সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফলঃ আসছে দিনের হিসেব-নিকেশ

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ১৯/০৬/২০১৩ - ৪:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুরুতেই সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ভিত্তিক কিছু তথ্য দেখা যাকঃ

বরিশাল বিভাগঃ
মোট ভোটার ২,১১,২৫৭। ভোট প্রদত্ত হয়েছে ১,৫০,৪৯২। ভোট প্রদানের হার ৭১% । ভোট প্রদান করেন নি ২৯% ভোটার।
প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৬% , বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার ৪৪%।
আবার মোট ভোটের বিপরীতে জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০%, বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার প্রায় ৩২% ।

খুলনা বিভাগঃ
মোট ভোটার ৪,৪০,৫৬৬। ভোট প্রদত্ত হয়েছে ২,৯৯,৫১৫। ভোট প্রদানের হার ৬৮% । ভোট প্রদান করেন নি ৩২% ভোটার।
প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৬০% , বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার ৪০%।
আবার মোট ভোটের বিপরীতে জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১%, বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার প্রায় ২৮% ।

রাজশাহী বিভাগঃ
মোট ভোটার ২,৮৬,৯১৭। ভোট প্রদত্ত হয়েছে ২,১৪,৭৮৪। ভোট প্রদানের হার (প্রায়)৭৫% । ভোট প্রদান করেন নি প্রায় ২৫% ভোটার।
প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৬১% , বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার ৩৯%।
আবার মোট ভোটের বিপরীতে জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৬%, বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার প্রায় ৩০%।

সিলেট বিভাগঃ
মোট ভোটার ২,৯১,০৪৬। ভোট প্রদত্ত হয়েছে ১,০৭৩৩০। ভোট প্রদানের হার ৬২% । ভোট প্রদান করেন নি ৩৮% ভোটার।
প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৬০% , বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার ৪০%।
আবার মোট ভোটের বিপরীতে জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৭%, বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার প্রায় ২৫% ।
--------------------------------------------------------------

এবার আসা যাক কিছু আলোচনায়।
যদি আমার ভুল না হয় বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও অন্য কয়েকটি প্রসংগ বিবেচনায় এই চার বিভাগের মধ্যে আওয়ামী লীগের অবস্থান সিলেট ও খুলনাতে সবচেয়ে ভালো, রাজশাহীতে তেমন ভালো নয় এবং বরিশালে সবচেয়ে খারাপ।

মোট ভোটের বিপরীতে ‘জয়ী বিএনপি’ ও ‘পরাজিত আওয়ামী লীগের’ প্রার্থীদের ব্যবধান যথাক্রমে বরিশালে ৮%, রাজশাহীতে ১৬%, খুলনায় প্রায় ১৪% এবং সিলেটে ১২%। দেখা যাচ্ছে- ‘সবচেয়ে খারাপ’ অবস্থানের বরিশালেই বরং আওয়ামী প্রার্থী তুলনামুলকভাবে ভালো ফলাফল করেছেন অন্য তিনজনের চেয়ে।
যতোটুকু জানতে পেরেছি, বরিশালের মেয়র হিরন বিগত পাঁচবছরে অনেক কাজ করেছেন। তাকে ভোট দেননি এমন অনেকে ও স্বীকার করছেন তার উন্নয়ন কার্যক্রম। এবার তুলনা করা যেতে পারে বরিশালের মেয়র হিরন এবং সিলেটের মেয়র বদরুদ্দীন কামরানের মধ্যে।
সিলেট সিটী কর্পোরেশনের একজন নাগরিক হিসেবে এই স্বীকারোক্তি দিতে কোন দ্বিধা নেই- উন্নয়ন কার্যক্রমে বদরুদ্দীন কামরানের স্কোর ০। কামরান পেয়েছেন সিলেটে প্রদত্ত ভোটের ৪০%। এই ৪০% এর পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনায়, উন্নয়ন বিবেচনায় তার কোন ভোট পাওয়ার কথা নয়। উন্নয়ন ফ্যাক্টরকে যদি আমরা সরিয়ে রাখি- তাহলে সিলেটে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভোট ৪০% পেলে, বরিশালে ৩০% এর বেশী পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বরিশালে হিরন পেয়েছেন প্রায় ৪৫% ভোট। তাহলে কী এই ১৫% ভোট হিরনের উন্নয়ন কার্যক্রমের ফল? দেখা যাচ্ছে বরিশালে ভোট প্রদান করেননি প্রায় ২৯% ভোটার।
বিএনপির প্রার্থীদের ভোট ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব ছিলো এবার জামাত-শিবির এবং তারা তাদের নিজস্ব স্টাইলে এক্ষেত্রে ভালো পেশাদারিত্বের নমুনা রেখেছে। বরিশাল সহ বাকী নগরীগুলোতে বিএনপি প্রার্থিরা যে ভোট পেয়েছেন, ধরে নেয়া যায় এগুলোই তাদের সম্ভাব্য ভোটের সর্ব্বোচ্চ। সে ক্ষেত্রে ভোট দানে বিরত থাকা ভোটারদের বড় অংশ আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ভোটার বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। ভোট না দেয়া ২৯% ভোটারের মধ্যে যদি ১৫-২০% ভোটারকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারতো তাহলে হয়তো বরিশালে ফলাফল অন্যরকম হওয়া অসম্ভব ছিলোনা।

এবার আসা যাক সিলেট প্রসঙ্গে।
চারনগরীর মধ্যে সিলেটে ভোট প্রদানের হার সবচেয়ে কম, ৬২% । ৩৮% ভোটার ভোট দানে আগ্রহী হননি। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বদরুদ্দীন কামরান দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করেননি। উন্নয়নের ফল হিসেবে তার কোন ভোট পাওয়ার কথা নয়। তবু তিনি প্রদত্ত ভোটের ৪০% পেয়েছেন। যদি বরিশালের মেয়রের মতো কিছু কাজ করে ১০% ভোট বাড়াতে পারতেন আর ভোট কেন্দ্রে না আসা ৩৮% ভোটারের ১৫% ও নিয়ে আসতে পারতেন তাহলে তার পরাজিত হবার কোন যৌক্তিক কারন ছিলোনা।

প্রচলিত মিডিয়াগুলোতে একটা প্রচারনা চলছে- সিটি নির্বাচনের ফলাফলে ফেব্রুয়ারী থেকে চলমান জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে। জামাত এবং বিশেষতঃ হেফাজতের প্রতি ভোটাররা সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছেন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে ও এটি বিরাট প্রভাব ফেলবে।
এমনকি অনলাইনে একটিভ আওয়ামী লীগ কর্মীদের কেউ কেউ এই ফলাফলের জন্য ফেব্রুয়ারীতে সৃষ্ট গনজাগরন মঞ্চকে ও দোষারোপ করছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে গনজাগরনের কারনেই হেফাজতের জন্ম এবং হেফাজতের কারনেই আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী পরাজয়।

কিন্তু নির্বাচনী তথ্য থেকে এরকম কোন সিদ্ধান্তে আসা যৌক্তিক নয়। দেখা যাচ্ছে- মোট ভোটের বিপরীতে বরিশালে বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০%, সিলেটে ৩৭%। খুলনা ও রাজশাহীতে ৪১% ও ৪৬%। এমনিতেই বাংলাদেশের মোট ভোটার সংখ্যায় বিএনপি জোটের অংশ ৩৫-৪০%।
সুতরাং বিএনপি জোটের ভোট অনেক বেড়ে গেছে- তথ্য তা প্রমান করেনা।

বরং তথ্য থেকে এরকম অনুসিদ্ধান্তে আসা যায় ভোটারদের একটা বড় অংশ ( গড়ে ৩০%) আওয়ামী লীগ থেকে সরে গেছে কিন্তু তারা বিএনপির প্রতি ঝুঁকে পড়েনি। এই বিশাল সংখ্যক ভোটার ভোট প্রদানে বিরত থেকেছেন। সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা তুলনামুলক ভাবে সচেতন। তাই এই ভোটারদের অনুপস্থিতিকে স্বেচ্ছা সিদ্ধান্ত বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

এবারের নির্বাচনে ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনায়’ আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি জোট ( মুলত জামাত শিবিরের কল্যানে) অনেক দক্ষ ছিলো, ফলে তারা তাদের পক্ষের সর্ব্বোচ্চ ভোট নিশ্চিত করতে পেরেছে। যারা ভোট প্রদানে বিরত ছিলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ হয়তো আওয়ামী লীগকেই ভোট দিতেন কিন্তু প্রত্যেক নগরীর নিজস্ব ইস্যুতে তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দানে বিরত ছিলেন। সিলেটের ক্ষেত্রে এই ইস্যু ছিলো উন্নয়নহীনতা, জামাত সংশ্লিষ্টতা, দলীয় নেতাকর্মীদের নিস্ক্রিয়তা ইত্যাদি। বরিশালের ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল, খুলনা রাজশাহীর ক্ষেত্রে অন্য কিছু- আমি নিশ্চিত না।
এই ‘অভিমানী’ ভোটার সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিলেও জাতীয় নির্বাচনে যে ভোট দিবেন না সেটা নিশ্চিত করা যায়না। বদরুদ্দীন কামরানকে আনারস প্রতীকে ভোট না দিলে ও জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে অনেক ‘অভিমানী’ ভোটারই অভিমান ভাঙ্গবেন।

কিন্তু এর পুরোটাই আসলে নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ তার এই পরাজয়কে কিভাবে দেখছে। যে ৩০% ভোটার ভোট দিতে আসেননি, পরাজয়ের জন্য তাদেরকে দোষারোপ করে আওয়ামী লীগ নিজের বৃহত্তর পরাজয় নিশ্চিত করবে নাকি ভোটারদের না আসার কারনগুলোকে যাচাই বাছাই করে ভোটারদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখবে।
আওয়ামী লীগকে অবশ্যই বুঝতে হবে দিনকাল পাল্টাচ্ছে। কেউ এখন আর কোন কিছুর জন্য বাধ্য না। আরিফুল হক চৌধুরী সন্ত্রাসী, গড ফাদার- এটা বিএনপি জামাতের লোকজন ও জানে। তবু বৃহত্তর স্বার্থে তাকেই জিতিয়ে আনতে মরীয়া চেষ্টা করতে তারা দ্বিধা করেনি। বদরুদ্দীন কামরান কোন কাজ করেনি, বদরুদ্দীন কামরান জামাতের প্রতি নমনীয় তবু তাকে পাশ করাতেই হবে- বৃহত্তর স্বার্থে, এই পয়েন্টে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটারদের কনভিন্স করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

নির্বাচনী ফলাফলে অগোছালো না হয়ে আওয়ামী লীগের এখন মনোযোগ দেয়া উচিত দক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাপনায়।


মন্তব্য

রাহী এর ছবি

যারা ভোট দেননি তাদের একটি বড় অংশ ১৫-২০ আওয়ামীলীগের ভোটার, এই ধরে নেয়া টা কীভাবে যুক্তিযুক্ত হয় বুঝতে পারছিনা। সাধারনত এধরনের লোকাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোট না দিতে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে, যেমনঃ কাজের কারনে, পড়ালেখার কারনে বা অন্য কোন কারনে বাইরে অবস্থান, ভোট দিতে উৎসাহিত বোধ না করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আপনি ধরেই নিয়েছেন যারা ভোট দিতে যায়নি তারা আওয়ামীলীগের উপর "অভিমান" করে যায়নি - মানতে পারলাম না।

বরিশাল এ আওয়ামীলীগ দুর্বল সবসময়ইঃ হিরন সেখানে মেয়র হয়েছিলেন, অনেক উন্নতিও করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নাই, তার জনপ্রিয়তাও ভালো। তবুও তিনি হেরে গেলেন। এটা কিন্তু নির্দেশ করে দল হিসেবে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমেছে। যার ফলে হিরন এর মত সফল মেয়রকেও হারতে হল।

আর ভোট ম্যানেজমেন্ট সরকারী দল সবসময়ই খারাপই করেঃ এটা তাদের অপঃআত্মতৃপ্তির ফল!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সাধারনত এধরনের লোকাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোট না দিতে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে, যেমনঃ কাজের কারনে, পড়ালেখার কারনে বা অন্য কোন কারনে বাইরে অবস্থান, ভোট দিতে উৎসাহিত বোধ না করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

পাঁচ বছর আগে ২০০৮ এ সামরিক তত্বাবধায়ক সময়ের অবরুদ্ধ পরিবেশে ও সিলেটে সিটি কর্পোরশনে প্রদত্ত ভোটের পরিমান ছিলো ৭৮%। এবার ৬২%। গত নির্বাচনের চেয়ে ১৬% কম। একটা সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে কেবল মাত্র 'কাজের কারনে, পড়ালেখার কারনে বা অন্য কোন কারনে বাইরে অবস্থান' এর জন্য ভোট ১৬% কমে যায়না। আপনি যেটা বলেছেন ' ভোট দিতে উৎসাহ বোধ না করা' এটাকেই আমি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছি। একটা উল্লেখযোগ্য পরিমান কেনো উৎসাহ বোধ করছেনা? আপনি বিষয়টা যতটা স্বাভাবিক ভাবছেন- আমি পারছিনা।

আর আপনি ধরেই নিয়েছেন যারা ভোট দিতে যায়নি তারা আওয়ামীলীগের উপর "অভিমান" করে যায়নি - মানতে পারলাম না।

উপরে উল্লেখ করেছি, জামাতের পরিচালনায় চালিত বিএনপি জোট তাদের পক্ষের ভোটারদের সর্ব্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে তুলনায় আওয়ামী জোটের এই কার্যক্রম ছিলো পিছিয়ে। বিএনপি জোট তাদের সম্ভাব্য ভোটারদেরকে চুড়ান্ত ভোটারে পরিনত করেছে যে হারে, আওয়ামী জোট তাদের সম্ভাব্য ভোটারদেরকে সেই হারে চুড়ান্ত ভোটার হিসেবে কেন্দ্রে উপস্থিত করতে পারেনি। কেনো? সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
খেয়াল করতে পারেন- সাধারন অবস্থায় আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো এমন দুই জায়গা সিলেট ও খুলনায় কাস্টেড ভোট এর চেয়ে বরিশাল ও রাজশাহীতে কাস্টেড ভোট বেশী যেখানে জামাত, বিএনপির কার্যক্রম বেশী।

এটা কিন্তু নির্দেশ করে দল হিসেবে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমেছে।

আমি তো তাই বললাম। হিরনের যদি ব্যক্তিগত অর্জন না থাকতো তাহলে ফলাফল বরিশালে আরো খারাপ হতে পারতো।

আর ভোট ম্যানেজমেন্ট সরকারী দল সবসময়ই খারাপই করেঃ এটা তাদের অপঃআত্মতৃপ্তির ফল!

সরকারী দল হলেই ভোট ম্যানেজমেন্টে ভালো করা যাবেনা- এরকম কোন বিধান নেই।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাহী এর ছবি

সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।

একটা সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে কেবল মাত্র 'কাজের কারনে, পড়ালেখার কারনে বা অন্য কোন কারনে বাইরে অবস্থান' এর জন্য ভোট ১৬% কমে যায়না।

এটা আমিও জানি। এবং এটাও জানি অভিমানের কারনেো এটা হয়না। আমাদের দেশে দোদুল্যমান অবস্থায় সব সময় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ভোটার থাকে। এরা বেশ বড় একটা ফ্যাক্টর। আমার মনে হয় এদের কিছু অংশই এইবার আওয়ামীলীগের বিপক্ষে গেছে, উপায়ন্তর না দেখে বিএনপি কে ভোট দিয়েছে।

সরকারী দল হলেই ভোট ম্যানেজমেন্টে ভালো করা যাবেনা- এরকম কোন বিধান নেই।

আমিও বলিনি এটা কোন বিধান, এটা আত্মতৃপ্তির ফল।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সিসিক এ ৩৮% অনুপস্থিত ভোটারদের পুরোটা আপনার কথিত 'দোদুল্যমান' ভোটার ছিলোনা। মাঠের পরিস্থিতি জেনেই বলছি।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কাজি মামুন এর ছবি

এটা কিন্তু নির্দেশ করে দল হিসেবে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমেছে। যার ফলে হিরন এর মত সফল মেয়রকেও হারতে হল।

আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন, হিরন বিগত নির্বাচনে চার সিটির মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জিতেছিল, সেই এবার সবচেয়ে কম ব্যবধানে হেরেছে মূলত ঐ এলাকায় আ'লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণেই। দেখুন, অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর, উগ্র ধর্মীয় প্রচারণা, জাতীয় পর্যায়ে আ'লীগ সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা প্রভৃতি কারণে হিরনের তো চিহ্ন থাকার কথা ছিল না। কিন্তু সেই সবচেয়ে বেশী ফাইট করেছে, আর তা সম্ভব হয়েছে বরিশাল এলাকার উন্নয়নের কারণে। যখন আ'লীগ প্রার্থী সবচেয়ে খারাপ করে, তখন তার জন্য কি আপনি আ'লীগ সরকারকে দায়ী করেন না? তাহলে আ'লীগ প্রার্থী অপেক্ষাকৃত ভাল করলে, তার কিছু কৃতিত্ব আ'লীগ সরকারকে দিতে বাঁধা কোথায়? বরিশালের নির্বাচন ফলের সবচেয়ে বড় শিক্ষা: উন্নয়ন বা প্রতিশ্রুতি পূরণ ব্যাপক বিধ্বংসী উগ্র ধর্মীয় প্রচারণাকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, আ'লীগ এই শিক্ষা গ্রহণ করবে কি? মজার ব্যাপার হল, আ'লীগের শিক্ষা নেয়ার মত সময়ও আর হাতে নেই। সে অর্থে, বিপর্যয় মনে হয় অবশ্যম্ভাবী।

রাহী এর ছবি

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

যুক্তিপূর্ন মূল্যায়ন। দুটি কারনে কোন একটি দলের সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রে যান না, এক-তিনি যদি মনে করেন তার প্রার্থী এমনিতেই জিতে যাবেন, দুই-তিনি যদি মনে করেন তাঁর প্রার্থী কোনক্রমেই জিততে পারবেন না। কোন স্থানে যদি কোন প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার দৃশ্যমান হয়, সে ক্ষেত্রে সেই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর পক্ষে ভোট কম ভোট পড়ে। এবারে এরকম অবস্থা কোন স্থানেই ছিল না, তবুও আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোটারেরা অপেক্ষাকৃত কম হারে ভোটকেন্দ্র গিয়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গড় ভোট কাষ্টের চেয়ে কম ভোট কাষ্টের এটাই বোধ হয় কারন।

আব্দুল্লাহ এ এম

রাহী এর ছবি

ভালো বলেছেন চলুক

Zahir Raihan এর ছবি

রাহী চলুক

রাহী এর ছবি

ধন্যবাদ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সফিক এর ছবি

প্রথমে নিজেই হিসেবে দেখালেন যে প্রদত্ত ভোটের হিসেবে, বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট বরিশালে ৫৬%, সিলেটে ৬০% . ফের আবার ভেতরে লিখলেন প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে বরিশালে বিএনপি'র প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০%, সিলেটে ৩৭%. এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিলেন বিএনপি'র মোট ভোট ব্যাংক ৩৫-৪০%. আপনার পুরো অনুসিদ্ধান্তই দাড়িয়ে আছে এই গুলিয়ে ফেলা ভোটের হিসেবের উপরে।

বোধহয় মোট ভোট আর প্রদত্ত ভোটের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন। দুনিয়ার কোথাও মোট ভোটারের ভিত্তিতে ভোট ব্যাংকের হিসাব হয় না, প্রদত্ত ভোটের হিসেবেই হয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

উঁহু, গুলানো হয়নি। ভেতরে ভুলবশতঃ একবার 'মোট' কে 'প্রদত্ত' লেখা হয়েছিলো। এখন সংশোধিত।

তথ্য বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবেনা- দুনিয়ার কোথাও এমন কোন নিয়ম বেঁধে দেয়া নেই। এই নির্বাচনে আমার কাছে 'অনুপস্থিত ভোটার' এর সংখ্যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সে কারনে প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে এবং মোট ভোটের বিপরীতে আলাদাভাবে দুটি বিশ্লেষন করেছি।
'অনুপস্থিত ভোটার' এর পরিমান থেকে একটা অংশকে উপস্থিত করানো গেলে ফলাফল কী হতে পারতো সেটা অনুমানের জন্যই এখানে মোট ভোটারকে বিবেচনায় আনা।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরাফাত এর ছবি

চলুক

রাহী এর ছবি

তথ্য বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবেনা- দুনিয়ার কোথাও এমন কোন নিয়ম বেঁধে দেয়া নেই।

তথ্য বিশ্লেষণ যার যেমন ইচ্ছে করলেই হবে ?
২০১১ আদমশুমারি মতে এখন বরিশালে সিটি তে এখন ১৮ বা তার চেয়ে বেশী বয়সের জনসংখ্যা হওয়ার কথা ২৩১৪৩৬ জন, কিন্তু আপনার লেখায় দেখছি ভোটার আছেন ২১১২৫৭ জন। হয়তো এই ২০১৭৯ জন "অভিমান" করে ভোটার হননি। এরা যদি ভোটার হতেন তাহলে মোট ভোটারের সাপেক্ষে এখানে বিএনপি পেয়েছে ৩৬ শতাংশ এবং আওয়ামীলীগ পেয়েছে ২৯ শতাংশ ভোট।

নিয়ম না মানলে এমন হাজারো বিশ্লেষণ করা যাবে, লাভ হবে না।

রাহী এর ছবি

চরম ভুলে ভরা এরকম লেখা সচলায়তনে প্রকাশের যোগ্যতা রাখে কি?

উদাহারনঃ প্রথম প্যাড়ায় লেখক বলেছেনঃ

বরিশালে ----- প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৬%

আবার নবম প্যাড়ায় বলেছেনঃ

প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে বরিশালে বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০%

পুরাই ফালতামি ! কস্কি মমিন!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এর উত্তর প্রথম প্যারাতেই আছে।

বরিশাল বিভাগঃ
মোট ভোটার ২,১১,২৫৭। ভোট প্রদত্ত হয়েছে ১,৫০,৪৯২। ভোট প্রদানের হার ৭১% । ভোট প্রদান করেন নি ২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে, জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৬% , বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার ৪৪%। আবার মোট ভোটের বিপরীতে জয়ী বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৪০%, বিজিত আওয়ামী প্রার্থীর ভোটের হার প্রায় ৩২% ।

দ্বিতীয় হিসাবটি মোট ভোটের উপর, কাস্ট করা ভোটের উপর নয়।

"প্যাড়া" কি জিনিস?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এক রকম মিষ্টি দেঁতো হাসি
[পাবনা আসেন, খাওয়ামুনে...]

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ভুল দেখালেন একটা আর সিদ্ধান্ত দিলেন 'চরম ভুলে ভরা'

'ফালতামী' কী জিনিস?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

guest writer এর ছবি

" ফালতামি " জিনিসটা কি ? এটা কি খায় না মাথায় দেয় ?

কাজি মামুন এর ছবি

চরম ভুলে ভরা এরকম লেখা সচলায়তনে প্রকাশের যোগ্যতা রাখে কি?

আবার অনেকের মনে এমন প্রশ্নও জাগতে পারে, এমন ভুলে ভরা, অশালীন ও অমার্জিত একটি মন্তব্য সচলের মন্তব্যের মাঠে জায়গা পেতে পারে কি?

কাজি মামুন এর ছবি

কয়েকটি কথা মানতে পারছি না, হাসান ভাই। যেমনঃ
১। অভিমানি ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনে অভিমান ভুলে দলীয় প্রার্থীর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে, তার স্বপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি কই?
২।সন্ত্রাসী, গডফাদারকে বিএনপি-জামাত জেনেশুনেই বৃহত্তর স্বার্থে জিতিয়ে আনলে, আ'লীগ সরকারকেও একই পথে হাঁটতে হবে, তার নৈতিক প্রেক্ষাপট কি? বা আ'লীগ যদিও উগ্র দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করে অযোগ্যদের জিতিয়ে আনার মিশন নেয়, সিভিল সমাজ তাকে কেন সমর্থন জানাবে? কোন যুক্তিতে?
৩।আ'লীগের আসলে কি করা উচিত? দক্ষ নির্বাচনি ব্যাবস্থাপনা? নাকি দক্ষ দেশ-পরিচালন?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

১। আওয়ামী লীগ যদি এই সময়ের মধ্যে তার ভোটারদের পুরো অংশকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য কনভিন্স করতে পারে। এটা যুক্তি নয়, অনুমান।
২। নৈতিক কোন প্রেক্ষাপট নেই।
৩।দক্ষ দেশ পরিচালনার সময় অতিবাহিত। এই সময়ের মধ্যে যতোটুকুই করেছে সেটা বিএনপি জোটের চেয়ে খুব একটা খারাপ না। পার্থক্য আসলেই তৈরী করবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। যে জোট নিজেদের ভোটারদের সর্ব্বোচ্চ ভোট এবং সুইং ভোটারদের সর্ব্বোচ্চ ভোট নিশ্চিত করতে পারবে- তারাই সফল হবে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাহী এর ছবি

নবম প্যারায় লেখক "মোট ভোটের" কথা বলেননি বলেছেন "প্রদত্ত ভোটের বিপরীতে"।পইড়া উত্তর দিয়েন ভাই।
"প্যাড়া" হল আমার লেখার ভুল। আমি স্বীকার করছি। কিন্তু লেখক তো পুরাই সন্ন্যাস সেজে চুপ করে বসে আছেন।

কী কমু এর ছবি

আরে ভাই, এত কিছু বুঝি না। শুধু বুঝি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের মাতৃসংগঠন জামাতকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে না বসিয়ে একদিনও থাকতে পারবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের সবল বিরোধিতা সত্ত্বেও জামাতশিবির বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের যে নমুনা দেখাল, সরকারে গেলে ওরা পুরো দেশের বারোটা বাজাবে না, তার নিশ্চয়তা কী? ভুলে গেলে চলবে না, জামাত বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দল নয়, ওদের হেডঅফিস পাকিস্তানে, ওদের যাবতীয় আনুগত্য-দায়দায়িত্ব পাকিস্তানের প্রতি। পাকিস্তান আজ যেখানে কোনও রাষ্ট্র বলেই স্বীকৃত নয় (কুড়ি বছর আগেই ওদের ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা হয়েছে, আজ ইরাক-আফগানিস্তানের মত এটি একটি ভূখণ্ড মাত্র), সেখানে বাংলাদেশ কেবল এশিয়ার উদীয়মান ব্যঘ্রই নয়, বহু সামাজিক সূচকে ভারত থেকে এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। কাজেই ক্ষমতায় গেলে তারা যে কেবল তাদের খুনী-ধর্ষক নেতাদেরই মুক্ত করবে তা নয়, স্বাধীনতা ও উন্নয়নকামী সমস্ত বাঙালিকেই তারা হয় খুন করবে, নইলে জেলে ভরবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পর্যায়ে নামিয়ে আনাই ওদের একমাত্র মিশন। নইলে ওদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে দেখুন, কোথাও বাংলাদেশের প্রতি এতটুকু মমতাও খুঁজে পাবেন না। বাংলাদেশ জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠা একদল পাকিস্তানি জারজদের নিয়ে জামাতশিবির গড়ে উঠেছে, ওরা কেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যেতে দেবে? হেফাজতের জন্ম ইসলাম রক্ষার জন্য নয়, বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য। আইএসআই এমনি এমনি ওদের পেছনে পয়সা ঢালছে না।

আসলে বাংলাদেশের জনগণের কপালে ভাল কিছু নেই। হয় চোর-চোট্টায় ভরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দেশকে আরও অরাজকতায় (সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে এর চেয়ে ভাল কিছু কি এদের কাছ থেকে আশা করা যায়?) ঠেলে দিতে হবে, নইলে খুনী-ধর্ষক জামাতকে ক্ষমতায় এনে (ক্ষমতায় এবার বিএনপি আসবে না, আসবে জামাত, বিএনপি ওদের অঙ্গসংগঠন হয়ে আরও কিছুদিন টিকে থাকবে হয়ত) দেশকে পাকিস্তানের মত নরকে পরিণত করতে হবে। সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণের অ্যান্টি-ইনকামবেন্ট মনোভাব কতখানি প্রকাশ পেল, আর সত্যিকার অর্থে কতজন আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে হিশেব সরকারকে অবশ্যই করতে হবে। এখনও মাস পাঁচেক বাকী আছে, সরকার যদি সুশাসনের সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, আর তার ফলে বাংলাদেশের জনগণ যদি ক্রোধের বশঃবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশের বদলে আরেকটি নাপাকস্থান অথবা আফগানিস্তান দেখতে পাব।

এ জাতীয় বিশ্লেষণ অবশ্যই জরুরী, তবে দেখতে হবে, তা বর্তমান শাসক আওয়ামী লীগকে কোনও ভুল বার্তা দিয়ে যেন আরও আত্মতৃপ্তির দিকে ঠেলে না দেয়। বিশ্লেষণে নেতিবাচক দিকটাকে গুরুত্ব দেওয়া সমীচীন মনে করি। ধরে নিই (ধরার কারণও খুবই স্পষ্ট), জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছে, এ অবস্থায় ওদের করণীয় কী? কীভাবে এত অল্প সময়ে ওরা প্রত্যাখ্যাত বা সম্ভাব্য ভোটকে প্রদত্ত ভোটে রূপান্তরিত করতে পারবে?

আলোচনার মুখ সেদিকে গেলেই ভাল হয়। ধন্যবাদ।

mamun এর ছবি

দেশের অর্থনীতি আগাচ্ছে, এটা শুধু পাকিস্তানের অসস্ত্বির কারণ না। এটা অনেকের জন্য বিব্রতকর। জামাত শিবির ক্ষমতায় আসলে অতি সহজে এই উন্নয়নের ধারাকে সাইজ করা সহজ হবে। ভায়োলেন্ছ, হত্যাকান্ড এড়ানো সম্ভব হবে না।

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

ভালো বিশ্লেষণ, কিন্তু কেবল একটি assumption এর উপর ভিত্তি করে, যে ভোট প্রদানে বিরত থাকা ভোটাররা মূলত আওয়ামী লীগের অভিমানী সমর্থক। এই ধারণার সঠিকতা প্রমানের কোনো উপায় নেই, কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণত ভোট প্রদানের হার জাতীয় নির্বাচন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে কম হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে সিলেট ব্যতিত অন্যান্য নির্বাচনে ৬৫% এর বেশি ভোট পড়ার ঘটনা নির্বাচনের সর্বজনীন চরিত্রকে চিহ্নিত করে বলেই আমার বিশ্বাস।

তাই আপনার ধারণাকে ভুল ধরে নিয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে প্রকৃতপক্ষেই জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান জনমতের প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণ করলে এই ফলাফল আসলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাসের সরাসরি চিহ্ন বহন করে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা হ্রাস প্রক্রতীয়পক্ষে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে কি প্রভাব ফেলতে পারে, সেটাকে বিশ্লেষণ করার একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। ভাবলাম আপনার এই পোস্টেই কমেন্ট আকারে শেয়ার করি।

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

শুরুতেই দেখতে পাই, গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের ৫৬% ভোট কমে সিটি নির্বাচনে ৪০% এ নেমে এসেছে। আবার ২০০১ এ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্মিলিত ভোট ছিল প্রায় ৪৭%। কোনো একটি দল বা জোটের ভোটের উত্থানপতন মূলত ২ টি বিষয়ের মিলিত প্রভাব, ১) গত নির্বাচনের ভোটারদের ভোট swing, ২) নির্বাচনে প্রথমবারের মত ভোট দেয়া তরুনদের ভোটিং প্যাটার্ন। বাংলাদেশের প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ে এই দুই ফ্যাক্টরই কাজ করেছে, যদিও এদের প্রভাব সমান ছিল না। সাধারণত প্রথম বারের মত ভোটার যারা হন, তাদের দলীয় আনুগত্যের বিষয়টা অতটা শক্তিশালী হয় না, বরং সরকারের দৃশ্যমান কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করেই তারা সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু বাংলাদেশের কোনো সরকারই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারেনি, তাই স্বভাবতই তরুণ প্রজন্মের অবস্থান বরাবরই ক্ষমতাসীন বিরোধী (anti incumbancy)। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী ভোট swing হলেও যারা একাধিকবার একই দলকে ভোট দিয়েছে, তাদের পক্ষে সরকারের সমালোচনা সত্বেও দলীয় প্রার্থীর বাইরে ভোট দেয়া বেশ কঠিন। তাই এই ভোট swing এর উপর ভরসা করে কোনো দল যদি একবার ক্ষমতায় আসে, পরবর্তী নির্বাচনে এই একই swing ভোটাররাই বিপরীত দলে ভোট দেয়ার প্রবণতা দেখান। তাই কোনো দল যদি একটি নির্বাচনে যত swing ভোটার কে আকৃষ্ট করবে, সেই দল পরবর্তি নির্বাচনে ততটাই vulnerable থাকবে এই swing ভোটারদের দলত্যাগের প্রবনতার কারণে।

২০০১ এর বি এন পির নির্বাচনে জয়লাভের মূল কারণ ছিল জোটের রাজনীতি, কারণ বি এন পি- জামাত জোটের ১৯৯৬ সালের ৪২ % ভোটকে তারা প্রায় ৫% ২০০১ এ প্রায় ৪৭% ভোটে নিয়ে আসে, কিন্তু তাদের আসন সংখ্যা জোটের কারণে ২২০ এ পৌছায়। আওয়ামী লীগ এককভাবে ৪০% ভোট পেয়েও মাত্র ৬২ টি আসন পায়। এই নির্বাচনে যারা বি এন পি কে ভোট দিয়েছিল, মোটা দাগে চিন্তা করলে তাদের ৮৯%ই এর আগের নির্বাচনে বি এন পি কে ভোট দিয়েছিল (৪২/৪৭ = ৮৯%)। বাকি যে ১১% swing ভোটার, তারা মূলত তত্কালীন আওয়ামী সরকারের উপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে ৪ দলীয় জোটে ভোট দেয়। আমার বিশ্লেষণে দেখতে পাই ২০০৮ এর নির্বাচনে এই ১১ % ভোটার আবার ভোট বদলে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু ৭ বছরে দেশে প্রায় ৩০ % নতুন ভোটারের আগমন ঘটে, যাদের প্রায় ৬২% আওয়ামী লীগকে আর ৩৮ % বি এন পি কে ভোট দেয়। বিশ্লেষণ করার জন্য ২০০১ এর নির্বাচনে ৩০০ আসনে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোট কে জোটবদ্ধ করে বিভিন্ন ভোট সুইং ও নতুন ভোটারদের ভোটদান প্রবনতার বিভিন্ন মান বসিয়ে দেখা যায় ১১% ভোট swing ও ৬২-৩৮ নতুন ভোটার ভোটদান প্রবণতা ধরলে মহাজোটের আসন সংখ্যা দাড়ায় ২৬৭ টি, এবং ৪ দলের ৩৩ টি, যা প্রকৃত ফলাফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, বি এন পি যে সকল আসনে জয়লাভ করে, সেই আসন গুলোকেও এই ভোট composition দিয়ে সহজেই predict করা যায়। যেমন চট্টগ্রাম বিভাগে বি এন পির ভালো করা, আর সাতক্ষীরায় জামাতের শক্ত অবস্থান সত্তেও মহাজোটের জয়, এ বিষয়গুলো শুধুমাত্র এ দুটো ফ্যাক্টর দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আমার এই বিশ্লেষনটি একটি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও সেখানে এই স্পেসিফিক মান গুলো কে দেখানো হয়নি। http://www.ebangladesh.com/2008/12/28/predicting-the-election/

যা হোক ২০০৮ এর একই হিসাব যদি আমরা ২০১৩ তে প্রয়োগ করি, তাহলে খুব সহজেই সিটি নির্বাচনের ব্যাখ্যা দিতে পারব। ২০০৮ এ আওয়ামী লীগ swing ভোটারদের উপর ভরসা করে এসেছে। এই swing ভোটাররাই তাই সহজে সমর্থন পরিবর্তন করতে পারেন। ২০০৮ এ মহাজোটের ভোটারদের প্রায় ১৮ শতাংশই পূর্বের নির্বাচন এ অন্য দলকে ভোট দিয়েছিলেন, তাই আওয়ামী লীগ এর আপাত দৃষ্টিতে তিন চতুর্থাংশ সমর্থন থাকলেও এ সমর্থন ক্ষনস্থায়ী হবার potential শুরু থেকেই ছিল।

সিটি নির্বাচনের ফলাফল থেকে স্পষ্ট এই swing ভোটাররা দল পরিবর্তন করেছেন। মোটামুটিভাবে ২০% swing, আর নতুন প্রজন্মের ভোটের প্যাটার্ন যদি গত নির্বাচনের মতই সরকারবিরোধী ৬২ বনাম সরকার ৩৮ হয়, তাহলে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর আসন সংখ্যা হবে ৫১। যদি ১৮% সুইং ও ৬২-৩৮ নতুন ভোটার প্যাটার্ন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের আসন দাড়ায় ৭১ টি। এ সকল ক্ষেত্রে চার সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট ৪০ % থাকে, যা এ নির্বাচনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ।

সুতরাং যদি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের সমর্থন কে প্রতিফলন করে, তাহলে বর্তমানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৫০-৭০ টির বেশি আসন পাবে না। এ আসন সংখ্যা জাতীয় পার্টির সাথে জোট অটুট থাকবে ধরে নিয়ে। যদি জাতীয় পার্টি বি এন পির সাথে জোট করে, আরো অন্তত ২০ টি আসন কমবে। বাস্তবতা কে মেনে নিয়েই আওয়ামী লীগের আগামী ছয় মাসে swing ভোটার, যারা এক বার মহাজোটে ভোট দিয়েছে, তাদের সমর্থন ধরে রাখা, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সমর্থন বাড়ানো ও জাতীয় পার্টির সমর্থন ধরে রাখার দিকে নজর দেয়া ফরজ। নইলে ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না।

রাহী এর ছবি

চলুক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

চমৎকার। আপনার বিশ্লেষন এই পোষ্টকে ঋদ্ধ করলো।

বাস্তবতা কে মেনে নিয়েই আওয়ামী লীগের আগামী ছয় মাসে swing ভোটার, যারা এক বার মহাজোটে ভোট দিয়েছে, তাদের সমর্থন ধরে রাখা, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সমর্থন বাড়ানো ও জাতীয় পার্টির সমর্থন ধরে রাখার দিকে নজর দেয়া ফরজ। নইলে ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না।

দারুনভাবে সহমত। দেখুন পোষ্টের শেষের দিকে এই কথাটাই বলতে চেয়েছি। আওয়ামী লীগ তার নেতা কর্মী, সমর্থক, সহানুভূতিশীলদের ১০০%কে কনভিন্স করতে সক্ষম হয়নি- কেনো আওয়ামী লীগ প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে? বিএনপি জোটের ভেতরে জোটবদ্ধ ছোটবড় দলগুলোর মধ্যে যে শক্তিশালী টাই তৈরী হয়েছে- আওয়ামী জোটে সেটা হয়নি। জামাতের ভোট নগন্য কিন্তু তার কর্মী বাহিনী কৌশলে দক্ষ। বিএনপির ভোট ও জামাতের শ্রম= পজিটিভ ফলাফল।
সুইং ভোটার অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর কিন্তু আওয়ামী জোট নিজেদের চিরাচরিত ভোটগুলোকেই ্নিশ্চিত করতে পারেনি।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ ফাইয়াজ গুরু গুরু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

সাইদ এর ছবি

@ফাইয়াজ জামাল

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক লেখা ভালো লাগে বলেই সবাইকে অনুরোধ করছি বাজে মন্তব্য বা শব্দের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে। লেখার জবার লেখা দিয়েই দিন। এই লেখার মতের সাথে একমত না হলে, কিংবা আপনার কাছে ভালো যুক্তি থাকলে সেগুলো দিন। "সন্ন্যাস সেজে চুপ করে বসে আছেন", "ফালতামি" এধরনের শব্দের প্রয়োজন কী?

ধন্যবাদ।

রিয়াজ এর ছবি

যদি যুক্তির খাতিরে ধরে নেয় প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৮৫% ভোট প্রদান হয় এবং অতিরিক্ত ভোটের ৭০% আওয়ামী লীগ ও ৩০% বিএনপি পায় তাহলে ভোটের ফলাফল নিম্নরূপ হবেঃ

বরিশালঃ বিএনপি ৯২৫০১, আওয়ামী লীগ ৮৭০৯৪
খুলনাঃ বিএনপি ২০৩৭৫৪, আওয়ামী লীগ ১৭২৫৩৪
রাজশাহীঃ বিএনপি ১৩৪৮৪৪, আওয়ামী লীগ ৯৯৫১১
সিলেটঃ বিএনপি ১২৭৩৮৯, আওয়ামী লীগ ১১৮৮৫২

অতিরিক্ত ভোটের ৭৫% আওয়ামী লীগ ও ২৫% বিএনপি পায় তাহলে ভোটের ফলাফল নিম্নরূপ হবেঃ

বরিশালঃ বিএনপি ৯১০৪৭, আওয়ামী লীগ ৮৮৫৪৮
খুলনাঃ বিএনপি ২০০০০৫, আওয়ামী লীগ ১৭৬২৮৩
রাজশাহীঃ বিএনপি ১৩৩৩৯০, আওয়ামী লীগ ১০০৯৬৬
সিলেটঃ বিএনপি ১২৪১০৬, আওয়ামী লীগ ১২২১৯৫

অতিরিক্ত ভোটের ৮০% আওয়ামী লীগ ও ২০% বিএনপি পায় তাহলে ভোটের ফলাফল নিম্নরূপ হবেঃ

বরিশালঃ বিএনপি ৮৯৫৯৩, আওয়ামী লীগ ৯০০০২
খুলনাঃ বিএনপি ১৯৬২৫৭, আওয়ামী লীগ ১৮০০৩১
রাজশাহীঃ বিএনপি ১৩১৯৩৫, আওয়ামী লীগ ১০২৪২০
সিলেটঃ বিএনপি ১২০৭০৩, আওয়ামী লীগ ১২৫৫৩৮

রাহী এর ছবি

ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। চলুক

সাফি এর ছবি

আওয়ামী বিরোধীতাকারী কিন্তু জামাতের কারণে বিএনপিকেও চায়না এরকম সংখ্যা কী রকম হতে পারে? এই ভোটগুলো আগে বিএনপি এর ঘরে যেত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।