প্রত্যন্ত গ্রাম লাইল্যাগোনা থেকে সে মেয়ে এসেছিল শহর রাংগামাটিতে কলেজে পড়বে বলে ।
তার বছর বিশেক আগে থেকেই তারা সংখ্যালঘু হওয়া শুরু করেছে নিজের মাটিতে । তাদের পাহাড়ে গাড়ী ভরে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আসা হচ্ছে সমতল থেকে ।
তারা ভূমি হারাচ্ছে , শরনাথী হচ্ছে , বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের নামে চলছে নিযাতন চারিত্রিক ভাবে সবথেকে সরল মানুষগুলোর উপর ।
মেয়েটা এসব বুঝতো, প্রতিবাদ করতে চাইতো । তাই কমবয়সেই সে হতে পেরেছিলো মানবাধিকার সংগঠনের সহ -সভাপতি ।
তার নাম কল্পনা চাকমা ।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই নেত্রী তখন ব্যস্ত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনায় । এভাবেই কল্পনা চাকমা তার একটিভিটিসের জন্য টার্গেট হয়ে পড়ে সেনাবাহিনীর ।
১২জুন। রাত ১টা ।
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর জাতীয় সংসদ নিবাচন । কোজোইছড়ি আর্মিক্যাম্পের ল্যাফটেনেন্ট ফেরদৌস তার ১১জন সিপাহী নিয়ে ঘেরাও করে কল্পনাদের বাড়ী ।
চোখ বেঁধে তুলে আনা হয় কল্পনা ও তার ভাই ক্ষুদিরাম চাকমাকে ।কিছুদূর আসার পর গুলি করা হয় ক্ষুদিরামকে । সে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে প্রান বাঁচায় । কল্পনা রয়ে যায় অপ হরনকারীদের জিম্মায় ।
পরদিন সকালে ক্ষুদিরাম ও পরিবারে র অন্যান্যরা নিকটবর্তী সেনা ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে গেলে তাদের শান্তিবাহিনীর চর বলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয় । পুলিশ স্টেশনে এফ.আই.আর করতে গেলে একই অবস্থা ।
কল্পনা চাকমা অপ হরনকে কেন্দ্রকরে পুরো পার্বত্য চট্রগ্রাম উত্তপ্ত হয়ে উঠে । সরব হয় সারাদেশের মানবাধিকার সংগঠন গুলো । সেনাবাহিনী প্রথমে পুরো ঘটনা অস্বীকার করে ।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো র চাপের মুখে নতুন গল্প হাজির করে । 'লে: ফেরদৌসের সাথে কল্পনার প্রেম ছিলো এবং সে স্বেচ্ছায় পালিয়ে এসেছে ।কিন্তু সেনাবাহিনীর কাছে তার কোনো হদিস নেই ।'
[ দিনাজপুরের ইয়াসমিনকে ধর্ষন করে হত্যা করার পর ও পুলিশ গল্প বানিয়েছিল সে খারাপ মেয়ে , পতিতা ]
এই গল্প প্রত্যাখান হবার পর সেনাবাহিনী হাজির করে আরেক কাহিনী ' কল্পনার পাসপোর্টছিল এবং সে ভিসা নিয়ে ভারতে চলে গেছে '
। কিন্তু আন্তর্জাতিক তদন্তে এটা ও মিথ্যা প্রমানিত হয় । বস্তুত: কলপনার আদৌ কোনো পাসপোর্ট ছিলোনা ।
সবশেষে ফাজলামীর চুড়ান্ত করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । হেলিকপ্টারে করে সমস্ত পাহাড়ে লিফলেট ছড়ায়: কল্পনার সন্ধান দিতে পারলে ৫০,০০০ হাজার টাকা পুরস্কার ।
এই শেষ ।
তার পর আর কোনো গল্প নেই ।
কল্পনা চাকমাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
লে: ফেরদৌস এখন ক্যাপ্টেন হয়েছেন ।
একদিন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে গিয়ে বাংলাদেশের কালো মূখ উজ্জ্বল করবেন । একদিন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হবেন । আল্লাহর অসীম করুনায় একদিন বাংলাদেশের রাস্ট্রপ্রধান ও হয়ে যেতে পারেন ।
আজ ১২ জুন ২০০৬ ।
১০ বছর।
আমরা তোমাকে ভূলে গেছি কল্পনা । যদি ও সংবিধান বলে রাস্ট্র বাধ্য তার প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করতে । কিন্তু আমাদের সময় কই !
গনতন্ত্র, জেহাদ , উন্নয়ন, উজিরে খামোখা ,বিদিশা-এরশাদ ,সিইসি, জলিল,ঘেরাও ,পোড়াও কততো নাটক আমাদের ! ইরাকে বোমা পড়ছে , ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধ হয়েছে, গুজরাটে মুসলিম নিধন, কাশমীরে মুজাহিদদের অপারেশন --কততো আর্ন্তজাতিক ভাবনা আমাদের ।
তোমাকে মনে পড়ার সময় কোথায় বলো !
তুমি তো ঘরের মেয়ে । তা ও লঘু তুমি সংখ্যায়,ধর্মে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে, চেহারায় !
তোমাকে ভুলে গেছি কল্পনা ।
মন্তব্য
দু বছর আগে এইদিনে লিখেছিলাম অন্য এক ব্লগে ।
আজ ফারুক ওয়াসিফের লেখা না পড়লে মনেই পড়তোনা এই সেই দিন ।
হায়,কতো কিছু বিস্মৃত হয়ে যায়,কতোভাবে নিজেকে একটু একটু করে ক্ষয়ে ফেলি,আর এইভাবে কতোবার বারবার পরাজিত হতে থাকি ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কথাগুলো বুকের ভিতর গিয়ে বাজলো। কষ্টে বুক চাপড়ানো ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু করতে পারছিনা। এমন জীবন দেয়া কখনও কখনও কোন কাজেই আসে না; আবার কখনও তা বিফলেও যায় না। কল্পনার বলি হওয়া যেন বৃথা হয়ে না যায়।
জিজ্ঞাসু
ভাবতে অবাক লাগে এই আমরাই ১৯৭১ সালে আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছিলাম। আর স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েক দশকের মাঝে নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের আচরন ঐসব পাকিদের চাইতে কোন অংশে কম ছিলনা।
আমাদের উচিত ছিল সংখ্যালঘু হয়ে থাকার মর্মবেদনাটা উপলব্ধি করা, আমাদের সদ্য স্বাধীন দেশের কেউ যেন সংখ্যালঘুত্বের স্বীকার না হয়, সেইটা নিশ্চিত করা।
তার বদলে কি করলাম?
এই দেশের 'আদি বাসিন্দা' দের 'উপজাতি নাম দিয়ে নিজেরা হয়ে গেলাম 'আসল' জাতি। দিনের পর দিন আমাদের সেনাবাহিনী বীর দর্পে অসহায় নিরস্ত্র সরল সাদাসিধে এই মানুষ গুলোকে চাবকে বেড়তে লাগল। আমরা যারা বেকুবের দল আছি, তারা মাঝে মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে 'গন্ডগোল'এর খবর পেতাম আর ভাবতাম---- পাহাড়ি গুলোর কত্ত বড় আস্পদ্ধা!
মনে হয় কালের শিক্ষা এই যে, যখন কোন জাতি,গোষ্ঠি বা সম্প্রদায় কোন মানবেতর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়, সেই অবস্থার পরিবর্তন হলে সেই জাতি সবার আগে আত্ম বিস্মৃত হয়। প্রথম সুযোগেই তারা তাদের চেয়ে দুর্বল অন্য কোন জাতির উপর ঝাপিয়ে পড়ে, তাদের নিজের ইতিহাসের চেয়েও রক্তাক্ত ইতিহাস গড়তে সাহায্য করে।
ঠিক একই কারনে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, একটি মানব-প্রেমী ইহুদী গোত্রের পরিবর্ত্তে মানব বিদ্বেষী ইহুদী গোত্র পেয়েছি।
হা হতোস্মি, হা হতোস্মি
@অনিকেত
আমরা তো ৭১এ সংখ্যালঘু ছিলাম না। গুরু হয়েই আমরা লঘুত্বের মর্যাদা (!) পাচ্ছিলাম।
আর আমরা তো লঘুদের জুলুম করাটারে জায়েজই ভাবি। একেবারে নগরে শহরে বাস করা সনাতন ধর্মের অনুসারীদেরই যেরম নাজেহাল হতে হয়... পাহাড়ীরা তো সেই তুলনায় লঘুর চেয়েও বেশি লঘু। জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধির জন্যই তো পাহাড়ে আমাদের দখল প্রতীষ্ঠা জরুরী। বাকী সব নিপাত যাক।
হা হতোস্মি, হা হতোস্ম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বিদেশিরা আমাদের দেশে উপনিবেশ করেছিল, আজো তাদের দাপট উপনিবেশিক প্রভুর মতোই। আমরা তা ফিরিয়ে দিতে পারিনি। কিন্তু আমাদেরও আছে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ। পাহাড়ে। সেখানে আমাদের আরাম-আয়েশের বিদ্যুত বানাবার জন্য চাকমা রাজধানীসমেত কাপ্তাই শহরকে ডুবিয়ে দিই, নিজ ভূখণ্ডে তাদের সংখ্যালঘু বানাবার জন্য সমতলে উচ্ছেদ হওয়া বাঙালিদের সেখানে বসিয়ে গারিবে গরিবে দাঙা লাগাই।সেখানে জুম উচ্ছেধ করে রাবার লাগাই, সেখানে পর্যটন করি, পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে এসে বাসাবাড়ির চাকর বিউটি পার্লারে বিউটি ওয়ার্কার বানাই, পাহাড় নিয়ে কবিতা লিখি, চু খাই আর ঘাঁটি বসিয়ে রাখি। প্রেমের জন্য তো পাহারা লাগে নাকি? এখন মোবাইল অপারেটররাও সেখানে পৌঁছে গেছে। চাকমা ভাষায় গান দিয়ে বিজ্ঞাপন সাজায়, 'পাহাড়ের মনে লুকানো সব কথা শুনব আজ'। তাতে পাহাড়ি মেয়েকে দেখায় সুন্দর! কিন্তু পাহাড়ের নিপীড়নের কথা কি ঐ নেটওয়ার্কে কখনো শোনা যাবে? কল্পনাদের ইতিহাস এসব দিয়েই তো চাপা পড়ে যায়।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আজকের জন্য সচলের ব্যানার হেডে কল্পনাকে ঠাঁই দেয়া যায় কি?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নিজেকে পাকিস্থানী হানাদার মনে হচ্ছে!
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চলে যাওয়া মনে প্রস্থান নয়,
নয় বন্ধন ছিন্ন করা
আমি চলে গেলে
আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে
আমার না থাকা জুড়ে।
---------------------
অক্ষমতার ক্ষমা হয় কি'না জানিনা, তাও - কল্পনা , আমি আমাদের, অপাহাড়ীদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাই
- এই হালার পুতেগো ধইরা থ্রীস্টুজেসের স্টাইলে সকালবিকাল খালি থাবড়ানো উচিৎ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূগোদা... শাস্তিটা অনেক বেশি পরিমানে কম হয়া গেলো না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লঘু তুমি সংখ্যায়,ধর্মে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে, চেহারায় !
তো, তুমি নিশ্চিত নিষ্পেষিত হতে থাকবে । আমরা জোর করে জমি কেড়ে নেবো আর তোমাকে ও !
বুঝাবো, গরিষ্টের অত্যাচার বরাবরই এক, পৃথিবীর সব প্রান্তে । সে তুমি আনা কারেনিনা হও কিংবা কল্পনা কারেনিনা !
ধন্যাবাদ মোরশেদ ।
---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
নতুন মন্তব্য করুন