এক.
বাংলাদেশে কোন মুসলিম মহিলা বিধবা হওয়া মাত্রই তাকে অলংকারহীন করে সাদা কাপড় পরানোর একটা প্রথা চালু আছে । বেচারী মহিলা বাকী জীবন ইচ্ছেয় কিংবা অনিচ্ছায় এই শোক ব হন করবেন ।
কিঞ্চিত ধর্ম পাঠ করেছি । কোথাও বিধবা মুসলিম মহিলাদের জন্য এমন কোনো নির্দেশ পাইনি । তাহলে এই প্রথা এলো কোথা থেকে ?
বাংলাদেশী মুসলমানরা কয়েকপুরুষ আগে নিম্নশ্রেনীর হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে । হিন্দু ধর্মাচারে বিধবাদের যেভাবে ট্রিট করা হয় , ঠিক একই ব্যপার রয়ে গেলো সে মুসলমান হবার পর ও ?
বদলালো তো অনেক কিছু । কচ্ছপ থেকে গরু, রুদ্্রাক্ষ থেকে টুপি, টিকি থেকে দাড়ি, ধুতি থেকে লুঙ্গি---- কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সেই ফেলে আসা সংস্কৃতিতে আঁকড়ে রাখা কেনো ?
আমাদের হযরত মাওলানা গন নিদের্াষ লোকাচারে ও ধর্মীয় স্বাতনত্র্য খোঁজেন । গায়ে হলুদ হিন্দুয়ানী, মুসলমান মেয়ে হিন্দুদের মতো কপালে টিপ দেবে কেনো? মুসলমানের ছেলের নাম 'মৃন্ময়'?
কিন্তু বিধবাদের শোষনের সময় যে হিন্দুয়ানী ব্যপার ঘটছে , সে ক্ষেত্রে তারা খুব চমৎকার ভাবে নীরব থাকেন ।
2।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ভেতর আরেকটা প্রথা আছে , মা-বাবার মৃতু্য দিবসে বা অন ্যকোন বিশেষ উপলক্ষ্যে কোরান খতম দেওয়ানো ।
লক্ষনীয় , বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এই কোরান খতম দেওয়ানো হয় হুজুরটাইপের কাউকে দিয়ে--- এবং অতি অবশ্যই টাকা দিয়ে ।
মুসলমান সমাজের এই ব্যপারটা আমার কাছে চরম হাস্যকর একটা বিষয় মনে হয় । আমি আমার মায়ের বা বাপের আত্নার শান্তির জন্য কোরান খতম দেওয়াবো । এবার কোরান খতম দেবার মতো সময় আমার নেই বা কষ্ট করার মতো ধৈর্য্য নেই । কিন্তু আমার টাকা আছে ।
অতএব যা আমার করার কথা, তা আমি টাকা দিয়ে করাচ্ছি আরেকজন ভাড়া করা লোক দিয়ে । খোদার সাথে খোদগারী !
দেশের হযরত মাওলানাগন এ বিষয়ে টু শব্দ ও করবেননা , কারন এই ফাজলামী তে তাদের নিজেদের আর্থিক প্রাপ্তি নিশ্চিত হয় ।
3।
কিঞ্চিত ধর্মপাঠে ধারনা পেয়েছি 'কোরবানী' প্রথার মুল উদ্দেশ্য আত্নত্যাগ ।
ধরে নিলাম আত্নত্যাগের একটা প্রতীকি উপলক্ষ্যের ও দরকার আছে ।
আরবের পশুপালকদের কাছে উট-দুম্বা নিশ্চয় সবচেয়ে প্রিয় প্রতীক ছিলো । এবার বাঙ্গালী নম:শুদ্্র মুসলমান হবার পর উট-দুম্বা পাবে কোথায়? কৃষি প্রধান এ দেশে উট-দুম্বার কাস্টমাইজাশন হলো গরু-ছাগল । গরু ছাগল তখনো এদের অনেক প্রিয় ছিলো নি:সন্দেহে ।সম্ভবত: কোরানে কোথাও গরু ছাগল কোরবানীর কথা নেই ।
আরব থেকে বাংলাদেশে আসতে কোরবানীর প্রতীকে যখন কাস্টমাইজেশন হলোই, তাহলে যুগের পরিবর্তনে প্রতীকে কাস্টমাইজেশন আসতে দোষ কোথায়?
আমার যে চাষা পুর্বপুরুষ মুসলমান হয়েছিলেন, তার কাছে গরু ছাগল অনেক প্রিয় ছিলো । আমার কাছে তো নয় । আজকের আমার কাছে তো গরু ছাগলের কোনো গ্রহনযোগ্যতা নেই । খাবার প্রয়োজনে মাংস কেনা ছাড়া তো আমার সাথে গরু ছাগলের কোনো সম্পর্ক নেই ।
চাকরীজীবি আমার কাছে হয়তো আমার এক মাসের বেতন অনেক প্রিয় , অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন ।
আমি কি আমার বেতনের একটা অংশ সরাসরি ত্যাগ করতে পারিনা আত্নত্যাগের প্রতীক হিসেবে ।
সম্ভবত: না ।
উট-দুম্বা থেকে গরু-ছাগল পর্যন্ত কাস্টমাইজেশন ধর্মওয়ালা মেনে নেবেন কিন্তু তারপর?
প্রতি বছর বাংলাদেশে কোরবানীর চামড়া বিক্রীর কতো কোটি টাকা মাদ্্রাসা গুলো তে যায়, একটা হিসেব প্রকাশিত হতে পারে ।
ধর্ম বিষয়ক প্রশ্নবোধক আলোচনার দিন ফুরিয়ে আসছে । যে দলই ক্ষমতায় আসুন না কোনো তারা ফতোয়াবাজীর অধিকার দেবেন । অতএব হযরত মাওলানাগন ছাড়া আর কারো আলোচনার কোনো সুযোগ থাকবেনা ।
কোনো আলোচনা তাদের স্বার্থের বিপক্ষে গেলে ব্লাসফেমী আইন তো আছেই !!!
পরম করুনাময় তার সমালোচককে শাস্তিপাবার জন্য পরকাল পর্যন্ত সময় দেবেন, হয়তো ক্ষমা ও করে দেবেন । কিন্তু নায়েবে আমীর গনের এতো ধৈর্য্য কই?
অতএব... সাধু সাবধান!!!
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন