যে কোনো হত্যাকান্ড মাত্রই নিন্দনীয় ।
তারচেয়ে নিন্দনীয় বোধ করি , হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার অধিকার যদি বন্ধ করে দেয়া হয় ।
আমাদের পরিচিত উদাহরন, শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার ও জেলহত্যাকান্ড । রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এর আগে ও হয়েছে , পরে ও হয়েছে । তবে 15 ই আগষ্ট ও 3 রা নভেম্বরের হত্যাকান্ড অন্য গুলো থেকে আলাদা এ ক্ষেত্রে যে , রাষ্ট্র ও শাসক গোষ্ঠী আইন করে এ হত্যাকান্ডগুলো বিচার বন্ধ করে রেখেছিলো ।
রাষ্ট্র যখন আইন ঘোষনা করে যে , এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করা যাবেনা- তার মানে ধরে নেয়া যায় এই হত্যাকান্ডের দায় রাষ্ট্র নিজের কাঁধে নিচ্ছে । কেনো নিচ্ছে? রাষ্ট্রের কোন কল্যান সাধনে এই ইনডেমনিটি?
মাঝে রাজনৈতিক পরিবর্তন না ঘটলে হয়তো এই ইনডেমনিটি চলতে ই থাকতো ।
তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র যে কেবল এই হত্যাকান্ডকে ইনডেমনিটি দিয়েছে তা নয়, আরো অনেক ঘোষিত অঘোষিত হত্যা নির্যাতনকে ইনডেমনিটি দিতে দিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ক্রমশ: নিজেক পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো মানবাধিকারহীন দানবরাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে ।
জিয়ার সরকার ইনডেমনিটি দিয়েছিলো 15 আগষ্ট ও 3 রা নভেম্বরের হত্যাকান্ডকে । খালেদা জিয়া সরকার ইনডেমনিটি দিয়েছে ' অপারেশন ক্লিনহার্ট' কে । সম্ভাব্য অপরাধী কে পাকড়াও করে আদালতে হাজির করা নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ । আদালতে হাজির না করে মেরে ফেলা , কোন অর্থেই কোন দেশেই গ্রহনযোগ্য কোনো প্রক্রিয়া নয় । এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন । এ ছাড়া এরকম প্রক্রিয়া নিরপরাধ ব্যক্তির ও ভুক্তভোগী হবার সম্ভাবনা থাকে যা আসলেই ঘটেছে 'অপারেশন ক্লিন হার্ট' এর সময় । যে কোন রায়ের বিরুদ্ধে আইনী আশ্রয় পাওয়া মানুষের অর্জিত অধিকারের অংশ, যদি সে অপরাধী সাব্যস্ত হয় তবু ও । কিন্তু ইনডেমনিটি দিয়ে এই পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।
এ রকম আরেক অঘোষিত ইনডেমনিটি পাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা । কোন পরিস্থিতি শেখ মুজিব সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন সেটা মনে রেখে ও বলতে হয় যুদ্ধাপরাধীদের ইনডেমনিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তখনই । জিয়া এরশাদের সামরিক সরকার আর পরবর্তীগনতান্ত্রিক দুর্বৃত্তরা এই ইনডেমনিটি কে পাকাপোক্ত করেছে । কেউ অন্যায় করলে তার শাস্তি হবে , শাস্তি হওয়াটা জরুরী ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে এবং অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য । কোনো সাধারন ক্ষমা বা রাজনৈতিক সুবিধার কারনে অপরাধী কে প্রোটেকশন দেয়া, অপরাধীর অপরাধের চেয়ে ও জঘন্য অপরাধ । জামায়াত সহ একাত্তুরের স্বাধীনতা বিরোধী ইসলামী দল গুলো জঘন্য খুনী অপরাধী ছাড়া আর কিছু ই নয় ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্ম লগ্ন থেকেই ইনডেমনিটি দিয়ে আসছে তার ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্ররজাতিস্বত্বাগুলোর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সমুহকে । পার্শ্ববর্তী দেশে সামপ্রদায়িক দাংগার রেশ ধরে কিংবা বিভিন্ন নির্বাচন পরবরতী সময় গুলোতে সংখ্যালঘু দের উপর কি রকম নির্যাতন হয়েছে তা কেউ ই অস্বীকার করতে পারবেননা , যদি না শয়তানের কাছে আত্না বিক্রয় করে না থাকেন । জিয়ার আমলে লক্ষ লক্ষ সমতলের মানুষকে পাহাড়ে পুনর্বাসন করে পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করা হলো, পার্বত্য চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহের আদিবাসী রা গত 36 বছরে কি করে ক্রমশ: হারিয়ে গেলো, এই হারিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো কোথায় গেলো? তাদের জমি জিরাত এখন কাদের দখলে? রাষ্ট্র এসব প্রশ্নের উত্তর কখনোই দেয়না বরং উস্কে দেয় । রাষ্ট্রীয় আয়োজনেই পাহাড়ে আগুন জ্বলে, গনহত্যা ঘটে, কল্পনা চাকমারা অপহৃত হয়, খুন হয় আলফ্রেড সরন , খুনের তালিকা দীর্ঘতর হয় , যোগ হয় চলেশ রিচিলের নাম । লোগাং, দীঘিনালা হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি, কল্পনা চাকমার খোঁজ মেলেনি, সরেনের খুনীরা হেসে খেলে বেড়ায়, চলেশের খুনীরা গনতন্ত্র পাহারা দেয় ।
আমরা আমাদের আত্না বিক্রয় করে ফেলেছি বলে এই সব ইনডেমনিটি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই । একটা রাষ্ট্র দানব হয়ে আছে, সেই দানবীয় রুপকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস আমাদের নেই । আমরা গনতন্ত্র, নির্বাচন, দুর্নীতি বিরোধী জেহাদ, নোবেলের গর্ব নিয়ে বেশ আছি । দানবীয় রাষ্ট্র শক্তির ছায়াতলে থাকতে থাকতে আমরা ও দানব হবো, হয়তো হয়েই আছি!
মন্তব্য
পুরনো লেখা । অন্য ব্লগে লিখেছিলাম,অন্য শিরোনামে । আজকের সচলায়তনে জমজমাট আলোচনা দেখে মনে পড়লো ।
পুরনো পোষ্টে সহব্লগার হোসেইন কমেন্টে লিখেছিলেন-' শেখ মুজিব সরকার রক্ষীবাহিনীর কাজকে ও ইন্ডেমনিটি দিয়েছিলো । '
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
দানব থেকে মানব হবার এখনই সময়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমরা মানুষই থাকবো।
সেইটুকুই আমাদের বেঁচে থাকার অর্থহীন সুখ।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
দানব হইতে আমার খারাপ লাগবে না। নিজের জন্য একটা ইনডেমনিটি আইন করে সবার মাথায় গাঁট্টা মারা যেত :)
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এই তো আছি, বেশ আছি।
আজ জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের হৃদয়ের ক্ষরণের কথা ভাবছিলাম। এই বৃদ্ধ বয়সে ৩৭ বছর আগে পরাজিত হায়েনাদের বিরুদ্ধে আবার তাদের লড়তে হচ্ছে। সত্যি, আমরা কিছুই করতে পারছিনা। বর্তমান তত্তাবধায়ক সরকার নিজেই একটা ইনডেমনিটি হয়ে জনগনের পথে দাঁড়িয়ে আছে। কারো কিছু বলার অধিকার তো এখন নেই, কারণ আমাদের মৌলিক অধিকার এখন স্থগিত!
সুদিন আসেবই।
আরো দশ বছর পরে আবার এটা পোস্ট করবেন, দেখবেন একই আবেদন আছে, কিছুই বদলায়নি। আমরা দিনকে দিন নির্লজ্জ থেকে নির্লজ্জতর হয়ে যাচ্ছি।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
সংগঠিত অপরাধীদের দমন করার জন্য সাংগঠনিক শক্তি দরকার । তেমন সংগঠন গড়ে উঠার আগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদের মাধ্যমেই স্পিরিটটাকে জিইয়ে রাখতে হবে ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এদেশের সাহসী সন্তানরা রাজাকার হান্নানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবার রাজাকার জামাতীদের চিরতরের জন্য নিশ্চিহ্ন করতে দৃপ্তপদে এগোবে।
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
.......
যা বলব তা হয় নিজের না হয় অন্যদের কথার রিপিটেশন হবে তাই নিজের দুটো লেখার কয়েকটি লাইন তুলে দিলাম
জনাব হাসান মোরশেদের লেখায় আমাদের জানা তথ্যগুলোই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যসহ হাজির হয়েছে, কিন্তু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো তথ্য এই লেখায় একসঙ্গে হাজির হওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে খুবই দুর্ভাগা মনে হচ্ছে। এমন অন্ধকার আমাদের চারপাশে যে কখনো কখনো মনে হয় আলোর ধারণা বুঝি ক্রমশ স্মৃতির বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে।
সাধারণ মানুষ হিসেবে যাদের দিকে তাকিয়ে থাকাই আমাদের নিয়তি, তারাই এত এত অপকর্ম করে রেখেছে যে হতাশ হয়ে যেতে হয়। শেষপর্যন্ত কী হবে আমাদের? হতাশ হয়ে যাওয়াও তো ঠিক হবে না, তাই না?
কিন্তু আশা কোথায়?
নতুন মন্তব্য করুন