দেশে ফেরার পর বেশ কিছুদিন কোন কাজ করিনি, এমনকি লেখালেখি ও না। শুধু ঘরে সময় দেয়া, আর মাঝেমাঝে ঘুরাঘুরি। তরুনদের ঘুরাঘুরিরএকটা দলের সাথে মিশে গিয়ে উত্তর সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দেখা হলো, এই অঞ্চলের মানুষ হয়ে ও এর আগে এমন করে দেখা হয়নি। পারিবারিক ঝুটঝামেলা শেষে গত আগষ্ট থেকে নতুন করে যখন কাজ শুরু করলাম, ঘটনাক্রমে সেই উত্তর সিলেটই হয়ে গেলো আমার কাজের প্রধান একটা অংশ। উত্তর সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনা ও বিকাশ নিয়ে কাজ-কর্ম।
মোটামুটি গত একবছরে এই অঞ্চলে ঘুরতে গিয়ে নদীগুলো দেখা হলো। ধলাই, পিয়াইন, ডাউকী, সারি- দেখা হলো নিজেদের নদী হত্যার প্রকাশ্য নৃশংসতা। নদী হত্যার আয়োজনের বিপরীতে আমাদের রুখে দাঁড়ানোর ক্ষুদ্র চেষ্টা।
এই নদীগুলো দিয়ে মেঘালয় পাহাড় থেকে পাথর নেমে আসে। তাই ভোলাগঞ্জের ধলাই আর জাফলং এর পিয়াইন ও ডাউকীর মোহনায় বাংলাদেশের দুই প্রধান পাথর কোয়ারী। বহু বছর থেকেই সারা বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় পাথর সরবরাহ হয় এখান থেকে। সম্ভবতঃ পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই এই পাহাড়ি অঞ্চলে শীতকালে বিশেষ ধরনের নৌকা নিয়ে ( স্থানীয় ভাবে 'বারকি' নামে পরিচিত) শ্রমিকরা হাজির হতো পাথর সংগ্রহে। পাহাড়ী নদীর ঠান্ডা পানিতে ডোবে ডোবে পাথর তোলা হতো। যন্ত্র নির্ভরতা না থাকায় এ ক্ষেত্রে নদী দূষনের কোন ঘটনা ঘটেনি তখনো। ফলে একই সময়ে জাফলং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারনে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ও পরিচিত হয়ে উঠে।
সমস্যার শুরু হয় এই দশকের শুরুতে। একদিকে পাথরের চাহিদা বেড়ে গেলো অনেক, অপরদিকে প্রাকৃতিক কারনেই মেঘালয় পাহাড় থেকে পাথর নেমে আসা গেলো কমে। সমাধান কী? সমাধান পাওয়া গেলো হাতের কাছে, মানুষ উত্তোলন শুরু করার আগের শত শত বছরে আসা পাথর জমা আছে ভূ-ত্বকের গভীরে আর এখন প্রযুক্তি ও হাতের মুঠোয়। অতএব শুরু হলো বিশাল বিশাল এক্সেভেটরের আগমন, এক্সেভেটরের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কারিগর দিয়ে তৈরী করা হলো দানবীয় সব মেশিনারিজ- বিকট শব্দের কারনে যা 'বোমা মেশিন' নামে পরিচিত।
কয়েক বছর ধরে চললো এক্সেভেটর আর বোমা মেশনের নারকীয় তান্ডব। মাটির ৭০-৮০ ফুট গভীর থেকে তোলে আনা হলো হাজার হার ট্রাক পাথর, যে পাথর এতো বছরে ধরিত্রীর অংশ হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চল ডাউকী ফল্টের খুব কাছাকাছি থাকার ফলে মাতা ধরিত্রীকে কতোটুকু ঝুঁকিতে ফেলা হলো সেটা খালি চোখে দেখা সম্ভব না হলে ও ভোলাগঞ্জ এবং জাফলং ক্রমশঃ নরকে পরিনত হলো শব্দ, ধুলো আর নদী দূষনে।
বালু জমে জমে পিয়াইন নদীর জাফলং অঞ্চল মরে গেলো, সেই বালুতে বসলো এক্সেভেটর, বোমা মেশিন। এক্সেভেটর বালু কাটতে থাকলো, বালুর নিচের পানি পাম্প করে ফেলা হতে থাকলো পাশের ডাউকী নদীতে, পানি কমলে তুলে আনা হতে লাগলো পাথর। অসহয়নীয় পরিবেশের কারনে স্থানীয় আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায় সরে যেতে বাধ্য হলো নদী তীরবর্তী নিজস্ব ভূমি থেকে।
কয়েকবছর ধরে চলতে থাকা এই ভয়ংকর তান্ডবের বিরুদ্ধে সরকার, প্রশাসন যন্ত্র নির্বিকার থাকলো ( কেনো সেটা আরো পরে বলা হয়েছে)। গনমাধ্যম ও স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের মুখে বর্তমান সরকার গঠনের পর পর সর্বপ্রথম ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর ধলাই, পিয়াইন ও ডাউকী নদী থেকে পাথর উত্তোলনে সব ধরনের যান্ত্রিক উপকরনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।
আন্তঃ মন্ত্রনালয়ের বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের অনুরোধ জানালে ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় তা বজায় রাখে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগীতার কারনে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হওয়ার প্রেক্ষিতে জুলাই ২০০৯ এ বাংলাদেশ এনভায়রোমেন্টাল ল'ইয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা) হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে পাথর মালিক সমিতি ও এর অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তাদের আইনজীবি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদ। রোকন উদ্দীন মাহমুদ এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দুটি প্রধান যুক্তি দেখান, প্রথমতঃ বিপুল পরিমান পাথর উত্তোলন হঠাৎ হ্রাস পেলে এনুয়েল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম( এডিপি) বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দ্বিতীয়তঃ- 'বোমা মেশিন' স্থানীয় প্রযুক্তি মাত্র, এটাকে যান্ত্রিক উপকরন হিসেবে বিবেচনা করা যায়না।
মহামান্য আদালত জানুয়ারি ২০১০ তারিখে রায় ঘোষনা করেন যে, পরিবেশ অধিদপ্তরের এই নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই বলবৎ থাকবে।
ব্যারিষ্টার রোকন উদ্দীন মাহমুদের দেয়া যুক্তি খন্ডন করে মহামান্য আদালত তাদের রায়ে বলেন
“If an activity is allowed to go ahead, there may be irreparable damage to the environment and if it is stopped, there may be irreparable damage to economic interest, incase of doubt, however protection of environment would have precedence over the economic interest”
“The ban of mechanized extraction of stones imposed by the Department of Environment as evidenced by Annexure-F shall remain in force until guidelines, if possible, are framed by the Ministry of Environment and the Department of Environment by strictly keeping the environment of the concerned area Intact “
সুতরাং আদালতের রায়ে এটি স্পষ্ট যে 'mechanized extraction of stones' সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্থানীয় প্রশাসন আইনগত ভাবে বাধ্য আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে।
প্রথম ছবিটি দিন দশেক আগের। কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু সহ আমরা জাফলং যাই, দেখি মৃত পিয়াইনের বুক জুড়ে যন্ত্রদানব বসানো হচ্ছে অনেকগুলো পাথর তোলার উদ্দেশ্য, দ্বিতীয় ছবিটি আরো কয়েকদিন আগের-ডাউকী নদীর উপর বসানো সেতু যেনো পাথর উত্তোলনের পর এপার থেকে ট্রাক চলে যেতে ওপারে পাথর নিয়ে আসার জন্য।
এই ছবিগুলো নিয়ে আমরা কয়েকদফা দেখা করি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ প্রশাসকের সাথে। প্রথম ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করিঃ- আদালতের রায় অনুযায়ী পাথর উত্তোলনে এই যন্তের ব্যবহার নিষিদ্ধ কিনা? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে জেলা প্রশাসক প্রত্যেকের মুখস্থ উত্তর- আদালতের রায়ের কাগজ তাদের কাছে নেই। এই উত্তর আমাদের পূর্বানুমান ছিলো তাই আমরা ভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম আগেই, তাঁদের প্রত্যকে বেলা'র রিট আবেদন ও আদালতের রায়ের কপি হাতে ধরিয়ে দেই। সবচেয়ে বিনোদন যোগান পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক, তিনি প্রথমে খুব ভাব ধরে শুনান পদে তিনি ডেপুটি সেক্রেটারী( হুম!)। তো ডেপুটি সেক্রেটারী সাহেব জানতেনই যে, এই নিষেধাজ্ঞা মুলতঃ তার মন্ত্রনালয়েরই দেয়া
দ্বিতীয় ছবিতে যে সেতু দেখা যাচ্ছে সেটি গত বছর ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর পরিত্যক্ত। মৌসুম আসার সাথে সাথে এটি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে নদীর দুপাশে বাঁধ দিয়ে। প্রশাসনকে আমরা এই প্রশ্ন করিঃ- এই সেতুটি কি বৈধ? কার অনুমতি নিয়ে পাথর ব্যবসায়ীরা এই সেতু তৈরী করছে? যদি প্রশাসনের কেউ দিয়ে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে? প্রবাহমান নদীর বুকে ইচ্ছেমতো একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেবার আইনগত সুযোগ আছে কিনা?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক পর্যন্ত প্রত্যেকে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে তারা প্রত্যেকেই এইসব অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে আগ্রহী কিন্তু আমাদের উচিত স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলাপ করা ( বুঝতে চেষ্টা করি একজন সংসদ সদস্য আসলেই কতোটুকু ক্ষমতাবান এইদেশে? আদালতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে প্রশাসন বসে থাকে তার মর্জির জন্য)
ইন্টারেস্টিংলি, বেলার রিট পিটিশনে আমরা দেখি- এই সংসদ সদস্য ও পাথর উত্তোলনে বোমা মেশিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন মন্ত্রনালয়ে ২০০৯ সালে। এ ছাড়া ইমরান আহমেদ চৌধুরী শিক্ষিত ও সজ্জন ব্যক্তি। সুতরাং ভরসা নিয়েই আমরা তার সাথে দেখা করি। তিনি প্রথমেই জানান- থানার ওসি তাকে জানিয়েছে জাফলংয়ে কোন বোমা মেশন চলছেনা। ঠিক এদিন স্থানীয় দৈনিক 'শ্যামল সিলেট' এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। আমরা দেখাই তাকে, আমাদের তোলা ছবি দেখাই। তিনি মাথা নাড়েন। নাহ- এগুলো ঠিক 'বোমা মেশিন' না। শিক্ষিত, সজ্জন স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে এই মেশিনের অপারেটর মোস্তফা মিয়ার কথার মিল খুঁজে পাই। সে ও এটাকে 'বোমা মেশিন' বলছিলো না- নতুন নাম হয়েছে ' সিলিন্ডার মেশিন'
আমরা হিসেব মিলাই এবার। এই পাথর কোয়ারী সরকারী ইজারা নয়। যে কেউ ওখান থেকে পাথর তোলতে পারে, শুধু উত্তোলিত পাথরের উপর সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স দিয়ে। নানা সূত্র থেকে খবর বের করি সংগৃহীত ট্যাক্সের পরিমান দৈনিক দুই লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মাত্র হাজার পঁচিশেক জমা হয় সরকারের দপ্তরে। বাকী টাকা যাচ্ছে সরকারী দলের স্থানীয় নেতা এবং প্রশাসনের পকেটে- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে পুলিশ প্রশাসন হয়ে জেলা প্রশাসক পর্যন্ত। এটা গেলো কেবল মাত্র ট্যাক্সের টাকার বখরা- এ ছাড়া ও পাথর ব্যবসায়িদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা যার পরিমান এর থেকে অনেক অনেক বেশী।
দুবছর পর নির্বাচন। সংসদ সদস্য সাহেব আবারো নির্বাচন করবেন, নিজ দলের চ্যালা চামুণ্ডাদের নগদ অর্থের জোগান দিতে হবে। অতএব- আইন, পরিবেশ গোল্লায় যাক, ভুলে যাই নিজেই চিঠি লিখেছিলাম এসব বন্ধের সুপারিশ জানিয়ে।
এখন তাহলে উপায় কী?
নাহ আমরা ও নিশ্চয় বসে থাকবো না। পরবর্তী কর্মকৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কারো কোন পরামর্শ থাকলে জানাবেন। টিপাইমুখ নিয়ে রাজনীতি আছে, সুতরাং মিছিল-মিটিং জনসমাবেশ আছে। ধলাই, পিয়াইন, ডাউকী, সারি নিয়ে রাজনীতি নেই- সুতরাং প্রকাশ্যে খুন হলে ও এর জোরালো প্রতিবাদ নেই।
কিন্তু নদী খুন হলে যে আমরা ও মরে যাবো সেই উপলব্ধি তো দরকার, তাইনা?
( পরের পর্বে লিখবো বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর নদী, পান্না সবুজ জলের 'সারি' খুনের গল্প)
[ যাঁদের পাশে থেকে এইসব কাজ করা হচ্ছে- আব্দুল করিম কিমঃ সেক্রেটারী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন( বাপা), সিলেট; দেবাশিষ দেবুঃ বার্তা সম্পাদক, দৈনিক শ্যামল সিলেট ; উজ্জ্বল মেহেদীঃ ব্যুরো চীফ, দৈনিক প্রথম আলো ; মাহবুবুর রহমান রিপনঃ স্টাফ রিপোর্টার, দ্যা ইনডিপেন্ডেন্ট ; নাজিম কামরান চৌধুরীঃ উত্তর সিলেটে পর্যটন উদ্যোক্তা ]
মন্তব্য
দেশের সব নদীকে বুড়িগঙ্গা বানিয়ে ফেলা হবে... এ তো আমরা জানিই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অত্যন্ত দুঃখজনক ... আমরা সাধারন মানুষেরা কি করতে পারি এই বিষয়ে ? জাফলং ত প্রায় মরে গেছে ... পুরো বাংলাদেশ কে ধ্বংসস্তুপ এ পরিণত করার পায়তারা কেবলমাত্র টাকার লোভে ...
কিছুদিন আগের তোলা ছবি। নদীকে খোজেঁ পাওয়ার কোনো উপায় নাই।
একই মন্তব্য দু'বার হওয়ায় ঘ্যাচাং
আমার জন্ম 'সতত হে নদ...' খ্যাত কপোতাক্ষের পাড়ে । ছোটবেলায় এই নদের পাড়ে গেলে রীতিমত ভয় লাগত, বাস্তবিকই তখন বর্ষার সময় এই নদ ছিল ভয়াবহ । শীতের সময়ও ভরা যৌবনা না হলেও শীর্ণ-রুগ্ন দেখাত না, পালতোলা নৌকা না চললেও মাঝারি নৌকা আর মাছ ধরা নৌকার অভাব ছিল না। আমাদের এই জায়গায় মহামূল্যবান পাথর না থাকলেও ভুমিদস্যুর কমতি নেই, সাথে আছে প্রত্যেক নির্বাচনে জন্ম দেয়া কিছু লোভী সাংসদ আর তার চেলাচামুণ্ডা... ফলাফলে বর্ষাকাল না পেরতেই শুরু হয় নদী বাঁধ দিয়ে নিজস্ব ঘের বানান আর মাছ চাষ । শীতকালে কপোতাক্ষের বিস্তৃতি বড়জোর ৩০ গজ আর জলের গভীরতা হাটু সমান । দুই পাশের নদীর পাড়ে তাদের নিজস্ব ফসলের সমাহার।
বিগত ১৫ বছরে কম করে হলেও ৩-৪ বার নদী নাব্যতা বৃদ্ধিতে পানিউন্নয়ন বোর্ড কাগজে কলমে কয়েক কোটি টাকার কাজ করেছে... কিন্তু তাতে নদীর প্রবাহ কমে বৈকি বাড়ে নি। শীতকালে নদীর জল আর হাঁটুর উপরে উঠাতে পারে নি ।
ছবি গুলো দেখতে পেলাম না, আমার গুগলক্রমের সমস্যা কিনা তাও অবশ্য নিশ্চিত না। লেখার জন্য ।
কপোতাক্ষের নাব্যতা হ্রাস আপনাদের এলাকার জলাবদ্ধতা এবং বন্যার অন্যতম কারন। কপোতাক্ষ বর্ষাকালের পানির ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। শংকা বোধ করছি যে এখনও যদি ব্যাপক এবং পরিকল্পিত ড্রেজিং করা না হয়, তবে আগামী বছরগুলোতে কি হয়। বিশেষ করে আবাসন সমস্য খুবই প্রকট এখন। আমরা ১২০ কোটি টাকার একটা আবাসন প্রকল্পের ডিজাইন করছি। দাতা পয়সা দিলে আশাকরছি জানুয়ারী ২০১২ থেকে কাজ শুরু করতে পারবো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ...এমন আশার কথা শোনানোর জন্য।
এমন আশা উদ্দীপক পরিকল্পনা শুনে একটু মাঝে মাঝে চোখ চকচক করে উঠে... কিন্তু সমস্যা টা হচ্ছে - আমি এখন মোটামুটি নিরাশাবাদীদের দলে। গত কয়েক বছরে যখনই কপোতাক্ষের বুকে ড্রেজিং মেশিনের ধাতব গর্জন শুনেছি, ভেবেছি এই বার কিছু হবে। কই তেত্রিশ বছর হোল, কিছুই হয় নি, কিছুই বদলায় নি ।
আপানার পরিকল্পনা নিয়ে আমি উচ্ছসিত...কিন্তু আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আবুল-ফজল-সেলিমদের উপরে বিশ্বাস রাখি কিভাবে ?
গত পরশু বিকেলে তালা উপজেলা পরিষদে এমপি, ডিসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এমপি এবং ডিসি সাহেব ঝুঁড়ি কোদান নিয়ে কপোতাক্ষের পুণঃখননে ঝাপিয়ে পড়ার এক গণআহবান জানান। এই ধরণের স্ট্যান্টবাজীর সাথে আমরা পরিচিত। মাটির কাজে কারা যায়? যায় কায়িক শ্রমিক শ্রেণীর মানুষেরা। আপনারা স্কিম নিয়ে এসে তারপর ওদের ডাক দিন নইলে এইসব চাপাবাজী থেকে বিরত থাকুন।
আপনার নিরাশার সাথে আমিও নিরাশ। সরকারী নীতিমালার কারণে আমরা নদীখনন/পুনঃখনন করতে পারিনা। এবং সেটা সংগতও হয়না। কিন্তু আমরা সরকারী নির্দেশনা এবং তদারকীর মধ্যে থেকে আমাদের কাজের বিনিময়ে নগদ অর্থ স্কিমগুলোর মাধ্যমে কিন্তু এইসব সংস্কার বা খননের কাজগুলো করতে পারি। কিন্তু আমাদের করতে দেওয়া হয়না। কেনো জানেন? আমরা কাজ করলে ভূয়া হাজিরা সই দিয়ে চেয়াম্যান-মেম্বারের লোক পয়সা নিতে পারেনা, এক সপ্তাহের মাস্টার রোলে একদিন এসে সই দিয়ে পয়সা নিয়ে নেওয়া যায়না। স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমাদের ক্যাশ ফর ওয়ার্ক স্কিমগুলোর কাজের মান 'সুপার' নয়। আমাদের এই স্কিমগুলোর পিছনের উদ্দেশ্য হচ্ছে অস্থায়ী/স্বল্পকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের যাতে দূর্যোগপরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকায় ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুটা হলেও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। যে দেশের সরকার এবং প্রশাসন মানুষের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা চায়না, সেক্ষেত্রে আমরা খুব সামান্যই করতে পারি।
একটা বিষয় নিশ্চিত করি আপনাকে। আমাদের একটা পয়সাও চেয়ারম্যান-মেম্বার-ইউএনও বা পিআইওর হাত দিয়ে খরচ হয় না। আমাদের প্রকল্পের খরচ আমরা নিজেরাই করে থাকি। আমাদের কাছে কোনও আবুল-ফজল-সেলিমের ভাত নেই। এবং এদের ভাত নেই বলেই এরা সুযোগ পেলেই আমাদের কাজে বাগড়া বাধাতে আসে। এগুলো হিসেব করেই আমাদের কাজে নামতে হয়। আমরাও জানি কিভাবে ওদের স্ক্রু টাইট দিতে হয়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ইনসাইট ভিউগুলো তো আমরা দেখতে পাই না । আপনার কাছে থেকে কিছুটা ভিউ পেলাম । সাথে আশাও । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ...
এই পৃথিবীতে যখন মানুষ থাকবে না, তখন ভ্রমণ করতে আসব যেকোনো উপায়ে।
লেখায়
সাধারণ মানুষকে সহজ ভাষায় লিফলেট দেয়া হোক।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এই লেখাটি ছড়িয়ে দিন সকলে। মোরশেদ ভাই কিছু ভিডিও ক্লিপস ইউটিউবে আপ করুন।
facebook
বিশেষ প্রয়োজনীয় একটি সাহসী লেখা।
শেয়ার করেছি।
হাত খুলে লিখুন, সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দিন। আপনার এই লেখাগুলই হয়ত একদিন "নদী বাঁচাও" আন্দোলনের জন্ম দেবে। আশা করতে দোষ কি?
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আমরা টিপাইমুখ আর তিস্তা নিয়ে মাতোয়ারা। এমন না যে ওগুলো নিয়ে মাতোয়ারা হবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যেখানে ঘরের বেড়আলই মাছ নিয়ে যায়, সেখানে ক্রোশ দুরের কাজী বাড়ঈর বিড়আলের গলায় ঘন্টা বেঁধে ফয়দা আর কতটুকু?
শৈশবের একটা বড় অংশ কাটিয়েছি মৌলভীবাজারে। সিলেটে জাফলং, সারি, লালাখাল এলাকায় যাওয়া হত প্রচুর ই। বিয়ের পরে স্ত্রীকে যখন দেখাতে নিয়ে গেলাম, দেখলাম মাত্র ১৪-১৫ বছরে কিভাবে জায়গাটাকে খুন করে ফেলা হচ্ছে। আগামী ১৫ বছর পরে আর কি থাকবে সেই আশংকা নিয়ে ফিরে এলাম। ধন্যবাদ নদী বাঁচানোর এই উদ্যোগ হাতে নেওয়ার জন্য।
দারুন লেখা হাসান ভাই। তবে প্রতিকার নিয়ে সংশয়ে আছি। যেখানে রাজধানীর মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নিয়েই সরকারের বিন্দুমাত্র কোন মাথাব্যাথা নেই সেখানে ডাউকী আর পিয়াইনের কপালে কি আছে সেটা ভাবতেও ভয় পাচ্ছি। পরামর্শ থাকবে বাপা'র (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) এর সাথে যোগাযোগ করতে। যেহেতু এই নদীর প্রসংগে একবার রীট হয়েছে সেক্ষেত্রে আইনগত ভাবেও কিছু করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখতে পারেন।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আমাদের প্রকৃতিকে বাঁচাতে এরকম কিছু লেখা প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারবে। ভালো উদ্যোগ, চালু থাকুক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এই পিয়াইন নদী সম্ভবত সুনামগঞ্জ হয়ে নেত্রকোনায় গিয়েছে- ধনু নদ নাম ধারণ করে কিংবা ধনু নদে মিশেছে। নেত্রকোনার অনেক সাহিত্যে পিয়াইন নদীর উল্লেখ আছে।
আমরা কোনোকিছুরই যত্ন নিতে জানি না। দুর্নীতি আর সবকিছুর ক্ষতি করা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আপনাদের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন রইলো। নদীগুলো রক্ষা পাক মানুষের সর্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত থেকে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সকল সমস্যার মূলে দেখা যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের সরাসরি অংশগ্রহন থাকে। আইন, প্রশাসন থেকে শুরু করে মানুষ, নদী পর্যন্ত এদের কাছে অসহায় , তাই আমার মতে প্রয়োজন এই নষ্ট রাজনীতির পরিবর্তন সর্বাগ্রে। ক্ষমতা অধিগ্রহণ ছাড়া দেশের পরিবর্তন সম্ভবপর নহে বলে আমার অভিমত। আমরা চিৎকার করতে পারি, রিট করতে পারি, আইনও করতে পারি, কিন্তু কিছুই বাস্তাবায়ন করতে পারবো না এই নষ্ট সিস্টেমের ফলে। পরিবর্তন আনতে হবে পুরো ব্যবস্থায় যা একমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়েই সম্ভব।
চট্টগ্রামে আমাদের কর্ণফুলিও নাব্যতা হারাচ্ছে। ভাটার সময় দেখা যায় নদীর প্রায় অর্ধেক অংশ খালি হয়ে গেছে। আমাদের দেশটাকে আমাদের চোখের সামনে কিছু খাপোরা শেষ করে দেবে।
_________________
[খোমাখাতা]
ডাউকি আর পিয়াইন নদীর ভারতীয় অংশের নাম কি? জাফলং এর কোথায় এসে নদীটি দুটি নদী হয়ে দুই দিকে চলে গেছে-জানতে ইচ্ছে করছে।
লেখা ভাল লেগেছে।
শেষবার সিলেট যেয়ে পিয়াইন নদী থেকে পাথর তোলার আরেকটা ভয়াবহ ব্যাপার খেয়াল করেছি। এই নদীর বাংলাদেশ অঞ্চলে পাথরের পরিমান কমে যাওয়ায় আহরণ অনেক ব্যায়বহুল হওয়াতে বর্ডারের দুইপারের প্রভাবশালীরা এক হয়ে নুতন ফন্দি করেছে। ওরা ভারতীয় অঞ্চলে পাহাড়ের খাঁজে ডিনামাইট ফাটিয়ে দেয়,তাতে পাহাড় ধ্বসে প্রচুর পাথর এদিকে নেমে আসে। নীচের ছবিতে যে হাজার হাজার নৌকাগুলো দেখছেন এরা অপেক্ষায় থাকে সেই ধ্বস জনিত পাহাড় ক্ষয়ে নেমে আসা পাথর সংগ্রহের।
এদের দৌরাত্ব এমনই দাঁড়িয়েছে যে বাইরে থেকে কারুরই এখন সেদিকে আর প্রবেশাধিকার নেই।
...........................
Every Picture Tells a Story
বাঙালি একটা নষ্ট জাতি। কয়েকশ বছর পরে মানব ইতিহাস পড়াতে গেলে আত্মবিধ্বংসী জাতির চ্যাপ্টারে বাঙালিরা সবার আগে থাকবে।
নদী হত্যার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ দিচ্ছি। গতকাল খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালী ব্রীজের উপর দাড়িয়ে ব্রীজের দুপাশের ছবি তুললাম। নদীর নাম শৌলমারী, একটা অনেক পুরোনো নদী যাকে আমি নিজের চোখে স্রোতস্বিনী দেখেছি, যার বুকে কয়েক বছর আগেও কিছু নৌকা চলতে দেখেছি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগের পাণ্ডারা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে চিংড়ির ঘের করেছে। ছবিতে দেখতে পাবেন ওরা কনক্রীটের সীমানা পিলারও স্থাপন করেছে। এই সরকার গেলে হয়তো যুবদলের পাণ্ডারা ওগুলোর দখল নেবে। কিন্তু শৌলমারী আর পুনর্জন্ম লাভ করবে না। হায়রে শৌলমারী, তোর উপরে বালিয়াখালী ব্রীজ থেকে যাবে, তোর নাম ডিস্ট্রিক বোর্ডের নদীর তালিকায় থেকে যাবে, তোর নাম মানুষের মুখে মুখে থাকবে, কিন্তু তুই আর থাকবি না!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন