১।
আমি স্কটল্যান্ডের যে অঞ্চলে থাকি তার স্থানীয় পত্রিকার আজ গরম গরম খবর । গত পাঁচ বছরে এ এলাকার উপর দিয়ে ৭ বার চক্কর দিয়ে গেছে ভিনগ্রহের প্রানীদের নভোযান,unindetified flying object(UFO) .গুজব নয়, একেবারে NDA(National Defence Authority)'র দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরকাশিত সংবাদ ।
তাদের দেখেনা কেউ,তাদের সাথে যোগাযোগ হয়না কারো,তারা কারো সাথে কথা বলেনা,তারা কারো কথা শুনেনা--কিন্তু পরিশেষে জানা যায় আছেন তারা ।
২।
আমার স্মৃতিতে প্রথম দুর্যোগ উড়িরচরের ঘুর্নিঝড় । কবেকার কথা? সম্ভবত ১৯৮৭ । সামরিক একনায়ক এরশাদ ক্ষমতায় । স্কুলে পড়ি ক্লাশ সেভেনে । মনে আছে, স্কুলের ছাত্ররা দল বেঁধে বেড়িয়েছি পুরনো কাপড় আর অর্থ সংগ্রহের জন্য । মাঝখানের একটা রিক্সায় মাইক বাঁধা । কেউ একজন খুব করুন কন্ঠে পথচারীদের আহবান করছে সাহায্য দেয়ার জন্য । মাঝে মাঝে ফকির আলমগীরের গলায় গানঃ
কাইন্দো না রহমতের মা,কানলে মুর্দার আজাব হয়
এসো সবাই মিলে দোয়া করি,
রহমত যেনো বেহেশতে যায়
রহমত বেহেশতে গিয়েছিলো কিনা সে খবর শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়না যদিও,তবু মনে থাকে একজন পথচারী তার সার্ট খুলে তুলে দিয়েছিল স্কুলের বাচচাদের হাতে ।
একই দৃশ্য দেখেছি ভিন্ন আংগিকে ৮৮,৯২,৯৮,২০০৪ এর বন্যায় । মানুষের মানূষ হয়ে উঠার অনন্য সব স্মৃতি । পাড়ার যে ছেলেটা খুচরো মাস্তান,সেও কি উদ্যমী হয়ে এগিয়ে আসে ত্রান সংগ্রহে । যে রূপসচেতন বন্ধু কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোদে বের হয়না তাকে ও দেখেছি ঘুরে ঘুরে ত্রান সংগ্রহ করতে, ত্রান বিতরন করতে ঘন্টার পর ঘন্টার নৌকার ছাদে বসে থাকতে
মহামান্য ভদ্রলোকের সরকার, নিজেরাও এবার জলে নামলেননা । আতংক ছড়িয়ে মানুষকে ও বন্দী রাখলেন চার দেয়ালের ভেতর ।
৩।
হাসিনা সরকারের সময়,সিলেট টেক্সটাইল মিল লে অফ ঘোষিত । কয়েকশো শ্রমিক-কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ । স্থানীয় সাংসদ,তখনকার স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলো যে সংগঠন তার একজন সংঠক বাবার বন্ধু । প্রায় বিকেলে বাসায় আসতেন । কাঠের পা । যুদ্ধে আসল টা হারিয়েছিলেন । আওয়ামী লীগের শ্রমিক নেতা । তবু গালি দিতেন স্পিকারের নাম ধরে । শহীদ মিনারে তার অনশন করেছিলেন । স্পিকার এসে অনশন ভাংগিয়ে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন ।
সে প্রতিশ্রতি রক্ষা হয়েছিলো কিনা,জানিনা শেষ পর্যন্ত । বাবা মারা গেলেন । আমরা ঘর বদলালাম । বাবার সেই বন্ধুকে নতুন ঠিকানা জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি আমরা ।
ভদ্রলোকদের বর্বর সরকার,সাদ্দাম হোসেনের চেয়ে ও বড়ো বাপের ব্যাটা তারা । রুই কাতলা নয় একেবারে নীল তিমির চৌদ্দ শিকের ভেতর ঢুকানোর ক্ষমতা তাদের ।
বড়ো বাপের পোলাদের ক্ষমতা নাই কয়েক হাজার পাট শ্রমিকের ন্যায্য বেতন ভাতা দেয়ার । ক্ষমতা আছে পাটকল বন্ধ করে দেয়ার । ক্ষমতা আছে গুলী করে শ্রমিক হত্যা করার ।
ক্ষুব্দ শ্রমিক কাকে গালি দেবে? কার নাম ধরে শাপ-শাপান্ত করবে? মানূষের গালি দেয়ার অধিকারটুকু ও যে জলপাইবন্দী । তারা যে অতিদুরে,দূরে থাকেন। ধরা যায়না,ছোঁয়া যায়না,তারা কথা বলেননা,তাদের সাথে কথা বলা যায়না ।
কিন্তু আছেন তারা ।
আমরা মরে যাই ।
তারা ভালো থাকুন ।
মন্তব্য
দূর্নীতির কথা বলে লোকশানের অজুহাতে এরা এই মিলগুলো বন্ধ করে। অথচ দূর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা কেউ করলনা। এই এতগুলো মানুষকে পথে নামিয়ে দেয়ার ফলে সামাজিক ও মানবিক যে বিপর্যয় হল তা রাষ্ট্রনায়কদের বোধ এড়িয়ে যায় কীভাবে তা আমি বুঝিনা। অবাক হওয়ার অবস্থাও এখন নেই। অনুভুতিগুলো মনে হয় আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে।
এদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে কিভাবে নিখুঁতভাবে মানুষ খুন করতে হয়। এদের থেকে আর কি আশা করেন ?
_____ ____________________
suspended animation...
আরো একটা ভালো লেখা পড়লাম ।
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বেশ ভালো লাগল লেখাটা। ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হুম। শহরের ঊষর বুক ভেজে শ্রমিকের রক্তে।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ভাল লিখেছেন। তাদের আরেকটা ক্ষমতা আছে। সেটা হচ্ছে, বন্দুক দিয়ে ধান চাষ করা!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
কি আর কমু...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন