চুনা ব্যবসা ও তিনপুরুষের 'ইংলিশ কোম্পানী'

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ২৫/০৫/২০১৪ - ৪:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বে আমরা লিন্ডসে সাহেবের গল্প শুনেছিলাম। এবারো লিন্ডসে সাহেব থাকবেন কিছুটা তবে শুরু হবে তারো আগে থেকে। এই অঞ্চলে সিমেন্টের অপর নাম বিলাতি মাটি। বিলাতি মাটি উৎপাদন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চুনাপাথর ছিলো গৃহ নির্মানের অত্যাবশ্যকীয় উপকরন এবং বৃটিশপূর্ব যুগে সমগ্র পূর্বভারতে এই অত্যাবশ্যকীয় উপকরনটি সরবরাহ হতো সিলেট থেকে- আরো সুনির্দিষ্টভাবে ছাতক থেকে। জৈন্তিয়ারাজ্য সীমানাবর্তী হলেও ছাতক সিলেটের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। বর্তমান ছাতক উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সেসময়ের ছাতক।
১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর নবাব মীর কাশেম ও ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির একটা শর্ত ছিলো –
'কোম্পানীর গোমস্তাগনকে তিনবৎসরের জন্য সিলেটে প্রস্তুত চুণের অর্ধেক অংশ সরকার অথবা দেশীয় লোকদের নিকট হইতে এলাকার বাজার দর হিসাবে ক্রয় করতে হবে। জিলার প্রজা সাধারনকে কোন নির্যাতন করা যাবেনা’

পরে মীরজাফর ১৭৬৫ সালের চুক্তিতে সিলেটে প্রস্তুত চুণের অর্ধেক অংশ পরবর্তী পাঁচবছরের জন্য কোম্পানীকে ক্রয়ের অনুমতি প্রদান করেন।
চুন প্রস্তুতির পদ্ধতিটা ছিলো এরকম। খাসিয়া পাহাড় থেকে চুনার পাথর এনে জমানো হতো। এরপর ছাতক থেকে সুনাগঞ্জের দিকে সুরমা নদীর দুই তীরে দশফুট গভীর বড় বড় গর্ত করে মাটীর সমতল থেকে আর ও পাঁচফুট উপর পর্যন্ত স্তুপাকারে পাথর রাখা হতো। স্তুপের উপরের দিকে খড় দিয়ে ঢেকে কাদা দিয়ে লেপে দেয়া হতো। নদীর দিকে মুখ করে গর্তের নিচে একটা ছিদ্র থাকতো এবং এই ছিদ্র দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো। মোটামুটি বারো থেকে পনেরো দিন সময়ে চুনাপাথর, ব্যবহারযোগ্য চুনায় পরিনত হতো [ ১৯৮৫-১৯৯১ ছাতক থাকাকালীন সময়ে দেখেছি এই প্রক্রিয়াটা দেখেছি- সেটা ছিলো এই শিল্পের একেবারে শেষ হয়ে যাওয়ার সময়]

রবার্ট লিণ্ডসে ১৭৭৮ সালে সিলেটের রেভিনিউ কালেক্ট্র হিসাবে যোগ দেন। বার্ষিক বেতন মাত্র পাঁচহাজার টাকায়। পোষায় নাকি? মন দিলেন চুনা ব্যবসায়। আত্মজীবনীতে লিন্ডসে লিখেন-

“সিলেট জিলার সংলগ্ন পাহাড়ে চুনা পাথরের অফুরন্ত ভাণ্ডার। কিন্তু ঐ সকল পাহাড় আমার অধিকারের বাইরে। খাসিয়া সর্দারের এইসকল পাহাড়ের মালিক। এইসকল পাহাড় বন্দোবস্ত নিয়া আমি চুনাপাথর সংগ্রহ করার মনস্থ করি। এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে আমি পাড়ুয়া যাই ( বর্তমান ভোলাগঞ্জ)। এ স্থানের পার্বত্য দৃশ্য অতি মনোরম। গিরিশৃঙ্গ সমুহ সমতল ভূমি থেকে সোজা উত্থিত হয়েছে। এই সকল গিরিশৃঙ্গ নানাবিধ পুষ্পপল্লবে সজ্জিত। প্রকৃতির এমন রূপমাধুরী আমি আর কোথাও দেখিনি। পাহাড়ের গায়ে মনোমুগ্ধকর রজতশুভ্র জলপ্রপাত। নদীর জল অত্যন্ত স্বচ্ছ। জলের নীচে ক্রীড়ামান মৎসসমুহ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এখানকার আবহাওয়া পরম স্বাস্থ্যকর। আমার মনে হল আমি স্বর্গভূমে প্রবেশ করছি। কিন্তু এই ভূ-স্বররগের কদাকার অধিবাসীদের দেখে আমার চমক ভাঙ্গল। তাদের ভাবভঙ্গী ও ও হুংকার শুনে মনে হলো তারা অন্যান্য জাতির মতোই বর্বর তবে পরে দীর্ঘবছর ব্যবসা করে আমার ধারনা হয়েছে তারা অত্যন্ত সৎ ও ভদ্র। কিন্তু কোন কারনে তারা অপমানিত হলে হিংস্রমূর্তি ধারন করতে দ্বিধা করেনা।
তারা আমাকে এক ভোজে আমন্ত্রন করলো। আমরা ঘাসের উপর বসলাম। আমাদের সামনে কলাপাতায় খাদ্য বিছিয়ে দিলো। আহার্য্য ছিলো ছয়টি আগুনে ঝলসানেও শুকর ও প্রচুর দেশীয় মদ। খাওয়া দাওয়ার পর আমরা বিশ্রাম করলাম, পরের দিন বৈষয়িক আলাপ হলো। তারা চুনাপাথরের পাহাড় আমাকে বন্দোবস্ত দিলো। “

শুরু হলো লিন্ডসে সাহেবের এক যুগের চুনাবানিজ্য।
১৭৮৯ সালে লিন্ডসে প্রচুর সম্পদের মালিকানা নিয়ে ( বিলাত গিয়ে লর্ড হন ইনি, সিলেটের পয়সায়) চলে যান। পাঁচবছর পর দুইজন ইংরেজ ব্যবসায়ী এইচ টি রাইচ ও জর্জ ইংলিশ ‘রাইট এন্ড ইংলিশ’ কোম্পানীর নামে চুন ব্যবসা শুরু করেন। পরে রাইট মারা গেলে ইংলিশের একক মালিকানা শুর হয়। জর্জ ইংলিশ ছাপ্পান্ন বছর ছাতকে কাটান, ইংলিশ কোম্পানীর ব্যবসার ব্যাপক সম্প্রসারন ঘটান, ‘অর্ধেক’ থেকে ছাতকে উৎপাদিত সকল চুনার একক ক্রেতা হয়ে উঠে তার কোম্পানী। [কোম্পানীর পাথর যে জায়গায় এনে জমা করা হতো, সেটা কোম্পানীগঞ্জ বাজার- বর্তমানে উপজেলা]
১৮৫০ সালে জর্জ মারা যান। ছাতক বাজারের সংলগ্ন একটু উঁচু টিলার উপর তার সমাধিসৌধ স্থাপন করা হয়। ১৭৮৯ সালের ভয়ংকর ভূমিকম্পে সৌধের মিনারে ফাটল ধরলে ও এখনো সেই সৌধটি আছে [ আমার শৈশব ও কৈশোরের অনেক বিকেলে কেটেছে এই জর্জ টিলায়, মার্বেল পাথরে লেখা অবিচুয়ারী- এখনো মনে পড়ে]

জর্জের পর ইংলিশ কোম্পানীর কর্ণধার হন তার পুত্র হেনরি ইংলিশ। এই হেনরী ছিলেন খুবই বৈচিত্রময় চরিত্রের লোক। কোম্পানীর দায়িত্ব নেয়ার আগে হেনরী ছিলেন কর্ণেল এফ এফ লিস্টারের পলিটিক্যাল এজেন্ট। ১৮৩৫ সালে এই লিস্টার অভিযান চালিয়ে জৈন্তিয়া রাজ্য দখল করেন। এর আগে হেনরি গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন জৈন্তা’র তরুন রাজা ছত্রসিংহের সাথে। হেনরিই ছত্র সিংহকে দিয়ে লিস্টারকে জৈন্তায় আমন্ত্রন জানান। গোয়েন্দারা রাজাকে সতর্ক করে দিয়েছিলো লিস্টার নিমন্ত্রন রক্ষায় আসছেন সশস্ত্র হয়ে, জৈন্তার ও সশস্ত্র থাকা উচিত। তরুন রাজা নিষেধ করেছিলেন বন্ধুর অপমান হবে ভেবে। ( এই গল্প আমরা বিস্তারিত করতে পারি জৈন্তিয়ারাজ্য পর্বে)
পরে হেনরি, কর্ণেল লিস্টারের কণ্যা সোফিয়াকে বিয়ে করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেন। খাসিয়া রাজাদের সাথে ও গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলে সমস্ত পাহাড়ের একচেটিয়া বন্দোবস্ত নিয়ে নেন। লিস্টারের মেয়ের জামাই হিসাবে প্রশাসনের উপর ও তার সেইরকম প্রভাব গড়ে উঠে। অন্য কোন ইংরেজ ব্যবসায়ী চুনা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ছাতকে আসলেই দেখা যেতো ‘অজ্ঞাত দেশীয় দুর্বৃত্তের’ আক্রমনে তাদের প্রান যায় যায় অবস্থা। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে কোম্পানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ও কোন লাভ হতোনা- স্বাক্ষ্য প্রমান কিছু মিলতোনা। তখন প্রশাসনিক সদর দপ্তর চেরাপুঞ্জি। চেরাপুঞ্জির এসিস্টেন্ট কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রে মিঃ হডসন অত্যন্ত সজ্জন। কোম্পানীর অন্যায্য মনোপলি তার পছন্দ নয়। এই খবর শুনে হেনরি তার দেওয়ান ব্রজমোহন রায়কে বললেন ‘রোসো, হডসনকে আমি আমার বিল্লি বানাবো’ । মাসিক একহাজার টাকা বেতন আর লাভের এক চতুর্থাংশের বিনিময়ে ‘সজ্জন’ হডসন ‘বিল্লি’ হয়ে গেলেন।
হেনরি আশেপাশের অনেক জমিদারী কিনে নেন এবং আগের দেশী জমিদারদের তুলনায় অর্ধেক কর ধার্য্য করেন। এ ছাড়া চাকরী ও ব্যবসার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সবাইকে নিজের বশে নিয়ে আসেন। লাউড়ের শাহ আরেফিনের দরগা, ছাতকের কালী মন্দির এবং ঢাকা দক্ষিনের শ্রীচৈতন্যের আখড়ায় কোম্পানী নিয়মিত অর্থসাহায্য প্রদান করতো। চেরাপুঞ্জিতে নিজের বাংলোয় রথযাত্রার আয়োজন করতেন। দেশী অভিজাতদের মতোই হুক্কা টানতেন আর পান খেতেন হেনরি। সেই আমলে কোম্পানীর কর্মচারীদের বাৎসরিক ছুটি, বোনাস, যাতায়াত ভাতা প্রদানের প্রথা চালু করেছিলেন। মুলতঃ ‘ইংলিশ কোম্পানী’ কারনেই চাকরী প্রার্থী ইংরেজ তরুনদের কাছে ছাতক হয়ে উঠেছিলো এক অবশ্য গন্তব্য।
১৮৬০ সালে ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে হেনরী মারা যান। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে ও ধুর্ত এক রাজনীতির চাল দিয়ে যান। বলে যান – যেনো তার মৃতদেহ চেরাপুঞ্জিতে মাটির উপর সমাহিত করা হয়। দশ বছর পর তার মমি করা দেহ চেরাপুঞ্জিতে এনে মাটির উপরেই বিশেষ কায়দায় সমাহিত করা হয়। জীবিত থাকা অবস্থায় খাসিয়া সর্দারদের সাথে বন্দোবস্তের চুক্তি করেছিলেন- যতোদিন তার দেহ মাটির নীচে না যায় ততোদিন বন্দোবস্ত চুক্তি বলবৎ থাকবে।

হেনরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে লিও ইংলিশ কোম্পানীর দায়িত্ব নেন। পিতা যতোটা ধূর্ত ছিলেন, পুত্র ততোটাই স্নবিশ। রাজধানী তখন সরে গেছে চেরাপুঞ্জি থেকে শিলং এ। লিও শিলং এ সুরম্য প্রাসাদ নির্মান করে থাকেন ( এটি এখন মেঘালয় পার্লামেন্টের স্পিকারভবন)। আসামের চীফ কমিশনার ইলিয়টের সাথে তার হাতাহাতি ঘটে আভিজাত্যের দ্বন্ধে।
ইংরেজ আমলারা শুরু করে অসহযোগীতা। এদিকে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ও অনেক ক্ষতি হয়। শিকার, নৌবিহার এসব ছেড়ে ব্যবসার ফালতু ঝুটঝামেলা লিও’র পোষায়না। তাই হুটহাট সিদ্ধান্ত কোম্পানী বিক্রী করে দাও! বৃটিশ সরকার পর্যন্ত তাকে এই হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানায়। কিন্তু লিও নাছোড়বান্দা। গৌরিপুর এস্টেটের সুপারিন্টেডের সাথে তার হৃদ্যতা ছিলো। কোম্পানীর চারলক্ষা টাকার সম্পত্তি আড়াই লাখ টাকায় গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর কাছে বিক্রীর সিদ্ধান্ত হয়। তখন ভাগ্যকুলের কুন্ডুরা ছিলো বাংলার অন্যতম ধনী পরিবার। তারা আরো পঁচিশ হাজার টাকা বেশী প্রস্তাব করে। কিন্তু ভদ্রলোকের )!) এক কথা। লিও ইংলিশ গৌরিপুরের জমিদারদের কাছেই কোম্পানী বিক্রী করেন।
সেদিন ১৯০২ সালের ২৯ শে মে। শেষ হয় ইংলিশ কোম্পানীর ১০৮ বছরের ইতিহাস। ১৯৫৪-৫৫ সালে জমিদারী প্রথা বাতিল হওয়া পর্যন্ত কোম্পানীর সমস্ত সম্পত্তি গৌরীপুরের এস্টেটের মালিকানাভুক্ত ছিলো।
অবশ্য এর মধ্যে ১৯৪০ সালে, কোম্পানী বিক্রয়ের ৩৮ বছর পরে ছাতকেই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলার একমাত্র বিলাতি মাটির কারখান – ‘আসাম বেংগল সিমেন্ট কোম্পানী’। এই কোম্পানীর প্রধান অংশীদার ছিলেন ময়ূরভঞ্জের মহারাজা আর বড়লাটের শাসন পরিষদের সদস্য মিঃ বলদেব সিঙ্ঘের পিতা সরদা ইন্দ্রসিংহ। ম্যানেজার পিঃ মুখার্জি। আর প্রধান স্থপতি দুই জার্মান- মিঃশেফার ও মিঃ ওয়ার্থ।

*** ব্লগারের কোন কৃতিত্ব নেই । পুরোটাই- অচ্যুতচরন তত্বনিধি ও সৈয়দ মুর্তজা আলীর বই থেকে টাইপ করে তোলে দেয়া হাসি


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

একটা বিষ‌‌য় নিশ্চিত করেন তো বস। "খাসিয়া" আর "খাসাস" বা "কাশ" কি একই বস্তু?

আংরেজরা যেটা বুঝেনা, সেইটাকে ঠাইসাঠুইসা নিজের মনপছন্দ একটা বাক্সে ভরে। ভারতের অমুসলিম সবাইরে তারা হিন্দু বানাইছে, সাহারার দক্ষিনের সুবিকষিত জনবিচিত্রতারে "ডার্ক আফ্রিকা" বা সাব-সাহারান আফ্রিকা বানাইছে। নিতান্ত হাওয়া থেইকা "পান্জাবী" নামক একটা জাতী আবিস্কার করছে।

কেরমে কেরমে অনুভব করতেছি, কাশ্মির থেইকা লাওস পর্যন্ত একটা সম্রাজ্য়বিমূখ পাহাড়বাসী জনগোষ্ঠীর বিস্তৃ্তির কথা, সমতলের সুখী খামারী কোচ ও সাংমাদের কথা, হাওর নদী তীরের কঐবর্ত আর মল্লবর্মনদের সুবিশাল নঔপল্লীর কথা। দূর পাহাড় থেইকা ভাইসা আসা গানের মত তাহাদের ইতিহাস ইন্দ্রীয়ে ধরা দেয় আবার দেয়না।

এক লহমা এর ছবি

"কেরমে কেরমে অনুভব করতেছি, কাশ্মীর থেইকা লাওস পর্যন্ত একটা সম্রাজ্য়বিমুখ পাহাড়বাসী জনগোষ্ঠীর বিস্তৃতির কথা, সমতলের সুখী খামারী কোচ ও সাংমাদের কথা, হাওর নদী তীরের কৈবর্ত আর মল্লবর্মনদের সুবিশাল নৌপল্লীর কথা। দূর পাহাড় থেইকা ভাইসা আসা গানের মত তাহাদের ইতিহাস ইন্দ্রিয়ে ধরা দেয় আবার দেয়না।"
-ঠিক তাই, দুর্দান্ত!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. না। খাস/খাসাস/কাশ'রা হচ্ছে ইন্দো-আরিয়ান আর খাসি'রা হচ্ছে অস্ট্রো-এশিয়াটিক।

২. পাঞ্জাবীরা ঠিক হাওয়া থেকে বানানো না। ক্ষাত্রী, অরোরা, গুর্জ্জর, জাঠ, রাজপুত, কম্বোজ, পিন্ডারী, নেওয়ারী, রাঠী, গাড়োয়ালী, কুমায়ুনী প্রভৃতি জাতিকে একত্রে পাঞ্জাবী বলাটা ভুল কিছু না। সবাই তো ওই পঞ্চ-আবেরই সন্তান। যেমন, উৎকল আর কোশলকে একত্রে ওড়িশা বলা ভুল নয়। বিহার আর ওড়িশা তো বহু বহু কাল বঙ্গের সাথে ছিল। তাহলে কোনটাকে ঠিক বলবো? বাঙালীদেরকে চার-পাঁচ ভাগ করা হয়েছে নাকি চার-পাঁচ রকম মানুষকে জোর করে বাঙ্গালী বলা হয়েছে।

৩. পাহাড়বাসীরা ঠিক সাম্রাজ্যবিমূখ নয়। প্রাকৃতিক দুর্গমতার জন্য তাদের সাম্রাজ্য আকারে বাড়তে পারেনি। তবু মধ্য এশিয়ার ছোট ছোট পাহাড়ি জাতিরা বড় বড় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।

কোচ, হাজং, সাঁওতাল অথবা কৈবর্ত বা মল্লবর্মণ (মূল্যব্রহ্মণ)-রা কিন্তু একে বারে চুপচাপ ছিলো না। আমাদের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তারাও কখনো কখনো তথাকথিত বড় সাম্রাজ্যদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে বা ধ্বসিয়ে দিয়েছে।

মা-গঙ্গা (মেকং) নদীর অববাহিকায় প্রায় ছেচল্লিশ হাজার বছর ধরে বাস করাদের কথা আর কী বলবো। কতো সাম্রাজ্য গড়লো আর ভাঙলো। এক চম্পা নগরের সাম্রাজ্যই তো চললো বারোশ' বছর ধরে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিজিবিজি এর ছবি

ভাল জবাব

এক লহমা এর ছবি

চিত্তাকর্ষক কাহিনীগুলি আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ মোরশেদ-ভাই!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

হাসিব এর ছবি

অজ্ঞাত দেশিয় দুর্বৃত্ত জিনিসটা ইন্টারেস্টিং। এই কনসেপ্ট প্রথম কবে ব্যবহৃত হয়েছে সেটার ওপর গবেষণা হওয়া দরকার। মার্কিনিরা এই জিনিসের পুনর্জীবন দান করেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'অজ্ঞাত দেশীয় দুর্বৃত্ত'রা রাষ্ট্রগঠনের শুরু থেকেই ছিল। ঘাড়ত্যাঁড়াদের শাসন করা, বাকোয়াজদের মুখ বন্ধ করা, উৎসাহী ব্যবসায়ীদের বাড়ির রাস্তা দেখানো, শাসন/শোষণ ইত্যাদিতে মনোপলি বজায় রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে 'অজ্ঞাত দেশীয় দুর্বৃত্ত'রা খুব কার্যকর ব্যবস্থা। এতে সাপও মরে, লাঠিও ভাঙে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা হা ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

একেবারে বৈঠকি ঢং এ গল্প ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। ভাল লেগেছে। চলুক

সোহেল লেহস

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই যুগে লণ্ডন ঘুরে এসে সিলেটিরা লর্ড হয়, আর সেই আমলে সিলেট ঘুরে গিয়ে বিলাতীরা লর্ড হতো। ইতিহাসের উল্টো হাওয়া একেই বলে বোধহয়। খাইছে

মুর্তজা সাহেব একটা তথ্যবিভ্রাট করেছেন মনে হয়। বলেছেন ১৭৬৫ সালে মীর জাফরের কাছ থেকে কোম্পানী চুনাপাথরের ইজারা নেয়। এই সালটা ১৭৬৩/৬৪ হতে পারে কেননা মীরজাফর ১৭৬৫ সালের ১৭ জানুয়ারীতেই নরকে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো চলুক
ইসরাত

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সেরাম লেখা বস।

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।