কুড়িগ্রামের মফিজ ও সৌদি প্রিন্স:উম্মাহ,আমল-আয়না

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৫/২০০৬ - ৮:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ 'আস্তমেয়ে'--আপনাকে আস্ত একটা ধন্যবাদ । আমার একটা মন্তব্যে আপনি প্রিতক্রিয়া জানানোর প্রেক্ষিতে এই লেখা ..]

আপনি খুব সৌভাগ্যবান -একজন মিস ম্যাথুস ছিলেন আপনার জন্য (আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করুন)। আরেকজন মা যখন একদল ধর্ষকের কাছে করজোড়ে বলছেন 'বাবারা একজন একজন করে আসো.. আমার মেয়েটা খুব ছোট মাত্র তের বছর!'... তখন আল্লার আরশ কেঁপে উঠেছিল কিনা জানিনা তবে কোনো জনাব /জনাবা যে এগিয়ে আসেননি সেটা জানি । কারন মা মেয়ে স হ এই পরিবারের সাতজন নারী ধর্ষিত হবার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল আর এইসব ঘটনা বিশ্ববাসীকে জানাবার অপরাধে নির্যাতিত হতে হয়েছে শাহরিয়ার কবির,মুনতাসীর মামুনকে ।
ইসলাম শান্তি আর মানবাধিকারের বলে যারা আওয়াজ তোলেন,কই কাউকে তো এসবের বিরুদ্্বেরুখে দাড়াতে দেখিনি! কাউকে বলতে শুনিনি -- এটা ইসলামের অপমান । দুর্বলকে আঘাত নয় অভয় দেয়া --নবীর শিক্ষা , একজন মানুষ হত্যা করা হলে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করা হয়--এটা কোরানের বানী । দেশে তো মাশাল্লাহ মাওলানা,মুফতি,শায়খুলদের বন্যা লেগে আছে ।
কল্পনা চাকমা'র কথা মনে আছে? হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই নেত্রীকে তুলে এনেছিল সেনাবাহিনী। একযুগ পেরিয়ে গেছে তার সনধান মেলেনি ।
দুটো ঘটনাই কিন্তু বাংলাদেশের । 88 ভাগ মুসলমানের দেশ, ইসলামী মুল্যবোধের দেশ, সংবিধানে বিসমিললাহ লাগানো দেশ !
কি বলবেন? এসব মিথ্যে গলপ? বাংলাদেশ আর ইসলামের বিরুদ্্বে ষড়যন্ত্র? নাকি ইসরাইলের নির্যাতন আর আমেরিকার গনহত্যার প্রসঙ্গ তুলে আমরা জাস্টিফাই করবো নিজেদের পাপ?
জানিনা মানবাধিকার বলতে কে কি মীন করেন । কিন্তু আমার কাছে ক্ষুধা আর দারিদ্্রের মত অমানবিক আর কিছু নেই । পৃথিবীর নিরন্ন মানুষের মাঝে মুসলমানদের সংখ্যা সবথেকে বেশী কেন? কুড়িগ্রামের এক মফিজ যখন না খেয়ে মারা যায়, সৌদি'র এক প্রিন্স কেন জুয়ার টেবিলে ঢেলে দেয় লক্ষ লক্ষ ডলার? মুসলিম উম্মাহ তখন শূন্যে মেলায়!
আমেরিকার বুলেটে যখন ইসরাইলী সৈন্য হত্যা করে ফিলিস্তিনি কিশোরকে তখন বুশের সেবাদাস হয়-- সৌদি,মিশর,আমিরাত,কুয়েত,কাতার,পাকিস্তান,বাংলাদেশ( দু:খিত কাকে রেখে কাকে ছাড়ি!)
আর আমরা যদি ইতিহাস এ নিরপেক্ষ হই, ইসরাইল বিরোধী সশস্ত্রসংগ্রামে অনেক নেটিভ খ্রিষ্টান ও ছিলো । কারন এটা মুলত: স্বাধীনতা সংগ্রাম ,ইসলামী েেজহাদ নয়(এমনকি হামাস প্রধান ও নির্বিচন পরবতর্ী ভাষনে তাই বলেছেন)। আর ইতিহাস বলে ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের গুলি করে হত্যা করেছিলো জর্ডান । প্রান বাঁচাতে আরাফাত কে তিউনিশিয়ায় পালিয়ে যেতে হয়েছিলো ।আরো জানা প্রয়োজন ইসলামী দেশ গুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে । ইসরাইল ও পাকিস্তানের সরকারী বৈঠকের খবর ও পুরনো ।
বলা যায়, এসব ইসলামের দায় নয় । সত্যি কি নয়?
যে কোনো ধর্মবা মতবাদের অনুসারীদের আচরন ও কার্যক্রমই সেই ধর্মবা মতবাদের মুল্যায়ন ।
মুসা তো আর ইহুদীদের অন্যায় ভাবে একটা দেশ দখলের জন্য বলেননি । আর খ্রীস্টানদের ও কোথা ও হত্যা দখলের নির্দেশ দেয়া হয়নি । তবু আমরা এসবের জন্য ইহুদী ও খ্রীস্টানদের দায়ী করি। কারন এই অন্যায় গুলোর সাথে কোনো না কোনো ভাবে ধর্মকে জড়ানো হয়েছে । তাই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে সংখ্যালঘু মেয়ে ধর্ষন করা হলে, ভিন্নধর্মী'র জায়গা দখল করে মসজিদ বানানো হলে, পাকিস্তানে শরীয়া'র নামে ধর্ষীতাকে পাথর ছোড়া হলে, মধ্যপ্রাচ্যে রাজতন্ত্র ব হাল থাকলে-- এসব দায় আমাদেরকে নিতে হবে । নাহলে প্রতিবাদ করে বলতে হবে এসব ইসলাম নয়..
অন্যদের দেখাতে হবে কেনো আমরা অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ । কিন্তু এই প্রতিবাদটুকুই তো ইসলামী বিশ্বর কোথাও নেই ।
আমি ভেবে অবাক হই, তায়েফের শিক্ষা যদি হয় চরম প্রতিকুলতার মাঝে ও ধৈর্য্য ধারন করা , প্রতিশোধ না নিয়ে আল্লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা --তাহলে আমরা এতো অস্থির , অস িহষু কেনো? আমরা কেনো কোনো ভিন্নমত , সমালোচনা স হ্য করছিনা? বলা যেেেত পারে , খ্রিস্টান চার্চও গ্যালিলিওকে ভিন্নমতের জন্য নির্যাতন করেছিল, কোপার্নিকাস, জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল । আর যীশুকে তো ক্রুশ বিদ্ধ করেছিল ধার্মিক ইহুদিরাই েেযমন মনসুর হেল্লাজকে ভিন্নমতের জন্য হত্যা করেছিল ধার্মিক মুসলমানরাই ।বলা প্রয়োজন তিন সম্মানিত খলিফা , হযরত হাসান হোসেন স হ নবী পরিবারের অনেেেকই নিহত হয়েছিলেন ( আল্লাহ সবাইকে বেহেশত নসীব করুন) ।এসব হত্যাকারী খ্রিস্টান বা ইহুদি ছিলোনা । এরা ও মুসলমান !!! । সময়ের বিবর্তনে ইউরোপীয় সমাজ নিজেদের কে মুক্ত করেছে চার্চের কবল থেকে( হয়তো এখনো পুরোটা নয়)। তাই 'দ্যা ভিনচি কোডে' যীশুকে নিয়ে গাজাখুরী করলে ও ক্যাথলিক চার্চ বিবৃিত দিয়ে প্রতিবাদ জানানো ছাড়া কিছুই করতে পারেনি । একই ঘটনা আমাদের নবীকে নিয়ে হলে? আমি সত্যি বোঝিনা তসলিমাকে দেশছাড়া করে, হূমায়ুন আজাদ কে টুকরো টুকরো করে , রুশদীর বিরেুদ্ধ মৃতু্য পরোয়ানা ঘোষনা করে , স্যটানিক ভাের্সস এর জাপানী ও ইটালীয়ান অনুবাদকদের হত্যা করে আমরা ঠিক কতোটুকু ইসলামের কাজ করেছি? আল্লাহ তালা কি সমস্ত বিচারের ভার আমাদের দান করেছেন?
এইলেখা পড়ে যদি কারো মনে হয় আমি শুধু ইসলামের সমালোচনা করেছি তাহলে ক্ষমাপ্রাথর্ী।
একজন মুসলমান হিসেবে জেনেছি অন্যদের দোষ খুঁজার আগে িনজেদের সমালোচনা করা জরুরী ।
এবং আমি গর্ববোধ করি আমার ধর্মনিয়ে কারন আমার ধর্ম আমাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছে । একজন মুসলমান হিসেবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আর তার রাসূল ছাড়া আর কারো কাছে আমার কোনো আনুগত্য নেই । একমাত্র পবিত্র কোরান আর বিশুদ্ধ হাদীস ছাড়া আর কোনো নির্দেশনা মানতে আমি বাধ্য নই । একজন পাদ্্রী বা রাব্বী খ্রীস্টান বা ইহুদীদের ব্যক্তি জীবনকে যেভাবে নিয়ন্ত্রন করেন, ইসলাম সে রকম কোনো অধিকার কোনো ধমর্ীয় বা আধ্যাতি্নক নেতাকে দেয়নি । একজন মুসলমানকে কনফেস করতে হলে কোনো ইমাম লাগেনা কারন ইসলাম কাউকে আলাদা শ্রেষ্ঠত্য দান করেনি । সব মুসলমানই সমান আর তাই আমরা কেউই সমালোচনার উধের্্বনই ।
পরম করুনাময় আল্লাহ সবাইকে মার্জনা করুন.। .।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।