ঠিক আগের পোষ্টের মতো এটিও এক বছরের পুরনো । কি আর করা, বছর ঘুরলেও যে কিছু কিছু অনুভূতি সেই একই থেকে যায়...
ভরসা রাখি, সচলগন নিজগুনে ক্ষমা করবেন
গতবছর এ দিনে শামসুর রাহমান মারা গেলেন ।
তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হয়নি,সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান তার মরদেহের শ্রদ্ধা জানানো অবকাশ পাননি । এই আফসোস করি যখন,এক বন্ধু মনে করিয়ে দেন-এই দলীয় সরকার কিন্তু তার আগের মেয়াদে রাহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা ঠুকেছিল ।
মনে পড়ে । অহেতুক আরো মনে পড়ে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী খুন হলে প্রিয়দর্শিনি প্রধানমন্ত্রী ও তার অমাত্যবর্গ পুস্পস্তবক অর্পণ করে শোক প্রকাশ করেছিলেন ।
রাহমান মারা গেলে পর,পত্রিকা এবং অন্য সব মিডিয়াগুলো শোকাবহ কাভারেজ করে ।
ইন্টারনেট ভিত্তিক মিডিয়ায় দেখি,বাংলাদেশের উত্তরাধু্নিক কবিগন প্রশ্ন তোলেনঃ- 'শামসুর রাহমান গুরুত্বপুর্ন কেনো?'
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয় রাহমানের গুরুত্ব আরো স্পষ্ট করার জন্য নয় বরং রাহমান যে আসলে এতো গুরুত্ব পাওয়ার নয় সেটা বুঝানোর জন্য ।
বিস্মিত কিংবা ব্যথিত কি হই?
হইনা । পোড়া দেশে বড় হয়ে উঠতে উঠতে অনুভূতিগুলো প্রবাসী হয়ে যায় ।।
----
----
'শামসুর রাহমান গুরুত্বপুর্ন কেনো?' অথবা প্রশ্ন করা যায় রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপুর্ন কেনো? কেনো গুরুত্বপুর্ন নজরুল অথবা আদৌ কি কবিদের গুরুত্ব পাওয়ার কিছু আছে?
আমরা যারা সাধারন মানুষ তারা রবীঠাকুরের বিশাল সৃষ্টির কতোটুকুর অভিজ্ঞতা নিয়েছি? অথবা নজরুলের সবটুকু কি? আমরা কতোটুকু কাব্যবিচারের ক্ষমতা কিংবা আগ্রহ রাখি?
তবু কি করে এক কবি রবীন্দ্রনাথের কবিতার 'সোনার বাংলা' হয়ে যায় আমাদের অস্তিত্বের উপমা? বিদেশী শাসক রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করলে কেনো আমরা নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় সৃষ্টির সাহস করি?
বিদগ্ধ জনেরা কাঁটাছেড়া বিচারবিশ্লেষন করে প্রমান করে দেন 'নজরুল আসলে তেমন বড় কোনো কবি নয়' । আমরা এসবের থোড়াই কেয়ার করি । আমরা আমাদের দ্রোহের ও সৃষ্টির উল্লাস খুঁজে পাই বাবড়ি দোলানো চুলে ।
হয়তো রবীন্দ্রনাথ নজরুলের চেয়ে বড় কবি আরো কেউ-কিন্তু আমাদের মতো সাধারন মানুষের কাছে এঁরাই খুব গুরুত্বপুর্ন কারন এঁরা আমাদের সাথে হেঁটেছেন ।
শামসুর রাহমানের কবিতা কতোটুকু কি? তার চেয়ে মানসম্পন্ন কবিতা এ সময়ে আর কে লিখেছেন এসব তাত্বিক ও বোদ্ধাদের ব্যাপার ।
আমাদের মতো সাধারন মানুষ যারা মুলতঃ একটা জীবনকে যাপন করতে চাই কিছুটা কবিতা কিছুটা গান কিছুটা প্রেম সাথে নিয়ে তাদের কাছে এই সময়ে শামসুর রাহমান অনেক গুরুত্বপুর্ন । তার কবিতার চেয়ে কবি শামসুর রাহমান অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ন আমদের কাছে?
কেনো? উত্তর সেই একটাই । রাহমান যে আমাদের সাথে হেঁটেছেন তার শেষ সময় পর্যন্ত ।
তাঁর সমালোচনা করা হয় '৭১ এ রাহমান যুদ্ধ করেননি ।রাহমানের সমালোচনা করে কেউ কেউ মনে করিয়ে দিতে ভুলেননা আল মাহমুদ কিন্তু অস্ত্রহাতে মুক্তিযোদ্ধা ।
'৭১ এর সক্ষম পুরুষদের সকলে কি যুদ্ধে গিয়েছিলেন? যিনি গিয়েছিলেন তিনি সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান । সালাম তাঁর নামে ।
কিন্তু যুদ্ধ যে শেষ হলোনা । একে একে ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত অর্জন । বিষাক্ত ফনা তুলে দাঁড়ালো আহত শত্রু ।
৭১ এর অস্ত্রহাতে যোদ্ধা যে বিপ্লবী কবি, তিনি যে এবার বাসর সাজালেন শত্রু শিবিরে? তিনি তো বিবর্তিত হয়ে রসদ জোগালেন শত্রুর প্রতিশোধ স্পৃহায় । । কিন্তু আমি যে ভালোবাসি সেই যোদ্ধা কবিকে,আমি যে তাঁর কবিতার লাইন আওড়াই 'আত্নবিক্রয়ের স্বর্ন কোনকালে করিনি সঞ্চয়'
হায় অসহায় আমি ,আমাকে আমার ভালোবাসার ঠুঁটি চেপে ধরতে হয় ।এই ভালোবাসা যে শত্রুকে আরো বেশী করে জোগাবে ছোবলের শক্তি ।
মধ্যবিত্ত,পলায়নপর রাহমান জিতে যান যুদ্ধের এই পর্বে । এই পর্বে এসে রাহমান উঠে দাঁড়ান আমাদের কাতারে । আমরা যে বিবর্ন,বিকৃত স্বদেশ দেখি, রাহমান তার বর্ননা দেন 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ'
ঘাতক দালালের বিচারের দাবীতে যখন সোচচার হয় সারাদেশ,রাহমান তার আয়োজকদের একজন । যৌবনে যে রাহমান যোদ্ধা নয়,পড়ন্ত বেলা সেই রাহমান সাহসী কমরেড ।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করে, রাহমান তাদের একজন । দেশকে ভালোবেসে রাষ্ট্রদ্রোহী মধ্যবিত্ত কবি !
ধর্মোন্মাদেরা মুরতাদ ঘোষনা করলো,শহর সিলেটে ঢুকতে দিলোনা,ধারালো অস্ত্র হাতে আক্রমন করলো-উত্তরাধুনিকদের কাছে গুরুত্বহীন এই কবিকে ।
যদি কবিতাই গুরুত্ববিচারের একমাত্র মাপকাঠি হয় রাহমান গুরুত্বহীন হয়ে থাকুন,আমার কিছু যায় আসেনা ।
কিন্তু যে ভাষায় কবিতা লিখা হবে সেই ভাষা,সেই ভাষার মানুষ,সেই মানুষদের জাতীয়তাবোধের জন্য রাহমান গুরুত্বপুর্ন ছিলেন তার জীবনে, থেকে যাবেন মৃত্যুতে ও ।
মন্তব্য
উত্তরাধুনিক নয় বলুন অতি-উত্তরাধুনিক কবিদের কথা। সেরকম এক কবি (উনাকে নাকি অনেকে বাংলাদেশের বিনয় বলে অভিহিত করে থাকেন।) এখন শামসুর রাহমানের পিন্ডি চটকাচ্ছেন। এই কবি মহোদয়কে একবার নতুন কবিতা দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন- ব্লগে এখনো ওরকম অরিয়েন্টশন গড়ে ওঠেনি। আমি বরং সম্পাদকের সীল মারা কবিতা পোস্টাই। এখন সেই মহাত্মন অপ্রকাশিত কবিতা প্রসব করছেন।
"ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার আমি গোলাপ নেব,
ফুলবাগিচা বিরান বলে হরহামেশা ফিরে যাবো, তা হবে না।"
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
অতিবিপ্লবীরা শেষ পর্যন্ত প্রতিবিপ্লবে শক্তি যোগায় ।
আধুনিকই হয়ে উঠা হলোনা আবার উত্তরাধুনিক!
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কবিতা বিচার থাক। মহাকালের বিচারে শামসুর রাহমান টিকবেন কিনা, সে প্রশ্নও অবান্তর। শামসুর রাহমানের গুরুত্ব অন্য জায়গায়। কবিতাকে তিনি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। সময়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। একবার নয়, বারবার। তাঁর সারা জীবন ধরেই।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জুবায়ের ভাই, আপনার এই কথাটা আর আমার বোধ একই রকম। কবিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার সত্যিই নেই। কিন্তু তাঁর কবিতা আমার কাছে পানির মত সরল আর দরকারি মনে হয়েছে। আমি তার স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছি আমার মত করে। আর সেটাই আমার আগের পোস্টে খানিকটা বলতে চেষ্টা করেছি।
কবির জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
অসাধারন অসাধারন বস। হ্যাটস অফ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হাসান মোরশেদ,
শহীদ জননী জাহানারা ইমামও রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই মারা যান। এইসব রাষ্ট্রীয় অপমানের শেষ কোথায় বলতে পারেন? আর বর্তমান অস্বাভাবিক তত্ববধায়ক সরকার তো বাণী দিয়েই তার দায়িত্ব পালন করছেন!...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
রাহমান আমাদের কণ্ঠ হয়ে ছিলেন সবসময়।
তাঁর মৃত্যুতে আমরা হারিয়েছি আমাদের মননের অভিভাবককে - এইটুকুই বলবো।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমি সাধারন মানুষ। আম পাব্লিক। কোন হালার উত্তর আর পুব আর পচ্চিম কি কইল সেইটা নিয়া আমার কি? আমি আরাম পাই রাহমানের কবিতা পড়ে। তার ছবি দেখলে আমার ভাল লাগে। বিরল ভিডিও ফুটেজ দেখলে দাড়িয়ে দেখি, আমার কথা বলে যে মানুষ, সেই রাহমানকে দেখি। সে আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন এইটা জানি, আরও জানি আমার মত আরও অসংখ্য মানুষ এই মানুষটারে ভালবাসে, তারে গুরুত্ব দেয়।
ঝরা এই আরেকটা রাম ছাগল। আপনে এই কথাটা কই শুনছেন আল্লাই জানে, তবে আমারে যে বলছিল, তারে জিগাইলাম বিনয় মজুমদার আপনে পড়ছেন। প্রথমে বল্ল পড়ছে, বইলাই কথা পাল্টায়া বলে তেমন না। আমি আর কিছু বলিনাই।
আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমের, চাঁদ ফুল জ্যোছনার গান আর নয়
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কে বড় লেখক , কে যোগ্য লেখক , কে কবি নামের যোগ্য - এই সব ফাঁপা অহংকারের দুর্বিনীত প্রকাশ বলেই বিশ্বাস করি । আপনি কি কোন দিন তুলনা করতে বসবেন লালন বড় গীতিকার ছিলো নাকি রবীন্দ্রনাথ ?
যারা এই সব সনদ পত্র দেওয়ার চেষ্টা করে , তাদের "আত্মবিশ্বাস" অভিনন্দনযোগ্য বটে ! নিজে না জানি কত বড় হইলে আরেক জনের লেখকত্বের বিচার করা যায়!
শামসুর রাহমানের মত মানুষদের সনদ লাগে না । তাঁরা সাধারন মানুষের মুখে মুখে পূজিত হন, বুকে বুকে শ্রদ্ধা মন্দিরে আসীন থাকেন। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারাটা হলো সবচেয়ে বড় যোগ্যতা । এখনো স্বাধীনতা দিবস মানে শামসুরের কবিতা বিনত নম্রতায় , গভীর শ্রদ্ধায় !
কৃতজ্ঞতা সম্মানিত আলোচকগন ।।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই পোস্ট এবং সংযুক্ত আলোচনায় আমি ঋদ্ধ হলাম। সব মতের সাথে একমত হতে হবে তা জরুরি নয়। জরুরি হলো অন্যের মতামতকে কম্যুনিকেট করতে পারা। আমি তা পেরেছি। আমার মতটা এখানে আর বলছি না আলাদা পোস্ট থাকার কারণে।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/10086#comment-32988
এই পোস্ট টা পড়ার পরে আবার সেই ছাগলটারে মনে পড়ে গেল। কোন দিন বিনয় পড়ে নাই, সে অন্য লোকরে বিনয় সাট্টিফিকেট দেয়। ফুঃ
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বিনয় মজুমদার হওয়ার মাজেজা কী ?
বিনয়ের মতো দাড়ি রাখা , তারমতো কাপড় পরা ?
তাহলে বাংলাদেশে হাজার হাজার বিনয় মজুমদার আছে । হাইকোর্টের মাজারে কিংবা শাহজালালের মাজারে তো ডজন ডজন বিনয় মজুমদার লাইন ধরে বসে থাকে ।
-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।
"সেই ভদ্রলোক" কে বাংলাদেশের বিনয় মজুমদার আখ্যা দেওয়া বিষয়ে আমাদের অনিয়মিত সচল শমিত রায় একবার বলেছিলেন, এই মন্তব্য যিনি করেন স্পষ্টত:ই বোঝা যায় তিনি বিনয় মজুমদার এবং "সেই ভদ্রলোক" কারো কবিতার সাথেই পরিচিত নন...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শামসুর রাহমান সুদূর ভবিষ্যতে টিকে থাকবেন কী না তার চাইতেও অনেক বড় কথা হচ্ছে তিনি টিকে আছেন। তিনি এমন সময়েই চলে গেছেন যখন তাঁকে আমাদের প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজন এখনো আছে।
কবিকে শ্রদ্ধা।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই বিষয়টি আমি প্রায়ই শুনি যে আল মাহমুদ অস্ত্রহাতে মুক্তিযোদ্ধা ।
আমার বিনীত জিজ্ঞাসা :
১. তিনি কবে , কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন ?
২. কোন সেক্টরের অধীনে কোথায় যুদ্ধ করেছেন ?
-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।
এমন ও প্রচার করা হয়, এই হুজুরই নাকি 'একমাত্র' কবি যিনি অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন, বাকী বদমাশগুলো কলকাতায় বসে মদ আর মাগীবাজী করেছে ।
ত্রিদিব দস্তিদার, রফিক আজাদ, সমুদ্রগুপ্ত রা তাহলে কোন যুদ্ধের মাঠে ছিলো-সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে অবশ্য মেলে না উত্তর ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই বিষয়টি নিয়ে আমার কৌতুহল আছে ।
আজ পর্যন্ত কোথাও পেলাম না যে উনি অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন ।
আমি যতোদূর জানি উনার দুলাভাই পাকিস্তান আমলে ডিসি ছিলেন এবং ভারত গিয়ে বাংলাদেশ সরকারে যোগ দেন ।
আলমাহমুদ ভারত গিয়ে পৌছালে উনি তার বাসায় রাখেন ।
আলমাহমুদ তখন কলকাতায়ই ছিলেন ।
পরবর্তীতে দুলাভাই উনার সচিবালয়ে আলমাহমুদকে টুকটাক কিছু কাজ দেন ।
যাই হোক , একটু সময় পেলে বিষয়টি ঘেটে দেখব ।
ঘাঁটানো দরকার
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শামসুর রাহমানের কবিতার ভাষায় যে স্নিগ্ধতা লক্ষ্য করি - তার জন্যই তিনি আমার কাছে প্রধান একজন কবি। অতি আধুনিক কিংবা অতি উত্তরাধুনিক কালের কবিদের ভাষার মধ্যে সেই স্নিগ্ধতা পাই না - নিঃসন্দেহে যা আমার ব্যর্থতা।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কবির জন্য এসবের দরকারও হয না। কেননা তার প্রতি নতজানু হয়ে আছে আমাদের বিবেক।
শামসুর রাহমান এক সাক্ষাৎকারে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন ৫০০ বছর বেঁচে থাকার। কে কতকাল বেঁচে থাকবে টিকে থাকবে তা মহাকাল জানে। তবে আমাদের জন্যই শামসুর রহমানের টিকে থাকা দরকার। আমরা যদি মনে করি শামসুর রাহমান আমাদের প্রয়োজন, তবেই শামসুর রাহমান আছেন। তাঁর শেষের দিকের কিছু লেখায় যদিও ধার ছিলোনা, তবু তিনি শেষতক সৃষ্টিশীল ছিলেন। আর বাংলা আধুনিক কবিতায় নতুন কাব্যভাষা সৃষ্টির জন্যই কবিতার ইতিহাসে শামসুর রাহমান বহুকাল থেকে যাবেন। আর বাঙালির প্রতিটা স্পন্দনে পাশাপাশি থাকার জন্য বাঙালির হৃদয়ে বহু বহু কাল তিনি থাকবেন।
কারণ তাকে আমাদের প্রয়োজন হবে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
যেদিন কবির 'গেরিলা' কবিতাটা পড়েছি সেদিন থেকেই জমা করে রেখেছি তাঁর জন্য গভীর ভালবাসা।
কবির জন্য শ্রদ্ধা...
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
"শ্মশানে কিংশুক ফোটাতে হলে জরুরি অন্তত: আত্মদান"
-এমন বাক্য আর কোন কবি বাংলাদেশে লিখেছেন? আমার তো মনে হয় এই একটি লাইনই শামসুর রাহমানকে চিনিয়ে দিতে যথেষ্ঠ।
কিন্তু অনেক ছুটকা-ছাটকা কবি (যারা নিজেরাই নিজেদের পুরষ্কৃত করে তারাও) শামসুর রাহমানকে হেয় করতে চান। এখনও অনেকেই চান। ভবিষ্যতেও চাইবেন বোধকরি।
কী বিচিত্র এই সাহিত্য জগত। এখানে একজন প্রতিনিয়ত অন্যকে বিশেষ করে তার অগ্রজকে হেয় করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। কোনো কোনো তরুণ কবি বলেন- স্বাধীনতা তুমি কবিতাটি একটি বিদেশী কবিতার অনুবাদ।
বাংলাদেশে একটি কবিতা লিখেও অনেককে দেখেছি চুলদাড়ির জঙ্গলে নিজকে আবৃত করতে; ময়লা-ছেঁড়া পাঞ্জাবি পরে নিজকে কবির কাকতাড়ুয়া হিসেবে প্রতিয়মান করতে। তাহলে অগ্রজকে হেয় করে আর অবহেলা করে নিজে বড় হওয়া যায়? আর তাই বুঝি একদিন সম্ভব হবে এই লালসবুজের দেশে!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
(এই মন্তব্যটি পলাশ দত্তের "তাকে বাতিলের অধিকার হয়েছে তোমার?"
লেখাটি ও তার পিঠে জুড়ে দেয়া অন্যান্য মন্তব্যগুলি পড়ে লিখেছিলাম। সচলের পাতা খুলে দেখি তার লেখাটি নিজের ব্লগে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং আমি সেখানে মন্তব্য করতে পারছি না। অগত্যা মন্তব্যটি এখানেই দিলাম, বিষয়ান্তর হবে না এই বিবেচনা করি।)
মনে পড়ে, আল মাহমুদ শামসুর রাহমানকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, “পরস্পরের কাব্যহিংসা অমর হোক”। আমি মনে করি, এই সময়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দু’টি বয়সী বটের পাতায় কাব্যসুন্দরীর পদচ্ছাপে রেখে যাওয়া আলো-রোদ্দুরের খেলাকে সাহিত্য-বিচারের মানদন্ডের মধ্যে সীমিত রাখলেই পরিমাপটি হবে যথার্থ। চল্লিশের প্রায় অবহেলিত জীবনানন্দ দাশের মধ্যে যে অপরূপ চিত্ররূপময়তা, নির্জলা শুদ্ধতা ও স্বচ্ছতোয়া স্নিগ্ধতা সঞ্চরণশীল হতে দেখি, এবেলায় কবুল করতে দ্বিধা নেই যে পঞ্চাশের কবিকুলকে সে সুরটিই বিমুগ্ধ আবেশে আচ্ছন্ন করেছিলো। আমাদের দুই বয়সী বট, শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদও সেই মুগ্ধতায় মগ্ন হয়েছিলেন, কবি জীবনের কৈশোরলগ্নে বুক ভরে নিয়েছিলেন সেই স্নিগ্ধতায় শ্বাস। তবে কি শামসুর রাহমান ‘পিতলের বক’ বা ‘পিতা’-য় কিম্বা আল মাহমুদ ‘সোনালী কাবিন’ বা ‘কালের কলস’-এ নোতুন পথের সূচনায় ভোরের মোরগের মতো ঘাড় উঁচু করে ডেকে ওঠেন নি? শ্রদ্ধাবোধ, বিনয় কিম্বা ভালোবাসার অন্ধত্ব দূরে সরিয়ে রেখেও অকপটে বলি, সেখানে নোতুন পথের উন্মেষ ছিল নিঃসন্দেহে। তবে নিজ প্রতিভার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে দীপ্ত পদক্ষেপে কুচকাওয়াজই তো পথের স্থায়ীত্বকে চিরায়ত করে। সেক্ষেত্রে কে কতটুকু জাঁকালো কুচকাওয়াজ করেছেন, মুঙ্কার-নাকীরের মতো পূর্ণ নিরপেক্ষতায় সময় তার খাতায় ঠিক ঠিক লিখে রাখবে। শুধু এটুকু মিনতি, ভিন্নমতের দোলাচলে আমরা যেন আমাদের এই দুই বয়সী বটের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটুকু না হারিয়ে বসি।
অনেকেরই মতে এবং বোধহয় একথা মোটামুটি সত্যি যে, ষষ্ঠ বইয়ে এসে নিজস্বতা পেয়েছিলেন শামসুর রাহমান। তাই বলে একথা তাঁর নিন্দুকও বলবেন না যে 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে' থেকে শুরু করে 'নিজ বাসভুমে' পর্যন্ত পাঁচ পাঁচটি কাব্যগ্রন্থের পাতা ওল্টালে খান দশেক অপ্সরীর খোঁজ মিলবে না। সায়াহ্নে বেলা শেষের কাব্যখেলাতে তিনি কেমন দড় ছিলেন, সেটিই কি মূল বিবেচ্য হবে? নাকি হৃদয়ে পৃথিবীর আলো জাগানিয়া গানে মৃত নক্ষত্রেরা ডুকরে উঠবে বারবার?
শামসুর রাহমান কে নিয়ে লেখালেখির যতগুলি আমার দৃষ্টিগোচর হয়, আমি সেগুলি খুব মনযোগ নিয়ে পড়ি। সেই ‘নিঃসংগ শেরপা’ থেকে হালে ‘অন্যপ্রকাশ’ প্রকাশিত ‘শামসুর রাহমান স্মারক গ্রন্থ’। জগৎজোড়া আন্তঃজাল আমাদের দৃষ্টিকে গগনবিহারী করেছে, বিশ্বসাহিত্যের আধবোঁজা দ্বারকে করেছে প্রসারিত। আমরা এখন কবিতার তুলনামুলক আলোচনায় আরো বেশী মনোনিবেশ করছি। কিন্তু জীবনানন্দকে নিয়ে যে ধরণের বিশ্লেষণধর্মী ও তুলনামুলক কাব্যবিচার নজরে আসে, হতাশ হয়ে দেখি ‘নিঃসংগ শেরপা’ কিম্বা ‘শামসুর রাহমান স্মারক গ্রন্থ’ তে তার অনেকটাই অনুপস্থিত। কাব্যবিচারের এই খরা কিন্তু ভবিষ্যতের কবিকুলকেই দৈন্যতায় অনাহারী করবে।‘নিঃসংগ শেরপা’ কিম্বা ‘জলসার কবি’ নিয়ে কথা চালাচালি, চিৎকার আর চেচামেচি তো অনেক হলো, এবার “কে আছো জওয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত”।
রোমেল চৌধুরী
নতুন মন্তব্য করুন