অধিকৃত উপনিবেশগুলোতে চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরন সৃষ্টি করলে ও বৃটিশরা নিজেদের ভু-খন্ডে, নিজেদের জন্য একটা জবাবদিহি মুলক বিচার ব্যবস্থা সফল ভাবে তৈরী করেছে অনেক আগেই ।
সেই ১২১৫ সালের 'ম্যাগনা কার্টা' তে ব্যক্তিস্বাধীনতার ঘোষনা এসেছে যা ' হ্যাবিয়াস কর্পাস' নামে বহুল পরিচিত । এর মুল বক্তব্য হচ্ছেঃ
কোন অবস্থাতেই একজন সাধারন নাগরিককে বিনা বিচারে আটকে রাখা যাবেনা ।
কালক্রমে বৃটেন পরিনত হয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল উদাহরন হিসেবে । একজন অবৈধ ইমিগ্রেন্টকে ও পুলিশ আদালতের নির্দেশ ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারেনা ।
'পারেনা' না বলে 'পারতোনা' বলাটাই উপযুক্ত । কারন ৯/১১ এর পর পরিস্থিতি বদলে গেছে পুরোপুরি । আর এই বদল ঘটেছে ইমিগ্রান্ট, সংখ্যালঘু, গরীবদের প্রতি সাধারন ভাবে সহানুভুতিশীল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অধিকতর শ্রদ্ধাশীল বলে প্রচারিত ' লেবার পার্টি 'র শাসনামলেই ।
৯/১১ এর পর টনি ব্লেয়ারের লেবার সরকার বৃটেনে অবস্থানরত যে কোন দেশের নাগরিককে গ্রেপ্তার করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক করে রাখতে পারে তাদের 'বেলমার্স' কারাগারে । এর জন্য কোনো চার্জ গঠন বা অপরাধ প্রমানের দরকার নেই । নিরাপত্তা কর্ত্বপক্ষ কাউকে সন্দেহভাজন মনে করাই যথেষ্ট ।
যদি ও এরকম বিনাবিচারে আটকাদেশ ' ইঊরোপিয়ান কনভেনশন অব হিঊমেন রাইটস' এর পরিপন্থী । মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে বৃটিশ লর্ডসভা এ ধরনের আটকাদেশ অবৈধ ঘোষনা করে ও ব্লেয়ার সরকারকে নির্দেশ দেয়, আটক ব্যক্তিদের আদালতের কাছে হস্তান্তর করার জন্য ।
৭/৭ এর বোম্বিং এর পর ব্লেয়ার সরকার কৌশল বদলায় । বেশীর ভাগ সদস্যদের কাছে অস্পষ্ট রেখেই, হাউস অব কমন্সে ' প্রিভেনশন অব টেররিসম বিল ' পাশ করিয়ে নেয় ।
লর্ড সভায় বাতিল হওয়া আইন প্রয়োগ হতো কেবল বিদেশীদের আটক করার জন্য, নতুন আইন তৈরী হলো সবার জন্য । এবার আর ডিটেনশন ক্যাম্পে নেয়া নয়, যে কোনো বৃটিশ নাগরিককে নিরাপত্তা কর্ত্বপক্ষ আটক করে রাখতে পারে তার নিজের ঘরে । টেলিফোন, ইন্টারনেট, চিঠিপত্র সহ সকল ধরনের যোগাযোগ নেটোয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারে । আদালতের কাছে কোনো ব্যখ্যা না দিয়েই কর্ত্বপক্ষ এরকম 'ডিটেনশন' বহাল রাখতে পারে ৯০ দিন পর্যন্ত ।
আমাদের কাছে ঢাকা আন্দোলনের নগরী । আন্দোলনের নগরী হিসেবে লন্ডন ও পিছিয়ে নেই । ১০ ডাঊনিং স্ট্রিট ঘিরে প্রতিদিনই মিছিল, সমাবেশ,বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে । ইরাক যুদ্ধ বিরোধী মুভমেন্ট থেকে শুরু করে, সমকামীদের অধিকার আদায় আন্দোলন- আরো অনেক কিছু । বৃটেনের বিখ্যাত 'জেন্টলম্যান' পুলিশ ন্যুনত্ম সহিংসতা প্রদর্শন না করেই এসব চালিয়ে যেতে দেয় । এমন কি ইরাকযুদ্ধ্ব বিরোধী আন্দোলনের সময় উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রেস্কট এর মুখে কন্ডম ছুড়ে মারলে ও পুলিশ ছিলো নির্বিকার ।
কিন্তু নতুন আইন পাশের পর পুলিশের আচরনে ও এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন ।
শান্তিপুর্ন প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এমন কি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে-ব্লেয়ারকে ব্যাংগ করে টি-শার্ট পরার অপরাধে । অথচ, কয়েক শতাব্দী থেকেই বৃটিশ নাগরিকরা, সরকারের সমালোচনা তাদের 'অধিকার' হিসেবেই জেনে আসছেন এবং চর্চা করছেন ।
সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মুলধারার মিডিয়া এই সব নাগরিক অধিকার লংঘনের সরকারী অপরাধ সমুহকে একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছে । টিভি চ্যানেল কিংবা জাতীয় পত্রিকা গুলোতে এসব খবর আসছেনা ।
তবে ভালো খবর হলো, এই নিস্তব্দতা ভাংগতে যাচচ্ছে ।
৮ জুন বৃটেনের সিনেমাপ্লেক্স গুলোতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ডকুমেন্টারী ফিল্ম 'টেকিং লিবার্টিজ' । ডকুমেন্টারীতে তুলে ধরা হয়েছে- সন্ত্রাস দমন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে নাগরিক অধিকার হরন ও নিরপরাধ নাগরিকের উপর বিচার বহির্ভুত নির্যাতনের প্রামান্য কাহিনী । বলা বাহুল্য মুল ধারার মিডিয়া এসব ঘটনা এড়িয়ে গেছে বরাবরের মতোই ।
*** আশাবাদী হতে ভালো লাগে, একদিন বাংলাদেশের কোনো মুভিমেকার ও হয়তো একটা ডকুমেন্টারী করবেন , সন্ত্রাস দমনের নামে কি করে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে । সেই ডকুমেন্টারী ,লুকিয়ে নয় প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েই প্রদর্শন করা যাবে ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন