসিনার পোষ্টার সবার আশা তিনি সমতল ভুমির বাসিন্দাদের মতো এইখানেও দিনবদল করবেন ।
২০১১ সালে এসে সেই আশা ভরসার বিন্দুমাত্র আর নেই পাহাড়িদের সবাই এখন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই দেখছে পরের ইলেকসনে পাহাড়ী ভোট জেএসএস এবং ইউপিডিএফের মতো আঞ্চলিক দলগুলির দিকেই যাবে
জাতীয় রাজনীতি দেশের আদিবাসিদের আর্থ সামাজিক চাহিদা রুপে পূরণে ফেল করেছে বলা যায় ।
আপনার মন্তব্য এই পোষ্টকে ঋদ্ধ করেছে। আমরা বাইরে থেকে যতো যাই বলি না কেনো প্রকৃত বাস্তবতা আপনারাই জানেন। এবার আমার কিছু জিজ্ঞাসা আছে, জিজ্ঞাসাগুলো আসলে নিজের কিছু অস্পষ্টতা দূর করার জন্য। আশা করছি আপনি এই পোষ্ট পর্যবেক্ষনে রেখেছেনঃ-
১। আপনার পরিবারের মতো আরো কিছু পাহাড়ের পরিবারকে দেখেছি যারা শেখ মুজিব ও আওয়ামী রাজনীতির প্রতি সংবেদনশীল অথচ স্বাধীন দেশে আপনাদের জাতি স্বত্বাকে প্রথম অস্বীকার করেছে স্বয়ং শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ। তবু এই সংবেদনশীলতার কারন কী? আওয়ামী লীগ অন্ততঃ জিয়া-এরশাদের মতো গনহত্যা চালায়নি এই কারনে? নাকি অন্য কিছু?
২। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা যে জুম্ম জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেছিলেন- বর্তমান পাহাড়ী জনগোষ্ঠী কি সেই সংগ্রামকে বাদ দিয়ে ফেলেছে? এখন কেউ আর জুম্ম জাতির কথা বলছেনা? নিজেদের জাতি পরিচয় বিসর্জন দিয়ে আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়াকেই বিশাল অর্জন মনে করছে তারা?
৩। সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে কি বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আপনার ধারনা?
৪। পাহাড়ের মানুষের 'আদিবাসী' দাবীটি অর্ধসত্য-পুর্ন সত্য নয়ঃ আমার পোষ্টে যে যুক্তির অবতারনা করেছি এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
অগ্রীম ধন্যবাদ। আশা করছি আপনার ফিরতি মন্তব্য পাবো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভিন্ন জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ এগুলা এখন যেভাবে আলোচনার বিষয় হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে বেশীরভাগ দেশের সরকারই এই বিষয়গুলা নিয়ে অজ্ঞ ছিল বলা যায় , তাছাড়া ৭১ এর সদ্য উপনেবিশিক শাসন মুক্ত স্বাধীন দেশে বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে একটু অধিক মাতামাতি হবে এইটাই স্বাভাবিক ( শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজীকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়া এর একটা অন্যতম উদাহরণ) তবে আমি মনে করি দেশের প্রথম সংবিঁধানের যে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল (ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র) যদি অব্যাহত রাখা যেতো তবে বাংলাদেশের বাঙালি নয় এমন ভিন্ন জাতিস্বত্বার মানুষদের অধিকারের কথাও নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সংবিধানে পরবর্তীতে অন্তরভুক্ত হতো ১৫ আগস্ট সামরিক টেকওভার যে পথ বলতে বন্ধ করে দেয় একেবারেই ।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সকলেই স্বীকার করছেন তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা কখনই কাজ করেনি, বিরাট মাপের নেতা হওয়ার পরেও পাহাড় হতে কেউ কোন সমস্যা বা সুপারিশ নিয়ে গেলে তার কাছে গেলে তিনি তা সমাধান করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছেন হয়তো পাহাড়ের সমস্যা পুরাপুরি বুঝার ক্ষেত্রে তার কিছু অক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু তার সেই ঘাটতি দূর করবার চেষ্টা করছেন
পাহাড়ের সমস্যা বুঝতে খালি আর্মি গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের বাইরেরও গোপনে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের পাঠিয়েছেন বাস্তব অবস্থা বুঝতে ( সাবেক সচিব এস এস চাকমার বইয়ে বিষয়গুলি বিস্তারিত আছে)
বঙ্গবন্ধু পাহাড়ের সমস্যার রাজনীতিক সমাধান চেয়েছেন, এই ক্ষেত্রেই তার সাথে বাকিদের পার্থক্য । তার সকল ডিসিসন হয়তো ঠিক ছিলো না কিন্তু ভুল ডিশিসন শুধুরে নিতে তার চেষ্টার কমতি ছিল না ।
বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ ভারতের কংগ্রেসের মতোই একটা জাতীয় সংগঠন কংগ্রেস যেমন আসাম হতে আরম্ভ করে কাশ্মীরের সকলকে নিয়ে এক জোট করে দেশ শাসনের ক্ষমতা রাখে ( যদিও আমার সন্ধিহান আওয়ামিলীগ নেতারা তা জানে কিনা অথবা আগ্রহী কিনা)
বিএনপি ও জামাতে পক্ষে তাদের আদর্শিক কারনেই এ ধরনের রোল পালন করা সম্ভব না প্রতি ইলেকশনেই তাদের লক্ষ্য থাকে পাহাড়ী বাঙালি দাঙ্গা লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করা , আর জেএসএস ইউপিডিএফ যদিও বলে জুমা জাতির কথা বললেও দেখা যায় চাকমা ছাড়া বাকি জাতিরগুলি ত্রিপুরা মারমা , মুরুং তাদেরকে অবিশ্বাস করে নানা কারনেই আমি বিশ্বাস করি পাহাড়ী বাঙালি পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান যা করতে বাস্তবে রুপ দিতে হলে এমন একটা রাজনীতিক শক্তির দরকার যে সকল কমিউনিটির আস্থা সমানভাবে অর্জন করতে পারে আওয়ামিলীগ এই রকম একটা দল হতে পারত ত তারা এই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে
ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যৎতে পাহাড়ি বাঙালি পোলারাইজসনে বিএনপি উইপিডিএফ জেএসএস আর্মি সকলেই লাভবান হবে রাজনীতিক ভাবে তবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে মারাত্মক ভাবে ।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে আমি একজন পাহাড়ের সংগ্রামি নেতা হিসেবে সম্মান জানালেও তার জুম্ম জাতিয়তাবাদ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কখনই আকর্ষণ করেননি জুম্ম জাতিয়তাবাদের আড়ালে বাস্তবে আমি দেখি চাকমা জাতীয়তাবাদ কাজেই এই নিয়ে বেশী কথা বলতে চাই না মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান হিসাবে নিজের বাংলাদেশি পরিচয়টাই আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় এছাড়া বাবার সরকারি চাকুরী সুবাদে সারা বাংলাদেশ ঘুরার সুযোগ হয়েছে এ কারণেই আমার নিজের জন্মভূমি খাগড়াছড়িকে যেমন আপন মনে হয় তেমনি বরিশালের সবুজ শ্যামল প্রান্তরও আমাকে মুগ্ধ করে ।
গারো, মুনিপুরি , ত্রিপুরা , মারমা, চাকমা, সাওতাল , রাখাইন সবাই একত্রে মিলেও ১৪ কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ১ % হবে না বাংলাদেশের রাষ্ট্র সমাজ দুর্বলকে পিসে ফেলতে তাদের অধিকার কেড়ে নিতে সদা তৎপর কাজেই আলাদা আলাদা পরিচয় নিয়ে আন্দোলন করা মানে বিফল হওয়া একটা কমন আইডেনটি বা প্ল্যাটফরমে সকলে কাজ করবার প্রয়োজন অনুভব করছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আদিবাসী পরিচয়টাই পছন্দ করছে
সংবিধানে এই পরিচয় পেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে বলে নতুন প্রজন্ম মনে করে
১। বিশ্বের উন্নত শিল্পউন্নত দেশগুলি আদিবাসীদের কল্যাণথে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করছে আদিবাসী পরিচয় মিললে এই অর্থের যোগান নিশ্চিত করা যাবে যা দিয়ে প্রত্যেকটা কমিউনিটি শিক্ষা স্বাস্থ্য নানা সামাজিক ক্ষেত্রে স্ব উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান পাবে যে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সব সময়েই উদাসিন
জাতীয় নির্বাচন ইস্যু অথবা ক্রসফায়ার ইস্যু হোক বাংলাদেশের সরকার নিজ দেশের লোকদের অপেক্ষা পশ্চিমাদের ওয়াজ নসিহতকে বেশী গুরুপ্ত দেয় আদিবাসী পরিচয় মিললে নিজেদের অভাব অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব দরবারে দেন দরবার করতে সুবিধা হবে
উদাহরন সাম্প্রতিক জাতিসঙ্ঘ এর প্রতিবেদনে পাহাড়ে যে সকল আর্মি অফিসার জুলুম নির্যাতনে অতি আগ্রহী ছিল তারা কিছুটা হলেও দমবে কারণ শান্তি মিশনে সিলেক্ট হওয়ার জন্য হিউম্যান রাইটসের রক্ষায় অতীত রেকর্ড চেক করবার প্রস্তাব করা হয়েছে
পাহাড়ে কিংবা সমতলে বাঙালিদের দ্বারা ভূমি আগ্রাসনের স্বীকার মারমা চাকমা গারো সকলেরই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আদিবাসি স্বীকৃতি হলে ভূমি সংরক্ষনের অধিকার কিছুটা লেভারেজ পাওয়া যাবে ।
এই কারনে আদিবাসী হিসবে স্বীকৃতির লাভ করার চেষ্টা আমি দোষের কিছু দেখি না ।
আপনার ৪ নম্বর পয়েন্ট এর উত্তর লাভ করতে আমার মনে হয় আপনিন ব্লগার বিপ্লব রহমান এবং দেবাশিষ রয়ের লেখা পড়ে দেখতে পারেন তারা সুন্দর করে পুরা ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছেন
ধন্যবাদ। আপনার মতো আমার ও ধারনা সামরিক শাসন না আসলে অন্ততঃ রক্তপাতের সম্ভাবনা কম থাকতো, রাজনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হওয়ার সুযোগ থাকতো।
বিপ্লব রহমান সহব্লগার তার লেখা পড়ি। দীপুমনির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেবাশীষ রায়ের লেখা ও পড়েছি-প্রায় সবকিছুর সাথেই সহমত কিন্তু বাঙ্গালী ভিন্ন অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলো কেনো 'আদিবাসী' এর কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাইনি কোথাও।
জাতিসংঘের দেয়া সংজ্ঞা তো আছেই, আপনার কী মনে হয়- এই সংজ্ঞা মতে আপনার জাতিগোষ্ঠী 'আদিবাসী'?
বাস্তবতার নিরিখে কৌশল, চাহিদা, দাবী বদলাতে পারেই কিন্তু এমন কোন দাবী উত্থাপনে কি সফল হওয়া যাবে যা অন্যের অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভিন্ন জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ এগুলা এখন যেভাবে আলোচনার বিষয় হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে বেশীরভাগ দেশের সরকারই এই বিষয়গুলা নিয়ে অজ্ঞ ছিল বলা যায় , তাছাড়া ৭১ এর সদ্য উপনেবিশিক শাসন মুক্ত স্বাধীন দেশে বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে একটু অধিক মাতামাতি হবে এইটাই স্বাভাবিক ( শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজীকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়া এর একটা অন্যতম উদাহরণ) তবে আমি মনে করি দেশের প্রথম সংবিঁধানের যে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল (ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র) যদি অব্যাহত রাখা যেতো তবে বাংলাদেশের বাঙালি নয় এমন ভিন্ন জাতিস্বত্বার মানুষদের অধিকারের কথাও নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সংবিধানে পরবর্তীতে অন্তরভুক্ত হতো ১৫ আগস্ট সামরিক টেকওভার যে পথ বলতে বন্ধ করে দেয় একেবারেই ।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সকলেই স্বীকার করছেন তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা কখনই কাজ করেনি, বিরাট মাপের নেতা হওয়ার পরেও পাহাড় হতে কেউ কোন সমস্যা বা সুপারিশ নিয়ে গেলে তার কাছে গেলে তিনি তা সমাধান করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছেন হয়তো পাহাড়ের সমস্যা পুরাপুরি বুঝার ক্ষেত্রে তার কিছু অক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু তার সেই ঘাটতি দূর করবার চেষ্টা করছেন
পাহাড়ের সমস্যা বুঝতে খালি আর্মি গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের বাইরেরও গোপনে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের পাঠিয়েছেন বাস্তব অবস্থা বুঝতে ( সাবেক সচিব এস এস চাকমার বইয়ে বিষয়গুলি বিস্তারিত আছে)
বঙ্গবন্ধু পাহাড়ের সমস্যার রাজনীতিক সমাধান চেয়েছেন, এই ক্ষেত্রেই তার সাথে বাকিদের পার্থক্য । তার সকল ডিসিসন হয়তো ঠিক ছিলো না কিন্তু ভুল ডিশিসন শুধুরে নিতে তার চেষ্টার কমতি ছিল না ।
বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ ভারতের কংগ্রেসের মতোই একটা জাতীয় সংগঠন কংগ্রেস যেমন আসাম হতে আরম্ভ করে কাশ্মীরের সকলকে নিয়ে এক জোট করে দেশ শাসনের ক্ষমতা রাখে ( যদিও আমার সন্ধিহান আওয়ামিলীগ নেতারা তা জানে কিনা অথবা আগ্রহী কিনা)
বিএনপি ও জামাতে পক্ষে তাদের আদর্শিক কারনেই এ ধরনের রোল পালন করা সম্ভব না প্রতি ইলেকশনেই তাদের লক্ষ্য থাকে পাহাড়ী বাঙালি দাঙ্গা লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করা , আর জেএসএস ইউপিডিএফ যদিও বলে জুমা জাতির কথা বললেও দেখা যায় চাকমা ছাড়া বাকি জাতিরগুলি ত্রিপুরা মারমা , মুরুং তাদেরকে অবিশ্বাস করে নানা কারনেই আমি বিশ্বাস করি পাহাড়ী বাঙালি পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান যা করতে বাস্তবে রুপ দিতে হলে এমন একটা রাজনীতিক শক্তির দরকার যে সকল কমিউনিটির আস্থা সমানভাবে অর্জন করতে পারে আওয়ামিলীগ এই রকম একটা দল হতে পারত তবে কোন এক রহস্যজনক কারনে তারা এই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে
ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যৎতে পাহাড়ি বাঙালি পোলারাইজসনে বিএনপি উইপিডিএফ জেএসএস আর্মি সকলেই লাভবান হবে রাজনীতিক ভাবে তবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে মারাত্মক ভাবে ।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে আমি একজন পাহাড়ের সংগ্রামি নেতা হিসেবে সম্মান জানালেও তার জুম্ম জাতিয়তাবাদ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কখনই আকর্ষণ করেননি জুম্ম জাতিয়তাবাদের আড়ালে বাস্তবে আমি দেখি চাকমা জাতীয়তাবাদ কাজেই এই নিয়ে বেশী কথা বলতে চাই না মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান হিসাবে নিজের বাংলাদেশি পরিচয়টাই আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় এছাড়া বাবার সরকারি চাকুরী সুবাদে সারা বাংলাদেশ ঘুরার সুযোগ হয়েছে এ কারণেই আমার নিজের জন্মভূমি খাগড়াছড়িকে যেমন আপন মনে হয় তেমনি বরিশালের সবুজ শ্যামল প্রান্তরও আমাকে মুগ্ধ করে ।
গারো, মুনিপুরি , ত্রিপুরা , মারমা, চাকমা, সাওতাল , রাখাইন সবাই একত্রে মিলেও ১৪ কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ১ % হবে না বাংলাদেশের রাষ্ট্র সমাজ দুর্বলকে পিসে ফেলতে তাদের অধিকার কেড়ে নিতে সদা তৎপর কাজেই আলাদা আলাদা পরিচয় নিয়ে আন্দোলন করা মানে বিফল হওয়া একটা কমন আইডেনটি বা প্ল্যাটফরমে সকলে কাজ করবার প্রয়োজন অনুভব করছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আদিবাসী পরিচয়টাই পছন্দ করছে
সংবিধানে এই পরিচয় পেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে বলে নতুন প্রজন্ম মনে করে
১। বিশ্বের উন্নত শিল্পউন্নত দেশগুলি আদিবাসীদের কল্যাণথে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করছে আদিবাসী পরিচয় মিললে এই অর্থের যোগান নিশ্চিত করা যাবে যা দিয়ে প্রত্যেকটা কমিউনিটি শিক্ষা স্বাস্থ্য নানা সামাজিক ক্ষেত্রে স্ব উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান পাবে যে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সব সময়েই উদাসিন
জাতীয় নির্বাচন ইস্যু অথবা ক্রসফায়ার ইস্যু হোক বাংলাদেশের সরকার নিজ দেশের লোকদের অপেক্ষা পশ্চিমাদের ওয়াজ নসিহতকে বেশী গুরুপ্ত দেয় আদিবাসী পরিচয় মিললে নিজেদের অভাব অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব দরবারে দেন দরবার করতে সুবিধা হবে
উদাহরন সাম্প্রতিক জাতিসঙ্ঘ এর প্রতিবেদনে পাহাড়ে যে সকল আর্মি অফিসার জুলুম নির্যাতনে অতি আগ্রহী ছিল তারা কিছুটা হলেও দমবে কারণ শান্তি মিশনে সিলেক্ট হওয়ার জন্য হিউম্যান রাইটসের রক্ষায় অতীত রেকর্ড চেক করবার প্রস্তাব করা হয়েছে
পাহাড়ে কিংবা সমতলে বাঙালিদের দ্বারা ভূমি আগ্রাসনের স্বীকার মারমা চাকমা গারো সকলেরই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আদিবাসি স্বীকৃতি হলে ভূমি সংরক্ষনের অধিকার কিছুটা লেভারেজ পাওয়া যাবে ।
এই কারনে আদিবাসী হিসবে স্বীকৃতির লাভ করার চেষ্টা আমি দোষের কিছু দেখি না ।
ভাই প্রান্তিক, আপনার মন্তব্য দুইবার এলেও আপনার কথা বলার জরুরত আছে, আপনার পক্ষে আরো পষ্টভাবে অনেককিছু তুলে ধরা সম্ভব বলে আমি মনে করি। পাহাড়ী মানুষের কথা তাদের মুখে উঠে আসাটা খুব দরকার। আপনার মন্তব্যটা মোটা দাগে আমাদের একটা ধারনা পেতে দেয় কিন্তু সেইসাথে আরো বেশী আলোচনার জন্য একটা তাড়নাও যোগায়। লিখবেন কি?
এই লেখায় অনেক ডাইমেনশন বের হয়ে এসেছে আবার প্রান্তিকের কমেন্টে বাস্তবতাও বোঝা যাচ্ছে ।
আ.লীগ ও বিএনপি'র মধ্যে নৈতিক গ্রাউন্ড এর ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে, ব্যাপারটা আশংকার । আমাদের নতুন করে অনেক কিছুই ভাবা দরকার আছে । আরো আশংকার কথা হলো- আ.লীগ বোধহয় ধরেই নিছে - তারা যত যাই করুক , প্রগতিশীলদের ভোট তারা ঠিকই পাবে।
আওয়ামী লীগের ধরে নেয়া কি ভুল?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
লেখাটির সঙ্গে সহমত। শুধু নিজের কয়েকটি অভিজ্ঞতা জুড়তে চাই। বাংলাদেশে আদিবাসী নিয়ে সবচেয়ে মাতামাতি করে কিছু এনজিও। তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থটা বুঝতে অসুবিধা হয়না কিন্তু তথাকথিত আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এদের সংখ্যাগুরু অংশের এতে কোন মাথা ব্যাথাই নেই। নিতান্ত দরিদ্র এই মানুষগুলো বাংলাদেশের আর দশটা দরিদ্র মানুষের মতই দৈনিক দিন যাপনের কঠিন সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত। আমার নিজের গ্রামের পাশেই ছিল পাহান ও মাহতো-দের বসবাস। ২৫ বছর পর কাজে সূত্রে সেখানে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। গ্রামে ডোকার মুখে এক এনজিও-র সাইনবোর্ড চোখে পড়লো - লেখা আছে "আদিবাসী" স্কুল। আমি আশা করেছিলাম লেখা থাকবে 'সাওঁতাল' স্কুল। এরপর যেখানেই গেছি সংগী স্থানীয় কর্মকর্তারা মহা উতসাহে দেখিয়ে দিয়েছেন, ঐ যে এটা আদিবাসী গ্রাম, ঐ যে ওটা আদিবাসী গ্রাম। আদিবাসী নামের আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলো- ওরাঁও, কোঁচ, ভিল, মান্ডি, হাজং, ইত্যাদি জাতিগুলো। এরা বাংগালীর মত বড় জাতি নয় এটা ঠিক কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ ছোট জাতি তো বটেই; আসলে এরা তো অণুজাতি। আদিবাসী বলতে বলতে একদিন এদের জাতি নামগুলো হয়ত সবাই ভুলে যাবে। আমার ভয় হয় "আদিবাসী" নামে বাংলাদেশে একটা নতুন জাতিসত্ত্বা তৈরীর চেষ্টা হচ্ছে কিনা!
উপজাতি নামে আপত্তি থাকতেই পারে। তাহলে ভারতের মত জনজাতি বা তফসিলি জাতি অভিধা নিয়ে নিজেদের জাতি নাম বজায় রাখতে অসুবিধা কোথায়?
আলোচনায় লক্ষ্য রাখছি।
বর্তমান আওয়ামী সরকার আদিবাসীদের কথা বলার অধিকারটাও বন্ধ করতে চাচ্ছে। বেশ আগেই তাদের ব্লগ/সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানি।
একটি অংশের পাহাড়ি/আদিবাসীরা এখন আর আসলে আমাদের/বাঙালিদের একেবারেই বিশ্বাস করেন না। করার কথাও নয়। আমি খুব আতঙ্কের সঙ্গে অপেক্ষা করে আছি একসময় বাঙালীরা আদিবাসীদের কাছে পাকিস্তানির মতো ঘৃণিত একটি জাতি হিসেবে পরিচিত হবে। গুটিকয় কুলাঙ্গারের জন্য পুরো বাঙালি জাতির কলঙ্ক হবে, ভাবতেই মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আলোচনায় চোখ রাখছি। উপরে কারো কারো মন্তব্য কিছুটা অপমানজনক মনে হলো...জেনারেলাইজেশন ও আছে।
নিচের প্রশ্নগুলো সবার উদ্দেশ্যে...একটু ভেবে দেখবেন। আমি নিজে ব্যাপারটা ভাল বুঝি না, যা বুঝি তাই বলছি।
আমি নিজে তাদের আদিবাসী দাবীর পক্ষে। তখন মানবেন্দ্র যেটা চেয়েছিলেন এখন সেটা থেকে সরে আসার কারণ একটাই, "ভিক্ষা চাইনা মা কুত্তা সামলাও"। এখন সরে আসা যাবে না, এমনটা কেন মনে হচ্ছে?
এখানে কিছু জিনিস খেয়াল রাখা উচিত। তারা যে দাবী করছে সেটা তাদের অধিকার...সেটাকে দয়া করছেন এমনটা না ভাবলেই ভাল। তাদের যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন তারা আসলে কি চায়? আজ আমার এক আদিবাসী বন্ধুর ফেসবুকে স্ট্যাটাসঃ "১৪ কোটি লোক প্রস্রাব করে আমাদের ৫-৭ লাখ লোককে ভাসিয়ে মেরে ফেলতে চায়"। তারা মনে করছে এটলিস্ট আদিবাসী পরিচয়ে যদি টিকে থাকা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে কত মেয়ে ধর্ষিত হয়-কত বাড়ি পুড়ে যায়-কত আদিবাসী খুন হয় তার সত্যিকারের সংখ্যাটা জানেন? পেপারে তার হাজার ভাগের একভাগও আসে না!
আপনারা এখন বলছেন এসব এন,জি,ও গুলার চক্রান্ত!! তারা এদের মাথায় ঢুকিয়েছে এসব। কথাটা পুরোই ভুল...তাদের এতটা মূর্খ ভাবছেন কেন? তারা নিশ্চয়ই না বুঝে এমন করছে না? তাদের মাঝে অনেক অনেক উচ্চশিক্ষিত-বুদ্ধিমান-শান্তিপ্রিয় মানুষও আছে। আদিবাসী পরিচয়ে তাদের হেরিটেজ রক্ষার জন্য একটা সরকারী দায় থেকে যাবে, হয়ত সেটাই তারা চাইছে। তারাতো বাংলাদেশি পরিচয়টাকে অস্বীকার করছে না...কিন্তু তারা যে বাঙালি না, সেটাতো ঠিক।
এখন বলছেন, তাদের নিজ নিজ জাতিসত্তার পরিচয়ে পরিচিত হতে! উপজাতি শব্দটা বেশ অপমানজনক। অন্যদিকে আপনারা কে কতটুকু ফেস করেছেন জানিনা, ট্রাইবাল/চাকমা/মারমা/বোঁচা এগুলা আমাদের মাঝে গালি হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখেছি। চট্টগ্রাম কক্সবাজারে গেলে অনেকের মাঝে "মারমা খাবো", "চাকমা খাবো", "গোলাপ খাব" এমন এক্সপ্রেশনও দেখেছি। যে রাষ্ট্র তাদের দেয়া কোন কথা রাখেনি, যে রাষ্ট্র তাদের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা দেয় না, যে রাষ্ট্র একজন চাকমা-মারমা'র কথাও শুনতে নারাজ...তারা পরে সেই জাতিসত্তায় পরিচিত হওয়ার অধিকার দিবে এমনটা কেন তারা আশা করবে? এই রাষ্ট্র বহু ধর্ম-বহু বিশ্বাস ধারণ করতে জানে এমন কোন নিদর্শনতো সংবিধানে দেখা যায় না!
আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মকান্ড তাদেরকে হয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনেও যুক্ত হওয়ার রসদ যোগাবে। এখন এত যুক্তি-তর্ক-গ্রামার-বিশ্ব প্রেক্ষাপটের আলোচনা আসছে কেন? সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল...আর আদিবাসী পরিচয়ের পরও আমি চাকমা-আমি গারো পরিচয়ে সমস্যাটা কি? আমি অন্তত কোন বাধা দেখি না।
"বাংলাদেশ কোন আদিবাসী নেই"-এটা তাদের মনে কতটা কষ্টের জন্ম দিচ্ছে বোঝেন? কোন বাবা যদি বলে এই সন্তান আমার নয়, এটা অনেকটা সেরকম!
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটা মৌলবাদি দেশই...হয় ধর্মীয় না হয় জাতিগত.. অত রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না, কিন্তু এটা বুঝি, নানা রকম প্যাঁচ দেখিয়ে একসময় তাদের বাঙালি-ই বানানো হবে...তাদের অস্তিত্ব নির্মূল করা হবে...
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
সরে অনেকভাবেই আসা হয়েছে। একটা সময় স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের দাবী উঠেছিলো, সেটা থেকে সরে স্বায়ত্তশাসন, শান্তিচুক্তিতে সেটা ও স্পষ্টভাবে থাকেনি আর।
আপনার মনোভাবের সাথে আমার একটু ও দ্বিমত নেই। কিন্তু এটা বাঙ্গালীর একক দোষ এমন কিছু ভাবার যুক্তি ও নেই, বরং এটি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার হেজিমোনি। এই সিলেটে খাসিয়ারা লাঞ্চিত বাঙ্গালীদের হাতে, সীমান্ত পেরিয়ে মেঘালয়ে ঢুকতেই বাঙ্গালী লাঞ্ছিত খাসিয়াদের হাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই হেজিমোনিকে প্রশমিত করা কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রগুলো এটাকে প্রমোট করে বসে।
আমার মুল কথা হচ্ছে পাহাড় ও সমতলের নৃতাত্বিক সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত হোক, তাদের উপর যুগ যুগ ধরে চলে আসা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন বন্ধ হোক কিন্তু এরজন্য 'আদিবাসী' স্বীকৃতি প্রয়োজন কেনো? যা তাদের ন্যায্য- জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি সেটাকে বিসর্জন দিয়ে 'আদিবাসী' নিয়ে এতোটা উথলা হয়ে কী হবে যেখানে 'আদিবাসী' বিষয়টি তর্কাতীত নয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা সামনে আনলেই তো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
সহজ কথা- রাষ্ট্রের ভেতরের ১০টা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ৭টা যদি 'আদিবাসী' বলে স্বীকৃত হয় তাহলে বাকী ৩টা যৌক্তিকভাবেই 'অনাদিবাসী/ অভিবাসী'।
আপনি কি আপনার জাতিস্বত্বাকে অভিবাসী বলে মেনে নিতে রাজী? নাহ, আমি নই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ও হ্যাঁ, জঞ্জাট না ঝঞ্ঝাট ?
১। পাহাড়িদের বাঙালী হইয়া যাইতে শুধু '৭৩ এর নির্বাচনী জনসভায়’ই নয় সে সময়ে অসংখ্যবারই শেখ মুজিবুর রহমান এ কথা বলেছেন। ১৯৭২-এর ফেব্রুয়ারিতে এমএন লারমার নেতৃত্বে বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ৭ সদস্যের টিম শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাতকালেও এই কথা তিনি তাদের বলেছিলেন। ওয়েল-ডকুমেন্টেড বিষয় এটা; খুঁজার মত খুঁজলে রেফারেন্স না পাওয়ার কোন কারণ নেই। কেতাবপত্র ঘাঁটলেই পাবেন। সব কিছু অনলাইনে পাওয়া যাবে না। সব থেকে বড় রেফারেন্স ১৯৭২ সনের সংবিধান। এখানে দুএকটা রেফারেন্স দিলাম।
ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিভাগের প্রফেসর ড. আমীনা মোহসীন এর ইউ কে’র কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে করা পিএচডি থিসিস যা ‘The Politics of Nationalism: The Case of the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh’ (The University Press Ltd., 1997) নামে বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে এর ১১ এবং ৫৮ পৃষ্ঠায় দেখুন।
খ। Subir Bhaumik, এর ‘Insurgent Cross fire: Northeast India’ বইয়ের (Lancer Books, New Delhi. 2008.) ‘The Embattled Hill Tracts’ (পৃষ্ঠা ২৪৫-৩০৫) আর্টিকেল দেখুন। এছাড়াও
গ। ভূমিত্র চাকমা ও এসএ আহসান এর ‘Problems of National Integration in
Bangladesh: Chittagong Hill Tracts’ (Asian Survey Vol. 29. No.10 1989) দেখা যেতে পারে।
২। “জোর করে জাতি বানানো যায় না, রাষ্ট্র পরিচয় যত তাড়াতাড়ি বদলায় জাতি পরিচয় ততো তাড়াতাড়ি বদলানো সম্ভব নয়” মন্তব্যে কনফিউজড হলাম। খুব ভাল হত জাতির সংজ্ঞা বা ‘জাতি’ আর ‘রাষ্ট্রের পরিচয়’-এর পার্থক্য বুঝিয়ে বললে। আর ‘জাতি পরিচয়’ যদি বদলানো নাই যায় স্বাধীনতার পরে তাদের নাগরিক হিসেবে ‘বাঙালী’ করা হল কেন? এসব কথা রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিজেদের সুবিধে মত দেওয়া তত্ত্ব, অনেকে সেটা মুখস্ত করছে। মার্কিন দেশের লোকেরা জাতি হিসেবে কি? বা বৃটেন এর মানুষের পরিচয় কি ইংরেজ, ওয়েলশ, স্কট, এশিয়ান নাকি বৃটিশ? ভারতের মানুষ ভারতীয় নাকি গুজরাতি, পাঞ্জাবি, তামিল, বিহারি, বাঙালী? আধুনিক রাষ্ট্রই মানুষের ‘জাতীয়তা’ নির্ধারণ করে- এথনিসিটি নয়। এথনিসিটি অনেকটা ধর্মের মত যার যার নিজেদের ব্যাপার এবং রাষ্ট্র সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ‘আইডেন্টিটি’ বা ‘জাতি পরিচয়’ ধারন করে। যখন রাষ্ট্র তৈরি করা হয় তখন ‘জাতি’ বা ‘জাতীয় পরিচয়’ও forge করা হয় বা করতে হয়। সে কারণেই ‘জাতিরাষ্ট্র’ বা ‘নেশন-স্টেট’ বলা হয়। সুতরাং জিয়া ‘বৈধ শাসক’ না ‘অবৈধ শাসক’ বা তার দলীয় ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ বিন্দুমাত্র সমর্থন না করেও এটা সত্য যে তাদের বাংলাদেশের সমস্ত অধিবাসি ‘বাংলাদেশি’ সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ‘অবৈধ শাসক’ জিয়ার সংযুক্ত করা ‘বিসমিল্লাহ’ সংবিধানে রেখে দেওয়া যায় ‘বাস্তবসম্মত’ বলে (নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে হলেও) কিন্তু আবারও সেই ১৯৭২ এর মত পাহাড়িসম্প্রদায়গুলোকে জোর করে ‘বাঙালী’ করার লালসা সংবরন করতে পারি না। এতো জাত্যাভিমান কোথা থেকে আসে? তারা যদি মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ না হয়ে ফরমিডেবল সাইজ হত তাহলে কি সাহস আমাদের হত?
তারা ‘আদিবাসি’ না ‘অনআদিবাসি’ সেটা ভিন্ন বিতর্ক। কিন্তু তারা ভাষা-সংস্কৃতিতে বাঙালী নয়, ভিন্ন জাতিসত্বা এবং যে কোন বাংলাদেশি বাঙালীর মতই জন্মসূত্রে সমুধকারসম্পন্ন বাংলাদেশী নাগরিক। তাহলে তাদের ভীন্নতার স্বীকৃতি সংবিধানে থাকবে না কেন? ২৪ বছর পাকিস্তানিরা আমাদের যা করার চেষ্টা করেছে আজ আমরা বাঙালীরা স্বদেশী অবাঙালী পাহাড়িদের সেটাই করছি না কি?
৩। আমি ‘আদিবাসি’ অভিধাটার ব্যাপারে আমি মোটেই আগ্রহী নই। এটা শুধু ‘পলিটিকালি কারেকট টার্মই না, এটা যথেষ্ঠ প্যাট্রনাইজিংও বটে। এ নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সেটা ইস্যু নয়। এখন মনে হচ্ছে দেশে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের নিজস্ব অধিকার ও স্বীকৃতি ধামাচাপা দিতে ‘আদিবাসি’ না ‘অনআদিবাসি’ সেটাকে ইস্যু করা হচ্ছে! তারা নিজেরাও ‘আদিবাসি’ হতে চায়নি। যেটা চেয়েছে (জুম্ম) সেটা মেনে নিতে সমস্যা কি?
১। শেখ মুজিবের উদ্ধৃতি এবং প্রথম সংবিধানে অন্যায্যভাবে বাঙ্গালী জাতিয়াবাদা চাপিয়ে দেয়ার কথা আমার পোষ্টেই আছে।
২। সমস্যা হলো- অনেক কিছুই আমরা বুঝে নিচ্ছি পশ্চিমা ধারনায়। পশ্চিমে 'indigenous' আর 'Tribe' ভিন্নার্থ নয় কিন্তু এখানে অর্থ আলাদা। তেমনি পশ্চিমে যখন 'nation' বলা হয় এর অনুবাদ 'জাতি' হলে ও ধারনাগত দিক থেকে আলাদা। আমরা 'জাতি' বলতে নৃতাত্বিক পরিচয়কে বুঝি, রাষ্ট্রীয় পরিচয়কে বলি 'নাগরিকত্ব'
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই ভূ-খন্ডের মানুষের নাগরিক পরিচয় ছিলো পাকিস্তানী কিন্তু তখনো বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা আলাদা আলাদা জাতিস্বত্বা। রাষ্ট্র বদলের সাথে সাথে আমাদের নাগরিকত্ব 'বাংলাদেশী' হয়েছে কিন্তু নৃতাত্বিক জাতি হিসেবে এখনো বাঙ্গালী/চাকমা/মারমা/মনিপুরীই আছি। ভবিষ্যতে যদি রাষ্ট্র পরিচয় আবারো বদলায় তবু অদূর ভবিষ্যতে জাতিপরিচয় বলদানোর সম্ভাবনা কম।
আপনি ইউরোপ আমেরিকার উদাহরন টানলেন। ইংল্যান্ডের 'নাগরিক' রা বৃটিশ কিন্তু ইংলিশ, ওয়েলস, স্কটিশ, এমনকি বাঙ্গালীর নৃতাত্বিক পরিচয় ও সেখানে স্বীকৃত। নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা দুটো আলাদা পরিচয়, একটা আরেকটার সাথে দ্বান্ধিক নয়।
আমাদের এখানে শেখ মুজিব আমলে নাগরিকত্বে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সংখ্যাগুরুর নৃতাত্বিক জাতীয় পরিচয়, আর জিয়াউর রহমান নাগরিকত্বের পরিচয় দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু সকলের নৃতাত্বিক জাতীয় পরিচয়। দুটোই ভুল ,অন্যায্য, অন্যায়- পোষ্টে সেটা ও উল্লেখ আছে।
৩। বাঙ্গালী ভিন্ন অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর 'আদিবাসী' পরিচয় কেনো সঠিক সেটা জানতে চেয়েই এই পোষ্ট। আপনি দাবী করছেন ‘এটা শুধু পলিটিকালি কারেকট টার্মই না, এটা যথেষ্ঠ প্যাট্রনাইজিংও বটে।' কিন্তু কেনো 'কারেক্ট' সেটা না বলে আবার বলছেন '‘আদিবাসি’ অভিধাটার ব্যাপারে আমি মোটেই আগ্রহী নই।'
আমি আগ্রহী।
* জিয়াউর রহমান অবৈধ সামরিক শাসক। জিয়া, এরশাদের ক্ষেত্রে আমি অবৈধ শব্দটিকে কমার ভিতর রাখিনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বাংলাদেশে যাদের "আদিবাসী" নামে ডাকা হয় তাদের মোট সংখ্যা কত? উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী ২০১১ সালের হিসাব মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তারমধ্যে অর্ধেক (পাঁচ লক্ষ) "আদিবাসী"। বাকিরা বাঙালি কলোনিস্ট।
বহু বছর আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম [সিনেমায় স্মৃতিভ্রষ্ট নায়কের মাথায় বাড়ি মারার মত করে বাড়ি মারলেও মনে পড়ার কোন সম্ভাবনা নাই] জিয়াউর রহমান আর এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তিন পার্বত্য জেলায় হাজার বিশেক "আদিবাসী"কে হত্যা করেছে। আদৌ কেউ কি সঠিক/কাছাকাছি সংখ্যাটা জানেন?
ঐকিক নিয়মে দেখা যাচ্ছে প্রতি ১০০ জন আদিবাসীর মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে বীর সেনাবাহিনী।
গতকালের প্রথম আলোতে দেখলাম জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিলকে বাংলাদেশ সরকার বকে দিয়ে বলেছে: বাংলাদেশ তার বিশেষ কোনো অঞ্চলের অধিবাসীদের কোলে বসিয়ে পুটু মারবে নাকি চুমু খাবে, সেটা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার এখতিয়ার নয়। ঠিক একইভাবে তৎকালীন পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধকে একটি আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে চালিয়ে দিয়েছিল।
একটি জনগোষ্ঠীর ৪% মানুষকে মেরে ফেলা কি গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে?
১৯৭১ ও পূর্ববর্তী ঘটনাবলীর জন্য পাকিস্তানী জনগণ তথা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে যে পরিমাণ ঘৃণা করি একইভাবে একজন "আদিবাসী" বাঙালি/বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি একই ধরনের ঘৃণা পোষণ করলে তাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় কি?
অবশ্যই পড়ে।
অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার রাজনৈতিক বিলাসের কোর আইডিয়াই ছিলো সবকিছুকে ভেঙ্গে চুরে একটা জটিল মিক্সচার তৈরী করা। ৭৫ এর আগষ্ট পনেরো পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিলো একটা রাজনৈতিক সংকট। খেয়াল করুন '৭২ এর শুরু থেকে সেদিন পর্যন্ত পাহাড়ের অবিসংবাদিত নেতা এমএন লারমা নির্বাচিত সরকারের সাথে দেনদরবার, দাবী উত্থাপন, আলোচনা করছেন-এমনকি বাকশালে যোগ দিয়েছেন। সরকার সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ ও করেনি। কিন্তু মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরপরি তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে। জেনে গেছেন সামরিক শাসকরা আলোচনায় নয়, অস্ত্র প্রয়োগ করবে।
এবং তাই হয়েছে।
একই রকম ভাবে '৭১ এর মার্চ ২৫ এ গনহত্যা শুরু করেছিলো যে পাকিস্তান সরকার- সেটি ও ছিলো সামরিক।
সবচেয়ে খারাপ নির্বাচিত সরকারের সাথে সামরিক সরকারের এটাই পার্থক্য।
জিয়াউর রহমান শুধু পাহাড়েগনহত্যা চালায়নি, অভিবাসী কয়েকলক্ষ দরিদ্র মানুষকে ও ঠেলে দিয়েছিলো ট্রিগারের সামনে- ঐ সময়ে শান্তিবাহিনীর হাতে নিহত সেটেলারদের হিসেবটা ও মনে রাখতে হবে।
প্রসংগ উল্লেখ করি যদিও বিষয়টি তেমন আলোচিত হয়নি কখনো। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে তৎকালীন সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ও টাঙ্গাইল, বগুড়া, কুমিল্লা,নোয়াখালী থেকে ট্রাক ভরে ভরে মানুষ এসে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী এ্লাকাগুলোতে স্থানীয় মানুষেরা নয়, ঐ অভিবাসীরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ, জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করছে তারা।
ভবিষ্যতে সিলেটিদের ও বোধহয় নিজেদেরকে 'আদিবাসী' দাবী করতে হবে।
ঐ যে 'মেকিং এভরিথিং ডিফিকাল্ট'- কালো চশমার লোকটা এই কাজ ভালৈ করেছিলো।
এই ক্ষেত্র আমার একটু দ্বিমত আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ঘৃনা পেতেই পারে কিন্তু সমগ্র বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে এর ভার চাপানো অন্যায্য কারন বাঙালিদের ম্যান্ডেট নিয়ে সেনাবাহিনী পাহাড়ে গনহত্যা চালায়নি, যে অবৈধ সরকার এই গনহত্যা শুরু করেছিলো তারা তো বরং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বিরোধী বলেই পরিচিত।
পেছনের তথ্যগুলো ঘাঁটলে দেখা যাবে শুরু থেকেই বাঙ্গালীদের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারার মানুষেরা সামরিক আগ্রাসন ও গনহত্যার প্রতিবাদ করেছে, পাহাড়ের নেতৃবৃন্দ ও এই কথা অস্বীকার করতে পারবেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই কথার আপত্তি জানালাম।
বহু চিটাগনিয়ান অনেক আগে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকে; তাদেরকে কি সেটলার বা, কলোনিস্ট বলা যায়?
"বাংলাদেশী" শব্দটা কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্টী বা, কোন একটি বিশেষ জাতিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয় না। বাংলাদেশী বলতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে বসবাসরত মানুষদের বুঝায়, যার মধ্যে আছে বাঙালী-চাকমা-মারমা-সাঁওতাল-মণিপুরী-গারোসহ পাহাড়ে বা, সমতলে বসবাসরত আরো নানান জাতি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মানবেন্দ্র লারমার মতই নেতৃত্ব দরকার!!!!
সম্পুর্ণ সহমত। স্বর্গীয় পাহাড়ি ভূখণ্ডকে আর রক্তাক্ত দেখতে চাই না!!!!!
এই আলোচনাটাও কি নারী অধিকার বাস্তবায়ন ধরনের নয়? রাষ্ট্র এই ভূখণ্ডের সকল নাগরিকের সমান অধিকার বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ। এখানে লিঙ্গ, ধর্ম, বয়সের মত জাতির হিসাব করার কোন অবকাশ নেই। আগে যেমন ধর্ষকের চাইতে ধর্ষিতাই খবরের কেন্দ্রে থাকতো, একই নিয়মে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার আগে আমরা মনোযোগ দিয়েছি সেই সন্ত্রাসের শিকারকে কি নামে ডাকবো।
যেটা আমাদের মনোযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে সেটা হল জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে যাবার আগে পাহাড়ে বাংলাদেশী পুলিশ-সেনা অফিসারদের আমলনামা পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যাপারটি। জাতিসঙ্ঘের ১০ম আদিবাসী ফোরামের এশিয়া শাখার ভাষণে এসেছে:
" It is unacceptable that the affairs of the Chittagong Hill Tracts should continue to be run by the military even after the Accord was signed. One-third of the Bangladesh Army is alleged to be deployed in the CHTs though the country is not at war, and is at peace with its neighboring countries and there is no insurgency prevailing. There are more than 400 military camps in addition to 6 Brigade headquarters in the CHTs, which are little more than 5 thousand square miles in area. We are alarmed at the news that heavy military presence in the CHTs contributes to severe human rights violations. Systematic raping of indigenous women and extra-judicial killing of indigenous leaders and ordinary persons resulted from militarization in the region is of grave concerns to us."
আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এর কোন প্রতিমন্তব্য আমি দেখিনি।
একই ভাষনে আরো বলা হয়েছেঃ
" We call the attention to the Department of Peacekeeping Operations to develop a mechanism to strictly monitor and screen the human rights records of national army personnel prior to allowing them to participate in peacekeeping operations under the auspices of the United Nations"
আর ঠিক তখন থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেল উপজাতি/আদিবাসী বিতর্ক। এমন কি হতে পারে যে উপজাতীয় হিসাবে ঘোষণা করলে পাহাড়ের ঘটনাকে জাতিসঙ্ঘের আদিবাসী বিষয়ক এক্তিয়ার বহির্ভূত বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় আর তাই এই বিতর্কের অবতারনয়া?
উপজাতি/আদিবাসী বিতর্ক যেদিকেয়া রফা হোক, এতে এতদিন ধরে যারা ক্ষতিগ্রস্তের হয়েছে তাদের বিশেষ কোন লাভ আছে বলে আমার মনে হয়না। গোলাপকে যে নামেই ডাকি, তার সৌরভের কি হেরফের হবে? কিন্তু একবার যদি পাহাড়ে পোস্টিং থাকার অপরাধে বাংলাদেশের সেনা/পুলিশ/সরকারি অফিসারদের জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে সেটা হাসিনার হোক আর খালেদার হোক, দুদশটা মাথা যে ঢাকার রাস্তায় গড়াবে সেটা নিশ্চিত।
ভিন্ন জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ এগুলা এখন যেভাবে আলোচনার বিষয় হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে বেশীরভাগ দেশের সরকারই এই বিষয়গুলা নিয়ে অজ্ঞ ছিল বলা যায় , তাছাড়া ৭১ এর সদ্য উপনেবিশিক শাসন মুক্ত স্বাধীন দেশে বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে একটু অধিক মাতামাতি হবে এইটাই স্বাভাবিক ( শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজীকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়া এর একটা অন্যতম উদাহরণ) তবে আমি মনে করি দেশের প্রথম সংবিঁধানের যে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল (ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র) যদি অব্যাহত রাখা যেতো তবে বাংলাদেশের বাঙালি নয় এমন ভিন্ন জাতিস্বত্বার মানুষদের অধিকারের কথাও নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সংবিধানে পরবর্তীতে অন্তরভুক্ত হতো ১৫ আগস্ট সামরিক টেকওভার যে পথ বলতে বন্ধ করে দেয় একেবারেই ।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সকলেই স্বীকার করছেন তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা কখনই কাজ করেনি, বিরাট মাপের নেতা হওয়ার পরেও পাহাড় হতে কেউ কোন সমস্যা বা সুপারিশ নিয়ে গেলে তার কাছে গেলে তিনি তা সমাধান করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছেন হয়তো পাহাড়ের সমস্যা পুরাপুরি বুঝার ক্ষেত্রে তার কিছু অক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু তার সেই ঘাটতি দূর করবার চেষ্টা করছেন
পাহাড়ের সমস্যা বুঝতে খালি আর্মি গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের বাইরেরও গোপনে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের পাঠিয়েছেন বাস্তব অবস্থা বুঝতে ( সাবেক সচিব এস এস চাকমার বইয়ে বিষয়গুলি বিস্তারিত আছে)
বঙ্গবন্ধু পাহাড়ের সমস্যার রাজনীতিক সমাধান চেয়েছেন, এই ক্ষেত্রেই তার সাথে বাকিদের পার্থক্য । তার সকল ডিসিসন হয়তো ঠিক ছিলো না কিন্তু ভুল ডিশিসন শুধুরে নিতে তার চেষ্টার কমতি ছিল না ।
বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ ভারতের কংগ্রেসের মতোই একটা জাতীয় সংগঠন কংগ্রেস যেমন আসাম হতে আরম্ভ করে কাশ্মীরের সকলকে নিয়ে এক জোট করে দেশ শাসনের ক্ষমতা রাখে ( যদিও আমার সন্ধিহান আওয়ামিলীগ নেতারা তা জানে কিনা অথবা আগ্রহী কিনা)
বিএনপি ও জামাতে পক্ষে তাদের আদর্শিক কারনেই এ ধরনের রোল পালন করা সম্ভব না প্রতি ইলেকশনেই তাদের লক্ষ্য থাকে পাহাড়ী বাঙালি দাঙ্গা লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করা , আর জেএসএস ইউপিডিএফ যদিও বলে জুমা জাতির কথা বললেও দেখা যায় চাকমা ছাড়া বাকি জাতিরগুলি ত্রিপুরা মারমা , মুরুং তাদেরকে অবিশ্বাস করে নানা কারনেই আমি বিশ্বাস করি পাহাড়ী বাঙালি পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান যা করতে বাস্তবে রুপ দিতে হলে এমন একটা রাজনীতিক শক্তির দরকার যে সকল কমিউনিটির আস্থা সমানভাবে অর্জন করতে পারে আওয়ামিলীগ এই রকম একটা দল হতে পারত তবে কোন এক রহস্যজনক কারনে তারা এই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে
ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যৎতে পাহাড়ি বাঙালি পোলারাইজসনে বিএনপি উইপিডিএফ জেএসএস আর্মি সকলেই লাভবান হবে রাজনীতিক ভাবে তবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে মারাত্মক ভাবে ।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে আমি একজন পাহাড়ের সংগ্রামি নেতা হিসেবে সম্মান জানালেও তার জুম্ম জাতিয়তাবাদ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কখনই আকর্ষণ করেননি জুম্ম জাতিয়তাবাদের আড়ালে বাস্তবে আমি দেখি চাকমা জাতীয়তাবাদ কাজেই এই নিয়ে বেশী কথা বলতে চাই না মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান হিসাবে নিজের বাংলাদেশি পরিচয়টাই আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় এছাড়া বাবার সরকারি চাকুরী সুবাদে সারা বাংলাদেশ ঘুরার সুযোগ হয়েছে এ কারণেই আমার নিজের জন্মভূমি খাগড়াছড়িকে যেমন আপন মনে হয় তেমনি বরিশালের সবুজ শ্যামল প্রান্তরও আমাকে মুগ্ধ করে ।
গারো, মুনিপুরি , ত্রিপুরা , মারমা, চাকমা, সাওতাল , রাখাইন সবাই একত্রে মিলেও ১৪ কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ১ % হবে না বাংলাদেশের রাষ্ট্র সমাজ দুর্বলকে পিসে ফেলতে তাদের অধিকার কেড়ে নিতে সদা তৎপর কাজেই আলাদা আলাদা পরিচয় নিয়ে আন্দোলন করা মানে বিফল হওয়া একটা কমন আইডেনটি বা প্ল্যাটফরমে সকলে কাজ করবার প্রয়োজন অনুভব করছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আদিবাসী পরিচয়টাই পছন্দ করছে
সংবিধানে এই পরিচয় পেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে বলে নতুন প্রজন্ম মনে করে
১। বিশ্বের উন্নত শিল্পউন্নত দেশগুলি আদিবাসীদের কল্যাণথে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করছে আদিবাসী পরিচয় মিললে এই অর্থের যোগান নিশ্চিত করা যাবে যা দিয়ে প্রত্যেকটা কমিউনিটি শিক্ষা স্বাস্থ্য নানা সামাজিক ক্ষেত্রে স্ব উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান পাবে যে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সব সময়েই উদাসিন
জাতীয় নির্বাচন ইস্যু অথবা ক্রসফায়ার ইস্যু হোক বাংলাদেশের সরকার নিজ দেশের লোকদের অপেক্ষা পশ্চিমাদের ওয়াজ নসিহতকে বেশী গুরুপ্ত দেয় আদিবাসী পরিচয় মিললে নিজেদের অভাব অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব দরবারে দেন দরবার করতে সুবিধা হবে
উদাহরন সাম্প্রতিক জাতিসঙ্ঘ এর প্রতিবেদনে পাহাড়ে যে সকল আর্মি অফিসার জুলুম নির্যাতনে অতি আগ্রহী ছিল তারা কিছুটা হলেও দমবে কারণ শান্তি মিশনে সিলেক্ট হওয়ার জন্য হিউম্যান রাইটসের রক্ষায় অতীত রেকর্ড চেক করবার প্রস্তাব করা হয়েছে
পাহাড়ে কিংবা সমতলে বাঙালিদের দ্বারা ভূমি আগ্রাসনের স্বীকার মারমা চাকমা গারো সকলেরই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আদিবাসি স্বীকৃতি হলে ভূমি সংরক্ষনের অধিকার কিছুটা লেভারেজ পাওয়া যাবে ।
এই কারনে আদিবাসী হিসবে স্বীকৃতির লাভ করার চেষ্টা আমি দোষের কিছু দেখি না ।
বলেছেন "ইংল্যান্ডের 'নাগরিক' রা বৃটিশ কিন্তু ইংলিশ, ওয়েলস, স্কটিশ, এমনকি বাঙ্গালীর নৃতাত্বিক পরিচয় ও সেখানে স্বীকৃত" একটু ব্যাখ্যা করে বললে ভাল হত। আমার জানা মতে ‘নৃতাত্বিক পরিচয়’র কোন স্থান নেই পশ্চিমের সমাজে। তাছাড়া ভাষা আলাদা হলেই ‘নৃতাত্ব’ভিন্ন হয়ে যায় না। আর ‘নৃতাত্বিক’ হিসেব করতে গেলে এক ইংল্যাণ্ডেই এ্যাংলো-স্যাকসন, কেল্টিক, নরম্যান, ডেন হরেক জিনিস চলে আসবে। তারা সবাই এখন ইংরেজ। আবার সিংহভাগ ইংরেজ যারা ‘এ্যাংলো-স্যাকসন’ তারা আদি জার্মান থেকে আসা। এখন তারা আলাদা জাতি নাকি? এসব ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে জিদের বসে মন্তব্য না করাই ভাল। এতে অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
ইংরেজী nation এর অর্থ পরিচয় মানে রাষ্ট্রিক পরিচয়ের জাতি। রাষ্ট্র মানেই একক জাতীয় ইডেন্টিটির উপরে একটা নির্দিষ্ট ভূসীমার মধ্যের রাজনৈতিক এন্টিটি। সুতরাং সব গোষ্ঠির জন্য একক আইডেন্টিটি মানেই রাষ্ট্রিক আইডেন্টিটি। অর্থাৎ বাংলাদেশের অধিবাসি বাঙালী, চাকমা, গারো, বিহারি নির্বিশেষে বাংলাদেশি, আমেরিকার অধিবাসিরা ইংরেজ, আইরিশ, আফ্রিকান, রেড-ইণ্ডিয়ান নির্বিশেষে আমেরিকান, ক্যানাডার অধিবাসিরা ইংরেজ, ফ্রেন্স, এক্সকিমো নির্বিশেষে ক্যানাডিয়ান। ফুল স্টপ। এর মধ্যে কোন যদি বা কিন্তুর স্থান নেই।
আগেই বলেছি আধিনুক সমাজের কোথাও ‘নৃতাত্বিক’ হিসেবের স্থান নেই। ইংল্যাণ্ড বা বৃটেনেও নেই। কাউকে সেটা কাগজে কলমে লিখতেও হয় না। ‘উপনিবেশিক সায়েন্সের’ দিন বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন যারা ‘নৃতাত্বিক’ পরিচয় নিয়ে মাথা ঘামায় তারা সভ্য মানুষদের কাছে রেসিস্ট হিসবে পরিচিত। আর আপনার দাবি মোতাবেক যদি ‘জাতি বলতে নৃতাত্বিক পরিচয়কে’ বুঝতেই হয় তাহলে ২ হাজার বছরের বাঙালীর ৫০ বছর বয়স্ক পিতা হয় কি ভাবে?
সমস্ত আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রিক পরিচিয়ের অধীন ভাষা বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের স্বীকৃতির অধিকার আছে যদি কেউ সেটা রক্ষা করতে চায়, অর্থাৎ বৃটিশ বাঙালী, আমেরিকান আফ্রিকান, ফ্রেন্স-আরব। আবার অনেকে সেটাও করে না, তারা শুধু রাষ্ট্রিক পরিচয়টাই বলে। কিন্তু সেই বিধান মেনে বাংলাদেশের চাকমা গারো, মগ, মারমাদের ভাষা সংস্কৃতির স্বীকৃতি মেনে নিয়ে তাদের বাংলাদেশি চাকমা, গারো, মগ বা মারমারা হওয়ার অধিকার দিতে সমস্যা কোথায়? তাদের প্রাপ্য অধিকার ও ভাষা সাংস্কৃতির স্বীকৃতি মেনে নিয়ে তাদের দমন-নির্যাতন করলেই তো হয়। এটা করলে তো বিদেশিরা আর ‘আদিবাসি’ ইস্যু নিয়ে হৈচৈ পানি ঘোলা করতে পারে না।
মুজিব হত্যার জন্যই কি লারমা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ এ গেলেন? এটাও ট্যুইস্টেড তথ্য এবং সহজিয়া ব্যাখ্যা। মনে হবে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যর আগ পর্যন্ত পাহাড়িদের সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। বেটা জিয়াউর রহমান এসেই সব ভ্যাজাল পাকালো! তারা কখনোই ১৯৭২ এর সংবিধানে তাদের জোর করে বাঙালী করা পছন্দ করেনি। যেমন পাকিস্তানিরা আমাদের এটা বললে আমরাও সেটা মানতাম না। ভাষার অবমুল্যায়ন বাঙালী মানেওনি। কিন্তু ১৯৭১ এর পর আমরা পাকিস্তানিরা আমাদের যেটা করতে চেয়েছে আমরা পাহাড়িদের গেয়ের জোরে সেটাই করেছি! এবার কিছু হার্ড ইনফর্মেশন দিচ্ছিঃ ১৯৭২ –এর শুরুতে শেখ মুজিব কে বারবার সম্মত করতে ব্যর্থ হয়ে চাকমারা ঐ বছর এপ্রিলে ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমেও চেষ্টা করেছে। কিন্তু তখন ইন্দিরা সেটা নিয়ে কিছুই করেনি। এর পর ১৯৭৪ থেকে শান্তি বাহিনী সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করার জন্য ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। এর পর ১৫ অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু ও তার সরকার উতখাত হলে ভারত মুখে এটা ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বললেও এর পরের দিন ১৬ অগাস্ট ইন্দিরা সরকারের নির্দেশে ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস (RAW)’র হাইকমান্ড থেকে শান্তি বাহিনী ও জেএসএস নেতাদের ডেকে নিয়ে, মুজিব সরকার উৎখাতের প্রতিশোধ হিসেবে তাদের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র, ট্রেনিং ও ভারতীয় সীমান্তের ভূখণ্ড নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহারের চুক্তি করে। এর পর পার্বত্য এলাকায় সহিংসতা শুরু হয়। ৩০ অগাস্ট ভারত থেকে ফেরার পর দিন জেবি লারমা বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে সেপ্টম্বর মাসে এমএন লারমা শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দেন। মুজিব হত্যার আরও ৩ মাস পরে মে.জে. জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তার সামরিক শক্তি দিয়ে সব ঠাণ্ডা করার চেষ্টা চালান। ব্যাপক ভাবে বাঙালী বসতির ব্যবথা করেন। সেই সঙ্গে তিনি পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি বিদ্রোহীদের একই রকম সাহায্য দেওয়া শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় থেকেই হাপাড়িদের উপর নির্যাতনের শুরু। আওয়ামী লীগ-মুজিববাহিনীর নেতৃত্বের একটি অংশ খুব সচেতন ভাবেই পাহাড়িদের প্রতি রেসিস্ট মনভাবাপন্ন ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধর শেষ দিক থেকেই ব্যাপক নিরীহ মানুষ হত্যা, লুট ও ধর্ষণের ঘটণা ঘটেছে। আরো জানতে হলে আসছে সপ্তাহের ‘গুরুচণ্ডালি’তে দেখবেন। সবিস্তারে লিখেছি এনিয়ে। সল কথা ১৯৭২ এর জাত্যাভিমানী সংবিধান থেকেই যে সমস্যার সূত্রপাত এটা আওয়ামী ঘরণার বিজ্ঞজনরা স্বীকার করতে চায় না। আবার জিয়ার সৈনিকেরা তাদের মহাননেতার নির্দেশে যে ব্যপক খুন, লুটপাট, ধর্ষণ হয়েছে তা কবুল করেন না।
আপনি জিয়া, এরশাদের ‘অবৈধ শব্দটিকে কমার’ ভেতর রাখেন না সেটা আপনার ব্যাপার। সম্ভব্য কারণ আপনি একটি দলের ‘অফিসিয়াল’ ব্যাখ্যা বা ইতিহাসে বিশ্বাসি। এখানের আলোচনায় জিয়া, এরশাদ বা আর কেউ বৈধ না অবৈধ ছিল সেটা নির্ধারণ বিষয় ছিল না। আমার বিষয় ছিল শুধু এইটুকু উল্লেখ করা যে পঞ্চম সংশোধনীতে বাংলাদেশের অধিবাসিদের ‘বাঙালী’র বদলে ‘বাংলাদেশী’ করারটা সঠিক। এমনকি পঞ্চম সংশোধনী বৈধ ছিল কি না সেটাও বিষয় ছিল না। এদেশের কোন শাসকরের হাতই পরিষ্কার নয়। সবার হাতেই রক্ত আছে। আর শাসনের বৈধ-অবৈধ খুঁজতে গেলে অবস্থা ন্যাজে গবরে হয়ে যাবে। পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ বললে বাতিল করলে দেশে চতুর্থ সংশোধনীর ফুটিংয়ে চলে যায় না কি? অর্থাৎ বহুদলীয় ব্যবস্থাও বাতিল হয়ে যায়। শাসনের বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে কথা বলতে হলে শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ ৬ মাস ২০ দিনের একদলীয় বাকশাল শাসনও অবৈধ ছিল। সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতার যোরে যা ইচ্ছে করলেই সেটা বৈধ হয় না। সব চেয়ে মজার কথা, এই তথাকথি শাসন সংবিধান সংশোধন সবই ‘অবৈধ’ কিন্তু ধর্মব্যাবসার জন্য তারা যে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘রাষ্ট্রধর্মঃ এসলাম’ যোগ করেছে সেটা ‘বাস্তব সম্মত’ ছিল বলে বৈধ! এটাকে ভণ্ডামি বললে অনেকেই খুব দুক্কু পাবেন তাই বললাম না। কিন্তু এধরেনের লোকেদের সত্যবাদিতা, শাসন সব গুয়ে-গোবরেই হওয়ার কথা। আর হয়েছেও তাই।
মুক্তমনায় এই বিষয়ে একটি লেখা এসেছে। প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় লিঙ্ক দিচ্ছি।
আদিবাসী বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অবস্থান দেশের জাতিগত সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলবে
নতুন মন্তব্য করুন