মানুষ বিস্মৃতিপ্রবণ, কিন্তু মানুষের সৃষ্ট ইতিহাস মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দেয় অনেক সত্য। সেই সত্য অপ্রিয়, অগ্রহনযোগ্য মনে হলে ও ইতিহাসের তাতে কিছু যায় আসেনা। ‘গনতন্ত্রে’র জন্য যে ‘রাজনৈতিক’ আন্দোলনের নামে যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি ঠেলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে- সেই ‘গনতন্ত্র’, সেই ‘রাজনীতি’ আদতে কোনদিনই ছিলোনা আন্দোলনকারী জোটের নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল( বিএনপি)’র। ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত বাংলাদেশকে বদলে দেয়া অপশক্তিগুলোর সম্মিলিত প্লাটফর্ম বিএনপি। মুখপাত্র হিসাবে পাদপ্রদীপে অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী মেজর জিয়া, আর এক পাশে বিচ্যুত বাম যারা মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে চিহ্নিত করেছিলো আরেক পাশে জামায়াতে ইসলামী সহ ডানপন্থী দলগুলো যারা গনহত্যায় অংশ নিয়েছিলো। সামরিক শাসক , বিচ্যুত বাম আর গনহত্যাকারী ডানপন্থীদের সম্মিলনে যে প্লাটফর্ম- সে আর যাই হোক গনতন্ত্রকামী, নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারেনা।
তবু ইতিহাস কাউকে কাউকে কখনো কখনো সুযোগ করে দেয় নিজেকে সংশোধনের। শুভ’র পক্ষে, স্বাভাবিকত্বের পক্ষে, নিয়মতান্ত্রিকতার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার। আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিলো, বিএনপি সুযোগ নিয়েছিলো এবং ফলাফল পেয়েছিলো। দীর্ঘ পনেরো বছরের সামরিক শাসনের পর অবাধ গনতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগনের ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিলো তারা। তখন গোটা পৃথিবীতেই বইছে পরিবর্তনের হাওয়া, স্নায়ু যুদ্ধের আপাততঃ অবসান ঘটেছে, মুক্ত অর্থনীতির জয় জয়কার- অনেক আত্মদানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ, নতুন স্বপ্ন। বিএনপি সুযোগ পেয়েছিলো সেই শুভ স্বপ্নের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার- নিজের জন্ম পাপ মোছে গনতান্ত্রিক, স্বাভাবিক রাজনীতির ধারায় চলার।
মাগুরার উপনির্বাচন, ১৫ ফেব্রুয়ারীর গা জোয়ারী নির্বাচন স্মৃতিতে রেখেও বলা যায় ১৯৯১ থেকে ৯৬ সময়কালে বিএনপি মোটামুটি নিয়মতান্ত্রিক রাজণীতির ধারাতেই ছিলো। এসময়ে যে বিরোধী দল দমন, রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়নি তা না, কিন্তু যে মাত্রার তা বাংলাদেশ মাপে অস্বাভাবিক মাত্রার ছিলো বলা যায়না। তখনো খালেদা জিয়া বিএনপির মুখ্য চালিকা শক্তি, তারেক রহমান নয়।
২০০১’র নির্বাচনে যে বিএনপি ক্ষমতায় এলো তার ও প্রধান খালেদা জিয়া বটে কিন্তু চালকের আসনে তখন আসীন তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিএনপি আর খালেদা জিয়ার বিএনপি যে এক না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলো বাংলাদেশ পরবর্তী পাঁচ বছর। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও প্রথম পর্যায়ের ক্ষমতাকালীন সময়ে বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক রাজণীতির ধারায় প্রবেশ করার যে প্রবণতা দেখিয়েছিলো- তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয়বারের ক্ষমতার বিএনপি সেটাকে অস্বীকার করে ফিরে গেলো তার মৌলে। সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র, বিরোধীপক্ষকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে উৎখাতের চর্চা শুরু হলো তারেক রহমানের তত্বাবধানে। চাইলেই স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা সম্ভব না- ২০০১ এর নির্বাচনের পর পরই দক্ষিন বাংলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চালিত গনসন্ত্রাস, আহসান উল্লাহ মাষ্টার- শাহ কিবরিয়ার মতো সজ্জন রাজনীতিবিদদের হত্যা, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একুশ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, দেশ জুড়ে জঙ্গীবাদের উত্থানে প্রনোদনা যোগানো- তালিকা ছোট নয়। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে রাজনৈতিক সংঘাত অপ্রচলিত নয় কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী রাজনীতিকদের তালিকা করে হত্যা, প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা কোনভাবেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সংজ্ঞায় পড়েনা।
ধারনা করা হয়েছিলো ১/১১ এর সময় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুইদলকেই যে তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিলো, পরবর্তীতে ন্যুনতম সমঝোতাটুকু তারা নিশ্চিত করবে। তারেক রহমান ইতিমধ্যে দেশ ছাড়া কিন্তু খালেদা জিয়ার হাতে বিএনপির লাগাম আর নেই। বিএনপিকে গ্রাস করে নিয়েছে সর্বাংশে সন্ত্রাসী সংগঠন, গনহত্যার দোসর জামাত। ফলে বিএনপির তত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন বা সরকার বিরোধী আন্দোলন আর রাজনৈতিক আন্দোলন থাকেনা, সেটা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য বাংলাদেশ রাষ্টের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমন- যে সকরুণ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে ২০১৩ এর ডিসেম্বর মাস জুড়ে। যাত্রীবাহী গাড়ী ও রেলে আগুন, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, থানা আক্রমন, পুলিশ হত্যা কোন পরিস্থিতিতে নিয়মতান্ত্রিক রাজণীতি নয়, নয় সরকার বিরোধী আন্দোলন।
দেশ ব্যাপী এই নজরবিহীন সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েও বিএনপি জামায়াত জোট ৫ জানুয়ারী ২০১৪ র একতরফা, অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন আটকাতে পারেনি, পারেনি সরকার গঠন থামাতে।
একবছর পর গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে আবার শুরু হয়েছে সন্ত্রাস ও হত্যার বিভীষিকা। গনতন্ত্র হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যেখানে সরকার ও বিরোধীদল দুপক্ষেই জবাবদিহীতা করতে হবে। গনতন্ত্র যেমন সরকারের জন্য নয়, তেমনি বিরোধী দলের জন্য ও নয় ব্ল্যাংক চেক নয়। মত প্রকাশ করার- রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করা গনতান্ত্রিক অধিকার কিন্তু সন্ত্রাস কোন অধিকার নয়। সরকার বিরোধী আন্দোলন আর রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড কোনভাবেই এক হতে পারেনা। বিএনপি জামায়াত জোট নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা থেকে সরে এসেছে ২০০১-০৬ সময়ের মধ্যে, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে কবর দিয়েছে ২০১৩ এর ডিসেম্বরে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে সন্ত্রাসের মাধ্যমে এবং নিজেদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আরো বেশী করে প্রতিষ্ঠিত করছে চলমান ‘গনতান্ত্রিক’ আন্দোলনের কালে।
বিএনপি- জামাত জোট ছাড়াও সরকারের বাইরে ক্রিয়াশীল আরো কিছু গোষ্ঠী রয়েছে। বামধারার ছোট ছোট রাজণৈতিক দল যাদের ভোটের শক্তি না থাকলে ও মিডিয়া কাভারেজ আছে, আছেন প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী, সুশীল বলে পরিচিত কিছু মুখ এবং এনজিও মালিকেরা- এরা সরকার এবং বিরোধী দল দুপক্ষেরই সমান সমালোচনা করে, দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান আশা করছেন। নানা চ্যানেলের টক শো, পত্রিকার কলামে এমনটি দেখা যাচ্ছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলমান সন্ত্রাসকে এরা ‘রাজনৈতিক সমস্যা’ বলে এখনো বিবেচনা করছেন। কিন্তু কোথাও কেউ এই প্রশ্নটি উত্থাপন করছেন না- গনতন্ত্রের কোন কাঠামোতে, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির কোন ধারনায় বিরোধী দলের সশস্ত্র চোরাগোপ্তা হামলার সুযোগ আছে? সরকারকে আলোচনায় বসার দাবী জানানোর আগে কেনো বিরোধী দলকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছেনা সন্ত্রাস পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার? কেনো একটা খুব স্থুল বিষয় আমরা স্বীকার করছিনা- একটা রাজনৈতিক দল যখনই গাড়ীতে আগুন দিলো, পথচারীর উপর পেট্রোল বোমা হামলা করলো, রেল লাইন উপড়ে ফেললো তখন সে আর রাজণৈতিক দলের মর্যাদা দাবী করতে পারেনা।
২০১৪ এর ৫ জানুয়ারীর যে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সেটি আইনের বিবেচনায় অবৈধ না হলেও গনতন্ত্রের ধারনায় অগ্রহনযোগ্য। হোক অগ্রহনযোগ্য তবু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়া একটা সরকার। রাষ্ট্রের প্রতি, জনগনের প্রতি তার নৈতিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। চলমান সন্ত্রাস মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন সরকার আসলেই কতোটুকু আন্তরিক সেই প্রশ্ন তোলার এখনই সময়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কি পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে? গনবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে বিরোধী দল জনগনের কাছে আরো অগ্রহযোগ্য হতে থাকুক, এটাই কী আওয়ামী কৌশল? একটা রাজনৈতিক দল যে কোন পরিস্থিতি থেকেই নিজের ফায়দা আদায় করবে, করুক কিন্তু অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন করছে কিনা সেই হিসেব কিন্তু সময়ের কাছে দিতেই হবে। সন্ত্রাসী হামলায় ফ্রান্সের বারোজন নাগরিক নিহত হলে রাষ্ট্র হিসাবে ফ্রান্স কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেই উদাহরন আমাদের চোখের সামনেই। হোক তৃতিয় বিশ্বের একটা দেশ, তবু তো বাংলাদেশ একটা রাষ্ট্র- তার একটা সরকার আছে, বিদ্যমান কাঠামো আছে, নিরাপত্তা বাহিনী আছে, আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্য প্রতি বছর বাজেট বরাদ্দ আছে। কিন্তু সেই নিরাপত্তা দৃশ্যমান কোথায়? পুলিশের গাড়িতে আক্রমন হলে পরে আক্রমনকারী গুলিবিদ্ধ হয়- যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে সন্ত্রাসী নিরাপদে পালিয়ে যায় কী করে?
দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। প্রধান একটা রাজনৈতিক দল যারা একাধিকার ক্ষমতায় গিয়েছে নির্বাচিত হয়ে, আগামীতে ও নির্বাচিত হবার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে অথচ এই রাজনৈতিক দলটি তার জোটসুদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। ক্ষমতায় আছে যে রাজনৈতিক দলটি, গণসম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস থাকার পর ও দায়িত্ব পালনে কঠোর হবার বদলে রাজনৈতিক কলা-কৌশলে আগ্রহী আর এর বাইরে যাদের প্রভাব বিস্তার করার সামর্থ্য আছে তারা স্বেচ্ছায় ভুল ছবিতে মনোযোগী। এরকম একটা আপাতঃ অসহায় সময়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ার যে আশংকা তৈরী হয়েছে, আমরা কেউ নিরাপদ নই তার থেকে এবং আমাদের প্রত্যেককে এর মূল্য দিতে হবে চড়া দামে।
নিষ্ঠুর, নির্মোহ ইতিহাসের পাতায় লেখা হবে- গনতন্ত্রের নামে, অধিকারের নামে একটা দুঃখিনী দেশের মানুষকে পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়েছিলো এককালে - প্রতিরোধের কেউ ছিলোনা কোথাও।
মন্তব্য
মিডিয়াগুলো প্রবলভাবে চেপে যাবার চেষ্টা করছে, তবে কিছু প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এটাই আশার কথা। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের মতেঃ "বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপদজনক।" তবু, প্রতিবাদ জারী থাকুক, ছড়িয়ে যাক, এটাই প্রত্যাশা!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইসব বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদে আসলে কতোটুকু কী হবে, আমি জানিনা। একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল- দেশের ৩০-৩৫% মানুষ যাকে সরাসরি সমর্থন করে, সেই দল যদি এরকম সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠে- তাহলে পরিনতিটা কী দাঁড়াচ্ছে? বিএনপি তো 'নাই' হয়ে যাবেনা,এই শূন্য জায়গাটা আর কেউ পুরন ও করবেনা। নৈরাজ্যের রাজনীতি থেকে বিএনপির ফিরে আসার কোন পথ ও আমি দেখিনা, এটাই হতাশার। আওয়ামী লীগ নির্বাচন দিলে ও বিএনপি সুযগ পেলেই এই পথে হাঁটবে কারন তার চরিত্রের সাথে এটা যাচ্ছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শিওর না মোরশেদ ভাই, জাসদ "নাই" হয়েই কিন্তু বিএনপি জন্ম নিয়েছিল। জাসদের জনভিত্তি ও হঠকারিতা দুইই ছিল। আখেরে টেকেনি। প্রকৃতির নিয়মে এই ঘটনা ঘটতেই পারে। এই মানুষগুলো "নাই" হয়ে যাবেনা এটা সত্য, কিন্তু নেতৃত্বে কে থাকবে সেটাই চিন্তার কথা।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পুনশ্চঃ
এই যে আবার, মিডিয়া যদি দয়া করে এই খবরগুলো একটু প্রচার করে, তবে ছড়িয়ে যেতে দেরি হবে না। কিন্তু তারা সবাই সৌদি বাদশাহকে ছাড়িয়ে ছোট গণতন্ত্রের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যাস্ত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বিএনপি এখন আরাফাত রহমান কোকোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যাস্ত।
- ওমেশু
কমেন্ট পড়ে মনে হতে পারে, জন্মের পর থেকে কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিএনপি মানবতাবাদী দল ছিল, সঙ্গদোষে মাত্র কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসবাদী হয়েছে। হাজার হাজার সেনাসদস্যের হত্যাকান্ডের মাধ্যেমে যে দল এবং দলনেতার যাত্রা শুরু সেই দল বা দলনেতার সাথে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এসব বলে টকমারানোর কিছু আছে বলে মনে করি না।
আমরা কেউ কেউ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা নিয়ে সুখস্মৃতির জাবর কাটি। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা তো বলেন ভিন্ন কথা। সেই আমলেও 'আপোষ' কেনা বেচার ডিল হয়েছিল।
খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি
বড় এক সংখ্যক টকশোজীবীকে দেখা যাচ্ছে অনবরত ইনিয়ে-বিনিয়ে এই কথা বলতে যে - বিম্পিই যে এসব করছে তার প্রমান কি? তবে, আমরা সন্ত্রাসের নিন্দা জানাই, কিন্তু -বিম্পিকে সমাবেশ করার অধিকার না দিলে, মিটিং-মিছিল করার অধিকার না দিলে (ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াও-এর অধিকারটা এই অধিকারের প্যাকেজ ডীলের মধ্যেই পড়ে বলে মনে হয় তারা সেটা আর উল্লেখ করেন না), স্পেস না দিলে - এইসব সন্ত্রাস তো ঘটবেই! এছাড়া আর কি ঘটতে পারত?
সন্ত্রাসের নিন্দা দিয়ে শুরু করে, একটা বিরাট "কিন্তু" -তে বিরাট মোচড় খেয়ে, শেষ লাইনে এসে এরা আবার ঠিকই ঐ সন্ত্রাসকেই জাস্টিফাই করেন! এই শেষ লাইনটা উনারা এমনভাবে বলেন যেন, এই বাসে / ট্রেনে / মানুষের গায়ে আগুন দেয়াটা কোন মানুষ করছে না, বিম্পি-তো নাই-ই, এটা স্রেফ বিম্পিকে সমাবেশ করার অধিকার না দেয়ার একটা 'প্রাকৃতিক' প্রতিক্রিয়া - লিটারেলি প্রকৃতির প্রতিশোধ জাতীয় কিছু। কিম্বা, ভূতে এসে করছে।
এইসব বুদ্ধিবেশ্যা, টকমারানি, টকত্রাসী-রা মনে করে তারা ছাড়া দেশের আর সবাই এতই অবিশ্বাস্যরকম ঘাস খায় যে, এইসব বোমাবাজি / আগুনবাজি কারা করছে, কেন করছে - তা চোখের উপর দেখা সত্ত্বেও বুঝতে পারবে না যে এগুলি 'মানুষ'ই করছে না মামদো ভূতে করছে এবং কেন তারা এইসব করছে। কাদের নির্দেশে বা প্ররোচনায় করছে। অন্যভাবে বললে, এইসব টকমারানিরা সন্ত্রাসের নিন্দায় প্রাথমিক লিপ-সার্ভিস দিলেও, পর-মুহূর্তেই প্রকাশ্য টেলিভীষণেই ঘোষণা করছে এবং এই কার্যকারন (কজ এ্যান্ড ইফেক্ট) ও সমীকরনের নৈতিক সমর্থন করছেঃ
ইনারা এই সমীকরণে শুধু এইটুকুই ফাঁক রাখেন যে, এই কাজ কে করছে - কেন করছে তারা জানেন না (যদিও বিম্পিকে সমাবেশ করতে না দিলে নাকি এটা অবধারিত! )। সুতরাং বিম্পি-জামাতকে দোষ দেয়া যাবে না।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, প্রায় সবকটা চুষিল টকমারানিই ইদানিং এই অসম্ভব হাস্যকর যুক্তি-পরম্পরাটাই মূলত হাজির করছে। তো, এই (কু)যুক্তি-পরম্পরার মধ্যে ফাঁক বা গ্যাপটা কি আমরা ফিল-ইন-দি-ব্ল্যাঙ্ক করে দিতে পারি না? বোমা / আগুন যেহেতু 'মানুষ'-ই (বা মানুষরূপী দু'পেয়ে প্রাণীরা) মারে, আর তাদের কথানুযায়ী এটা যেহেতু বিম্পিকে সমাবেশ করতে না দেয়ার বিকল্পহীণ অবধারিত ফল, সুতরাং এই মানুষগুলি কাদের প্ররোচনায় এসব করছে তা কি আর বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে? তাহলে উপরের সমীকরণ যারা প্রকাশ্য মিডিয়াতে প্রমোট করছে, ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে-ইনিয়ে-বিনিয়ে জায়েজ করার চেষ্টা করছে, তাদের কেন আমরা বোমাবাজ / আগুনবাজ সন্ত্রাসীদেরই সমতুল্য ও তাদের মতাদর্শিক ভ্যনগার্ড - টকত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করবো না? কেন এদের জন্য "টকত্রাস দমন আইন" প্রণয়ন করা হবে না? কেন নিদেনপক্ষে বিদ্যমান আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হবে না?
****************************************
এরকম ঘাস খাওয়া পাবলিকও কিন্তু কম না। বোমা, গান পাউডার সহ ছাত্রদল/শিবির কর্মী গ্রেফতার হচ্ছে তারপরেও তারা বলে এটা যে সরকারই করছে না তার প্রমাণ কি? যারা সবকিছু চোখের সামনে দেখেও "তালগাছ আমার" মনোভাব নিয়ে চলে তাদের আসলে কোনও যুক্তি দিয়েই কিছু বোঝানো যায় না।
- ঘুমকুমার।
ইয়ে, শিরোনামে ওটা "স্বাক্ষী" না - "সাক্ষী" হবে মনে হয়।
****************************************
মনে হয় না, নিশ্চিত ভাবেই ওটা সাক্ষী
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আঁই কি কইচ্চি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইদানিং আমার হুমায়ুন আজাদ স্যার এর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।রাজনীতির জারজ সন্তানরাই কুলাঙ্গার নামে পরিচিত যাদের জন্ম ১৯৭৫ এর পর থেকে আর গর্ভে ছিল ৩.৫ বছর। আজ জারজদের কীর্তি দেখে কেউ হাসছে আবার কেউ বা কাদছে।
-------------
রাধাকান্ত
নতুন মন্তব্য করুন