।১।
১৯৭১ সালের এপ্রিল সতেরো তারিখে মুজিব নগর সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত শেষ হবার পর, প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ আবার ভারতে ফিরে যাবার মুহুর্তে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিলো।ভারত সীমান্তে পৌঁছে সদ্যগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলেন- এখন আর উদ্বাস্তু নয় বরং একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে আরেকটি রাষ্ট্রে তারা প্রবেশ করবেন। সুতরাং তাদেরকে যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার সাথে নিয়ে যেতে হবে কারন এর সাথে নতুন রাষ্ট্রটির সম্মান জড়িত।
তাঁর দাবী মেনে নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবার গার্ড অফ অনার দিয়ে তাদের ভূ-খন্ডের ভেতর নিয়ে গেলেন সদ্য গঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদেরকে।
আর এভাবেই ডিসেম্বরের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির আটমাস আগে, মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরুতেই ভারত সরকারের অনানুষ্ঠনিক স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিলেন তীব্র আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন এবং কৌশলী তাজউদ্দীন আহমদ।
তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র তানজিম সোহেল( সোহেল তাজ) আওয়ামী লীগের মনোয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ২০০১ এ যখন আওয়ামী লীগের অনেক হেভীওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। জোট সরকারের পুরো সময়টাই তিনি রাজপথে সোচ্চার ছিলেন, শিকার হয়েছেন পুলিশী নৃশংসতার। ২০০৮ এর নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। কিন্তু নতুন সরকারের পাঁচমাসের মাথায়, যখন বিডিআর বিদ্রোহের মতো একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় সরকার বিপর্যস্ত তখন তিনি পদত্যাগের ঘোষনা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। আওয়ামী বিরোধী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদেরও একটা অংশের দাবী মতে সোহেল তাজ তার পিতার মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং এই মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনেই তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। শোনা যায়,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই, প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম তাকে অপদস্ত করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়ে ও তিনি প্রতিকার না পাবার ক্ষোভে ও অপমানে পদত্যাগ করেন।
এইখানে ইতিহাস একটা শিস কেটে যায়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকালীন দুর্যোগময় মুহুর্তে যে দুজন দলীয় সহকর্মী তাজউদ্দিন আহমদের জন্য পদে পদে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের একজন শেখ ফজলুল করিমের অগ্রজ, ডাকসাইটে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি।অপরজন ছিলেন খন্দকার মোস্তাক। যদিও শেখ মনি আর খন্দকার মোস্তাকের রাজনৈতিক দর্শন ভিন্ন ছিলো তবু তাজউদ্দিন বিরোধীতায় দুজনেই ছিলেন প্রবল। ইতিহাস আবার মনে করিয়ে দেয়- চারবছর পর শেখ মনি আর তাজউদ্দীন দুজনেরই নিয়তি প্রায় এক। প্রথমজন নিহত আগস্ট পনেরোর রাতে, দ্বিতীয় জন নভেম্বর তিন এ জেলখানার ভেতর। ঘাতক একই পক্ষ অথচ খন্দকার মোস্তাক তখন লাভের বানিজ্যে, ঘাতকদের পরামর্শক।
আবার মনে করা যেতে পারে তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আত্মমর্যাদাসম্পন্নই ছিলেননা, ছিলেন তার দায়িত্বে অবিচল এবং লক্ষ্য অর্জনে কৌশলী। মুজিবনগর সরকার পরিচালনাকালীন সময়ে শেখ মনি ও খন্দকার মোস্তাকের যৌথ বিরোধীতা ও অপমানে তিনি তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি, কৌশলে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন বলেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ একটি নিরেট বাস্তবতা। সংকটকালীন সময়ে নিজের অহংকে অধিকতর গুরুত্ব দিলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতো, তাঁর নিজের এবং বাংলাদেশের ও।
যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন এবং মুক্তির যুদ্ধ পরিচালিত হয় তার প্রথমসারির সকল নেতা যে একই রাজনৈতিক ভাবধারার ছিলেন তা নয়। তাজউদ্দীনের মতো বামঘেঁষা রাজনীতিবিদ যেমন ছিলেন, খন্দকার মোস্তাকের মতো তীব্র ডান ও ছিলো আবার সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতো মধ্যপন্থীরাও ছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাদের সবার উপরে বটবৃক্ষের মতো, যে বৃক্ষের ছায়ায় বাম ডান মধ্য সকলেই আশ্রয় পেয়েছিলো এই জনপদের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে নিশ্চিতভাবেই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধার, আর শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই সে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদকেই। আজকের ভিন্ন বাস্তবতায় হয়তো চুলচেরা সমালোচনা করা সহজ, এই দায়িত্ব পালনে তাজউদ্দীন ঠিক কতোটা সফল হয়েছিলেন কিন্তু এটাতো অনস্বীকার্য -আন্তর্জাতিক, এমনকি নিজ দলীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন, ১৯৭৪ এ শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত । শেখ মুজিবের এ সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না সঠিক সেও আলোচনাসাপেক্ষ -তবে সত্য এই, পদত্যাগে বাধ্য হয়ে ও প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তাজউদ্দীন তার রাজনীতিকে বিদায় জানাননি, ক্ষোভে অন্ধ হয়ে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। রাজনীতির ধ্রুপদ শিক্ষা তাঁর ছিলো, তিনি জানতেন তোষামোদী যেমন একজন রাজনীতিবিদের জন্য অপমানজনক তেমনি দলীয় আনুগত্য, বিশ্বস্ততা, ধৈর্য্য ও তার জন্য অপরিহার্য।
রাজনীতির এই ধ্রুপদী পাঠ যদি তাঁর না থাকতো, আরো অনেক সহকর্মীর মতো তিনি ও যদি নিজের ক্ষোভ আর আহত অভিমানকেই গুরুত্ব দিয়ে সরে যেতেন নিরাপদে, তাহলে আগষ্ট পনেরোর মুজিব হত্যাকান্ডের পর তাকে গ্রেপ্তার হতে হতোনা, তিনমাস পর নিহত হতে হতোনা কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে।
শুধু কি তাজউদ্দীন আহমদ একাই?অন্ততঃ আরো একজনকে স্মরন করা দরকার এই প্রসঙ্গে। মুজিব নিহত সপরিবারে, নিহত জাতীয় নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিশেহারা,জিয়াউর রহমানের সামরিক নৃশংসতায় কর্মীরা যখন কোনঠাসা তখন সব বাধাবিপত্তি ও সামরিক রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার গুরু দায়িত্ব যে কয়জন পালন করেছিলেন- তিনি তাঁদের অন্যতম। জোহরা তাজউদ্দীন।অথচ তিনি স্বামী হারিয়েছিলেন- এই আওয়ামী রাজনীতি, এই মুজিব আনুগত্যের অপরাধে।অভিমান,ক্ষোভ, হতাশা নিশ্চয় তাঁর ও ছিলো কিন্তু দেশ ও দেশের জন্য রাজনীতি ছিলো তার কাছে ব্যক্তিগত অনুভূতির উর্ধ্বে নয়তো পুত্রকন্যাদের নিয়ে নিরাপদ প্রবাসজীবন হয়তো তিনি ও বেছে নিতে পারতেন।
কিন্তু যে ধ্রুপদী রাজনীতির পাঠ তাজউদ্দীন আহমদ- জোহরা তাজউদ্দীনের ছিলো, যে পাঠের শিক্ষায় ব্যক্তিগত অহমকে জয় করে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি তারা- অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে সেই রাজনীতিপাঠ হয়ে উঠেনি তানজিম আহমদ সোহেল (সোহেল তাজ)এর। তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন সেই জুন ২০০৯। তারপর দু একবার এসেছেন, কিন্তু সে আসাই মাত্র,এখানে থাকা নয়।অথচ প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করলে ও তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন তার নির্বাচনী এলাকার, যে এলাকার জনগন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাকে নির্বাচিত করেছিলো জনপ্রতিনিধি হিসেবে। কথিত ‘শেখ সেলিমের হাতে অপমান’, কথিত ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুবিচার না পাওয়া’ যদি সত্যি হয়ও তবু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তার জন্য তার ভোটাররা ছিলো, ছিলো তার কর্মীরা যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাকে নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। এইসব ভোটার, সমর্থক ও কর্মীরা তার কাছে জবাবদিহীতা চাইতেই পারে, যা সুদূর আমেরিকায় বসে টাইপ করা ই-মেইল ধারন করতে পারেনা।
প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের সময়টা যেমন দলীয় সংকটকালীন মুহুর্ত ছিলো, এবার সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগের সময়টা ও তেমনি। একদিকে সুরঞ্জিত সেনের অর্থ কেলেংকারীর দায় অপরদিকে ইলিয়াস আলী ‘গুম’ এর অভিযোগে দল যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখনই তানজীম আহমদ সোহেল (সোহেল তাজ) এর আত্মমর্যাদা রক্ষার কর্মসূচী!
প্রত্যাশিতভাবেই, তার পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধীদলের নেতারা, এমনকি বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত। তার পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা জমেছে বাংলাব্লগোস্ফিয়ারে, ফেসবুকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি প্রশংসিত হয়েছেন এই নোংরা(!) রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবার মর্যাদাপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনে। রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া প্রশংসিত হবার এই আপাত অরাজনৈতিক প্রপঞ্চটি আসলেই কতোটুকু রাজনীতিবহির্ভূত সেটা নিয়ে ভাবার ও সুযোগ রয়েছে বোধ করি।
একজন সোহেল তাজকে তার জনক তাজউদ্দীনের মতো দায়িত্বশীল ও কৌশলী হতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। জনকের অহংটুকুই শুধুমাত্র ধারন করে নোংরা(!) রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবার অধিকার ব্যক্তি সোহেল তাজের অবশ্যই আছে। কিন্তু তার এই সরে যাওয়া কি আরো বৃহত্তর কোন ইঙ্গিতকে প্রনোদিত করে?
এই ‘রাজনীতিবিমুখতার’ রাজনীতির রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চর্চা ও আমরা দেখেছি বিগত সামরিক-সুশীল-কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়ক কালে। আমরা যারা তুচ্ছ নাগরিকেরা আমাদের সকল দুর্দশার জন্য রাজনীতিকে দায়ী করে তৃপ্তি খুঁজি তারাও রাজনীতিবিহীন(!) সেই শাসনামলের ফল ভোগ করে জেনেছি- ‘কিছুই সহজ নহে’।
বোধ করি সোহেল তাজ আমাদের এই ভোগবাদী প্রজন্মকেই প্রতিনিধিত্ব করেন যারা সতি সত্যিই একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি, পরিবর্তনের প্রয়োজনে কেউ কেউ মাঠে ও নামি কিন্তু নিরাপদ বিকল্প হাতে রাখি যাতে টিকতে না পারলে বিপদে পড়তে না হয়। আমরা এখন স্থায়ীভাবে বাস করছি ন্যুইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিসে- আমাদের সন্তানেরা আর এই নোংরা রাজনীতির দেশ ফিরবেনা। আমরা হয়তো সোহেল তাজের চোখে আমাদেরই ছবি দেখি। আমরা সবকিছুর জন্য দলীয় রাজনীতিকে দায়ী করে নির্বান খুঁজি কিন্তু একটা পর্যায়ের পর আর দায়িত্ব নেইনা, আমরা ভুলে যাই যে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হয় ভেতর থেকে, বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে নয়।
নোংরা(!) রাজনীতির ঘাড়ে দায় চাপিয়ে চলে গিয়ে সোহেল তাজ তাই রাজনীতিবিমুখতার’ রাজনীতির নায়ক হয়ে উঠলে ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এদেশের মাটিতেই মিশে থাকেন কেননা এদেশ ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলোনা তার, কাপাসিয়ার মানুষেরা ও কাপাসিয়াতেই থেকে যান কেননা তারা আর কোন বিকল্প গন্তব্য জানেন না।
মানুষের ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়- এই মানুষেরাই একদিন সত্যিকারের পরিবর্তন আনবেন, রাজনীতিকে অস্বীকার করে নয় বরং রাজনীতির ভেতরে থেকে রাজনীতিকে বদলে দিয়ে।
তানজিম আহমদ সোহেল ( সোহেল তাজ) হয়তো সেই পরিবর্তনের দিনে অভিমান ভুলে বাংলাদেশে আসবেন আবার বেড়াতে। ততোদিন ভালো থাকুন তিনি, নিরাপদ থাকুন- আমরা এই বাস্তবতায় যেমনই থাকি। তার জন্য শুভকামনা।
মন্তব্য
এ সংক্রান্ত কথাবার্তা অন্য আরেকটি পোষ্টে মন্তব্য, তর্ক-বিতর্ক আকারে এসেছে।
মন্তব্য, তর্ক-বিতর্কগুলোর সার সংক্ষেপ একসাথে নিয়ে আসার জন্যই এই পোষ্ট। মেটাব্লগিং হলো কিনা নিশ্চিত না। তেমন মনে হলে কেউ আপত্তি জানাতে দ্বিধা করবেননা।
সিদ্বান্ত মডারেটরদের।
ধন্যবাদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমরা কিন্তু শেখ সেলিমকেই স্বাভাবিক ধরে নিচ্ছি, ধরে নিচ্ছি একজন শেখ সেলিম একজন সোহেল তাজকে অপদস্থ করবে এটাই স্বাভাবিক, আবার শেখ হাসিনা এর কোনো প্রতিকার করবে না সেটাই স্বাভাবিক।
পরিবর্তন বাইরে থেকে চাপিয়ে দিলে কাজ হয় না, ভেতর থেকে আসতে হয়, এইটা শেখ হাসিনাকে সবার আগে বুঝতে হবে।
নিঃসন্দেহে। শেখ হাসিনাকে এটা বুঝিয়ে দেয়ার মতো হিম্মত যদি তাজউদ্দীন পুত্রের ও না হয়, সে ও যদি শেখ সেলিমের থাপ্পড় খেয়ে বিচার না পেয়ে সব ছেড়েছুড়ে বনবাসী হয় সেটা দুঃখজনক।
ভালো কিছুর প্রত্যাশাটা তো শেখ সেলিমের কাছে থাকবেনা, থাকবে সোহেল তাজের কাছেই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আসলে সব দোষ তাইলে সোহেল তাজেরই কি বলেন! আবুল হাসানরা দুর্নীতি করে যাবে, শেখ সেলিমরা থাপ্পড় মেরে যাবে, আর প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিকার করবে না! সোহেল তাজ যে কোন দুঃখে রাজনীতিতে আসছিল! আর তাজউদ্দিনকে যখন বঙ্গবন্ধু সরে যেতে বলেছিলেন, তখনও নিশ্চয়ই দোষ তাজউদ্দিনেরই ছিল কি বলেন!
যেটুকু বুঝি সোহেল তাজের ব্যাকগ্রাউন্ড ও সততাই তার প্রতি হাসিনার স্নেহের কারণ। হাসিনা নিশ্চয় শেখ সেলিমা আর সোহেল তাজের পার্থক্য বোঝেন। এই পার্থক্যটা বোঝানোর জন্য পার্টির মধ্যে নিশ্চয় আন্দোলন করতে হবে না। তিনি কেন খড়্গ হস্ত হতে পারেননা লুটেরা চাটার দলের বিরুদ্ধে?
সেই কারণেই হয়ত আওয়ামী লীগ তার ইন্টালেকচুয়াল চরিত্র হারিয়ে কিছু সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ লোকদের দলে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা বংগবন্ধুর চেয়েও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি। এই জঞ্জাল পরিষ্কারের সর্বপ্রধান ও সর্ব প্রথম দায়িত্বটা তারই বর্তায়।
আপনার লেখাটার যুক্তি অবশ্যই গ্রহনযোগ্য। লেখাটা চমৎকার হয়েছে। আশা রাখি ঠিক একই যুক্তি দিয়ে আপনি হাসিনার অতি দীর্ঘ ভুলগুলো আগামী লেখাতে ধরিয়ে দেবেন। বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষেরা শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের কাছেই যান। সোহেল তাজ যেমন আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হন, ঠিক তেমনি আওয়ামীলীগও বার বার আমাদের আশায় গুড়েবালি দিয়ে যায়।
দেশ থেকে আমি নিজেও পলাতক, তাই হয়ত বনবাসে যাওয়া সোহেল তাজকে হিরো মনে হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতলেই সুশাসনের একটা স্বপ্ন দেখি, তাই সেই স্বপ্নভঙ্গের হতাশাটাও হয়ত আকাশে গিয়ে ঠেকে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার ধারণা শেখ হাসিনার মধ্যে একটা আত্মীয়প্রীতি কাজ করে। রক্তের প্রতি অন্ধ অনুরাগ থাকতে পারে, যেটা বেশ কিছু কারণেই অস্বাভাবিক না। যে কারণে তিনি সোহেল তাজকে সমীহ বা সমাদর করলেও হয়তো কেবল শেখ সেলিমদেরকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু আমরা যেটা আশা করছি, সেটার জন্যে এইপ্রকারের টান অনুকূল না।
এ বিষয়ে উইকিলিকসের বরাতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ও অবিশ্বস্ত সঙ্গীরা শিরোনামের এই খবরটি পড়ে দেখতে পারেন। আমি কয়েকটা বাক্য তুলে দিচ্ছিঃ
'বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুটিকয়েক বিশ্বস্ত স্বজন, পারিবারিক বন্ধু এবং দীর্ঘ পরীক্ষিত অনুরক্ত উপদেষ্টাদের ওপর নির্ভর করেন।'
'দলে একটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তুলতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে বাছাই করেছেন। তবে যা-ই হোক না কেন, চূড়ান্তভাবে হাসিনা তাঁর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কের লোকদের ওপর আস্থা রাখেন।'
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কথা মিথ্যা নয়।
ঠিক এইটুকুই আসল কথা আমার কাছে। সবাই বলে "সিস্টেমে সমস্যা, নোংরা রাজনীতি বদলালে আমরা রাজনীতি করব।" সিস্টেমের তৈরি মানুষ না, মানুষের হাতে বানানো সিস্টেম এইটা আমরা ভুলে যাই।
অলস সময়
পলায়নবাদী সোহেল তাজ।
ফেসবুক আর ব্লগে তাকে বিপুলভাবে স্যালুট করা হচ্ছে।
দল বিপদে পড়লে দু'দুবার তিনি হয়ে উঠেছেন বোঝার ওপর শাকের আঁটি।
দল হিশেবে আওয়ামী লীগের অবশ্য এই বাড়তি উপহার নিশ্চয়ই প্রাপ্য।
তবে পিতা তাজউদ্দীনের সঙ্গে সোহেল তাজের কোনো তুলনা না করাই শ্রেয়।
একজন ইতিহাসের নির্মাতা। অন্যজন ইতিহাসের সামগ্রী।
ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ, তোমার সুন্দর লেখাটির জন্যে।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
শেখ হাসিনা কেন বুঝতে পারেন না। এভাবে বুঝতে না পারলে আবার ২০০১ এর মত হবে। তখন ঠিকই বুঝবেন।
সোহেল তাজ এর রাজনীতি থেকে চলে যাওয়া অরাজনীতির পাঠ একটি দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই বলা যায় - যেই দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতির যে নিরন্তর খেলা সমাজ এবং রাষ্ট্র কাঠামোর অংশ - তাকে পরিত্যাগ করে কোন কিছুই অর্জিত হয় না।
তবে রাজনীতির সীমা বা পরিসীমা ঠিক প্রত্যক্ষ রাজনীতির মধ্যে থাকার মধ্যেই বসবাস কওে কিনা এটি একটি প্রশ্ন, যা আমার মনে হয়।
তাজউদ্দিন আহমেদের সাথে বঙ্গবন্ধুর যে সম্পর্ক - শুরু থেকে এর যে শেষ পরিণতি - এই দেশের রাজনীতির আলোচনায় শুধু ততটুকুর মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ কিনা এটিও আমার একটি জিজ্ঞাসা।
নাকি সোহেল তাজ এর অরাজনীতিসুলভ কাজটিই আমাদেও রাজনীতিতে একটি মৌলিক প্রশ্নের আবার উত্থাপন, এটিও আলোচনার বিষয় হতে পাওে বলে আমার মনে হয়।
আওয়ামী লীগ - মুসলিম লীগের যে সমস্ত সামন্ত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য যার জন্মগত উত্তরাধিকার, সেই কাঠামোর মধ্যে আসলে আমরা কতটুকু করতে পারবো - এই প্রশ্নটি সোহেল তাজের রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার মাধ্যমে উঠে আসার অবকাশ আছে বলে আমার ধারণা যেটি রাজনীতির অংশ হতে পারে বলেই আমার ধারণা।
আমরা হয়তো বলতে পারি দেশের এই অবস্থায় তার এই কাজটি করা উচিৎ হয় নি। এটি দেশের রাজনীতির দক্ষিণপন্থী অংশকে শক্তিশালী করবে। যেটি সোহেল তাজ যে আদর্শের কথা বলেন (তার বাবা তাজউদ্দিন আহমেদের) তাকে শক্তিমারী করার যে প্রক্রিয়অ তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
কিন্তু রাজনীকি কি এতই সরলরৈখিক?
তাজউদ্দিন আহমেদের নিরবতা কি আমাদের দেশের জন্য মঙ্গলদায়ক হয়েছিল? এটা কি নিশ্চিত হয়ে বলা যায়? তাজউদ্দিন আহমেদ তখন যদি বঙ্গবন্ধূও বিরোধিতা করতেন তবে এটা যে যা হয়েছে তার চেয়ে মঙ্গলদায়ক হতো না এ কথাও কি বলা যায়?
আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি যেখানে লোভ, ক্ষমতা, বশংবদ হওয়ার প্রবণতা, এবং নেতাদেও সর্বগ্রাসী যে মনোভাব তা যে সবাই নয় এই উদাহরণও কিন্তু পথ দেখাতে পারে। আর যে পথ দেখানো হলো তাও যে একটি সময়ে সবাই গ্রহণ না করলে বা না বুঝতে পারলে যে সেটি ব্যর্থ হয়ে গেল রাজনীতির দীর্ঘ খেলায় সেটি বলা যায় কি?
ব্যক্তিগতভাবে অনেকগুলো দৃষ্টিকোণের সাথে এই দৃষ্টিকোণ থেকেও আমি দেখছি - সোহেল তাজের এই পদত্যাগ আগামী আওয়ামী রাজনীতির (যখন দক্ষিণপন্থীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য পরাজিত হবে) যে মেরুকরণ হবে - তখনকার রাজনীতির একটি উপাদান হিসেবে উঠে আসার একটা সম্ভাবনা আছে, যদিও তার সম্ভাবনা হয়তো কমই। কিন্তু সম্ভাবনা দিয়েতো সবসময় রাজনীতি চলে না। রাজনীতির পেছনে নিজস্ব বিশ্বাস থাকে নিশ্চয়, না হলে নেতৃত্বেও এই বৈচিত্রতা থাকতো না। আমার কাছে এই ঘটনাটিও একটি রাজনীতিরই গল্প যেখানে মুসলীম লীগ, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন, শেখ হাসিনা এবং সোহেল তাজ একই গল্পের চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত ।
তবে অহঙ শব্দটি ব্যবহারে আমার আপত্তি (মাত্রার ব্যাপকতার কারণে) সত্ত্বেও তাজপুত্রের এরকম প্রতিবাদের পেছনে যে পারিবারিক অভিমান কাজ করেছে এ ব্যাপারে আপনার যে বক্তব্য তার সাথে আমি একমত।
কথাগুলো অনেক গুছিয়ে বলেছেন। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটা।
দ্বিমত ত অবশ্যই আছে। সেগুলো ওইখানে বলেছিও। তবে, দ্বিমত সত্ত্বেও, আপনার পুরো চিন্তাটা একসাথে জমিয়েই পড়লাম। আর একটা কথা, এখানে আপনার শব্দ ও বাক্যগুলো অপেক্ষাকৃত সদয়
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা বিষয়ে বলি। একেবারে সাদা চোখেই দেখা যায় আমাদের প্রথম সারির রাজনীতিবিদদের মূল পরিবারের সদস্যদের বেশির ভাগ হয় অন্য কোন দেশের পিআর/গ্রীন কার্ডধারী অথবা পাসপোর্টধারী। এটার জন্য পরিসংখ্যান দরকার নেই, তাদের যে কারো সাথে সাধারণ আলাপচারিতায়ই জানা যায়। খোদ রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই ব্যাপারটা এখনো কম তবে ক্ষমতায় না থাকলে তারা যে লম্বা প্রবাস জীবনে যান তাতে বোঝা যায় অন্য দেশের পিআর বা পাসপোর্ট না থাকাটাও সমস্যা নয়। মানসিকভাবে এরা প্রবাসী হয়ে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের প্রসঙ্গ এইজন্যই টানলাম কারণ আমাদের দেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবগুলোই পরিবারতন্ত্র বা আত্মীয়তন্ত্রের দোষে দুষ্ট। বিদেশ থেকে ধরে এনে এমপি/মন্ত্রী বানানো আর এমপি/মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রায়ই বিদেশ থাকা আমাদেরকে এতো দেখতে হয় যে একটা সময়ে 'বিদেশী ছাপ্পা' থাকাটা না আবার এমপি/মন্ত্রী হবার অঘোষিত পূর্বশর্ত হয়ে যায়।
যারা স্বেচ্ছায় বিদেশে শিকড় পুঁতে ফেলেছেন তাদেরকে আমাদের ব্যাপারে ডেকে আর বিরক্ত না করাই ভালো - তা তার অতীত ইতিহাস বা পরিবারের ইতিহাস যা-ই হোক। দেশ চালনায় দক্ষতা ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির চেয়ে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হাসান ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক গুলো নতুন তথ্য জানলাম আপনার লেখার থেকে। জোহরা তাজের ত্যাগের স্বীকৃতি দল কিভাবে দিয়েছিল, এইটা আমার জানা নাই। যদি জানাতেন খুশি হতাম। আপনি দুইটা ভিন্ন সময়ের ঘটনার সাথে একটা Analogy draw করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটা দেশের ক্রান্তিলগ্নে আর দ্বিতীয় সময়টা দেশ স্বাধীন হবার চল্লিশ বছর পর। দেশের মানুষের চরিত্র, সবগুলা রাজনৈতিক দলের চরিত্র আজ সবার কাছে পরিষ্কার। একটা পরিবার দুই জেনারেশন ধরে দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছে কিন্তু দলের হাইকামান্ড তার কতটুকু মূল্যায়ন করছে, সেটা কিন্তু একটা প্রশ্ন। শেখ হাসিনা এখনও যদি আওয়ামী লীগ কে পৈতৃক সম্পতি মনে করে, আর তার বৃত্ত ভাঙতে না পারে, তাইলে আর কিছু বলার নাই।
Medal of Honour গেমটা খেলার সময় হিরো মারা গেলে একটা Quotation আসতো মাঝে মাঝে, "অন্ধ দেশ প্রেমে কারো ই কিছু লাভ হয়না শুধু তোমার নিজের জীবন যাওয়া ছাড়া।" তো আমারা সবাই হাত গুটায়ে বসে থাকবো, আর অই একটা মানুষকেই সকল দায়িত্ববোধ আর রাজনীতির জটিল পাঠ নিতে হবে- এই হিসাবটা বড় একপেশে লাগে। আপনার সাথে শুধু এই এক জায়গাতে একমত হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
শেখ হাসিনা কেন বুঝেন না বা প্রতিকার করেন না এই প্রশ্নে একটা পূর্ব ধারণা আছে যে শেখ হাসিনা সৎ রাজনীতি চান। বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে যেরকম শক্ত, আদর্শবাদী নেতৃত্ব তার থেকে আশা করা হয় হয়ত তার মানসিকতা বা চিন্তাভাবনা সেরকম নয়। হয়ত আরএক মহিলার মতই তিনিও কেবল ক্ষমতার গদি ধরে রাখাকেই মূল টার্গেট করছেন। যুদ্দপরাধীদের বিচার এবং অন্যান্য সব আয়োজন কেবলই তার হাতের গুটি মাত্র।
তার নেতৃত্বের মাঝে যে কোন মূল্যে সংসারের চাবির গোছা নিজের আচলে রাখার জন্য মরিয়া বৃদ্ধা মহিলার আচরণই বেশি প্রকট।
আওয়ালী লীগ তথা শেখ হাসিনার উপর আমাদের আশা ভরসার অনেক কিছুই কিন্তু এই বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল যে তিনি তার পিতার মতই একজন আত্মত্যাগী, মানুষের তরে নিবেদিত নেতা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এ দেশের ত্যাগী রাজনীতির চুড়ান্ত বাস্তবতা হলো: শ্রদ্ধেয় তাজউদদীন আহমদের মতো নেতার সরকারি সহায়তায় জেলে নি্র্মম ভাবে গুলি খেয়ে মরা- আর সাঁইত্রিশ বছরেও তার বিচারের জন্য বাষ্তবিক কোনো জনউদ্যোগ না থাকা।বাংগালীর সৎ আর ত্যাগী রাজনীতির আশার গুষ্টি কিলাই।
সোহেল তাজের প্রসঙ্গে বার বার কেন তাজউদ্দীনকে টেনে আনা হচ্ছে কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না। আমাদের এই মানসিকতার কারণেই আমরা দেশে এক ধরনের 'রাজতন্ত্র' চালু করে ফেলেছি। আমরা যেন ধরে নিচ্ছি, বড় রাজিনীতিবিদের ছেলেকে বড় বা অন্তত মোটামুটি মাপের রাজনীতিবিদ হতে হবে! কি অদ্ভুত!!
বড় কবির ছেলেকে কি আমরা বড় কবি হবে ভাবি? বিজ্ঞানী? গণিতবিদ? নাট্যকার? সুরকার? ছড়াকার? (দুয়েকটা ব্যতিক্রম আছে হয়তো)
মানুষের মননশীল বৈশিষ্ট্যগুলো জেনেটিক না।
তাজউদ্দীন আহমেদ যদি, রাজনীতিবিদ না হয়ে বড় তাগড়া পালোয়ান হতেন তখন এই আলোচনার অবকাশ ছিলো। কারণ সন্তানরা বাবার শারিরিক বৈশিষ্ট্য পাবে সেটা আসা করা যায়। আমরা বলতে পারতাম, আহা রে, বাপটা এত তাগড়া জোয়ান, ছেলেটা হইসে কাইকলা, দুবলা।
এইসব আলোচনায় ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাপারে আমাদের অনেকে যে ধরনের 'হেরিডিটি'/'বংশগতি' আশা করছে বা তুলনা টানছে, তাদের এই ভ্রান্তি বিবমিষা উৎপাদনকারী। উচ্চ-শিক্ষিত মানুষই যদি এমন করে, তাহলে বাকিদের কী হবে? সবাই তো এই লাইনে চিন্তা করতে করতে, তারেকজিয়া, জয় এদেরকেই যুবরাজ ভেবে বসে থাকবে। আজব। উদ্ভট। অদ্ভুত!
সোহেল তাজের বা অন্য যেকোনো রাজনীতিবিদের 'হার মেনে যাওয়া' বিষয়ক আলোচনায় যেদিন আমরা শুধু তার বাবা তাজউদ্দিনই না, সংঙ্গে সংঙ্গে আর সব মহান রাজনীতিবিদদেরও ঘটনা মিলিয়ে বিশ্লেষণ করতে শিখবো, সেইদিন একটা পরিবর্তনের সূচনা হওয়া সম্ভব হবে। তার আগে না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সোহেল তাজের এই পদক্ষেপ কোনভাবেই ঠিক হয়নি।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
আবার অন্যদিকে এইযে সার্বিক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, মন্ত্রীসভার লাগাতার ব্যার্থতা ও দুর্নিতি, ছাত্র সংগঠনের বিরামহীন অপকর্ম ইত্যাদি ইত্যাদি'র দায় দলীয়প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা'র উপর বর্তায় না কেনো? তাঁর ব্যাপারে সাত খুন মাফ কেন?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
গুরু পরমার্থদেব দুইটা ডিএনএ মিথাইলেশানঘেঁষা কবিতা লইয়া আইলো বইল্যা
এ ব্যাপারে গীতা, মহাভারত বা রবীন্দ্ররচনাবলীতে ব্যাখ্যা থাকার কথা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ইন্টারেস্টিং।
তারেক অণুর http://www.sachalayatan.com/tareqanu/44110 লেখায় গুরুর মন্তব্যগুলা পড়ে দেখতে পারেন রব ভাই।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
সোহেল তাজকে বাহ্বা জানানো পোষ্ট/স্ট্যাটাস খেয়াল করেছিলেন বিভিন্ন ব্লগ/ফেসবুকে?
তাজউদ্দিন পুত্র হিসেবেই সোহেল তাজকে প্রশংসা করে ধ্বনি তোলা হচ্ছে 'বাপকা বেটা' যেনো সোহেল তাজ যা করেছেন সেটা তাজউদ্দীনের করার মতোই। যারা তাজউদ্দিনের রাজনীতি জানেনা, তাদের কাছে তাজউদ্দীনের রাজনীতিকে সোহেল রাজনীতি বলেই বিভ্রান্ত হবার সুযোগ আছে এই সব 'বাপকা বেটা' টাইপের প্রশংসামালায়।
অথচ বাস্তবতা হলো তাজউদ্দীনের রাজনীতি, সোহেল তাজের রাজনীতি ছিলোনা। এটা স্পষ্ট করার জন্যই এই পোষ্টে দুজনের তুলনার দরকার ছিলো। এটা যে আজব কিংবা উদ্ভট নয়- সেটা যুক্তিবাদীরা না বুঝলে কেমনে কী?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শুরুতেই তানজিমকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে হাসিনা কি প্রমান করতে চেয়েছিল বলে আপনার মনে হয়? আর সেলিমকে যদি হাসিনা ধমক দিতই, তাতে কি সেলিম থেমে যেত? 'শেখ ওমুক' রা কবে কার ধমকে থেমে গেছে? তারা তাদের ওজন জানে বলেই আমার মনে হয়।
আপনি বললেন " এতোবছর ধরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জন্য এতো প্রয়োজনীয়"। এই প্রয়োজনটি আমার মনে হয় মৌচাকে মক্ষীরানির প্রয়োজনিয়তার মত, যেখানে রানি মরলে চাক ভেংগে যায়, তাই একজন উরবর মক্ষীরানিকে সবসময়ই চাকে ধরে রাখতে হয়। 'শেখ ওমুক' এরা সে নিরিখে জানে যে হাসিনার প্রাক্রিতিক জীবনাবসানের পরেও আওয়ামি লীগের হাল অন্তত জনসম্মুখে ধ্রুপদ কিংবা পপ, যেকোন ধরনের রাজনীতিতে নভিস হওয়া সত্তেও জয়-পুতুলের যেকোন একজনের হাতে রাখতেই হবে, তা নইলে দল ও তার চাইতেও জরুরী ভোটররাও বিভিন্ন 'শেখ অমুক' এর ভীড়ে বিভ্রান্ত হবে এবং চাক ভেংগে যাবে। দুরপাল্লায় দেশের জন্য় ভালোর জনয় এই চাক ভাংগা জরুরি, কিন্তু সেই সাময়িক বিভ্রান্তিতে নেপো দই মেরে (আদতে আড়ালের নেপো প্রকাশ্য়ে আসা) দেবার ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়া যায়না।
আর জয়-পুতুলের 'শেখ অমুক' ব্রান্ডিং ধারনের এর জন্য় আজকের 'শেখ অমুকদের' এন্ডোরসমেন্টের প্রয়োজন হবে। আমাদের দেশে সচরাচর নানার পদবি নাতি/নাতনিদের নামের গোড়ায় বসেনা, আবার আর শেখ ব্রান্ডিং বিক্রী বয়াতিরেকে মুজিবুর রহমানের বেঁচে থাকা আত্মীয়সজনের আর কোন জীবিকা নেই। চাক ভেংগে গেলে পেটে পাথর বেঁধে থাকতে হবে। তাই অন্তত 'শেখ ব্রয়ান্ড' কে জীবিত রাখতেই হবে।
আমি নিশ্চিত নই যে 'তাজুদ্দিন' ব্রয়ান্ড কোনদিনও শেখ ব্রান্ডের প্রতিযোগি ছিলকিনা। অন্তত ভোটের বাজারের যে 'তাজুদ্দিন ব্রান্ড' মূলত শেখের ব্রয়ান্ডের গরমেই বিক্রী হয়, সেটা নিশ্চিত। কিন্তু আপনিও জানেন যে আওয়ামি লীগের ভেতরে ও বাইরে তাজুদ্দিন ব্রান্ডের কিছু অনুসারি আছে, এবং ভাংগা চাক পরিস্থিতিতে 'তাজুদ্দিন ব্রান্ড' নিজস্ব উত্তাপেই, মানে জাতীর পিতার বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক, হিসাবে এর বিক্রয় প্রসার হবার সম্ভাবনা তৈরী হয়। সেখানে তানজিমের অযোগ্য়তার চাইতে 'সোহেল তাজ' এর মুক্তিযুদ্ধের মানসপুত্র রূপের একটি গ্রহনযোগ্য়তা পেতে পারে। ভাংগা চাকের একটি অংশের এরকম আমদানি করা নিরেট মালকে ক্ষমতারযোগ্য় করে তোলার অভিগ্গতা থাকবে বলেই মনে হয়। আওয়ামি লীগের কিছু শুভানুধ্য়ইয়ী তাজুদ্দিনের আগুন তানজিমের ভেতরে কোনদিন আশা করেনি। আশা করার কোন কারন তানজিম নিজেই কোনদিন দেয়নি। একই লোকেরা কিন্তু হাসিনার মধ্য়েও মুজিবের আগুন আশা করেছে ও স্মিতহাস্য়ে নিরাশা ঢেকেছে। আজকে যখন কেউ কেউ জয়ের মধ্য়ে মুজিবের প্রতিফলন দেখতে পায়্, সেইসব শুভানুধ্য়ইয়ীরা অট্টহাসি আটকে রাখতে পারেনা।
আজকে তানজিম সিরাজুদ্দউলা হয়েছে কারন 'শেখ অমুক' রা এতে খুশি, কালকে যদি জয় 'শেখ অমুকদের' খুশি করতে না পারে, তাহলে সে হবে হ্য়ামলেট।
আচ্ছা এভাবে ভাবা যায় কিনা? ধরেন সোহেল তাজ যখন প্রথমবার নির্বাচত হয়ে ছিল, আওয়ামিলীগ ছিল বিরোধী দলে। তাই সরকারে গিয়ে অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু সে যে আসলে একটা ডামি এটা সে বুঝতে পারেছে। আর শেখ হাসিনা, নিজেও সৎ না। ৮৬ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পেছেনে মৌদুদের বলা ২০০ কোটি টাকা ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন যৌক্তিক কারন পাইনি। এছাড়া নিজের অর্থ কেলেংকারির মামলা গুলি গায়ের জোরে বন্ধ করেছে সে। নমিনেশন বিক্রি ওপেন সিক্রেট। ভিওয়াইপি বিজনেসে টাকার ঝর্নার পানিতে সেও নিত্য গোসল করে।এই গড মাতার কাছে প্রতিকার পাবার কিছি না। অন্তত সোহেল তাজের। ফ্রোর ক্রসিং নাই তাই সংসদ সদস্য থাকা আর হ্যা, না বলার মধ্যে দায়িত্ত্ব পালনে রুচি হারান বিচিত্র না।
তাজুদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল আর সোহেল তাজ নিজেই পদত্যাগ করেছে। তাজউদ্দিনের অনুগত্য ফাইনালি রক্ষা করতে পারেনি কিছুই। সোহেল তাজের বিদ্রোহ ওটার চেয়ে ভাল
আমরা যারা রাজনীতির মারপ্যাচ বুঝি না, জনগণ, তারা সোহেল তাজের বিদায়ে আসলেই দু:খ পেয়েছি। যাবার আগে তিনি মুখ খুললেন না। প্রথম আলো-তে ভাববাচ্যে কী যে বলে গেলেন কিছুই বুঝলাম না। আসল কারণ জানা গেলো না।
তাতে দেশ ও দলের দীর্ঘমেয়াদে কী উপকার হয়েছিল তা বোধগম্য নয়। বাক্যের শেষ অংশ দিয়ে কী ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে পদত্যাগের মাধ্যমে তানজিম আহমদ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন?বেসামাল অর্থনীতির কারনে অর্থমন্ত্রিকে পদত্যাগ করানোকে (যেটা রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন দেশ আর সময়ে) ব্যক্তিগতভাবে অপমান করার সঙ্গে এক মাপকাঠিতে দেখা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না।যদিও ধরে নেই তানজিম আহমদের পদত্যাগ প্রকারান্তে শেখ হাসিনার ‘বিরুদ্ধে অবস্থান’ নেয়া, তাতেইবা দোষটা কী? আমরা কী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারীনি দেখতে চাই যার ‘বিরুদ্ধে অবস্থান’ নেয়া সুনজরে দেখা হবে না। মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কান্ডের পর স্বয়ং শেখ হাসিনা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেননি, প্রথম জনকে দপ্তর বদল আর দ্বিতীয় জনকে দপ্তর বিহীন করা হয়েছে মাত্র পদত্যাগের/পদচুত্যির প্রবল জনদাবী সত্বেও। কী আশ্চর্য, তার পরিবর্তে সমালচনা করা হচ্ছে তানজিম আহমদের দলের সংকটের সময় বংশ-অনুগত্য না দেখানোর জন্য, অপমানের বিচার চাইবার জন্য। আরো অনেককিছুর সঙ্গে শেখ হসিনার প্রতি এই অন্ধপ্রীতির দ্রুত ত্যাগও দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করি।নতুবা শীঘ্রই আমরা একই ভুমিকায় ‘শেখ জয়’কে দেখবো।
তাজ কতোদিন আমেরিকাতে আছে জানি না। যত দূর জানলাম অনেক দিন হবে। কেউ বলবেন কি উনি কি দুই দেশেরই নাগরিক না সলিড বাংলাদেশী। আর আমেরিকার নাগরিক যদি হন, তাইলে এমপি-মন্ত্রী হইলেন ক্যেমনে?
এখানে তাসনীম ভাই বলেছেন, 'যতদূর জানি সোহেল তাজ গ্রিনকার্ডধারী।'
No attention to resignation শিরোনামের এই খবরটিতে সোহেল তাজের বরাতে একটি বাক্য আছে এমনঃ
He claimed his passport has not been allowed to change by the government and he has to face embarrassment every time he travels.
এ থেকে মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশি বিশেষ পাসপোর্টটি ব্যবহার করছেন।
চমৎকার লেগেছে লেখাটা।
ভালো থাকুন, আরও লিখুন।
ঐ পোস্টে বহুবার বলেছি আবারো বলছিঃ উনার পদত্যাগ করা উচিৎ হয় নি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে পলাতক হলে চলবে না, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে; তবেই না কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে।
লেখাটি চমৎকার লাগলো ভাইয়া।
_____________________
Give Her Freedom!
জনপ্রিয়তার লোভে আমাদের ক্লীব বুদ্ধিজীবিদের মতো তথাকথিত 'নিরপেক্ষতা' ভং করেননা বলে হাসান মোরশেদের লেখা ভালো পাই। যতোদিন কার্যকর বিকল্প গড়ে উঠছেনা ততোদিন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী রাখা দরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে। না হলে ২০০১-২০০৬ সালের বিভীষিকা ফেরত আসিবে আবার।
সহজ বাংলা হল: কোন দলেই গণত্ন্ত্র নেই, হাসিনা খালেদার কথামত তাদের দল চলে।
দুর্দান্তদা'র বিশ্লেষণ ভাল লেগেছে। লেখকের লেখাও ভাল লেগেছে তবে আমার যা মনে হয়েছে সরাসরি বলছি, "পোস্টটা নিরপেক্ষ মনে হয়নি, মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি করে দিয়ে তাজ সাহেব পলিয়েছেন। সত্য করে বলুন, সুরঞ্জিত কেলেংকারি বা ইলিয়াসের ঘটনার এই সময়ে তাজ থাকলে কিই বা করতেন? অ্যানালাইসিসের জন্য আরেকটু নিউট্রাল ভিউপয়েন্টে যাওয়া দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়েছে"
তাজ সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করার জন্য পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন, কাজেই কাপাসিয়াবাসীরাও নতুন এমপি পেয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ।
কাপাসিয়া বাসিরা নোতুন এম পি পেয়ে যাবেন সন্দেহ নাই আর সেই এম্ পি হান্নান শাহ।
নতুন মন্তব্য করুন