'আমাদের' অনেকেরই হয়তো লালন শোনা হতোনা , যদিনা প্রথমত: ফরিদা পারভীন, তারপর আরো কেউ কেউ এবং শেষে আনুশেহ লালনের গান না গাইতেন ।
'আমাদের' আমাদের ব্যাপক ভাবে হাছন শোনা হতোনা , যদিনা গায়ক সেলিম চৌধুরী, নাট্যকার হুমায়ুন জুটি হাছনের প্রতি আগ্রহী হতেন ।
'আমরা' হয়তো আব্দুল করিমকে চিনতাম না যদিনা হুমায়ুন আহমেদ একুশে টিভিতে তার কিছু গান নিয়ে একটা অনুষ্ঠান না করতেন । মনে আছে সেই অনুষ্ঠানে মডেল হয়েছিলো বিবি রাসেলের প্রোডাকশনের বেশ কিছু ফুলকুমারী ।
তারপর আরো অমুক তমুক, হাবিব নামের সুদর্শন তরুন আমাদেরকে আরো ভালো করে চিনিয়েছেন আব্দুল করিম ।
'বন্ধু তোর লাইগারে' ও তারে ভাবলে কি আর জুড়ায়রে প্রান, না দেখলে নয়নে গানের কল্যানে কিছুটা চেনা হয়েছে সৈয়দ শাহনুর কে
হুমায়ুন আহমদের 'শ্রাবন মেঘের দিন' এর কল্যানে 'আমরা' চিনেছি উকিল মুন্সীকে ।
এই 'আমরা ' কারা?
যারা নগরবাসী, সেই অর্থে নাগরিক । এদেশের নাগরিক কেবল আমরাই, কেবল আমরাই ধারন করি গোটা দেশের সংস্কৃতি । তাই লালন, হাছন, করিম, শাহনুরদের সৌভাগ্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার । আমরা নাগরিক ব্যস্ততার ফাঁকে এদের গান শুনি মাঝে মাঝে আর বেশ শ্লাঘা অনুভব করি, বাহ লোকজ সংস্কৃতি একেবারে হারিয়ে যাচ্ছেনা!
এই 'আমরা' , আমরা ক'জন? আমরা ক'জন যদি লালন, হাছন না শুনতাম তাহলে হারিয়ে যেতো সেই সব ? এক যুগ আগেও তো আমরা নাগরিকরা শাহ করিমকে চিনতাম না, শাহনুরকে এখনো তেমন চিনিনা, একেবারেই চিনিনা রহমতুল্লাহ মুন্সী, কামাল পাশা, কালা শাহ , শফিকুন্নুরদের । 'আমরা' চিনিনা বলেই কি তারা বিলুপ্ত প্রায়?
একধরনের আগ্রাসী সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠি বলে নাগরিক আলোচনা আর মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়াকেই আমরা সংস্কৃতির টিকে থাকার শর্ত বলে মানি ।
বিশেষ করে 'বাউল গান' তো কেবল গান নয়, 'বাউল' একটা জীবন দর্শন , বাউলরা গানের মাধ্যমে তাদের প্রার্থনা প্রেম ও জীবনযাপন কে প্রকাশ করেন । ফরিদা পারভীন কিংবা আনুশেহ তো সে জীবনের নয়, তারা তো 'খেলকা' পরিধান করেননা, তারা 'ভিক্ষা' মাগেননা , পুরুষ বাউলের 'প্রেমের আঁধার' হননা । তারা লালনের গান গান নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য । ' নগর বাউল' কিংবা 'নাগরিক কবিয়াল' এই সব সস্তা স্ট্যান্টবাজি । আমাদের মতো নাগরিক গনের কাছে লালনের গান এসে না পৌঁছালে ও লালনকে ধারন ও বহন করে যেতো 'খেলকা'ধারী বাউলেরা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা,মেদেনীপুর, মালভুমে ।
মিডিয়ার কল্যানে আমরা চেনার বহু আগে থেকেই শাহ করিম শাসন করেন সিলেট সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জের বিশাল ভাটিবাংলার গ্রামীন সংস্কৃতি । পুর্বসুরী সৈয়দ শাহনুর, রাধা রমন,কালা শাহ, সমসাময়িক কামাল পাশা, মুন্সী রহমতুল্লাহ র্দুবিন শাহ , শাহ শফিকুন্নুর, পরবতর্ী শি ষ্য রুহীঠাকুর, ক্বারী আমির উদ্দীন এদেরকে নিয়ে ভাটি বাংলার গানের সম্রাট আব্দুল করিম প্রায় সত্তুর বছর ধরে ।
এঁদের কারো কারো গান ভুল সুরে, ভুল কথায়, ভুল পরিবেশনায় বাজারজাত হয় । আমরা নাগরিকগন আপ্লুত হই । বাজারজাতকারীগন ( আমি শিল্পী বলিনা) ও নিজেকে বেশ সাধুবাদ জানাই । তারা বাজারজাত করে, আর আমরা শুনে বাঁচিয়ে ফেললাম লোকজ শাহ আব্দুল করিমদের ।
*********************************************
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন