বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকানো নিশ্চয়ই বেশ সাহসের কাজ, জেনারেলের গোঁফ ধরে টান মারাটা ও কম সাহসের নয়,তাইনা? বিশেষ করে সেই গোঁফ যদি হয় আবার ওসমানী স্পেশাল
ঘটনা তাহলে হোক খুল্লামখোলা ।
বয়স কতো তখন ৪ কি ৫ । কিছুটা ধুসর স্মৃতিজাত,কিছুটা স্বাক্ষীদের বয়ান । নানার বাড়ি থেকে সিলেট আসছি-নানা,মা আর আমরা দু ভাই বোন ।
শহর সিলেট থেকে এখন মাত্র দু ঘন্টার বাসযাত্রা । সেই আমলে ছিলো তা এক বিরাট ইতিহাস । ভোর বেলা উঠো লঞ্চে । কালনীর বুক চিরে চিরে ঢিমে তালে লঞ্চ এসে পৌঁছালো যখন জয়কলস নামের ঘাটে বেলা তখন দ্বি-প্রহর ।
জয়কলস লঞ্চঘাটে,নদীর তীর ঘেঁসে সারিসারি ভাতের দোকান । নদী থেকে তাজা পাবদা মাছ তুলে রান্না হচ্ছে । খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো মাইল খানেক হাঁটা হলো ।
মাইল খানেক হাঁটার পরে মুল সড়ক । দাঁড়িয়ে থাকো সেই সড়কের পাশে । সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটগামী মুড়ির টিন আসবে প্রতি দুইঘন্টায় একটা । কপাল ভালো হলে পাওয়া গেলো , নয়তো অপেক্ষায় থাকো ।
মুড়িরটিনের উঠার পর সিলেট গিয়ে কখন পৌঁছাবে সে খোদা মালুম । হতে পারে চারঘন্টা হতে পারে আট। রিলাক্স,রিলাক্স!!
যাত্রা বিবরনী সংক্ষেপিত হোক ।
সিলেটের বাস ধরবো বলো দাঁড়িয়ে আছি আমরা । বাস আসছেনা । বাসের বদলে আমাদের কাছে এসে থামলো এক হুডখোলা জীপ । জীপের সামনের সিটে বসা এক খাটো,হালকা পাতলা মানুষ । সারা শরীরের মাঝে চোখে পড়ার মতো একটাই বৈশিষ্ট্য-বিশাল গোঁফ । বিশাল তো বিশাল,যেনো তার শরীরের চেয়ে ও বিশাল ।
নানার সাথে পরিচয় ছিলো রাজনীতির সুত্রে । আমরা চড়ে বসলাম সেই গোঁফওয়ালা ভদ্রলোকের জীপগাড়িতে । ঘাড় ফিরিয়ে গল্প করছেন নানার সাথে ।
সেই গল্পে আমার কাজ নেই । আমি হাত বাড়াচ্ছি তার দিকে বারবার ।তিনি ভাবলেন যেনো তার কোলে উঠার আবদার । পেছন থেকে টান মেরে নিয়ে গেলেন সামনে, আমি ও পুরন করলাম আমার মনের সাধ । দিলাম ঐ বিশাল গোঁফে ধরে টান
___
___
ঐ বিশাল গোঁফধারী মানুষটার সাহস ছিলো তার গোঁফের চেয়েও বিশাল । আমাদের চীফ,আমাদের আমাদের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ।
অবসর নেয়া কর্নেল ওসমানীকে ১৯৭০ এ আওয়ামিলীগের রাজনীতিতে নিয়ে আসা,২৫ শে মার্চ এর গনহত্যা শুরু হওয়ার মাত্র দু'সপ্তাহের ভেতর তার কমান্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনীর অপারেশন শুরু,সারা দেশকে ১১ সেক্টরে ভাগ করে অত্যন্ত গোছালো ও পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এসব কিছু সেই প্রোপাগান্ডাকে মিথ্যে প্রমান করে যারা বলতে চান মুক্তিযুদ্ধের আসলে কোনো প্রস্তুতি ছিলোনা ।
১৬ ডিসেম্বর,আত্নসমর্পন অনুষ্ঠানে ওসমানী কেনো উপস্থিত ছিলেননা, তা নিয়ে অনেক কথা উঠে। তিনি কি আসলেই ওয়ারফিল্ডে ব্যাস্ত ছিলেন নাকি অভিমানবশতঃ ? সত্যটা আর জানা হয়না ।
বাকশাল গঠন করা হলে যে দুজন সাংসদ এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন তাদের একজন ওসমানী আরেকজন বর্তমানের সেনাতোষক গনতন্ত্র চোষক ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ।
আমার বাবা দেখতাম জেনারেল ওসমানীর কঠোর সমালোচনা করতেন । সমালোচনা এই কারনে, যে ওসমানী পদত্যাগ করলেন গনতন্ত্র হত্যার অভিযোগ করে, সেই ওসমানী ঘাতক মোশতাকের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে দ্বিধা করলেননা ।
যদি ও পরে ইতিহাস ঘেঁটে পেয়েছি এই উপদেষ্টা পদ থেকে ও ওসমানী পদত্যাগ করেছিলেন ৩ নভেম্বরের জেলহত্যার পরপরই ।
মিলেনা,অনেক হিসাবই মিলেনা ।
হিসাব নিকাশ থাক ।
জেনারেলের শুভ জন্মদিন আজ ।
রেস্ট ইন পিস,ডিয়ার চিফ-ডিয়ার জেনারেল ।।
মন্তব্য
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
ঠিক ...
অনেকে ষড়যন্ত্র ধরতে পারে না। ওসমানী ষড়যন্ত্রগুলো একেবারেই ধরতে পারতেন না।
এই লেখাটা এই ব্লগের সম্পদ। অসাধারণ হয়েছে।
শুভ জন্মদিন চিফ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সহমত। এই লেখা ব্লগের সম্পদ। ধন্যবাদ।
কিছুটা সংযুক্তি (কুইক):
১.১৬ ডিসেম্বরের দুইদিন আগে থেকে তিনি সম্ভবত:জেড ফোর্স পরিদর্শনে ছিলেন এবং ১৫ ডিসেম্বর তার হেলিকপ্টার বিদ্ধস্থ হয়।তাই তিনি ১৬ ডিসেম্বরে উপস্থিত থাকতে পারেন নি।
এ বিষয় এম.আর.আখতার মুকুলের "আমি বিজয় দেখেছি"বইয়ে মনগড়া তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে তিনি নিরাপত্তার জন্য সেদিন ঢাকা আসেন নি।
আমি ৯২ সালের ২৪ মার্চ সিলেট সার্কিট হাউসে এম.আর আখতার মুকুল সাহেবকে এই তথ্যটি জিজ্ঞেস করেছিলাম।
তিনি হেসে আমাকে বলেছিলেন,আরো বড়ো হও,তারপর এগুলো আলোচনা করা যাবে।
স্পষ্ঠত:তিনি বিষয়টি আমার কাছ থেকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
২.ওসমানীর মৃত্যুর পরপরই তার একটি পান্ডুলিপি খোয়া যায়,যেটি পরবর্তীতে আর পাওয়া যায় নি।
তার ইচ্ছে ছিল এই পান্ডুলিপিটি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ করা।
কিন্তু সম্ভবত:তিনি যার হাতে দিয়েছিলেন,সেই ব্যক্তি সেই বিশ্বাস রাখতে পারেন নি।পান্ডুলিপির বিষয়টি তিনি যাদের কাছে বলেছিলেন তাদের কয়েকজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি।
এই পান্ডুলিপিতে তিনি তার আসামে বেড়ে ওঠা থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত লিখেছিলেন।বেশ খানিকটা অংশ তিনি পুরোপুরি সম্পাদনা করে রেখেছিলেন।
৮০ সালের পরের অংশ তিনি লিখেন নি,কারন তার ধারনা ছিল ৭৯ এর (নাকি ৭৮?)প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে তিনি বয়েস ও অসুস্থতা জনিত কারনে যেহেতু আর সক্রিয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন নি,তাই সেই অংশ আর প্রয়োজন নেই।
তিনি মারা যান ৮৪ সালে।
-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..
দারুণ একটা লেখা।
ওসমানীকে স্মরণ করা হয় না খুব একটা আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটের বাংলাদেশে।
সেই চেষ্টার অভাবের মাঝে খুব ভালো লাগছে এই লেখা দেখে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
একটা ব্যাপার আমার কাছে সবসময়ই বিস্ময় লাগে-- ওসমানী মারা যান চুরাশি সালে, স্বাধীনতার ১৩ বছর পরে। তাও কেন অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনা? এরকম অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে স্বাধীনতার অনেক পরে, যাদের কাছ থেকে আজকের অনেক বিতর্কিত বিষয়ের উত্তর পাওয়া সম্ভব ছিল। কেন তাঁদের থেকে সেসবের উত্তর সেদিন নেয়া হয়নি তা এক আশ্চর্যবোধক চিহ্ন।
'সেদিন এসবের প্রয়োজন হয়নি' বলে যারা উত্তর দেন তাদের উত্তর আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। এসব নিয়ে ভাবার মত দূরদর্শী মানুষের কি এতই অভাব ছিল সেই সময়?
একটা দেশের ইতিহাস ৩৫ বছরেই কিভাবে বদলে যায়! (বা বদলানো হচ্ছে বলে দাবী করা হয়/হয়েছে)। মাঝে মাঝে জাতি হিসেবে নিজেদের অপরিপক্কতার(!) জন্য লজ্জা বোধ হয়। নাকি সবই আমার বোঝার ভুল?
মূল্যবান এই লেখার জন্য ধন্যবাদ লেখককে।
জাতির অহঙ্কারে বাঁচে থাকুন শ্রদ্ধায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
স্যালুট
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
শুভ জন্মদিন টাইগার।
দৃশা
জন্মদিনে জেনারেলকে শ্রদ্ধা।
আরিফ ভাইকেও ধন্যবাদ প্রাসংগিক সংযুক্তির জন্য।
প্রকৃতি প্রেমিকের কথার পিঠে বলতে চাই কিছু বিষয় কিন্তু মিমাংসিতই ছিল।এগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে অনেক পরে।জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বানানোর প্রক্রিয়াটি জিয়া শুরু করেন নি,করা হয়েছে তার মৃত্যুর পরে।
জিয়া'র স্বাক্ষাতকার আছে বিচিত্রায়,সেখানে তিনি মুজিবের নামে স্বাধীনতা ঘোষনার বিষয়টি স্পষ্ঠ করে গেছেন।(পিয়াল ভাই'র কাছে কপি থাকতে পারে।)
ওসমানী'র স্বাক্ষাতকারও আছে বিচিত্রায়।সেখানে তার অবস্থান স্পষ্ঠ আছে।
তবে আজীবন গনতন্ত্রী ওসমানী'র মোশতাকের সরকারে উপদেষ্ঠা হওয়ার পেছন মূল কারন ছিল তিনি তখন অস্থির সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
আফসোস,ওসমানীর মতো গনতন্ত্রী হয়তো আমাদের দেশে সবসময়ই দূর্লভ থেকে যাবেন আগামীতে।
ওসমানী জীবনে কোন হরতালে যানবাহন ব্যবহার করেন নি।
এমনকি তিনি যে হরতাল সমর্থন করেন নি,নীতিগতভাবে একমত ছিলেন না,সেই হরতালেও অসুস্থ অবস্থায় পায়ে হেটে সিলেট রেলস্টেশন থেকে নিজের বাসায় গেছেন।
গাড়ি নিতে অস্বীকার করেছেন।
আর আজকালতো যে পার্টি হরতাল ডাকে তার নেতানেত্রীরাই গাড়ি চড়ে হরতাল পরিদর্শনে বেরোয়।
সেলাম। চীফ ও গুরু দুইজনরেই।
-------------------------------------------------
'অত্তাহি নাথো, কোহিনাথো পরিসিয়া'
অসাধারণ লিখেছেন; বার বার পড়তে ইচ্ছে করে!
শুভ জন্মদিন, জেনারেল।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মূল্যবান পোস্ট। একই সাথে ইতিহাস, এবং ব্যক্তিগত দুর্লভ মজার অভিজ্ঞতা, খুব ভালো লাগলো।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
বিনম্র শ্রদ্ধা।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
চীফ,
১৯৯৬ সালে আমরা ২৮ জন কিশোর একসারিতে আপনার কবরের সামনে দাড়িয়ে যে শ্রদ্ধাটুকু বুকে নিয়ে আপনাকে স্যালুট দিয়েছিলাম। আজও সমপরিমাণ শ্রদ্ধা বুকে নিয়ে আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
কি মাঝি? ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন