অফিসে বসে নিজের বানানো রঙ চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর ফেসবুক চ্যাটে গল্প করছি স্টুয়ার্ট এর সাথে। স্টুয়ার্ট আর লিন দম্পতি, বাস করতো ইংল্যান্ডের লেইক ডিস্ট্রিক্টে যেখানে তিনবছর আগে আমার ও বসতি ছিলো। স্টুয়ার্ট বিশালদেহী দিলখোলা আমেরিকান, লিন ছোটখাটো ইংলিশ লেডি- দুজনেই ঘুরতে পছন্দ করে। সেই সূত্রে আমার সাথে সখ্যতা। ওরা যখন আমেরিকা ফিরে যাচ্ছে দীর্ঘদিনের জন্য আমি ও প্রস্তুতি নিচ্ছি দেশে ফিরে আসার। আমাদের আরেক বন্ধু ম্যারিয়ানের খামার বাড়িতে শেষ আড্ডায় স্টুয়ার্ট-লিন বিদায়পর্বে বলছিলো- দেখা হবে মেরিল্যান্ডে। উত্তরে বলেছিলাম ' বাংলাদেশে নয় কেনো?'। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, প্রায় দুইশত চাবাগানের সুরমা ভ্যালি, তেরোশো নদী- বাংলাদেশের এইসব গল্প হয়ে গেছে আরো অনেক আগেই।
তারপরের তিনবছরে স্টুয়ার্ট-লিন অনেকগুলো দেশ ঘুরেছে। দক্ষিন আমেরিকার প্রায় সবগুলো এবং আফ্রিকার কয়েকটি। আমি ঘুরেছি নিজের জেলার কিছু কিছু জায়গায়, যেখানে এর আগে কোনদিন যাওয়া হয়নি। ওদের সাথে এখনো কথা হয় প্রায়ই। 'আমেরিকা আসছোনা কেনো?' প্রশ্ন করার আগেই আমি জিজ্ঞেস করে নেই ' বাংলাদেশে আসছো না কেনো?' । ভারতে আসার একটা প্ল্যান করছে ওরা, সাথে বাংলাদেশ ও কিন্তু বিমানের খরচ এতো বেশী যে আমেরিকান পেনশনার দম্পতির জন্য ওটা বেশ বাড়াবাড়ি।
বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে কথা উঠলেই- এ দেশে বিদেশী এসে ভরে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রায় দেশ সয়লাব হয়ে যাবে এরকম আশাবাদ আমরা প্রায়ই শুনি, শুনে এসেছি বহুকাল থেকেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো শুধু পর্যটনের প্রয়োজনে এই দেশে বিদেশীরা আসেনা , আসার সম্ভাবনা ও নেই।
কেনো নেই? এর সহজ উত্তর আমেরিকা/ ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আসতে যে পরিমান ভাড়া গুনতে হয়, যে সময় লাগে তার বিনিময়ে বাংলাদেশ নিজেকে যথেষ্ট পর্যটনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। পর্যটনের সম্পদ আছে কি নেই তার থেকে মুখ্য হচ্ছে বাংলাদেশ নিজের এই ব্রান্ডিং তৈরী করতে পারেনি যে কারনে একজন আমেরিকান/ ইউরোপিয়ান ট্যুরিষ্ট শুধু বাংলাদেশকে টার্গেট করে আসবেন।
তার মানে কি বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক নেই? আছে। রাজধানী শহর ঢাকাতেই বর্তমানে দূতাবাস, এনজিও, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউরোপীয়ান/ আমেরিকান চাকরীজিবি সংখ্যা কম নয়, এদের উল্লেখযোগ্য অংশ সপরিবারেই থাকছে। ভারতীয়, শ্রীলংকান, পাকিস্তানীদের সংখ্যা ও উল্লেখযোগ্য। সপ্তাহ শেষে কিংবা উৎসব পার্বনের স্বল্প ছুটিগুলোতে এরা দেশের বাইরে না গিয়ে ঢাকার বাইরে ভিন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করছে। দেশের ভেতরের এই বিদেশী গোষ্ঠী বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
তবে এদেশের বিকাশমান পর্যটন শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় আশাবাদ হচ্ছে দেশের ভেতরে দেশের মানুষের ঘুরাঘুরি’র প্রবনতা। এই প্রবণতা নতুন এবং ধরে নেয়া যায় এই প্রবনতা বাড়তে থাকবে।
সরকারী খাতে উল্লেখযোগ্য কিছু না হলে ও বেসরকারী খাতে পর্যটন শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে। ইন্টারেস্টিংলি এই বিনিয়োগগুলোর প্রায় সবটুকুই হচ্ছে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মানে। সিলেট অঞ্চলে শতকোটি টাকার রিসোর্ট নির্মিত হয়ে গেছে, কয়েকশত কোটির রিসোর্ট ও পাইপ লাইনে।
কিন্তু পর্যটন যে কেবল বানিজ্য নয়, এটি একটা সেবাখাত- এই খাত শেষপর্যন্ত টিকে থাকে সেবার মানের উপর- এই জরুরী বিষয়টি উপেক্ষিত থাকছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। কয়েকশত কোটি টাকার পাঁচতারা/ সাত তারা রিসোর্টে মানসম্মত সার্ভিসের জন্য শেফ, ওয়েটার, হাউসকিপার, গার্ডেনার, পুলবয় থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত তৈরী হচ্ছে কোথায়? এখন যেটা হচ্ছে- একটা নতুন হোটেল/ রিসোর্ট তৈরী হচ্ছে, তারা বেশী টাকা দিয়ে কর্মী নিয়ে যাচ্ছে আরেক হোটেল/ রিসোর্ট থেকে ফলে কোন না কোন প্রান্তে শূন্যতা থেকেই যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা দালান বানাতে যেভাবে বিনিয়োগ করছেন কর্মী বানাতে নয়। ফলে আন্তর্জাতিক মানের দালানকোঠার ভেতরে মফস্বল মানের সার্ভিস ও ব্যবস্থাপনার সংকট ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে তথ্যের কোন কেন্দ্রীয়করন হচ্ছেনা। একজন পর্যটক হিসেবে আমি সিলেটে তিনদিনের জন্য বেড়াতে আসতে চাই। সিলেটে কোথায় কোথায় কিভাবে বেড়াতে যাওয়া যায়, কোথায় থাকা যায়, কোথায় খাওয়া যায়, এমনকি কিভাবে গাড়ীভাড়া করবো সব তথ্য যদি একটা জায়গায় পাওয়া যেতো এবং এখান থেকেই পছন্দের হোটেল/ রিসোর্টে রুম বুকিং সহ পুরো প্ল্যানটা করে ফেলা যেতো সেটা আমার জন্য সহজ হতো। একই কথা কক্সবাজার, সুন্দরবন সহ যে কোন পর্যটক গন্তব্যের জন্যই।
আমার ধারনা যদি ভুল না হয়, লং রানে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প টিকে থাকলে সেটা টিকবে আভ্যন্তরীন বাজারের জোরে। এই বাজার সম্প্রসারনের জন্য প্রতিরাত ৫০০ ডলার রুমভাড়ার রিসোর্টের চেয়ে মধ্যম মানের ‘ট্যুরিস্ট হোম’ গুলো বেশী সহায়ক।
রঙ চা জুড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ চুমুকটুকু দিলাম।
মন্তব্য
সেবাখাত কতোটা সেবা দিতে পারবে সেটা অবকাঠামোর ওপরও নির্ভর করে। এই অবকাঠামো নির্মান আইনী হতে পারে, আবার বস্তুভিত্তিক টয়লেট সুবিধা থেকে শুরু করে যাতায়াত ইত্যাদির মধ্য দিয়েও হতে পারে। বাংলাদেশে আইনী কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল এবং এটা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। কোন কিছু হলে (সেটা ধর্ষণ থেকে শুরু করে ছিচকে চুরি সবক্ষেত্রেই) সেটার বিচার হবে না এবং এই ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের এখানে আসতে হয়। সাথে আছে হাইজিন সমস্যা। একটা ভালো ইউরোপীয় স্টাইল টয়লেট, একটা ভালো খাবার দোকানের অভাব অনেক জায়গাতেই আছে।
আর ইনফরমেশন একটা বড় জিনিস। ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে কেন আসবে এটার খুব শক্ত যুক্তি তৈরি করতে হবে। বের করতে এরকম কিছু যেটা পর্যটকেরা ইন্ডিয়াতে পাবে না। কাজটা কঠিন। কাজটা আরো কঠিন করে দেয় দেশে কোন মানসম্পন্ন তথ্যভান্ডারের (যেমন ওয়েবসাইট) অনুপস্থিতি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ঠিক। ট্যুরিজম ডেভেলাপ যে একটা টোটাল বিষয়, কেবল রিসোর্ট বানানো না সেটা বিনিয়োগকারীরা এখনো বুঝতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীরা নিজে বুঝতে পারলে সরকারকে চাপ দিয়ে কিছুটা হয়তো কাজ করিয়ে নিতে পারতেন।
আর ইনফরমেশন! বিদেশী পর্যটক পরের কথা, ভারতের সাথে পাল্লা দেয়া আরো পরে আভ্যন্তরিন পর্যটকদের জন্যই এখনো মানসম্মত তথ্যভান্ডার আমরা গড়তে পারিনি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সুচৌ'র লেখা পড়তে পড়তে আপনারটায় আসলাম। তাই তার রেশ ধরে বলা: খালি 'বোলোগিং' করলে হবে? এই 'বোলোগটারে' একটা চমৎকার ডায়াগ্রামাটিক সাইজ দেন কষ্ট করে। লেখার ভিতরে তো ঠিকই দরকারি কথা লুকায়ে রাখছেন। আর একটু খোলাসা করে দেন। হে পর্যটন।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
এই যে , এতো বছর পর পলাশ দত্ত মন্তব্য!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
যেসব বিদেশী পর্যটক সী-বিচ, জঙ্গল, অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক-প্রত্নতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক দ্রষ্টব্য, ইত্যাদি দেখতে আসে বা স্রেফ রিলাক্স করতে চায় ছুটির সময়টা - তাদেরকে ব্যাপকহারে আকর্ষন করা মনে হয় সত্যি কঠিন হবে - যদি অসম্ভবই না হয়। অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি আমাদের রক্ষণশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহ এবং কিছু বৈশিষ্ট্য এর জন্য মনে হয় ঠিক কন্ডিউসিভ না।
****************************************
বাংলাদেশ কে দুবাই এর চেয়ে বেশি রক্ষনশীল ? কই ওদের ট্যুরিজমে তো সমস্যা হচ্ছে না । ভারতের গোয়াতে ১০ বছর আগেও ইউরোপিয়ান ট্যুরিস্টদের এবং ভারতীয় ট্যুরিস্টদের জন্য আলাদা সি-বীচ ছিল এবং তাতে কেউ কখনো অভিযোগ জানিয়েছিল বলে মনে পড়ে না ।
ট্যুরিজমের থেকে কি পরিমান অর্থ আয় করা সম্ভব এই জিনিসটা আমাদের অনেকেই এখনো উপলদ্ধি করতে পারছে না ।
ঘচাং ফু
ওদের সমস্যা হয় না কারন 'রুটির যে দিকটায় মাখন লাগানো' সেদিকটার সাথে যে দিকটায় তা লাগানো নেই সেদিকটার পার্থক্য ও পৃথক ট্রিটমেন্টের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ওদের জ্ঞান ও সচেতনতা অত্যন্ত টনটনে! শুধু সরকারি পর্যায়েই না, সব পর্যায়েই। ওরা নিজেদের ভ্যালুজ নিজেদের কাছে রাখে, ট্যুরিস্টদের ওপর সেটা চাপিয়ে না দিয়ে তাদেরকে তাদের মত করে এনজয় বা রিলাক্স করার জন্য যতটা সম্ভব বা দরকার কার্যকরী স্পেস দেয়। মাখ্খনকে প্রাপ্য মর্যাদা, সুবিধা, প্রাইভেসি ও স্পেস দেয়ার গুরুত্ব তারা বুঝে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে। জনগনের সব পর্যায় বা স্তরেই এই বোধের তীব্র টনটনানি ও তার টনটনে বাস্তব প্রয়োগের ব্যাপারটা ট্যুরিস্ট আকর্ষনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। আমাদের এখানে এটা একদমই নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে কার্যকরী রূপে এমন কোন জ্ঞানোদয় বা উপলব্ধির বিকাশ হওয়ার কোন সম্ভাবনা আদৌ দেখছি না। এবং এটা না হলে কিছুতেই কিছু হবে না।
****************************************
এই খবর পড়ে তো সেরকমটা মনে হচ্ছে না।
না, মনে হচ্ছে না। তবে খবরটা পড়ে এটাকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। নিয়মিত বা ব্যাপক কিছু না। প্রতি বছর সম্ভবত লক্ষ লক্ষ লোক দুবাই ভ্রমণ করে। এর মধ্যে বিবিসি বেশ কয়েক বছরের ব্যবধানে হাতে গোনা মাত্র দু'তিনটার বেশি এধরণের ঘটনার উল্লেখ করতে পারেনি। মিডিয়া কোন নির্দিষ্ট ঘটনার উপর ফোকাস করলে অনেক সময় সেটা তাৎক্ষণিক ভাবে অনেক ম্যাগনিগায়েড মনে হয়। তবে সামগ্রিক ভাবে ট্যুরিজমের উপর এরকম বিচ্ছিন্ন দুয়েকটা ঘটনার ইম্প্যাক্ট সম্ভবত একেবারেই নগন্য। আর আমি যেটা বলেছি সেটা নেহাতই একটা সাধারণ স্টেটমেন্ট, নিরঙ্কুশ কিছু না।
যাহোক, আমি আসলে এত সিরিয়াস লেভেলের কিছু বুঝাই নি - নেহাতই সাধারণ দৈনন্দিন ট্যুরিজমের প্রাত্যহিকতার কথা বলতে চেয়েছি। তাও অনেকটা আন্দাজের উপর। আমি দুবাই যাই নি। তবে মুস্লিম ব্রাদারহুডের আড্ডাখানা মিশর গিয়েছি, ওখানে একটা অত্যন্ত রক্ষনশীল মুস্লিম আরব দেশে যা দেখেছি (মুবারক যুগে) সেটার উপর ভিত্তি করে মিশরের চেয়ে অ-নে-ক বেশি সমৃদ্ধ ও কস্মোপলিটান দুবাইর চিত্র একটু কল্পনা করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাও আবার "ঘচাং ফু"-র উত্থাপিত সমস্যার জবাবে। এইটুকুই।
****************************************
বাংলাদেশ পর্যটন সংস্থার কর্ণধারদের মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন না এলে বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব নয় একেবারেই। এদের বাইরে বাইরে বড়ো বড়ো কথার ফুলঝুড়ি, ভেতরটা খালি।
বিদেশী পর্যটকরা সহজ, সরল, সাদামাটা, কিন্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে। পর্যটন সংস্থা দেবে গদিমোড়া চেয়ার, ভেতরে ফোমের বদলে ছাড়পোকার রাজত্ব। অথচ সেখানে একটি মোটামুটি ভালো প্লাষ্টিকের চেয়ার হলেই খুশী থাকে ট্যুরিস্ট। খাবারের মেন্যুতে ভারি ভারি হাজারো খাবারের নাম। খেতে চাইলে দেখা যাবে বেশিরভাগই নেই। কক্সসবাজার, রাঙ্গামাটি, যেখানেই যাই না কেন, একই অবস্থা। অথচ সাধারণত্বের মাঝেও মানুষকে খুশী করা যায়, অকার্যকরী বিলাসিতার চাইতে অনেক বেশী।
আরেকটা সমস্যা ধর্মীয়। পোষাক আসাক পরে কোনো ট্যুরিষ্টই সাগরে নামবে চাইবে না। সুইমিং কষ্টিউম পড়ে তো আমাদের দেশে নামার উপায় নেই।
আমার মনে হয়না, দূরত্ব একটা বড়ো কারণ। সেটি হলে আমাদের দেশের আশে পাশের অন্যান্য দেশগুলোতে এতো ট্যুরিস্ট যেত না। ইদানীং মিয়ানমারেও আমাদের চাইতে অনেক বেশি ট্যুরিষ্ট যায়।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমাদের দেশের মুল সমস্যা আইন শৃংখলা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা । আমার এক কলিগ গত বছর ডিসেম্বরে শ্রীলংকা ঘুরে এসেছে । একা একাই । এইবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে, " তুমি তো প্রায় বাংলাদেশে ঘুরতে যেতে বল । এই ডিসেম্বরে গেলে কেমন হয় ? "
অসহায় আমি কি করে তাকে বোঝাই যে এই বার আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এতই খারাপ যে, আমার নিজেরই ঢাকার বাইরে ঘোরাঘুরির সুযোগ হয় কিনা ঠিক নেই । একমাত্র ঢাকা শহরের হরতালের সময় মানুষ আর গাড়ি পোড়া দেখাইতে নিতে পারি ।
ঘচাং ফু
হরতাল না থাকলেও ট্রাফিক জ্যামের ঠেলায় কোন কিছু দেখানোর উপায় নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আরেকটা বোধহয় মানসিক ঝামেলা আছে আমাদের
কেউ কোথা্ও বেড়াতে যা্ওয়াকে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই 'বেহুদা চক্করমারা বুঝি। মনে করে অঢেল টাকা পয়সা আছে কিন্তু টাকা পয়সা খরচের জায়গা নেই তাই বেহুদা চক্কর দিয়ে খামাখা টাকা নষ্ট করতে আসা
আর এ জন্যই হুড়মুড় করে পকেট কাটা; তা দেশি হোক আর বিদেশি হোক যেমন একটা প্রবণতা তেমনি সিকিউরিটির ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা পাওয়াটা্ও একটা বিশাল বিষয় (হুদাকামে ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে ঝামেলা কেন বাপ? তার থেকে বাড়িতে বসে থাকলেই তো হতো)
আমি বিষয়টা একটু অন্যভাবে দেখি। পর্যটন জনপ্রিয় আমাদের সংস্কৃতিতে। ঘুরতে যেতে চায় এরকম লোকের অভাব নেই। আবার এটাও সত্য যে সারাজীবন ঘুরতে যাবার স্বপ্ন দেখে কোথাও ঘুরতে না গিয়ে বুড়ো হয়ে যাওয়া লোকের অভাব নাই। উদ্যোগের অভাব, পর্যটনের জায়গার অভাব এগুলো কারণের সাথে আর্থিক সামর্থ্য একটা বিবেচ্য বিষয়। আমাদের দেশে যেহেতু সরকারি সাপোর্ট (যেমন, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা) নেই এবং সেটা থাকলেও কিনতে হয় সেহেতু আমাদের সবসময় একটা টাকা বাঁচানোর চেষ্টার মধ্যে থাকতে হয়। সমস্যা হলো এই টাকা জমানোটা কখনোই যথেষ্ট হয়ে ওঠেনা। আর গড়পরতা বাঙ্গালির বাইরে ঘুরতে যাওয়াও হয়ে ওঠে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমাদের পর্যটন রিসোর্টগুলোও গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে। সরকারের পক্ষ থেকেই কোন তদারকি নেই। ভয় হয়, অপরিকল্পিতভাবে মেগাসিটি হয়ে উঠা ঢাকা যেভাবে নাগরিক সুবিধা দিতে ফেইল করছে, ঠিক তেমনি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটগুলোও ফেইল করবে একসময়। ইকোলজি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়েও তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকারী অধিদপ্তর আছে, এনজিও আছে, কিন্তু কাজের কাজ খুব বেশি হচ্ছেনা।
শব্দ পথিক
নভেম্বর ১৪, ২০১৩
আপনার তোলা সিলেটের ছবিগুলো
অসাধারণ
হয়একটা ছবিব্লগ দেন সাথে ১/২ লাইন লিখে - কিভাবে যাওয়া যায়, বাজেট, ইত্যাদি ---- এভাবে শুরু হোক - অন্তত আমরা যারা সচল পড়ি তারা ঘুরে দেখে আসি
খুব-ই প্রয়োজনীয় লেখা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য।
পশ্চিম গোলার্ধে পর্যটন ত অসাধারণ অর্থকরী শিল্প। এই লেখা আর তাতে আসা মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে ঐ রকম যে আর নীচে যাওয়ার উপায় নেই। সেটা একদিক থেকে উৎসাহব্যঞ্জক, যাই করা যাক, উন্নতিই হবে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কথাটা দাঁড়ায় - সরকার, ব্যাবসায়ী, স্থানীয় পর্যায়ের ভ্রমণার্থী, মিডিয়া সবাই দায়িত্ব সহকারে অন্তত খানিকটা পরস্পরের সাথে সহযোগীতা করে, যে যতটা সম্ভব ঘাটতিগুলো - কাঠামোগত, গুণগত, মানসিকতার, কমানোর চেষ্টা করছে কি না। আপনাদের আগ্রহ আর প্রচুর ভ্রমণেচ্ছা দেখে আমার তো আশা হচ্ছে বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে পর্যটন শিল্প অনেক উন্নতি করবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প এই মুহুর্তে একেবারেই প্রারম্ভিক পর্যায়ে। আশার কথা, প্রচুর বেসরকারী বিনিয়োগ হচ্ছে। নিরাশার কথা, পর্যটন সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারী উদ্যোগ শূন্য। এ ছাড়া পর্যটন শিল্প যে একটা টোটাল প্যাকেজ- একটা শহরে পাঁচতারা রিসোর্ট থাকার পাশাপাশি ট্যাক্সির ড্রাইভারকে ও পর্যটকবান্ধব হতে হয় সেটা যতো তাড়াতাড়ি বিনিয়োগকারীরা বুঝবেন ততোই মঙ্গল।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনের উপর ওয়েবসাইট গড়ে তোলা খুব বেশি হয়তো কঠিন নয় কিন্তু এই মুহূর্তে তা খুব একটা লাভজনক নয়। এজন্য ই-কমার্স এর আরও অনেক বেশি প্রসার হওয়া দরকার। একটা ভাল ওয়েবসাইট বানালাম ও তথ্য, ছবি এবং ভিডিও দিলাম। কিন্তু এরপর এটিকে চালিয়ে নিতে হলে নিয়মিত আয় লাগবে। এজন্য দরকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল, ট্রাভেল এজেন্ট, রেন্ট-এ-কার ধরনের প্রতিষ্ঠানের বুকিং এর ব্যবস্থা যেখানে ওয়েবসাইটের মালিক ৫-১০% কমিশন পাবেন। তবে আশার কথা হল ই-কমার্স এর প্রসার বেশ দ্রুত গতিতে ঘটছে।
দ্বিতীয়ত টুরিস্ট গাইড বলতে আমাদের দেশে মূলত ইংরেজি জানা লোককে বোঝায়। কিন্তু একটি এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক টুরিস্ট গাইডই অবগত নন। এটা বোধহয় অনেক ক্ষেত্রে বিদেশীদের নিরুৎসাহিত করে ঢাকার বাইরে ঘুরে বেড়াবার সিদ্ধান্ত নেবার বেলায়।
বাংলাদেশে গবেষণার জন্য অনেক কিছু আছে। ঢাকার ব্রাহ্ম সমাজ, বাংলাদেশের মাড়ওয়ারি সম্প্রদায়, পাল আমল এর স্থাপত্য, সুন্দরবনের বনবিবি- এমন অনেক কিছুই আছে যা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এজন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে এবং বিদেশীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে যদি কোন একটা বিষয় বা অঞ্চলকে জনপ্রিয় করা যায় তবে তা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা অনেক সহজ হবে। এজন্য যে খুব বেশি অর্থের বিনিয়োগ করা দরকার তা নয়। ইউটিউব ও ফেসবুকে কয়েকটি আকর্ষণীয় ভিডিও হাজার হাজার লোকের কাছে পোঁছতে পারে।
তারপরও পর্যটন সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী কারণ মানুষ এদেশের মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্তন্ত কক্সবাজারে এখন শীতের সময় অনেক লোকের সমাগম হচ্ছে। দেশের মাথাপিছু আয় যত বাড়বে ঘুরে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষা ও সামর্থ্য তত বাড়বে। ৩০-৩৫ বছর আগে চা ছিল এদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রধান খাত। আর এখন চায়ের চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে আমরা তা আমদানি করছি।
হিমালয় দেখতে কিন্তু অনেক লোক আসে, ভারতেও পর্যটক কম আসে না।
আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংটা ঠিক মত হয়নি বিদেশিদের কাছে। এটা ঠিক মত হলে, নপাল, ভারত ঘুরতে আসা অনেকেই এখানে আসত।
আমাদের চেষ্টা সবই ছিল তথাকথিত এক সেভেন ওয়ান্ডার হবার মধ্যে সীমাবদ্ধ, আফসোস।
শুভেচ্ছা
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের সম্ভবনা যতটুকু, বাধা তার চেয়ে বেশি। সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের মানসিকতা।বাঙালি ঐতিহ্যগত ভাবেই অতিথি পরায়ন।কিন্তু অতিথিনারায়ন এর সাথে অর্থ যোগ হওয়ার সাথে সাথে অনর্থও চলে আসে।অধিকাংশ পর্যটক সে দেশি হোক বা বিদেশি, হোক কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটি বা বান্দরবান গিয়ে অতিথি সেবার যে নমুনা পান তাতে ঘুরতে কেন, কোন কাজে যেতেও আরেকবার ভাববেন। আর যারা এই শিল্প এর সাথে জড়িত আছেন তারাও যেন আংগুল অন্যদের দিকে তোলার সময় দেখবেন নিজের দিকে কয়টা আছে। এটা এক ফসলি কোন গাছ নয় দীর্ঘজীবি হয়েই থাকুক।
পাতায়া বীচ দেখলে মনেহয় বড় নদীর পাড়ে আসছি কিন্তু কক্সবাজার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বীচ হলেও কেন পর্যটক আসে না? বিদেশীদের কথা বাদ দেন দেশী মানুষরাই কেন সেভাবে যান না? প্রাকিতিক সুন্দর্যকে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা ওরা জানে, বিনোদন (কু বিনোদন বাদেই) আর অনান্য সুযোগ সু্বিধা কিভাবে দিতে হয় তা রীতিমত শেখার মত। আমাদের এখানে সন্ধ্যার পর হোটেলে বসে থাকা ছাড়া আর কি বা করার আছে। যদিও বা কেউ রাতের সমুদ্রের সুন্দর্য উপভোগ করতে চায় তবে নিরাপত্তাহীনতায় তা মনেই উবে যায়।
সাদা চোখে গেনটিং হাইল্যান্ডে কি আছে বিশাল হোটেল,ক্যাবল কার আর পার্ক ছাড়া, শুধু First World এই একটা হোটেলেই আছে প্রায় ৬ হাজারের উপর রুম এরকম আর ৪টা হোটেল আছে। আর আমাদের নীলগিড়িতে খুব সম্ভবত আটটা কটেজ আছে যেখানে মাত্র ১৬ জন থাকতে পারে সাথে তাবুতে আর কিছু লোক আর চিম্বুকের কথা বাদই দিলাম সেখানে টয়লেট করারই সেরকম ভদ্রস্থ ব্যাবস্থা নেই।
কিছু কাজ যে হয়নি তা নয় যেমন ফয়েস লেক কিন্তু তার ব্যয় সবার সাদ্ধ্যের মধ্যে কি?
তাই আগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে অনান্য সুযোগ-সুবিধার পরিমান আগে বাড়াতে হবে, নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিছিদ্র করতে হবে, যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত করতে হবে, শুধু ব্যাবসায়িক চিন্তা মাথায় না রেখে সেবার মনভাব বাড়াতে হবে। বাংগালীরা যে অতিথিপরায়ন সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তবেই ব্রান্ডিং এর কথা চিন্তা করা যাবে।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
বাংলাদেশের পর্যটন সমস্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট। এখানে সিলেটের বদলে বাংলাদেশের যে কোন জায়গার নাম বসিয়ে দিলে একই রেজাল্ট। বিদেশীদের কথা বাদ দিলাম দেশের মানুষ হয়েও আমি এই তথ্যগুলো এক জায়গায় পাই না। কোথাও বেড়াতে যাবো, দেশের ভেতরেই, তার জন্যও আমাকে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে। এমনকি বেড়ানোটাও সহজ হয়ে ওঠেনি এই দেশে।
দর্শনীয় স্থানগুলোতে যথেষ্ট সুযোগসুবিধা ভালো হোটেল খাবার জায়গা নাই, মানি
দেশের সব জায়গায় বিশৃংখলা, রাস্তাঘাটে যানজট, নিরাপত্তাহীনতা, তাও মানি।
সব কিছু মেনে নিয়েও যদি একজন বিদেশী বাংলাদেশে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়, সে কি এমন কোন সাই্ট পাবে যেখানে তার প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাবে? আমি অন্ততঃ পাইনি। নিজের দেশের কোন জায়গায় বেড়ানোর পরিকল্পনা এক বৈঠকে ইন্টারনেট ঘেটে তৈরী করতে পারিনি। অথচ আশেপাশের দেশগুলোতে যাবার জন্য আমি ইন্টারনেটে কয়েকটা ক্লিক করেই সব তথ্য পেয়ে গেছি। এখান থেকেই সবকিছু জেনে শুধু টিকেট কেটে প্লেনে উঠে গেছি। ওখানে গিয়েও ঠিকঠাক ঘোষিত সার্ভিসই পেয়েছি। এটা কি খুব কঠিন একটা ব্যাপার?
আসলে মূল সমস্যা হলো আমরা(মানে সরকার বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তাগন) এখনো পর্যটন ব্যাপারটা বুঝতেই শিখিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এই উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এই প্রতিষ্ঠানটি সত্তর দশকের সাদা অ্যাপ্রন থেকে বের হতে পারেনি এখনো। চট্টগ্রামের একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যা দেখে মনে হয়েছে হয় এই কতৃপক্ষের মাথা বলতে কিছু নেই, অথবা মাথা থেকে মগজ কোথাও বিক্রি হয়ে গেছে।
স্টেশান রোড যারা চিনেন, তারা জানেন এখানে অনেক বছর আগে পর্যটনের মোটেল সৈকত নামে একটা হোটেল ছিল। পাকিস্তান আমলে হয়তো এই জায়গাটা নিরিবিলি ছিল অথবা এখান থেকে পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধা ছিল। কিন্তু আমি যে যুগে এটাকে দেখছি সেই আশির দশকে এই জায়গা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বিশৃংখল যানজটপূর্ন এলাকা হিসেবে দেখেছি। আর বর্তমান সময়ে ওই জায়গাটা এতটা জঘন্য চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে, কোন সভ্য লোকের বসবাসের উপযুক্ত নয়। নিতান্ত বাধ্য না হলে ওই পথ কেউ মাড়ায় না। একে তো শহরের সবচেয়ে বেশী চোর বাটপার ছিনতাই এলাকা এবং রাস্তা ফুটপাত মিলিয়ে এমন একেকটা ময়লার পর্বত যার গন্ধে আমাদেরই বমিতে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসতে চায়, বিদেশীদের কি হবে জানি না। সেই রকম এলাকায় পর্যটন তার পুরোনো মোটেল ভেঙ্গে নতুন বহুতল বিল্ডিং তৈরী করছে। আমি ওদের সাইনবোর্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। চট্টগ্রামে এত সুন্দর সুন্দর জায়গা থাকতে, পর্যটন কর্পোরেশান এটাকে বেছে নিল তার এই স্থাপনার জন্য? এই কর্পোরেশানের লোকদের মাথায় কি মগজের কোন অস্তিত্ব আছে? এতেই বোঝা যায় পর্যটন নিয়ে সরকারের অবস্থান কতটা দুর্দশাগ্রস্ত। এখানে যা কিছু হয়েছে সব প্রাইভেট সেক্টরেই। আগামীতেও তাই হবে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
তথ্যের অপ্রতুলতা আর প্রচার এই দুটোকে আমার সবচেয়ে বড় বাধা মনে হয় আমাদের পর্যটনের জন্যে। এরপর নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব আর সরকারের খামখেয়ালিপণা পর্যটকদের টানতে পারছে না।
নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা কিছু শেয়ার করি, প্রথমবার যখন বগালেক গিয়েছিলাম তখন দেখলাম ওখানে থাকা এবং খাওয়ার যা খরচ দুইবছর পর গিয়ে দেখি সেই খরচ ৪গুন বেড়ে গেছে! প্রথম বার আমরা একটা অনেক বড় রুম নিয়েছিলাম ৮০০টাকা দিয়ে যেখানে একসাথে ১২ জন ঘুমানোর ব্যবস্থা ছিলো, আর পরের বার সেই একিরুমে প্রতিজনের জন্যে রাতে দিতে হয়েছে ৩০০টাকা হারে। থাকা আর খাওয়ার মান কোনভাবেই উৎকৃষ্ট ছিলো না। একি অভিজ্ঞতা হয়েছে কুয়াটায় গিয়ে।
এতো হতাশার পরও দেশে দেশীয় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে আশাতীতভাবে। তারেক অণুর মতো মানুষরা যখন পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর সব প্রকৃতির ছবি নিয়ে আসেন আমাদের চোখের সামনে, তখন সাধারন মানুষেরাও সেইসব ছবি দেখে মুগ্ধ হন আর ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা ভ্রমনপিপাসু মন জেগে ওঠে তখন। ব্লগ আর ফেসবুকে নানান জায়গায় ছবি আর তার বর্ণনা মানুষকে ঘুরতে যেতে ভালোই আকৃষ্ট করছে। তবে বিদেশীদের কে আকৃষ্ট করতে হলে দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সরকারের আন্তরিকতা ও ইচ্ছে।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন