এই পোষ্টকে পুর্ববতর্ী পোষ্টের ধারাবাহিকতা ধরা যেতে পারে । মন্তব্যকারী গন বিশেষ করে, আনোয়ার সাদাত শিমুল ও জলিল ভাইয়ের মন্তব্য আরো কিছু ভাবনা সংযুক্তি ঘটায় । ধন্যবাদ তাদের দুজনকেই এবং অন্য সকলকে ও
প্রায়শ: এরকম অভিজ্ঞান হয় লোকজ গান/ সংস্কৃতি সংরক্ষন করতে হবে । নাগরিকগনের অপার বদান্যতা, ট্টেরোপলিস লাইফে থেকে ও লোকজ হাড় কংকাল তারা সংরক্ষন করতে চান ।
সংরক্ষনের স্বরুপটা কেমন হয়?
আমাদের ড্রয়িংরুমে লালনের পোট্টেট থাকে, শো-পিস হিসাবে একতারা ঝুলে , টিভি স্টুডিও চারকোন ঘরের ভেতর আমরা মাঝে মাঝে ধরে আনি বাউল হিরু শাহ, মন্টু শাহ, আব্দুল করিমদের ।
বাউল গান শুনি কিন্তু বাউলের তত্ব, সাধনা, পাঞ্জাতন, খেলকায় আমরা যাইনা, যেতে পারিনা । সংরক্ষন টা আমরা আমাদের মতো করি । আব্দুল করিম গান গাইতেন একটা একতারা কিংবা বেহালা হাতে । সেই গান আমরা শুনছি যখন এটা পরিবেশিত হচ্ছে গীটার, ড্রাম, কি-বোর্ড সহযোগে , আমাদের পরিচিত ঘরানায় । একতারা বেহালা হাতে সত্তুর বছর ধরে গান গেয়ে চললেও আমরা কোনদিন তাকে খুঁজে ও দেখিনি!
অর্থ্যাৎ লোকজ সংস্কৃতি কে আমরা আমাদের রুচি অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করছি, বনসাই করে দিচ্ছি । তার আসল যে রুপে সেই রুপ আমরা গ্রহন করছিনা ।
আমি তাই এ রকম সংরক্ষনের পক্ষপাতি নই । তবে কি নাগরিকের কোনো দায়িত্ব নেই?
নাগরিকের করার আছে, যদি সে সত্যি কিছু করতে চায় । আর সেটা হলো লোকজ সংস্কৃতিকে তার স্বাভাবিক গতিতে বিকাশের সুযোগ করে দেয়া ।
স্বাভাবিক গতিতে বিকাশ বাধা পায় কেনো? অনেক অনেক কার্যকারন জড়িয়ে আছে সেই সাথে ।
গত শতকে ও বাউলদের একতারা ভেংগে দেয়া হয়েছে, বে-শরা ঘোষনা দিয়ে দাড়ি উপড়ে ফেলা হয়েছে । কাজটা করেছেন সে সময়ের 'নাগরিক ' পুজারী ব্রাম্মন ও কট্টর শরীয়তপন্থীরা । লালনের আখড়া পাকা করে দেয়ার চেয়ে বাউল সমপ্রদায় কেনো বিলুপ্ত হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরী ।
গত শতকে যা হয়েছে, তা হচ্ছে এ সময়ে ও । ক' বছর আগে ও সিলেটের গ্রামে মোল্লারা ঘেরাও করেছেন বাউল শিল্পী ক্বারী আমির উদ্দীনের বাড়ি, জ্বালিয়ে ফেলার হুমকী দিয়েছেন। ফলাফল আমীর উদ্দীন এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ে ইংল্যান্ড!
মুন্সী রহমতুল্লাহর দুর্লভ গান গুলো সংগ্রহ করা যায়নি কারন তাঁর ছেলেরা কট্টর মাওলানা হয়েছেন , বাপের কাজগুলো তাদের কাছে বেদাতি!
বাউল শফিকুন্নুর তাঁর গ্রামে সংগীত বিদ্যালয় তৈরী করেছিলেন । প্রতি সন্ধ্যাবেলা সেখানে বসতো বাউল গানের আসর। আশে পাশের কয়েকগ্রামের মানুষ আসতেন । মাঝে মাঝে এসে গান করতেন আব্দুল করিম, রুহী ঠাকুরেরা । শফিকুন্নুরের মৃতু্যর পর সে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে । তাঁর ছেলেরা প্রবাসী । কয়েক বছর পর দেশে ফিরলে তারা শহরে ' শফিকুন্নুর সংগীত সন্ধ্যা' আয়োজন করেন । আমরা অডিটোরিয়ামের নিয়ন্ত্রীতে শীতাতপে বসে অন্যদের কণ্ঠে তার গান শুনি । কিন্তু যে মানুষদের প্রেরনায় শফিকুন্নুর 'সুজন বন্ধু' রচনা করেছিলেন সেই 'জগদল' গ্রামের মানু ষ তার থেকে বঞ্চিত হয় ।
রিক্সা চড়ে যাচ্ছি কোথাও । রিক্সাওয়ালার আনমনে গেয়ে উঠা ভাওয়াইয়া সুর শুনে চমকে উঠি! নদীভাঙ্গা এই মানুষটা হয়তো কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পাড়ে বসে এই গান গাইতো একদিন!
লোকজ সংস্কৃতি বিকাশের সহজাত পরিবেশ যদি তৈরী করা যায়, তবে তা টিকে থাকবে তার অন্ত:স্থ গুঢ়তার জোরে । সংরক্ষনের নামে বিকৃতির উৎসব শুরু করে বরং আমরা নাগরিকরা তার বিলুপ্তি নিশ্চিত করছি প্রবল উৎসাহে ।
****************************************
[লিংক=যঃঃঢ়://িি.িুড়ঁঃঁনব.পড়স/ধিঃপয?া=খসহ1ফং8ডঋ6ও] এই ভিডিও টা দেখা যেতে পারে [/b]
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন