ইসলামের পঞ্চম খলিফা মুয়াবিয়া , তার পুত্র ইয়াজিদ'কে খলিফা ঘোষনার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের সুচনা করেন । কারবালায় হযরত হোসেন সহ নবী বংশের অনেককে হত্যার সাথে ইয়াজিদের সংশ্লিষ্টতা মুসলমান মাত্রই জ্ঞাত ।
জানতে আগ্রহ হয় ,এরকম যে স্বয়ং নবীজির রক্ত সম্পকর্ীয়দের হত্যার সাথে যে জড়িত ছিলো তার প্রতি মুসলমানদের, বিশেষত:মুসলিম স্কলারদের মনোভাব কেমন ছিলো ? তৎকালীন মুসলিম স্কলার যাদের অনেকের স্বয়ং নবীজির সানি্নধ্যের সৌভাগ্য হয়েছিল তারা কি ইয়াজিদ'কে প্রত্যাখান করেছিলেন? তারা কি প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন? তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করেছিলেন? ইয়াজিদকে মুরতাদ ঘোষনা করেছিলেন?
জানা ইতিহাসে তেমন কোনো তথ্য প্রমান মিলেনা । বরং দেখা যায় উমাইয়াদের এই রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকার টিকে ছিলো কয়েকশো বছর ধরে ইয়াজিদের উত্তরসুরীদের হাতেই সবচেয়ে বেশী বিস্তার করেছিলো আরব সাম্রাজ্যবাদ যার সীমানা ছিলো কডের্াভা পর্যন্ত । এই আরব সাম্রাজ্যবাদকে, ইসলামী সাম্রাজ্য বলে এ যুগে ও অনেক মুসলমান শ্লাঘা অনুভব করেন ।
সেই ধারাবাহিকতায় এখনো রাজতন্ত্র টিকে আছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে, যে রাজতন্ত্রনবীজির ভাবনার বিপরীত ছিলো, যে রাজতন্ত্র ঘাতক ইয়াজিদের উত্তরাধিকার ।
এই রাজতন্ত্রের আবশ্যিক উপাদান হিসেবেই এই অঞ্চলে টিকে আছে শাসকদের লাগামহীন ভোগ বিলাসীতা, রুদ্ধ আছে ভিন্ন মত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অধিকাংশ দেশেই নারীদের ভোটাধিকার নিষিদ্ধ , বিচার ব্যবস্থায় কোনো সংস্কার বা জবাবদিহীতার বালাই নেই ।রাজপরিবারগুলো যখন প্রতিযোগীতায় লিপ্ত বিত্ত বৈভবের, পাশের মুসলিম দেশ সোমালিয়া, ইথিওপিয়া তখন দুর্ভিক্ষ পীড়িত , এদের আপোষকামীতা জিইয়ে রাখে ফিলিস্তিন, লেবানন সমস্যা । এদের অমানবিকতার কারনে সুদানের দারফুরে চলতে থাকে বর্বরতম গনহত্যা ।
সেই ইয়াজিদের সময় ও মুসলিম স্কলার রা যেমন ঘাতক শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়নি, এখনো ঠিক তেমনি পক্ষপাত তাদের মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রের প্রতি । কোথাও কাউকে বলতে শুনা যায়না ' এসব অনৈসলামিক' । এসবের বিরুদ্ধে কোনো জেহাদের ঘোষনা আসেনা, কোনো ফতোয়া জারী হয়না, কোনো বাদশাহ মুরতাদ ঘোষিত হয়না ।
সেই মধ্যযুগে বাদশাহ ও মুসলিম স্কলার রা মিলে মনসুর রহেল্লাজকে মুরতাদ ঘোষনা করেছিলেন এবং তাদের ঘোিষত আইনেই মনসুরকে হত্যা করা হয়েছিল । কাউকে হত্যা করার অপরাধে নয় , শুধু ভিন্নচিন্তাভাবনার জন্য হত্যা করা হয়েছিলো এই সাধককে । সম্ভব হয়েছিলো কারন তিনি বাদশাহ ছিলেননা , তার অস্ত্র ও অর্থের জোর ছিলোনা ।
এই 21 শতকেও মুসলিম স্কলারদের ভুমিকা সেই মধ্যযুগের মতোই । এখনো তারা রাজঅনুগত, ক্ষমতার পদলেহনকারী । শাসকদের অন্যায় ও অনৈসলামিক কাজের বিরুদ্ধে তাদের কোনো উচ্চারন নেই । এখনো ফতোয়া র তীর ছুটে যায় কেবল ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধেই ।
আর এসব কারনেই , এই যুগে যখন মানুষের এগিয়ে চলা নির্ভর করে পারস্পরিক সম্পর্কের উপর তখন মুসলিম পরিচয় পৃথিবীতে বাকী সবার কাছে ই 'সাস্পিসিয়াস' । পবিত্র কোরানে সাম্য , মৈত্রীর কি বানী ছড়ানো আছে, খলিফা উমর ক্ষুধার্তর ঘরে খাবার পৌঁছে দিতেন এই সব ইতিহাস ঘাটার সময় বাকী পৃথিবীর নেই । তাদের চোখের সামনে উদাহরন হয়ে ঝুলে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্ধকার, দুবাই আবুধাবী রিয়াদের ঝিলিক আর ইথিওপিয়া সোমালিয়া দারফুরের ক্ষুধা ।
মুসলিম শাসকদের অমানবিকতা, আর মুসলিম স্কলারদের রাজশক্তির প্রতি আনুগত্য এই মেলবন্ধন সাধারন মুসলমানদের দুভের্াগের অন্যতম উৎস ।
*********************************************
1। মনসুর হেল্লাজ
2। দারফুর:: মানবতার দু:খ
3। দারফুর গনহত্যার ভিডিও
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন