নির্যাতন নিপীড়ন ছিলো, আছে ।প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও ছিলো, আছে । সময়ে দুটোরই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে বহুমুখীতা এসেছে । সেই বৃটিশরা হত্যা করেছে সাধু,কিনুদের- পাকিস্তানীরা নাচোলের সাঁওতালদের, স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্রগ্রামের আদিবাসীদের । নিহত হয়েছেন আলফ্রেড সরেন । নিহত হয়েছেন চলেশ রিচিল ।
নিপীড়ন আর রাষ্ট্রীয় সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই । আমেরিকা , পাকিস্তান সুদান থেকে তুলে নিয়ে গেছে অনেক তরুন কে । শুধু পাকিস্তানেই গত কয়েকবছরে নিখোঁজ হয়েছে হাজার পাঁচেক তরুন । ধারনা করা হয় জর্দান কিংবা কাতারের মতো তৃতীয় কোনো দেশে এদের আটকে রাখা হয়েছে ।
প্রতিবাদ ও এখন আর কেবল দেশীয় নয় । প্রতিবাদ ও ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশে, সারা পৃথিবীতে । প্রতিবাদের ধরনে ও এসেছে ভিন্নতা । মিছিল,মিটিং,সমাবেশ ছাড়া ও কর্তপক্ষকে মেইল করা, চিঠি দেয়া, ফ্যাক্স করা এসব কার্যক্রম নিয়মিত চলে । ঠিক এই মুহুর্তে অন্ততঃ পাঁচটা ই-মেইল ক্যাম্পিং চলছে ।
আজারবাইজানের সাংবাদিক সাকিত জাহিদভ এর বিচারবহির্ভুত শাস্তি, ইরানের কিশোরী দিলারা দারাবীর ফাঁসীর আদেশ , সৌদী আদালতের রায়ে ফাতিমা নামের এক মহিলার জোরপুর্বক বিবাহবিচ্ছেদ, নেপালে পুলিশ কর্তক গ্রেপ্তার ও পরে নিখোঁজ ছাত্রনেতা সঞ্জীব কারানা, চীনে মানবাধিকার কর্মী মাও হেংফেং এর আটকাদেশ-- এসবের বিরুদ্ধে ক্যাম্পিং চলছে । সারা পৃথিবী থেকে কয়েক লক্ষ মেইল,ফ্যাক্স,চিঠি যাচ্ছে কর্তপক্ষ বরাবর ।
এসবে কি কাজ হয়?
হয় । কয়েকটা সংবাদ দিতে পারি ।
গত বছরের ইসরাইল লেবানন যুদ্ধের সময় বেশ কয়েকজন ইসরাইলী সৈনিক অন্যায় যুদ্ধে অংশগ্রহনে অস্বীকার করেছিলেন । স্বাভাবিক পরিনতিতেই তাদের কোর্টমার্শাল এবং বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড হয়েছিল । তখন থেকেই ইসরাইলী কর্তপক্ষকে প্রতিবাদ জানিয়ে মেইল ক্যাম্পিং শুরু হয়েছিল । সে সময় একটা পোষ্টও করেছিলাম এ নিয়ে ।
ভালো খবর হলো, ইসরাইলী কর্ত্ব
পক্ষ সেই সব 'রিফিউজিনিক' দের সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছে ।
এ ছাড়া, এ মাসেই ইরানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আইনবিদ ও মানবাধিকার কর্মী নাসের জারাফসান, ইথিওপীয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন নারী সাংবাদিক সেরকালিম, আলজেরিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মানবাধিকার আইনজীবি হাসিবা ও আমিন । এদের প্রত্যেকের পক্ষেই বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পেইন ও কর্তপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ চলছিল ।
চলেশ রিচিল হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবাদ হওয়ায় এবং এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর , দেখেছি সরকার এ হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ।
মানবাধিকার সাংবাদিক তাসনিম খলিল গ্রেপ্তার হবার ২৪ ঘন্টার ভেতরে সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে মুলতঃ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের চাপে ।
সিলেটের সাংবাদিক আহমেদ নূর এর গ্রেপ্তার ও তার উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে । হয়তো আমরা অদূর সময়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও বিশ্বব্যাপী কর্মসুচীর আয়োজন করতে পারবো ।
সম্প্রতি ভ্যালেরী টেলর ও তার প্রতিষ্ঠান কে ঘিরে বাংলাদেশে যা চলছে, তা যে কোনো অর্থে অন্যায় । এই অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া জরুরী ।
গত ৩ দিনে নিজের সীমিত সামর্থে, চেনাজানা সোর্সগুলোর সাথে মেইল চালাচালি করলাম। সারাংশ হলো, প্রতিবাদটা আসতে হবে বাংলাদেশের ভেতর থেকে ।
জরুরী আইন ঘোষনা করে প্রকাশ্য ক্ষোভ প্রকাশ, মিছিল মিটিং সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে । সুতরাং এই পথ বন্ধ ।
ইমেইল ক্যাম্পিং টাই চালাতে হবে জোরালোভাবে
। নিশ্চিত করতে হবে মেইলগুলো যেনো ঠিক জায়গা মতো যায় এবং সর্ব্বোচচ সংখ্যক যায় ।
এই কাজটা আমাদের করে যেতে হবে, কারন ভ্যালেরী টেলরের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ ।
আরো ভালো হয়, যদই তাঁর ইমেল টা পাওয়া যায় । তাকে ও আমরা জানাতে পারি যে, তার পাশে আছি । এ দেশের সব মানুষ যে অকৃতজ্ঞ নয় এটা তাকে জানানো জরুরী ।
শেষ পর্যন্ত কি হবে জানিনা । সিদ্ধান্ত কতটুকু বদলাবে তাও পরিমাপযোগ্য নয় ।
যাই হোক, যা কিছুই হোক- আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের উদ্যোগ যেনো না থামে ।
সবাইকে অভিনন্দন ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন