লিন এন্ডারসন এসময় আরো মায়াবী হয়ে উঠেন। 'আই নেভার প্রমিস ইউ এ রোজ গার্ডেন’।
ঠিক তো, নেভার প্রমিজড। তবু গোলাপের আকাঙ্ক্ষা থেকে যায়, কোথাও অযাচিত ফুটেও গোলাপ। গোলাপের রঙ লাল। রক্তের রঙ লাল। মানুষের।
এসময় কোন কোন দিন জাফলং থেকে ফিরি, কখনো লালাখাল হয়ে। সন্ধ্যে নামে তখন, পেছনে প্রগাঢ় গাম্ভীর্য নিয়ে ক্রমশঃ দূরে সরে যেতে থাকেন প্রসিদ্ধ পাহাড়।
প্রতিশ্রুতি, আকাঙ্ক্ষা ও অভিমানের সুরেলা প্রলাপেরা গাড়ীর ভেতরে গাঢ় হতে হতে হঠাৎ হোঁচট খায়। ডানপাশে এক যাত্রীবাহি গাড়ী কাত হয়ে থেমে আছে, মানুষের জটলা। রক্ত নেই, গোলাপ ও নেই। আশ্বস্ত হই, হয়তো ঘটতে ঘটতে হয়তো শেষ পর্যন্ত আর দূর্ঘটনা ঘটেনি।
একটু সামনে এসে গোলাপ দেখি, রক্ত, সাদা শাড়ী পড়া নিথর দেহ। মানুষের জটলা নেই। লিন এণ্ডারসনের অভিমানীর কন্ঠ একটু নিচু হয়, আমার গাড়ির গতি থামেনা। মোবাইল ফোনে পেয়ে যাই স্থানীয় থানার পুলিশ প্রধানকে, নাগরিক দায় সাড়া হয়। অন্ততঃ অতোটুকুই।
ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ট্যাবলয়েড পড়েন নিয়মিত। মাঝে মাঝে আমার দিকে এগিয়ে দেন। মাঝে মাঝে আমি ও পড়ি। এক মায়ের গল্প পড়ি। মা হবার আগে তিনি স্রেফ মেয়ে ছিলেন, প্রতারক প্রেমিক সন্তান জন্ম দিয়ে পালিয়ে গেছে, বিয়ে করেছেন আরেকজনকে সন্তান সমেত। বিয়ে করা পুরুষটি বেশ্যার দালাল। সেই মায়ের ও পরিনতি তাই, দেহ পসার করেন।
এ নিয়ে অবশ্য কোন দুঃখবোধ নেই। তারা ভালো থাকেন মোটামুটি, শুধু ঝামেলা করে ৫ বছরের শিশুটি। একা রেখে যাওয়া যায়না- সাথে নিয়ে গেলে খদ্দেরের চাহিদা মেটানো যায়না, এ ছাড়া প্রায়ই অসুস্থ থাকে। মা আর তার স্বামী চিন্তাগ্রস্ত হন- আরো আয়ের, আরো ভালো থাকার সুযোগ আছে কিন্তু পারা যাচ্ছেনা শুধু শিশুটির জন্য। আরো ভালো থাকা সম্ভব, আরো বেশী রোজগার যদি কেবল শিশুটি না থাকে। চিন্তা থেকে পরিকল্পনা- মা এবং তার স্বামী দুজনে মিলেই শিশুটিকে হত্যা করেন আরেকটু ভালো থাকার আয়োজনে। সো স্মাইল ফর এ হুয়াইল এন্ড লেটস বি জলিঃ লাভ সুডন্ট বি সো মেলাঙ্কোলি!
খুন হয়ে যাওয়া শিশুটি আমার প্রথম সন্তানের প্রায় সমবয়সী।
ঠিক একই বয়েসী আরেকটি শিশু তার মা-বাবার রক্তাক্ত নিথর শরীর খুঁজে পায় একাকী সকাল বেলা।
আমি লিখছিনা অনেকদিন। না গল্প, না কবিতা, না কোন ব্যক্তিগত চিঠি। যে মানুষ জীবনে একটি শিশু খুন হয়ে যায় তার মায়ের হাতে কেবল আরেকটু ভালো থাকার লোভে, একটি শিশুকে একাকী পাহারা দিতে হয় মা-বার মৃত শরীর সে জীবন আর দোয়েলের থাকেনা , থাকেনা ফড়িংয়ের । এর তাছাড়া শব্দ কিংবা বাক্যের সাধ্যই কতোটুকু?
দেশ নিয়ে হা-হুতাশের মধ্যবিত্তীয় বিকার নেই আমার। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর একটিতেও ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে বারোজন নিরপরাধ মানুষ খুন হয়ে যেতে দেখেছি আমি।
এই দেশ কেবল নয়, মানুষের গোটা পৃথিবীকেই মাঝে মাঝে বড় বিবমিষাময় মনে হয়।
মন্তব্য
বারোটি খুনের মধ্যে অন্তত দশটি খুনের বিচার সময়মত হয় সেখানে।
বাংলাদেশে গত দশ বছরে বারজন সাংবাদিক হত্যার একটারও বিচার হয়নি। খুনী সাজা পায়নি। যে উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়েছেন তার সাথে বাংলাদেশের পার্থক্যটা এখানেই।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হুম। বিচার কি ক্ষতির যথার্থ পূরন ঘটাতে পারে, আসলেই?
প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা ব্যক্তির শারীরিক বিচারটুকুই করে শুধু, যে সকল কারনে অপরাধ ঘটে তার কার্যকারন বিশ্লেষন করেনা। যে মা 'আরো ভালো' থাকার ফাঁদে পড়ে সন্তান খুন করে, বিচার ব্যবস্থা সে মাকে ফাঁসীতে ঝুলাবে কিন্তু 'আরো ভালো থাকার' ফাঁদকে আটকাবেনা। বাংলাদেশ এবং উন্নত দেশ সমুহে একই ঘটনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হ । অনেকদিন পর প্রিয় লেখকের ব্লগব্লগর পড়লাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আপনার মত কেউ কেউ ব্যক্তিক্রম হলেও দেশ নিয়ে হা হুতাশ আমার মত মধ্যবিত্তরা করেই যাবে এটাই হয়ত স্বাভাবিক । মধ্যবিত্তের সীমাহীন লোভ আর স্বার্থপরতার মাঝেও এরাই আবার সমাজ বদলানোর নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে সব সময় ।
উন্নত দেশের সাথে আমাদের এখনো অনেক ব্যবধান এটা মান্তেই হবে । ওইসব দেশে মন্ত্রীরা টিভি পর্দায় অন্তত দাঁত কেলিয়ে বলেনা আল্লার মাল আল্লা নিয়া গেছে অথবা এক্সিডেন্ট ইজ এক্সিডেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি ।
জ্বি, ঐটুকুই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমি শিশুটির মুখের দিকে তাকাই আর কি যেন ভাবতে ব্যর্থ হই। আমার চোখের সামনে অন্ধকার পর্দা টানিয়ে দেয় শিশুটির ভবিষ্যত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মানতে কষ্ট হয় যে হয়তো সত্যিই একদিন 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।'
ডাকঘর | ছবিঘর
_________________
[খোমাখাতা]
আমারও! তবু স্বপ্ন দেখে মন!
মেলান্কলি হওয়ার মত খানিক সময়ও আর অবশিষ্ট নেই; সুখের নেশায় মত্ত সবাই; হিতাহিত জ্ঞান সম্পূর্ণই বিলুপ্ত! সুখের অসুখ বলব একে? নাকি বিবর্তনের নিয়ম মেনে চলছে এই পৃথিবী?
ছুঁয়ে যায় মনের গহীন বন্দর। তো এইটুকুই বা কম কিসে? তাই লিখুন ভাইয়া।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিষাদময় লেখা
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মাঝে মাঝে আমারও তাই মনে হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন মন্তব্য করুন