নিজস্ব আগ্রহে গতকয়েকদিন থেকে পড়াশুনো করছি, গনহত্যা সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এইসব নিয়ে । অবশ্যই, অতি অবশ্যই বাংলাদেশ ৭১ কে মনে রেখে, আসলে সেই তাড়নাতেই ।
দেখছি , জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার অংগীকার ও দায়বদ্ধতা ঘোষনা করেছে বেশ কিছূ মানবাধিকার সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে । যেমনঃ
১।geneva convention
২।Convention of the prevention and
punishment of the crime of genocide
৩।convention against Torture and other
cruel, inhuman or Degrading treatment
or punishment
৪।International Convent of Civil and
political rights
অংগীকার ও দায়বদ্ধতা ঘোষনা করা স্বত্বে ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার নিজের বিরুদ্ধে সংঘটিত গনহত্যারই বিচার আয়োজন করেনি । International Criminal court এ বিচার হওয়ার সুযোগ নেই কারন এ আদালত নিজ উদ্যোগে কেবল বর্তমান অপরাধ সমুহের শুনানী আয়োজন করতে পারে, পেছনের গুলোর আয়োজনের এক্তিয়ার তার নেই ।
আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হতে হলে জাতিসংঘের সাধারন বা নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে special tribunal গঠিত হতে হবে এবং অবশ্যই তা হতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সরকারের আগ্রহে ও অনুরোধে ।
এ সব কিছুর প্রয়োজন,
যদি বাংলাদেশ গনহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচার দাবী করে এবং ক্ষতিপুরন আদায় করতে চায় । এটা অসম্ভব নয় । খেয়াল করা জরুরী , মানবাধিকার সংস্থা গুলোর চাপে বৃটিশ সরকার তার দাসব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও গোষ্ঠিগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপুরন দিতে প্রতিশুতি দিয়েছে । যদি ও দাসব্যবসা বিলুপ্তির দুশো বছর হয়ে গেছে ।
কিন্তু যদি বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আল-বদর তথা জামাত গংদের বিচার করতে চায় তাহলে এতো ঝামেলায় যেতে হবেনা । বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় এদের বিচার সম্ভব । এ ক্ষেত্রে দুটো পয়েন্ট মনে হলোঃ
১। আদালত গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দিয়েছে । অনেকের
মতো আমি ও ক্ষুব্দ হয়েছিলাম এ সিদ্ধান্তে । আসলে কিন্তু
ক্ষুব্ধ হবার কিছু নেই । আদালত তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে
কারন জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা অনুযায়ী
অপরাধের শাস্তি হিসাবে জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব কেড়ে
নেওয়া যায়না, দেশে ঢুকতে কিংবা বের হতে বাধা দেয়া
যায়না কিংবা জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া যায়না ।
যে আদালত গোলাম আজম এর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে
সে আদালত কিন্তু তাকে নির্দোষ ঘোষনা করেনি, যেমনটি
জামাতীরা প্রচার করে । বরং এ রায় তার বিচারের পথ সুগম
করেছে । সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখন সহজেই তার বিচার
করতে পারে, যেমনটি সম্ভব হতোনা সে যদি পাকিস্তানী
নাগরিক থাকতো। এ ক্ষেত্রে আর কোনো কুটনৈতিক বা
আন্তজাতিক আয়োজন প্রয়োজন নেই ।
২। বিগত বি এন পি সরকারের সময়েই বাংলাদেশের একটি
আদালত জিয়াঊর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল ও
শাসনামলকে অবৈধ ঘোষনা করেছে ।সরকার উচচ আদালতে
প্রভাব খাটিয়ে এ রায়কে স্থগিত করেছে । রায় কিন্তু বাতিল
হয়নি ।
এ রায় বাস্তবায়িত হলে এ দুই আমলে গৃহীত সিদ্বান্ত গুলো ও
বাতিল হবে । গুরুতর অপরাধে বিচারাধীন ১০ হাজার দালাল
যারা মুজিব আমলে সাধারন ক্ষমা পায়নি এবং পাকিস্তানে
পালিয়ে যাওয়া জামাতের শীর্ষ নেতা যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী
পরোয়ান ঝুলছিল, তাদের সবাইকে আবার বিচারের মুখোমুখি
হতে হবে ।
সোজা কথায় , পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচার করার মতো আন্তর্জাতিক প্রভাব বাংলাদেশ অর্জন করতে না পারলে ও দেশে থাকা ঘাতক দালাল জামাতী গং দের বিচার হতে পারে, যে কোনো মুহুর্তেই ।
শুধু প্রয়োজন একটা স্থিতিশীল, সাহসী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সত্যিকারের অংগীকারবদ্ধ সরকার যারা অপরাধীদের অপরাধী হিসেবেই গন্য করবে, রাজনীতির গুটি হিসেবে নয় ।
কে জানে, এরকম একটা সরকার গড়ে না উঠার পিছনে আরো অনেক হিসেবের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হিসেব টি ও আছে কিনা?
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন